Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ অনুমতি চাওয়া ১ (৫৭৯৪-৫৮২৮)

 হাদিস ৫৭৯৪

ইয়াহইয়া ইবনু জাফর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তার যথাযথ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তার উচ্চোতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফিরিশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শুনবে তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয়? কারন এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশ ধরের সম্ভাষন (তাহিয়্যা) তাই তিনি গিয়ে বললেন আস সালামু আলাইকুম-। তারা জবাবে বললেনঃ “আসসালামুআলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তারা বাড়িয়ে বললেনঃ - ওয়া রাহমাতুল্লাহ বাক্যটি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে।

হাদিস ৫৭৯৫

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন কুরবান দিনে ফাযল ইবনু আববাস (রাঃ)-কে আপন সাওয়ারীর পিঠে নিচের পেছনে বসালেন। ফাযল (রাঃ) একজন সুন্দ ব্যাক্তি ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাসায়েল বাতলিয়ে দেওয়ার জন্য আসলেন। এ সময় খাশ‘আম গোত্রের একজন সুন্দরী মহিলা (রাঃ)-এর নিকট একটা মাসায়েল জিজ্ঞাসা করার জন্য আসল। তখন ফাযল (রাঃ) তার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য তাকে আকৃষ্ট করে দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযল (রাঃ)-এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফাযল তার দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফাযল (রাঃ)-এর চিবুক ধরে ঐ মহিলার দিকে না তাকানোর জন্য তার চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দিলেন। এরপর মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তার বান্দাদের উপর যে হাজ্জ (হজ্জ) ফরয হওয়ার বিধান দেওয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে সাওয়ারীর বসতে তিনি সক্ষম নন। যদি আমি তার তরফ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে আদায় হয় যাবে? তিনি বললেনঃ হাঁ।

হাদিস ৫৭৯৬

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা রাসত্মায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বললঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রাসত্মায় বসা ছাড়া গত্যমত্মর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তিনি বললেনঃ যদি তোমাদের রাসত্মায় মজলিস করা ছাড়া উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাসত্মায় হক আদায় করবে। তারা বলল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসত্মার দাবী কি? তিনি বললেন, তা হল চোখ অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। সালামের জবাব দেওয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেওয়া আর অসৎকাজ থেকে নিষেদ করা।

হাদিস ৫৭৯৭

উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম, তখন (বসা অবস্থায়) আমরা আল্লাহর প্রতি তার বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি সালাম, মীকাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি সালাম এবং অমুকের প্রতি সালাম দিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন, তখন আমাদের দিকে চেহারা মুবারক ফিরিয়ে বললেন আল্লাহ তা-আলা সালাম। অতএব যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে বসবে, তখন বলবেঃ ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি’ যখন এ কথাটি বলবে, তখনই আসমান যমীনে সব নেক বান্দাদের নিকট এ সালাম পৌছে যাবে। তারপর বলবে ‘আশাদু আন্না’ তারপর বসে তার পছন্দমত দুআ নির্বাচন করে নেবে।

হাদিস ৫৭৯৮

আবূল হাসান মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছোট বড়কে, পথচারী উপবিষ্ট লোককে এবং আর সংখ্যক লোক বেশী সংখ্যক লোকদের সালাম দিবে।

হাদিস ৫৭৯৯

মুহাম্মদ ইবনু সালাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী ব্যাক্তি পদচারীকে, পদচারী ব্যাক্তি উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখক লোক অধিক সংখককে সালাম দিবে।

হাদিস ৫৮০০

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখক লোকরো সালাম দিবে।

হাদিস ৫৮০১

কুতায়বা (রহঃ) বারা-আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাতটি কাজের রোগির খোজ খবর নেওয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, ঋন দাতার জনা দুআ করা। দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলূমের সহায়তা করা, সালাম প্রসারিত করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ন করা। আর নিষেধ করেছেন (সাতটি কাজ থেকে) রুপার পাত্রে পানাহার সোনার আংটি পরিধান রেশমী জ্বীনের উপর সাওয়ার হওয়া, মিহিন রেশমী কাপড় পরিধান, পাতনা রেশম কাপড় ব্যবহার রেশম মিশ্রিত কাতান পাকড় পরিধান, এবং গাঢ় রেশমী কাপড় পরিধান করা।

হাদিস ৫৮০২

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলঃ ইসলামের কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেনঃ তুমি ক্ষুধার্তকে খাবার দেবে, আর সালাম দিবে যাকে তুমি চেন এবং যাকে তুমি চিন না।

হাদিস ৫৮০৩

আগী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের পক্ষে তার কোন ভাইরের সাথে তিন দিনের বেশী এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে তারা দুজনের দেখা সাক্ষাত হলেও একজন এদিকে অপরজন অন্যদিকে চেহারা ফিরিয়ে রাখে। তাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যাক্তি যে প্রথম সালাম দিবে। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেনঃ যে এ হাদীসটি আমি যুহরী (রহঃ) থেকে তিনবার শুনেছি।

হাদিস ৫৮০৪

ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবনের দশ বছর আমি তার খিদমত করি। আর পর্দার বিধান সম্পর্কে আমি সব চেয়ে বেশী অবগত ছিলাম, যখন তা নাযিল হয়। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) প্রায়ই আমাকেএ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। যায়নাব বিনত জাহস (রাঃ)-এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাসরের দিন প্রথম পর্দার আয়াত নাযিল হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন দুলহা হিষেবে সে দিন লোকদের দাওয়াত করেন এবং এরপর অনেকেই দাওয়াত খেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কয়েকজন তার কাছে রয়ে যান এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেন। তধন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং আমিও তার সঙ্গে যাই, যাতে তারা বের হয়ে যায়। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলেন এবং আমিও তার সঙ্গে চলি। এমন কি তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার দরজায় এসে পৌছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারণা করেন যে, নিশ্চয়ই তারা বেরিয়ে গেছে। তখন তিনিও তার সঙ্গে আমি ফিরে আসি। তিনি যায়নাব (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করে দেখেন যে, তারা তখনও বসেই আছে, চলে যায়নি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে গেলেন এবং আমিও তার সলে ফিরে যাচ্ছি। এমন কি তিনি আয়িশা (রাঃ)- এর দরজার চৌকাট পর্যন্ত এসে পৌছেন। এরপর তিনি ধারণা করেন যে, এখন তারা অবশ্যই বেরিয়ে গেছে। তাই তিনি ফিরে এসে দেখেন যে, তারা বেরিয়ে গেছেন। এই সময় পর্দার আয়াত নাযিন হল। এবং তিনি তার ও আমার মধ্যে পর্দ্য টেনে দেন।

হাদিস ৫৮০৫

আবূ নুমান (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব (রাঃ)-কে বিয়ে করলেন, তখন (দাওয়াত প্রাপ্ত) একদা লোক তার ঘরে এসে খাওয়া দাওয়া করলেন। এরপর তারা ঘরে বসেই আলাপ-আলোচনা করতে লাগলেন। তিনি দাড়ানোর পর কিছু লোক উঠে বেরিয়ে গেলেন কিন্তু অবশিষ্ট কিছু লোক বসেই থাকলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করার জন্য ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা বসেই আছে কিছুক্ষণ পরে তারা উঠে চলে গেলেন। তারপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিয়ে তিনি এসে প্রবেশ করলেন। তখন আমি ভেতরে যেতে চাইলে তিনি আমার ও তার মাঝখানে পর্দা ঝূলিয়ে দিলেন। এই সময় আল্লাহ তা আলা এই আয়াত নাযিল করেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র ঘরগুলোতে প্রবেশ করো না শেয পর্যন্ত। 

 হাদিস ৫৭৯৪

ইয়াহইয়া ইবনু জাফর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তার যথাযথ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তার উচ্চোতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফিরিশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শুনবে তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয়? কারন এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশ ধরের সম্ভাষন (তাহিয়্যা) তাই তিনি গিয়ে বললেন আস সালামু আলাইকুম-। তারা জবাবে বললেনঃ “আসসালামুআলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তারা বাড়িয়ে বললেনঃ - ওয়া রাহমাতুল্লাহ বাক্যটি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে।

হাদিস ৫৭৯৫

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন কুরবান দিনে ফাযল ইবনু আববাস (রাঃ)-কে আপন সাওয়ারীর পিঠে নিচের পেছনে বসালেন। ফাযল (রাঃ) একজন সুন্দ ব্যাক্তি ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাসায়েল বাতলিয়ে দেওয়ার জন্য আসলেন। এ সময় খাশ‘আম গোত্রের একজন সুন্দরী মহিলা (রাঃ)-এর নিকট একটা মাসায়েল জিজ্ঞাসা করার জন্য আসল। তখন ফাযল (রাঃ) তার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য তাকে আকৃষ্ট করে দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযল (রাঃ)-এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফাযল তার দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফাযল (রাঃ)-এর চিবুক ধরে ঐ মহিলার দিকে না তাকানোর জন্য তার চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দিলেন। এরপর মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তার বান্দাদের উপর যে হাজ্জ (হজ্জ) ফরয হওয়ার বিধান দেওয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে সাওয়ারীর বসতে তিনি সক্ষম নন। যদি আমি তার তরফ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে আদায় হয় যাবে? তিনি বললেনঃ হাঁ।

হাদিস ৫৭৯৬

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা রাসত্মায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বললঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রাসত্মায় বসা ছাড়া গত্যমত্মর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তিনি বললেনঃ যদি তোমাদের রাসত্মায় মজলিস করা ছাড়া উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাসত্মায় হক আদায় করবে। তারা বলল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসত্মার দাবী কি? তিনি বললেন, তা হল চোখ অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। সালামের জবাব দেওয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেওয়া আর অসৎকাজ থেকে নিষেদ করা।

হাদিস ৫৭৯৭

উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম, তখন (বসা অবস্থায়) আমরা আল্লাহর প্রতি তার বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি সালাম, মীকাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি সালাম এবং অমুকের প্রতি সালাম দিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন, তখন আমাদের দিকে চেহারা মুবারক ফিরিয়ে বললেন আল্লাহ তা-আলা সালাম। অতএব যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে বসবে, তখন বলবেঃ ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি’ যখন এ কথাটি বলবে, তখনই আসমান যমীনে সব নেক বান্দাদের নিকট এ সালাম পৌছে যাবে। তারপর বলবে ‘আশাদু আন্না’ তারপর বসে তার পছন্দমত দুআ নির্বাচন করে নেবে।

হাদিস ৫৭৯৮

আবূল হাসান মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছোট বড়কে, পথচারী উপবিষ্ট লোককে এবং আর সংখ্যক লোক বেশী সংখ্যক লোকদের সালাম দিবে।

হাদিস ৫৭৯৯

মুহাম্মদ ইবনু সালাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী ব্যাক্তি পদচারীকে, পদচারী ব্যাক্তি উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখক লোক অধিক সংখককে সালাম দিবে।

হাদিস ৫৮০০

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখক লোকরো সালাম দিবে।

হাদিস ৫৮০১

কুতায়বা (রহঃ) বারা-আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাতটি কাজের রোগির খোজ খবর নেওয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, ঋন দাতার জনা দুআ করা। দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলূমের সহায়তা করা, সালাম প্রসারিত করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ন করা। আর নিষেধ করেছেন (সাতটি কাজ থেকে) রুপার পাত্রে পানাহার সোনার আংটি পরিধান রেশমী জ্বীনের উপর সাওয়ার হওয়া, মিহিন রেশমী কাপড় পরিধান, পাতনা রেশম কাপড় ব্যবহার রেশম মিশ্রিত কাতান পাকড় পরিধান, এবং গাঢ় রেশমী কাপড় পরিধান করা।

হাদিস ৫৮০২

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলঃ ইসলামের কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেনঃ তুমি ক্ষুধার্তকে খাবার দেবে, আর সালাম দিবে যাকে তুমি চেন এবং যাকে তুমি চিন না।

হাদিস ৫৮০৩

আগী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের পক্ষে তার কোন ভাইরের সাথে তিন দিনের বেশী এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে তারা দুজনের দেখা সাক্ষাত হলেও একজন এদিকে অপরজন অন্যদিকে চেহারা ফিরিয়ে রাখে। তাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যাক্তি যে প্রথম সালাম দিবে। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেনঃ যে এ হাদীসটি আমি যুহরী (রহঃ) থেকে তিনবার শুনেছি।

হাদিস ৫৮০৪

ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবনের দশ বছর আমি তার খিদমত করি। আর পর্দার বিধান সম্পর্কে আমি সব চেয়ে বেশী অবগত ছিলাম, যখন তা নাযিল হয়। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) প্রায়ই আমাকেএ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। যায়নাব বিনত জাহস (রাঃ)-এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাসরের দিন প্রথম পর্দার আয়াত নাযিল হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন দুলহা হিষেবে সে দিন লোকদের দাওয়াত করেন এবং এরপর অনেকেই দাওয়াত খেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কয়েকজন তার কাছে রয়ে যান এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেন। তধন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং আমিও তার সঙ্গে যাই, যাতে তারা বের হয়ে যায়। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলেন এবং আমিও তার সঙ্গে চলি। এমন কি তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার দরজায় এসে পৌছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারণা করেন যে, নিশ্চয়ই তারা বেরিয়ে গেছে। তখন তিনিও তার সঙ্গে আমি ফিরে আসি। তিনি যায়নাব (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করে দেখেন যে, তারা তখনও বসেই আছে, চলে যায়নি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে গেলেন এবং আমিও তার সলে ফিরে যাচ্ছি। এমন কি তিনি আয়িশা (রাঃ)- এর দরজার চৌকাট পর্যন্ত এসে পৌছেন। এরপর তিনি ধারণা করেন যে, এখন তারা অবশ্যই বেরিয়ে গেছে। তাই তিনি ফিরে এসে দেখেন যে, তারা বেরিয়ে গেছেন। এই সময় পর্দার আয়াত নাযিন হল। এবং তিনি তার ও আমার মধ্যে পর্দ্য টেনে দেন।

হাদিস ৫৮০৫

আবূ নুমান (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব (রাঃ)-কে বিয়ে করলেন, তখন (দাওয়াত প্রাপ্ত) একদা লোক তার ঘরে এসে খাওয়া দাওয়া করলেন। এরপর তারা ঘরে বসেই আলাপ-আলোচনা করতে লাগলেন। তিনি দাড়ানোর পর কিছু লোক উঠে বেরিয়ে গেলেন কিন্তু অবশিষ্ট কিছু লোক বসেই থাকলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করার জন্য ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা বসেই আছে কিছুক্ষণ পরে তারা উঠে চলে গেলেন। তারপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিয়ে তিনি এসে প্রবেশ করলেন। তখন আমি ভেতরে যেতে চাইলে তিনি আমার ও তার মাঝখানে পর্দা ঝূলিয়ে দিলেন। এই সময় আল্লাহ তা আলা এই আয়াত নাযিল করেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র ঘরগুলোতে প্রবেশ করো না শেয পর্যন্ত।

হাদিস ৫৮০৬

ইসহাক (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রয়ই বলতেন যে, আপনি আপনার সহধর্মিনাদের পর্দা করান। কিন্তু তিনি তা করেননি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনাগণ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রাতে মাঠের দিকে বেরিয়ে যেতেন। একবার সাওদা বিনত যামআঁ (রাঃ) বেরিয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন লম্বাকৃতির মহিলা। উমর (রাঃ) মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি তাকে দেখে ফেললেন এবং পর্দার নির্দেশ নাযিল হওয়ার আগ্রহে বললেনঃ ওহে সাওদা! আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। অতঃপর আল্লাহ তায়াআলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।

হাদিস ৫৮০৭

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একবার এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন এক হুজরায় উকি মেরে তাকালো। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একটা মিদরা- ছিলো, যা দিয়ে তিনি তার মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ যদি আমি জানতাম যে তুমি উকি মারবে, তবে এ নিরে তোমার চোখ ফুড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহনের বিধান দেওয়া হয়েছে।

হাদিস ৫৮০৮

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, একবার এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক কামরায় উকি দিল। তখন তিনি একটা তীর ধনুক কিংবা তীর ফনকসমূহ নিয়ে তার দিকে দৌড়ালেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তা যেন এখনও আমি প্রত্যক্ষ করছি। তিনি ঐ লোকটির চোখ ফুড়ে দেওয়ার জন্য তাকে খুজে ছিলেন।

হাদিস ৫৮০৯

হুমায়দী ও মাহমূদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বনী আদমের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যি জড়িত হবে। চোখের যিনা হল তাকানো জিহবার যিনা হল কথা বলা কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খায়েশ সৃষ্টি করে এবং যৌনাংগ তা সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে।

হাদিস ৫৮১০

ইসহাক (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম বলতেন, তখন তিনবার সালাম দিতেন এবং যখন কথা বলতেন তখন তা তিনবার উল্লেখ করতেন।

হাদিস ৫৮১১

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ একবার আমি আনসারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবূ মূসা (রাঃ) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেনঃ আমি তিনবার উমর (রাঃ)-এর নিকট অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম। উমর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে কিসে বাধা দিল? আমি বললামঃ আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অমুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে এলাম। (কারণ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনূমতি চায়। কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়। তখন উমর বলেনঃ কারন আল্লাহ কসম! তোমারে এ কথার উপর অবশ্যই প্রমান পেশ করতে হবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের মধ্যে কেউ আছে কি? যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস শুনেছে? তখন উবাই ইবনু কাব (রাঃ) বললেন আল্লাহর কসম! আপনার কাছে প্রমাণ দিতে দলের সর্ব কনিষ্ঠ বাক্তই উঠে দাড়াবে। আর আমই দলের সর্ব কনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তার সঙ্গে উঠে দাড়িয়ে বললাম: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই এ কথা বলেছেন।

হাদিস ৫৮১২

আবূ নূয়াঈম ও মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তার ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে গিয়ে একটি পেয়ালা দুধ পেলেন। তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবূ হির! তুমি আহলে সুফফার নিকট গিয়ে তাদের আমার নিকট ডেকে আন। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে এলাম। তারপর তারা এল এবং প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাদের অনুমতি দেয়া হলো। তারপর তারা প্রবেশ করলো।

হাদিস ৫৮১৩

আলী ইবনু জাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মাসিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে একবার তিনি একদন শিশুরু পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি তাদের সালাম করে বললেনঃ যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা করতেন।

হাদিস ৫৮১৪

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিৎ। তিনি বলেনঃ আমরা জুমুআর দিনে আনন্দিত হতাম। রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম: কেন? তিনি বললেনঃ আমাদের একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। সে কোন একজনকে -বুদাআ- নামক খেজুর বাগানে পাঠাত সে বীট চিনির শিকড় আনতো। তা একটি ডেগচিতে ফেলে সে তাতে কিছুটা যবের দানা দিয়ে ঘূটত ফলে তাতে এক প্রকার খাবার তৈরী করত। এরপর আমরা যখন জুম-আর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফিরতাম, তখন আমরা ঐ মহিলাকে সালাম দিতাম। তখন সে আমাদের ঐ খাবার পরিবেশন করত আমরা এজন্য খুশী হতাম। আমাদের অভ্যাস ছিল যে, আমরা জুমু-আর পরেই মধ্যাহ্ন ভোজন ও মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করতাম।

হাদিস ৫৮১৫

ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আয়িশা। ইনি জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন আমিও বললাম ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দে্শ্য করে বললেনঃ আমরা যা দেখছি, তা আপনি দেখছেন। ইউনূস যুহরি সুত্রে বলেন এবং –বারাকাত- ও বলেছেন।

হাদিস ৫৮১৬

আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আব্দুল মালিক (রহঃ) জাবির বলেনঃ বলেন, আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল। এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: কে? আমি বললাম: আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি আমি যেন তিনি তা অপছন্দ করলেন।

হাদিস ৫৮১৭

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একপার্শে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে এসে তাকে সালাম করন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কেননা তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বলেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম তুমি ফিরে যাও এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কেননা তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তাকে সালাম করল। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ) দাড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে। তারপর কিবলামুখী দাড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে! তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাড়াবে। তারপর তুমি সিজদা করবে প্রশান্তভাবে তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাত (নামায/নামাজ)-এর সকল কাজ সম্পন্ন করবে। আবূ উসামা বলেনঃ বলেন, এমনকি শেষে তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াবে। 

 হাদিস ৫৮১৮

ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর উঠে বস প্রশান্তির সাথে।

হাদিস ৫৮১৯

আবূ নুয়াইম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে সালাম করেছেন। তখন তিনি বললেনঃ ওয়ালাইহিসসালাম সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

হাদিস

আবূ নুয়াইম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে সালাম করেছেন। তখন তিনি বললেনঃ ওয়ালাইহিসসালাম সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

হাদিস ৫৮২০

ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) উসামা ইবনু সায়দ থেকে বর্ণিত যে, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি গাধার উপর সাওয়ার হলেন, যার জ্বীনের নীচে ফাদাকের তৈরী একখানি চাঁদর ছিল। তিনি উসামা ইবনু যায়দকে নিজের পেছনে বসিয়ে ছিলেন। তখন তিনি হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্রের স্বাদ ইবনু উবাদা -এর দেখাশোনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের আগের ঘটনা। তিনি এমন এক মজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে মুসলমান, প্রতিমাপূজক মুশরিক ও ইয়াহুদী ছিল। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুলও ছিল। আর এ মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। যখন সাওয়ারীর পদাঘাতে উড়ন্ত ধূলাবালী মজলিসকে ঢেকে ফেলছিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার চাঁদর দিয়ে তার নাক ঢাকল। তারপর বললঃ তোমরা আমাদের উপর ধুলাবালু উড়িয়োনা। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সালাম করলেন। তারপর এখানে থামলেন ও সাওয়ারী থেকে নেমে তাদের আল্লাহর প্রতি আহবান করলেন এবং তাদের কাছে কুরআন পাঠ করলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুল বললোঃ হে আগত ব্যাক্তি! আপনার এ কথার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। তবে আপনি যা বলছেন, যসিও তা সত্য, তবুও আপনি আমাদের মজলিসে এসব বসে আামাদের বিরক্ত করবেন না। আপনি আপনার নিজ ঠিকানায় ফিরে যান। এরপর আমাদের মধ্য থেকে কেউ আপনার নিকট গেলে তাকে এসব কথা বলবেন। তখন ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের মজলিসে আসবেন, আমরা এসব কথা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহুদীদের মধ্যে পরস্পর , গালাগালি শুরু হয়ে গেল। এমন কি তারা একে অন্যের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হল। তখণি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থামাতে লাগলেন। অবশেষে তিনি তার সাওয়ারীতে আরোহন করে রওয়ানা হলেন এবং স্বাদ ইবনু উবাদার কাছে পৌছলেন। তারপর তিনি বললেন হে স্বাদ! আবূ তুরাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কি বলেছে, তা কি তুমি শুনোনি? স্বাদ (রাঃ) বললেনঃ সে এমন কথাবার্তা বলেছে। তিনি আরো বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি তাকে মাফ করে দিন। আর তার কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা আলা আপনাকে যে সব নিয়ামত দান করার ছিল তা সবই দান করেছেন। পক্ষান্তরে এ শহরের অধিবাসীরা তো পরামর্শ করে সিধান্ত নিয়েছিল যে, তারা তাকে রাজ মুকুট পরবে। আর তার মাথায় রাজকীয় পাগড়ী বেধে দিবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে দ্বীনে হক দান করেছেন, তা দিয়ে তিনি তাদের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে সে (ক্ষোভানলে) জ্বলছে এজন্যই সে আপনার সঙ্গে যে আচরন করেছে, তা আপনি নিজেই প্রত্যাক্ষ করেছেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাফ করে দিলেন।

হাদিস ৫৮২১

ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেনঃ যখন কাব ইবনু মালিক (রাঃ) তাবুকের যূদ্ধে অংশ গ্রহন না করে পশ্চাতে রয়ে যান, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে সালাম কালাম করতে সবাইকে নিষেধ করে দেন। (তখনকার ঘটনা) আমি কাব ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসতাম এবং তাকে সালাম করতাম আর মনে মনে বলতাম যে, আমার সালামের জবাবে তার ঠোট দুখানা নড়ছে কিনা। পঞ্চাশ দিন পূর্ণ হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় ঘোষনা দিলেন যে, আল্লাহ তা-আলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন।

হাদিস ৫৮২২

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার একদল ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললোঃ আসসামু আলায়কা। (তোমার মূত্যু হোক! (নাউযূ (ওজু/অজু/অযু)বিল্লাহ) আমি একথার মর্ম বুঝে বললাম?, আলাইকুমুস সামু ওয়ালা লানাতু। (তোমাদের উপর মৃত্যু ও লানত)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে “আয়িশা! তুমি থামো। আল্লাহ সর্ধাবস্থায়ই বিনয় পছন্দ করেন। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারা যে বললো: তা কি আপনি শুনেন নি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ জন্যই আমিও বলেছি, ওয়া আলাইকুম (তোমাদের উপরও)।

হাদিস ৫৮২৩

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদী তোমাদের সালাম করলে তাদের কেউ অবশ্যই বলবেঃ আসসামু আলায়কা। তখন তোমরা জবাবে ওয়াআলায়কা বলবে।

হাদিস ৫৮২৪

উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা বলবে ওয়া আলায়কুম। (তোমাদের উপরও)।

হাদিস ৫৮২৫

ইউসুফ ইবনু বাহলুল (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও জুবায়র ইবনু আওয়াম (রাঃ) এবং আবূ মারস্বাদ গানাভী (রাঃ)-কে অশ্ব বের করে নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা রওমানা হয়ে যাও এবং ‘রওযায়ে খাখে’ গিয়ে পৌছ। সেখানে একজন মুশরিক স্ত্রীলোক পাবে। তার কাছে হাতিব ইবনু আবূ বালতার দেওয়া মুশরিকদের নিকট একখানা পত্র আছে। আমরা ঠিক সেই জায়গাতেই তাকে পেয়ে গেলাম যেখানকার কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন। ঐ স্ত্রী লোকটি তার এক উটের উপর সাওয়ার ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আমার কাছে যে পত্রখানি আছে তা কোথায়? সে বললোঃ আমার সাথে কোন পত্র নেই। তখন আমরা তার উটসহ তাকে বসালাম এবং তার সাওয়ারীর আসবাব পত্রের তল্লাসি করলাম। কিন্তু আমরা কিছুই (পত্রখানা) খুজে পেলাম না। আমার দুজন সাথী বললেনঃ পত্রখানা তো পাওয়া গেল না। আমি বললামঃ আমার জানা আছে যে, রাসুলুলাহ অযথা কথা বলেন নি। তখন তিনি স্ত্রী লোকটিকে ধমকিয়ে বললেনঃ তোমাকে অবশ্যই পত্রখানা বের করে দিতে হবে, নতুবা আমি তোমাকে উপুড় করে তল্লাসি নেব। এরপর সে যখন আমার দৃঢ়তা দেখলো। তখন সে বাধ্য হবে তার কোমরে পেচানো চাঁদরে হাত দিয়ে ঐ পত্রখানা বের করে দিল। তারপর আমরা তা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাহে পৌছলাম। তখন তিনি হাতিব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন: হে হাতিব! তুমি কেন এমন কাজ করলে? তিনি বললেনঃ আমার মনে এমন কোন দুসংকল্প নেই যে, আমি আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। আমি আমার দৃঢ় মনোভাব পরিবর্তন করিনি এবং আমি ধর্মও বদল করিনি। এই পত্রখানা দ্বারা আমার নিছক উদ্দেশ্য ছিল যে, এতে মক্কাবাসীদের উপর আমার দ্বারা এমন এহসান হোক, যার ফলে আল্লাহ তা’আলা আমার পরিবার ও সম্পদ নিরাপদে রাখবেন। আর সেখানে আপনার অন্যান্য সাহাবীদের এমন লোক আছেন যাদের দ্বারা আল্লাহ তা’আলা তাদের পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করে দিবেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাতিব ঠিক কথাই বলেছে। সুতরাং তোমরা তাকে ভাল ছাড়া অন্য কিছুই বলো না। রাবী বলেনঃ উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বললেনঃ তিনি নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) এবং মুমিনদের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন। অতএব আমাকে ছেড়ে দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উমর! তোমার কি জানানেই যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা-আলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারীদের সম্পর্কে অবগত আছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন যে, তোমরা যা ইচ্ছা করতে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে আছে। রাবী বলেনঃ তখন উমর (রাঃ)-এর দুঁচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তার রাসুলই সবচেয়ে ভাল জানেন।

হাদিস ৫৮২৬

মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব তাকে বলেছেনঃ হিরাক্লিয়াস আবূ সুফিয়ানকে ডেকে পাঠালেন, কুরায়শদের ঐ দলসহ যারা ব্যবসার জন্য সিবিয়া গিয়েছিলেন। তারা সবাই তার নিকট উপস্থিত হলেন। এরপর তিনি ঘটনার বর্ননা করেন। শেষভাগে বললেন যে- তারপর হিরাক্লিয়াস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পত্রখানি আনালেন এবং তা পাঠ করা হল। এতে ছিল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল মুহাম্মদ এর পক্ষ থেকে রোম সমরাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি -: ‘আসসালামু আলা মানিততায়াল হুদা’ শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর যারা সৎপথের অনুসরণ করেছে।

হাদিস ৫৮২৭

লায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাঈলের এক ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করে বললেনঃ যে সে এক খণ্ডকাঠ নিয়ে খোদাই করে এর ভেতর এক হাজার দীনার ভর্তি, করে রাখল এবং এর মালিকের প্রতি লেখা একখানা চিঠিও রেখে দিল। আর উমর ইবনু আবূ সালামা সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একব্যাক্তি একখণ্ড কাঠ খোদাই করে তার ভেতরে কিছু মাল রেখে দিল এবং এর সাথে তার প্রাপকের প্রতি একখানা পত্রও ভরে দিল, যার মধ্যে লিখা ছিল, অমুকের পক্ষ থেকে অমুকের প্রতি।

হাদিস ৫৮২৮

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে কুরাইযা গোত্রের লোকেরা স্বাদ (রাঃ)-এর ফায়সালার উপর আত্মসমর্পন করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আসার জন্য লোক পাঠালেন। তারপর তিনি এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের বললেনঃ তোমরা আপন সরদারের প্রতি অথবা বললেনঃ তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তির প্রতি উঠে দাঁড়াও। তারপর স্বাদ (রাঃ) এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পাশেই বসলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ এরা তোমার ফায়সালার উপর আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বললেনঃ তা হলে আমি ফায়সালা দিচ্ছি যে এদের মধ্যে যারা যূদ্ধযোগ্য তাদের হত্যা করা হোক। আর তাদের বাচ্চাঁদের বন্দী করা হোক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহ তাআলার ফায়সালা অমুযায়ীই ফায়সালা দিয়েছ। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আমার কোন কোন সঙ্গী আবূল ওয়ালীদ থেকে আবূ সাঈদের এ হাদীছে ‘আলাহুকমিকা’ এর স্থলে ‘আলাহুকমিকা’ শব্দ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। 

No comments:

Powered by Blogger.