Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায় ২ (৬৯১৫-৬৯৬০)



 হাদিস ৬৯১৫

আহমদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ যায়িদ ইবনু হারিসা (রাঃ) অভিযোগ নিয়ে আসলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলতে লাগলেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছে রেখে দাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি কোন জিনিস গোপনই করতেন, তাহলে এই আয়াতটি অবশ্যই গোপন করতেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ (যায়নাব রা) অপরাপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনার কাছে এই বলে গৌরব করতেন যে, তোমাদেরকে বিবাহ দিয়েছে তোমাদের পরিবার-পরিজন আর আমাকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সাত আসমানের ওপরে বিয়ে দিয়েছেন। বর্ণনাকারী সাবিত (রাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর বানীঃ (হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )আপনি আপনার অন্তরে যা গোপন করতেন আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিচ্ছেন, আপনি লোকদের ভয় করছিলেন। এই আয়াতটি যায়নাব ও যায়িদ ইবনু হারিসা। (রাঃ) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল।

হাদিস ৬৯১৬

খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ)-কে কেন্দ্র করে পর্দার আয়াত নাযিল হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাবের সাথে তার বিবাহ উপলক্ষে ওয়ালিমা হিসাবে সেদিন রুটি ও গোশত আহার করিয়ে ছিলেন। সহধর্মিনাদের উপর যায়নাব (রাঃ) গৌরব করে বলতেন, আল্লাহ তো আসমানে আমার বিয়ের ব্যবস্হা করেছেন।

হাদিস ৬৯১৭

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ যখন সকল মাখলুক পয়দা করার কাজ সম্পন্ন করলেন, তখন তার আরশের উপর তারই কাছে লিপিবদ্ধ করে রাখলেন “অবশ্যই আমার রহমত আমার গযব থেকে অগ্রগামী।

হাদিস ৬৯১৮

ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনে, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করে, রমযান মাসের রোযা পালন করে, আল্লাহ তার ব্যাপারে এ দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করুক কিংবা তার জন্মভূমিতে অবস্হান করুক। সাহাবীগণ বলে উঠলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই বিষয়টি আমরা লোকদের জানিয়ে দেব না? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অবশ্যই, জান্নাতে একশ-টি স্তর রয়েছে। এগুলো আল্লাহ তাঁর রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। প্রতি দুটি স্তরের মাঝখানে আসমান ও যমীনের দূরত্ববিদ্যমান রয়েছে। কাজেই যখন তোমরা আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন ফিরদাওস জান্নাত চাইবে। কেননা সেটি হচ্ছে সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আর দয়ালু (আল্লাহর) আরশটি এরই উশয় অবস্থিত। এই ফিরদাওস থেকেই জান্নাতের ঝর্নাগুলো প্রবাহিত হয়ে থাকে।

হাদিস ৬৯১৯

ইয়াহইয়া ইবনু জাফর (রহঃ) আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সেখানে বসা ছিলেন। যখন সূর্যঅস্ত গেল, তিনি বললেনঃ হে আবূ যর। তোমার কি জানা আছে, এই সূর্য কোথায় যাচ্ছে? আবূ যর (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই সর্বাপেক্ষা বেশি জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সূর্য যাচ্ছে এবং অনুমতি চাচ্ছে সিজাদার জন্য। তারপর সিজদার জন্য তাকে অনুমতি দেয়া হয়। একদিন তাকে হুকুম দেয়া হবে, যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফিরে যাও। তখন সে তার অস্তের স্থল থেকে উদিত হবে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করলেন, এটই তার-অবস্থান স্থল-- আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কিরআত অনুযাযী।

হাদিস ৬৯২০

মূসা (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ বকর (রাঃ) আমার কাছে লোক প্রেরণ করলেন। তাই আমি কুরআনের বিভিন্ন অংশ অনুসন্ধানে নেমে পড়লাম। পরিশেষে সূরা তাওবার শেষাংশ একমাত্র আবূ খুযায়মা আনসারী (রাঃ) ব্যতীত আর কারো কাছে পেলাম না। (আর তা হচ্ছে) ‘লাকাদ যা আকুম রাসুলুম মিনকুম’ থেকে সুরা বারাআতের শেষ পর্যন্ত।

হাদিস ৬৯২১

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইউনূস (রহঃ) থেকে হাদীসটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি ও আবূ খুযায়মা আনসারীর কাছে এ আয়াত পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন।

হাদিস ৬৯২২

মুআলা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ দুঃখ যাতনার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেন এই বলেঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। যিনি মহাজ্ঞানী ও ধৈর্যশীল। তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তিনি আরশ আযীমের প্রতিপালক। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি আসমান-যমীনের প্রতিপালক এবং সম্মানিত আরশের অধিপতি।

হাদিস ৬৯২৩

মুহাস্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সব মানুষবেহুশ হয়ে পড়বে। (যখন আমার হুশ ফিরে আসবে) তখন আমি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আরশের একটি পায়া ধরে দণ্ডায়মান দেখতে পাব। বর্ণনাকারী মাজিশুন আবদুল্লাহ ইবনু ফাজল ও আবূ সালামার মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমি সবচাইতে আগে পূনরন্থিত হব। তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখব, তিনি পায়া ধরে আছেন।

হাদিস ৬৯২৪

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে রাত ও দিনে ফেরেশতাগণ পালাক্রমে আগমন করেন। আর তারা একত্রিত হন আসর ও ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)। তারপর যারা তোমাদের মাঝে রাত্রি যাপন করেছেন তারা উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি তোমাদের ব্যাপারে সবচাইতে অধিক জ্ঞাত; কেমন অবস্হায় আমার বান্দাদেরকে তোমরা ছেড়ে এসেছ? তারা তখন উত্তর দেবে, আমরা ওদেরকে সালাত (নামায/নামাজ)রত অবস্হায় রেখে এসেছি প্রথম গিয়েও আমরা ওদেরকে সালাত (নামায/নামাজ) পেয়েছিলাম। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তার হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণও দান করে, আল্লাহ তা আলা তা তাঁর ডান হাত দ্বারা কবুল করেন। আর পবিত্র ও হালাল জিনিস ছাড়া আল্লাহর দিকে কোন কিছু আগমন করতে পারে না। তারপর এটি তার মালিকের জন্য নালন-পালন ও দেখাশোনা করতে থাকে, তোমরা যেমন ঘোড়ার বাচ্চাকে লালনপালন করতে থাক। পরিশেষে তা পাহাড়ের ন্যায় বিরাট আকার ধারণ করে। ওয়ারকা আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ দিকে পবিত্র জিনিস ছাড়া কোন কিছুই গমন করতে পারে না।

হাদিস ৬৯২৫

আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, দুঃখ-যাতনার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে দোয়া করতেনঃ মহান ও ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, মহান আরশের প্রতিপালক আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আসমানসমূহের মালিক এবং মহান আরশের অধিপতি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।

হাদিস ৬৯২৬

কবীসা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমীপে সামান্য কিছু স্বর্ণ পাঠানো হলে তিনি চারজনকে বণ্টন করে দেন। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আলী (রাঃ) ইয়ামানে অবস্হানকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কিছু মাটি মিশ্রিত সোনা পাঠিয়েছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুজাশি গোত্রের আকরা-ইবনু হাবিস হানযালী, উয়য়েনা ইবনু হিসন ইবনু বদর ফাযারী, আলকামা ইবনু উলাছা আমিরী ও বনূ কিলাবের একজন এবং বনূ নাবহান গোত্রের যায়িদ আল খায়ল তাঈর মধ্যে তা বন্টন করে দেন। এই কারণে কুরাইশ ও আনসারীগণ অন্তুষ্ট হয়ে বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদবাসী সরদারদেরকে দিচ্ছেন। আর আমাদেরকে বিমুখ করছেন। এই প্রেক্ষিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তাদের হৃদয় আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি। তখন কোটরাগত চোখ, উচু কপাল, অধিক দাড়ি, উচ্চ চোয়াল ও মুণ্ডানো মাথা বিশিষ্ট এক ব্যাক্তি সামনে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় কর। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমই যদি তার নাফরমানী করি, তবে তাঁর অনুগত হবে আর কে? আর এজন্যই তিনি আমাকে লোকের উপর আমানতদার নির্ধারণ করেছেন। অথচ তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। এমন সময় দলের মধ্য থেকে এক লোক, সম্ভবত খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ), সেই ব্যাক্তিটিকে হত্যা করার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। সে লোকটি চলে যাওয়ার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ ব্যাক্তির বংশ থেকে এমন কিছু লোক আসবে, যারা কুরআন পড়বে, তবে কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেভাবে শিকারের দেহ ভেদ করে তীর বের হয়ে যায়। মূর্তীপূজারীদেরকে তারা ছেড়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করবে। যদি আমি তাদেরকে পাই, তাহলে আদ জাতির হত্যার মত তাদেরকে হত্যা করব।

হাদিস ৬৯২৭

আইয়াশ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিম্নোক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে। ” তিনি বলেছেনঃ সুর্যের নির্দিষ্ট গন্তব্য হল আরশের নিচে।

হাদিস ৬৯২৮

আমর ইবনু আওন (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বসা ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ তোমরা অবশ্যই অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে যেমনি তোমরা এই চাঁদটিকে দেখতে পাচ্ছ। অথচ তোমরা এটি দেখতে কোন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছ না। অতএব, যদি তোমরা সক্ষম হও তবে সুর্য উদয়ের পূর্বের সালাত (নামায/নামাজ) এবং সূর্যাস্তের পূর্বের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে যেন পরাজিত না হও। তাহলে তাই কর।

হাদিস ৬৯২৯

ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে প্রকাশ্যভাবে দেখতে পাবে।

হাদিস ৬৯৩০

আবদা ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা পূর্নিমার-এরাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমেদের কাছে বের হয়ে আসলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ অবশ্যই তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে কিয়ামতের দিন দেখতে পাবে যেমন এই চাঁদটিকে তোমরা দেখছ এবং একে দেখতে তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছ না।

হাদিস ৬৯৩১

আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকেরা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! বলছিলেনঃ কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে বাধাপ্রাপ্ত হও? সবাই বলে উঠলেন, না ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি আবার বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমরা বাধা-পাও হও? সবাই বলে উঠলেন, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা অনুরুপ আল্লাহকে দেখতে পাবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ লোকদেরকে সমবেত করে বলবেন, যে যার ইবাদত করছিলে সে যেন তার অনুসরণ করে। তারপর যারা সূর্যের ইবাদত করত, সূর্যের অনুসরণ করবে। যারা চাঁদের ইবাদত করত, তারা চাঁদের অনুসরণ করবে। আর যারা তাগুদের পূজা করত, তারা তাদের অনুসরণ করবে। অবশিষ্ট থাকবে এই উম্মাত। এদের মধ্যে এদের সুপারিশকারীরাও থাকবে অথবা রাবী বলেছেনঃ মুশরিকরাও থাকবে। এখানে বর্ণনাকারী ইবরাহীম (রহঃ) সন্দেহ পোষণ করেছেন। তদপর মহান আল্লাহ তাদের কাছে এসে বলবেনঃ আমই তোমাদের রব। তখন তারা বলবে যতক্ষন আমাদের রব আমাদের কাছে না আসবেন, ততক্ষন আমরা এ স্থানেই অবস্হান করব। আমাদের রব যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব। তারপর আল্লাহ এমন এক আকৃতিতে তাদের কাছে আসবেন, যে সুরতে তারা তাঁকে চিনবে। তখন তিনি বলবেন, তোমাদের রব আমই। তারাও বলে উঠবে হ্যা, আপনই আমাদের রব। তারপর তারা তাঁর অনুসরণ করবে। এরপর দোযখের উপর পূল কায়েম করা হবে। যারা পূল অতিক্রম করবে, আমি এবং আমার উম্মাত তাদের মধ্যে প্রথম থাকব। সেদিন একমাত্র রাসুলগন ছাড়া আর কেউই কথা বলতে পারবে না। আর রাসুলগণেরও আবেদন হবে শুধু আল্লাহর সাল্লিম, সাল্লিম (আয় আল্লাহ! নিরাপদে রাখুন, নিরাপদে রাখূন)। এবং জাহান্নামে সাদান-এর কাটার মত অবৃকরা থাকবে। তোমরা দেখেছ কি সাদান-এর কাটা? সাহাবাগণ-বললেনঃ জী হ্যা, ইয়া রাসুলুল্লাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জাহান্নামের যে কাটাগুলো এ সাদান-এর কাঁটার মত। হ্যাঁ, তরে সেগুলো যে কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ওসব কাটা মানুষকে তাদের কর্য অনুপাতে বিদ্ধ করবে। কতিপয় মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে। আর কেউ কেউ তার আমলের কারণে ধংস হবে। কাউকে নিক্ষেপ করা হবে আর কাউকে প্রতিদান দেওয়া হবে। কিংবা অনুরুপ কিছু রাবী বলেছেনঃ তারপর (মহান আল্লাহ) প্রকাশমান হবেন। তিনি বান্দাদের বিচারকার্য সমাপন করে যখন আপন রহমতে কিছু সংখ্যক দোযখবাসীকে বের করতে চইবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার শিরক-মুক্তদেরকে দোযখ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন। তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের উপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সিজদার চিহ্ন দ্বারা তাদের ফেরেশতাগণ চিনতে পারবেন। সিজদার চিহ্ন ছাড়া সেসব আদম সন্তানের সারা দেহ জাহান্নামের আগুন ভষ্মীভূত করে দেবে। সিজদার চিহ্নসমূহ জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ জাহান্নামের উপর হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদেরকে আগুনে বিদগ্ন অবস্হায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের ওপর ঢালা হবে সঞ্জীবনীর পানি। এর ফলে নিম্নদেশ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে প্লাবনে ভাসমান বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে। এরপর আল্লাহ তাআলা বাব্দাদের বিচার ফায়সালা সমাপন করবেন। এদের মধ্য থেকে একজন অবশ্যই রয়ে যাবে, যে জাহান্নামের দিকে মুখ করে থাকবে। জাহান্নামীদের মধ্যে এই হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমার, চেহারাটা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দাও। কেননা, জাহান্নামের (দুর্গন্ধময়) হাওয়া আমাকে অস্থিরর করে তুলছে এবং এর শিখা আমাকে জ্বালাচ্ছে। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তার কাছে প্রার্থনা করবে। তারপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার প্রার্থনার জিনিস যদি তোমাকে প্রদান করা হয়, তবে অন্য কিছু চাইবে না তো? তখন সে বলবে, না, তোমার ইজ্জতের কসম করে বলছি, তা ছাড়া আমি আর কিছু চাইব না। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বহু অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দিবেন। যখন সে জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে এবং জান্নাতকে দেখবে, সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী যতক্ষন চুপ থাকার চুপ থেকে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতের দার পর্যন্ত এগিয়ে দাও। আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, তুমি কি বহু প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু তুমি কখনো চাইবে না। সর্বনাশ তোমার, হে আদম সন্তান! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি। তখন সে বলবে, হে আমার রব। আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, আচ্ছা, এটি যদি তোমাকে দেওয়া হয়, আর কিছু তো চাইবে না? সে বলবে, তোমার ইজ্জতের কসম! সেটি ছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। তারপর আল্লাহর ইচ্ছানূযায়ী প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দেবে আর আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজা পঁর্যন্ত এগিয়ে নেবেন। যখন সে জান্নাতের দরজার কাছে দাড়াবে, তখন তার জন্য জান্নাত উনূক্ত হয়ে যাবে, তখন সে এর মধ্যকার আরাম আয়েশ-ও ভোগ বিলাসের প্রাচুর্য দেখতে পাবে। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছানূযায়ী নীরব থেকে, পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি আমাকে এই প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করবে না? সর্বনাশ তোমার! হে বনী আদম! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমার সৃষ্টিরাজির মধ্যে নিকৃষ্টতর হতে চাই না। তখন সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ এতে হেসে দিবেন। আল্লাহ তার অবস্হার প্রেক্ষিতে হেসে তাকে নির্দেশ দিবেন, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করলে আল্লাহ তাকে সম্বোধন করে বলবেন এবার তুমি চাও। সে তখন রবের কাছে যাচ্ঞা করবে এবং আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে। পরিশেষে আল্লাহ স্বয়ং তাকে বরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, এটা, ওটা চাও। এতে তার আর-আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হলে আল্লাহ বললেনঃ তোমাকে ওগুলো দেয়া হল, সাথে সাথে সে পরিমাণ আরো দেয়া হল। আতা ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন হাদীসটির বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও তার সাথে ছিলেন। তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর এই বর্ণিত হাদীসের কোথাও প্রতিবাদ করলেন না। বর্ণনার শেষাংশে এসে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন বর্ণনা করলেন, আল্লাহ তা-আলা তাকে বললেনঃ ওসব তোমাকে দেওয়া হলো, আরো তার সমপরিমাণ তার সাথে দেওয়া হল তখন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) প্রতিবাদ করে বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা (রাঃ), রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেনঃ তার সাথে আরো দশগুন। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি সংরক্ষণ করেছি এভাবে-ওসব তোমাকে দেওয়া হল, আর এর সাথে আরো এক গুণ দেওয়া হল। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে এভাবে সংরক্ষণ করেছি ও সবই তোমাকে দেওয়া হল এর সাথে তোমাকে দেওয়া হল আরো দশ গুণ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ এই হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যাক্তি। 
 হাদিস ৬৯৩২

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কিয়ামতের দিন আমাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ করব কি? তিনি বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে তোমরা সুর্য দেখতে কোন বাধা প্রাপ্ত হও কি? আমরা বললাম, না। তিনি বললেনঃ সেদিন তোমরাও তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে বাধাপ্রাপ্ত হবে না। এতটুকু ব্যতীত যতটুকু সূর্য দেখার সময় পেয়ে থাক। সেদিন একজন ঘোষনাকারী ঘোষণা করবেন যারা যে জিনিসের ইবাদত করতে, তারা সে জিনিসের কাছে গমন কর। এরপর যারা ক্রুঢ়ীা। ধারী। ছৗ, তারা যাবে তাদের ক্রুশের কাছে। মূর্তিপূজারীরা যাবে তাদের মূর্তির সাথে। সকলেই তাদের উপাস্যের সাথে যাবে। অবশ্যই থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীরা নেককার ও গুনাহগার সবাই। এবং আহলে কিতাবের কিছু সংখ্যক লোকও থাকবে। অতঃপর জাহান্নামকে আনা হবে। সেটি তখন থাকবে মরীচিকার মত। ইহুদীদেরকে সন্মোধন করে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা উত্তর করবে, আমরা আল্লাহর পূত্র উযায়র (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইবাদত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। কারণ আল্লাহর কোন স্ত্রীও নেই এবং নেই তার কোন সন্তান। এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই, আমাদেরকে পানি পান করান। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা পানি পান কর। এরপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। তারপর নাসারাদেরকে বলা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলে উঠরে, আমরা আল্লাহর পূত্র মসীহের ইবাদত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কোন স্ত্রীও ছিল না, সন্তানও ছিল না। এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমাদের ইচ্ছা আপনি আমাদেরকে পানি পান করতে দিন। তাদেরকে উত্তর দেওয়া হবে, তোমরা পান কর। তারপর তারা জাহান্নামে-নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। পরিশেষে অবশিষ্ট থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীগগ। তাদের নেককার ও গুনাহগার সবাই। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হবে, কোন জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? অথচ অন্যরা তো চলে গিয়েছে। তারা বলবে আমরা তো সেদিন তা-দের থেকে পৃথক রয়েছি, যেদিন আজকের অপেক্ষা তাদের বেশি প্রয়োজন ছিল। আমরা একজন ঘোষণাকারীর এ ঘোষণানা দিতে শুনেছি যে যারা যাঁদের ইবাদত করত তারা যেন ওদের সাথে যায়। আমরা প্রতীক্ষা করছি আমাদের প্রতিপালকের জন্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাদের কাছে আগমন করবেন। এবার তিনি সে আকৃতিতে আগমন করবেন না, যেটিতে তাঁকে প্রথমবার ঈমানদারগন দেখেছিলেন। এসে তিনি ঘোষণা দিবেন আমি তোমাদের প্রতিপালক সবাই তখন বলে উঠরে আপনই-আমাদের প্রতিপালক। আর সেদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ ছাড়া তার স্থানে কেউ কথা বলতে পারবে না। আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের এবং তাঁর মাঝখানে পরিচায়ক কোন আলামত আছে কি? তারা বলবেনঃ পায়ের নলা। তখন পায়ের নলা খূলে দেয়া হবে। এই দেখে ঈমানদারগণ সবাই সিজদায় পতিত হবে। বাকি হ্যা করে তারা, যারা লোক-দেখানো এবং লোক-শোনানো সিজদা করেছিল। তবে তারা সিজদার মনোবৃত্তি নিয়ে সিজদা করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের মেরু-দন্ড একটি তক্তার ন্যায় শক্ত হয়ে যাবে। এমন সময় পূল স্হাপন করা হবে জাহান্নামের উপর। সাথিবীগন আরয করলেন, সে পূলটি কি ধরনের হবে ইয়া রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেনঃ দুর্ঘম পিচ্ছিলে জায়গা। এর ওপর আংটা ও হুক থাকবে, শক্ত চওড়া উস্টো কাঁটা বিশিষ্ট হবে, যা নাজদ দেশের সাদান বৃক্ষের কাটার মত হবে। সে পূলের উপর দিয়ে ঈমানদারগণের কেউ অতিক্রম করবে চোখের পলকের মতো, কেউ বিজলীর মতো। কেউ বা বাতাসের মতো আবার কেউ তীব্রগামী ঘোড়া ও সাওয়ারের মতো। তবে মুক্তি প্রাপ্তগগ কেউ নিরাপদে চলে আসবেন, আবার কেউ জাহান্নামের আগুনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে। একবারে শেষে পার হবে যে ব্যাক্তিটি, সে হেঁচড়িয়ে কোন রকমে পার হয়ে আসবে। এখন তোমরা হকের ব্যাপারে আমার অপেক্ষা বেশি কঠোর নও, যতটুকু সেদিন ঈমানদারগণ আল্লাহর সমীপে হয়ে থাকবে, যা তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যখন ঈমানদারগন এই দৃশ্যটি অবলোকন করবে যে, তাদের ভাইদেরকে রেখে একমাত্র তারাই নাজাত পেয়েছে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের সেসব ভাই কোথায়, যারা আমাদের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত, রোযা পালন করত, নেক কাজ করত? তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা যাও, যাদের অন্তরে এক দীনার বরাবর ঈমান পাবে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। আল্লাহ তাআলা তাদের মুখমন্ডল জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। এদের কেউ কেউ দু-পা ও দু-পায়ের নলীর অধিক পর্যন্ত জাহান্নামের মধ্যে থাকবে। তারা যাদেরকে চিনতে পারে, তাদেরকে বের করবে। তারপর এরা আবার প্রত্যাবর্তন করবে। আল্লাহ আবার তাদেরকে বলবেনঃ- তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। তারা গিয়ে তাদেরকেই বের করে নিয়ে আসবে যাদেরকে তারা চিনতে পারবে। তারপর আবার প্রত্যাবর্তন করবে। আল্লাহ তাদেরকে আবার বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। তারা যাদেরকে চিনতে পাবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। বর্ণনাকারী আর সাঈদ খূদরী (রাঃ) বলেনঃ তোমরা যদি আমাকে বিশ্বাস না কর, তাহলে আল্লাহর এ বানীটি পড়ঃ আল্লাহ অণু পরিমানও জুলুম করেন না। এবং অণু পরিমান পূণ্য কাজ হলেও আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ করেন (৪- ৪০)। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন। তখন মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, এখন একমাত্র আমার শাফাআতই অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি জাহান্নাম থেকে একমুষ্টি ভরে এমন কতগুলো কওমকে বের করবেন, যারা জ্বলে পূড়ে দঘ্ন হয়ে গিয়েছে। তারপর তাদেরকে বেহেশতের সামনে অবস্হিত হায়া’- নামক নহরে ঢালা হবে। তারা সে নহরের দুপার্শে এমনভাবে উদ্ভূত হবে, যেমন পাথর এবং গাছের কিনারে বহন করে আনা আবর্জনায় নীচ থেকে তৃণ উদ্ভূত হয়। দেখতে পাও তন্মধ্যে সূর্যের আলোর অংশের গাছগুলো সাধারণত সবুজ হয়, ছায়ার অংসগগুলো সাদা হয়। তারা সেখান থেকে মুক্তার দানার মত বের হবে। তাদের গর্দানে মোহর লাগানো হবে। জান্নাতে তারা যখন প্রবেশ করবে, তখন অপরাপর জান্নাতবাসীরা বলবেন, এরা হলেন রাহমান কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত যাদেরকে আল্লাহ তাআলা কোন নেক আমল কিংবা কল্যাণ কাজ ছাড়া জান্নাতে দাখিল করেছেন। তখন তাদেরকে ঘোষনা দেয়া হবেঃ তোমরা যা দেখেছ, সবই তো তোমাদের এর সাথে আরো সমপরিমান দেওয়া হল তোমাদেরকে। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদারদেরকে কিয়ামতের দিন আবদ্ধ করে রাখা হবে। পরিশেষে তারা পেরেশান হয়ে ওঠবে এবং বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের কাছে কারো দ্বারা শাফাআত করাই আমাদের মুক্তি দান করেন। তারপর তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলবে, আপনই তো সে আদম, যিনি মানবকুলের পিতা, স্বয়ং আল্লাহ নিজ হাত দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে বসবাসের সুযোগ প্রদান করেছেন তাঁর জান্নাতে, ফেরেশতাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং আপনাকে সব জিনিসের নামের তালীম দিয়েছেন। আমাদের এ স্হান থেকে প্রদানের নিমিত্ত আপনার সেই রবের কাছে শাফাআত করুন। তখন আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর তিনি নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার ভুলের কথাটি উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, বরং তোমরা নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও, যিনি পৃথিবীবাসীদের প্রতি প্রেরিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের মধ্যে প্রথম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তারা নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এলে তিনি তাদেরকে বলবেন আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। আর তিনি না জেনে তাঁর রবের কাছে প্রার্থনার ভুলটি উল্লেখ করবেন এবং বলবেন বরং তোমরা রাহমানের বন্ধু ইবরাহীমের কাছে যাও। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অতঃপর তারা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। তখন ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। আর তিনি এরুপ তিনটি বাক্যের কথা উল্লেখ করবেন যেগুলো বাহ্যত বাস্তব-পরিপন্হী ছিল। পরে বলবেন, তোমরা বরং মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে যাও। আল্লাহর এমন এক বান্দা যাকে আল্লাহ তাওরাত দান করেছিলেন, তার সাথে কথা বলেছিলেন এবং গোপন বাক্যালাপের মাধ্যমে তাঁকে সান্নিধ্য দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সবাই তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। এবং তিনি (অনিাচ্ছাকৃত) হত্যার ভুলের কথা উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, তোমরা বরং ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল এবং তার রুহ ও বানী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারা সবাই তখন ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন, তোমরা বরং মুহাম্মদ -এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা যার পূর্বের ও পরের ভূল মাফ করে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারা তখন আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে তার দরবারে হাযির হওয়ার অনুমতি চাইব। আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। তাঁর দর্শন লাভ করার সাথে সাথে আমি সিজদায় পড়ে যাবো। তিনি আমাকে সে অবস্থায় যতক্ষন রাখতে চাইবেন ততক্ষন বাখবেন। এরপর আল্লাহ তা-আলা বলবেন, মুহাম্মাদ, মাথা ওঠান; বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, আর শাফাআত করুন, কবুল করা হবে, চান আপনাকে দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আমার মাথা ওঠাবো। তারপর আমি-আমরে প্রতিপালকের এমন শ্রুতি ও প্রশংসা (হামদ ও সানা) করবো যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। এরপর আমি সুপারিশ করবো, তবে আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করা হবে। আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাস (বা)-কে এ কথাও বলতে শুনেছি যে, আমি বের হবো এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবো এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব। তারপর আমি ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের দরবারে হাযির হওয়ার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাঁকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ তাআলা যতক্ষন রাখতে চাইবেন, আমাকে সে অবস্হায় রাখবেন। তারপর বলবেন, মুহাম্মদ! মাথা উঠান। বলুন, তা শোনা হবে, শাফাআত করুন, কবুল করা হবে, চান দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি আমার মাথা উথাবো। আমার রবের এমন প্রশংসা ও শ্রুতি করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমি শাফাআত করব, আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করা হবে। আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তখন আমি বের হব এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করব এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব। তারপর তৃতীয়বারের মত ফিরে আসব এবং আমার রবের দরবারে প্রবেশ করার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ আমাকে সে অবস্থায় রাখবেন, যতক্ষন তিনি চাইবেন। তারপর আল্লাহ বলবেন, মুহাম্মাদ! মাথা উঠান এবং বলুন, শোনা হবে, সুপারিশ করুন, তা কবুল করা হবে, চান, দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি মাথা উঠিয়ে আমার রবের এমন শ্রুতি ও প্রশংসা (হামদ ও সানা) করব, যা আমাকে শিখিয়ে দেবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমি শাফাআত করব, আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারন করা হবে। তারপর আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি সেখান থেকে বের হয়ে তাদেয়কে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। পরিশেষে জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে একমাত্র তারা। কুরআন যাদেরকে আটকে রেখেছে। অর্থাৎ যাদের ওপর জাহান্নামের স্হায়ীবাস অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তিনি কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। (মহান আল্লাহর বানী) আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (১৭-৭৯) এবং তিনি বললেনঃ তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য প্রতিশ্রুতি মাকামে মাহমূদ’ হচ্ছে এটই।

হাদিস ৬৯৩৩

উবায়দুল্লাহ ইবনু সা’দ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের কাছে (লোক) পাঠালেন। তাদেরকে একটা তাঁবুর মধ্যে সমবেত করলেন এবং তাদের বললেনঃ তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গে মুলাকাত পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করবে। আমি হাওযের (কাওসারের) কাছে থাকব।

হাদিস ৬৯৩৪

সাবিত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তখন বলতেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ! সব প্রশংসা একমাত্র আপনারই, আসমান ও যমীনের তত্ত্বাবধায়ক আপনই এবং আপনারই জন্য সব তুস্তি। আসমান ও যমীন এবং এসবের মধ্যকার সবকিছুর প্রতিপালক আপনই এবং আপনারহঁ জন্য সব প্রশংসা আসমান যমীন ও এগুলোর মধ্যকার সব কিছুর নূর আপনই। আপনি হক, আপনার বান্দা হক, আপনার ওয়াদা হক, আপনার সাক্ষাৎ হক, জান্নাত হক, জাহান্নাম হক এবং কিয়ামত হক। ইয়া আল্লাহ! আপনারই উদ্দেশ্যে আমি ইসলাম কবুল করেছি এবং আপনারই প্রতি ঈমান এনেছি, তাওয়াক্কূল করেছি আপনারই ওপর, আপনারই কাছে বিবাদ হাওয়ালা করেছি: আপনারই কাছে ফায়সালা চেয়েছি। তাই আপনি আমার পূর্বের ও পরের গুপ্ত ও প্রকাশ্য এবং যা আপনি আমার চাইতে বেশি জ্ঞাত তা সবই মাফ করে দিন। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। বর্ননাকারী তাঊস (রহঃ) থেকে কায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) এবং আবূ যুবায়র (রহঃ) ‘কায়্যুম’-এর এর স্থলে ‘কায়্যাম’ বর্ননা করেছেন। বর্ননাকারী মুজাহিদ বলেনঃ ‘কায়্যুম’ সবকিছু পরিচালককে বলা হয়ে থাকে। উমর (রাঃ) ‘কায়্যাম’ পড়েছেন। মূলত শব্দ উভয়টই প্রশংসার জন্য ব্যবহত হয়।

হাদিস ৬৯৩৫

ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথে অচিরেই তার প্রতিপালক আলাপ করবেন তখন প্রতিপালক ও তার মাঝখানে কোন দোভাষী ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী পর্দাও থাকবে না।

হাদিস ৬৯৩৬

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি জান্নাত এমন হবে, সেগুলোর পানপাত্র ও অভ্যন্তরস্থ সব কিছুই হবে রুপার। আর দুটি জান্নাত এমন হবে, সেগুলোর পানপাত্র ও অভ্যন্তরস্থ সবকিছুই-হবে স্বর্ণের। জান্নাতে আদনে তাদের ও তাদের প্রতিপালকের দর্শনের মধ্যে তার চেহারার গর্বের চাঁদর ছাড়া আর কোন কিছু অন্তরায় থাকবে না।

হাদিস ৬৯৩৭

হুমায়দী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মিথ্যা কসম করে কোন মুসলমানের সম্পদ থেকে আত্মসাৎ করবে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে এমতাবস্হায় যে, তিনি তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বানীর সমর্থনে আল্লাহর কিতাবের আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না (৩-৭৭)।

হাদিস ৬৯৩৮

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকারের মানুষ, যাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেনও না। যে ব্যাক্তি তার দ্রব্যের উপর এই মিথ্যা কসম করে যে, একে এখন যে মূল্যে দেওয়া হল এর চেয়ে অধিক মূল্যে তা বিক্রয় করা যাচ্ছিল। (২) যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের মাল আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর মিথ্যা কসম করে। (৩) এবং ব্যাক্তি সে, যে প্রযোজনের অতিরিক্ত পানি আটকিয়ে রাখে। আল্লাহ তা’আলা তাকে লক্ষ্য করে কিয়ামতের দিন বলবেন, আজ আমি আমার মেহেরবানী থেকে তোমাকে বঞ্চিত করব, যেমনি তুমি যা তোমার হাতের অর্জিত নয় তা থেকে বিমুখ করতে। 

 হাদিস ৬৯৩৯

মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র্বলেলেঃ- আল্লাহ আসমান ও যমীনকে যেদিন সৃষ্টি করেছিলেন, সেদিনকার অবস্হায় যামানা পূনরায় প্রত্যবর্তন করেছে। বারটি মাসে এক বছর হয়। তন্মধ্যে চারটি মাস (বিশেষভাবে) মর্যাদাসম্পন্ন। যুলকাদা, যুলহাজ্জ (হজ্জ)া ও মুহাররম এই তিনটা মাস একাধারে এসে থাকে। আর মুযার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদা ও শাবান মাসের মাঝে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন, যদ্দরুন আমরা ভেবে ছিলাম, তিনি এই নামটি পেল্টিয়ে অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বললেনঃ এটি কি যুলহাজ্জ (হজ্জ) নয়? আমরা উত্তর করলাম, হ্যা, এটি যুলহাজ্জ (হজ্জ)ার মাস। তিনি বললেনঃ এটি কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি ভাল জানেন। তিনি নীরব রইলেনঃ আমরা ভেবেছিলাম তিনি হয়ত শহরটির নাম পেল্টিয়ে অন্য কোন নাম রেখে দিবেন। তিনি বললেনঃ এটি কি সেই (পবিত্র) শহরটি নয়? আমরা উত্তর করলাম, হ্যা। তারপর তিনি পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন আজকের এই দিনটি কোন দিন? আমরা উত্তর করলাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই বেশি ভাল জানেন। তিনি নীরব রইলেন যার দরুন আমরা ভাবলাম তিনি সম্ভবত এর নামটা পেল্টিয়েই দিবেন। তিনি বললেনঃ এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা -বললাম, হ্যা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তোমাদের রক্ত এবং সম্পদ বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু (রহঃ) বলেছেনঃ- আমার ধারণা হচ্ছে, আবূ বাকরা (রাঃ) তোমাদের ইজ্জত” কথাটিও বর্ণনা করেছিলেন, অর্থাৎ ওসব এ পবিত্র দিনে, এ পবিত্র শহরে, এ পবিত্র মাসটির ন্যায় পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন। এবং অতিশীঘ্রই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভ করবে। তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সাবধান আমার ওফাতের পরে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে একে অপরকে হত্যা করো না। সাবধান! উপস্থীতগণ অনুপস্হিত লোকদের কাছে (কথাগুলো) পৌছিয়ে দেবে। কেননা, হয়ত যার কাছে (রেওয়াত) পৌছানো হবে, তাদের মধ্যে এমন ব্যাক্তিও থাকবে, যারা (রেওয়াত) প্রত্যক্ষ শ্রোতার চাইতে বেশি সংরক্ষণকারী হবে। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) যখন এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন, তখন বলতেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছিলেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি পৌছিয়ে দিয়েছি কি? আমি পৌছিয়ে দিয়েছি কি?

হাদিস ৬৯৪০

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জনৈকা কন্যার এক ছেলের জীবনসায়াহ্নে তার কন্যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যাওয়ার জন্য (অনুরোধ করে) একজন লোক পাঠালেন। উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ আল্লাহ যা নিয়ে নেন এবং যা দান করেন সবই তারই জন্য। আর প্রতিটি বস্তুর জন্য একটা সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সুতরাং সে যেন সবর করে এবং সাওয়াবের আশা করে। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -তনয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পূনরায় যাওয়ার জন্য কসম দিয়ে লোক পাঠালেন। তিনি যাওয়ার জন্য, ওঠে দাড়ালেন। বর্ণনাকারী উসমো ইবনু যায়িদ (রাঃ) খলেন, আমি, মু’আয ইবনু জাবাল, উবায় ইবনু কাব, উবাদা ইবনু সামিতও তাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য ওঠে দাড়ালাম। আমরা যখন সেখানে গিয়ে প্রবেশ করলাম তখন তারা বাচ্চাটাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে দিলেন। অথচ তখন বাচ্চার বুকের মধ্যে এক অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার ধারণা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেছিলেনঃ এ তো যেন মশকের মত। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাদলেন। তা দেখে সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) বললেনঃ আপনি কাঁদছেন? তিনি বললেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তাঁর দয়ার বান্দাদের প্রতই দয়া প্রদর্শন করে থাকেন।

হাদিস ৬৯৪১

উবায়দুল্লাহ ইবনু সা’দ ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টি স্বীয় প্রতিপালকের কাছে অভিযোগ করল। জান্নাত বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ব্যাপারটি কি হলো যে তাতে শুধু নিঃস্ব ও নিম্ন শ্রেনীর লোকেরাই প্রবেশ করবে। এদিকে জাহান্নামও অভিযোগ করল অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র অহংকারীদেরকেই আমাতে প্রাধান্য দিলেন। আল্লাহ জান্নাতকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি আমার রহমত। জাহান্নামকে বললেনঃ তুমি আমার আযাব। আমি যাকে চাইব, তোমাকে দিয়ে শাস্তি পৌছাব। তোমাদের উভয়কেই পূর্ন করা হবে। তবে আল্লাহ তাঁআলা তার সৃষ্টির কারো উপর যুলম করবেন না। তিনি জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছানূযায়ী নতুন সৃষ্টি পয়দা করবেন। তাদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম বলবে, আরো অভিবিক্ত আছে কি? জাহান্নামে আরো নিক্ষেপ করা হবে, তখনো বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? এভাবে তিনবার বলবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর কদম (পা) জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ন হয়ে যাবে। তখন জাহান্নামের একটি অংশ আরেকটি অংশকে এই উত্তর করবে যথেষ্ট হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে ষথেষ্ট হয়েছে।

হাদিস ৬৯৪২

হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কতিপয় কাওম তাদের গুনাহর কারণে শাস্তিস্বরুপ জাহান্নামের অগ্নিশিখায় পৌছবে। তারপর আল্লাহ তাআলা নিজ করুণার বদৌলতে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবেন। তাদেরকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা হবে। হাম্মাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬৯৪৩

মূসা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ইহুদী পণ্ডিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললঃ হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ কিয়ামতের দিন আসমানকে এক আঙ্গুলের ওপয়, পৃথিবীকে এক আঙ্গুলের ওপর, পর্বতমালাকে একটি আঙ্গুলের ওপর, বৃক্ষলতা ও নদ্বীনালাকে আরেকটি আঙ্গুলের ওপর এবং সকল সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলের ওপর রেখে দিবেন। এবং নিজ হাতে ইশারা দিয়ে বলবেন, সমরাট একমাত্র আমই। এর সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং বললেনঃ তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উপলদ্ধি করেনি (৬- ৯১)।

হাদিস ৬৯৪৪

সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদা মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত যাপন করলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে ছিলেন। রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) কিরুপ হয় তা প্রত্যক্ষ করার জন্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের সাথে কিছু সময় কথা বললেনঃ এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। এরপর যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ কিংবা শেষের কিছু অংশ অবশিষ্ট রইল, তিনি উঠে বসলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে তিলাওয়াত করলেনঃ আকাশ সমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টিতে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য পর্যন্ত (৩-১৯০)। তারপর তিনি উঠে পিয়ে ওযু ও মিসওয়াক করলেন। অতঃপর এগার রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। বিলাল (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ)-এর (ফজরের) আযান দিলে তিনি দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে-নিলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সাহাবাদেরকে ফজরের (দু-রাকআত) সালাত (নামায/নামাজ) পড়িয়ে দিলেন।

হাদিস ৬৯৪৫

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন (সৃষ্টির) কাজ সম্পূর্ণ করলেন, তখন তার নিকটে তাঁর আরশের উপর লিপিবদ্ধ করে দিলেন, “আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল হয়েছে।

হাদিস ৬৯৪৬

আদম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি সত্যবাদী এবং সত্যবাদী বলে স্বীকৃত আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি হল এরুপ বীর্য থেকে যাকে মায়ের পেটে চল্লিশ দিন কিংবা চল্লিশ রাত একত্রিত রাখা হয়। তারপর অনুরুপ সময়ে আলাক হয়, তারপর অনুরুপ সময়ে গোশতপিণদে পরিনত হয়। তারপর আল্লাহ তায়াআলা তার কাছে ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এই ফেরেশতাকে চারটি জিনিস সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করার জন্য হুকুম দেয়া হয়। যার ফলে ফেরেশতা তার রিযিক, আমল, আয়ু এবং সৌভাগ্য কিংবা সূরভাগ্য হওয়া সম্পর্কে লিখে দেয়। তারপর তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা হয়। এজন্যই তোদের কেউ জান্নাতীদের আমল করে এতটুকু অগ্রগামী হয়ে যায় যে, তারঁ ও জান্নাতের মাঝখানে মাত্র এক গজেঁর দূরত্ব থাকতেই তার ওপর লিখিত তাকদীর প্রবল হয়ে যায়। তখন সে দোযখীদের আমল করে। পরিশেষে সে দোযখেই প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ দোযখীদের ন্যয় আমল করে। এমন পর্যায়ে পৌছে যে, তার ও দোযখের মধ্যে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতে তার উপর তাকদীরের লেখনী প্রবল হয়, যদ্দরুন সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে, ফলে জান্নাতেই প্রবেশ করে।

হাদিস ৬৯৪৭

খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে জিবরাঈল আপনি আমাদের সাথে যে পরিমাণ সাক্ষাৎ করেন তার চাইতে অধিক সাক্ষাৎ করতে কিসে বাধা দেয়? এরই প্রেক্ষিতে কুরআনের নিন্নোক্ত আয়াত অবতীর্ন হয়ঃ আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করব না, যা আমাদের সন্মুখে ও পিছনে আছে এবং যা এ দুয়ের অন্তবর্তী তা তারই। আর আপনার প্রতিপালক ভুলবার নন (৯৯- ৬৪)। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এটি মুহাম্মাদ এর প্রশ্নের জবাব।

হাদিস ৬৯৪৮

ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মদিনায় একটি কৃষিক্ষেত দিয়ে চলছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -তখন একটি খেজুরের ডালের উপর ভর দিয়ে চলছিলেন। তারপর তিনি যখন ইহুদীদের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগল, তাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। আবার কেউ কেউ বলল, তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসা করো না। পরিশেষে তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুরের শাখার ওপর ভর দিয়ে দাড়িয়ে গেলেন। তখন আমি তার পেছনেই ছিলাম। আমি ধারণা করছিলাম, তার ওপর ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল পরে তিনি বললেনঃ “তোমাকে ওরা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, বল, রুহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত। এবং তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে” (১৭-৮৫)। তখন তাদের একজন আরেকজনকে বলতে লাগল, বলেছিলাম তোমাদেরকে তাকে কোন প্রশ্ন করো না।

হাদিস ৬৯৪৯

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরাহারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্য নিয়ে যে ব্যাক্তি বের হয়, আর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং তার কলেমার বিশ্বাসই যদি তাকে বের করে থাকে, এমন ব্যাক্তির জন্য আল্লাহ স্বয়ং যিম্মাদার হয়ে যান। হয়তো তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, নয়তো যে স্হান থেকে সে বের হয়েছিল সাওয়াব কিংবা গনীমতসহ তাকে সে স্থানে প্রত্যাবর্তন করাবেন।

হাদিস ৬৯৫০

মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, কেউ লড়াই করছে মর্যাদার জন্য, কেউ বীরত্বের জন্য, কেউ লোক দেখানোর জন্য। এদের কার লড়াইটা আল্লাহর পথে হচ্ছে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর বানীকে বুলন্দ রাখার জন্য লড়াই করছে, সেটাই আল্লাহর পথে।

হাদিস ৬৯৫১

শিহাব ইবনু আববাদ (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি দল থাকবে, যারা আল্লাহর হুকুম আসা পর্যন্ত অন্যান্য লোকের বিরুদ্ধে সর্বদাই জয়ী থাকবে।

হাদিস ৬৯৫২

হুমায়দী (রহঃ) মুআবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মত থেকে একটি দল সব সময় আল্লাহর হুকুমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদেরকে মিথ্যুক প্রতিপন্ন করতে চাইবে কিংবা বিরোধিতা করবে তারা এদের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। কিয়ামত আসা পর্যন্ত তারা এ অবস্হায় থাকবে। মালিক ইবনু ইয়ুখামির (রহঃ) বলেনঃ আমি মু’আয (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তারা হবে সিরিয়ার অধিবাসী। মুআবিয়া (রাঃ) বলেনঃ মালিক ইবনু ইয়ুখামির (রাঃ) বলেনঃ তিনি মু’আয (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তাঁরা হবে সিরিয়ার।

হাদিস ৬৯৫৩

আবূল ইয়ামান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মূসা য়লামার কাছে একটু অবস্থান করলেন। তখন সে তার সাথী-সঙ্গীদের মধ্যে ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য কয়ে বললেনঃ তুমি যদি আমার কাছে এ টুকরাটিও চাও, তা হলে আমি তোমাকে তাও তো দিচ্ছি না। তোমার ব্যাপারে আল্লাহ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা তুমি অতিক্রম করতেও পারবে না। আর যদি তুমি ফিরে যাও, তা হলে আল্লাহ , স্বয়ং তোমাকে ধ্বংস করে দিবেন।

হাদিস ৬৯৫৪

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মদিনায় এক কৃষিক্ষেত কিংবা অনাবাদী জায়গা দিয়ে চলছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সাথে রক্ষিত একটা খেজুরের শাখার উপর ভর দিয়ে চলছিলেন। তারপর আমরা একদল ইহুদিকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলাম। তাদের একে অপরকে বলতে লাগল, তাঁকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। আবার তাদের কেউ কেউ বললঃ - তাঁকে জিজ্ঞাসা করো না। হয়তো তিনি এমন জিনিস উপস্হাপন করে দিবেন, যা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় লাগবে। তা সত্তেও তাদের কেউ বলে উঠল, আমরা অবশ্যই তাকে জিজ্ঞাসা করব। তারপর তাদেরই একজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে এগিয়ে জিজ্ঞাসা করল, হে আবূল কাসিম! রুহ কি? এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম- তার প্রতি ওহী অবতীর্ন হচ্ছে, এরপর তিনি (নিম্নোক্ত আয়াত) পড়লেনঃ”তোমাকে ওরা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রুহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত। এবং তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে” (১৭-৮৫)। আমাশ বললেনঃ আয়াতে ‘অমা য়্যুতু’ আমাদের কিরাআতে এমনই বিদ্যমান আছে।

হাদিস ৬৯৫৫

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুবু বলেছেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্য নিয়ে যে ব্যাক্তি বের হবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ এবং তার কলেমার প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত অন্য কিছু তাকে তার ঘর থেকে বের করেনি, তবে এমন ব্যাক্তির জন্য আল্লাহ যামিন হয়ে যান। হয়তো বা তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিবেন, নতুবা সে যে সাওয়াব ও গনীমাত হাসিল করেছে, তা সহ তিনি তাকে তার আবাসস্থলে প্রত্যাবর্তিত করবেন।

হাদিস ৬৯৫৬

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, তখন দোয়ায় দৃঢ় ও সংকল্পবদ্ধ থাকবে। তোমাদের কেউই এমন কথা কখনো বলা চাই না যে, (হে আল্লাহ!)তুমি যদি চাও, তাহলে আমাকে দান কর। কেননা আল্লাহকে বাধ্যকারী এমন কেউ নেই।

হাদিস ৬৯৫৭

আবূল ইয়ামান ও ইসমাঈল (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্নিত। একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ও রাসুল-তনয়া ফাতিমার কাছে রাতে এসেছেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছ না? আলী বলেনঃ তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের জীবন অবশ্যই আল্লাহর হাতে। তিনি যখন আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ওঠাতে চান জাগিয়ে ওঠান। আমি এ কথা বলার পর, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে চললেন। আর আমার কথার কোন উত্তর করলেন না। যাওয়ার সময় তাঁকে উরুর ওপর হাত মেরে বলতে শুনেছি, মানুয অধিকাংশ বিষয়েই বড্ড ঝগড়াটে।

হাদিস ৬৯৫৮

মুহাম্মাদ ইবনু সিনান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদার শস্যক্ষেতের নরম ডগার মত। জোরে বাতাস এলেই তার পাতা ঝুঁকে পড়ে। যখন বাতাস থেমে যায়, তখন আবার স্হির হয়ে যায়। ঈমানদারদেরকে বালা-মূসিবত দ্বারা এভাবেই ঝুঁকিয়ে রাখা হয়। আর কাফেরের উদাহরণ দেবদারু গাছ, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়। যদ্দরুন আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন সেটিকে মুলসহ উপড়ে ফেলেন।

হাদিস ৬৯৫৯

আল হাকাম ইবনু নাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যখন তিনি মিম্বরে উপবিষ্টঁ ছিলেন। তিনি বললেনঃ তোমাদের আগের উম্মাতদের তূলনায় তোমাদের অবস্হানকাল আসরের সালাত (নামায/নামাজ) ও সুর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়। তাওরাতের ধারকগণকে তাওরাত প্রদান করা হলে তারা সে অনুযায়ী আমল করল, তবে দুপুর হলে তারা অপারগ হয়ে পড়ল। এ জন্য- তাদেরকে এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া হল। অতঃপর ইনজীলের ধারকগণকে ইনজীল প্রদান করা হল, তারা তদনুযারী আমল করল আসরের সালাত (নামায/নামাজ) পর্যন্ত, তারপর তারা অক্ষম হয়ে পড়ায় তাদেরকে দেওয়া হল এক এক কীরাত করে। (সর্বশেষে) তোমাদেরকে কুরআন দেওয়া হল। ফলে এই কুরআন অনুযায়ী তোমরা আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমল করেছ। এ জন্য তোমাদেরকে দুই কিরাত দুই কিরাত করে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে। তাওরাতের ধারকগণ বললো, হে আমাদের প্রতিপালক! এরাতো আমলে সর্বাপেক্ষা কম আবার পারিশ্রমিকে সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তখন বললেনঃ তোমাদের পারিশ্রমিকে তোমাদেরকে কিছু জুলম করা হয়েছে কি? তারা বলল, না। তখন আল্লাহ বললেনঃ সেটি হচ্ছে আমার অনুগ্রহ আমি যাকে চাই তাকে দিয়ে থাকি।

হাদিস ৬৯৬০

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদল লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বায়আত করেছি। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের বায়আত এ শর্তে করছি-যে, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না তোমাদের হাত ও পায়ের মধ্যবর্তী লজ্জাস্হানকে কেন্দ্র করে কোন ভিত্তিহীন জিনিস গড়বেনা, কোন ভাল কাজে আমার অবাধ্য হবে না। তোমাদের থেকে যরো ওসব যথাযথ পুরা করবে, আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান রয়েছে। আর যারা ওসব নিযিদ্ধ জিনিসের কোনটায় লিপ্ত হয়ে গেলে তাকে যদি সে কারণে দূনিয়ায় শাস্তি প্রদান করা হয়, তা হলে তা হবে তার জন্য কাফফারা এবং পবিত্রতা। আর যাদের দোষ আল্লাহ ঢেকে রাখেন সেটি আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়। তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিবেন। 

No comments:

Powered by Blogger.