Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ আচার ব্যবহার ১ (৫৫৪৫-৫৫৯৫)

 হাদিস ৫৫৪৫

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রী কে জিজ্ঞাসা করলাম আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃ সময় মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। (আবদুল্লাহ) জিজ্ঞাসা করলেন : তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ পিতা মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। আবদুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেনঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আবদুল্লাহ বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি যদি তাকে আরও বেশী প্রশ্ন করতাম, তিনি আমাকে অথবা জানাতেন।

হাদিস ৫৫৪৬

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বলল: তারপর কে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তারপর তোমার বাপ। ইবনু শুবরুমা বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব আবূ যুরআ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫৫৪৭

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলো: আমি কি জিহাদে যাব? তিনি বলেনঃ তোমার কি পিতা-মাতা আছে? সে বলল হাঁ। তিনি বললেনঃ তা হলে তাদের (সেবার) মাঝে জিহাদ করো।

হাদিস ৫৫৪৮

আহমাদ ইবনু ইউনূস (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ নিজের পিতা-মাতাকে লানত করা। জিজ্ঞাসা করা হলঃ ইমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপন পিতা-মাতাকে কোন লোক কিভাবে লাঁনত করতে পারে? তিনি বললেনঃ সে অন্য কোন লোকের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যের মাকে গালি দেয়, তারপরে সে তার মাকে গালি দেয়।

হাদিস ৫৫৪৯

সাঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনজন লোক হেঁটে চলছিল। তাদের উপর বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। এমন সময় পাহাড় থেকে একটি পাথর তাদের গুহার মুখের উপর গড়িয়ে পড়ে এবং মুখ বন্ধ করে ফেলে। তাদের একজন অপরজনকে বললঃ তোমরা তোমাদের কৃত আমলের প্রতি লক্ষ্য করো, যে নেক আমল তোমরা আল্লাহর জন্য করেছ; তার ওসিলায় আল্লাহর নিকট দু’আ করো। হয়তো তিনি এটি সরিয়ে দিবেন। তখন তাদের একজন বলল ইয়া আল্লাহ! আমার বায়োবৃদ্ধ মাতাপিতা ছিল এবং ছেটি ছোট শিশু ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্য মাঠে পশু চরাতাম। যখন সন্ধায় ফিরতাম, তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগেই পিতামাতাকে পান করতে দিতাম। একদিন সেগুলো দূরে বনের মধ্যে চলে যায়। ফলে আমার ফিরতে রাত হয়। ফিরে দেখলাম তারা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি যেমন দুধ দোহন করতাম, তেমনি দোহন করলাম। তারপর দুধ নিয়ে এলাম এবং উভয়ের মাথার কাছে দাড়িয়ে রইলাম। ঘূম থেকে তাদের উভয়কে জাগানো ভাল মনে করলাম না। আর তাদের আগে শিশুদের পান করানোও অপছন্দ করলাম। আর শিশুরু া আমার দু”পায়ের কাছে কান্নাকাটি করছিল। তাদের ও আমার মাঝে এ অবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে ভোর হয়ে গেল। (ইয়া আল্লাহ) আপনি জানেন যে, আমি কেন আপনার সন্তানটির জন্যই একাজ করেছি। তাই আপনি আমাদের জন্য একটু ফাক করে দিন, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তাদের জন্য একটু ফাক কসে দিলেন, যাতে তারা আকাশ দেখতে পায়। তিনি ব্যাক্তি বললঃ ইয়া আল্লাহ আমার একটি চাচাৎ বোন ছিল। আমি তাফে এতখানি ভালবাসতাম, যতখানি একজন পূরুষ কোন নারীকে ভালবাসতে পারে। আমি তাতে একাত্তভাবে পেতে চাইলাম। সে অসম্মতি জানাল, যতক্ষণ আমি তার কাছে একশ- দীনার উপস্থিত না করি। আমি চেষ্টা করলাম এবং একশ- স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করলাম। এগুলো নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। যখন আমি তার দু-পায়ের মখ্যে বসলাম, তখন সে বলল হে -আবদুল্লাহ! আল্লাহকে ভয় করো; আমার কুমারিত্ত নষ্ট করো না। তখন আমি উঠে গেলাম। ইয়া আল্লাহ! আপনি জানেন যে, কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যই আমি তা করেছি। তাই আমাদের জন্য এটি ফাক করে দিন। তখন তাদের জন্য আল্লাহ আরও কিছু ফাক করে দিলেন। শেষের লোকটি বললঃ ইয়া আল্লাহ! আমি একজন মজদুরকে এক “ফারক”- চাউলের বিনিময়ে কাজে নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ শেষ করে এসে বলল, আমার প্রাপ্য দিয়ে দিন। আমি তার প্রাপ্য তার সামনে উপস্থিত করলাম কিন্তু সে তা ছেড়ে দিল ও প্রত্যাখ্যান করলো। তারপর তার প্রাপ্য আমি জমাগত কৃষিকাজে খাটাতে লাগলাম। তার দ্বারা অনেকগুলো গরু ও গাধা জমা করলাম। এরপর সে একদিন আমার কাছে এসে বললঃ আল্লাহকে ভয় কর, আমার উপর যুলম করো না এবং আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও। আমি বললামঃ গরু ও রাখালের কাছে চলে যাও। সে বললঃ আল্লাহকে ভয় করো, আমরে সাথে উপহাস করো না। আমি বললাম তোমার সঙ্গে আমি উপহাস করছি না। তুমি ঐ গরুগুলো ও তার গাধা নিয়ে যাও। তারপর সে ওগুলো নিয়ে চলে গেল। (ইয়া আল্লাহ) আপনি জানেন যে, তা আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই করেছি, তাই আপনি অবশিষ্ট অংশ উন্মুক্ত করে দিন। তারপর আল্লাহ তাদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দিলেন।

হাদিস ৫৫৫০

স্বাদ ইবনু হাফস মুগীরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা-আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মা-বাপের নাফরমানী করা, প্রাপকের প্রাপ্য আটক রাখা, যে জিনিস গ্রহন করা তোমাদের জন্য ঠিক নয় তা তলব করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া। আর তিনি তোমাদের জনা অপছন্দ করেছেন গল্প-গুজব করা, অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা ও সম্পদ নষ্ট করা।

হাদিস ৫৫৫১

ইসহাক (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললামঃ অবশ্যই সতর্ক করবেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে বসাছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেনঃ মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, দুবার করে বললেন এবং ক্রমাগত এ কথাই বলে চললেন। এমনকি আমি বললাম- তিনি মনে হয় থামবেন না।

হাদিস ৫৫৫২

মুহাম্মদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবীরা গুনার কথা উল্লেখ করলেন অথবা তাকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা। মানুষ হত্যা করা ও মা-বাপের নাফরমানী করা। তারপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের কবীরা গুনাহর অন্যতম গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করবো না? পরে বললেনঃ মিথ্যা কথা বলা। অথবা বলেছেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। শুবা (রহঃ) বলেনঃ আমার প্রবল ধারণা হয় যে, তিনি বলেছেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।

হাদিস ৫৫৫৩

হুমায়দী (রহঃ) আবূ বকর (রা-)-এর কন্যা আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞাসা করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেনঃ হা। ইবনু উয়ায়না (রহঃ) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা নাযিল করেন: যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে না তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না।

হাদিস ৫৫৫৪

ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন যে, (রোম সমরাট) হিরাক্লিয়াস তাকে ডেকে পাঠায়। আবূ সুফিয়ান (রহঃ) বললো যে, তিনি অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে যাকাত দিতে, পবিত্র থাকতে এবং রক্তের সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেন।

হাদিস ৫৫৫৫

মূসা ইবনু ঈসমা-ঈল (রহঃ) ইবনু -উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উমর (রাঃ) এক জোড়া রেশমী ডোরাদার কাপড় বিক্রি হতে দেখেন। এরপর তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি এটি খরিদ করুন, জুমু-আর দিনে, আর আপনার কাছে যখন প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরবেন। তিনি বললেনঃ এ সে-ই পরতে পারে- যার জন্য কল্যানের কোন অংশ নেই। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ জাতীয় কিছু কারুকার্যময় কাপড় আসে। তিনি তা থেকে এক জোড়া কাপড় (হুল্লা) উমর (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন। তিনি (এসে) বললেনঃ আমি কিভাবে এটি পরবো? অথচ এ বিষয়ে আপনি যা বলার তা বলেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাকে এটি পরার জন্য দইনি, বরং এ জন্যই দিয়েছি যে তুমি ওটা বিক্রি করে দেবে অথবা অন্যকে পরতে দেবে। তখন উমর (রাঃ) তা মক্কায় তার এক ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন, যে তখনও ইসলাম গ্রহন করে নি।

হাদিস ৫৫৫৬

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল শিখিয়ে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।

হাদিস ৫৫৫৭

আব্দুর রহমান (রহঃ) আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উপস্থিত লোকজন বলল তার কি হয়েছে? তার কি হয়েছে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কাউকে , শরীক করবে না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে। একে ছেড়ে দাও বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি ঐ সময় তার সাওয়ারীর উপর ছিলেন।

হাদিস ৫৫৫৮

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুতইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

হাদিস ৫৫৫৯

ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি: যে লোক তার রিযক প্রাপ্তি করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। 
 হাদিস ৫৫৬০

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি চায় যে, তার রিযক প্রাপ্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক; সে যেন তার আত্নীয়তার সাম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখে।

হাদিস ৫৫৬১

বিশর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সকল সৃষ্টিকে পয়দা করলেন। যখন তিনি সৃষ্টি কাজ শেষ করেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে উঠলোঃ সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আপনার আশ্রয় গ্রহনকারীদের এই (উপযুক্ত) স্থান। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ হ্যা তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে! তোমার সাথে যে সু-সম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখবো। আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবো। সে (রক্ত সম্পর্ক) বললোঃ হ্যা আমি সন্তুষ্ট হে আমার রব! আল্লাহ বললেনঃ তা হলে এ মর্যাদা তোমাকে দেওয়া হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা ইচ্ছে করলে (এ আয়াতটি) পড়োঃ যদি তোমরা কর্তৃত্ব লাভ (নেতৃত্ব লাভ) কর, তা হলে কি তোমরা পৃথিবীতে ফিতনা ফ্যাসা’দ সৃষ্টি করবে এবং সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবে?

হাদিস ৫৫৬২

খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: রক্ত সম্পর্কের মূল রহমান। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ যে তোমার সাথে সুসম্পর্ক রাখবে, আমি তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবো। আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবো।

হাদিস ৫৫৬৩

সাঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আত্মীয়তার হক রাহমানের মূল। যে তা সঞ্জীবিত রাখবে, আমি তাকে সঞ্জীবিত রাখেবো। আর যে তা ছিন্ন করবে! আমি তাকে (আমার থেকে) ছিন্ন করবো।

হাদিস ৫৫৬৪

আমর ইবনু আব্বাস (রহঃ) আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উচ্চস্বরে বলতে শুনেছি, আস্তে নয়। তিনি বলেছেনঃ অমুকের বংশ। আমার বন্ধু নয়। আমর বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু জাফরের কিতাবে বন্ধুর পরে জায়গা খালি রয়েছে। (কোন বংশের নাম উল্লেখ নাই)। আমার বন্ধু, বরং আমার বন্ধু আল্লাহও নেককার মুমিনগন। আনবাসা ভিন্ন সূত্রে আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমি শুনেছিঃ বন্ধুর তাদের সাথে (আমার) আত্মীয়তার হক রয়েছে, আমি সূসম্পর্কের রস দিয়ে তা সঞ্জীবিত রাখি।

হাদিস ৫৫৬৫

মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাবী সুফিয়ান বলেন, আমরা এ হাদীস মারফুরুপে বর্ণনা করেননি। অবশ্য হাসান ইবনু আমর) ও ফিতর (রহঃ) একে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ হিসেবে বর্ননা করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক আদায়কারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক আদায়কারী সে ব্যাক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও তা বজায় রাখে।

হাদিস ৫৫৬৬

আবূল ইয়ামান (রহঃ) হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার আরয করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি জাহিলী অবস্থায় অনেক সাওয়ারের কাজ করেছি। যেমন আত্মীয়তার হক আদায়, গোলাম আযাদ এবং দান-খয়রাত, এসব কাজে কি আমি কোন সাওসাব পাব? হাকীম (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পুর্বের এসব নেকীর কাজের দরুনিতো তুমি ইসলাম গ্রহণ করতে পেরেছ। ইমাম বুখারী (রহঃ) অন্যত্র আবূল ইয়ামান সূত্রে (আতাহান্নাছুর স্থলে) আতাহান্নাতু বর্ণনা করেছেন। (উভয় শব্দের অর্থ একই)! মা-মার, সালিহ ও ইবনু মূসা ব্বিও আতাহান্নাছু রিওয়াত করেছেন। ইবনু ইসহাক (রহঃ) বলেন, তাহান্নুছ অর্থ নেক কাজ করা। ইবনু শিহাব তার পিতা সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫৫৬৭

হিববান (রহঃ) উম্মে খালিদ বিনত খানিদ ইবনু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি আমার পিতার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। আমার গায়ে তখন হলুদ রং এর জামা ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সানাহ সানাহ। আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, হাবশী ভাষায় এর অর্থ সুন্দর, সুন্দর। উম্মে খালিদ বলেন আমি তখন মোহরে নবুওয়াত নিয়ে খেলতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ওকে (নিজ অবস্থায়) ছেড়ে দাও। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার বস্ত্র পূরোনো কর ও জীর্ন কর, আবার পূরোনো কর, জীর্ন কর আবার পুরোনো কর জীর্ন কর। তিনবার বললেন। আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ তিনি দীর্ঘ আয়ু প্রাপ্ত হিসেবে (লোকের মধ্যে) আলোচিত হয়েছিলেন।

হাদিস ৫৫৬৮

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু আবূ নুয়াইম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি ইবনু উমর (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁর কাছে একটি লোক মশার রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেনঃ কোর দেশের লোক তুমি? সে বললো :আমি ইরাকের অধিবাসী। ইবনু উমর (রাঃ) বললেনঃ তোমরা এর দিকে লক্ষ্য কর, সে আমাকে মশার রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে অথচ তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সন্তান (হুসাইন)-কে হত্যা করেছে। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ ওরা দুজন (হাসান ও হুসাইন) পৃথিবীতে আমার নিকট সুগন্ধি ফুল।

হাদিস ৫৫৬৯

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ এক মহিলা তার মেয়ে সাথে নিয়ে আমার কাছে এসে কিছু চাইলো। আমার কাছে একটি খুরমা ছাড়া আর কিছুই সে পেলো না। আমি তাকে সেটি দিয়ে দিলাম। মহিলা তার দু-মেয়েকে খুরমাটি ভাগ করে দিল। তারপর সে উঠে বের হয়ে গেল। ইতিমধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। আমি তাকে ঘটনাটি জানালাম। তখন তিনি বললেনঃ যাকে এ সকল কন্যা সন্তান দিয়ে কোন পরীক্ষায় ফেলা হয়, এরপর সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড় স্বরুপ হবে।

হাদিস ৫৫৭০

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে এলেন। তখন উমামা বিনত আবূল আস তার কাঁধের উপর ছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) দাড়ালেনা যখন তিনি রুকুতে যেতেন, তাকে নামিয়ে রাখতেন, আবার যখন উঠে দাড়াতেন! তখন তাকেও উঠিয়ে নিতেন।

হাদিস ৫৫৭১

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হাসান ইবনু আলীকে চুম্বন করেন। ঐ সময় তার নিকট আকরা ইবনু হাবিস তামীমী (রাঃ) বসা ছিলেন। আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) বললেনঃ আমার দশ টি পুত্র আছে-আমি তাদের কাউকেই কোন দিন চুম্বন করিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন, তারপর বললেনঃ যে দয়া করে না তাকে দয়া করা হয় না।

হাদিস ৫৫৭২

মুহম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো। আপনারা শিশুদের চুম্বন করে থাকেন, কিন্তু আমরা ওদের চুম্বন করি না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে রহমত উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তোমার উপর (তা ফিরিয়ে দেওয়ার) অধিকার রাখি?

হাদিস ৫৫৭৩

ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা ছিল। তার স্তন দূধে পূর্ন ছিল। সে বন্দীদেঁর মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিত এবং দুধ পান করাত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেনঃ তোমরা কি মনে করো এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ না। ফেলার ক্ষমতা রাখলে সে কখনো করবে না। তারপর তিনি বলেনঃ এ মহিলাটি তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তার বান্দার উপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।

হাদিস ৫৫৭৪

হাকাম ইবনু নাফি- (হা) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ রহমত একশ ভাগে ভাগ করেছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর একভাগ নাযিল করেছেন। ঐ একভাগের কারনেই সৃষ্ট জগত একে অন্যের উপর দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার উপর থেকে পা তুলে নেয় এ ভয়ে যে, সে ব্যথা পাবে।

হাদিস ৫৫৭৫

মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল। কোন গুনাহ সবচেয়ে বড়? তিনি বললেনঃ কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা, অথচ তিনই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বললেনঃ তারপরে কোনটি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার সাথে খাবে, এ ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা। তিনি বললেনঃ তারপরে কোনটি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথার সত্যতা ঘোষণা করে নাযিল হলঃ আর যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না। 


 হাদিস ৫৫৭৬

মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিশুকে নিজের কোলে নিলেন। তারপর তাকে তাহনীক, করালেন। শিশুটি তার কোলে পেশাব করে দিল। তখন তিনি পানি আনতে বললেন এবং তা (পেশাবের স্থানে) ঢেলে দিলেন।

হাদিস ৫৫৭৭

আবদুল্লাহ ইবনু মুহা। মুদ (রহঃ) উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে হাতে ধরে তার এক রানের উপর বসাতেন এবং হাসানকে বসাতেন অন্য রানে। তারপর উভয়কে একত্রে মিসিয়ে দিতেন। পরে বলতেনঃ হে আল্লাহ! আপনি এদের উভয়কে রহম করুন, কেননা আমিও এদের ভালবাসি। অপর এক সূত্রে তামীমী বলেন, এ হাদীসটির ব্যাপারে আমার অভরে সন্দেহের উদ্রেক হল। মনে মনে ভাবলাম, আবূ উসমান থেকে আমি এতো এতো হাদীছ বর্ণনা করেছি; এ হাদীসটি মনে হয় তার থেকে শুনিনি। পরে অনুসন্ধান করে দেখলাম যে, আবূ উসমানের কাছ থেকে শ্রুত যে সব হাদীস আমার কাছে লিখিত ছিল, তার মধ্যে এটি পেয়ে গেলাম।

হাদিস ৫৫৭৮

উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি অন্য কোন নারীর উপর ততটা ঈর্বাম্বিত ছিলাম না, যতটা ঈর্ষাম্বিত ছিলাম খাদীজার উপর। অথচ আমার বিবাহের তিন বছর পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেন। কারণ, আমি শুনতে পেতাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম উল্লেখ করতেন। আর জান্নাতের মধ্যে মনি মুক্তার একটি ঘরের সুসংবাদ খাদীজাকে শোনাবার জন্য তার রব তাকে আদেশ দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও বকরী যবেহ করলে তার একটি অংশ খাদীজার বান্ধবীদের কাছে অবশ্যই পাঠিয়ে দিতেন।

হাদিস ৫৫৭৯

আবদুল্লাহ ইবনু আবদূস ওহাব (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমের তত্বাবধানকারী জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকবো। এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধামা আঙ্গুল মিলিয়ে ইশারা করে দেখান।

হাদিস ৫৫৮০

ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সাফওয়ান ইবনু সুলায়ম (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু রুপে বর্ণনা করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি বিধবা ও মিসকীনদের ভরণপোষণের চেষ্টা করে, সে আল্লাহর পথের জিহাদকারীর ন্যায়। অথবা সে ঐ ব্যাক্তির ন্যায় যে দিনে সিয়াম পালন করে ও রাতে (নফল ইবাদতে) দাড়িয়ে থাকে।

হাদিস ৫৫৮১

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রী থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫৫৮২

আবদুল্লাহ ইবনু মাসালামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দুর করার চেষ্টারত ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর তুল্য। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ) আমার ধারণা যে কানাবী (বুখারীর উস্তাদ আবদুল্লাহ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেনঃ সে সারারাত দণ্ডায়মান ব্যাক্তির ন্যায় যে (ইবাদতে) ক্লান্ত হয় না এবং এমন সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যে সিয়াম ভাঙ্গে না।

হাদিস ৫৫৮৩

মূসা জাদ (রহঃ) আবূ সুলায়মান মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা কয়েফজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে এলাম। তখন আমরা ছিলাম প্রায় সমবয়সী যুবক। বিশ দিন তার কাছে অমরা অবস্থান করলাম। তিনি বুঝতে পারলেন, আমরা আমাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যেতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। যাদের আমরা বাড়িতে রেখে এসেছি। তাদের সম্পর্কে তিনি আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। আমরা তা তাকে অবহিত করলাম। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয় ও দয়ালু তাই তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পবিবারবর্গের কাছে ফিরে যাও। তাদের (কুরআন) শিক্ষ্যা দাও, (সৎ কাজের) আদেশ কর এবং যে ভাবে আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছ ঠিক সেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হবে তখন তোমাদের একজন আযান দেবে এবং যে তোমাদের মধ্যে বড় সে ইমামতি করবে।

হাদিস ৫৫৮৪

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা একব্যাক্তি পথে হেঁটে যাচ্ছিল। তার তীব্র পিপাসা লাগে। সে একটি কুপ পেয়ে যায়। সে তাতে অবতরণ করলো এবং পানি পান করলো, তারপরে উঠে এলো। হঠাৎ দেখলো একটি কুকুর হাপাচ্ছে। পিপাসায় কাতর হয়ে কাদা চাটছে। লোকটি ভাবলো এ কুকুরটি পিপাসায় সেরুপ কষ্ট পাচ্ছে যেরুপ কষ্ট আমার হয়েছিল। তখন সে কুপে অবতরণ করলো এবং তার মোজার মধ্যে পানি ভরলো, তারপর মুখদিয়ে তা (কামড়িয়ে) ধরে উপরে উঠে এলো। তাহাপর সে কুকুরটিকে পানি পান করালো। আল্লাহ তাকে এর প্রতিদান দিলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবীগন জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ -জন্তুর জন্যও কি আমাদের পূরষ্কার আছে? তিনি বললেনঃ হ্যা। প্রত্যেক দয়ার্ত হৃদয়ের অধিকারীদের জন্য পূরস্কার আছে।

হাদিস ৫৫৮৫

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ান। আমরাও তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলাম। এ সময় এক বেদুঈন সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে থেকেই বলে উঠলো: ইয়া আল্লাহ! আমার ও মুহাম্মদের উপর রহম করো এবং আমাদের সাথে আর কারো প্রতি রহম করো না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর বেদুঈন লোকটিকে বললেনঃ তুমি একটি প্রশস্ত জিনিসকে অর্থাৎ আল্লাহর রহমতকে সংকুচিত করেছেন।

হাদিস ৫৫৮৬

আবূ নুঁআয়ম (রাঃ) নুমান ইবনু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মু-মিনদের পারস্পরিক দয়া ভালবাসা ও সহানূভূতি প্রদর্শনে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। যখন দেহের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয় তখন শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ গ্রহণ করে।

হাদিস ৫৫৮৭

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমান যদি কোন গাছ লাগায়, তা থেকে কোন মানুষ বা জানোয়ার যদি কিছু খায় তবে তা তার জন্য সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে।

হাদিস ৫৫৮৮

উমর যেন হাফস (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যাক্তি (সৃষ্টির প্রতি) দয়া করে না, (স্রষ্টার পক্ষ থেকে) তার প্রতি দয়া করা হবে না

হাদিস ৫৫৮৯

ইসমাঈল ইবনু আবূ উয়াইস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসীয়ত করে থাকেন। এমনকি, আমার মনে হয়, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানিয়ে দিবেন।

হাদিস ৫৫৯০

মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বরাবরই আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অসীয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হয় যে অচিরেই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানিয়ে দিবেন।

হাদিস ৫৫৯১

আসিম ইবনু আলী (রহঃ) আবূ সুরাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বলছিলেনঃ আল্লাহর কসম! সে ব্যাক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে লোক মুমিন নয়! আল্লাহর কসম। সে ব্যাক্তি মুঁমিন নয়। জিজ্ঞাসা করা হলঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ কে সে লোক? তিনি বললেনঃ যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না।

হাদিস ৫৫৯২

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ হে মুসলিম মহিলাগণ। কোন প্রতিবেশী নারী যেন তার অপর প্রতিবেশী নারীকে (তার পাঠানো হাদিয়া ফেরত দিয়ে) হেয় প্রতিপন্ন না করে। যদিও তা বকরীর পায়ের ক্ষুর হোক না কেন।

হাদিস ৫৫৯৩

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহতে ও আখিরাতের দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন ভাল কথা বলে- অথবা চুপ করে থাকে।

হাদিস ৫৫৯৪

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সুরাইয়া আদাবী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলেছিলেন, তখন আমার দূ-কান (সে কথা) শুনছিলো ও আমার দু-চোখ (তাকে) দেখছিলো। তিনি বলছিলেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে তার প্রাপ্যের ব্যাপারে। জিজ্ঞেস করা হল মেহমানের প্রাপ্য কি? ইসা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেনঃ একদিন একরাত ভালরুপে মেহমানদারী করা। আর তিন দিন হল (সাধারণ) মেহমানদারী আর তার চেয়েও বেশী হলে তা হচ্ছে তার প্রতি অনুগ্রহ। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনের বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা নীরব থাকে।

হাদিস ৫৫৯৫

হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আয়িশা বলেনঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার দু-জন প্রতিবেশী আছে। আমি তাদের কার নিকট হাদিয়া পাঠাব? তিনি বললেনঃ যার দরজা (ঘর) তোমার নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাবে)। 

No comments:

Powered by Blogger.