সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, অধ্যায়ঃ সালাম-২য়
পরিচ্ছেদঃ ২২. শিরক (জাতীয় কিছু) না থাকলে মন্ত্রে কোন আপত্তি নেই
৫৫৪৪. আবূ তাহির (রহঃ) ... আওফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহেলী যুগে (বিভিন্ন) মন্ত্র (দিয়ে ঝাড়-ফুঁক) করতাম। তাই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে বিষয়ে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার কাছে পেশ করতে থাকবে, মন্ত্রে কোন আপত্তি নেই যদি না তাতে কোন শিরক (জাতীয় কথা) থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. কুরআন শরীফ এবং অন্যান্য দু'আ যিকির দিয়ে ঝার-ফুঁক করে বিনিময় গ্রহন জায়েয
৫৫৪৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবী কোন এক সফরে ছিলেন। তারা কোন একটি আরব গোত্রের বসতির কাছ দিয়ে পথ অতিক্রমকালে তাদের কাছে আতিথেয়তার কথা বললেন। তারা তাদের মেহমানদারী করল না। পরে তারা তাদের বলল, তোমাদের দলে কি কোন মন্ত্র বিশেষজ্ঞ আছে? কারণ বসতির সর্দার সাপে দংশিত হয়েছে কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ, তারা বলল) বিপদাক্রান্ত হয়েছে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ। পরে সে তার কাছে গিয়ে সূরা ফাতিহা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করল। ফলে লোকটি ভাল হয়ে গেল এবং ঝাড়-ফুঁককারীকে ছাগলের একটি ছোট পাল দেওয়া হলো। সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল আর সে বলল, যতক্ষন না তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উল্লেখ না করি (ততক্ষন গ্রহণ করতে পারি না)।
পরে সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বিষয়টি তাঁর কাছে বর্ণনা করল, সে বলল, ইযা রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি ফাতিহাতুল কিতাব ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করিনি। তখন তিনি মৃদু হাসলেন এবং বললেন, তুমি কি করে জানলে যে, তা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করা যায়? এরপর বললেন, তাদের কাছ থেকে তা নিয়ে নাও এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটি অংশ রাখবে।
৫৫৪৬. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আবূ বিশর (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে (ওঝা) উম্মুল কুরআন- সূরা ফাতিহা পড়তে লাগল এবং তার থু থু জমা করে থু দিতে লাগল। ফলে লোকটি ভাল হয়ে গেল।
৫৫৪৭. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একটি মনযিলে অবতরণ করলাম। তখন আমাদের কাছে একটি স্ত্রীলোক এসে বলল, মহল্লার সর্দার সর্প-দংশিত হয়েছে, তোমাদের মাঝে কি কোন ঝাড়-ফুঁককারী আছে? তখন আমাদের এক ব্যক্তি উঠে তার সঙ্গে গেল, সে উত্তম ঝাড়-ফুঁক করতে পারে বলে আমাদের ধারণা ছিল না। সে সূরা ফাতিহা দিয়ে তাকে ঝাড়-ফুঁক করল। তাতে সে ভাল হয়ে গেল। তখন তারা তাকে একপাল ছাগল দিল এবং আমাদের দুধপান করাল। আমরা বললাম, তুমি কি উত্তম ঝাড়-ফুঁক করতে? সে বলল, আমি তো সূরা ফাতিহা ছাড়া আর কিছু দিয়ে তাকে ঝাড়-ফুঁক করিনি।
রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে না যাওয়া পর্যন্ত (ঐ ছাগল)-গুলিকে স্থানান্তরিত কর না। পরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তার কাছে তার আলোচনা করলাম। তিনি বললেন, সে কি করে বুঝল যে, এ সুরাটি দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করা যায়? তোমরা ছাগলগুলো ভাগ করে নাও এবং আমার জন্যও তোমাদের সঙ্গে একটি ভাগ রেখ।
৫৫৪৮. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) এ সনদে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তখন তাঁর সাথে আমাদের এক ব্যাক্তি উঠে দাঁড়াল, আমরা যাকে ঝাড় ফুঁক বিষয়ে তেমন কিছু (পারদর্শী) ধারনা করতাম না।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. দু'আর (ঝার-ফুঁকের) সময় আক্রান্ত স্থানে হাত রাখা মুস্তাহাব
৫৫৪৯. আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উসমান ইবনু আবূল আস-সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি ব্যথার কথা বললেন, যা তিনি মুসলমান হওয়ার সময় থেকে তার শরীরে অনুভব করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার শরীরের যে অংশ বেদনাক্রান্ত হয়, তার উপরে তোমার হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলবে এবং সাতবার বলবেঃ
أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
‘অর্থাৎ আল্লাহ এবং তাঁর কুদরতের শরণাপন্ন হচ্ছি-যা আমি অনুভব করি এবং যা আশঙ্কা করি, তার অকল্যাণ থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. সালাতে ওয়াসওয়াসা প্রদানকারী শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
৫৫৫০. ইয়াহইয়া ইবনু খালাফ আল বাহিলী (রহঃ) ... আবূল আলা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! শয়তান আমার এবং আমার সালাত ও কিরআতের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে তা আমার জন্য এলোমেলো করে দেয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওটা এক (প্রকারের) শয়তান যার নাম ‘খিনযিব’। যখন তুমি তার উপস্থিতি অনুভব করবে তখন (আউযুবিল্লাহ পড়ে) তার কবল থেকে আল্লাহর নামে আশ্রয় নিয়ে তিনবার তোমার বামদিকে থু থু নিক্ষেপ করবে। তিনি বলেনঃ পরে আমি তা করলে আল্লাহ আমা থেকে তা দূর করে দিলেন।
৫৫৫১. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। এরপর অনুরূপ (হাদীস) উল্লেখ করেছেন, তবে সালিম ইবনু নূহ ‘তিনবার’ এর কথা উল্লেখ করেননি।
৫৫৫২. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... উসমান ইবনু আবুল আস সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ...... তারপর তাঁদের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. প্রতিটি রোগের ঔষধ রয়েছে এবং চিকিৎসা করা মুস্তাহাব
৫৫৫৩. হারুন ইবনু মারুফ, আবূ তাহির ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ প্রতিটি রোগের ঔষধ রয়েছে। সূতরাং রোগে যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করা হলে মহান ও মহিয়ান আল্লাহর হুকুমে রোগ নিরাময় হয়।
৫৫৫৪. হারুন ইবনু মারুফ ও আবূ তাহির (রহঃ) ... আসিম ইবনু উমার ইবনু কাতাদা (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আল মুকাননা (রহঃ)-কে রোগ শয্যায় দেখতে গেলেন। একটু পরে তিনি বললেন, তুমি শিংগা না লাগানো পর্যন্ত আমি উঠব না। কেননা, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তাতে নিরাময় রয়েছে।
৫৫৫৫. নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আসিম ইবনু উমার ইবনু কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের কাছে আমাদের পরিবারে এলেন, তখন এক ব্যক্তি ফোঁড়া-পাঁচড়ায় কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ) তিনি বললেন, যখমে অসুস্থ হয়েছিল। তিনি বললেন, তুমি কি অসুস্থতাবোধ করছ? সে বলল- আমার খোস-পাঁচড়া আমার জন্য কঠিন রূপ ধারণ করেছে। তিনি তখন (খাদিমকে) বললেন, হে কিশোর! আমার কাছে একজন শিংগা প্রয়োগকারী (বৈদ্য) ডেকে আন। তখন সে (রোগী) তাঁকে বলল, শিংগা প্রয়োগকারী (বৈদ্য) দিয়ে আপনি কি করবেন, হে আবূ আবদুল্লাহ? তিনি বললেন, আমি তাতে একটি শিংগার নল লাগাতে চাই। সে বলল, আল্লাহর কসম! মাছি আমার গায়ে বসলে অথবা কাপড়ের ঘষা আমার গায়ে লাগলে তাই আমাকে কষ্ট দেয় এবং আমার জন্য অসহ্য হয়ে পড়ে (তা হলে শিংগার ব্যথা কী করে সইব)?
পরে তিনি যখন ঐ বিষয়ে তার অসহিষ্ণুতা দেখলেন তখন বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি যে, তোমাদের ঔষধ পত্রের কোন কিছুতে যদি কল্যাণ থেকে থাকে, তা হলে তা শিংগার নল কিংবা মধুর শরবত পান কিংবা আগুনের সেঁকে রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আরও) বলেছেনঃ (একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে) আমি পোড়ানো বা লোহার দাগ লাগিয়ে চিকিৎসা করা পছন্দ করি না। রাবী বলেন, সে একজন শিংগাবিদ (বৈদ্য) নিয়ে এল, সে তার শিংগা লাগাল। ফলে তার বেদনানুভূতি দূর হয়ে গেল।
৫৫৫৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উম্মু সালমা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শিংগা লাগাবার ব্যাপারে অনুমতি চাইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শিংগা লাগিয়ে দেওয়ার জন্য আবূ তায়বা (রাঃ)কে হুকুম করলেন। রাবী বলেন, আমার ধারণা হয় যে, তিনি (ঊর্ধ্বতন রাবী) বলেছেন যে, তিনি (আবূ তায়বা) ছিলেন তাঁর দুধভাই কিংবা তিনি বলেছেন, সে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর ছিল।
৫৫৫৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কাব (রাঃ) এর কাছে একজন চিকিৎসক পাঠালেন। সে তার একটি ধমনী কেটে দিল, পরে লৌহা পুড়িয়ে (রক্ত বন্ধ হওয়ার জন্য) তাতে দাগ দিয়ে দিল।
৫৫৫৮. উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি “সে তাঁর একটি ধমনী কেটে দিল” কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫৫৫৯. বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আবূ সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)কে বলতে শুনেছি যে, খন্দক বুদ্ধে উবাই (রাঃ)এর হাত (অথবা পা) এর প্রধান ধমনীতে তীর বিদ্ধ হলো, তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লোহা পুড়িয়ে দাগ দিলেন।
৫৫৬০. আহমদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) এর প্রধান রগে তীর বিদ্ধ হলো। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজ হাতে একটি তীর ফলক দিয়ে তার রগ কেটে দাগ দিয়ে দিলেন। পরে তা ফুলে উঠলে দ্বিতীয়বার দাগ দিয়ে দিলেন।
৫৫৬১. আহমদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর দারিমী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) শিংগা নিলেন এবং শিংগা প্রয়োগকারীকে তার পারিশ্রমিক দিলেন। আর (একবার) তিনি নাকে ওষুধের ফোটা নিলেন।
৫৫৬২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আমর ইবনু আমির আনসারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা নিয়েছিলেন আর তিনি (যথারীতি মজুরিও দিয়েছিলেন কারণ, তিনি) পারিশ্রমিকের ব্যাপারে কারো প্রতি যুলুম করতেন না।
৫৫৬৩. যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ জ্বর হল জাহান্নামের তাপ, অতএব পানি দিয়ে তাকে ঠাণ্ডা কর।
৫৫৬৪. ইবনু নুমায়র ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমার (রহঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জ্বরের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের তাপ থেকে। তাই পানি দিয়ে তোমরা তাকে ঠাণ্ডা করবে।
৫৫৬৫. হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের তাপসঞ্জাত; তাই তাকে পানি দিয়ে নিভিয়ে দাও।
৫৫৬৬. আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাকাম ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের তাপসঞ্জাত; তাই তাকে পানি দিয়ে স্তিমিত করে দাও।
৫৫৬৭. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের তাপসঞ্জাত; তাই তাকে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর।
৫৫৬৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনূরূপ বর্ণনা করেন।
৫৫৬৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার কাছে জ্বরগ্রস্ত কোন স্ত্রীলোককে নিয়ে আসা হলে তিনি পানি আনতে বলতেন। পরে তা তার বক্ষদেশে ঢেলে দিতেন এবং বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তাকে পানি দিয়ে ঠান্ডা কর। তিনি আরও বলেছেন, তা জাহান্নামের তাপসঞ্জাত।
৫৫৭০. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীস বর্ণনা করেন। তবে আবূ কুরায়ব (রহঃ) এর ঊর্ধ্বতন রাবী ইবনু নুমায়র (রহঃ) বর্নিত হাদীসে রয়েছে, ‘তার (রোগিণী) ও তার কামিসের গিরেবানের মাঝে পানি ঢেলে দিতেন’ আর (অপর ঊর্ধ্বতন রাবী) উসামা (রাঃ) এর হাদীসে জ্বর জাহান্নামের তাপসঞ্জাত’ কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি।
আবূ আহমাদ বলেন, ইবরাহীম ইবনু সুফিয়ান বলেন, আমাদের কাছে হাসান ইবনু বিশর হাদীস বর্ণনা করেছেন, (তিনি বলেন) আমাদের এই সূত্রে আবূ উসামা হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৫৭১. হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ... আবায়া ইবনু রিফাআ (রহঃ) সুত্রে তার দাদা রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি যে, জ্বর জাহান্নামের প্রচণ্ড তাপের অংশ, তাই তোমরা তাকে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর।
৫৫৭২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, জ্বর জাহান্নামের তাপ থেকে (উদ্ভূত)। তাই তোমাদের উপর থেকে তাকে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর। তবে রাবী আবূ বাকর (রহঃ) "তোমাদের উপর থেকে" উল্লেখ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ২৭. মুখে (জোর করে) ঔষধ ঢেলে দেয়া অপছন্দনীয়
৫৫৭৩. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুস্থতাকালে তাঁর মুখে ঔষুধ ঢেলে দিলাম; তিনি তখন ইশারা করলেন যে, আমার মুখে ওষুধ ঢেলো না। আমরা বললাম, এটা ওষুধের প্রতি রোগীর বিতৃষ্ণার প্রকাশ। পরে যখন তিনি চেতনা ফিরে ফেলেন, তখন বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের মুখে ওষুধ ঢেলে দেওয়া হবে- তবে আব্বাস ব্যতীত; কারণ তিনি তোমাদের শরীক ছিলেন না।
৫৫৭৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... উক্কাশা ইবনু মিহসান এর বোন উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক ছেলেকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম, যে তখনও (সাধারণ) খাবার গ্রহণের বয়সে পৌছেনি, বাচ্চাটি তাঁর গায়ে পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনালেন এবং তা ঢেলে দিলেন।
তিনি বলেন, আর একবার আমি আমার (এক) ছেলেকে নিয়ে তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম- যার গলদেশে ব্যথার কারণে আমি তার (নাসারন্ধ্রে পাকানো ন্যাকড়া দিয়ে) প্রদাহ নিরাময়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। তিনি বললেন, ন্যাকড়ার এ প্রক্রিয়ায় তোমাদের সন্তানদের গলদেশের ব্যথার চিকিৎসা কর কেন? তোমরা (বরং) ভারতীয় চন্দন (আগর কাঠ) ব্যবহার করবে। কেননা তাতে সাতটি (রোগের) উপশম রয়েছে। তার মধ্যে একটি ذَاتُ الْجَنْبِ (নিউমোনিয়া ও শ্বাস কষ্ট) গলা ব্যথায় (টনসিল) নাকে ভারতীয় চন্দনের (আগরের) প্রলেপ দেওয়া হবে, আর ذَاتِ الْجَنْبِ চোয়ালের এক পাশ দিয়ে মুখে ঢেলে দিবে।
৫৫৭৫. হারামালা ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উকবা ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাঃ) তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়য়াত গ্রহণকারিণী প্রাথমিক পর্যায়ের মুহাজির নারীগণের অন্যতমা। আর তিনি হলেন বনূ আসাদ ইবনু খুযায়মা-র অন্যতম সদস্য উক্কাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) এর বোন। রাবী বলেনঃ তিনি (উম্মু কায়স) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, তিনি তার একটি ছেলেকে নিয়ে, যে তখনও (সাধারণ) খাবার খাওয়ার বয়সে পৌছেনি- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন, আর তখন তিনি পাকানো ন্যাকড়া নাসারন্ধ্রে ঢুকিয়ে ঐ ছেলেটির গলা ব্যথা নিরাময়ের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।
রাবী ইউনূস (রহঃ) বলেন, أَعْلَقَتْ অর্থ غَمَزَتْ অর্থাৎ গলদেশে ব্যথা বা রক্ত জমার আশঙ্কায় নাসিকারন্ধ্রে ন্যাকড়া ঢুকিয়ে নিরাময়ের ব্যাবস্থা করেছিলেন। তিনি বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পাকানো ন্যাকড়া ঢুকিয়ে তোমাদের সন্তানদের নিরাময়ের ব্যবস্থা কর কেন? তোমরা (বরং) এ ভারতীয় চন্দন (আগর) ব্যবহার করবে, কারণ তাতে অবশ্যই সাতটি (রোগের) ওষুধ রয়েছে। তার মধ্যে ذَاتُ الْجَنْبِ একটি।
রাবী উবায়দুল্লাহ বলেন, তিনি আমাকে আরও খবর দিলেন যে, তার ঐ ছেলেটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোলে পেশাব করে দিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু পানি নিয়ে আসতে বললেন এবং তা তার পেশাবের উপরে ঢেলে দিলেন, তবে একেবারে পূর্ণাঙ্গরূপে তা ধুলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. কালজিরা দ্বারা চিকিৎসা
৫৫৭৬. মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, কালজিরায় প্রতিটি রোগের উপশম রয়েছে- তবে ‘আস-সাম’ (السَّام) থেকে নয় আর আস-সাম হল মৃত্যু। আর ‘হাব্বাতুস সাওদা’ হল (স্থানীয় ভাষায়) শুনীয (অর্থাৎ কালজিরা)।
আবূ তাহির, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ইবনু আবূ উমার, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আাদ-দারিমী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (পূর্বোল্লিখিত) উকায়ল (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে (দ্বিতীয় সনদে) সুফিয়ান (রহঃ) ও (প্রথম সনদে) ইউনুস (রহঃ) এর হাদীসে الْحَبَّةُ السَّوْدَاءُ রয়েছে। (তার ব্যাখ্যায়) তিনি ‘শুনীয’ বলেননি।
৫৫৭৭. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত্যু ব্যতীত এমন কোনও রোগ নেই কালজিরায় যার শিফা নেই।
পরিচ্ছেদঃ ২৯. তালবীনা (সাগু-বার্লি, তরল হালুয়া) প্রসঙ্গে
৫৫৭৮. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লাইস ইবনু সা’দ (রহঃ) ... উরওয়া (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তার নিয়ম ছিল, যখন তার পরিবারের কোন লোক মারা যেত এবং সে উপলক্ষে মহিলাগণ সমবেত হতো, পরে পরিবারের লোক ও বিশিষ্ট (আত্নীয়) ব্যতীত অন্যরা চলে যেত, তখন তিনি এক ডেকচি ‘তালবীনা’ রান্না করার নির্দেশ দিতেন। তা রান্না করা হতো; তারপর ‘সারীদ’ তৈরি করে তালবীনা তার ওপর ঢেলে দেওয়া হতো। এরপর তিনি বলতেন, এটা থেকে আহার কর। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তালবীনা রোগীর অন্তর প্রশান্ত করে এবং দুঃখ কিছুটা প্রশমিত করে।
পরিচ্ছেদঃ ৩০. মধুপান করানো দ্বারা চিকিৎসা প্রসঙ্গে
৫৫৭৯. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমার ভাইয়ের দাস্ত হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে মধুপান করাও। সে তাকে মধুপান করাল পরে এসে বলল, আমি তাকে মধুপান করিয়েছি কিন্তু তার দাস্ত আরও বেড়ে গেছে। তিনি এভাবে তাকে তিনবার বললেন। তারপর লোকটি চতুর্থবার এসে বললে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে মধুপান করাও। লোকটি বলল, মধুপান করিয়েছি কিন্তু দাস্ত বেড়ে যাচ্ছে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহই সত্য বলেছেন, তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলেছেন। তারপর আবার তাকে পান করালে সে ভাল হয়ে গেল।
আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমার ভাইয়ের পেট খারাপ হয়েছে। অতঃপর তিনি তাকে বললেন, ওকে মধুপান করাও। এটি শু'বার হাদীসের অর্থযুক্ত বর্ণনায় বর্ণিত।
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্লেগ, কুলক্ষণ ও জ্যোতিষীর গননা ইত্যাদি
৫৫৮০. ইয়াহইয়াহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তার পিতা সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) কে উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) কে এ মর্মে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছেন যে, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্লেগ সম্পর্কে কি শুনেছেন? তখন উসামা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্লেগ একটি শাস্তি যা বনী ইসরাঈল কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ) তোমাদের পুর্বে যারা ছিল তাদের উপরে পাঠানো হয়েছিল। সুতরাং তোমরা কোন এনাকায় প্লেগের কথা শুনলে সেখানে যেও না। আর কোন এলাকায় প্লেগ দেখা দিলে এবং তোমরা সেখানে অবস্থানরত থাকলে সেখান থেকে পলায়ন করবে না। রাবী আবূ নাযর (রহঃ) বলেছেন, শুধু পলায়নের উদ্দেশ্যে সে স্থান ত্যাগ করা, এমন কর না।
৫৫৮১. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্লেগ আযাবের আলামত। মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ্ পাক তা দিয়ে তাঁর বান্দাদের কিছু লোককে বিপদগ্রস্থ করেন। সুতরাং কোন এলাকায় এর প্রাদুর্ভাবের সংবাদ পেলে তোমরা সেখানে যেও না। আর তোমরা কোন এলাকায় অবস্থানকালে সেখানে প্লেগ দেখা দিলে সেখান থেকে পলায়ন করবে না। এ বর্ণনা কা’নাব এর, আর কুতায়বা (রহঃ) এর বর্ণনাও অনুরূপ।
৫৫৮২. মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ প্লেগ একটি আযাব, যা তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে কিংবা বণী ইসরাইলের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অতএব কোন এলাকায় তা দেখা দিলে তা থেকে পলায়নের উদ্দেশে সে এলাকা ত্যাগ করো না। আর কোন এলাকায় প্লেগ দেখা দিলে সেখানে প্রবেশ করো না।
৫৫৮৩. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আমির ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি সা’দ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) কে প্লেগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) বললেন, আমি সে বিষয়ে তোমাকে অভিত করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তা একটি আযাব কিংবা একটি শাস্তি যা আল্লাহ্ পাক বনী ইসরাইলের একটি উপদল কিংবা তামদের পূর্ববর্তী কোন একদল লোকের উপরে পাঠিয়েছিলেন। সুতরাং কোন এলাকায় তাঁর কথা শুনলে সেখানে তাঁর উপরে (প্লেগকে পরোয়া না করে) তোমরা প্রবেশ কর না, আর কোন এলাকায় তোমাদের উপরে তা এসে পড়লে সেখান থেকে পলায়নের উদ্দেশ্যে বের হয়ো না।
৫৫৮৪. আবূ রবী সুলায়মান ইবনু দাউদ, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এর সনদে তাঁর বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ হাদিস রিওয়ায়েত করেছেন।
৫৫৮৫. আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ এ ব্যধি বা পীড়া একটি শাস্তি যা দিয়ে তোমাদের পূর্বেকার কতক উম্মাতকে আযাব দেয়া হয়েছে। পরে তা পৃথিবীতে (বিদ্যমান) রয়ে গেছে। তাই এক সময় তা চলে যায়, আর এক সময় তা এসে পড়ে। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন এলাকায় তার কথা শুনতে পায় সে যেন কিছুতেই সেখানে না যায়, আর যে ব্যাক্তি কোথাও থাকা অবস্থায় সেখানে তা এসে পড়ে, পলায়নের ইচ্ছা যেন তাকে সেখান থেকে বের না করে।
৫৫৮৬. আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে ইউনুস (রহঃ) এর সনদে তাঁর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫৮৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... হাবীব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মদিনায় অবস্থান করছিলাম। তখন আমার কাছে খবর পৌছল যে, কুফায় প্লেগ দেখা দিয়েছে। তখন আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) প্রমুখ আমাকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি যখন কোন এলাকায় থাকবে, সেখানে তা দেখা দিলে সেখান থেকে বের হয়ো না। আর যদি তোমার কাছে সংবাদ পৌছে যে, তা কোন এলাকায় রয়েছে, তা হলে সেখানে যেও না। রাবী বলেন, আমি বললাম, এ রিওয়ায়াত কার তরফ থেকে? তাঁরা বললেন, আমির ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে তিনি তা বর্ণনা করে থাকেন। রাবী বলেন, তখন আমি তাঁর কাছে গেলাম। তারা বলল, তিনি বাড়িতে নেই। তখন আমি তার ভাই ইবরাহীম ইবনু সা’দ (রহঃ) এর সাথে দেখা করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, উসামা (রাঃ) যখন সা’দকে হাদীস শোনাচ্ছিলেন, তখন আমি হাযির ছিলাম।
তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে উনেছি। এ ব্যাধি একটি মহামারী কিংবা একটি আযাব কিংবা আযাবের অবশিষ্টাংশ-- যা দিয়ে তোমাদের পুর্বেকার কতক লোককে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। সুতরাং কোন এলাকায় তোমাদের অবস্থানকালে যদি তা দেখা দেয়, তখন সেখান থেকে তোমরা বের হয়ো না। আর যদি তোমাদের কাছে সংবাদ পৌছে যে, তা কোন এলাকায় রয়েছে, তাহলে সেখানে যেও না। হাবীব (রহঃ) বলেন, তখন আমি ইবরাহীম (রহঃ) কে বললাম, আপনি কি শুনেছেন যখন উসামা (রাঃ) সা’দ (রাঃ) এর কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন, আর তিনি তাতে প্রতিবাদ করেননি? বললেন, হ্যাঁ।
৫৫৮৮. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি হাদীসের প্রারম্ভে আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) সস্পর্কিত বিবরণ বিবৃত করেননি।
৫৫৮৯. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) খুযায়মা ইবনু সাবিত (রাঃ) ও উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ...... এরপর শু’বা (রহঃ) এর হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫৯০. উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবরাহীম ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) ও সা’দ (রাঃ) বসে বসে কথা বলছিলেন। তাঁসা দু'জন বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (পূর্বোল্লেখিত) রাবীদের হাদীসের ন্যায়।
ওয়াহব ইবনু বাকিয়্যা (রহঃ) ... ইবরাহীম ইবনু সা’দ ইবনু মালিক (রহঃ) তাঁর পিতা (সা’দ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পূর্বোল্লেখিত রাবীদের হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫৯১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমার (রাঃ) শাম এর দিকে রওয়ানা হলেন। ‘সারগ’ পর্যন্ত পৌছলে 'আজনাদ' অধিবাসীদের (প্রতিনিধি ও অধিনায়ক) আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ) ও তাঁর সহকর্মীগণ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। তখন তাঁরা খবর দিলেন যে, শামে মহামারী শুরু হয়ে গিয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন উমার (রাঃ) বললেন, প্রথম যুগের মুহাজিরদের আমার কাছে ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলে তিনি তাঁদের পরামর্শ চাইলেন এবং তাঁদের খবর দিলেন যে শামে মহামারী শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লেন। তাঁদের কেউ কেউ বললেন, আপনি একটা বিশেষ কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, তাই আমরা আপনার ফিরে যাওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করি না। আর কেউ কেউ বললেন, আপনার সাথে রয়েছে প্রবীণ ব্যক্তি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ। তাই আমরা তাঁদেরকে এ মহামারীর মুখে এগিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করি না।
তিনি বললেন, আপনারা উঠুন। এরপর বললেন, আনসারীদের আমার কাছে ডেকে আন। আমি তাঁদেরকে তাঁর কাছে ডেকে আনলে তিনি তাঁদের কাছেও পরামর্শ চাইলেন। তাঁরা মুহাজিরদের পথ অনুসরণ করলেন এবং মুহাজিরগণের ন্যায় তাঁদের মধ্যেও মতপার্থক্য হল। তিনি বললেন, আপনারা উঠুন! এরপর তিনি বললেন, (মক্কা) বিজয়ের আগে হিজরতকারী কুরায়শের মুরব্বীদের যারা এখানে রয়েছেন, তাঁদের আমার কাছে ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম। তাঁদের দুজেনও কিন্তু দ্বিমত পোষণ করলেন না। তাঁরা (সকলেই) বললেন, আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করি যে, আপনি লোকদের নিয়ে ফিরে যান এবং তাঁদেরকে এ মহামারীর মুখে এগিয়ে দিবেন না।
তখন উমার (রাঃ) লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন, আমি ফজর পর্যন্ত সওয়ারীর উপর থাকবো, তোমরাও (ফজর পর্যন্ত সওয়ারীর উপর) অবস্থান কর। তখন আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর তাকদীর থেকে পলায়ন করে? তখন উমার (রাঃ) বললেন, হে আবূ উবায়দা! তুমি ভিন্ন অন্য কেউ এ কথা বললে (রাবী বলেন) উমার (রাঃ) তাঁর বিরুদ্ধাচরণ অপছন্দ করতেন (তিনি বললেন) হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর তাকদীর থেকে আল্লাহরই তাকদীরের দিকে পলায়ন করছি। তোমার যদি একপাল উট থাকে আর তুমি একটি উপত্যকায় অবতীর্ণ হওয়ার পর দেখ যে, দুটি প্রান্তর রয়েছে, যার একটি সবুজ শ্যামল অপরটি শূন্য। সে ক্ষেত্রে তুমি যদি সবুজ শ্যামল প্রান্তরে (উট) চরাও, তাহলে আল্লাহর তাকদীরেই সেখানে চরাবে, আর যদি তৃণশূন্য প্রান্তরে চরাও, তাহলেও আল্লাহর তাকদীরেই সেখানে চরাবে।
রাবী বলেন, এ সময় আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) এলেন, তিনি (এতক্ষণ) তাঁর কোন প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে (হাদীসের) ইলম রয়েছে। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা কোন এলাকায় এর সংবাদ শুনতে পাও, তখন তার উপরে (দুঃসাহস দেখিয়ে) এগিয়ে যেয়ো না। আর যখন কোন দেশে তোমাদের সেখানে থাকা অবস্থায় দেখা দেয়, তখন তা থেকে পলায়ন করে বেরিয়ে পড়ো না। রাবী বলেন, তখন উমার (রাঃ) আল্লাহর হামদ করলেন। তারপর চলে গেলেন।
৫৫৯২. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... মা'মার (রহঃ) উক্ত সনদে মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। মা'মার (রহঃ) এর হাদীসে অধিক বলেছেনঃ রাবী বলেন [উমার (রাঃ)] আবূ ঊবায়দাকে আরো বললেন, বল তো, সে যদি তৃনশূন্য প্রান্তরে চরায় আর সবুজ শ্যামল প্রান্তর বর্জন করে, তা হলে তুমি কি তাকে অক্ষম সাব্যস্ত করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হলে এবার চল। রাবী বলেন, পরে সফর করে মদিনায় উপনীত হয়ে তিনি বললেন, এটি অবস্থানস্থল কিংবা তিনি বললেন, এটই অবতরণ স্থান ইনশাআল্লাহ।
আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে উল্লেখিত সুত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন নিশ্চয়ই আবদুল্লাহ ইবনু হারিস তাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ বলেন নি।
৫৫৯৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু রাবী'আ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমার (রাঃ) শামের সফরে বের হলেন, ‘সারাগ’ পর্যন্ত গেলে তাঁর কাছে (সংবাদ) পৌছল যে, শামে মহামারী দেখা দিয়েছেন। তখন আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) তাকে খবর দিলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন এলাকায় মহামারীর (সংবাদ) শুনবে, তখন এর উপরে এগিয়ে যাবে না। আর যখন কোন এলাকায় তা দেখা দিবে, যখন তোমরা সেখানে রয়েছ, তখন তা থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। এর পরে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সারাগ থেকে ফিরে গেলেন।
সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (ইবনু উমার) (রাঃ) থেকে ইবনু শিহাব (রহঃ) এর রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) এর হাদীসের কারণেই উমার (রাঃ) লোকদের নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩২. সংক্রমন, কুলক্ষণ, পাখীর (পেঁচার) কুলক্ষণ, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো পোকা, নক্ষত্র প্রভাবে বর্ষণ ও পথ বিভ্রমের ভুত-প্রেতের অস্তিত্ব নেই এবং অসুস্থ উটের মালিক তার উট সুস্থ উটের নিকট আনবে না
৫৫৯৪. আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (এ হাদীস সে সময়ের) যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, (ক্ষুধায় পেট কামড়ানো) কীট (বা সফর মাসের অগ্রপশ্চাৎকরণ) ও পাখির কুলক্ষণ বলে কিছু নেই। তখন এক বেদুঈন আরব বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তা হলে সে উট পালের অবস্থা কি, যা কোন বালূকাময় ভূমিতে থাকে সেগুলো যেন (সুশ্রী) সবল। তারপর সেখানে পাঁচড়া আক্রান্ত (কোন) উট এসে তাদের মাঝে ঢুকে পড়ে তাদের সবশুলিকে পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে দেয়? তিনি বললেন, তা হলে প্রথম (উট)-টিকে কে সংক্রমিত করেছিল?
৫৫৯৫. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও হাসান হুলওয়ানী ও আবূ সালামা ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ, (ক্ষুধায় পেট কামড়ানো) কীট ও পাখির (পেঁচার) কুলক্ষণ (মৃতের পেঁচার রূপ ধারনের কুসংস্কার) এর অস্তিত্ব নেই। তখন এক বেদুঈন আরব বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ...... পূর্বোক্ত ইউনুস (রহঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীসের অনুরূপ।
৫৫৯৬. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী, সিনান ইবনু আবূ সিনান দুআলী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমণ বলতে কিছু নেই ......। তখন এক বেদুঈন আরব দাঁড়াল ...... এর পরের অংশ ইউনুস ও সালিহ (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (পূর্বোক্ত সনদে) যুহরী (রহঃ) বলেন, সাইব ইবনু ইয়াযীদ নামির (রহঃ) এর ভাগ্নে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো কীট এবং পাখির কুলক্ষণের অস্তিত্ব নেই।
৫৫৯৭. আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমণ (-এর অস্তিত্ব) নেই। তিনি আরও হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অসুস্থ উটপালের মালিক (অসুস্থ উটগুলিকে) সুস্থ উটপালের মালিকের (উটের) কাছে আনবে না। আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ দুংটি হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন। পরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁর (প্রথম হাদীসের) ‘সংক্রমণ ...... নেই’ বলা থেকে নীরব থাকেন এবং অসুস্থ উটপালের মালিক সুস্থ উটপালের মালিকের কাছে আনবেনা এর বর্ণনায় দৃঢ় থাকেন।
রাবী বলেনঃ (একদিন) হারিস ইবনু আবূ যুবাব (রহঃ), তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর চাচাত ভাই, বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি তে শুনতে পেতাম যে, আপনি এ হাদীসের সাথে আরও একটি হাদীস আমাদের কাছে রিওয়াত করতেন যা বর্ণনায় আপনি এখন নীরব থাকছেন। আপনি বলতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমণ ...... নেই। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) তা মেনে নিতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন, অসুস্থ পালের মালিক সুস্থপালের মালিকের কাছে নিয়ে যাবে না। তখন হারিস (রহঃ) এ ব্যাপারে তাঁর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলেন। ফলে আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাগাম্বিত হয়ে হাবশী ভাষায় কিছু বললেন।
তিনি হাবিস (রহঃ) কে বললেন, তুমি কি বুঝতে পেরেছো, আমি কি বলেছি? তিনি বললেন, না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি বলেছি, আমি অস্বীকার করছি। আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, আমার জীবনের শপথ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) অবশ্যই আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন 'সংক্রমণ ...... নেই'। এখন আমি জানি না যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) ভুলে গেলেন, নাকি একটি অপরটিকে (মানসুখ) রহিত করে দিয়েছে।
৫৫৯৮. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমণ (-এর বাস্তবতা) নেই। ঐ সাথে রিওয়ায়াত করতেন অসুস্থ উট পালের মালিক (তার অসুস্থ উট) অন্য মালিকের সুস্থ উটপালের কাছে নিয়ে আসবে না। বাকী অংশ রাবী ইউনুস (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
৫৫৯৯. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৬০০. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়রা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যধি, কুলক্ষণে পেঁচা, নক্ষত্র (প্রভাবে বর্ষণ) ও (ক্ষুধায় পেট কামড়ানো) কীট এর অস্তিত্ব নেই।
৫৬০১. আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যধি কুলক্ষণ ও (মাঠে-প্রান্তরে পথ ভুলানো বিভিন্ন রূপধারী) ভূত-প্রেত (বাওলা ভুত) (-এর বাস্তবতা) নেই।
৫৬০২. আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, পথ ভূলানো ভূত ও ক্ষুধার কীট (এর বাস্তবতা) নেই।
৫৬০৩. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, সংক্রামক ব্যধি, ক্ষুধা (পেট কামড়ানো কীট) ও পথ ভুলানো ভূত (-এর বাস্তবতা) নেই। (রাবী বলেন) আমি আবূ যুবায়র (রহঃ) কে তাঁর ছাত্রদের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানী وَلاَ صَفَرَ -এর ব্যাখ্যা দিতে শুনেছি। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেছেন, الصَّفَرُ হল الصَّفَرُ পেটের কীট। জাবির (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল কি রকম? তিনি বললেন, বলা হয় (ক্ষুধায় কামড়ানো) পেটের কীটসমুহ। রাবী বলেন, তিনি الْغُولَ এর ব্যাখ্যা দেন নি। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেছেন তা সে সব ভূত-প্রেত যারা নানারূপ ধরে মানুষকে পথ ভুলায় (বলে কথা প্রচলিত রয়েছে)।
পরিচ্ছেদঃ ৩৩. কুলক্ষণ, সুলক্ষণ, ফাল ও সম্ভাব্য অপয়া বিষয়বস্তুর বিবরণ
৫৬০৪. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি কোন কুলক্ষণ নেই। তবে তার মধ্যে উত্তম হল ফাল-শুভলক্ষণ। বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ‘ফাল' কি? তিনি বললেন, (যেমন) উত্তম (অর্থের) কোন শব্দ (বা বাক্য), যা তোমাদের কেউ শুনতে পায়।
৫৬০৫. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে রাবী উকায়ল (রহঃ) এর হাদীসে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তার বর্ণনায় ‘আমি শুনেছি’ বলেন নি। আর রাবী শুআয়ব (রহঃ) তাঁর হাদীসে বলেছেন, ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে আমি বলতে শুনেছি', যেরুপ মা'মার (রহঃ) বলেছেন।
৫৬০৬. হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমন ও কুলক্ষণ নেই, তবে ফাল ও শুভ লক্ষণ আমাকে আনন্দিত করে (অর্থাৎ সুন্দর শব্দ ও উত্তম কথা)।
৫৬০৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সংক্রমণ ও কুলক্ষণে (-এর বৈধতা) নেই। তবে ফাল ও সুলক্ষণ আমাকে আনন্দ দেয়। রাবী বলেন, তখন বলা হল, ফাল কী? তিনি বললেন, উত্তম কথা।
৫৬০৮. হাজ্জাজ ইবনু শাইব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ নেই। আর আমি ভাল ফাল পছন্দ করি।
৫৬০৯. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সংক্রমণ, (মৃতের পেঁচা হওয়া) ও কুলক্ষণ (বিশ্বাসের বৈধতা) নেই। আর আমি ভাল 'ফাল' পছন্দ করি।
৫৬১০. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শুভাশুভ (যদি থেকে থাকে, তবে) রয়েছে ঘর, নারী ও ঘোড়ায়।
৫৬১১. আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমণ ও অশুভ নেই; তবে (যদি থাকে) (শুভাশুভ) রয়েছে তিনটি বিষয়ে, স্ত্রী, ঘোড়া ও গৃহে।
৫৬১২. ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) এর দুই পুত্র সালিম ও হামযা (রহঃ) তাঁদের পিতা সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, অপর সনদে ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, অপর সনদে আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, অপর সনদে আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা সূত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুভাশুভ বিষয়ে রাবী মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। রাবী ইউনুস ইবনু ইয়াযীদ ব্যতিরেকে এদের কেউ ইবনু উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে ‘সংক্রমণ ও অশুভ' উল্লেখ করেননি।
৫৬১৩. আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাকাম (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ কোন কিছুতে অশুভ কিছু যদি থাকে, তবে তা হবে ঘোড়া, বাড়ি ও নারীতে।
৫৬১৪. হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) উল্লিখিত সনদে অনুরূপ হাদীস রিওযায়াত করেছেন। তবে তিনি حَقٌّ শব্দটি বলেন নি।
৫৬১৫. আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... হামযা ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে তাঁর পিতা থেকে রিওয়াত করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শুভাশুভ যদি কোন কিছুতে থেকে থাকে, তা হলে রয়েছে ঘোড়া, বাসস্থান ও নারীর মধ্যে।
৫৬১৬. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি থাকে তা হলে নারী, ঘোড়া ও বাসস্থানে অর্থাৎ শুভাশুভ।
৫৬১৭. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৬১৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন কিছুতে (শুভাশুভ) থেকে থাকে, তা হলে আবাস (বাড়িঘর), খাদিম ও ঘোড়ায়।
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. জ্যোতিষী কর্ম ও জ্যোতিষীর কাছে গমনাগমন হারাম
৫৬১৯. আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... মুআবিয়া ইবনু হাকাম সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কতক ব্যাপার আমরা জাহিলী যুগে করতাম, আমরা জ্যোতিষদের কাছে যেতাম। তিনি বললেন, আর জ্যোতিষের কাছে যেয়ো না। আমি বললাম, আমরা (বিভিন্ন উপায়ে) শুভাশুভ গ্রহণ করতাম। তিনি বললেন, তা এমন একটি ব্যাপার, যা তোমাদের কেউ কেউ তার অন্তরে অনুভব করে, তা যেন তোমাদের (কাজকর্ম থেকে) বিরত না রাখে।
৫৬২০. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে ইউনুস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে রাবী মালিক (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে 'অশুভ' (বিষয়টি) উল্লেখ করেছেন। তাতে ‘জ্যোতিষীর’ কথা উল্লেখ নেই।
৫৬২১. মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... মুআবিয়া ইবনু হাকাম সুলামী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, মুআবিয়া (রাঃ) থেকে আবূ সালামা (রহঃ) সুত্রে যুহরী (রহঃ) এর অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ) অধিক বলেছেন, আমি (মুআবিয়া) বললাম, আমাদের মাঝে কতক লোক আছে, যারা রেখা অঙ্কন (দ্বারা ভাগ্য নির্ণয়) করে থাকে। তিনি বললেন, নাবীগণের মাঝে একজন নাবী রেখা অঙ্কন (দ্বারা ভাগ্য নির্ণয়) করতেন। অতএব যার রেখা তাঁর (রেখার অনুরূপ) হবে, তা সেরূপই (সত্যই)।
৫৬২২. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! জ্যোতিষ কোন বিষয়ে আমাদের (কোন) কথা বলত, পরে তা আমরা বাস্তবে প্রত্যক্ষ করতাম। তিনি বললেন, সেটি একটি বাস্তব সত্য কথা, যা কোন জ্বীন ছিনতাই করে এনে তা তার দোসর ঠাকুরের কানে ঢুকিয়ে দিত, আর সে তার সাথে একশটি অবাস্তব মিথ্যা বাড়িয়ে দিত।
৫৬২৩. সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... উরওয়া (রহঃ) বলতেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, একদল লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে জ্যোতিষদের বিষয় জিজ্ঞাসা করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের বললেন, ওরা (বাস্তব) কিছুর উপরে (প্রতিষ্ঠিত) নয়। তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারা অনেক সময় কোন বিষয় (আগাম) কথা বলে, যা বাস্তব হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঐ (একটি) কথা বাস্তব সত্যের অন্তর্ভুক্ত, যা জ্বীন্নরা চুরি করে আনে এবং মুরগীর মত কুট কুট করে তা তার দোসরের কানে ঢেলে দেয়। পরে তারা তার সাথে একশটিরও অধিক মিথ্যা মিশিয়ে নেয়।
৫৬২৪. আবূ তাহির (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে যুহরী (রহঃ) থেকে মা'কিল (রহঃ) এর অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৬২৫. হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের মাঝে আনসারদের এক ব্যক্তি আমাকে (হাদীস) অবহিত করেছেন যে, তাঁরা এক রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একটি তারকা নিক্ষিপ্ত হল, এবং তা জ্বলে উঠল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, এ ধরনের (তারকা) নিক্ষিপ্ত হলে জাহেলী যুগে তোমরা কি বলতে? তারা বলল, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই সমধিক অবগত। আমরা বলতাম, আজ রাতে কোন মহান ব্যক্তির জন্ম হল (এবং কোন মহান ব্যক্তি মারা গেলেন)।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে জেনে রাখ যে, তা কারো মৃত্যু কিংবা কারো জন্মের কারণে নিক্ষিপ্ত হয় না; বরকতময় ও মহান নামের অধিকারী আমাদের রব যখন কোন বিষয়ের ফায়সালা দেন, তখন আরশ বহনকারী ফিরিশতারা তাসবীহ পাঠ করে। তারপর তাসবীহ পাঠ করে সে অহসমানের ফিরিশতারা, যারা তাদের নিকটবর্তী; অবশেষে তাসবীহ পাঠ এ নিকটবর্তী (দুনিয়ার) আসমানের বাসিন্দাদের পর্যন্ত পৌছে। তারপর আরশ বহনকারী (ফিরিশতা)-দের নিকটবর্তী যারা তারা আরশ বহনকারীদের বলে, তোমাদের প্রতিপালক কি ইরশাদ করলেন? তখন তিনি তাদের যা বলেছেন, তারা সে খবর সরবরাহ করে।
(রাবী বলেন) বললেন, পরে আসমানসমূহের বাসিন্দারা একে অপরকে খবর আদান প্রদান করে। অবশেষে এই নিকটবর্তী আসমানে খবর পৌছে। তখন জ্বীনেরা অতর্কিতে (গোপন সংবাদটি) শুনে নেয় এবং তাদের দোসর জ্যোতিষীদের কাছে পৌছিয়ে দেয়, আর তার সঙ্গে বাড়িয়ে দেয়। ফলে যা তারা যথাযথভাবে নিয়ে আসতে পারে, তাই ঠিক হয়; কিন্তু তারা তাতে সংমিশ্রিত ও সংযোজিত করে (যা সঠিক হয় না)।
৫৬২৬. যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির, হারামালা ও সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। তবে ইউনুস (রহঃ) অবহিত করেছেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনসার সাহাবীগণের কয়েক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন। আর আওয়াঈ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তবে তাতে তারা সংমিশ্রিত ও সংযোজিত করে দেয়। আর ইউনূস (রহঃ) এর হাদীসে রয়েছে, এতে তারা বৃদ্ধি ও অতিরঞ্জিত করে। ইউনুস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে অধিক বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ অবশেষে যখন তাদের অন্তর থেকে সন্ত্রস্ততা বিদূরীত করে দেয়া হয়, তখন তারা বলে, তোমাদের প্রতিপালক কি বললেন? তারা বলে, যথার্থই বলেছেন। আর মাকিল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আওযাঈ (রহঃ) যেমন বলেছেন, 'কিন্তু তারা তাতে সংমিশ্রিত করে ও সংযোজিত করে' রয়েছে।
৫৬২৭. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন স্ত্রী সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আররাফ (গণকের) কাছে গেল এবং তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল, চল্লিশ রাত তার কোন সালাত কবুল করা হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. কুষ্ঠ প্রভৃতি রোগাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা
৫৬২৮. ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... আমর ইবনু শারীদ (রহঃ) সুত্রে তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাকীফ গোত্রীয় প্রতিনিধি দলের মাঝে একজন কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে (সংবাদ) পাঠালেন যে, আমরা তোমাকে বায়আত করে নিয়েছি। তুমি ফিরে যাও।
No comments: