সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, অধ্যায়ঃ সালাম-১ম
পরিচ্ছেদঃ ১. আরোহী পথচারীকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম করবে
৫৪৬১. উক্ববা ইবনু মুকরাম ও মুহাম্মাদ ইবনু মারযূক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী ব্যক্তি পথচারীকে, পথচারী ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যককে সালাম করবে।
পরিচ্ছেদঃ ২. সালামের জবাব দেয়া রাস্তায় বসার অন্যতম হক
৫৪৬২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা (রহঃ) ... ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহার পিতা [আবদুল্লাহ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমার পিতা) আবু তালহা (রাঃ) বলেছেন, আমরা (বাড়ির সামনের খোলা) আংগিনায় বসে কথাবার্তা বলছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, রাস্তা-ঘাটে বৈঠক-মজলিস করা তোমাদের অভ্যাস কেন? রাস্তাঘাটে মজলিস-বৈঠক করা তোমরা বর্জন করবে। আমরা বললাম আমরা তো বসেছি কোনও অসুবিধা করার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। আমরা বসে আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা বলছি। তিনি বললেন, যদি তা না করে না পার, (করতেই হয়) তা হলে রাস্তার হক আদায় করবে। আর তা হলো দৃষ্টি অবনত রাখা, সালামের জবাব দেওয়া এবং উত্তম কথা বলা।
৫৪৬৩. সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকবে। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। সেখানে আমরা কথাবার্তা বলি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একান্তই যদি তোমাদের বসতে হয়, তাহলে তোমারা রাস্তার হক আদায় করবে। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, (কাউকে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া এবং সৎকাজের আদেশ করা ও মন্দকাজে নিষেধ করা।
৫৪৬৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. মুসলমানের প্রতি মুসলমানের অন্যতম হক সালামের জবাব দেয়া
৫৪৬৫. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের হক পাঁচটি। অন্য সুত্রে আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি বিষয় মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের ব্যাপারে ওয়াজিবঃ
১. সালামের জবাব দেওয়া, ২. হাঁচিদাতাকে (তার আলহামদু লিল্লাহ বলার জবাবে) রহমতের দু'আ করা, ৩. দাওয়াত কবুল করা, ৪. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং ৫. জানাযার সাথে গমন করা।
(রাবী) আবদুর রাযযাক (রহঃ) বলেন, মা’মার (রহঃ) এ হাদীস যুহরী (রহঃ) থেকে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করতেন, এরপর ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ) সুত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে পূর্ণ সনদে বর্ণনা করেছেন।
৫৪৬৬. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমানের প্রতি মুসলমানের হক ছয়টি। জিজ্ঞাসা করা হল, সেগুলো কী, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইরশাদ করলেন (সেগুলো হলোঃ)
১. তার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম করবে, ২. তোমাকে দাওযাত করলে তা তুমি গ্রহণ করবে, ৩. সে তোমার কাছে সৎ পরামর্শ চাইলে, তুমি তাকে সৎ পরামর্শ দিবে, ৪. সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে, তার জন্য তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) রহমতের দুআ করবে, ৫. সে অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে এবং ৬. সে মারা গেলে তার (জানাযার) সঙ্গে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. আহলুল কিতাব (ইয়াহুদী-নাসারা) কে আগে সালাম করার নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের সালামের জবাব দেয়ার পদ্ধতি
৫৪৬৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আহলে কিতাবের কেউ তোমাদের সালাম করলে তোমরা (শুধু এতটুকু) বলবে, ‘ওয়া আলাইকুম” (তোমাদের প্রতিও)।
৫৪৬৮. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন, আহলে কিতাবরা আমাদের সালাম করে থাকে, আমরা কিভাবে তাদের জবাব দিব? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ "ওয়া আলাইকুম।"
৫৪৬৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ইয়াহুদীরা যখন তোমাদের প্রতি সালাম করে, তখন কেউ বলে “আসসামু আলাইকুম” (তোমাদের মরন হোক)। তখন তুমি বলবে, “ওয়া আলাইকা” (তোমারও হোক)।
৫৪৭০. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেন। তবে তিনি বলেছেনঃ তখন তোমরা বলবে, “ওয়া আলাইকুম”।
৫৪৭১. আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদল ইয়াহুদী রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (সাক্ষাতের) অনুমতি চাইল। তারা তখন বলল, السَّامُ عَلَيْكُمْ (তোমাদের মরণ হোক)! তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, لْ عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ (বরং তোমাদের উপরে মরণ ও অভিশাপ বর্ষিত হোক)! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়িশা! আল্লাহ তা’আলা সব বিষয়ে উদারতা পছন্দ করেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আপনি কি তাদের উক্তি শোনেন নি? তিনি বললেন, আমিও তো বলে দিয়েছি “ওয়া আলাইকুম” (তোমাদের উপরেও)।
৫৪৭২. হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) (এ সমরূপে) ... যুহুরী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে এ দু’জনের বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো বলেছি “আলাইকুম” (তোমাদের উপরে) তারা ‘و’ অব্যয়টির উল্লেখ করেননি।
৫৪৭৩. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কয়েকজন ইয়াহুদী এল। তারা বলল السَّامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ (হে আবূ কাসিম! তোমার মরণ হোক)। তিনি বললেন, وَعَلَيْكُمْ (তোমাদের উপরেও)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম- بَلْ عَلَيْكُمُ السَّامُ وَالذَّامُ (বরং তোমাদের মরণ ও দূর্নাম হোক)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়িশা! তুমি কঠোর বাক্য প্রয়োগকারিণী হয়ো না। তিনি বললেন, তারা কি বলেছে, তা কি আপনি শোনেন নি? তিনি বললেন, তারা যা বলেছিল, তা-ই কি আমি তাদের ফিরিয়ে দেইনি? আমি বলেছিঃ 'ওয়া আলাইকুম’ (তোমাদের উপরেও)।
৫৪৭৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) উক্ত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, আয়িশা (রাঃ) তাদের দুরভিসন্ধি ধরে ফেললেন এবং তাদের গালি দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, থামো, হে আয়িশা! কেননা আল্লাহ তা’আলা অশ্লীলতা ও অশ্লীলতার মহড়া পছন্দ করেন না। তিনি বর্ধিত রিওয়ায়াত করেছেন, তখন মহা মহিমান্বিত আল্লাহ নাযিল করলেনঃ আর যখন তারা (ইয়াহুদীরা) আপনার কাছে আসে, তখন তারা আপনাকে এমন (বাক্য দ্বারা) অভিবাদন করে, যেমন (বাক্য দিয়ে) আল্লাহও আপনাকে অভিবাদন করেননি ...... আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
৫৪৭৫. হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়াহুদীদের কয়েকজন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করল। তারা বলল, আসসামু আলাইকা ইয়া আবাল কাসিম, তিনি বললেন, ওয়া আলাইকুম, তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, তখন তিনি রেগে গিয়েছিলেন- তারা কি বলল, আপনি কি শোনেন না? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, শুনেছি এবং তাদের উপর তা ফিরিয়ে দিয়েছি, আর তাদের বিরুদ্ধে আমাদের (দু'আ) কবুল হয়। অথচ আমাদের বিরুদ্ধে তাদের (দু'আ) কবুল হয় না।
৫৪৭৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদী নাসারাদের আগে সালাম দিও না। আর তাদের কাউকে পথে দেখলে তাকে তার সংকীর্ণ অংশে (চলতে) বাধ্য কর।
৫৪৭৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ওয়াকী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- 'যখন তোমরা ইয়াহুদীদের দেখতে পাবে ......।' আর শুবা (রহঃ) থেকে গৃহীত ইবনু জা'ফর (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- 'তিনি আহলে কিতাব সম্পর্কে বলেছেন'। ...... এবং জারীর (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যেখন তোমরা তাদের দেখতে পাবে ...... তিনি মুশরিকদের কোন দলের নাম নির্দেশ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ৫. শিশুদের সালাম করা মুস্তাহাব
৫৪৭৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিশোরদের কাছ দিয়ে (পথ) অতিক্রম করলেন, তখন তিনি তাদের সালাম করলেন।
ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) ... সাইয়ার (রহঃ) সুত্রে উল্লিখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৪৭৯. আমর ইবনু আলী ও মুহাম্মদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) ... সাইয়্যার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাবিত বুনানী (রহঃ) এর সঙ্গে হেঁটে পথ চলছিলাম। তিনি একদল বালকের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সালাম করলেন এবং (তখন) সাবিত (রহঃ) হাদীস রিওয়াত করলেন যে, তিনি আনাস (রাঃ)-এর সঙ্গে হেঁটে পথ চলছিলেন। তিনি (আনাস) একদল বালকের পাশ দিয়ে গেলেন এবং তাদের সালাম করলেন, এবং আনাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি (একবার) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হেঁটে পথ চলছিলেন, তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বালকদের কাছ দিয়ে চললেন এবং তাদের সালাম করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. পর্দা তুলে দেওয়া কিংবা এরূপ অন্য কোন আলামতকে 'অনুমতি' সাব্যস্ত করা জায়েয
৫৪৮০. আবূ কামিল জাহদারী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার কাছে তোমার জন্য প্রবেশের অনুমতি হল পর্দা তুলে রাখা এবং (হুজরায়) আমার আলাপচারিতা শুনতে পাওয়া। যতক্ষন না আমি তোমাকে নিষেধ করি।
৫৪৮১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হাসান ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৭. মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য স্ত্রীলোকের বাইরে যাওয়ার বৈধতা
৫৪৮২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমাদের উপরে) পর্দার বিধান আরোপের পর সাওদা (রাঃ) তার প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলেন, ছিলেন স্থুলদেহী, দেহাকৃতিতে উচ্চতায় তিনি নারীদের ঊর্ধ্বে থাকতেন; যারা তাঁকে চিনে, তাদের কাছে নিজেকে লুকাতে পারতেন না। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, হে সাওদা! আল্লাহর কসম! তুমি আমাদের কাছে লুকাতে পারবে না। ভেবে দেখ, কেমন করে তুমি বের হচ্ছ? আয়িশা (রাঃ) বলেন, একথা শুনে তিনি উল্টা ফিরে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন এবং রাতের খাবার গ্রহণ করছিলেন। তাঁর হাতে তখন অল্প গোশতযুক্ত একখানা হাড় ছিল।
সাওদা (রাঃ) ঢুকে পড়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি বের হয়েছিলাম, উমার আমাকে এই এই কথা বলেছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি ওহী নাযিল করেন। তারপর তাঁর উপর থেকে (ওহীর) অবস্থার অবসান হয়। আর তখনও হাড়টি তাঁর হাতে ছিল, তা তিনি রেখে দেননি। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে (এ বর্ননা আবূ কুরায়ব-এর)। আর আবূ বাকর (রহঃ) বর্ণিত রিওয়ায়াতে রয়েছে, "তাঁর দেহ মহিলাদের ঊর্ধ্বে থাকত।" আবূ বাকর (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে অধিক রিওয়ায়াত করেছেন যে, রাবী হিশাম (রহঃ) বলেছেন, الحاجة “প্রয়োজন” অর্থাৎ পায়খানার হাজত।
৫৪৮৩. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলেছেন, তিনি ছিলেন এমন এক মহিলা যার দেহ লোকদের ঊর্ধ্বে থাকত। তিনি (আরও) বলেছেন, আর তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের আহার গ্রহণ করছিলেন।
সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৪৮৪. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় রাতের বেলা 'মানাসি' এর দিকে বেরিয়ে যেতেন। الْمَنَاصِع (মানাসি) হল প্রশস্ত ময়দান। ওদিকে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতেন, আপনার স্ত্রীগণের প্রতি পর্দা বিধান করুন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেননি। কোন এক রাতে ইশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা সাওদা বিনত যাম'আ (রাঃ) বের হলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। উমার (রাঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন, হে সাওদা! আমরা তোমাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষায় (তিনি এরূপ করলেন)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহর তাআলা পর্দা-বিধি নাযিল করলেন।
৫৪৮৫. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৮. নির্জনে অনাত্মীয়া স্ত্রীলোকের কাছে অবস্থান করা এবং তার কাছে প্রবেশ করা হারাম
৫৪৮৬. ইয়াহইয়াহ ইবনু ইয়াহইয়া, আলী ইবনু হুজর, ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কেনি পুরুষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর কাছে কিছুতেই রাত যাপন করবে না; তবে যদি সে তার স্বামী হয় অথবা মুহরিম হয়।
৫৪৮৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! স্ত্রীলোকদের (আজনাবিয়াহ) কাছে তোমরা প্রবেশ করবে না। তখন আনসারীদের এক ব্যক্তি বলল, দেবর সমন্ধে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেন, দেবর তো মৃত্যু তুল্য।
৫৪৮৮. আবূ তাহির (রহঃ) ... ইয়াযীদ আবূ হাবীব (রহঃ) থেকে উল্লখিত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেছেন।
৫৪৮৯. আবূ তাহির (রহঃ) ... ইবনু ওহাব (রহঃ) বলেন, লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) কে আমি বলতে শুনেছি যে, الْحَمْوُ শব্দের অর্থ স্বামীর ভাই (দেবর-ভাশুর) এবং স্বামীর আত্নীয়দের মাঝে তার (স্বামীর ভাইয়ের) সমপর্যায়ের চাচাত ভাই প্রভৃতি।
৫৪৯০. হারুন ইবনু মারুফ ও আবূ তাহির (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) আবদুর রহমান ইবনু জুবায়র (রাঃ) কে হাদীস শুনিয়েছেন যে, বনূ হাশিম গোত্রের একদল লোক আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করল। তখন আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-ও (ঘরে) ঢুকলেন। তখন তিনি [আসমা (রাঃ)] তাঁর স্ত্রী ছিলেন। তাদের দেখতে পেয়ে ঐ বিষয়টি (অনুমতিবিহীন প্রবেশ) তিনি অপছন্দ করলেন। তিনি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আলোচনা করলেন এবং (একথাও) বললেন, অকল্যাণের কিছুই দেখিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে এ থেকে নির্দোষ রেখেছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, আমার আজকের এ দিনের পরে কোন পুরুষ তার সাথে আর একজন পুরুষ কিংবা দু'জন ব্যতীত কোন এমন স্ত্রীর কাছে প্রবেশ করবে না যার স্বামী অনুপস্থিত।
পরিচ্ছেদঃ ৯. কোন লোককে নারীদের সঙ্গে একাকী দেখা গেলে এবং সে মহিলা তার স্ত্রী বা তার মাহরাম হলে কুধারনাকে দমনের জন্য এ স্ত্রীলোক অমুক বলে দেয়া মুস্তাহাব
৫৪৯১. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীগণের কোন একজনের সঙ্গে ছিলেন, তখন তাঁর কাছ দিয়ে এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তিনি তাকে ডাকলেন সে (কাছে) এলে বললেন ওহে, এ হচ্ছে স্ত্রী আমার অমুক। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অন্য কারো ব্যাপারে আমি কুধারণা করলেও হয়ত করতাম, কিন্তু আপনার ব্যাপারে তো কুধারণা করতাম না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শয়তান মানুষের রক্ত প্রবাহের শিরায় শিরায় চলাচল করে থাকে।
৫৪৯২. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) (শব্দ বর্ণনায় তারা উভয়ে কাছাকাছি) ... সাফইয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফরত অবস্থায় ছিলেন। আমি রাতের বেলা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এলাম। (কিছু সময়) তাঁর সঙ্গে কথা বললাম, তারপর ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। তিনিও আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য আমার সাথে উঠে দাড়ালেন। (রাবী বলেনঃ) তখন তার [সাফিয়্যা (রাঃ)] এর বাসস্থান ছিল উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) এর বাড়িতে। তখন (সেখানে দিয়ে) আনসারী দুই ব্যক্তি যাচ্ছিল। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (এক মহিলার সাথে) দেখতে পেয়ে দ্রুত যেতে লাগল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা দুজন ধীরে চল। এ কিন্তু সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (আমার স্ত্রী)। তারা দুজন বলল, সুবহানাল্লাহ! ইয়া রাসুলাল্লাহ (আমরা তো কিছু মনে করিনি)! তিনি বললেনঃ শয়তান মানুষের শিরায় শিরায় চলাচল করে। আর আমি শংকিত হলাম যে, সে তোমাদের উভয়ের অন্তরে কোন কুধারণা কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ) এ জাতীয় কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে।
৫৪৯৩. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আাবু-দারিমী (রহঃ) ... আলী ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী সাফিয়্যা (রাঃ) তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রমযানের শেষ দশকে মসজিদে (নববীতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইতিকাফকালে তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে কিছু সময় কথাবার্তা বললেন, এরপর ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁকে এগিয়ে দিতে উঠে দাঁড়ালেন। ...... এরপর (পৃর্ববর্তী হাদীসের রাবী) মা'মার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শয়তান মানুষের রক্ত প্রবাহের শিরায় শিরায় পৌছে যায় ('চলে') প্রবাহিত হয়, বলেননি (বরং তিনি এ রিওয়ায়াত يَبْلُغُ مِنَ الإِنْسَانِ مَبْلَغَ الدَّمِ বলেছেন, তিনি يَجْرِي বলেননি।
৫৪৯৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে আমাদের মধ্যে বসা ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণের এক জামাআত ছিল। এ সময় তিনজনের একটি দল আসতে লাগলো। এদের দু'জন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে এগিয়ে এল, আর একজন চলে গেল। রাবী বলেনঃ তারা দু'জন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে থেমে গেল। তারপর তাদের একজন সমাবেশের মাঝে একটু ফাঁকা জায়গা দেখতে পেয়ে সেখানে বসে গেল, দ্বিতীয়জন তাদের (মজলিসের) পিছনে বসল আর তৃতীয় ব্যক্তি পেছনে ফিরে যেতে লাগল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মজলিস থেকে) ফারেগ হলে বললেন, শোন! তিনজনের ক্ষুদে দলটি সম্পর্কে কি আমি তোমাদের খবর দিব না? তাদের একজন তো আল্লাহর নিকটে আশ্রয় নিল, আল্লাহ তাআলা তাকে আশ্রয় দিলেন। আর একজন লজ্জা-সংকোচ করল, আল্লাহ তার লজ্জা-(এর মর্যাদা) রক্ষা করলেন। আর তৃতীয়জন ফিরে গেল, আল্লাহ তায়াআলাও তাকে এড়িয়ে গেলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০. কোন মজলিসে হাযির হয়ে ফাঁকা জায়গা পেলে সেখানে বসে পড়া; অন্যথায় সবার পিছনে বসা
৫৪৯৪. আহমদ ইবনু মুনযির ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহা (রহঃ) এ সনদে তার কাছে অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১. আগে এসে বসা কারো বৈধ অবস্থান থেকে কোন মানুষকে উঠিয়ে দেওয়া হারাম
৫৪৯৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কখনো কোন মানুষকে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসবে না।
৫৪৯৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু মুসান্না ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ কোন মানুষ কোন মানুষকে তার বৈঠক থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসবে না। বরং তোমরা (বলবে) প্রশস্ত করে দাও, জায়গা সীমা করে দাও।
৫৪৯৭. আবূ রবী, আবূ কামিল, ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (পূর্বোক্ত হাদীসের রাবী) লায়স (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এদের বর্ণিত হাদীসে এরা এরং তোমরা প্রশস্ত করে দাও, জায়গা করে দাও, (কথাটি) উল্লেখ করেননি। আর (তৃতীয় সনদের) রাবী ইবনু জুরায়জ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমি নাফিকে জিজ্ঞাসা করলাম (এ বিধান) কি জুমআর দিনের জন্য? তিনি বললেন, জুমআ ও অন্যান্য (সব) দিনের জন্য।
৫৪৯৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ তার ভাইকে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসবে না। আর ইবনু উমার (রাঃ) এর অভ্যাস ছিল যে, কোন ব্যক্তি তাঁর জন্য নিজের বসার জায়গা থেকে উঠে গেলে তিনি সেখানে বসতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১২. কেউ আসন ছেড়ে উঠে পুনরায় ফিরে আসলে সে তাতে অগ্রাধিকারী হবে
৫৪৯৯. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবদুর রাজ্জাক ও মা'মার (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১১. আগে এসে বসা কারো বৈধ অবস্থান থেকে কোন মানুষকে উঠিয়ে দেওয়া হারাম
৫৫০০. সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমআর দিনে (মসজিদের কাতার থেকে) তার ভাইকে উঠিয়ে দিয়ে তার বসার স্থানে বসবে না বরং সে বলবে 'জায়গা করে দিন।'
পরিচ্ছেদঃ ১২. কেউ আসন ছেড়ে উঠে পুনরায় ফিরে আসলে সে তাতে অগ্রাধিকারী হবে
৫৫০১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন (তার আসন থেকে) (সাময়িকভাবে) উঠে যায় ...... [এ বর্ণনা কুতায়বা (রহঃ) এর ঊর্ধ্বতন রাবী] আবদুল আযীয (রহঃ) এর এবং (অপর ঊর্ধ্বতন রাবী) আবূ আওয়ানা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যে ব্যক্তি তার আসন ছেড়ে উঠে যায়, তারপর সেখানে ফিরে আসে, তা হলে সে সেই স্থানের অধিক হকদার।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. অনাত্মীয় নারীদের কাছে হিজড়াকে প্রবেশে বাধাদান
৫৫০২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও অপর সনদে আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক হিজড়া তার কাছে (বসা) ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ছিলেন। সে উম্মে সালামা (রাঃ)-র বড় ভাইকে বলতে লাগল, হে আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া! আল্লাহ তাআলা যদি আগামী দিনে আপনাদেরেকে ‘তাইফ’ বিজয়ী করেন, তাহলে আপনাকে আমি গায়লান-কুমারীকে দেখাবো, সে 'চারটি নিয়ে সামনে আসে আর ‘আটটি নিয়ে পিছনে ফিরে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ ধরনের কথা বলতে শুনে বললেন এ যেন তোমাদের কাছে (আর) প্রবেশ না করে।
৫৫০৩. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক হিজড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগনের কাছে প্রবেশ করত। লোকেরা তাকে যৌন কামনা রহিত (অনভিজ্ঞ)-দের অন্তর্ভুক্ত মনে করত। রাবী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঘরে প্রবেশ করলেন, তখন সে তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে ছিল আর সে এক নারীর (দেহ সৌষ্ঠবের) বিবরণ দিয়ে বলছিল, যখন সামনে এগিয়ে আসে তখন চার (ভাঁজ) নিয়ে এগিয়ে আসে এবং যখন ফিরে, তখন আটটি নিয়ে ফিরে যায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ তো দেখছি এখানকার (নারী রহস্যের) বিষয়াদি বুঝে শুনে। সে যেন তোমাদের কাছে কখনো প্রবেশ না করে। তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বলেন, এরপর তারা তার থেকে পর্দা করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. 'আজনবী' নারী পথ-শ্রান্ত হলে তাকে আরোহণে সঙ্গী করার বৈধতা
৫৫০৪. মুহাম্মাদ ইবনুল আ'লা আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুবায়র (রাঃ) আমাকে বিয়ে করলেন, তখন ঘোড়াটি ছাড়া কোন সম্পদ কোন গোলাম এবং অন্য কিছু পৃথিবীতে তার ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়াটাকে ঘাস দিতাম তার সাংসারিক কাজকর্মও আঞ্জাম দিতাম। আমি তার পরিচর্যা করতাম, তার পানিবাহী উটের জন্য খেজুর বীচি কুটতাম, তাকে ঘাস দিতাম, পানি নিয়ে আসতাম, তার ডোল ইত্যাদি মেরামত করতাম এবং (রুটির) আটা মাখতাম। কিন্তু আমি ভাল রুটি পাকাতে পারতাম না। তাই আমার কয়েকজন আনসারী পড়শী আমাকে রুটি পাকিয়ে দিত। তারা ছিল নিঃস্বার্থ নারী।
আমি যুবায়র এর জমি থেকে, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জায়গীররূপে দিয়েছেলেন, খেজুর বীচি (কুড়িয়ে) আমার মাথায় করে বয়ে আনতাম। সে (জমি) ছিল এক ক্রোশের দুই-তৃতীয়াংশ (প্রায় পৌনে দু’মাইল) দুরে। তিনি বলেন, আমি একদিন আসছিলাম আর (বিচীর বোঝা) আমার মাথায় ছিল। (পথে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাত পেলাম, তখন তাঁর সঙ্গে তাঁর সাহাবীগণের একটি ছেটি জামাআত ছিল। তিনি আমাকে ডাকলেন এবং (তাঁর বাহন উটটিকে বসাবার জন্য) ইখ ইখ (শব্দ) করলেন যাতে আমাকে তাঁর পেছনে তুলে নিতে পারেন।
তিনি [আসমা (রাঃ)] বলেন আমি লজ্জাবোধ করলাম আর আমি ছিলাম তোমার [যুবায়র (রাঃ)] এর আত্নমর্যাদাবোধ সম্পর্কে অবগত। তিনি যুবায়র (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমার মাথায় করে বীটি বয়ে আনাটা (আমার কাছে) তার সঙ্গে তোমার আরোহণের চাইতে অধিক কঠিন (ও কষ্টকর)। তিনি বলেন, এরপরে (পিতা) আবূ বাকর (রাঃ) আমার কাছে একটি খাদিম পাঠিয়ে দিলেন। ঘোড়াটি দেখাশুনার কাজে সে আমার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে গেল। সে যেন আমাকে এ দায়িত্ব থেকে আযাদ করেছিল।
৫৫০৫. মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ আল গুবারী (রহঃ) ... ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আসমা (রাঃ) বলেছেন, আমি সাংসারিক কাজে যুবায়র (রাঃ) এর সহায়তা করতাম। তার একটি ঘোড়া ছিল। আমি (-ই) তার পরিচর্যা করতাম। ঘোড়াটির পরিচর্যা করার চাইতে কোন কাজ আমার কাছে কঠিনতর ছিল না। আমি তার জন্য ঘাস সংগ্রহ করতাম তার দেখাশুনা ও সেবা-পরিচর্যা করতে থাকতাম। রাবী বলেন এরপর একটি খাদিমা পেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু যুদ্ধবন্দী এলে তিনি তাকে একটি খাদিমা দিলেন। তিনি [আসমা (রাঃ)] বলেন, সে (খাদিমা) ঘোড়ার পরিচর্যায় আমার পক্ষে যথেষ্ট হল এবং আমি দায়িত্বমুক্ত হলাম। সে সময় এক ব্যক্তি আমার কাছে এসে বলল, হে আবদুল্লাহর মা! আমি একজন অভাবগ্রস্ত লোক, আপনার বাড়ির ছায়ায় বসে বেচাকেনা করার ইচ্ছা করেছি। তিনি বললেন, আমি তোমাকে অনুমতি দিয়ে ফেললে যুবায়র (রাঃ) (হয়ত) তা প্রত্যাখ্যান করবেন। তাই এক কাজ কর, যুবায়র (রাঃ) উপস্থিত থাকা অবস্থায় তুমি এসে আমার কাছে আবেদন করবে।
যথাসময় এসে সে বলল, হে আবদুল্লাহর মা! আমি একজন অভাবগ্রস্ত লোক, আপনার বাড়ির ছায়ায় বসে বেচাকেনা করার ইরাদা করেছি। তিনি বললেন, আমার বাড়ি ছাড়া তোমার জন্য মদিনায় আর কোন জায়গা নেই (কি)? তখন যুবায়র (রাঃ) তাকে বললেন, একটা অভাবী লোককে বেচাকেনা করতে দিতে তুমি বাধা সাধছ কেন? এরপর সে (সেখানে) বেচাকেনা করে (বেশকিছু) উপার্জন করল। আমি খাদিমাটি তার কাছে বেচে দিলাম। এ সময় যুবায়র (রাঃ) আমার কাছে প্রবেশ করল তখনও তার (বিক্রয়লব্ধ) মূল্য আমার কোলের উপর ছিল। সে বলল ওগুলো আমাকে হেবা করে দাও। তিনি বলেন, (আমি বললাম), আমি ওগুলো সদকা করে দিয়েছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় ব্যক্তির সম্মতি ব্যতিরেকে তাকে বাদ দিয়ে দু'জনে চুপি চুপি কথা বলা হারাম
৫৫০৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তিনজন থাকবে, তখন একজনকে বাদ দিয়ে দু'জনে কানে কানে কথা বলবে না।
৫৫০৭. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, কুতায়বা, ইবনু রুমহ, আবূ রাবী, আবূ কামিল, ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণিত হয়েছে।
৫৫০৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, হান্নাদ ইবনু সারী, যুহায়র ইবনু হারব, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা তিনজন হবে, তখন দু'জন আর একজনকে বাদ দিয়ে একজন কথা বলবে না, যতক্ষন না অন্য লোকদের সাথে মিশে যাও। এ কারণে যে, তাহলে তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিবে।
৫৫০৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা তিনজন হবে, তখন দু'জন তাদের সাথীকে বাদ দিয়ে কানাঘুষা করবে না, (কারণ) তা তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলবে।
৫৫১০. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আল আ'মাশ (রহঃ) সুত্রে উল্লেখিত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬. চিকিৎসা, ব্যধি ও ঝাড়-ফুঁক
৫৫১১. ইবনু আবূ উমার মাক্কী (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্হ হয়ে পড়লে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এ দুআ পড়ে তাকে ফুঁকে দিলেনঃ
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
(অর্থাৎ) আল্লাহর নামে, তিনি আপনাকে (রোগ) মুক্ত করুন, সব রোগ হতে আপনাকে নিরাময় করুন, আর হিংসুকের অনিষ্ট হাত-যখন সে হিংসা করে আর সব বদ নযরওয়ালার অনিষ্ট হতে।
৫৫১২. বিশর ইবনু হিলাল সাওওয়াফ (রহঃ) ... সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (জিবরীল) বললেনঃ
بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি- সে সব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নযর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।
৫৫১৩. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মূসাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল সে সব (হাদীস), যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি হাদীস উল্লেখ করেন। সে সবের একটি হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ বদ নযর (এর প্রতিক্রিয়া) বাস্তব।
৫৫১৪. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারমী, হাজ্জাজ ইবনু শাঈর ও আহমদ ইবনু খিরাশ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ ‘বদ নযর (এর প্রতিক্রিয়া) বাস্তব। তাকদীরকে অতিক্রমকারী কোন কিছু যদি থাকত, তাহল 'বদ নযর' অবশ্যই তাকে অতিক্রম করতে পারত। আর তোমাদের (বদ নযরওয়ালা ব্যক্তিদের) কে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধোয়া পানি দিতে বলা হলে তোমরা ধুয়ে পানি দিবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. যাদু-টোনা
৫৫১৫. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লাবীদ ইবনু আ'সাম নামে বনূ যুরায়ক গোত্রের এক ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যাদু করল। তিনি বলেন, এ যাদুর ক্রিয়ায় এমনও হতো যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেয়াল হতো যে কোন (পার্থিব) বিষয় তিনি করছেন, অথচ (বাস্তবে) তিনি তা করছিলেন না। অবশেষে একদিনে অথবা এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন; পূনরায় দু’আ করলেন এবং পূনরায় দুআ করলেন। এরপর বললেন, হে আয়িশা, তুমি কি বুঝতে পেরেছো যে, আল্লাহ আমাকে সে বিষয়ে সমাধান দিয়েছেন, যে বিষয়ে আমি তার কাছে সমাধান চেয়েছিলাম? (তা এভাবে যে) (দুজন ফিরিশতা) দু'ব্যক্তি (রূপে) আমার কাছে এল। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অন্য জন আমার পায়ের কাছে বসল। তারপর আমার মাথার কাছের ব্যক্তি পায়ের কাছের ব্যক্তিকে কিংবা আমার পায়ের কাছের লোকটি আমার মাথার কাছের লোকটিকে বলল, লোকটির রোগ কি?
অপরজন বলল, যাদু গ্রস্ত। (প্রথমজন) বলল, কে তাকে যাদু করেছে? (দ্বিতীয়জন) বলল, লাবীদ ইবনু আসলান। (প্রথমজন) বলল, কোন জিনিসে? (দ্বিতীয়জন) বলল (ভাঙ্গা) চিরুনী (আচড়ানোকালে চিরুণির সাথে) উঠা চুল, (আরও) বলল, নর খেজুরের ফুলের আবরণীতে। (প্রথমজন) বলল, তা কোথায়? (দ্বিতীয়জন) বলল- ‘যী-আরওয়ান কুপে’।
তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণের কয়েকজনকে সাথে নিয়ে সেখানে গেলেন। এরপর (ফিরে এসে) বললেন, হে আয়িশা, আল্লাহর কসম! সে (কুপের) পানি যেন মেহেদীপাতা ভিজানো, (পানি)। আর সেখানকার খেজুর গাছ যেন শয়তানের মাথা। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাহলে আপনি তা (জনসমক্ষে) পুড়ে ফেললেন না কেন? তিনি বললেন, না, (আমি তা সমীচিন মনে করিনি)। কারণ, আমাকে তো আল্লাহ আরোগ্য করেছেন আর মানুষকে কোন অকল্যাণে উত্তেজিত করা আমি অপছন্দ করি। আমি সে বিষয়ে হুকুম দিলে তা দাফন করে দেওয়া হয়েছে।
৫৫১৬. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যাদু করা হয়েছিল। আবূ কুরায়ব (রহঃ) এ হাদীসটি পুর্ণ বিবরণসহ (পূর্বোক্ত) ইবনু নুমায়র (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী রিওয়ায়াত করেছেন। তাতে তিনি এও বলেছেন, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুয়ার কাছে গেলেন এবং সেটির (চার) দিকে নযর করলেন। সেখানে খেজুর গাছ ছিল। তিনি [আয়িশা (রাঃ)] আরও বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ তা হলে আপনি তা (জনসমক্ষে) বের করে ফেলেন। তিনি [আবূ কুরায়ব (রহঃ)] "তা হলে আপনি তা পুড়ে ফেললেন না কেন?" অংশটি রিওয়ায়াত করেননি এবং "আমি হুকুম দিলে তা দাফন করে দেওয়া হল" (কথাটিও) উল্লেখ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮. বিষ
৫৫১৭. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ইয়াহুদী মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষ মেশানো বকরীর গোশত নিয়ে এল। তিনি তা থেকে (কিছু) খেলেন। পরে তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হল। তিনি তাকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমি আপনাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা করেছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ এ ব্যাপারে তোমাকে কিংবা তিনি বললেনঃ আমার উপরে ক্ষমতা দিবেন এমন নয়। তারা (সাহাবীগণ) বললেন, আমরা কি তাকে কতল করে ফেলব? তিনি বললেন, না। রাবী বলেন, এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলজিভ ও তালুতে (তার ক্রিয়া) আমি প্রত্যক্ষ করতাম।
৫৫১৮. হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, এক ইয়াহুদী মহিলা গোশতে বিষ মিশিয়ে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে এল ...... (পূর্বোক্ত রিওয়ায়াতের) রাবী খালিদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস রিওয়াত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. রোগিকে ঝাড়-ফুঁক করা মুস্তাহাব
৫৫১৯. যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কোন লোক অসুস্থ হলে পড়লে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত মুবারক দিয়ে তাকে মুছে দিতেন, এরপর বলতেনঃ
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
অর্থাৎ সঙ্কট দূর করে দিন, হে মানুষের-প্রতিপালক! আর শিফা ও নিরাময় করুন, আপনই নিরাময়কারী। আপনার শিফা ও নিরাময় ব্যতীত আর কোন (বাস্তব নির্ভরযোগ্য) শিফা নেই। এমন নিরাময় করুন যার পর কোন রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট না থাকে।
পরে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলেন এবং রোগভারে অবসন্ন হলেন, তখন আমি তাঁর হাত তুলে ধরলাম যাতে তিনি যেমন করতেন, আমিও তেমন করে (মুছে) দিতে পারি। কিন্তু তিনি আমার হাত থেকে তার হাত টেনে (ছাড়িয়ে) নিলেন এবং পরে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যাবস্থা করুন! তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বলেন, আমি লক্ষ্য করে দেখতে পেলাম যে, তাঁর ওফাত হয়ে গেছে।
৫৫২০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, বিশর ইবনু খালিদ, ইবনু বাশশার, অন্য সনদে আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে জারীর (রহঃ) এর সনদে বর্ণিত। তবে হুশায়ম ও শু'বা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি তার হাত দিয়ে তাকে (রোগীকে) মুছে দিতেন। আর (সুফিয়ান) সাওরী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে তাকে মুছে দিতেন। আর সুফিয়ান (রহঃ) এর মাধ্যমে আ’মাশ (রহঃ) গৃহীত ইয়াহইয়া (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের শেষে রাবী বলেছেনঃ পরে আমি এ হাদীস মানসুর (রহঃ) কে শুনালে তিনি ইবরাহীম (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করে আমাকে শুনালেন।
৫৫২১. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন রোগীকে দেখতে গেলে বলতেনঃ
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِهِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
অর্থাৎ সঙ্কট দূর করে দিন হে মানুষের প্রতিপালক তাঁর উপশম করুন, আপনই উপশমকারী। আপনার শিফা ব্যতীত কোন শিফা নেই এমন শিফা, যা কোন রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট রাখে না।
৫৫২২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন রোগীর কাছে গেলে তার জন্য দুআ করতেন। তিনি বলতেনঃ
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
"বিপদ সঙ্কট দূর করে দিন হে মানুষের প্রতিপালক! আর নিরাময় করুন। আপনই নিরাময়কারী, আপনার শিফা ব্যতীত কোন শিফা নেই; এমন নিরাময় করুন যা কোন রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট রাখে না।
তবে আবূ বাকর (রহঃ) বর্ণিত রিওয়ায়াত রয়েছে, তার জন্য দু’আ করতেন এবং বলতেন, তার বর্ণনায় আছে وَأَنْتَ الشَّافِي (এবং ...... আপনই নিরাময়কারী)।
৫৫২৩. কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ...... (উপরোল্লেখিত) আবূ আওয়ানা এবং জারীর (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
৫৫২৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতেনঃ
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ بِيَدِكَ الشِّفَاءُ لاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ أَنْتَ
অর্থাৎ মানুষের প্রতিপালক, বিপদ-সঙ্কট দুর করে দিন; আপনার হাতেই রয়েছে উপশম। আপনি ব্যতীত আর কেউ-ই (সঙ্কট) উন্মুক্তকারী নেই।
৫৫২৫. আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) সুত্রে উল্লিখিত সনদে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২০. মু'আব্বিযাত সূরা পড়ে ঝাড়-ফুঁক করা এবং দম করা
৫৫২৬. সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি মুআববিযাত* (সূরাগুলো) পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। পরে তিনি যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন, তখন আমি তাকে ফুঁক দিতে লাগলাম এবং তার-ই হাত দিয়ে তাঁর শরীর মুছে দিতে লাগলাম। কারণ আমার হাতের চেয়ে তাঁর হাত ছাড়া অধিক বরকতপূর্ণ। আর ইয়াইয়া ইবনু আইউবের বর্ণনায় بِمُعَوِّذَاتٍ আছে।
* সূরা ফালাক ও সূরা নাসকে মুআববিযাত বলা হয়।
৫৫২৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি মু'আববিযাত, পাঠ করে নিজ শরীরে দম করতেন। তার ব্যাধি কঠিন হয়ে দাঁড়ালে আমি তা পাঠ করে তাঁর হাত দিয়ে তাঁর শরীর মুছে দিতাম, ঐ হাতের বরকতের আশায়।
৫৫২৮. আবূ তাহির, হারামালা, আবদ ইবনু হুমায়দ, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, উকবা ইবনু মুকারাম ও আহমদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে মালিকের সনদে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে মালিকের হাদীস ব্যতীত তাদের কারো হাদীসে "তাঁর হাতের বরকতের আশায়" কথাটি নেই। ইউনুস (রহঃ) ও যিয়াদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজেকে মুআব্বিযাত দিয়ে দম করতেন এবং নিজের হাতে নিজের শরীর মুছতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২১. নযর লাগা, পার্শ্ব ঘা, বিষ ফোঁড়া, বিষাক্ত প্রানীর বিষক্রিয়া ও অসীব নযর থেকে (রক্ষা পাওয়ার জন্য) ঝার-ফুঁক করা মুস্তাহাব
৫৫২৯. আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) ... আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে ঝাড়-ফুঁক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীদের একটি পরিবারকে যে কোন বিষধর প্রানীর বিষ থেকে মুক্তির জন্য ঝাড়-ফুঁক করা অনুমতি দিয়েছেন।
৫৫৩০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীদের একটি পরিবারের লোকদের বিষাক্ত প্রানীর বিষক্রিয়া থেকে (আরোগ্যলাভের জন্য) ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন।
৫৫৩১. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ম ছিল যে, মানুষ তার (দেহের) কোন অংশে অসুস্থতা বোধ করলে কিংবা তাতে কোন ফোঁড়া বা জখম (হয়ে) থাকলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আঙ্গুল দিয়ে এভাবে করতেন (একথা বলে এভাবে করার রূপ বুঝাবার জন্য) রাবী সুফিয়ান (রহঃ) তার শাহাদাত আঙ্গুলটি মাটিতে রাখতেন এরপর তা তুলে নিতেন এবং তখন এ দু'আ পড়তেনঃ
بِاسْمِ اللَّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا لِيُشْفَى بِهِ سَقِيمُنَا بِإِذْنِ رَبِّنَا
অর্থাৎ আল্লাহর নামে- আমাদের যমীনের মাটি আমাদের কারো লালার সাথে (মিলিয়ে) আমাদের প্রতিপালকের হুকুমে তা দিয়ে আমাদের রোগীর আরোগ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে (মালিশ করছি)।
তবে ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) (তাঁর রিওয়ায়াতে) বলেছেন, يُشْفَى আরোগ্য প্রদান করা হয়। আর যুহায়র (রহঃ) বলেছেন, لِيُشْفَى سَقِيمُنَا আমাদের রোগীর আরোগ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে।
৫৫৩২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুবায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নযর লাগা থেকে (রক্ষা পাওয়ার জন্য) ঝাড়-ফুঁক করার হুকুম করতেন।
৫৫৩৩. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... মিসআর (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ হাসীদ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫৩৪. ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ নযর থেকে (রক্ষার জন্য) ঝাড়-ফুঁক করার হুকুম করতেন।
৫৫৩৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে ঝাড়-ফুঁক বিষয়ে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিষাক্ত প্রানীর বিষক্রিয়া, বিষফোঁড়া ও নযর লাগা থেকে (রক্ষার জন্য) ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৫৫৩৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নযর লাগা, বিষাক্ত প্রানীর বিষক্রিয়া ও বিষাক্ত পার্শ্বঘা থেকে (রক্ষা পাওয়ার জন্য) ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন।
৫৫৩৭. আবূ রবী সুলায়মান ইবনু দাঊদ (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী উম্মু সালমা (রাঃ) এর ঘরে একটি বালিকার চেহারায় (কাল বা হলুদ) দাগ দেখে বললেন, তার আসীব (নযর) লেগেছে, তার জন্য ঝাড়-ফুঁক কর। অর্থাৎ তার চেহারায় হলুদ বর্ণ ছিল।
৫৫৩৮. উকবা ইবনু মুকরাম আম্মি (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাযম পরিবারকে সাপের ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি দেন এবং আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) কে বললেন, আমার কি হল যে, আমার ভাই জাফর (রাঃ) এর সন্তানদের কৃশকায় দেখতে পাচ্ছি? তারা কি অভাবগ্রস্ত হয়েছে? তিনি (আসমা) বললেন, না, তবে তাদের উপর দ্রুত নযর লাগে। তিনি বললেনঃ তুমি তাদের ঝেড়ে দাও। তিনি বললেন, তখন আমি তাঁর কাছে (দুআটি) শুনালাম। তিনি বললেন, (ঠিক আছে) তুমি তাদের ঝেড়ে দাও।
৫৫৩৯. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ আমরকে সাপের ঝাড়-ফুঁকের অনমুতি দেন। আবূ যুবায়র (রহঃ) আরও বলেছেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে আরও বলতে শুনেছি যে, একটি বিচ্ছু আমাদের এক ব্যক্তিকে দংশন করল। আমরা তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন এব ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি (তাকে) ঝেড়ে দই? তিনি বললেন, তোমাদের যে কোন ব্যক্তি যদি তার ভাইয়ের (কোনও) উপকার করতে পারে, সে যেন (তা) করে।
৫৫৪০. সা’দ ইবনু ইয়াহইয়া উমাবী (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) (থেকে) উল্লেখিত সনদে অনুরূপ হাদীস রিওযায়াত করেন। তবে তিনি বলেছেন, তখন লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তাকে ঝাড়-ফুঁক করি? তিনি (শুধু) ঝাড়-ফুঁক করি- বলেন নি (বরং তাকে শব্দটিও বলেছেন)।
৫৫৪১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একজন মামা ছিলেন, যিনি বিচ্ছুর কামড়ে মন্ত্র করতেন। এ সময় (একদিন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মন্ত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন। তখন তিনি (আমার মামা) তার নিকটে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি মন্ত্র নিষেধ করে দিয়েছেন আমি তো বিচ্ছুর (কামড়ে) মন্ত্র করে থাকি? তিনি বললেন, তোমাদের যে কোন লোক তার ভাইয়ের কোন উপকার করতে সক্ষম হলে সে যেন তা করে।
৫৫৪২. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৫৫৪৩. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এক সময়) মন্ত্র নিষেধ করে দিলেন। তখন আমর ইবনু হাযম গোষ্ঠীর লোকেরা এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের কাছে একটি মন্ত্র ছিল, যা দিয়ে আমরা বিচ্ছুর কামড়ে মন্ত্র করতাম। আর আপনি তো মন্ত্র নিষেধ করে দিয়েছেন। রাবী জাবির (রাঃ) বলেন, তারা তা তাঁর কাছে পেশ করল। তখন তিনি বললেন, কোন অসুবিধা দেখতে পাচ্ছি না। তোমাদের যে কেউ তার ভাইয়ের কোনও উপকার করতে সমর্থ হলে সে যেন তার উপকার করে।
No comments: