Monday, June 16 2025

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, অধ্যায়ঃ ফযীলত-১ম




পরিচ্ছেদঃ ১. নবী (ﷺ) এর বংশ মর্যাদা এবং নবুওতপ্রাপ্তির আগে তাকে পাথরের সালাম করা প্রসঙ্গ


৫৭৩৯.    মুহাম্মাদ ইবন মিহরান রাযী ও মুহাম্মাদ ইবন আবদুর রাহমান ইবন সাহম (রহঃ) ... আবু আম্মার শাদ্দাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ওয়াসিলা ইবন আসকা (রহঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন মহান আল্লাহ ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) এর সন্তানদের হতে 'কিনানা' কে বাছাই করে নিয়েছেন, আর কিনানা (এর বংশ) হতে, কুরায়শ কে বাছাই করে নিয়েছেন, আর কুরায়শ (বংশ) হতে বনূ হাশিমকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং বনূ হাশিম থেকে আমাকে বাছাই করে নিয়েছেন।
৫৭৪০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মক্কায় একটি পাথরকে জানি, যে (নাবীরূপে) প্রেরিত হওয়ার আগেও আমাকে সালাম করত; আমি এখনও তাকে নিশ্চিতভাবে চিনতে পারি।

পরিচ্ছেদঃ ২. আমাদের নবী (ﷺ) কে সমুদয় সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান প্রসঙ্গে


৫৭৪১.    হাকাম ইবনু মুসা আবূ সালিহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কিয়ামতের দিনে আদম সন্তানদের নেতা হব এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি যার কবর উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং আমিই প্রথম সুপারিশকারী ও প্রথম সুপারিশ গৃহীত ব্যক্তি।

পরিচ্ছেদঃ ৩. নবী (ﷺ) এর মু'জিযা প্রসঙ্গে


৫৭৪২.    আবূ রবী সুলায়মান ইবনু দাঊদ আতাকী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনতে বললেন, তখন একটি প্রশস্ত অগতীর তলবিশিষ্ট পেয়ালা নিয়ে আসা হল। (তিনি তাতে হাত রেখে বরকতের দুআ করলেন) এবং লোকেরা উযু করতে লাগল। আমি তাদের সংখ্যা ষাট থেকে আশির মধ্যে অনুমান করলাম। রাবী বলেন, আমি পানির দিকে তাকাতে থাকলাম- যা তাঁর আংগুলসমূহের মাঝ থেকে উদ্বেলিত হয়ে বেরিয়ে আসছিল।
৫৭৪৩.    ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী ও আবূ তাহির (রহঃ) ... আনাস মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল আর লোকেরা উযুর পানি খুজছিল কিন্তু তারা তা পেল না। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু উযুর পানি আনা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পানির পাত্রে তাঁর হাত মুবারক রেখে দিলেন এবং লোকদের তা থেকে উযু করতে বললেন, রাবী বলেন। আমি দেখলাম, পানি তাঁর অংগুলিসমূহের নিচ থেকে উদ্বেলিত হয়ে বেবিয়ে আসছে। তখন লোকেরা উযু করল, এমন কি তাদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত সকলেই উযু করল।
৫৭৪৪.    আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণ 'যাওরা' নামক স্থানে ছিলেন। রাবী বলেন, 'যাওরা' হল মদিনার বাজার এবং মসজিদের সেখানকার নিকটে। তখন তিনি একটি পেয়ালা আনতে বললেন, যাতে সামান্য পানি ছিল। তিনি তাঁর (হাতের) পাঞ্জা তাতে রাখলেন। তখন তাঁর অংগুলিসমূহের মাঝ থেকে (পানি) উথলে বের হতে লাগল আর তাঁর সাহাবীগণ সকলেই উযু করলেন। রাবী [কাতাদা (রহঃ)] বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ হামযা (রাঃ) তাঁরা কতজন ছিলেন? বললেন, তাঁরা ছিলেন তিনশ' জনের মত।
৫৭৪৫.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'যাওরা'য় ছিলেন। তখন একটি পানির পাত্র আনা হলো, যা (র পানিতে) তাঁর অংগুলিসমূহ ডুবছিল না, কিংবা ঐ পরিমাণ, যা তাঁর অংগুলিসমূহ ডুবাতে পারে। এরপর তিনি (পূর্বোক্ত হাদীসের) রাবী হিশাম (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
৫৭৪৬.    সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উম্মু মালিক (রাঃ) তার একটি চামড়ার পাত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য ঘি হাদিয়া পাঠাতেন। (কোন কোন সময়) তার ছেলেরা তার কাছে এসে (রুটি মাখাবার জন্য) তরকারি চাইত। কিন্তু তখন তাদের কাছে কিছু থাকত না। তাই তিনি (উম্মে মালিক) সে পাত্রটির কাছে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, যাতে করে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য হাদিয়া পাঠাতেন। তখন তিনি তাতে কিছু ঘি পেয়ে যেতেন। পরে তা তার ঘরের (রুটি মাখাবার) তরকারির কাজ দিতে থাকল। যতক্ষন না সে তিনি সেটি নিংড়ে ফেললেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট আসলে তিনি বললেনঃ তুমি সেটি নিংড়ে ফেলেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সেটিকে (না নিংড়িয়ে) যথাবস্থায় রেখে দিলে তা বিদ্যমান থেকেই যেত।
৫৭৪৭.    সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি খাবার চাইতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল তিনি তাকে অর্ধ ওয়াসক যব খাবার জন্য দিলেন। লোকটি তা থেকে খেতে থাকল আর তার স্ত্রী এবং তাদের উভয়ের মেহমানরাও। অবশেষে সে (একদিন) তা মেপে দেখল। ফলে তা ফুরিয়ে গেলে। পরে সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (অভিযোগ নিয়ে) আসল। তিনি বললেন, তুমি যদি তা মেপে না দেখতে, তা হলে তোমরা তা থেকে খেতে থাকতে এবং তা তোমাদের জন্য (দীর্ঘকাল) বিদ্যমান থাকত।
৫৭৪৮.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ... মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাবুক যুদ্ধের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (যুদ্ধে) বের হলাম। (এ সফরে) তিনি (দুই) সালাত একত্রে আদায় করতেন। অর্থাৎ যোহর ও আসর একত্রে আদায় করতেন আর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। এভাবে একদিন (এমন) হল যে, সালাত বিলম্বিত করলেন। তারপর বের হয়ে এসে যোহব ও আসর একত্রে আদায় করলেন, অতঃপর (তাঁবুতে) প্রবেশ করলেন। তারপর আবার বেরিয়ে এলেন এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। তারপর বললেন, ইনশাআল্লাহ তোমরা আগামীকাল তাবুক প্রস্রবণে পৌছবে আর চাশতের সময় না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে পৌছতে পারবে না। তোমাদের মধ্যে যে (-ই) সেখানে (প্রথমে) পৌছবে, সে যেন তার পানির কিছুই স্পর্শ না করে যতক্ষন না আমি এসে পৌছি। 

আমরা (যথাসময়ই) সেখানে পৌছলাম। (কিন্তু) ইতিমধ্যে দু'ব্যক্তি আমাদের আগে সেখানে পৌছে গিয়েছিল। আর প্রস্রবণটিতে জুতার ফিতার ন্যায় ক্ষীণ ধারায় কিছু সামান্য পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। মুয়ায (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ দুজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা তার থেকে কিছু পানি স্পর্শ করেছ কি? ... তারা দু’জন বলল, হ্যাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুজনকে তিরস্কার করলেন। আর আল্লাহর যা ইচ্ছা, তাদের তাই বললেন। 

রাবী বলেন, তারপর লোকেরা তাদের হাত দিয়ে অঞ্চলি ভরে ভরে প্রস্রবণ থেকে অল্প অল্প করে (পানি) তুলল অবশেষে তা একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ সঞ্চিত হল। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মধ্যে তাঁর দু'হাত এবং মুখ মুবারক ধুলেন এবং পরে তা (পানি) তাতে (প্রস্রবণে) উলটিয়ে (ঢেলে) দিলেন। ফলে প্রস্রবণটি প্রবল পানি ধারায় অথবা রাবী বলেছেন, প্রচুর পরিমাণে প্রবাহিত হতে লাগল। 

আবূ আলী (রহঃ) সন্দেহ করেছেন যে, রাবী এর মধ্যে কোনটি বলেছেন। এবার লোকেরা (চাহিদা) পানি পান করল। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ হে মু'আয যদি তুমি দীর্ঘজিবী হও, তবে আশা করা যায় যে, তুমি দেখতে পাবে, প্রস্রবণের এ স্থানটি বাগানে ভরে গিয়েছে।
৫৭৪৯.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... আবূ হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা 'ওয়াদিল কুরা' এলাকায় এক মহিলার একটি বাগানের কাছে পৌছলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এর পরিমাণ অনুমান কর। আমরা এর পরিমাণ অনুমান করলাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ওয়াসুক (প্রায় পঞ্চাশ মণ/২০০০ কেজি) পরিমাণ অনুমান করলেন এবং (স্ত্রীলোকটিকে) বললেন, আমরা ইনশাআল্লাহ তোমার এখানে ফিরে আসা পর্যন্ত এ পরিমাণ ধরে রাখ। পরে আমরা এগিয়ে চললাম এবং তাবুক পৌছে গেলাম। 

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আজ রাতে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহ তোমাদের উপর দিয়ে বয়ে যাবে। তাই তোমাদের কেউ যেন তার মাঝে দাড়িয়ে না থাকে এবং যার উট আছে, সে যেন তার দড়ি শক্ত করে বেঁধে রাখে। সে রাতে) প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হল। এক ব্যক্তি দাঁড়ালে বাতাস তাকে উঠিয়ে নিল। অবশেষে তাই নামক পাহাড়ে ফেলে দিল। আর (ঐ সময় নিকটবর্তী) ‘আয়লার’ এলাকা প্রধান (শাসক) ইবনুল আলমার দূত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি চিঠি লিখে পাঠালেন এবং তাকে একটি চাঁদর হাদিয়া পাঠালেন। 

তারপর আমরা এগিয়ে চলতে চলতে ‘ওয়াদিল কুরা’ পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীলোকটিকে (বাগানের মালিক) তার বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তার ফল কি পরিমাণে পৌছেছে? সে বলল, দশ ওয়াসক। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দ্রুত যাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা হয়, সে আমার সঙ্গে দ্রুত যেতে পারে। আর যার ইচ্ছা, সে অবস্থান করতে পারে। আমরা বের হয়ে পড়লাম। অবশেষে মদিনার কাছাকাছি পৌছলাম। তখন তিনি বললেন, এ (মদিনা) হল 'তাবা' পবিত্র ও উত্তম স্থান। আর এ হল উহুদ। আর তা এমন পাহাড়, যে আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। 

তারপর বললেন, আননারীদের শ্রেষ্ঠ পরিবার বনূ-নাজ্জার, তারপর বনূ আবদুল আশহাল, তারপর বনূ হারিস ইবনু খাযরাজ, তারপর বনূ সাঈদা। আর আনসারদের প্রতিটি গোত্রই উত্তম। সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) আমাদের সাথে এসে মিলিত হলে (তাঁবু গোত্রের) আবূ উসায়দ (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি কি দেখেন নি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার গোত্রগুলির মাঝে ক্রমানূসারে শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের গোত্রকে তালিকার শেষে রেখেছেন। তখন সা’দ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুজে পেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আনসার গোত্রগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের শেষে রেখেছেন! তখন তিনি বললেন, শ্রেষ্ঠ তালিকাভুক্ত অন্যতম হওয়াও কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়?
৫৭৫০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আমর ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উক্ত সনদে ‘আনসারদের প্রতিটি গোত্রে কল্যাণ রয়েছে’ পর্যন্ত রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি পরবর্তী অংশ সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণনায় উল্লেখ করেন নি। উহায়ব (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে অধিক বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (ইবনুল আলমা)-র জন্য তাদের জনপদগুলো লিখে দিলেন। উহায়ব (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার কাছে চিঠি লিখে পাঠালেন কথাটি উল্লেখ করেন নি।

পরিচ্ছেদঃ ৪. আল্লাহ্‌ তা'আলার উপরে নবী (ﷺ) তাওয়াক কুল এবং তাকে লোকদের (অনিষ্ট) থেকে আল্লাহ্‌ তা'আলার হিফাযত


৫৭৫১.    আবদ ইবনু হুমায়দ, আবূ ইমরান মুহাম্মদ ইবনু জা'ফার ইবনু যিয়াদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নাজদ এর দিকে একটি জিহাদে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পেছন থেকে এসে) একটি কাঁটাবনযুক্ত উপত্যকায় আমাদের পেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাছের তলায় অবতরণ করলেন এবং তার তরবারিখানি সে গাছের একটি শাখায় ঝুলিয়ে রাখলেন। রাবী [জাবির (রাঃ)] বলেন, আর লোকেরা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার জন্য উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ল। 

রাবী বলেন, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এক ব্যক্তি আমার কাছে এল। তখন আমি ঘুমন্ত। সে তরবারিটি হাতে নিল। আমি জেগে উঠলাম, আর সে আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে। আমি কিছু বুঝে না উঠতেই (দেখি) তরবারি তার হাতে উন্মুক্ত। সে আমাকে বলল, কে তোমাকে আমার থেকে রক্ষা করবে? তিনি বলেনঃ আমি বললাম, আল্লাহ। সে দ্বিতীয়বার বলল, তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? তিনি বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে তখন তরবারিটি কোষবদ্ধ করল। আর ওই যে সে বসে আছে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কিছুই বললেন না।
৫৭৫২.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... সিনান ইবনু আবূ সিনান দু'আলী ও আবূ সালাম ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) তিনি ছিলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম সাহাবী। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নাজদ অভিমুখে একটি অভিযানে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফিরে এলেন, তখন তিনিও তাঁর সঙ্গে ফিরে আসেন। একদা দুপুরের বিশ্রামকাল সমুপস্থিত হল ...... তারপর ইবরাহীম ইবনু সা’দ ও মা'মার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৫৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এগিয়ে চললাম। অবশেষে আমরা যখন যাতুর-রিকায় পৌছলাম ...... তারপর যুহরী (রহঃ) বর্নিত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি 'তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আর কোন কিছু বললেন না' কথাটি উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ৫. নবী (ﷺ) যে হিদায়াত ও ইলমসহ প্রেরিত হয়েছেন, তার দৃষ্টান্তের বিবরণ


৫৭৫৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ আমির আশআরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে যে হিদায়াত ও ইলম সহকারে পাঠিয়েছেন; তার দৃষ্টান্ত সে বৃষ্টির ন্যায় যা কোন ভূমিতে বর্ষিত হয়, আর সে ভূমির উৎকৃষ্ট কতকাংশ পানি গ্রহণ করে এবং প্রচুর তারতাজা ঘাস-পাতা উৎপন্ন করে। আর কতকাংশ হল অনুর্বর মাটি, যা পানি আটকিয়ে রাখে, ফলে আল্লাহ তাআলা তা দিয়ে মানুষের উপকার পৌছান এবং তারা তা থেকে পান করে, (অন্যদের) পান করায় ও পশু চরায়। আর (বৃষ্টির পানি) সে ভূমির আরও কতকাংশে বর্ষিত হল যা উঁচু পার্বত্য টিলাময়, যা কোন পানি আটকিয়ে রাখে না আর কোন ঘাস-পাতাও উৎপন্ন করে না। সেই দৃষ্টান্ত হল সে সব লোকের উপমা যারা আল্লাহর দ্বীনের জ্ঞান হাসিল করে এবং আল্লাহ তাদের সে সব দিয়ে উপকৃত করেন যা নিয়ে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। ফলে সে ইলম হাসিল করে অন্যকেও শিক্ষা দেয়। অ্যর তৃতীয় দৃষ্টান্ত হল ঐ লোকদের, যারা তার প্রতি মাথা তুলেও তাকায় না এবং আল্লাহর ঐ হিদায়াতও কবুল করে না- যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৬. উম্মাতের প্রতি নবী (ﷺ) এর মমতা এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর বিষয় থেকে গুরুত্ব সহকারে সতর্কীকরণ


৫৭৫৫.    আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ যা দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন, তার দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দুষ্টান্তের মত, যে তার স্বগোত্রের কাছে এসে বলে, হে আমার কাওম! আমি আমার দুচোখে (শক্র) বাহিনী দেখে এসেছি, আর আমি (সুস্পষ্ট) সতর্ককারী। অতএব, আত্মরক্ষা কর। তখন তার কাওমের একদল তার কথা মেনে নিল এবং রাতের আধারের সুযোগে (স্থান ত্যাগ করে) চলে গেল। আর এক দল তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে ভোর পর্যন্ত স্ব-স্থানে থেকে গেল। ফলে (শক্র) বাহিনী প্রত্যুষে তাদের আক্রমণ করল এবং তাদের সমূলে ধ্বংস করে দিল। অতএব, এ হলো তাদের দৃষ্টান্ত যারা আমাদের আনুগত্য করল এবং আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসরণ করল এবং ওদের দৃষ্টান্ত যারা আমার অবাধ্যতা দেখাল এবং যে সত্য আমি নিয়ে এসেছি তাকে অস্বীকার করল।
৫৭৫৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমার দৃষ্টান্ত ও আমার উম্মাতের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে আগুন জ্বালিয়েছে ফলে মাকড় ও কীট-পতঙ্গ তাতে পড়তে লাগল। আমি তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে (তোমাদের রক্ষার প্রয়াসে) টানছি আর তোমরা সবেগে (হুড়মুড় করে) তাতে পড়তে যাচ্ছো।
৫৭৫৭.    আমর আন-নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৫৮.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এ হল সে সব (হাদীস), যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। এরপর সেগুলি থেকে তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। তার একটি হল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার অবস্থা সে ব্যক্তির অবস্থার ন্যায় যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল, যখন তাতে তার চার পাশ আলোকিত হলো, তখন পতঙ্গ ও সেসব প্রানী যা আগুনে পড়ে থাকে, তাতে পড়তে লাগল আর সে ব্যক্তি সেগুলোকে বাধা দিতে লাগল। কিন্তু তারা তাকে হারিয়ে দিতে তাতে ঢুকে পড়তে লাগল। 

তিনি বললেন, এটাই হল তোমাদের অবস্থা আর আমার অবস্থা। আমি আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধগুলো ধরে রাখি ও বলি, আগুন থেকে দুরে থাক, আগুন থেকে দুরে থাক। আর তোমরা আমাকে হারিয়ে দিয়ে তার মাঝে ঢুকে পড়ছো।
৫৭৫৯.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার দৃষ্টান্তরাজি ও তোমাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত যে আগুন জালাল, ফলে ফড়িং দল আর পতঙ্গ তাতে পড়তে লাগল আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগল। আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ।

পরিচ্ছেদঃ ৭. নবী (ﷺ) এর শেষ নবী হওয়ার বিবরণ


৫৭৬০.    আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার তুলনা এবং অন্য নবীগণের তুলনা সে ব্যক্তির অবস্থার সাথে তুলনীয়, যে একটি প্রসাদ নির্মাণ করল এবং সে তা সুন্দর ও সুদৃশ্য করল। পরে (তা দর্শনে আগত) লোকেরা তার চারদিকে ঘুরে দেখতে লাগল (এবং) বলতে লাগল যে, এর চাইতে সুন্দর কোন প্রাসাদ আমরা দেখিনি। তবে এ একটি ইটের স্থান অসমাপ্ত রয়েছে। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ) আমি হলাম সে ইটখানি।
৫৭৬১.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হল সে সকল হাদীস, যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। তার একটি হল, আবূল কাসিম (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার দৃষ্টান্ত ও আমার আগেকার নাবীগণের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে কতকগুলি ঘর তৈরি করল, তা সুন্দর করল, সুদূশ্য করল এবং পূর্ণাঙ্গ করল কিন্তু তার কোন একটির কোনে একথানি ইটের স্থান ব্যতীত (খালি রাখল)। লোকেরা সে ঘরগুলির চারদিকে চক্কর দিতে লাগল আর সে ঘরগুলি তাদের মুগ্ধ করতে লাগল। অবশেষে তারা বলতে লাগল, এখানে একথানি ইট লাগালেন না কেন? তা হলে তো আপনার প্রাসাদ পূর্ণাঙ্গ হতো। এরপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে আমি-ই হলাম সেই ইটখানি।
৫৭৬২.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার দৃষ্টান্ত এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে একটি আট্টালিকা বানাল এবং তা সুন্দর ও সুদৃশ্য করল। তবে তার কোণগুলোর কেন এক কোণে একটি ইটের জায়গা ছাড়া। লোকেরা তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল আর তা দেখে বিস্মিত হতে লাগল এবং পরস্পর বলতে লাগল, ঐ ইটখানি স্থাপন করা হল না কেন? (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আমি-ই সে ইটখানি আর আমি নাবীগণের মোহর (ও শেষ নবী)।
৫৭৬৩.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার দৃষ্টান্ত এবং নবীগণের দৃষ্টান্ত ...... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৬৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার দৃষ্টান্ত এবং নাবীগণের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে একটি গৃহ নির্মাণ করল এবং সে তা সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ করল কিন্তু একথানি ইটের জায়গা ব্যতীত। লোকেরা তাতে প্রবেশ করতে লাগল এবং তা দেখে বিস্মিত হতে লাগল এবং বলাবলি করতে লাগল, যদি এ একথানি ইটের জায়গা খালি না থাকত (তবে কতই না ভাল হতো)! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি হলাম সে ইটের জায়গায়। আমি আগমন করলাম এবং নাবীগণের ধারাক্রম সমাপ্ত করলাম। 

মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... সালীম ইবনু হাইয়ান (রহঃ) সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি أَتَمَّهَا (পরিপূর্ণ)-এর স্থলে أَحْسَنَهَا (সুন্দর করেছে) বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৮. আল্লাহ্‌ তা'আলা কোন উম্মতের প্রতি রহম করার ইচ্ছা করলে সে উম্মতের নবীকে তাদের আগে তুলে নেন


৫৭৬৫.    (ইমাম মুসলিম বলেন), আবূ উসামা (রহঃ) সুত্রে এ হাদীস আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে, আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহ তা’আলা যখন তার বান্দাদের মাঝে কোন উম্মাতের প্রতি রহমতের ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নাবীকে তাদের আগেই তুলে নেন এবং তাঁকে তাদের যুগের অগ্রগামী ও পুর্ববর্তী করেন। আর যখন কোন উম্মাতের ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নাবীর জীবিত অবস্থায় তাদের আযাব দেন এবং এ অবস্থায় তাদের ধ্বংস করেন যে, তিনি (নবী) তা দেখতে পান। অতঃপর তাদের ধ্বংস দেখে তাঁর চোখ শীতল করেন, যেহেতু তারা তাঁকে অস্বীকার করেছে ও তাঁর আদর্শ অমান্য করেছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৯. আমাদের নবী (ﷺ) এর জন্য হাওয (কাউসার) এর প্রমান এবং হাওযের বিবরণ


৫৭৬৬.    আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমি হাওয এর কাছে তোমাদের জন্য অগ্রগামী (ব্যবস্থাপক)।
৫৭৬৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, উবায়াদুল্লাহ ইবনু মু’আয ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জুনদুব (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৬৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমি ‘হাওয’ (কাওসার) এর কাছে তোমাদের জন্য অগ্রগামী। যে সেখানে আসবে, সেই পান করবে। আর যে তা থেকে পান করবে, সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। আর আমার কাছে এমন কতক দল উপনীত হবে, যাদের আমি চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার ও তাদের মাঝে বাধা সৃষ্টি করা হবে। রাবী আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি যখন তাঁদের কাছে এ হাদীস বর্ণনা করি, তখন নুমান ইবনু আবূ আয়্যাশ শুনে বললেন, তুমি কি সাহল (রাঃ) কে এরূপই বলতে শুনেছো? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। নুমান বললেন, আর আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি অবশ্যই তাকে অধিক রিওয়ায়াত করতে শুনেছি যে, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, এরা তো আমার উম্মাত! তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, তারা আপনার পরে কি আমল করেছে। আমি বলবঃ দূর হও, দূর হও, যারা আমার পরে (দ্বীনে) রদ-বদল করেছে।
৫৭৬৯.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... আবূ হাযিমের (রহঃ) মাধ্যমে সাহল (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং নুমান ইবনু আবূ আয়্যাশ (রহঃ) এর মাধ্যমে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (পূর্ববর্তী) ইয়াকুব (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৭০.    দাঊদ ইবনু উমার যাব্বী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার 'হাওয' এর দূরত্ব এক মাসের পথ, তার সকল কোণ এক সমান, তার পানি রূপার চাইতে সাদা, তার ঘ্রাণ মেশক এর চাইতে সুগন্ধি এবং তার পেয়ালার সংখ্যা আকাশের তারকার সমতুল্য। যে ব্যক্তি তা থেকে পান করবে, সে তার পরে কখনো পিপাসার্ত হবে না। রাবী (ইবনু আবূ মুলায়কা) বলেন, আর আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমি হাওযের পাশে থাকব, যাতে দেখতে পারি যে, তোমাদের মধ্যে কারা আমার কাছে এল। আর আমার সামনে থেকে কিছু লোককে আটকানো হবে, তখন আমি বলব, ইয়া রব্ব! এরা তো আমার লোক এবং আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, আপনি কি জানেন না যে, আপনার পরে এরা কি করেছে? আল্লাহর কসম! এরা আপনার পরে এদের পিছনের দিকেই ফিরে গেছে। রাবী (নাফি) বলেন, তাই বর্ণনাকারী ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) বলতেন, আয়, আল্লাহ! আমরা আপনার আশ্রয় চাচ্ছি, আমাদের পিছনে ফিরে যাওয়া থেকে এবং আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে।
৫৭৭১.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর সাহাবীগণের সন্মুখে বলতে শুনেছি যে, আমি ‘হাওয’ এর কাছে তোমাদের মধ্য থেকে যারা আমার কাছে আসবে, তাদের অপেক্ষায় থাকব। আল্লাহর কসম! আমার নিকট থেকে অবশ্যই কতক লোককে দূর করে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, আয় রব্ব! (এরা তো) আমার-ই এবং আমার উম্মাতেরই (লোক)। আল্লাহ বলবেন, আপনি নিশ্চয়ই জানেন না তারা আপনার পরে কি আমল করেছে। তারা তো তাদের পিছনের দিকেই ফিরে গিয়েছে।
৫৭৭২.    ইউনূস ইবনু আবদুর আ'লা সাদাফী (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আমি হাওয (কাওসার) সম্পর্কে লোকদের আলোচনা করতে শুনতাম। কিন্তু আমি (নিজে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সম্বন্ধে কিছু শুনিনি। পরে যখন একদিন ঐ বিষয়ের আলোচনা এল, এ সময় একটি মেয়ে আমার চুল আচড়িয়ে দিচ্ছিল, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বোধন করতে শুনলামঃ হে লোক সকল! তখন মেয়েটিকে আমি বললাম, তুমি আমার থেকে দুরে সরে যাও। সে বলল, তিনি তো পুরুষদের ডাক দিয়েছেন এবং স্ত্রীলোকদের ডাকেননি। আমি বললাম, আমিও তো লোকদের একজন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের জন্য ‘হাওয’ এর কাছে অগ্রগামী হবো। তাই সাবধান! আমার কাছে তোমাদের এমন কেউ যেন না আসে, যাকে আমার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দেওয়া হবে, যেমন হারানো উটকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর আমি বলতে থাকব, কেন তাদের তাড়ানো হচ্ছে? তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, তারা আপনার পরে কী নতুন বিষয়ের (বিদ'আত) উদ্ভাবন করেছে? তখন আমিও বলব, দুর হও!
৫৭৭৩.    আবূ মা'ন রাকাশী, আবূ বকর ইবনু নাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বারে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল ...... এ সময় উম্মু সালমা (রাঃ) চুল আঁচড়াচ্ছিলেন। তখন তিনি কেশ বিন্যাসকারিণীকে বললেন, আমার মাথা আচড়ানো বন্ধ রাখ। ...... অবশিষ্ট অংশ রাবী কাসিম ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে বুকায়র (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
৫৭৭৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বাইরে এসে উহুদবাসীদের জন্য জানাযার সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করলেন। অতঃপর মিম্বারের দিকে ফিরে এসে বললেন, আমি তোমাদের জন্য অগ্রগামী এবং তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষী। আর আমি, আল্লাহর কসম! এ মুহূর্তে আমার হাওয দেখতে পাচ্ছি। আর আমাকে অবশ্যই পৃথিবীর ভাণ্ডার সমুহের চাবিগুচ্ছ অথবা (বলেছেন,) চাবিসমূহ দেওয়া হয়েছে। আর আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি না যে, তোমরা আমার পরে শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়বে। তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, তোমরা (দুনিয়ার সম্পদের মোহে) প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়বে।
৫৭৭৫.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদিন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের জন্য সালাত আদায় করলেন। তারপর মিম্বরে আরোহণ করে জীবিত ও মৃতদের বিদায়দানকারীর ন্যায় বললেনঃ আমি হাওযের পাশে তোমাদের অগ্রগামী। আর জেনে রাখ, তার প্রস্থ যেমন ‘আয়লা’ থেকে ‘জোহফা'র দূরত্ব। আমি তোমাদের ব্যাপারে ভয় করি না যে, তোমরা আমার পরে শিরক্ব শুরু করবে। তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে দুনিয়াকে ভয় করি যে, এর অর্জনের প্রতিযোগিতায় তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়বে, আর পরস্পর হানাহানি করবে; ফলে তোমরা বিনাশ হয়ে যাবে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীরা বিনাশ হয়েছে। উকবা (রাঃ) বলেন, এই ছিল মিম্বরের উপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার শেষ দেখা।
৫৭৭৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ‘হাওযে'র কাছে তোমাদের অগ্রগামী। আর আমি অবশ্যই কতক দলের ব্যাপারে বিতর্ক করব এবং আমি অবশ্যই তাদের ব্যাপারে পরাভূত হয়ে যাব। তখন আমি বলব, আয় রব্ব! (এরা তো) আমার সহচর, আমার সাথী। তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না যে, তারা আপনার পরে কি উদ্ভাবন করেছে?
৫৭৭৭.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি ‘আমার সহচর, আমার সাথী’ কথাটি উল্লেখ করেন নি।
৫৭৭৮.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম এবং ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পূর্বোক্ত আ'মাশ (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে শু'বা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে মুগীরা সুত্রে রয়েছে 'আমি আবূ ওয়াইল (রাঃ) কে বলতে শুনেছি'।
৫৭৭৯.    সাঈদ ইবনু আমর আশআসী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাশ (রহঃ) ও মুগীরা (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৫৭৮০.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) ... হারিসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তাঁর হাউয (এর পরিধি) মদিনা এবং সানআর মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। তারপর মুসতাওরিদ (রহঃ) তাঁকে বললেন, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাত্র সন্মন্ধে আলোচনা শুনেছেন কি? হারিসা (রাঃ) উত্তর দিলেন, না। তখন মুসতাওরিদ (রহঃ) বললেন, সেখানে নক্ষত্রের (সংখার) মত পাত্রসমূহ দেখা যাবে।
৫৭৮১.    ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আর'আরা (রহঃ) ... হারিসা ইবনু ওয়াহব খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি এবং তিনি অনুরূপভাবে হাউযের বর্ণনা দিলেন। তবে তিনি মুসতাওরিদের ও তাঁর কথা এবং তার বাণী উল্লেখ করেন নি।
৫৭৮২.    আবূর রাবী যাহরানী এবং আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সামনে (এ জগতে) একটি হাউয থাকবে যার উভয় প্রান্তের দুরত্ব হবে জারবা ও আযরুহার মধ্যবর্তী স্থানের সমান।
৫৭৮৩.    যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সামনে এমন একটি হাউয থাকবে (যার প্রশস্থতা) জারবা এবং আযরুহার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। ইবনু মুসান্নার বর্ণনায় 'আমার হাউয' রয়েছে।
৫৭৮৪.    ইবনু নুমায়র ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ হতে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে উবায়দুল্লাহ অধিক বর্ণনা করেন। তিনি বলেন আমি তাকে [নাফি (রহঃ) এর নিকট জারবা ও আযরুহা সম্পর্কে] জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, সিরিয়ার অদুরে দু'টি জনপদ। উভয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব তিন রাতের পথ। আর ইবনু বিশরের বর্ণনামতে 'তিন দিনের পথ'।
৫৭৮৫.    সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উবায়দুল্লাহ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৭৮৬.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সামনে একটি হাউয হবে যার প্রশস্থতা জারবা ও আযরুহার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। সেখানে আকাশের নক্ষত্রের মতো বহু পেয়ালা থাকবে। যে ব্যক্তি এখানে এসে ঐ হাউয থেকে পান করবে, পরে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না।
৫৭৮৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেছি, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হাউযের পাত্র (কত) হবে? তিনি বললেন, যার কাবজায় আমার জীবন, তাঁর কসম! সেই হাউযের পাত্র আকাশের নক্ষত্র ও তারকারাজির চেয়েও বেশি, এমন আঁধার রাতে যা মেঘমুক্ত (এবং যাতে চাঁদের আলো নেই) সেগুলো জান্নাতেরই পাত্র। যে ঐ পাত্র থেকে পান করবে, শেষ পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না। ঐ হাউযের মধ্যে জান্নাত থেকে প্রবাহিত দুটো নালার সংযোগ রয়েছে। যে ব্যক্তি ঐ হাউয থেকে পান করবে, সে আর পিপাসার্ত হবে না। সেই হাউযের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান হবে। সেই হাউযের প্রশস্ততা আম্মান থেকে আয়লার মধ্যবর্তী দুরতের সমান। সেই হাউযের পানি দুধের চেয়ে বেশি সাদা এবং মধুর চেয়েও বেশি মিষ্টি।
৫৭৮৮.    আবূ গাসসান মিসমাঈ, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার হাউযের পাড়ে থাকবো। ইয়েমেনবাসীদের জন্য সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেবো। আমি আমার লাঠি দিয়ে হাউযের পানির উপর আঘাত করবো যাতে তাদের উপর প্রবাহিত হয়। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সে হাউযের প্রশস্ততা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ আমার এ স্থান থেকে আম্মানের দূরত্বের সমান। আবার সে হাউযের পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেনঃ দুধের চেয়ে বেশি সাদা ও মধুর চেয়ে বেশি মিষ্টি। জান্নাত থেকে প্রবাহিত দু'টো নালা দিয়ে সে হাউযের মধ্যে পানি আসতে থাকবে। তার একটি (নালা) সোনার এবং অপরটি রূপার। 

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) হিশাম থেকে সাওবান (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। শুধু এতটুকু পার্থক্য যে, এ রিওয়ায়াতে (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কিয়ামতের দিন হাউযের পাড়ে থাকবো।
৫৭৮৯.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সাওবান (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাউযের হাদীস বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি ইয়াহইয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) কে বললেন, আমি আবূ আওয়ানা (রাঃ) থেকেও এই হাদীস শুনেছি। ইয়াহইয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) বললেন, আমি শু’বা (রাঃ) থেকে এই হাদীস শুনেছি। তারপর আমি বলেছি যে, আপনি এ হাদীস সম্পর্কে আমাকে একটু সময় দিন, তিনি আমাকে সময় দিলেন এবং আমাকে হাদীসটি শুনিয়ে দিলেন।
৫৭৯০.    আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই আমি আমার হাউয থেকে কিছু সংখ্যক লোককে সরিয়ে দেবো, যেভাবে অপরিচিত উট সরিয়ে দেয়া হয়। 

উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বলেছেন।
৫৭৯১.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার হাউযের (প্রশস্ততার) পরিমাণ আয়লা এবং ইয়ামনের সান'আর দূরত্বের সমান। আর সেখানে (পানির) পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের (সংখ্যার) মত (অগণিত)।
৫৭৯২.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই হাউযের পাড়ে এমন কিছু লোক আসবে যারা দুনিয়াতে আমার সাহচর্য লাভ করেছিল। এমন কি যখন আমি তাদের দেখতে পাব এবং তাদেরকে আমার সম্মুখে নিয়ে আনা হবে, তখন আমার নিকট আসতে তাদের বাধা দেওয়া হবে। তারপর আমি বলব, আয় রব্ব! এরা আমার সাথী, এরা আমার সাথী। তখন আমাকে বলা হবে, অবশ্য আপনি জানেন না, আপনার পর এরা কি উদ্ভাবন (কিরূপ বিদ'আত) করেছে।
৫৭৯৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আলী ইবনু হুজর ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একই অর্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে অতিরিক্ত রয়েছে 'তার পাত্র নক্ষত্রের সংখ্যা মত'।
৫৭৯৪.    আসিম ইবনু নাযর তামীমী ও হুরায়ম ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার হাউযের দুই পার্শ্বের দূরত্ব এতটা, যতটা দূরত্ব মদিনা ও সান’আর মধ্যে।
৫৭৯৫.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, এই হাদীসে বর্ণনাকারীদ্বয় সন্দেহ করে বলেছেন, ‘অথবা মদিনা ও উম্মানের দূরত্বের সমান।’ আবু আওয়ানার বর্ণনায় (نَاحِيَتَىْ حَوْضِي স্থলে রয়েছে) لاَبَتَىْ حَوْضِي (অর্থ অভিন্ন)।
৫৭৯৬.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ রুযযী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হাউযের নিকট আকাশের তারকারাজির মতো অসংখ্য স্বর্ণ ও রোপ্যের পানপাত্র দেখা যাবে। 

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এতে অধিক রয়েছে, "অথবা আকাশের নক্ষত্রের সংখ্যার চেয়েও অধিক।"
৫৭৯৭.    ওয়ালীদ ইবনু শুজা ইবনু ওয়ালীদ আস-সানী (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ হাউযের নিকট আমি তোমাদের অগ্রগামী হবো। এর দু' প্রান্তের দুরত্ব সানআ ও আয়লার দূত্বের সমান। তার পাত্রগুলো যেন নক্ষত্রের মতো।
৫৭৯৮.    কুতাহাবা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আমির ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার গোলাম নাফি'র মাধ্যমে জাবির ইবনু সামুরার নিকট লিখে পাঠালাম যে, আপনি আমাকে এমন কোন হাদীস সম্পর্কে অবহিত করুন যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন। তিনি বলেন, তারপর তিনি আমাকে লিখেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, "আমি হাউযের উপর তোমাদের অগ্রগামী থাকবো।"

পরিচ্ছেদঃ ১০. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পক্ষে ফেরেশতাগনের যুদ্ধ করা দ্বারা তাঁকে সম্মান দেখানো এবং উহুদ যুদ্ধে নবী (ﷺ) এর পক্ষে জিবরীল ও মীকাইল (আঃ) যুদ্ধ করা


৫৭৯৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ উসামা (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডানে এবং বামে দুই ব্যক্তিকে দেখতে পাই। তাঁদের পরনে সাদা পোশাক ছিল। এর আগে বা পরে তাঁদেরকে আর কখনো দেখি নি। (আসলে তাঁরা ছিলেন) জিবরীল ও মিকাঈল (আলাইহিমুস সালাম)।
৫৮০০.    ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, উহুদ যুদ্ধে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডানে ও নামে দুই ব্যক্তিকে দেখতে পাই, যাদের পরনে ছিল সাদা পোশাক। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষে যুদ্ধ করছিলেন, ঘোরতর যুদ্ধ (করছিলেন)। এর আগে ও পরে আমি তাঁদের দেখি নি।

পরিচ্ছেদঃ ১১. নবী করীম (ﷺ) এর বীরত্ব এবং যুদ্ধে তার আগ্র থাকা


৫৮০১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ রবী আতাকী ও আবূ কামিল (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষের মধ্যে অতি সুন্দর, অতি দানশীল এবং শ্রেষ্ঠ বীর ছিলেন। কোন এক রাতে মদিনাবাসীরা ঘাবড়িয়ে পড়েছিল। যেদিক থেকে শব্দ আসছিল, লোকেরা সেদিকে ছুটে চলল। পথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাদের সাক্ষাত হয় ও তখন তিনি ফিরে আসছিলেন। কারণ শব্দের দিকে প্রথম তিনই ছুটে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আবূ তালহা (রাঃ) এর জ্বীনবিহীন ঘোড়ায় আরোহিত ছিলেন। তার কাঁধে তরবারি ছিল। তিনি বলছিলেনঃ তোমরা ভীত হয়ো না, তোমরা তীত হয়ো না। তিনি আরো বললেনঃ আমি এ ঘোড়াকে পেয়েছি সমুদ্রের মতো। অথবা বললেন, এ তো সমুদ্র। ইতিপূর্বে এটি ছিল ধীর গতির একটি ঘোড়া।
৫৮০২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (কোন এক সময়) মদিনায় ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালহা (রাঃ) এর একটি ঘোড়া চেয়ে নিলেন। এটিকে ‘মনদূব’ বলা হতো। তিনি তার উপর আরোহণ করলেন। তাঁরপর বললেনঃ আমি ভয়ের কোন কারণ দেখতে পাই নি। আর এটিকে (ঘোড়াটিকে) সমুদ্রের মতো পেয়েছি।
৫৮০৩.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ইবনু বাশশার ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এ হাদীস বর্ণনা করেন। ইবনু জা'ফরের হাদীসে 'আমাদের ঘোড়া' বলা হয়েছে, 'আবূ তালহা (রাঃ) এর' কথা বলা হয় নি। খালিদ (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আমি আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ১২. নবী (ﷺ) ছিলেন (বসন্তের মলয়) বায়ুর চেয়েও অধক দানশীল


৫৮০৪.    মানসুর ইবনু আবূ মুযাহিম ও আবূ ইমরান মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দানশীলতায় সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। আর অন্য সময়ের চেয়ে রমযান মাসে তাঁর দানশীলতা অত্যধিক হতো। কেননা জিবরীল (আলাইহিস সালাম) প্রতি বছর রমযান মাসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। রমযান শেষ হওয়া পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সামনে কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। যখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি কল্যাণ প্রবাহের (বসন্তের) বাতাসের চেয়েও অধিক দানশীল হতেন। 

আবূ কুরায়ব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৩. রাসুল (ﷺ) এর সুন্দরতম চরিত্র মাধুর্য


৫৮০৫.    সাঈদ ইবনু মানসুর ও আবূ রবী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দশ বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করেছি। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আমাকে উহ শব্দও বলেন নি এবং কোন সময় আমাকে এটা কেন করলে, 'ওটা কেন কর নি' তাও বলেন নি। আবূ রবী (রহঃ) অতিরিক্ত বলেছেন, এমন বিষয় সম্পর্কে যা খাদিমের করা উচিত নয়’ এবং তার বর্ণনায় আল্লাহর কসমের উল্লেখ নেই।
৫৮০৬.    শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮০৭.    আহমদ ইবনু হাম্বল ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন তখন আবূ তালহা (রাঃ) হাত ধরে আমাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আনাস বুদ্ধিমান (চৌকষ) ছেলে, সে আপনার খিদমত করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি সফর ও বাড়িতে অবস্থানকালে তাঁর খিদমত করেছি। আল্লাহর কসম! আমি যে কোন কাজই করেছি, 'কেন তুমি এটি এমন করলে', এ রকম তিনি বলেন নি। আর যে কোন কাজই আমি করি নি, 'কেন তুমি এটি এমন কর নি' এরকমও বলেন নি।
৫৮০৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নয় বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করেছি। আমার জানা নেই, তিনি কখনো আমাকে বলেছেন, ‘কেন তুমি এ কাজ করলে?’ এবং কোন বিষয়ে আমাকে কখনো দোষারোপও করেন নি।
৫৮০৯.    আবূ মা'আন রাক্কাশী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। একদিন তিনি আমাকে একটি কাজে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যাব না। অথচ আমার অন্তরে ছিল, যে কাজে আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিয়েছেন, আমি সে কাজে যাব। তারপর আমি বের হয়ে ছেলেদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা বাজারে খেলা করছিল। হঠাৎ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন দিয়ে এসে আমার ঘাড় ধরলেন। আনাস বলেন, আমি তাঁর দিকে তাকালাম তখন তিনি হাসছিলেন। 

তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে উনায়স! তুমি কি ওখানে গিয়েছিলে, যেখানে তোমাকে যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলাম? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি অবশ্যই যাচ্ছি। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি নয় বছর তাঁর খিদমত করেছি, কিন্তু আমার জানা নাই, কোন কাজ আমি করেছি সে সম্পর্কে বলেন নি, এমন এমন কেন করলে কিংবা কোন কাজ করি নি, সে সম্পর্কে বলেন নি, অমুক অমুক কাজ কেন করলে না।
৫৮১০.    শায়বান ইবনু ফররুখ ও আবূ রবী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. রাসুল (ﷺ) এর বদান্যতা


৫৮১১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কেউ কিছু চাইলে কোন দিন তিনি 'না' বলেন নি।
৫৮১২.    আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহঃ) সুত্রে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৫৮১৩.    আসিম ইবনু নযর তায়মী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তা দিয়ে দিতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। তিনি তাকে এত বেশি ছাগল দিলেন যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর সে ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে তাদের বললো, হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এত বেশি) দান করেন যে, তিনি 'ক্ষুধার্ত' থাকার (অভাবগ্রস্ত হওয়ার) ভয় করেন না।
৫৮১৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ছাগলগুলো চাইলে তিনি তাকে তা দিয়ে দিলেন। তারপর সে ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গিয়ে বললো, হে আমার জাতি (ভাইয়েরা)! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি দান করেন যে, তিনি অভাবের ভয় করেন না। আনাস (রাঃ) বলেন, এমন হত যে, মানুষ দুনিয়ার উদ্দেশ্যে মুসলমান হত। সে কিন্তু ইসলাম গ্রহনের পরেই (তার অবস্থা এমন হত) তার কাছে দুনিয়া ও দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের চেয়ে ইসলামই অধিক প্রিয় হয়ে যেত।
৫৮১৫.    আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ করেন। তারপর তাঁর সঙ্গে যে মুসলমানরা ছিলেন, তাদের নিয়ে তিনি বের হন। আর তাঁরা সকলেই হুনায়নে যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে মহান আল্লাহ তাঁর দ্বীনের এবং মুসলমানদের সাহায্য করেন। ঐ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ান ইবনু উমাইয়াকে একশ উট দান করেন। তারপর একশ উট, আবার আরেক শ' উট দান করেন। 

ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রহঃ) আমাকে বলেছেন যে, সাফওয়ান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দান করলেন এবং এমন পরিমাণে আমাকে দান করলেন যে, তিনি আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি ছিলেন, অথচ আমাকে লাগাতার দান করতে থাকলেন, এমন কি তিনি আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি হয়ে গেলেন।
৫৮১৬.    আমর আন-নাকিদ, ইসহাক ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি আমাদের নিকট বাহরাইন থেকে মাল আসে, তাহলে তোমাকে এত, এত, এত পরিমাণ দিব এবং তিনি উভয় হাত মিলিয়ে ইশারা করলেন। তারপর বাহরাইন থেকে মাল আসার পূবেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয়ে যায়। পরে আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট বাহরাইন থেকে মাল আসে। তিনি একজন ঘোষককে এই মর্মে ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যার কিছু ওয়াদা অথবা ঋণ রয়েছে, সে যেন তা নিতে আসে। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন যে, যদি বাহরাইন থেকে আমাদের নিকট মাল আসে, তাহলে তোমাকে এত, এত, এত পরিমাণ দিব। এ কথা শুনে আবূ বকর (রাঃ) এক অঞ্জলি উঠালেন এবং বললেন, গুণে দেখ। আমি তা গুণে দেখলাম তাতে পাঁচশ রয়েছে। তারপর তিনি বললেন, এর আরো দ্বিগুন তুমি নিয়ে নাও।
৫৮১৭.    মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট (বাহরাইনের আমীর) আ'লা ইবনু হাযরামীর পক্ষ থেকে মাল এল তখন আবূ বাকর (রাঃ) ঘোষনা দিলেন যার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ঋন আছে অথবা অঙ্গীকার রয়েছে, সে যেন আমার নিকট আসে। ...... বাকী হাদীস ইবনু উয়ায়নার অনুরূপ।

পরিচ্ছেদঃ ১৫. ছেলেদের প্রতি নবী (ﷺ) এর দয়া ও বিনয় এবং তার মর্যাদা


৫৮১৮.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাত্রে আমার একটি সন্তান জন্মলাভ করে, আমি তার নাম আমার পিতা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর নামে রাখি। তারপর তিনি ঐ সন্তানকে উম্মে সাইফ নামক একজন মহিলা কে দিলেন। তিনি ছিলেন একজন কর্মকারের স্ত্রী। কর্মকারের নাম আবূ সাইফ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আবূ সাইফ এর নিকট যাচ্ছিলেন আর আমিও তার সাথে যাচ্ছিলাম। যখন আমরা আবূ সাইফের ঘরে উপস্থিত হই, তখন সে তার হাঁপর বা ফুঁকনীতে ফুঁ দিচ্ছিল, পূর্ণ ঘর ধোঁয়ায় ভরপুর ছিল। 

আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগে দৌড়ে গিয়ে আবূ সাইফকে বললাম, তুমি একটু অপেক্ষা কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসছেন। সে অপেক্ষা করল তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেকে ডাকালেন এবং তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং যা আল্লাহর ইচ্ছা হয়েছে, তা বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি ঐ ছেলেকে দেখলাম, সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে বড় বড় শ্বাস ফেলছিল। তা দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়েছিল। তখন তিনি বললেনঃ চোখ কাঁদছে, মন ব্যথিত হচ্ছে, মুখে আমরা তা-ই বলব; যা রাব্বূল আলামীন পছন্দ করেন। হে ইবরাহীম! আল্লাহর কসম! আমরা তোমার কারণে (বিচ্ছেদে) দুঃখিত।
৫৮১৯.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিশুদের প্রতি বেশি দয়া প্রদর্শনকারী কাউকে আমি দেখিনি। তিনি বলেন, (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছেলে) ইবরাহীম (রাঃ) মদিনার আওয়ালী (চড়াই) অঞ্চলে দুধপান করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে যেতেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে যেতাম। তিনি সে (দাইয়ের) ঘরে প্রবেশ করতেন, আর সেখানে ধোঁয়া হতো। (কেননা) তার বংশ কর্মকার ছিল। তিনি ছেলেকে কোলে নিতেন এবং স্নেহ করতেন। পরে তিনি ফিরে আসতেন। 

আমর ইবনু সাঈদ (রাঃ) বলেন, যখন ইবরাহীম (রাঃ) ইন্তেকাল করেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইবরাহীম আমার পুত্র, দুধপান করা অবস্থায় ইন্তেকাল করেছে। তার জন্য দু'জন ধাত্রী রয়েছে, যারা জান্নাতে তাকে দুধপান (করার সময়সীমা পর্যন্ত) দুধপান করাবে।
৫৮২০.    আবূ বাকর ইবনু শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গ্রাম্য কিছু আরবী লোক এলো। তারা জিজ্ঞাসা করল, আপনারা কি আপনাদের শিশুদের স্নেহ করেন? উপস্থিত সকলে বললেন, হ্যাঁ। তখন তারা (গ্রাম্যরা) বললেন, কিন্তু আল্লাহর কসম! আমরা তো তাদের স্নেহ করি না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি করবো, যদি আল্লাহ তোমাদের থেকে দয়া দূর করে দিয়ে থাকেন। ইবনু নুমায়রের রিওয়ায়াতে আছে, তোমার অন্তর থেকে ......।
৫৮২১.    আমর আন-নাকিদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলেন যে, তিনি (ইমাম) হাসান (রাঃ) কে চুম্বন করছেন। তখন আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার দশটি সন্তান রয়েছে। আমি তাদের কাউকে চুম্বন করি নি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা দয়া করে না তাদের প্রতি (আল্লাহ কর্তৃক) দয়া করা হয় না।
৫৮২২.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮২৩.    যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু মানসুর, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না।
৫৮২৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু আবূ উমার ও আহমদ ইবনু আবদা (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে আ'মাশের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. নবী (ﷺ) এর অধিক লজ্জা


৫৮২৫.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, যুবায়র ইবনু হারব মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও আহমদ ইবনু সিনান (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দানশীন কুমারীর চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। আর যখন তিনি কোন বস্তুকে অপছন্দ করতেন, আমরা তাঁর চেহারা মুবারক থেকে তা অনুভব করতে পারতাম।
৫৮২৬.    যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) এর নিকট গিয়েছিলাম যখন মুআবিয়া (রাঃ) কুফায় এসেছিলেন। মুআবিয়া (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে বর্ণনা দিয়ে বললেন, তিনি অশ্লীল ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা বলতেন না। মুআবিয়া (রাঃ) আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যার চরিত্র ভাল। উসমান বললেন, যখন তিনি মুআবিয়া (রাঃ) এর সঙ্গে কুফায় এসেছিলেন।
৫৮২৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে একই সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর মৃদু হাসি এবং উত্তম সমাজ জীবন যাপন


৫৮২৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সিমাক ইবনু হারব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অনেক। তিনি ফজরের সালাত যেখানে আদায় করতেন, সূর্যোদয়ের পূর্বে সে মুসল্লা থেকে উঠতেন না। তারপর যখন সূর্য উঠতো, তখন তিনি উঠে দাঁড়াতেন। লোকেরা কথাবার্তা বলতো, জাহেলী যুগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো এবং হাসতো আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসতেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. স্ত্রীলোকদের প্রতি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দয়া এবং তাদের প্রতি কোমল আচরনের নির্দেশ


৫৮২৯.    আবূ রবী আতাকী, হামিদ ইবনু উমর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ছিলেন। আনজাশাহ নামক একজন হাবশী ক্রীতদাস হুদী (গীত) গাইছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আনজাশাহ! ধীরে, 'কাঁচের দ্রব্য' অর্থাৎ কাঁচের ন্যায় ভঙ্গুর নারীদের বহনকারী উটগুলোকে (সতর্কতার সাথে) হাঁকাও।
৫৮৩০.    আবূ রবী আতাকী, হামিদ ইবনু উমর ও আবূ কামিল (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮৩১.    আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের কাছে এলেন। আনজাশাহ নামক একজন উট চালক তাঁদের উটকে হাঁকাচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দুর্ভাগ্য, ওহে আনজাশাহ! কাঁচপাত্র (রূপী নারীদের নিয়ে) ধীরে চালাও। আবূ কিলাবা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কথা বলেছেন যা তোমাদের কেউ বললে তাকে দোষারোপ করা হতো।
৫৮৩২.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ কামিল (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু সুলাইম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের সঙ্গে ছিলেন এবং একজন উট চালক তাঁদের উট হাঁকাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আনজাশাহ! কাঁচপাত্র নিয়ে ধীরে চালাও।
৫৮৩৩.    ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন সুকণ্ঠ 'হুদী' গায়ক ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ধীরে চল, ওহে আনজাশাহ! কাঁচপাত্রগুলো ভেঙ্গে ফেলো না। অর্থাৎ দুর্বল নারীদের (কষ্ট দিও না)।
৫৮৩৪.    ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তবে 'সুকণ্ঠ গায়ক' কথাটি উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. সাধারনত মানুষরা (ﷺ) এর সান্নিধ্যে প্রদান এবং তার মাধ্যমে তাদের বরকত লাভ এবং তাদের জন্য তার বিনয়


৫৮৩৫.    মুজাহিদ ইবনু মূসা, আবূ বাকর ইবনু নযর ইবনু আবূ নযর এবং হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভোরের সালাত আদায় করতেন তখন মদিনার খাদিমরা তাদের পাত্রে করে পানি নিয়ে আসত। তাঁর কাছে কোন পাত্র আনা হলে তিনি তাতে হাত ডুবিয়ে দিতেন। আর শীতের দিনেও কখনো কখনো তিনি হাত ডুবিয়ে দিতেন।
৫৮৩৬.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি ক্ষৌরকার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল মুড়াচ্ছে আর সাহাবীরা তার চারপাশ ঘিরে রেখেছেন। তাঁরা চাইতেন যে, কোন চুল (যেন মাটিতে না পড়ে যায়), যেন কারো না কারো হাতে পড়ে।
৫৮৩৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মহিলার বুদ্ধিতে কিছু ক্রটি ছিল। সে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহু! আপনার সাথে আমার প্রয়োজন আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে অমুকের মা! তুমি যে কোন গলি দেখে নাও, (তুমি ডাক দিলে সেখানে) আমি তোমার কাজ করে দেব। তারপর তিনি কোন পথের মধ্যে তার সাথে নির্জনে দেখা করলে সে তার কাজ সেরে নিল।

পরিচ্ছেদঃ ২০. পাপ কাজ থেকে নবী (ﷺ) এর বহু দূরে থাকা এবং মুবাহ (বৈধ) কাজের মধ্যে অধিক সহজটিকে গ্রহন করা, (নিজের ব্যাপারে প্রতিশোধ গ্রহন না করা) এবং আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রতিশোধ গ্রহন করা


৫৮৩৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দু'টো বিষয়ের কোন একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দেওয়া হতো, তখন তিনি সহজটি গ্রহণ করতেন, যদি না তা পাপের হতো। আর যদি তা দুষনীয় (পাপকর্ম) হতো, তবে তিনি তা থেকে সকলের চাইতে দুরে থাকতেন। নিজের জন্য তিনি কোন দিন প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না, তবে মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হলে (প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন)।
৫৮৩৯.    যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আহমাদ ইবনু আবদা, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে মালিক (রাঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮৪০.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এমন দুটৈা বিষয়ের ইখতিয়ার দেওয়া হতো যার একটি অপরটির চেয়ে সহজ, তখন তিনি সহজটিকেই গ্রহণ করতেন, যদি তা দোষের (পাপের) না হতো। আর দোষেণীয় (পাপের) হলে তিনি তা থেকে সর্বাধিক দুরে থাকতেন।
৫৮৪১.    আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হিশাম (রাঃ) সূত্রে উক্ত সনদে বর্নিত "দু'টোর মধ্যে সহজটি" ...... পর্যন্ত বর্ণনা করেন এবং তারা উভয়ে পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি।
৫৮৪২.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজ হাতে কোন দিন কাউকে মারেন নি, কোন স্ত্রীলোককেও না, খাদিমকেও না, আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া। আর যে তার ক্ষতি করেছে, তার থেকে প্রতিশোধও গ্রহণ করেননি। তবে মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহর মর্যাদা হানিকর কোন কিছু করলে তিনি তার প্রতিশোধ নিয়েছেন।
৫৮৪৩.    আবূ বাকর-ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) একই সনদে হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁদের একে অন্য থেকে কিছু অধিক বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২১. নবী (ﷺ) এর (মুবারক) দেহের সুরভী ও তার স্পর্শ কোমলতা


৫৮৪৪.    আমর ইবনু হাম্মাদ ইবনু তালহা কান্নাদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যোহরের সালাত আদায় করলাম। তারপর তিনি তাঁর পরিবারের উদ্দেশ্যে বের হলেন, আমিও তাঁর সঙ্গে বের হলাম। সামনে কয়েকটি শিশু এলো। তিনি একজন একজন করে এদের প্রত্যেকের গালে হাত বুলালেন। রাবী বলেন, তিনি আমার গালেও হাত বুলালেন। আমি তাঁর হাতে এমন শীতলতা ও সুগন্ধি পেয়েছি যেন তিনি আতর বিক্রেতার কৌটা থেকে হাত বের করেছেন।
৫৮৪৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (মূবারক দেহের) চেয়ে বেশি সুগন্ধিময় কোন আম্বর, মেশক বা অন্য কোন বস্তুর ঘ্রাণ আমি গ্রহণ করি নি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (মুবারক দেহের) চেয়ে কোমল কোন রেশম বা মোলায়েম কাপড় আমি স্পর্শ করিনি।
৫৮৪৬.    আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর দারিমী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ফর্সা উজ্জ্বল বর্ণের। তাঁর ঘাম যেন মুক্তা। তিনি চলার সময় সামনের দিকে দিকে ঝুঁকে চলতেন। আমি এমন কোন মোলায়েম কাপড় বা রেশম স্পর্শ করিনি যা তাঁর (মুবারক) হাতের তালুর মতো কোমল এবং মেশক ও আম্বরের মধ্যেও আমি ঐ সুগন্ধ পাইনি যা আমি তাঁর মুবারক দেহে পেয়েছি।

পরিচ্ছেদঃ ২২. নবী (ﷺ) এর ঘামের সুগন্ধি এবং তা থেকে বরকত লাভ


৫৮৪৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে আসলেন এবং বিশ্রাম নিলেন। তিনি ঘামছিলেন আর আমার মা একটি শিশি নিয়ে তা মুছে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মে সুলায়ম! একি করছ? আমার মা বললেন, এ আপনার ঘাম, যা আমরা সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করি, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা সুগন্ধি।
৫৮৪৮.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সুলায়মের ঘরে যেতেন এবং তার বিছানায় ঘুমাতেন আর তিনি (উম্মু সুলায়ম) তখন ঘরে থাকতেন না। আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন তিনি এলেন এবং তার বিছানায় ঘুমালেন। অতঃপর তিনি (উম্মে সুলায়ম) এলে তাকে বলা হল, ইনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার ঘরে, তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, উম্মু সুলায়ম ঘরে এলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘেমেছেন, আর তাঁর ঘাম চামড়ার বিছানার উপর জমেছে। উম্মে সুলায়ম তার কৌটা খুললেন এবং সে ঘাম মুছে মুছে শিশিতে ভরতে লাগলেন। হঠাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠে তাকে বললেন, তুমি কি করছ, হে উম্মু সুলায়ম! তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের শিশুদের বরকতের উদ্দেশ্যে নিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঠিকই করেছ।
৫৮৪৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উম্মু সুলায়ম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসতেন এবং দিবা-বিশ্রাম নিতেন। উম্মু সুলায়ম তার জন্য একটা চামড়া বিছিয়ে দিলে তিনি তার উপর ‘কায়লুলা' মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করতেন। তিনি খুব ঘামতেন আর উম্মু সুলায়ম তার ঘাম জমা করতেন এবং সুগন্ধির মধ্যেও শিশিতে তা রাখতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে উম্মু সুলায়ম! এ কী করছ? তিনি বললেন, আপনার ঘাম, আমি তা আমার সুগন্ধির সাথে মিশিয়ে রাখি।

No comments:

Powered by Blogger.