Breaking News
recent

নামাযে ওযূ টুটিয়া গেলে -বেঃ গওহর

নামাযে ওযূ টুটিয়া গেলে -বেঃ গওহর
নামযের মধ্যে অস্বাভাবিক কোন কারণে বা মানুষের ইচ্ছাকৃত কোন কর্মে যদি ওযূ টুটিয়া যায়, তবে ওযূর সঙ্গে সঙ্গে নামাযও বাতিল হইয়া যাইবে; যথা, যদি নামাযের মধ্যে গোসলের হাজত হয়, ওযূর সঙ্গে সঙ্গে নামাযও বাতিল হইয়া যাইবে; যথা, যদি নামাযের মধ্যে গোসলের হাজত হয়, বা খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠে, বা বেহুশ হইয়া পড়িয়া যায়, বা ইচ্ছাকৃত পেটের উল্টা বাতাস বাহির করে, তবে ওযূ তো টুটিয়া যাইবে, কিন্তু যদি নামায ছাড়িয়া তৎক্ষনাৎ ওযূ করিয়া পুনরায় শুরু হইতে নামায পড়ে, তবে ইহাই উত্তম ও মোস্তাহাব। আর যদি এই অবস্থায় নামায বাকী রাখিতে চায়, তবে তাহারও উপায় আছে। নামায বাকী রাখিবার জন্য কতকগুলি শর্ত আছে; যথাঃ (১) ওযূ টুটা মাত্রই নামায ছাড়িয়া দিবে এবং ওযূ করিতে যাইবে, নামাযের কোন রোকন আদায় করিবে না, (২) ওযূ করিতে যাইবার সময়ও কেরাআত ইত্যাদি কোন রোকন আদায় করিবে না, (৩) কথাবার্তা ইত্যাদি যেসব কাজ নামাযের পরিপন্থী অথচ তাহা হইতে বাঁচিয়া থাকা সম্ভব, তাহা করিবে না। (অবশ্য ওযূর পানি পূর্ব, দক্ষিণ বা উত্তর দিকে থাকিলে মুখ না ফিরাইয়া যাওয়া অসম্ভব; কাজেই যাইবার সময় ক্বেবলা দিক হইতে মুখ ফিরিয়া গেলে তাহাতে ক্ষতি হইবে না।) (৪) ওযূ টুটিবার পর বিনা ওযরে এক রোকন আদায় করিবার সময় পরিমাণ দেরী করিবে না, তৎক্ষণাৎ ওযূ করিতে হইবে, অবশ্য যদি জমাআতে অনেকগুলি কাতার থাকে এবং প্রথম কাতার হইতে আসিতে আসিতে কিছু দেরী হয় বা নিকটে পানি না থাকাবশতঃ পানির কাছে যাইতে কিছু দেরী হয়, সে দেরীতে  ক্ষতি হইবে না।
১।মাসআলাঃ মোসফারেদের যদি নামাযের মধ্যে ওযূ টুটিয়া যায়, তবে ওযূ করিয়া  পুনরায় শুরু হইতে নামায পড়াই তাহার জন্য উত্তম। কিন্তু যদি সে ‘বেনা’ করিতে অর্থাৎ, যে পর্যন্ত পড়িয়াছে সে পর্যন্ত ঠিক রাখিয়া ওযূ করিয়া তাহার পর হইতে অবশিষ্টটুকু পড়িয়া নামায শেষ করিতে চায়, তবে সে ওযূ টুটা মাত্রই নামায ছাড়িয়া দিয়া তৎক্ষণাৎ ওযূ করিবে; ওযূ করিতে যাইবার সময় এদিক ওদিক দেথিবে না, বা কথাবার্তা বলিবে না, নিকটে পানি থাকিতে দূরে যাইবে না, সর্বাপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী পানির দ্বারা অতি শীঘ্রই ওযূ করিবে। (কিন্তু ওযূর সুন্নত, মোস্তাহাব ছাড়িবে না) ওযূর নিকটবর্তী স্থানেই অবশিষ্ট নামায পড়িবে, যদি পূর্বের স্থানে যায়, তাহাও জায়েয আছে।
২।মাসআলাঃ ইমামের যদি নামাযের মধ্যে ওযূ টুটিয়া যায়, (এমন কি, আখেরী বৈঠকের মধ্যেও ওযূ টুটে) তবে তাহার জন্যও একদিকে সালাম ফিরাইয়া নামায ছাড়িয়া ওযূ করিয়া নূতনভাবে নামায পড়া আফযল; কিন্তু যদি ‘বেনা’ ও ‘এস্তেখলাফ’ করিতে চায় অর্থাৎ, যে পর্যন্ত পড়িয়াছে তাহার পর হইতে মুক্তাদীদের মধ্য হইতে অন্য একজন দ্বারা পড়াইতে চায়, তবে তাহার ছুরত এই যে, ওযূ টুটা মাত্রই তৎক্ষণাৎ নামায ছাড়িয়া দিয়া একজন উপযুক্ত মুক্তাদীকে মোছাল্লার দিকে ইশারা করিয়া খলীফা (কায়েম মকাম) বানাইয়া ওযূ করিতে যাইবে, মুদরেককে খলীফা বানানো উত্তম।যদি মসবুককে খলীফা বানায় তবুও জায়েয। কিন্তু মসবুককে ইশারায় বলিয়া দিবে যে, আমার উপর এত রাকা‘আত ইত্যাদি বাকী আছে। রাকা‘আতের জন্য আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিবে যেমন, এক রাকা‘আত বাকী থাকিলে এক আঙ্গুল দুই রাকা‘আত বাকী থাকিলে দুই আঙ্গুল উঠাইবে। রুকু বাকী থাকিলে হাঁটুর উপর হাত রাখিবে, সজদা বাকী থাকিলে কপালে, কেরাআত বাকী থাকীলে মুখের উপর, সজদায়ে তেলাওয়াত বাকী থাকিলে কপালে এবং জিহবার উপর, সজদায়ে ছহো করিতে হইলে সীনার উপর হাত রাথিবে।অবশ্য যখন সেও এই সঙ্কেত বুঝে, নচেৎ তাহাকে খলীফা বানাইবে না।তারপর ওযূ করিয়া আসিয়া যদি জমাআত পায়, তবে মুক্তাদী স্বরুপ শামীল হইয়া যাইব এবং অবশিষ্ট নামায যাহা জমাআতের সঙ্গে পাইয়াছে তাহা মুক্তাদী স্বরুপ এবং যদি দুই এক রাকা‘আত মাঝখানে ছুটিয়া যাইয়া থাকে তাহা লাহেকরুপে পরে পড়িবে। যদি ওযূর স্থানে দাড়াইয়া এক্তেদা করে, তবে যদি মাঝখানে এমন কোন জিনিস বা ব্যবধান থাকে, যাহাতে এক্তেদা দুরুস্ত হয় না, তবে তথায় থাকিয়া এক্তেদা করা দুরুস্ত হইবে না।আর যদি ওযূ করিয়া জমাআত না পায়, তবে একা একা অবশিষ্ট নামায পড়িবে।(ওযূর স্থানে পড়ুক বা জমাআতের কাতারে আসিয়া পড়ুক)
৩।মাসআলাঃ পানি যদি মসজিদের ভিতরেই থাকে, তবে খলীফা বানান ছাড়াও ইচ্চা করিলে ‘বেনা’ করিতে পারে। নামায ছাড়িয়া দিয়া অতি শীঘ্র ওযূ করিয়া অবশিষ্ট অংশ পূর্ণ করিবে ইমাম যথাস্থানে ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত মুক্তাদীগণ যে অবস্থায় আছে ঐ অবস্থাতেই এন্তজার করিতে থাকিবে।
৪।মাসআলাঃ খলীফা বানানোর পর, ইমাম আর ইমাম থাকিবে না, মুক্তাদী হইয়া যাইবে; কাজেই যদি জমাআত শেষ হইয়া যায়, তবে অবশিষ্ট নামায তিনি লাহেকরুপে পড়িবেন। যদি ইমাম কাউকে খলীফা না বানান, কোন মুক্তাদী নিজে আগে বাড়িয়া যায় বা মুক্তাদীরাই তাহাকে ইশারা করিয়া আগে বাড়াইয়া দেয়, তবুও দুরুস্ত হইবে; কিন্তু যতক্ষণ ইমাম মসজিদের ভিতরে আছেন, কিংবা যদি নামায মসজিদের ভিতরে না হয়, তবে কাতার কিংবা ছোতরা হইতে আগে না যায়, ততক্ষন এইরুপ হইতে পারিবে, নতুবা
৫।মাসআলাঃ মুক্তাদীর যদি নামাযের মধ্যে ওযূ টুটিয়া যায়, তবে তাহার জন্যও ‘বেনা’ না করিয়া তৎক্ষণাৎ ওযূ করিয়া মাসবুকরুপে জমাআতে শরীক হওয়া বা জমাআত না পাইলে একা একা নূতন করিয়া নামায পড়া উত্তম। কিন্তু যদি ‘বেনা’ করিতে চায়, তবে তৎক্ষণাৎ ওযূ করিয়া যদি জমাআত বাকী থাকে জমাআতে শামিল হইয়া যাইবে, যদি প্রথম যায়গায় যাইতে পারে তবে ভাল, (নতুবা পাছের কাতারে দাড়াইয়া যতটুকু জমাআতে পায় ততটুকু মসবুকরুপে জমাআতের সঙ্গে পড়িবে। এবং যদি দুই এক রাকা‘আত মাঝখানে ছুটিয়া যাইয়া থাকে তাহা পরে লাহেকরুপে পড়িবে। কিন্তু যদি ইমাম ও তাহার ওযূর স্থানের মধ্যে এক্তেদায় বাধাজনক কোন জিনিস না থাকে, তবে এখানেও দাঁড়ান জায়েয আছে। আর যদি জমাআত হইয়া গিয়া থাকে, তবে ওযূর নিকটবর্তী স্থানে দাড়াইয়া অবশিষ্ট নামায লাহেকরুপে পড়া উত্তম। যদি পূর্ব স্থানে গিয়া পড়ে তাহাও জায়েয আছে।
৬।মাসআলাঃ ইমাম যদি মাসবুক মুক্তাদিকে খলীফা বানায়, তাহাও জায়েয আছে, কিন্তু তাহা হইলে সে ইমামের অবশিষ্ট নামায পূ্র্ণ করিয়া সালাম ফিরাইবে না, সালাম ফিরাইবার জন্য একজন মোদরেক মুক্তাদীকে ইশারার দ্বারা আগে বাড়াইয়া লইবে; নিজে একটু বসিয়া দাড়াইয়া যেসব রাকা‘আত তাহার আগে ছুটিয়া গিয়াছে, তাহা পড়িয়া শেষে পৃথকভাবে সালাম ফিরাইবে। এই জন্যই মোদরেককে খলীফা বানানো উত্তম।
৭।মাসআলাঃ শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর সালাম ফিরাইবার আগে যদি অনিচ্ছায় (বা স্বাভাবিক উপায়ে) কাহারও ওযূ টুটিয়া যায়, কিংবা পাগল হইয়া যায়, বা গোসলের হাজত হয়, বা বেহুশ হইয়া যায় তবে তাহার নামায বাতিল হইয়া যাইবে এবং পুনরায় নূতন করিয়া নামায পড়িতে হইবে। (বেনা করিতে পারিবে না)
৮।মাসআলাঃ বেনা এবং এস্তেখলাফের মাসআলা অতি সুক্ষ। ইহা স্বরণ রাখা অতি কঠিন। তাছাড়া একটু ভুল হইলেই নামায নষ্ট হইবার প্রবল আশঙ্কা আছে। কাজেই বেনা এবং এস্তেখলাফ না করিয়া ওযূ টুটিয়া গেলে ডান দিকে সালাম ফিরাইয়া নামায ছাড়িয়া দিয়া ওযূ করিয়া নূতন করিয়া নামায পড়াই উত্তম।–গওহ

No comments:

Powered by Blogger.