বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ পোষাক-পরিচ্ছদ ৩ (৫৪৮৭-৫৫৪৪)
হাদিস ৫৪৮৭
আমর ইবনু আলী (রহঃ) আনাস (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দু- পা ছিল মাংসবহুল। চেহারা ছিল সুন্দর। আমি তার পরে তার ন্যায় (কাউকে এমন সুন্দর) দেখিনি। হিশাম (রহঃ) –আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দু পা ও হাতের দু- কবজা গোশতে পরিপূর্ন ছিল। আবূ হিলাল (রহঃ) আনাস (রাঃ) অথবা জাবির ইবনু আবদূল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ, দু টি কব্জা ও দুটি পা গোশতপূর্ণ ছিল। আমি তার পরে তার ন্যায় (কাউকে এত অধিক সুন্দর) দেখিনি।
হাদিস ৫৪৮৮
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা ইবনু আব্বাসের নিকট ছিলাম। তখন লোকজন দাজ্জালের কথা আলোচনা করন। একজন বললঃ তার দু”চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে ‘কাফির’ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ আমি এমন কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনিনি। তবে তিনি বলেছেনঃ তোমরা যদি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখতে চাও, তা হলে তোমাদের সঙ্গী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে তাকাও। আর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হচ্ছেন শ্যাম বর্ণের লোক, কোকড়ান চুল বিশিষ্ট, নাকে লাগাম পরান লাল উটে আরোহণকারী। আমি যেন তাঁকে দেখতে পাচ্ছি যে, তিনি তালবিয়া (লাব্বায়কা )পাঠরত অবস্থায় (মক্কা) উপত্যকায় অবতরণ করছেন।
হাদিস ৫৪৮৯
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে ব্যাক্তি চুল জট করে, সে যেন তা মুড়ে ফেলে। আর তোমরা মাথার চুল জটকারীদের ন্যায় জট করো না। ইবনু উমর (রাঃ) বলতেন: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চুল জট করা অবস্থায় দেখেছি।
হাদিস ৫৪৯০
হিব্বান ইবনু মূসা ও আহমাদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চুল জট করা অবস্থায় ইহরামকালে উচ্চরন তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ লাব্বাইকা আমি হাযির, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, আপনার কোন শরীক নেই। আমি হাযির, নিশ্চয়ই প্রশংসা এবং অনুগ্রহ কেবল আপনারই, আর রাজত্বও।
হাদিস ৫৪৯১
ইসমাঈল (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল লোকজনের কি হল, তারা তাদের উমরার ইহরাম খূলে ফেলেছে অথচ আপনি এখনও আপনার ইহরাম খুলেন নি। তিনি বললেনঃ আমি আমার মাথার চুল জড়ো করে রেখেছি এবং আমার হাদী (কুরবানীর পশু)-কে কিলাদা পরিয়েছি। তাই তা যবেহ করার পূর্বে আমি ইহরাম খুলবো না।
হাদিস ৫৪৯২
আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব ব্যাপারে আহলে কিতারের সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলা পছন্দ করতেন, যে সব ব্যাপারে তাকে (কুরআনে) কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আর আহলে কিতাবরা তাদের চুল ঝূলিয়ে রাখতো এবং মুশরিকরা তাদের মাথার চুল সিথি কেটে রাখতো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চুল ঝূলিয়েও রাখতেন এবং সিথিও কাটতেন।
হাদিস ৫৪৯৩
আবূল ওয়ালীদ ও ঊবায়দুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় সিথিতে যে খুশবু লাগাতেন, আমি যেন তার চমক এখনও দেখতে পাচ্ছি।
হাদিস ৫৪৯৪
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আমি আমার খালা মায়মুনা বিনত হারিসের নিকট রাত যাপন করছিলাম। ঐ রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে ছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে রাতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। আমি তার বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমার চুলের ঝূটি ধরে আমাকে তার ডান পাশে নিয়ে দাঁড় করালেন।
হাদিস ৫৪৯৫
আমর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ বিশর (রহঃ) থেকে ‘বিজুয়াবাতি’ অথবা ‘বিরাসি’ বলে বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৫৪৯৬
মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ - কে কাযা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। রাবী উবায়দুল্লাহ বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ কাযা কি? তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললেনঃ শিশুদের যখন চুল কামান হয় তখন এই, এই জায়গায় চুল রেখে দেওয়া। এ কথা বলার সময় উবায়দুল্লাহ তার কপাল ও মাথার দু-পাশ দেখালেন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হলঃ বালক ও বালিকার কি একই হুকুম? তিনি বললেনঃ আমি জানিনা। এভাবে তিনি বালকের কথা বলেছেন। উবায়দুল্লাহ বলেনঃ আমি এ কথা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলণেন: পুরুষ শিশুরু মাথার সামনের ও পিছনের দিকের চুল কামান দোষনীয় নয়। আর (অন্য এক ব্যাখ্যা মতে) কাযা- বলা হয় - কপালের উপরে কিছু চুল রেখে বাকী মাথার কোথাও চুল না রাখা। অনুরুপভাবে মাথার চুল একপাশ থেকে অথবা অপর পাশ থেকে কাটা।
হাদিস ৫৪৯৭
মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাযা- করতে নিষেধ করেছেন।
হাদিস ৫৪৯৮
আহমাদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তার মুহরিম অবস্থায় নিজ হাতে খোশবু লাগিয়ে দিয়েছি এবং মিনাতেও সেখান থেকে রওনা হওয়ার পূর্বে তাকে আমি খোশবু লাগিয়েছি।
হাদিস ৫৪৯৯
ইসহাক ইবনু নাসুর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যত উত্তম খোশবু পেতাম, তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লাগিয়ে দিতাম। এমনি কি সে খোশবুর চমক তার মাথায় ও দাড়িতে দেখতে পেতাম।
হাদিস ৫৫০০
আদম ইবনু আবূ আয়াস (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত সে, একজন লোক একটি ছিদ্র পথ দিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘরে উকি মারে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন চিরুনি দিয়ে মাথা আচরাচ্ছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি যদি বুঝতাম যে, তুমি ছিদ্র দিয়ে তাকিয়ে দেখছ, তা হলে এ (চিরুনি) দিয়ে আমি তোমার চোখ ঘায়েল করে দিতাম। দৃষ্টি থেকে বাচাবার জন্যই তো অনুমতি গ্রহনের বিধান রাখা হয়েছে।
হাদিস ৫৫০১
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি হায়েয অবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাথা আচড়িয়ে দিয়েছি।
হাদিস ৫৫০২
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিরুনি দ্বারা মাথা আচড়াতে ও উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে যতদূর সম্ভব ডান দিক থেকে আরম্ভ করতে পছন্দ করতেন।
হাদিস ৫৫০৩
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়বা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ বনী আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ব্যতীত তা আমার জন্য এবং আমি নিজের আর পূরস্কার দেব। আর রোযাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মিশকের ঘ্রাণের চেয়ে অধিক সুগন্ধীযুক্ত।
হাদিস ৫৫০৪
মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যে সব সুগন্ধি পেতাম, তার মধ্যে সবচাইতে উত্তম সুগন্ধিটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার ইহরাম অবস্থায় লাগিয়ে দিতাম।
হাদিস ৫৫০৫
আবূ নূআইম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে (কেউ তাকে খোশবু হাদিয়া দিলে) তিনি (সে) খোশবু ফিরিয়ে দিতেন না এবং বলতেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোশবু প্রত্যাখ্যান করতেন না।
হাদিস ৫৫০৬
উসমান ইবনু হায়সাম অথবা মুহাম্মদ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিজ হাতে যারীরা নামক সুগন্ধি লাগিয়ে দিয়েছি, হালাল অবস্হায় এবং ইহরাম অবস্থায়।
হাদিস ৫৫০৭
উসমান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক সে সব নারীদের উপর যারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্কি উরকীর্ন করে এবং যারা উৎকীর্ণ করায়, আর সে সব নারীদের উপর যারা চুল, ভুরু উঠিয়ে ফেলে এবং সে সব নারীদের উপর যারা সৌন্দর্যের জন্য সামনের দাঁত কেটে সরু করে দাতের মাঝে ফাক সৃষ্টি করে, যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন এনে দেয়। রাবী বলেনঃ আমি কেন তার উপর লানত করবো না, যাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন? আর আল্লাহর কিতাবে আছে এই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের কাছে যে বিধান এনেছেন তা গ্রহণ করো।
হাদিস ৫৫০৮
ইসমাঈল (রহঃ) হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হাজ্জ (হজ্জ) করার সময় মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-কে মিম্বরে দাড়িয়ে বলতে শুনেলে। ঐ সময় তিনি জনৈক দেহরক্ষীর হস্তস্থিত এক গুচ্ছ চুল নিজ হাতে নিয়ে বলেনঃ তোমাদের আলিমগণ কোথায়? আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরুপ করা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলতেন: বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস হয়েছে। যখন তাদের নারীরা এরুপ করা শুরু করে। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তা’আলা লানত করেন সে সব নারীদেরকে যারা নিজেরা পরচুলা ব্যবহার করে এবং যারা অপরকে তা লাগিয়ে দেয়, যায়ী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং অন্যকে করিয়ে দেয়।
হাদিস ৫৫০৯
আদম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক আনসারী মহিলা বিবাহ করে। এরপর সে রোগে আক্রান্ত হল। ফলে তার সব চুল ঝরে যায়। লোকজন তাকে পরচুলা লাগিয়ে দিতে ইচ্ছা করে। আর তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বলেনঃ আল্লাহ লানত করেন ঐসব নারীকে যারা নিজেরা পরচুলা লাগায় এবং যারা অপরকে তা লাগিয়ে দেয়।
হাদিস ৫৫১০
আহমাদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্নিত। জনৈক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল: আমি আমার একটি মেয়েকে বিবাহ দিয়েছি। এরপর সে রোগাক্রান্ত হয়, এতে তার মাথার চুল ঝরে যায়। তার স্বামী এর কারণে আমাকে তিরস্কার করে। আমি কি তার মাথায় পরচুলা লাগিয়ে দিব? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরচুলা লাগায় এবং যে তা অন্যকে লাগিয়ে দেয়, তাদের নিন্দা করলেন।
হাদিস ৫৫১১
আদম (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে মহিলা পরচুলা লাগায়, আর যে অপরকে পরচুলা লাগিয়ে দেয়, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর লানত করেছেন।
হাদিস ৫৫১২
মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ঐ নারীর উপর অভিশাপ বর্ষণ করেন, যে পরলো লাগায়, আর অপরকে পরচুলা লাগিয়ে দেয়। আর যে নারী উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যে তা করায়। নাফি বলেনঃ উল্কি উৎকীর্ণ করা হয় (সাধারণত) উচু মাংসের উপরে।
হাদিস ৫৫১৩
আদম (রহঃ) সা-ঈদ ইবনু মূসা য়্যাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুআবিয়া (রাঃ) শেয বারের মত যখন মদিনায় আসেন তখন তিনি আমাদের সামনে ভাষণ প্রদান করেন। তিনি এক গোছা চুল বের করে বললেন, আমি ইয়াহুদী ব্যতীত অন্য কাউকে এ জিনিস ব্যবহার করতে দেখিনি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে অর্থাৎ পরচুলা ব্যবহারকারী নারীকে প্রতারক বলেছেন।
হাদিস ৫৫১৪
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আলকামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে যে সব নারী অংগ-প্রতংগে উল্কি উৎকীর্ণ করে যে সব নারী উপড়ে ফেলে এবং যেসব নারী দাঁত সরু করে দাতের মাঝে ফাক সৃষ্টি করে যা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেয়, তাদের উপর আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) লানত করেছেন। উম্মে ইয়া-কুব বললঃ এ কেমন কথা? আবদুল্লাহ বললেনঃ আমি কেন তাকে লানত করবো না, যাকে আল্লাহর রাসূল লানত করেছেন এবং আল্লাহর কিতাবেও। উম্মে ইয়াকুব বলল: আল্লাহর কসম! আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছি, কিন্তু এ কথা তো কোথাও পাইনি। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! তুমি যদি তা পড়তো তবে অবশ্যই পেতেঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের কাছে যা এনেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা বর্জন কর।
হাদিস ৫৫১৫
মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ পরচুলা লাগাবার পেশা অবলম্বনকারী নারী, যে নিজের মাথায় পরচুলা লাগায় উল্কি উৎকীর্ণকারী নারী এবং যে উৎকীর্ণ করে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অভিশাপ করেছেন।
হাদিস ৫৫১৬
হুমায়দী (রহঃ) আসমা (বিনত আবূ বকর) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল: হে আল্লাহর রাসুল! আমার এক মেয়ের বসন্ত রোগ হয়ে মাথার চুল ঝরে পড়ে গেছে। আমি তাকে বিবাহ দিয়েছি। তার মাথায় কি পরচুলা লাগিয়া দিব? তিনি বললেনঃ পরচুলাজীবী ও পরচুলাধারী নারীকে আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন।
হাদিস ৫৫১৭
ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি অথবা বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উল্কি উৎকীর্নকারী এযং পেশা অবলম্বনকারী নারী আর পরচুলা ব্যবহারকারী পরচুলা লাগাবার পেশা অবলম্বনকারী নারীকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন।
হাদিস ৫৫১৮
মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাউসদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সৌন্দর্যের জন্য উল্কি উৎকীর্ণকারী ও উল্কি গ্রহণকারী, ভ্রু উত্তোলনকারী নারী এবং দাত চিকন করে মাঝে ফাঁক সৃষ্টিকারী নারী, যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন সাধন করে, তাদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। (রাবী বলেন) আমি কেন তাকে লানত করবো না, যাকে আল্লাহর রাসুল লানত করেছেন এবং তা আল্লাহর কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে।
হাদিস ৫৫১৯
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলে: চোখলাগা বাস্তব সত্য এবং তিনি উল্কি উংকীর্ন করা থেকে নিষেধ করেছেন।
হাদিস ৫৫২০
ইবনু বাশশার (রহঃ) সুফিয়ান (সাওরী) (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- আমি আব্দুর রহমান ইবনু আব্বাসের নিকট মানসুর কর্তৃক বর্ণিত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ)-এর হাদীস উল্লেখ করি। তখন আবদুর রহমান ইবনু আব্বাস বলেন, আমি উম্মে ইয়াকুবের মাধ্যমে আবদুল্লাহ থেকে মানসুর কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস শুনেছি।
হাদিস ৫৫২১
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আওন ইবনু আবূ জুহায়ফা (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন- আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রক্তের মূল্য ও কুকুরের মুল্য নিতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি সুদ গ্রহণকারী সুদ দাতা উল্কি উৎকীর্ণকারী উল্কি গ্রহণকারী নারীদের উপর লানত করেছেন।
হাদিস ৫৫২২
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)- আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ)- এর নিকট এক মহিলাকে আনাহল। সে অস প্রত্যঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করতো। তিনি দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি (তোমাদের মধ্যে) এমন কে আছে যে উল্কি উৎকীর্ন করা সম্প্ররকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনেছে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন আমি দাড়িয়ে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন। আমি শুনেছি। তিনি বললেন, কি শুনেছ? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মহিলারা যেন উল্কি উৎকীর্ন না করে এবং উল্কি উৎকীর্ণ না করায়।
হাদিস ৫৫২৩
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরচুলা ব্যবহারকারী এবং এ পেশা অবলম্বনকারী এবং উল্কি উৎকীর্ণকারী এবং তা গ্রহণকারী নারীদের লানত করেছেন।
হাদিস ৫৫২৪
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে যে নারী উল্কি উৎকীর্ণ করে ও করায়, যে নারী ভ্রু উপড়ে ফেলে এবং যে নারী দাত কেটে সরু করে দাঁতের মাঝখানে ফাক বানায় যে কাজগুলি দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হয় , এদের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন। আমি কেন তার উপর অভিশাপ বর্ষণ করবো না, যাদের উপর আল্লাহর রাসুল অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। এবং মহান আল্লাহর কিতাবেই তা বিদ্যমান আছে।
হাদিস ৫৫২৫
আদম (রহঃ) আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফিরিশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে। লায়স (রহঃ) আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (এ বিষয়ে) শুনেছি।
হাদিস ৫৫২৬
হুমায়দী (রহঃ) মুসলিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরুকের সাথে ইয়াসার ইবনু নুমায়রের ঘরে ছিলাম। মাসরুক ইয়াসারের ঘরের আঙ্গিনায় কতগুলো মুর্তি দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে শুনেছি এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়।
হাদিস ৫৫২৭
ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা এ জাতীয় (প্রানীর) ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে তোমরা যা বানিয়েছিলে তা জীবিত কর।
হাদিস ৫৫২৮
মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ঘরের এমন কিছুই না ভেঙ্গে ছাড়তেন না, যাতে কোন (প্রানীর) ছবি থাকত।
হাদিস ৫৫২৯
মূসা (রহঃ) আবূ যুরআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে মদিনার এক ঘরে প্রবেশ করি। ঘরের উপরে এক ছবি নির্মাতাকে তিনি ছবি তৈরী করতে দেখলেন। তিনি বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি। (আল্লাহ বলেছেন) ঐ ব্যাক্তির চেয়ে অধিক যালিম আর কে, যে আমার সৃষ্টির অনুরুপ কোন কিছু সৃষ্টি করতে যায়? তা হলে তারা একটি দানা সৃষ্টি করুক অথবা একটি অণুপরিমাণ কণা সৃষ্টি করুক? তারপর তিনি একটি পানির পাত্র চেয়ে আনালেন এবং (উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে গিয়ে) বোগল পর্যন্ত দু-হাত ধূইলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবূ হুরায়রা! (এ ব্যাপারে) আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনেছেন কি? তিনি বললেনঃ (হ্যা, শুনেছি) অলংকার পরার শেষ প্রান্তে পর্যন্ত (ধোয়া উত্তম)।
হাদিস ৫৫৩০
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবুক যুদ্ধের) সফর থেকে প্রত্যাগমন করলেন। আমি আমার কক্ষে পাতলা কাপড়ের পর্দা। তাতে ছিল (প্রানীর) অনেকগুলো ছবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিড়ে ফেললেন এবং বললেনঃ কিয়ামতের দিন সে সব মানুষের সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির (প্রানীর) অনুরুপ তৈরি করবে। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমরা তা দিয়ে একটি বা দুটি বসার আসন তৈরি করি।
হাদিস ৫৫৩১
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফর থেকে প্রত্যাগমন করেন। সে সময় আমি নকশাদার (প্রানীর) ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে (ঘরের) পর্দা লটকিয়ে ছিলাম। আমাকে তিনি তা খুলে ফেলার হুকুম করেন। তখন আমি খুলে ফেললাম। আর আমিও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম।
হাদিস ৫৫৩২
হাজাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার ছবিযুক্ত গদি খরীদ করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহির থেকে এসে এ অবস্থা দেখে) দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকলেন, প্রবেশ করলেন না। আমি বললামঃ যে পাপ আমি করেছি তা থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ গদি কিসের জন্য? আমি বললামঃ আপনি এতে বসবেন ও হেলান দিবেন। তিনি বললেনঃ এসব ছবির নির্মাতাদের কিয়ামতের দিন আযাব দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে, যা তোমরা তৈরি করেছিলে সেগুলো জীবিত কর। আর যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফিরিশতা প্রবেশ করে না।
হাদিস ৫৫৩৩
কুতায়বা (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথী আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফিরিশতা প্রবেশ করে না। এ হাদীসের (এক রাবী) বুসর বলেনঃ যায়েদ একবার অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমরা তার সেবা শশ্রুষার জন্য গেলাম। তখন তার ঘরের দরজায় ছবিমুক্ত পর্দা দেখতে পেলাম। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনা মায়মূনা (রাঃ) -এর প্রতিপালিত উবায়দুল্লাহর কাছে জিজ্ঞাস করলাম, ছবি সম্পর্কে প্রথম দিনই যায়দ আমাদের কি জানায় নি? তখন উবায়দুল্লাহ বললেন, তিনি যখন বলেছিলেন তখন কি তুমি শুননি যে, কারুকার্য করা কাপড় ব্যাতিরেকে? ইবনু ওহাব অন্য সূত্রে আবূ তালহা (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৫৫৩৪
ইমরান ইবনু মায়সারা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, -আয়িশা (রাঃ)- এর নিকট কিছু পর্দার কাপড় ছিল, তা দিয়ে তিনি ঘরের এক দিকে পর্দা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ আমার থেকে এটা সরিরে নাও, কেননা এর ছবিগুলো সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আমাকে বাধার সৃষ্টি করে।
হাদিস ৫৫৩৫
ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মাল (রহঃ) সালিমের পিতা (আবদুল্লাহ ইবনু উমর) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (একবার) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (আগমনের) ওয়াদাঁ করেন। কিন্তু তিনি আসতে দেরী করেন। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুবই কষ্ট হচ্ছিল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে পড়লেন। তখন জিবরাঈলের সাথে তার সাক্ষাত হল। তিনি যে মানসিক কষ্ট পেয়েছিলেন সে বিষয়ে তার কাছে বর্ণনা করলেন। তখন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে ঘরে ছবি বা কুকুর থাকে সে ঘরে আমরা কখনও প্রবেশ করি না।
হাদিস ৫৫৩৬
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন যে, (একবার) তিনি ছবিতে গদি খরিদ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাহির থেকে এসে) যখন তা দেখতে পেলেন, তখন দরজার উপর দাড়িয়ে গেলেন। (ভিতবে) প্রবেশ করলেন না। (আয়িশা (রাঃ)) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারায় অস্তস্থিরর ভাব বুঝতে পারলেন। তখন তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আল্লাহ ও তার রাসুলের নিকট এগুনাহ থেকে তাওবা করছি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ গদি কোত্থেকে? আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আপনার বসার ও স্থান দেওয়ার জন্য আমি এটি খরীদ করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ এসব ছবির নির্মাতাদের কিয়ামতের দিন আযাব দেওয়া হবে এবং তাদের বলা হবে তোমরা যা বানিয়েছিলে তা জীবিত কর। তিনি আরো বললেনঃ যে ঘরে (প্রানীর) ছবি থাকে, সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশতা প্রবেশ করে না।
হাদিস ৫৫৩৭
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তের মূল্য কুকুরের মূল্য ও যিনাকারীর উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি সুদ গ্রহিতা, সুদদাতা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে (সূচের মাথা দিয়া ছিদ্র করে) উল্কি উৎকীর্নকারী ও তা করানোওয়ালা এবং ছবি নির্মাণকারীকে লানত করেছেন।
হাদিস ৫৫৩৮
আয়াশ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। আর (উপস্থিত) লোকজন তার কাছে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাসা করছিল। কিন্তু (কোন কথার উত্তরেই) তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (হাদীস) উল্লেখ করছিলেন না। অবশেষে তাকে ছবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো তিনি বললেনঃ আমি মুহাম্মদ -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি দুনিয়ায় কোন প্রানীর ছবি নির্মাণ করে, কিয়ামতের দিন তাকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হবে ঐ ছবির মধ্যে রুহ দান করার জন্য। কিন্তু সে রুহ দান করতে পারবে না।
হাদিস ৫৫৩৯
কুতায়বা (রহঃ) উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) গাধার পিঠে আরোহণ করেন। পিঠের উপরে ফাদাকের তৈরী মোটা গদি ছিল। উসামাকে তিনি তাঁর পেছনে বসান।
হাদিস ৫৫৪০
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আগমন করেন তখন আবদুল মুত্তালিব গোত্রের তরুণ বালকরা তাকে অভ্যর্থনা জানায়। তাদের একজনকে তিনি তার সামনে এবং অন্য একজনকে তার পেছনে উঠিয়ে নেন।
হাদিস ৫৫৪১
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আইউব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খারাপ তিন ব্যাক্তির কথা আমার কাছে উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আসেন তখন তিনি কুসামকে (তার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ারীর) সামনে ফাযলকে পাশ্চাতে বসান। অথবা কুসামকে পশ্চাতে ও ফাযলকে সামনে বসান। তা হচ্ছে কে তাদের মধ্যে মন্দ অথবা কে তাদের মধ্যে ভাল?
হাদিস ৫৫৪২
হাফযা ইবনু খালিদ (রহঃ) মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পেছনে বসা ছিলাম। আমার ও তার মাঝে লাগামের রশির প্রান্তদেশ ভিন্ন অন্য কিছুই ছিল না। তিনি বললেনঃ মুআয! আমি বললামঃ হাযির আছি, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারপর কিছুক্ষন চললেন। পূনরায় বললেনঃ হে মু’আয আমি বললাম হাযির আছি, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারপর আরও কিছুক্ষণ চললেন। আবার বললেনঃ হে মু’আয ইবনু জাবাল! আমি বললাম হাযির আছি, ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি বললেনঃ তুমি জানো, বান্দার উপর আল্লাহর কী হক? আমি বললাম আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, তারা কেবল তারই ইবাদত করবে- অন্য কিছুকে তাঁর শরীক করবে না। এরপর কিছু সময় চললেন। তারপব বললেনঃ হে মু’আয ইবনু জাবালা আমি বললামঃ হাযির আছি, ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি বললেনঃ বান্দার যখন তাদের দায়িত্বপালন করে, তখন আল্লাহর প্রতি বান্দাদের অধিকার কি তা জানো কি? আমি বললাম আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর উপর বান্দার অধিকার এই যে তিনি তাদের আযাব দিবেন না।
হাদিস ৫৫৪৩
হাসান ইবনু মুহাম্মদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে খায়বার থেকে (মদিনায়) ফিরে আসলাম। আমি আবূ তালহার সাওয়ারীর উপর পেছনে বসাছিলাম, আর তিনি সাওয়ারী চালাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর জনৈক সহধর্মিনাতার সাওয়ারীর পশ্চাতে বসেছিলেন। হঠাৎ উটনীটি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। আমি বললাম মহিলা। এরপর আমি নেমে পড়লাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনি তোমাদের মা। আমি হাওদাটি শক্ত করে বেঁধে দিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ারীতে উঠলেন। যখন তিনি মদিনার নিকটবর্তী হলেন, কিংবা রাবী বলেছেন, তিনি যখন (মদিনা) দেখতে পেলেন। তখন বললেনঃ আমরা প্রত্যাগমনকারী, তাওবাকারী, আমাদের রবের ইবাদতকারী , (তার) গ্রশংসাকারী।
হাদিস ৫৫৪৪
আহমাদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আব্বাদ ইবনু তামীম এর চাচা (আবদুল্লাহ ইবনু সায়েদ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মসজিদের মধ্যে এক পায়ের উপরে অন্য পা উঠিয়ে চিৎ হয়ে শয়ন করতে দেখেছেন।
No comments: