বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায় ৩ (৬৯৬১-৭০০৬)
হাদিস ৬৯৬১
মুআল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতা তিনি বলেনঃ আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুলায়মানের ষাটজন স্ত্রী ছিল। একদা সুলায়মান (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আজ বাতে আমার সব স্ত্রীর কাছে যাব। যার ফলে স্ত্রীরা সবাই গর্ভবতী হয়ে এক একজন সন্তান প্রসব করবে, যারা অশ্বারোহী অবস্হায় আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। অতএব সুলায়মান (রাঃ) তাঁর সব স্ত্রীর কাছে গেলেন, তবে তাদের থেকে একজন স্ত্রী ছাড়া আর কেউ গর্ভবতী হলো না। সেও প্রসব করলো একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি সুলায়মান (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইনশা আল্লাহ বলতেন, তাহলে স্ত্রীরা সবাই গর্ভবতী হয়ে যেতো এবং প্রসব করতো এমন সন্তান যারা অশ্বারোহী অবস্হায় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করত।
হাদিস ৬৯৬২
মুহাম্মাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বেদুঈনের কাছে প্রবেশ করলেন তার রোগের খোজ খবর নিতে। তিনি বললেনঃ আমার চিন্তার কোন কারণ নেই ইনশা আল্লাহ তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। বেদুঈন বলল সুস্থতা? না, বরং এটি এমন জ্বর যা একজন প্রবীণ বুড়োকে সিদ্ধ করছে, ফলে তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা, তাহলে সেরুপই।
হাদিস ৬৯৬৩
ইবনু সালাম (রহঃ) আবূ কাতাদা তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যখন তারা সালাত (নামায/নামাজ) থেকে ঘুমিয়ে ছিলেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ আল্লাহ তাঁআলা যখন ইচ্ছা করেন তোমাদের রুহকে নিয়ে যান, আর যখন ইচ্ছা ফিরিয়ে দেন। এরপর তারা তাদের প্রয়োজন সেরে নিলেন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। এতে সূর্য উদিত হয়ে শ্বেতবর্ন হয়ে গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠলেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
হাদিস ৬৯৬৪
ইয়াহইয়া ইবনু কাযাআ ও ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা একজন মুসলমান ও একজন ইহুদি পরম্পর গালমন্দ করল। মুসলিম ব্যাক্তিটি বলল, সে মহান সত্তার কসম! যিনি জগতসমূহের ওপর মুহাম্মাদ -কে মনোনীত করেছেন। এরপর ইহিদীটিও বলল- সে মহান সত্তার কসম! যিনি জগতসমুহের ওপর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মনোনীত করেছেন। এরপরই মুসলিম লোকটি হাত উঠিয়ে ইছদীকে চপেটাঘাত করল। এই প্রেক্ষিতে ইহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেল এবং তার ও মুসলিম ব্যাক্তির মধ্যে যা ঘটেছে তা জানাল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমাকে মূসার উপর প্রাধান্য দিও না। কেননা, সব মানুষ (শিঙ্গায় ফূৎকারে) বেহুশ হয়ে যাবে। তখন সর্ব প্রথম আমি হুশ ফিরে পাব। পেয়েই দেখব, মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরশের একপাশ ধরে আছেন। অতএব আমি জানিনা, তিনি কি বেহুশ হয়ে আমার আগেই হুশ ফিরে পেয়ে গেলেন, নাকি তিনি তাঁদের অন্তভুক্ত, যাদেরকে আল্লাহ বেহুশ হওয়া থেকে মুক্ত রেখেছেন।
হাদিস ৬৯৬৫
ইসহাক ইবনু আবূ ঈসা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জাল মদিনার উদ্দেশ্যে আসবে, তবে সে ফেরেশতাদেরকে মদিনা পাহারারত দেখতে পাবে। সুতরাং দাজ্জাল ও প্লেগ মদিনার কাছেও আসতে পারবে না ইনশা আল্লাহ।
হাদিস ৬৯৬৬
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর একটি (বিশেষ) দোয়া রয়েছে। আমার সে দোয়টি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফাআতের জন্য লুকিয়ে রাখার ইচ্ছা করছি ইনশা আল্লাহ।
হাদিস ৬৯৬৭
ইয়াসারা ইবনু সাফওয়ান ইবনু জামীল লাখিমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা আমি ঘুমন্ত অবস্থায় আমাকে একটি কুপের কাছে দেখতে পেলাম। তারপর আমি সে কুপ থেকে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযাযী পানি ওঠালাম। তারপর আবূ কুহাফার পুত্র (আবূ বকর) তা (হাতে) নিলেন এবং তিনি এক বা দুই বালতি উঠালেন। তার ওঠানোর মধ্যে একটু দুর্বলতা ছিল। তাকে আল্লাহ মাফ করতন। তারপর উমর তা (হাতে) নিলেন। তখন তা বিরাট একটি বালতিতে রপান্তরিত হল। আমি লোকের মধ্যে কোন সাহাবীরকেও তার মত পানি তূলতে আর দেখিনি। এমনকি লোকেরা কুপটির পার্শে উটশালা তৈরী করে নিল।
হাদিস ৬৯৬৮
মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল, তার কাছে কোন ভিক্ষুক কিংবা অভাবী লোক এলে সাহাবাদের বলতেন, তোমরা তার জন্য সূপারিশ কর, এর প্রতিদান পাবে। আর আল্লাহ তাঁর রাসূল) -এর মুখ দিয়ে তাই প্রকাশ করে থাকেন, যা তিনি চান।
হাদিস ৬৯৬৯
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ এভাবে দোয়া করো না, হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দাও, যদি তুমি চাও। আমার প্রতি রহম কর, যদি তুমি চাও। আমাকে তুমি দাও, যদি তুমি চাও। বরঞ্চ দোয়া প্রার্থী খুবই দৃঢ়তার সাথে প্রার্থনা করবে। কেননা তিনি যা চান তাই করেন। তাকে বাধ্য করার মত কেউ নেই।
হাদিস ৬৯৭০
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি এবং ইবনু ইবনু কায়স ইবনু ইবনু ফাযারী (রাঃ) মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গীটি সম্পর্কে এ ব্যাপারে দ্বিমত করছিলেন যে, তিনি-কি খাযির ছিলেন? এমন সময় তাদের পাশ দিয়ে উবায় ইবনু কাব আনসারী (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেনঃ আমি এবং আমার এ বন্ধু মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সদী সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যার সাথে সাক্ষাতের পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যা। অবশ্যই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার সম্পর্কে উল্লেখ করে বলতে শুনেছি যে, এক সময় মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বনী ইসরাঈলের একদল লোকের মধ্যে ছিলেন। এমন সময় জনৈক ব্যাক্তি তার কাছে এসে জিজ্ঞানা করলো, মূসা! আপনি কি জানেন- আপনার চাইতে অধিক জ্ঞানী কেউ আছেন? মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না। তারপঁর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ওহী অবতীর্ন হল যে, হ্যা। আছেন আমার বান্দা খাযির। তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাথে সাক্ষাতের পথ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সূতরাং আল্লাহ তাআলা সেজন্য একটি মাছকে নিদর্শন স্বরুপ ঠিক করলেন এঘং তাকে বলা হল মাছটিকে যখন হারিয়ে ফেলবে তখন সেদিকে ফিরে যাবে, তবে তুমি তার সাক্ষাৎ পাবে। এরই প্রেক্ষিতে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাগরে মাহের চিহ্ন ধরে তালাশ করতে থাকলে মূসা র সঙ্গী যুবকটি মূসা কে উদ্দেশ্য করে বলল, আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই ওর কথা বলতে আমাকে ভূলিয়ে দিয়েছিল (১৮- ৬৩)। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমরা তো সেই স্হানটির অনুসন্ধান করছিলাম। তারপর তারা দু-জনেই নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললো (১৮-৬৫)। তাদের এই দু-জনের ঘটনা যা ঘটলো, আল্লাহ তারই বর্ণনা দিয়েছেন।
হাদিস ৬৯৭১
আবূল ইয়ামান ও আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনঃ আমরা আগমী দিন বনী কিনানা গোত্রের উপত্যকায় অবস্থান করব ইনশা আল্লাহ, যে স্থানে কাফেরগণ কুফরীর উপর অটল থাকার শপথ নিয়েছিল। তিনি মুহাসসাবকে উদ্দেশ্য করছিলেন।
হাদিস ৬৯৭২
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফবাসীদেরকে ঘেরাও করলেন। তবে তা বিজয় করতে পারলেন না। এইজন্য তিনি বললেনঃ আমরা ইনশা আল্লাহ ফিরে ষাব। মুসলিমগণ বলে উঠল, “আমরা কি ফিরে যাবো? অথচ বিজয় হল না”। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আগামীকাল ভোরে যুদ্ধ কর। পরদিন তারা যুদ্ধ করল। বহু লোক আহত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূনরায় বললেনঃ আমরা ইনশা আল্লাহ আগামী কাল ভোরে ফিরে যাব। এবারের উক্তিটি যেন মুসলিমগণের কাছে খুবই আনন্দের মনে হল। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন।
হাদিস ৬৯৭৩
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা যখন আসমানে কোন হুকুম জারি করেন ফেরেশতাগণ তার হুকুমের প্রতি বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশার্থে স্বীয় পাখাসমূহ হেলাতে থাকেন। তাদের পাখার হেলানোর ধবনিটা যেন পাথরের উপর শিকলের ঝনঝনির ধবনি। বর্ণনাকারী আলী (রহঃ) এবং সাফওয়ান ব্যতীত অন্যরা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ যে হুকুম তাদের প্রতি জারি করেন। এরপর ফেরেশতাদের হদয় থেকে যখন ভিতী দূরভূত করা হয় তখন তারা একে অপরকে বলতে থাকে, তোমাদের প্রতিপালক কি হুকুম জারি করেছেন? তারা বলেনঃ তিনি বলে- হক। তিনি মহান ও সর্বোচ্চ। বর্ণনাকারী আলী আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ফায্যু’ পড়েছেন। বর্ণনাকারী সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন যে, আমর (রহঃ)-ও এভাবেই পড়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার- জানানেই যে, বর্ননাকারী এরুপ শুনেছেন কি না? তবে আমাদের কিরাআত এরুপই।
হাদিস ৬৯৭৪
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন এক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (মধুময় স্বুরে) যেভাবে কুরআন শ্রবন করেছেন, সেভাবে আর কিছুই তিনি শোনেননি। আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর এক সাথী বলেছে, ‘ইয়াতাগান্না বিল কুরআন’-এর অর্থ আবূ হুরায়রা (রাঃ) উচ্চস্বরে কুরআন পড়া বুঝাতেন।
হাদিস ৬৯৭৫
উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা-আলা আদমকে বলবেন, হে আদম! আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বলবেন, ইয়া আল্লাহ! তোমার দরবারে আমি হাযির, তোমার দরবারে আমি বই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। এরপর আল্লাহ তাকে এ স্বরে ডাকবেন, অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে হুকুম করছেন, তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে জাহান্নামে পাঠানোর জন্য একটি দলকে তুমি বের কর।
হাদিস ৬৯৭৬
উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন মহিলার ব্যাপারে আমি এতটুকু ঈর্ষা বোধ করিনি, যতটুকু খাদিজা (রাঃ)-এর ব্যাপারে করেছি। আর তা এ জন্য যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর প্রতিপালক তাকে হুকুম দিয়েছেন যে, খাদিজা (রাঃ)-কে জান্নাতের একটি ঘরের সুসংবাদ দিয়ে দিন।
হাদিস ৬৯৭৭
ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরাঈলকে ডেকে বলেন, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তাই তুমিও তাকে ভালবাস। সূতরাং জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ভালবাসেন। তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসমানে এ ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তোমরাও তাকে ভালবাসা তখন তাকে আসমানবাসীরা ভালবাসে এবং যমীনবাসীদের মাঝেও তাকে মকবুল করা হয়।
হাদিস ৬৯৭৮
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়য়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে ফেরেশতাগন আসেন, একদল রাতে এবং একদল দিনে। তারা আবার একত্রিত হন আসরের সালাত (নামায/নামাজ) ও ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)। তারপর তোমাদের মাঝে যারা রাতে ছিলেন তাঁরা ঊধর্ব জগতে চলে যান। তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি সবচাইতে বেশি জানেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি হালে রেখে এসেছ? তখন তারা বলেনঃ আমরা তাদেরকে সালাত (নামায/নামাজ)রত অবস্হায় ছেড়ে এসেছি আর যখন আমরা তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখনও তারা সালাত (নামায/নামাজ)রত অবস্থায়ই ছিল।
হাদিস ৬৯৭৯
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কাছে জিববাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে এ সুসংবাদ দিল যে, আল্লাহর সাথে শরীক না করে যদি কেউ মারা যায়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, চুরি ও যিনা করলেও কি! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ চুরি ও যিনা করলেও।
হাদিস ৬৯৮০
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বারআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বলেছেনঃ ছে অমুক! যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহন করতে যাবে তখন বলবে, হে আল্লাহ! আমি আমার নিজকে তোমারই কাছে সমর্পণ করছি। আমার চেহারাকে তোমার দিকে ফিরাছি! আমার কর্য তোমার কাছে সোপর্দ করছি। আমার নির্ভরশীলতা তোমারই প্রতি আশা ও ভয় উভয় অবস্থায়। তোমার কাছে ছাড়া আর কোথাও আশ্রয় ও মুক্তির জায়গা নেই। আমি ঈমান এনেছি তোমার কিতাবের প্রতি যা তুমি অবতীর্ণ করেছ এবং তোমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি যাকে তুমি প্রেরণ করেছ। অনন্তর এ রাত্রিতে যদি তোমার মৃত্যু হয়, তা হলে ফিতরাতের ওপর তোমার মৃত্যু হবে। আর যদি (জীবিতাবস্হায়) তোমার ভোর হয়, তুমি কল্যাণের অধিকারী হবে।
হাদিস ৬৯৮১
কুতায়রা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব দিবসে বলেছেনঃ কিতাব অবতীর্ণকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী আল্লাহ তুমি দলসমূহকে পরাভূত কর এবং তাদেরকে কম্পিত কর। অতিরিক্ত এক বর্ননায় হুমায়দী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি ।
হাদিস ৬৯৮২
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি কুরআনের নিন্নোক্ত আয়াতঃ তুমি সালাত (নামায/নামাজ) স্বর উচু করবে না এবং অতিশয় ক্ষীণও করবে না (১৭-১১০)। এর তাফসীরে তিনি বলেনঃ এ আয়াতটি তখন অবতীর্ণ হয়, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মকায় লুক্কায়িত ছিলেন। সুতরাং যখন তিনি তাঁর স্বর উচু করতেন তাতে মুশরিকরা শুনে গালমন্দ করত কুরআনকে কুরআন অবতীর্ণকারীকে এবং যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে তাঁকে। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ বললেনঃ (হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )তুমি সালাত (নামায/নামাজ) তোমার স্বর উচু করবে না, যাতে মুশরিকরা শুনতে পায়। আর তা অতিশয় ক্ষীণও করবে না যাতে তোমার সঙ্গীরাও শুনতে না পায়। এই দু-য়ের মধ্যপথ অবলন্বন কর। তুমি স্বর উচু করবে না, তারা শুনে মত পাঠ করবে যেন তারা তোমার কাছ থেকে কুরআন শিখতে পারে।
হাদিস ৬৯৮৩
হুমায়দী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা-আলা ইরশাদ করেন আমাকে আদম সন্তান কষ্ট দিয়ে থাকে। কারণ তারা কালকে গালি দেঁয়। পক্ষান্তরে আমই দাহর বা কাল। কেননা আমার হাতেই সব বিষয়। আমই রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটাই।
হাদিস ৬৯৮৪
আবূ নূআঈম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ঘোষণা করেন যে, রোযা আমার জন্যই, আর আমই এর প্রতিদান দেব। যেহেতূ সে আমারই সন্তুষ্টি লাভের উদেশ্যে তার প্রবৃত্তি, পান ও আহার ত্যাগ করেছে। আর রোযা হচ্ছে, ঢাল। রোযা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি আনন্দ। এক আনন্দ হল যখন সে ইফতার করে, আর এক আনন্দ হলো- যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। আল্লাহর কাছে রোযা পালনকারী মুখের গন্ধ মিসুকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।
হাদিস ৬৯৮৫
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা আইউব (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিবস্ত্র অবস্হায় গোসল করছিলেন। তখন স্বর্নের একদল পঙ্গপেল তার ওশয় পতিত হলে তিনি তা তাঁর কাপড়ে পরিতে থাকেন। তখন তার প্রতিপালক আহবান করে বললেনঃ হে আইউব! তুমি যা দেখছ, এর থেকে তোমাতে কি আমি অভাবমুক্ত করিনি? আইউব (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যা হে আমার প্রতিপালক! তবে তোমার বরকত থেকে আমি অভাবমুক্ত নই।
হাদিস ৬৯৮৬
ইসমাঁঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের যখন রাতের শেষ তৃতীয়াং অবশিষ্ট থাকে তখন পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন। এবং বলেনঃ আমার কাছে যে দোয়া করবে, আমি তার দোয়া গ্রহণ করব। আমার কাছে যে চাইবে, আমি তাকে দান করব। আমার কাছে যে মাগফিরাত প্রার্থনা করবে তাকে আমি মাফ করে দেব।
হাদিস ৬৯৮৭
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন। আমরা পৃথিবীতে সর্বশেষ আগমনকারী, তবে কিয়ামতের দিন আমরাই থাকব অগ্রগামী। হাদীসটির এ সনদে আরো আছে যে, আল্লাহ বলেনঃ তুমি খরচ কর, তা হলে আমিও তোমার ওপর খরচ করব।
হাদিস ৬৯৮৮
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেনঃ এই তো খাদিজা আপনার জন্য একটি পাত্র ভর্তি খাবার করে নিয়ে এসেছেন। বর্ননাকারী সন্দেহে বলেছেনঃ অথবা পাত্র নিয়ে এসেছেন- যাতে পানীয় রয়েছে। আপনি তাঁকে তার রবের পক্ষ থেকে সালাম করুন। আর তাঁকে এমন একটি (প্রশস্ত অব্যন্তর শূন্য) মোতির তৈরি প্রাসা’দর সুসংবাদ দিন, যেখানে শোরগোল বা ক্লেশ থাকবে না।
হাদিস ৬৯৮৯
মু’আয ইবনু আসা’দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ঘোষণা করলেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন বস্তু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শোনেনি, এমনকি কোন মানুষের অন্তরে কল্পনায়ও আসেনি।
হাদিস ৬৯৯০
মাহমূদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে- বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন এ দোয়া করতেনঃ হে আল্লাহ! সব প্রশংসা একমাত্র তোমারই, তুমই আসমান ও যমীনের নূর। তোমারই সমন্ত প্রশংসা, তুমই আসমান ও যমীনের একমাত্র পরিচালক। তোমারই সব প্রশংসা, তুমই আসমান ও যমীন এবং এ দু-য়ের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছু প্রতিপালক। তুমি মহাসত্য। তোমার প্রতিশ্রুতি সত্য। তোমার বানী সত্য। তোমার সাক্ষাৎ সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ সত্য। কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! তোমারই জন্য আনুগত্য (ইসলাম) স্বীকার করি। তোমারই প্রতি ঈমান আনি। তোমারই ওপর তাওয়াক্কুল করি এবং তোমারই দিকে রুজু করি। তোমারই উদ্দেশ্যে বিতর্ক করি। তোমার কাছেই আমি ফায়সালা চাই। সুতরাং আমার আগের ও পরের গোপনীয় ও প্রকাশ্য সর্বপ্রকার গুনাহ মাফ করে দাও। তুমই আমার একমাত্র মাবুদ। তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই
হাদিস ৬৯৯১
হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র, সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব, আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ)-এর ঘটনা সম্পর্কে বর্ণনা করেন। যখন অপবাদ রটনাকারীরা তার সম্পর্কে “যা বলার তা বলল। তখন আল্লাহ তা-আলা তাদের অপবাদ থেকে তাকে পবিত্র বলে ঘোষণা দিলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারীদের প্রত্যেকে হাদীসটির কিছু কিছু অংশ আমাকে বর্ণনা করেছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি ধারণাও করিনি যে, আল্লাহ আমার পবিত্রতার সপক্ষে এমন ওহী অবতীর্ণ করবেন যা তিলাওয়াত করা হবে। আমার মর্যাদা আমার কাছে এর চাইতে তূচ্ছ ছিল যে, আল্লাহ তা-আলা আমার বিষয়ে এমন কোন কালাম করবেন যা তিলাওয়াত করা হবে। তবে আমি আশা করতাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুপে এমন কিছু দেখবেন, যাদ্দ্বারা আল্লাহ আমার পবিত্রতা ঘোযণা করবেন। অথচ আল্লাহ অবতীর্ন করলেনঃ যারা অপবাদ রটনা করেছে থেকে দশটিআয়াত (১০- ২১)।
হাদিস ৬৯৯২
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা কোন গুনাহর কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে। তা না করা পর্যন্ত তার গুনাহ লেখো না। আর যদি তা করেই ফেলে! তাহলে তা সমপরিমাণ লেখা হয়। আর যদি আমার কারণে তা পরিহার করে, তাহলে তার পড়ে একটি নেকী লিখে। এবং যদি বান্দা কোন ভাল কাজের ইচ্ছা করে কিন্তু তা না করে, তবুও তোমরা তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করবে। তারপর যদি তা সম্পাদন করে, তবে তোমরা তার জন্য কাজটির দশ গুন থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত লেখো।
হাদিস ৬৯৯৩
ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তো সমস্থ সৃষ্টুকে পয়দা করলেন। তার, পর যখন তিনি এর থেকে অবসর হলেন তখন রাহিম” (আত্নীয়তার বন্ধন) উঠে দাঁড়াল। আল্লাহ সেটিকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি থাম। আত্নীয়তার-বন্ধন তখন বলল, আমাকে ছিন্নকারী থেকে পানাহ প্রার্থনার স্থল এটই। এতে আল্লাহ ঘোষনা করলেন, তুমি এতে রাযী নও কি? যে ব্যাক্তি-তোমার সাথে সৎভাব রাখবে আমিও তার সাথে সৎভাব রাখব। আর যে তোমাকে ছিন্ন করবে, আমিও তাকে ছিন্ন করব। সে বলল, আমি এতে সত্তুষ্ট, হে প্রতিপালক! আল্লাহ বললেনঃ তা-ই তোমার জন্য। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিলাওয়াত করলেনঃ ক্ষমতায় অধিপতি হলে সম্ভবত তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।
হাদিস ৬৯৯৪
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) যায়িদ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় একবার বৃষ্টি হলো। বললেনঃ আল্লাহ বলছেন, বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে) আমার বান্দাদের কিছু সংখ্যক আমার সাথে কুফরী করছে, আর কিছু সংখ্যক ঈমান এনেছে।
হাদিস ৬৯৯৫
ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার সাক্ষাৎ পছন্দ করলে আমিও তার সাক্ষাত পছন্দ করি। আর সে আমার সাক্ষাতকে অপছন্দ করলে আমিও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করি।
হাদিস ৬৯৯৬
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ আমার বিষয়ে আমার বান্দার ধারণার অনুরুপ ব্যবহার করে থাকি।
হাদিস ৬৯৯৭
ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক ব্যাক্তি (জীবনেও) কোন ভাল আমল করেনি। মৃত্যুর সময় সে বলল, মারা যাওয়ার পর তোমরা তাকে পূড়িয়ে ফেল। আর অর্ধেক স্থলে আর অর্ঘেক সাগরে ছড়িয়ে দাও। সে আরো বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ যদি তাকে পেয়ে যান তাহলে অবশ্যই তাকে এমন শাস্তি দিবেন যা জগতসমুহের আর কাউকে দিবেন না। তারপর আল্লাহ সাগরকে হুকুম দিলে সাগর এর মধ্যকার অংশকে একত্রিত করল। মূলকে হুকুম দিলে সেও তার মধ্যকার অংশ একত্রিত করল। তারপর আল্লাহ বললেনঃ তুমি কেন এরুপ করলে? সে উত্তর করল, তোমার ভয়ে। আর তুমি অধিক জ্ঞাত। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
হাদিস ৬৯৯৮
আহমাদ ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে শুনেছি, এক বান্দা গুনাহ করল। বর্ননাকারী ‘আসাবা যানবান’ না বলে কখনো ‘আজনাবু যানবান’ বলেছেন। তারপর সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো গুনাহ করে ফেলেছি। বর্ননাকারী ‘আযনাবতু’-এর স্থলে কখনো-‘আসাবতু’ বলেছেন। তাই আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তার প্রতিপালক বললেনঃ আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার রয়েছে একজন প্রতিপালক যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল অবস্হান করল এখং সে আবার গুনাহতে লিপ্ত হল। বর্ণনাকারীর সন্দেহ ‘আসাবু জানোবান’ কিংবা ‘আজনাবু জানোবান’ বলা হয়েছে। বান্দা আবার বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গুনাহ করে বসেছি। এখানে ‘আসাবতু’ কিংবা ‘আযনাবতু’ বলা হয়েছে। আমার এ গুনাহ তুমি ক্ষমা করে দাও। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক বললেনঃ আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার রয়েছে একজন প্রতিপালক যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণ শাস্তিও দেন। আমি আমার বান্দার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি এরপর সে বান্দা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন সে অবস্থায় অবস্থান করল। আবারও সে গুনাহতে লিপ্ত হয়ে গেল। এখানে ‘আসাবু জানোবান’ কিংবা ‘আস্নাবতু জানোবান’ বলা হয়েছে। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আরো- একটি শোনাহ করে ফেলেছি। এখানে ‘আসাবতু’ কিংবা ‘জানোবান’ বলা হয়েছে। আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ বললেনঃ আমার বান্দা কিছু জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক রয়েছেন, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শান্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরুপ তিনবার বললেন।
হাদিস ৬৯৯৯
আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতীত যুগের এক ব্যাক্তি সম্পর্কে আলোচনা করলেন। অথবা তিনি বলেছেনঃ তোমাদের পূর্বে যারা ছিলেন তাদের এক ব্যাক্তি তিনি তার সম্পর্কে বললেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ তাকে স, পদ ও সন্তান দান করলেন। যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল তখন সে তার সন্তানদেরকে বলল, আমি তোমাতের জন্য কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলল, উত্তম পিতা। তখন সে বলল, সে যে আল্লাহর কাছে কোন প্রকার নেক আমল রেখে যেতে পারেনি। অতএব, আল্লাহ (তার উপর) সমর্থ হলে, অবশ্যই তাকে আযাব দিবেন। অতএব তোমরা লক্ষ্য রাখবে, আমার মৃত্যু হলে তোমরা আমাকে আগুনে পিড়িয়ে দেবে। এরপর যখন আমি কয়লা হয়ে যাব, তখন ছাই করে ফেলবে। তারপর যেদিন প্রচুর বাতাসের দিন হবে সেদিন বাতাসে উড়িয়ে দেবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পিতা এ বিষয়ে সন্তানদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করল। আমার প্রতিপালকের কসম! সন্তানরা তাই করল। এক প্রচণ্ড বাতাসের দিনে তাকে ছড়িয়ে দিল। তারপর মহান আল্লাহ নির্দেশ দিলেন। তুমি অতিতে এসে যাও। তৎক্ষণাৎ সে উঠে দাড়াল। মহান আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার বান্দাহ তুমি যা করেছ তা কেন করলে? সে উত্তর করল, তোমার ভয়ে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এর বিনিময়ে তাকে মাফ করে দিলেন। রাবী আবার অন্য বর্ণনায় বলেছেনঃ আল্লাহ ক্ষমা দ্বারাই এর বিনিময় দিলেন। বর্ননাকারী বলেনঃ আমি এ হাদীস আবূ উসমানের কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আমি হাদীসটি সালমান (রাঃ) থেকে শুনেছি। তবে তিনি এটুকু সংযোগ করেছেন, আমাকে সমুদ্রে ছড়িয়ে দাও। রাবী বলেনঃ কিংবা তিনি বলেছেনঃ, অথবা যেরুপ তিনি বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৭০০০
মূসা (রহঃ) মুতামির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেছেন। খালীফা (রহঃ) মূতামির থেকে বর্ণনা করেছেন। কাতাদা (রহঃ) এ সবের বিশ্লেষণ করেছেন অর্থাৎ -সঞ্চয় করেনি দ্বারা।
হাদিস ৭০০১
ইউসুফ ইবনু রাশিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন যখন আমাকে সুপারিশ করার অনুমতি দেওয়া হবে তখন আমি বলব, হে - আমার প্রতিপাবক! যার অন্তরে এক সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে তুমি জান্নাতে দাখিল করো। তারপর তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে। তারপর আমি বলব, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ কর, যার অন্তরে সামান্য। ঈমানও আছে। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি যেন এখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতের আঙুলগুলো দেখছি।
হাদিস ৭০০২
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) মাবাদ ইবনু হিলাল আল আনাযী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা বসরার অধিবাসী কিছু লোক একত্রিত হয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। আমাদের সাথে সাবিত (রাঃ)-কে নিলাম, যাতে তিনি আমাদের কাছে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত শাফাআত সম্পর্কে হাদীস জিজ্ঞাসা করেন। আমরা তাকে তার মহলেই চাশতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়রত পেলাম। তার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তিনি তার বিছানায় বসা অবস্থায় আছেন। অতঃপর আমরা সাবিত (রাঃ)-কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন শাফাআতের হাদীসটি জিজ্ঞাসার পূর্বে অন্য কিছু জিজ্ঞাসা না করেন। তখন সাবিত (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ হামযা! এরা বসরাবাসী আপনার ভাই, তারা শাফাআতের হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছে। তারপর আনাস (রাঃ) বললেনঃ আমাদের কাছে মুহাম্মাদ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিন মানুষ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ভীত-সন্ত্রন্ত হয়ে পড়বে। তাই তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলবে; আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন। তিনি বলবেনঃ এ কাজের জন্য আমীনই। বরং তোমরা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। কেননা, তিনি হলেন আল্লাহর খলীল। তখন তারা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এ কাজের জন্য নই। তবে তোমরা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি আল্লাহর সাথে বাক্যালাপ করেছেন। তখন তারা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে তিনি বলবেনঃ আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। যেহেতু তিনি আল্লাহর রুহ ও বানী। তারা তখন ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ -এর কাছে যাও। এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলব, আমই এ কাজের জন্য। আমি তখন আমার প্রতিপালকের কাছে অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমাকে প্রশংসা সম্বলিত বাক্য ইলহাম করা হবে। যা দিয়ে আমি আল্লাহর প্রশংসা করব, যেগুলো এখন আমার জানানেই। আমি সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে প্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা ওঠাও। তুমি বল, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, তা দেওয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলবো, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত। আমার উম্মাত। বলা হবে, যাও, যাদের হৃদয়ে যবের দানা পরিমান ঈমান আছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দাও, আমি যেয়ে এমনই করব। তারপর আমি ফিরে আসব এবং পূনরায় সেসব প্রশংসা বাক্য দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করবো এবং সিজদায় পঁড়ে যাবো। তখন বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা ওঠাও। তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহন করা হবে। তখনো আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত। আমার উম্মাত। অতঃপর বলা হবে, যাও, যাদের এক অনু কিংবা সরিষা পরিমাণ ইমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের কর। আমি গিয়ে তাই করব। আমি পূনরায় প্রত্যাবর্তন করবো এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবো। আর সিজদায় পড়ে যাবো। আমাকে বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, তোমার বক্তব্য শোনা হবে। চাও, দেওয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। আমি তখন বলবো, হে আমার প্রতিপালক, আমার উম্মাত, আমার উম্মাত। এরপর আল্লাহ বলবেন, যাও, যাদের অন্তরে সরিষার দানা অপেক্ষা ক্ষুদ্র পরিমাণও ঈমান থাকে, তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আন। আমি যাবো এবং তাই করবো। আমরা যখন আনাস (রাঃ)-এর নিকট থেকে বের হয়ে আসছিলাম, তখন আমি আমার সাথীদের কোন একজনকে বললাম, আমরা যদি আবূ খলীফার বাড়িতে আত্নগোপনরত হাসান বসরীর কাছে গিয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি তাঁর কাছে বর্ণনা করতাম। এরপর আমরা হাসান বসরীর কাছে এসে তাকে অনুমতির সালাম দিলাম। তিনি আমাদেরকে প্রবেশ করতে অনুমতি দিলেন। আমরা তাকে বললাম, হে আবূ সাঈদ! আমরা আপনারই ভাই আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর কাছ থেকে আপনার কাছে আসলাম। শাফাআত সম্পর্কে তিনি যেরুপ বর্ণনা দিয়েছেন, অনুরুপ বর্ণনা করতে আর আর কাউকে দেখিনি। তিনি বললেনঃ আমার কাছে সেটি বর্ণনা কর। আমরা তাঁকে হাদীসটি বর্ণনা করে শোনালাম। এরপর আমরা শেষস্থলে এসে বর্ণনা শেষ করলাম। তিনি বললেনঃ আরো বর্ণনা কর। আমরা বললাম, তিনি তো এর বেশি আমাদের কাছে বর্ণনা দেননি। তিনি বললেনঃ জানিনা, তিনি কি ভুলেই গেলেন, না তোমরা নির্ভরশীল - হয়ে পড়বে বলে অবশিষ্টটুকু বর্ণনা করতে অপছন্দ করলেন, বিশ বছর পুর্বে যখন তিনি শক্তি সামর্থ্যে ও শক্তিতে মজবুত ছিলেন, তখন আমার কাছেও হাদীসটি বর্ণনা করেছিলেন। আমরা বললাম, হে আবূ সাঈদ! আমাদের কাছে হাদীসটি বর্ণনা করুন। তিনি হাসলেন এবং বললেনঃ সৃষ্টি করা হয়েছে, মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়। আমি তো বর্ণনার উদ্দেশ্যেই তোমাদের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি তোমাদের কাছে যা বর্ণনা করেছেন, আমার কাছেও তা বর্ণনা করেছেন- তবে পরে এটুকুও বলেছিলেন, আমি চতূর্থবার ফিরে আসবো এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর গ্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাবো। তখন বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, -তোমার কথা শোনা হবে। চাও! দেওয়া হবে। শাফাআত কর, গ্রহণ করা হবে। আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাদের সম্পর্কে শাফাআত করার অনুমতি দান কর, যারা -লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে। তখন আল্লাহব লবেন, আমার ইজ্জত, আমার পরাক্রমশীলতা, আমার বড়ত্ব ও আমার মহত্তের কসম! যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনব।
হাদিস ৭০০৩
মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশ কারী এবং জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ পরিত্রাণ লাভকারী ব্যাক্তিটি জাহান্নাম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসবে। তার প্রতিপালক তাকে বলবেন, তুমি জান্নাতে প্রবেশ করা সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! জান্নাত তো পরিপূর্ণ! আল্লাহ এভাবে তাকে তিনবার বলবেন। প্রত্যেকবারই সে উত্তর দেবে, জানোাত তো পরিপূর্ন পরিশেষে আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার জন্য রয়েছে এ পৃথিবীর ন্যায় দশ গুন।
হাদিস ৭০০৪
আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক অতিসত্বর বাক্যালাপ করবেন। তার ও আল্লাহর মাঝখানে কোন দোভাষী থাকবে না। এরুপর সে তাকাবে ডান দিকে, তখন তার অতীত আমল ছাড়া সে আর কিছু দেখবে না। আবার তাকাবে বাম দিকে, তখনো অতীত আমল ছাড়া আর কিছু সে দেখবে না। আর সামনে তাকাবে তখন সে জাহান্নামের অবস্হান ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। সূতরাং জাহান্নামকে ভয় কর এক টুকরো খেজুরের ঢাল হলেও। বর্ণনাকারী আমাশ (রহঃ) খায়সামা (রহঃ) থেকে অনুরুপই বর্ণনা দিয়েছেন। তবে তিনি যদি পবিত্র কালেমার বিনিময়েও হয়-কথাটুকু সংযোগ করেছেন।
হাদিস ৭০০৫
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ইহুদী পণ্ডিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ আসমান সমূহকে এক আঙ্গুলে, ভূমিশুলকে এক আঙ্গুলে, পানি ও কাদামাটি এক আঙ্গুলে এবং অবশিষ্ট সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলে উঠিয়ে ঝাঁকুনি দিয়ে বলবেন, আমই একমাত্র বাদশাহ, আমই একমাত্র বাদশাহ। আমি তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলাম, তিনি তার উক্তির সত্যতার প্রতি বিস্মিত হয়ে এমনভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ল। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের বানীঃ পড়লেন: তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উপলদ্ধি করেনি (৬- ৯১)। কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ থাকবে তার করায়ত্ত, পবিত্র ও মহান তিনি এরা যাকে শরীক করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে (৩৯:৬৭)
হাদিস ৭০০৬
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সাফওয়ান ইবনু মুহরিয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করল, আল্লাহর সাথে বান্দার গোপন আলাপ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আপনি কি বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ আমাদের কেউ তার প্রতিপালকের নিকটস্থ হলে তিনি তাঁর ওপয় রহমতের আবরণ বিস্তার করে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি এই কাজ করেছ? সে বলবে, হ্যা। - আল্লাহ আবারো জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি এই কাজ করেছ? সে তখনো বলবে, হ্যা। আল্লাহ এভাবে তার স্বীকারোক্তি নেবেন। তারপর আল্লাহ বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার ওসব কাজ গোপন রেখেছিলাম। আমি আজকেও তোমার জন্য তা মাফ করে দিলাম। আদম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ওনেছেন।
No comments: