Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ ফিতনা অধ্যায় ১ (৬৫৭২-৬৬১২)


 হাদিস ৬৫৭২

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার হাউযের পাশে আগমনকারী লোকদের অপেক্ষায় থাকব। তখন আমার সন্মুখ থেকে কতিপয় লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, আপনি জানেন না, এরা (আপনার পথ ছেড়ে) পিছনে চলে গিয়েছিল। (বর্ণনাকারী) ইবনু আবূ মুলায়কা বলেনঃ হে আল্লাহ! পিছনে ফিরে যাওয়া কিংবা ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।

হাদিস ৬৫৭৩

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি হাউযে কাওসারের নিকট তোমাদের আগেই উপস্থিত থাকব। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে অগ্রসর হব, তখন তাদেরকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আমি বলবঃ হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতূন কি ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না।

হাদিস ৬৫৭৪

ইয়াইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউযের পাড়ে তোমাদের আগে উপস্থিত থাকব। যে সেখানে উপস্থিত হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউয থেকে পান করবে সে কখনই তৃষার্ত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে উপস্থিত হবে যাদেরকে আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এর পরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হবে। আবূ হাযিম (রহঃ) বলেনঃ আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমতাবস্হায় নুমান ইবনু আবূ আয়াস আমার কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি সাহল থেকে হাদীসটি অনুরুপ ওনেছেন। আমি বললাম, হ্যা। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে এ হাদীসে অভিড়িক্ত বলতে শুনেছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয়ই অবহিত নন যে আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে। এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক, দুর হোক।

হাদিস ৬৫৭৫

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসডদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যাক্তি স্বার্খকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করবে। এবং এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে আমাদের জন্য কি হুকুম করছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তাদের হক পরিপূর্নরুপে আদায় করবে, আর তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর কাছে চাইবে।

হাদিস ৬৫৭৬

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি আমীরের কোন কিছু অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে ব্যাক্তি সুলতানের আনুগত্য থেকে এক বিঘত পরিমাণও সরে যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহিলি যুগের মৃত্যুর ন্যায়।

হাদিস ৬৫৭৭

আবূ নূমান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি স্বীয় আমীরের নিকট থেকে অপছন্দনীয় কিছু দেখবে সে যেন এতে ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে ব্যাক্তি জামাআত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে মরবে তার মৃত্যু হবে অবশ্যই জাহেলী মৃত্যুর ন্যায়।

হাদিস ৬৫৭৮

ইসমাঈল (রহঃ) জুতাদা ইবনু আবূ উমাইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি অসুস্থ ছিলান। আমরা বললাম, আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দিন। আপনি আমাদের এরুপ একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনাকে উপকৃত করবে এবং যা আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন। তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আহবান করলেন। আমরা তার কাছে বায়আত করলাম। এরপর তিনি (উবাদা) বললেনঃ আমাদের থেকে যে অস্বীকার তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণাঙ্গরুপে শোনা ও মানার উপর বায়আত করলাম। আরও (বায়আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্যে লিপ্ত হব না। কিন্তু যদি এমন স্পষ্ট কুফূরী দেখ, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তবে ভিন্ন কথা।

হাদিস ৬৫৭৯

মুহাম্মাদ ইবনু আরআরা (রহঃ) উসায়দ ইবনু হুযাহার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি অমুক ব্যাক্তিকে প্রশাসক নিমুক্ত করলেন, অথচ আমাকে নিযুক্ত করলেন না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমরা আমার পর অগ্রাধিকারের প্রবণতা দেখবে। সে সময় তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে- যতক্ষন না আমার সঙ্গে মিলিত হও।

হাদিস ৬৫৮০

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আমর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার দাদা আমাকে জানিয়েছেন যে, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে মদিনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মসজিদে বসা ছিলাম। আমাদের সাথে মারওয়ানও ছিল। এ সময় আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ আমি আস-সা’দিকুল মাসদুক (সত্যবাদী ও সত্যবাদী হিসাবে স্বীকৃত)-কে বলতে শুনেছি আমার উম্মাতের ধ্বংস কুরাইশের কতিপয় বালকের হাতে হবে। তখন মারওয়ান বলল, এ সকল বালকের প্রতি আল্লাহর ‘লানত, বর্ষিত হোক। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ আমি যদি বলার ইচ্ছা করি যে তারা অমুক অমুক গোত্রের লোক তাহলে বলতে সক্ষম। আমর ইবনু ইয়াহইয়া বলেনঃ মারওয়ান যখন সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হল, তখন আমি আমার দাদার সঙ্গে তাদের সেখানে গেলাম। তিনি যখন তাদের অল্প বয়ষ্ক বালক দেখতে পেলেন তখন তিনি আমাদের বললেনঃ সম্ভবত এরা সেই দলেরই অন্তর্ভুক্ত। আমরা বললাম, এ বিষয়ে আপনই ভাল বোঝেন।

হাদিস ৬৫৮১

মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) যায়নাব বিরত জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তবর্ণ চেহারা নিয়ে নিদ্রা থেকে জাগলেন এবং বলতে লাগলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অত্যাসন্ন এক দুর্যোগে আরব ধ্বংস হয়ে যাবে। ইয়াজুজ-মাজুজের (প্রতিরোধ) প্রাচীর আজ এতটুকু পরিমাণ খুলে গেছে। সুফিয়ান নববই কিংবা একশতের রেখায় আঙ্গুল রেখে গিট বানিয়ে পরিমাণটুকু দেখালেন। জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাব অথচ আমাদের মধ্যে নেককার লোকও থাকবে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা, যখন পাপাচার বৃদ্ধি পাবে।

হাদিস ৬৫৮২

আবূ নূআয়ম (রহঃ) ও মাহমূদ (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার টিলাসমুহের একটির উপর উঠে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? উত্তরে সাহাবা-ই-কিরাম বললেনঃ না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিঃসন্দেহে আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাকে ফিতনা বৃষ্টি ধারার মতো নিপতিত হচ্ছে। 

 হাদিস ৬৫৮৩

আইয়্যাস ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সময় নিকটবর্তী হতে থাকবে, আর আমল হ্রাস পেতে থাকবে, কার্পণ্য ছড়িয়ে -দেওয়া হবে, ফিতনার বিকাশ ঘটরে এবং হারজ ব্যাপকতর হবে। সাহাবা-ই-কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, সেটা কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হত্যা, হত্যা। শুআয়ব, ইউনূস, লাইস এবং যুহরীর ভ্রাতুষ্পূত্র আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে।

হাদিস ৬৫৮৪

উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) শাকিক থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তাঁরা বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই কিয়ামতের পূর্বে এমন একটি সময় আসবে যখন সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে ইল্‌ম উঠিয়ে নেওযা হবে। সে সময় হারজ- ব্যাপকতর হবে। আর হারজ- হল (মানুষ) হত্যা।

হাদিস ৬৫৮৫

উমর ইবনু হাযবল (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের পুর্বে এমন একটি সময় আসবে ইল্‌ম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে, আর তখন হারজ ব্যাপকতর হবে। হারজ, হলো হত্যা।

হাদিস ৬৫৮৬

কুতায়বা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পূর্বোক্ত হাদীসের ন্যায় একটি হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। আর হাবশী ভাষায় হারজ অর্থ (মানুষ) হত্যা।

হাদিস ৬৫৮৭

মুহাম্মাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তার ব্যাপারে আমার ধারণা, তিনি হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের পূর্বে হারজ অর্থাৎ হত্যার যুগ শুরু হবে। তখন ইল্‌ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং মূর্খতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ হাবশী ভাষায় হারজ অর্থ (মানুষ) হত্যা। আবূ আওয়ানা তাঁর বর্ননা সুত্রে আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, তিনি আবদুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যুগকে ‘হারজ’ এর যুগ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন সে যুগ সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন কি? এর উত্তরে তিনি পূর্বোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত যাদের জীবদ্দশায় কায়েম হবে তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক।

হাদিস ৬৫৮৮

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) যুবায়র ইবনু আদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং হাজ্জাজের পক্ষ থেকে মানুষ যে নির্যাতন ভোগ করছে সে সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করলাম। তিনি বললেনঃ ধৈর্য ধারণ কর। কেননা, মহান প্রতিপালকের সহিত মিলিত হওয়ার পর্যন্ত (অর্থাৎ মৃত্যুর পুর্বে) তোমাদের উপর এমন কোন যুগ অতিবাহিত হবে না, যার পরবর্তী যুগ তার চেয়েও নিকৃষ্টতর নয়। তিনি বলেনঃ এ কথাটি আমি তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছি।

হাদিস ৬৫৮৯

আবূল ইয়ামান (রহঃ) ও ইসমাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -পত্নী উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এক রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত অবস্হায় নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে বলতে লাগলেন, সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ তাআলা কতই না খাযানা নাযিল করেছেন আর কতই না ফিতনা অবতীর্ণ হয়েছে। কে আছে যে হুজরাবাসিনীদেরকে জাগিয়ে দেবে যেন তারা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। এ বলে তিনি তার স্ত্রীগণকে উদ্দেশ্য করেছিলেন। তিনি আরও বললেনঃ দুনিয়ার মধ্যে বহু বস্ত্র পরিহিতা পরকালে বিবস্ত্রা থাকবে।

হাদিস ৬৫৯০

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করবে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

হাদিস ৬৫৯১

মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

হাদিস ৬৫৯২

মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার অপর কোন ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উত্তোলন করে ইশারা না করে। কেননা সে জাননা হয়ত শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে বসবে, ফলে (এক মুসলমানকে হত্যার অপরাধে) সে জাহান্নামের গর্তে নিপতিত হবে।

হাদিস ৬৫৯৩

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমরকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ মুহাম্মাদ! আপনি কি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যাক্তি মসজিদে কতক তীর নিয়ে যাচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তীরের লৌহ ফলাগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে রাখ। উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যা।

হাদিস ৬৫৯৪

আবূ নুঁমান (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি কতক তীর নিয়ে মসজিদে এলো। সেগুলোর ফলা খোলা অবস্থায় ছিল। তখন তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন সে তার তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, যাতে কোন মুসলমানের গায়ে আঘাত না লাগে।

হাদিস ৬৫৯৫

মুহাম্মাদ ইবনু আঁলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের মসজিদে কিংবা বাজারে যায় তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তাহলে সে যেন তা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে, যাতে সে তীর কোন মুসলমানের গায়ে লেগে না যায়।

হাদিস ৬৫৯৬

উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসিকী (জঘন্য পাপ) আর কোন মুসলমানকে হত্যা করা কুফরী।

হাদিস ৬৫৯৭

হাজ্জাজ ইরন মিনহাল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, আমার পর তোমরা পরস্পরে হানাহানি করে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করো না।

হাদিস ৬৫৯৮

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একদা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনতার উদেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেনঃ তোমরা কি জানো না আজকোন দিন! তারা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই এ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। (বর্ণনাকারী বলেন) এতে আমরা মনে করলাম হয়ত তিনি অন্য কোন নামে এ দিনটির নামকরণ করবেন। এরপর তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেনঃ এটি কি ইয়াওমুন নাহর (কুরবানীর দিন) নয়? আমরা বললাম হ্যা, ইয়া রাসুলাল্লাহ। এরপর তিনি বললেনঃ এটি কোন নগর! এটি -হারম নগর- (সংরক্ষিত নগর) নয়? আমরা বললাম হ্যা, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহ তোমাদের এ নগরে, এ মাসের এ দিনটি তোমাদের জন্য যেরুপ হারাম, তোমাদের (একের) রক্ত, সম্পদ, ইজ্জত ও চামড়া অপরের জন্য তেমনি হারাম। শোন! আমি কি তোমাদের নিকট পৌছিয়েছি? আমরা বললাম, হ্যা। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাক। (অতঃপর বললেন) উপস্থিত ব্যাক্তি যেন (আমার বানী) অনুপস্হিতের নিকট পৌছিয়ে দেয়। কেননা অনেক প্রচারক এমন ব্যাক্তির নিকট (আমার বানী) পৌছাবে যারা তার চাইতে অধিক সংরক্ষণকারী হবে। বস্তুত ব্যাপারটি তাই। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার পরে একে অপরের গর্দান মেরে কুফরীর দিকে ফিরে যেয়ো না। যে দিন জারিয়্যাহ ইবনু কুদামা কত্যৃক আলা ইবনু হাযরামীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, সেদিন জারিয়্যাহ তার বাহিনীকে বলেছিল, আবূ বাকরার খবর লাভ। তারা বলেছিল এই তো আবূ বাকরা (রাঃ) আপনাকে দেখছেন। আবদুল রহমান বলেনঃ আমার মা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। আবূ বাকরা (রাঃ) বলেছেনঃ (সেদিন) যদি তারা আমার গৃহে প্রবেশ করত, তাহলে আমি তাদেরকে একটি বাশের লাঠি নিক্ষেপ (প্রতিহত) করতাম না। আবূ আবদুল্লাহ বলেনঃ হাদীসে ব্যবহৃত ‘বাহিশতু’ শব্দের অর্থ ‘রামিতু’ অর্থাৎ আমি নিক্ষেপ করেছি।

হাদিস ৬৫৯৯

আহমাদ ইবনু ইশকাব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান মেরে কুফরীর দিকে ফিরে যেয়ো না। 

 হাদিস ৬৬০০

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন যে, বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ লোকদেরকে নীরব হতে বল। তারপর তিনি বললেনঃ আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান মেরে কুফরীর দিকে ফিরে যেয়ো না।

হাদিস ৬৬০১

মুহাম্মদ ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই অনেক ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যাক্তি দাঁড়ানো ব্যাক্তির চাইতে উত্তম। দাড়ানো ব্যাক্তি পদাচারী ব্যাক্তির চাইতে উত্তম। পদাচারী ব্যাক্তি ধাবমান ব্যাক্তির চাইতে উত্তম হবে। যে ব্যাক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে ফিতনা তাকে পেয়ে বসবে। তখন কেউ যদি কোন আশ্রয়স্থল কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন তথায় আত্নরক্ষা করে।

হাদিস ৬৬০২

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যাক্তি-দাড়ানো ব্যাক্তির তুলনায় ভাল (ফিতনামুক্ত) থাকবে, দাঁড়ানো ব্যাক্তি চলমান ব্যাক্তির তুলনায় ভাল থাকবে, চলমান ব্যাক্তি ধাবমান ব্যাক্তির তুলনায় ভাল থাকবে। যে ব্যাক্তি সে ফিতনার দিকে তাকাবে, ফিতনা তাকে পেয়ে বসবে। সুতরাং তখন কেউ যদি (কোথাও) কোন নিরাপদ আশ্রয়স্থল কিংবা আত্নরক্ষার ঠিকানা পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আশ্রয় নেয়।

হাদিস ৬৬০৩

আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহাব (রহঃ) হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ফিতনা কবলিত রজনীতে (অর্থাৎ জঙ্গে জামাল কিংবা জঙ্গে সিফফীনে) আমি হাতিয়ার নিয়ে বের হলাম। হঠাৎ আবূ বাকরা (রাঃ) আমার সামনে পড়লেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাত ভাইয়ের সাহায্যার্থে যাচ্ছি। তখন তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দু-জন মুসলিম তরবারী নিয়ে পরস্পর সংঘর্যের জন্য মুখোমুখী হয়, তাহলে উভয়েই জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, হত্যাকারী তো জাহান্নামী। কিন্তু নিহত ব্যাক্তির কি অপরাধ? তিনি বললেনঃ সেও তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করার সংকল্প করেছিল। বর্ণনাকারী হাম্মাদ ইবনু যায়িদ বলেনঃ আমি এ হাদীসটি আইউব ও ইউনূস ইবনু আবদুল্লাহর কাছে পেশ করলাম। আমি চাচ্ছিলাম তাঁরা এ হাদীসটি আমাকে বর্ননা করবেন। তারা বললেনঃ এ হাদীসটি হাসান বসরী (রহঃ) আহনাফ ইবনু কায়সের মধ্যস্থতায় আবূ বাকরা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬৬০৪

সুলায়মান ইবনু হারব ও মুআম্মাল (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া মাঁমার আইউব থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। বাক্কার ইবনু আবদুল আযীয স্বীয় পিতার মধ্যস্থতায় আবূ বাকরা (রহঃ) থেকে এটি বর্ননা করেছেন এবং শুনদার ও আবূ বাকরা (রাঃ)-এর বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) মানসুর থেকে (পূর্বোক্ত সনদে হাদীসটি বর্ননা করার সময়) মারফূতি রুপে উল্লেখ করেননি।

হাদিস ৬৬০৫

মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (বা) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কল্যাণের বিষয়াদি জিজ্ঞাসা করত। কিন্তু আমি তাকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা তো জাহিলিয়্যতে ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যান আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সে অকল্যাণের পর আবার কি কোন কল্যাণ আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধূমরাচ্ছনতা থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম এর ধূমরাচ্ছনতা কিরুপ? তিনি বললেনঃ এক জামাআত আমার তরীকা ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন করবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। জাহান্নামের প্রতি আহবানকারী এক সম্প্রদায় হবে। যে ব্যাক্তি তাদের আহবানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাদের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি এরুপ পরিস্থিতি আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কি করতে নির্দেশ দেন? তিনি বললেনঃ মুসলিমদের জামাআত ও ইমামকে আকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তখন মুসলমানদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামাআত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেনঃ তখন সকল দলমত পরিত্যাগ করে সম্ভব হলে কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকবে, যতক্ষন না সে অবস্হায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।

হাদিস ৬৬০৬

আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ ও লাইস (রহঃ) আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ একবার মদিনাবাসীদের উপর একটি যোদ্ধাদল প্রভুত্বের সিদ্ধান্ত হল। আমার নামও সে দলের অন্তভুক্ত করা হল। এরপর ইকরামা (রহঃ)-এর সঙ্গে দেখা হলে আমি তাকে এ সংবাদ জানোানাম। তিনি আমাকে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ আমাকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) অবগত করেছেন যে, মুসলিমদের কতিপয় লোক মুশরিকদের সাথে ছিল। এতে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুকাবিলায় মুশরিকদের দল ভারী করছিল। তখন কোন তীর আসত যা নিক্ষিপ্ত হত এবং তাদের কাউকে আঘাত করে এটি তাকে হত্যা করত। অথবা কেউ তাকে তরবারীর আঘাতে হত্যা করত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা আয়াত অবতীর্ন করলেনঃ যারা নিজেদের উপর যুলুম করে তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতারা বলে (৪- ৯৭)।

হাদিস ৬৬০৭

মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দুটি হাদীস বর্ণনা করেছিলেন, যার একটি আমি দেখেছি (বাস্তবায়িত হয়েছে) আর অপরটির অপেক্ষায় আছি। তিনি আমাদের বলেনঃ আমানত মানুষের অন্তর্মুলে প্রবিষ্ট হয়। এরপর তারা কুরআন শিখে, তারপর তারা সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে। তিনি আমাদের আমানত বিলুপ্ত সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মানুষ এক সময় ঘূমাবে। তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেওয়া হবে। তখন একটি বিন্দুর ন্যায় চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। এরপর সে আবার ঘূমাবে। তারপর আবার তুলে নেওয়া হবে, তখন ফোসকার ন্যায় তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। যেমন একটা জ্বলন্ত অঙ্গারকে যদি তুমি পায়ের উপর রেখে দাও এতে পায়ে ফোসকা পড়ে, তখন তুমি সেটাকে ফোলা দেখবে। অথচ তার মধ্যে কিছুই নেই। (এ সময়) মানুষ বেচাকেনা করবে বটে কিন্তু কেউ আমানত আদায় করবে না। তখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন আমানতদার ব্যাক্তি আছেন। কোন কোন লোক সম্পর্কে বলা হবে যে, লোকটি কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বীর, অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান নেই। এরপর হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ আমার উপর দিয়ে এমন একটি যুগ অতিবাহিত হয়েছে তখন আমি তোমাদের কার সাথে লেনদেন করছি এ-সম্পর্কে মোটেও চিন্তা-ভাবনা করতাম না। কেননা, সে যদি মুসলিম হয় তাহলে তার দ্বীনই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবে। আর যদি সে খৃষ্টান হয়, তাহলে তার অভিভাবকরাই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য করবে। কিন্তু বর্তমানে আমি অমূক অমুককে ছাড়া কারো সঙ্গে বেচাকেনা কারব না।

হাদিস ৬৬০৮

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালমা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার হাজ্জাজ আমার কাছে এলেন। তখন সে তাঁকে বলল, হে ইবনু আকওয়া! আপনি সাবেক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলেন না কি- যে বেদুঈন সূলভ জীবন যাপন করতে শুরু করেছেন? তিনি বললেনঃ না। বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বেদুঈন সূলভ জীবন যাপনের অনুমতি প্রদান করেছেন। ইয়াযীদ ইবনু আবূ উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেন যে, যখন উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) নিহত হলেন, তখন সালমা ইবনু আকওয়া (রাঃ) ‘রাবাযায় চলে যান এবং সেখানে তিনি এক মহিলাকে বিয়ে করেন। সে মহিলার ঘরে তার কয়েকজন সন্তান জন্মলাভ করে। মৃত্যুর কয়েক দিন পূর্বে তিনি মদিনায় আগমন করেন। এর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানেই বসবাসরত ছিলেন।

হাদিস ৬৬০৯

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসবে যখন মুসলমানদের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ হবে ছাগল। ফিতনা থেকে দ্বীন রক্ষার্থে পলায়নের জন্য তারা এগুলো নিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় এবং বারিপাতের স্থানসমূহ গিয়ে আশ্রয় নেবে।

হাদিস ৬৬১০

মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে প্রশ্ন করত। এমন কি প্রশ্ন করতে করতে তারা তাঁকে বিরক্ত করে তূলত। একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং বললেনঃ তোমরা (আজ) আমাকে যাই প্রশ্ন করবে, আমি তারই উত্তর প্রদান করব। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি ডানে বামে তাকাচ্ছিলাম। দেখতে পেলাম প্রত্যেকেই আপন বস্ত্রে মাথা গুজে কাঁদছে। তখন এমন এক ব্যাক্তি পারস্পরিক বাকবিতণ্ডার সময় যাকে অন্য এক ব্যাক্তির (যে প্রকৃতপক্ষে তার পিতা নয়) সন্তান বলে সন্মোধন করাতে উঠে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ হুযাফা তোমার পিতা। এরপর উমর (রাঃ) সন্মুখে এলেন আর বললেনঃ আমরা রব হিষেবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসাবে ইসলামকে এবং মুহাম্মাদ -কে রাসুল হিসেবে মেনে পরিতূষ্ট। ফিতনার অনিষ্ট থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আজকের মত এত উত্তম বস্তু এবং এত খারাপ বস্তু আমি আর কখনো প্রত্যক্ষ করিনি। আমার সম্মুখে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। এমনকি আমি সে দুটোকে এ দেয়ালের পাশেই দেখতে পাচ্ছিলাম। কাতাদা বলেনঃ উপরে বর্ণিত হাদীসটি নিন্নোক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলে উল্লেখ করা হয়। ইরশাদ হলোঃ হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে। (৫:১০১)।

হাদিস ৬৬১১

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) সালিমের পিতা আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একদা তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )মিম্বরের পাশে দণ্ডায়মান হয়ে বলেছেনঃ ফিতনা এ দিকে, ফিতনা সে দিকে যেখান থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে। কিংবা বলেছিলেনঃ সূর্যের মাথা উদিত হয়।

হাদিস ৬৬১২

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পূর্ব দিকে মুখ করে বলতে শুনেছেন, সাবধান! ফিতনা সে দিকে যে দিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হয়। 

No comments:

Powered by Blogger.