Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ পোষাক-পরিচ্ছদ ১ (৫৩৬৭-৫৪২৬)



হাদিস ৫৩৬৭

ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সে ব্যাক্তির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, যে অহংকাঁরের সাথে তার (পরিধেয়) পোশাক টেনে চলে।

হাদিস ৫৩৬৮

আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) সালিম তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি অহংকারের সাথে নিজের পোশাক ঝূলিয়ে চলবে, আল্লাহ তার প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দিবেন না কিয়ামতের দিন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার লুঙ্গির এবং পাশ ঝুলে থাকে যদি আমি তাতে গিরা না দেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও যারা অহংকার করে এরুপ করে।

হাদিস ৫৩৬৯

মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ছিলাম, এমন সময় সূর্যগ্রহন আরম্ভ হয়। তখন তিনি ব্যস্ত হয়ে দাড়ালেন এবং কাপড় টেনে টেনে মসজিদে নিয়ে পৌছলেন। লোকজন জমায়েত হল। তিনি দু রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তখন সূর্যউজ্জল হয়ে গেল। এরপর আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর মধ্যে দুটি নিদর্শন, যখন তোমরা এতে কোন কিছু হতে দেখ, তখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং আল্লাহর কাছে দু’আ করতে থাকবে, যতক্ষন না তা উজ্জল হয়ে যায়।

হাদিস ৫৩৭০

ইসহাক (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিলাল (রাঃ) কে দেখলাম, তিনি একটি বর্শা নিয়ে এসেছেন এবং তা মাটিতে পুতে দিলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম, একটি জূব্বার দুটি চাঁদরের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে বের হয়ে আসলেন এবং বর্শার দিকে ফিরে দু- রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর মানুষ ও পশুকে দেখলাম, তারা তার সামনে দিয়ে এবং বর্শার পিছন দিয়ে গমন করছে।

হাদিস ৫৩৭১

আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইযারের যে পরিমান টাখনুর নীচে যাবে, সে পরিমান জাহান্নামে যাবে।

হাদিস ৫৩৭২

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন সে ব্যাক্তির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দিবেন না, যে ব্যাক্তি অহংকারবশে ইযার ঝূলিয়ে পরে।

হাদিস ৫৩৭৩

আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অথবা আবূল কাসিম বলেছেনঃ এক ব্যাক্তি চিত্তাকর্ষক জোড়া কাপড় পরে চুল আচড়াতে আচড়াতে পথ চলছিল; হঠাৎ আল্লাহ তাকে মাটির নীচে ধ্বসিয়ে দেন। কিয়ামত পর্যন্ত সে এভাবে ধ্বসে যেতে থাকবে।

হাদিস ৫৩৭৪

সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: এক ব্যাক্তি তার লুঙ্গি পায়ের গৌড়ালীর নীচে ঝূলিয়ে পথ চলছিল। এমন সময় তাকে মাটির নীচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। কিয়ামত পর্যন্ত সে মাটির নীচে ধ্বসে যেতে থাকবে। ইউনুস, যুহরী থেকে এ হাদীস অনুরুপ বর্ণনা করেছেন কিন্তু শুআয়ব একে মারফূ হিসাবে যুহরী থেকে বর্ণনা করেননি।

হাদিস ৫৩৭৫

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) জাবীর ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমরের সাথে তার ঘরের দরজায় ছিলাম, তখন তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অনুরুপ বলতে শুনেছেন।

হাদিস ৫৩৭৬

মাতার ইবনু ফাযল (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মাহারিব ইবনু দিসারের সাথে অশ্ব পৃষ্ঠে থাকা অবস্থায় সাক্ষাত করলাম। তখন তিনি বিচারালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন, আমি তাকে এ হাদীসটি সাম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি অহংকার বশে কাপড় ঝূলিয়ে পরবে, তার দিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিনে তাকাবেন না। আমি বললাম: আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কি ইযাবের উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেনঃ তিনি ইযার বা কামিস কোনটই নির্দিষ্ট করে বলেন নি। জাবালা ইবনু সুহায়ম, যায়েদ ইবনু আসলাম ও যায়েদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমরের সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন আর লায়স, মূসা ইবনু -উকরাও “উমর ইবনু মুহাম্মদ নাফি (রহঃ)-এর সুত্রে বর্ননা করেছেন এবং কুদামা ইবনু মূসা সালিম (রহঃ) এর সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এবং তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘জাররা সাওবা’ বর্ননা করেছেন।

হাদিস ৫৩৭৭

আবূল ইয়ামন (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ববেন, একদা রিফাআ কুরাযির স্ত্রী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো। এ সময় আমি উপবিষ্ট ছিলাম এবং আবূ বকর (রাঃ) তার কাছে ছিলেন। স্ত্রীলোকটি বললঃ হে আল্লার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি রিফাআর অধীনে (বিবাহ বন্ধনে) ছিলাম। তিনি আমাকে তালাক দেন এবং তালাক চুড়ান্তভাবে (তিন তালাক) দেন এরপর আমি আব্দুর রহমান ইবনু যুবায়েরকে বিবাহ করি কিন্তু আল্লাহর কসম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তার সাথে কাপড়ের ঝালরের ন্যায় ছাড়া কিছুই নেই। এ কথা বলার সময় স্ত্রীলোকটি তার চাঁদরের আচল ধরে দেখায়। খালিদ ইবনু সাইদ যাকে (ভিতরে যাওয়ার) অনুমতি দেওয়া হয় নাই, দরজার কাছে থেকে স্ত্রীলোকটির কথা শুনেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন খালিদ বললঃ হে আবূ বকুর! এ মহিলাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে জোরে জোরে সে কথা বলছে, তা শুনে কেন আপনি তাকে বাঁধা দিচ্ছেন না? আল্লাহর কসম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীলোকটিকে বললেনঃ মনে হয় তুমি রিফা-আর কাছে ফিরে যেতে যাও। তা হয় না, সে তোমার মধূ আস্বাদন করবে এবং তুমি তার মধূ আস্বাদন করবে। পরবর্তী সময় থেকে এটা বিধানে পরিনত হয়ে যায়।

হাদিস ৫৩৭৮

আবদান (রহঃ) হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আলী (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাঁদর আনতে বললেন। তিনি তা পরিধান করেন, এরপর হেঁটে চললেন। আমি ও যায়েদ ইবনু হারিসা তার পিছনে চললাম। শেষে তিনি একটি ঘরের কাছে আসেন, যে ঘরে হামযা (রাঃ) ছিলেন। তিনি অনুমতি চাইলেন তারা তাদের অনুমতি দিলেন।

হাদিস ৫৩৭৯

কুতায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ মুহরিম ব্যাক্তি কি কাপড় পরিধান করবে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মুহরিম জামা, পায়জামা, টুপি এবং মোজা পরবে না। তবে যদি সে জুতা সংগ্রহ করতে না পারে তা হবে টাখনুর নীচে পর্যন্ত (মোজা) পরতে পারবে।

হাদিস ৫৩৮০

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে কবরে রাখার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে এলেন। তার লাশ কবর থেকে উঠাবার নির্দেশ দিলেন। তখন লাশ কবর থেকে উঠান হল এবং তার দু- হাটুর উপর রাখা হলো। তিনি তার উপর থুথু দিলেন এবং তাকে নিজের জামা পরিয়ে দিলেন। আল্লাহই ভাল জানেন।

হাদিস ৫৩৮১

সাদাকা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা যায়, তখন তার ছেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসে। সে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার জামাটি আমাকে দিন। আমি এ দিয়ে তাকে করর দিব। আর তার জানালার সালাত (নামায/নামাজ) আপনি আদায় করবেন এবং তার জন্য ইস্তিগফার করবেন। তিনি নিজের জামাটি তাকে দিয়ে দেন এবং বলেন যে, তুমি (কাফন পরানোর কাজ) সেরে ফেলে আমাকে সংবাদ দিবে। তারপর তিনি (কাফন পরানোর কাজ সেরে তাকে সংবাদ দিলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে এলেন। উমর (রাঃ) তাকে টেনে ধরে বললেনঃ আল্লাহ কি আপনাকে মুনাফিকদের (জানাযার) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেননি? তিনি এ আয়াতটি পড়লেনঃ তুমি ওদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর একই কথা। তুমি সত্তরবার ওদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ ওদের কখনই ক্ষমা করবেন না তখন নাযিল হয়ঃ ওদের মধ্যে কারও মৃত্যু হলে তুমি কখনও ওদের জন্য জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। এরপর থেকে তাদের জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা বর্জন করেন।

হাদিস ৫৩৮২

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কৃপণ ও দানশীল ব্যাক্তিকে এমন দু ব্যাক্তির সাথে তুলনা করেন যাদের পরিধানে লোহার দুটি বর্ম আছে। তাদের দুটি ছাতই বুক ও ঘাড় পর্যন্ত পৌছে আছে। দানশীল ব্যাক্তি যখন দান করে তখন তার বর্মটি এমন ভাবে প্রশস্ত হয় যে তার পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে এবং (শরীরের চেয়ে লম্বা হওয়ার জন্য চলার সময়) পদ চিহৃ মুছে ফেলে। আর কৃপণ লোকটি যখন দান করতে ইচ্ছে করে তখন তার বর্মটি শক্ত হয়ে যায় ও এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলে থাকে এণং প্রতিটি অংশ স্ব স্ব স্থানে থেকে যায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি দেখলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আঙ্গুল এভাবে বুকের দিক দিয়ে খোলা অংশের মধ্যে রেখে বলতে দেখেছি। তুমি যদি তা দেখতে তাহলে দেখতে) যে তিনি তা প্রশস্ত করতে চাইলেন কিন্ত তা প্রশস্ত হল না। ইবনু তাউস তার পিতা থেকে এবং আবূ যিনাদ, আরাজ থেকে অনুরুপ ভাবে বর্ণনা করেন। আর জাফর আরাজ-এর সূত্রে ‘যুতায’ বর্ণনা করেছেন। হানযালা (রহঃ) বলেনঃ আমি তাউসকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে ‘জুব্বাতাস’ বলতে শুনেছি।

হাদিস ৫৩৮৩

কায়স ইবনু হাফস (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন (তাকুক যুদ্ধের সময়) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যান এবং তারপর ফিরে আসেন। আমি তার নিকট পানি নিয়ে পৌছি। তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন। তখন তার পরিধানে শাম দেশীয় (সিরিয়ার) জোব্বা ছিল। তিনি কুলী করেন, নাক পরিষ্কার করেন এবং তার মুখমন্ডল ধৌত করেন। এরপর তিনি আস্তিন থেকে দু হাত বের করতে থাকেন, কিন্তু আস্তিন দুটি ছিল সংকীর্ণ, তাই তিনি হাত দু-খানি জামার নীচ দিয়ে বের করে উভয় হাত ধৌত করেন। এরপর মাথা মাসেহ করেন এবং মোজার উপর মাসেহ করেন।

হাদিস ৫৩৮৪

আবূ নূঁআইম (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি (তাবুক) সফরে এক রাত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার সাথে পানি আছে কি? আমি বললাম: হ্যা। তখন তিনি বাহন থেকে নামলেন এবং হেঁটে যেতে লাগলেন। তিনি এতদূর গেলেন যে, রাতের আধারে আমার থেকে অদৃশ্য হবে পড়লেন। তারপর তিনি ফিরে এলেন। আমি পাত্র থেকে তার (উযূ (ওজু/অজু/অযু)র) পানি ঢালতে লাগলাম। তিনি মুখমণ্ডল ও দু-হাত ধৌত করলেন। তার পরিধানে ছিল পশমের জামা। তিনি তা থেকে হাত বের করতে পারলেন না- তাই জামার নীচ দিয়ে বের করলেন এবং দু-হাত ধৌত করলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন। তারপর আমি তাঁর মোজা দুটি খুলতে ইচ্ছা করলাম। তিনি বললেনঃ ছেড়ে দাও। কেননা, আমি পবিত্র অবস্হায় তা পরিধান করেছি। তারপর তিনি মোজাদ্বয়ের উপর মাসেহ করেন।

হাদিস ৫৩৮৫

কুতায়বা ইবনু সা-ঈদ (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি কাবা বণ্টন করেন, কিন্তু মাখরামাকে কিছুই দিলেন না। মাখরামা বললো: হে আমার প্রিয় পুত্র চল আমার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে। আমি তার সঙ্গে গেলাম। তিনি বললেনঃ ভিতরে যাও এবং আমার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আবেদন জানাও। মিসওয়ার বলেনঃ আমি তার (পিতার) জন্য আবেদন করলে তিনি মাখরামার উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসেন। তখন তার পরিধানে রেশমী কাবা ছিল। তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এটি আমি গোপন করে রেখেছিলাম। মিসওয়ার বলেন এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন মাখরামা এবার রাযী (খুশী) আছে।

হাদিস ৫৩৮৬

কুতায়বা ইবনু সা-ঈদ (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একটি রেশমী কাবা হাদিয়া দেওয়া হয়। তিনি তা পরিধান করেন এবং তা পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তিনি তা খুব জোরে টেনে খুলে ফেললেন, যেন এটি তিনি অপছন্দ করছেন। এরপর বললেন মুত্তাকীদের জন্য এটা শোভনীয় নয়। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ, লায়স থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। অন্যেরা বলেছেন ফাররুজ হারীর” হলো রেশমী কাপড়। 

 হাদিস ৫৩৮৭

ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, এক ব্যাক্তি বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! মুহরিম লোক কি কি পোশাক পরবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা (ইহরাম অবস্থায়) জামা, পাগড়ী! পা-জামা। টুপি ও মোজা পরবে না। তবে যে ব্যাক্তির জুতা নেই, সে কেবল মোজা পরতে পারবে কিউ উভয় মোজা টাখনুর নীচ থেকে কেটে ফেলবে। আর যাঁফরান ও ওয়ারস রঙ যাতে লেগেছে, এমন কাপড় পরবে না।

হাদিস ৫৩৮৮

আবূ নুআয়ম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোকের ইযার (লুঙ্গি) নেই, সে যেন পায়জামা; আর যার জুতা নেই। সে যেন মোজা পরে।

হাদিস ৫৩৮৯

মূসা ইবনু ইসমাঁঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা যখন ইহরাম অবস্থায় থাকি, তখন কি পোশাক পরার জন্য আমাদের নির্দেশ দেন? তিনি বললেনঃ (তখন তোমরা জামা, পায়জামা, পাগড়ী টুপি ও মোজা পরবে না। তবে যার জুতা নেই সে টাখনুর নীচ পর্যন্ত মোজা পরবে। আর তোমরা সে ধররের কোন কাপড়ই পরবে না যাতে যাফরান বা ওয়ারস রং লাগান হয়েছে।

হাদিস ৫৩৯০

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সালিমের পিতা (আবদুল্লাহ ইবনু উমর) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহরিম ব্যাক্তি জামা পাগড়ী, পায়জামা ও টুপি পরতে পরবে না। যাফরান ও ওয়ারস দ্বারা রং করা কাপড়ও নয় এবং মোজাও নয়। তবে সে ব্যাক্তির জন্য (এ নিষেধ) নয়, যার জুতা নেই। যদি সে জুতা না পায় তাহলে উভয় মোজার টাখনুর নীচে থেকে কেটে নেবে।

হাদিস ৫৩৯১

ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক মুসলিম হাবশায় হিজরত করেন। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) হিজরত করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহন করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি একটু অপেক্ষা কর; কেননা, মনে হয় আমাকেও (হিজরতের) আদেশ দেওয়া হবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ আমার পিতা আপনাঁর উপর কুরবান হোক আপনিও কি এ আশা পোষন করেন? তিনি বললেনঃ হ্যা। আবূ বকর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সং লাভের আশায় নিজেকে সংবরন করে রাখেন এবং তার মালিকানাধীন দুটি সাওয়ারীকে চার মাস যাবত সামূর বৃক্ষের পাতা ভাক্ষন করেন। উরওয়া (রহঃ) বর্ণনা করেন- আয়িশা বলেছেন যে! একদিন ঠিক দুপরের সময় আমরা আমাদের ঘরে আসে। আমি এ সময় এক ব্যাক্তি আবূ বকর (রাঃ) কে বলল, এই যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমণ্ডল ঢেকে এগিয়ে আসছেন। এমন সময় তিনি এসেছেন! সে সময় তিনি সাধারণত আমাদের কাছে আসেন না। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ আমার মা-বাপ তার উপর কুরবান হোক, আল্লাহর কসম! এমন সময় তিনি একটি বড় কাজ নিয়েই এসে থাকবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পড়লেন। তিনি অনুমতি চাইলেন তাকে অনুমতি দেওয়া হলো। তিনি প্রবেশ করলেন। প্রবেশের সময় আবূ বকর (রাঃ) কে বললেনঃ তোমার কাছে যারা আছে তাদের সরিয়ে দাও। তিনি বললেনঃ আমার পিতা আপনার উপর কুরবান হোক ইয়া রাসুলুল্লাহ! এরা তো আপনারই পরিবারের লোক। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকে হিজরতের অনূমিত দেওয়া হয়েছে। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ তাহলে আমি কি আপনার সঙ্গী হবো? ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক। তিনি বললেনঃ হ্যা। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমার এদূটি সাওয়ারীর একটি গ্রহণ করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মুল্যের বিনিময়ে (নিতে রাযী আছি) আয়িশা (রাঃ) বলেন তাঁদের উভয়ের জন্য সফরের আসবাবপত্র প্রস্তুত করলাম এবং সফরকালের নাস্তা তৈরী করে একটি চামড়ার থলের মধ্যে রাখলাম। আবূ বকর (রাঃ)-এর কন্যা আসমা তার উড়নার এক অংশ ছিড়ে থলের মুখ বেঁধে দিল। এ কারণে তাকে যাতুন নিতাক (উড়না ওয়ালী) নামে ডাকা হাতা। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) -সাওর নামক পর্বত গুহায় পৌছেন। তথায় তিন রাত অতিবাহিত করেন। আবূ বকর (রাঃ)-এর পুত্র আবদুল্লাহ তাদের সঙ্গে রাত্রি যাপন করতেন। তিনি ছিলেন সুচতুর বুদ্ধিমান যুবক। তিনি তাদের কাছ থেকে রাতের শেষ ভাগে চলে আসতেন এবং ভোর বেলা কুরাইশদের সাথে মিশে যেতেন, যেন তাদের মধ্যেই তিনি রাত্রি যাপন করেছেন। তিনি কারও থেকে ষড়যস্ত্র মূলক কোন কিছু শুনলে তা মনে রাখতেন এবং রাতের আধার ছড়িয়ে পড়লে দিনের সব খবর নিয়ে তিনি তাদের দু-জনের কাছে পৌছে দিতেন। আবূ বকর (রাঃ)-এর দাস আমির ইবনু ফূহায়রা তাদের আশপাশে দুধওয়ালা বকরী চরিয়ে বেড়াতেন! রাতের এক ঘণ্টা অতিবাহিত হলে সে তাদের নিকট ছাগল নিয়ে যেত (দুধ পান করাবার জনো)। তারা দুজনে (আমি ও আবদুল্লাহ) সে গুহায়ই রাত কাটাতেন। ভোরে অন্ধকার থাকতেই আমির ইবনু ফুহায়রা ছাগল নিয়ে চলে আসতেন। ঐ তিন রাতের প্রতি রাতেই তিনি এরুপ করতেন।

হাদিস ৫৩৯২

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন তার মাথার সেই লৌহ শিরত্রাণ ছিল।

হাদিস ৫৩৯৩

ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে চলছিলাম। এ সময় তার পরিধানে চওড়া পাড় বিশিষ্ট একটি নাজরানী ডোরাদার চাঁদর ছিল। একজন বেদুইন তার কাছে এলো। সে তার চাঁদর ধরে খুব জোরে টান দিল। এমন কি আমি দেখতে পেলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাঁধে চাঁদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। তারপর সে বললঃ হে মুহাম্মাদ আপনার নিকট আমার যে সম্পদ আছে। তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বলুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে ফিরে তাকিয়ে হাসলেন এবং তাকে কিছু দান করার নির্দেশ দিলেন।

হাদিস ৫৩৯৪

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন স্ত্রী লোক একটি বুরদা নিয়ে এলো। সাহল (রাঃ) বললেনঃ তোমরা জানো বুরদা কী? একজন উত্তর দিল হা, বুরদা হলো এমন চাঁদর যার পাড় কারুকার্যময়। স্ত্রী লোকটি বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি এটি আমার নিজের হাতে বুনেছি আপনাকে পরিধান করাবার জন্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহন করলেন। তখন তার এর প্রয়োজনও ছিল। এরপর তিনি আমাদের কাছে বেরিয়ে আসলেন: তখন সে চাঁদরটি ইযার হিসেবে তাঁর পরিধানে ছিল। দলের এক ব্যাক্তি হাত দিয়ে চাঁদরটি স্পর্শ করল এবং বলল: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এটি পরতে দিন। তিনি বললেনঃ হ্যা। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে বললেনঃ যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছে ছিলো, তারপরে উঠে গেলেন এবং চাঁদরটি ভাজ করে এ ব্যাক্তির কাছে পাঠিরে দিলেন। উপস্থিত লোকেরা বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ -এর কাছে এটি চেয়ে তুমি ভাল করনি। তুমি তো জানো যে, কোন প্রার্থীকে তিনি ব্যথিত করেন না। লোকটি বললোঃ আল্লাহর কসম! আমি কেবল এজন্যই চেয়েছি যে, যেদিন আমার মূত্যু হবে, সে দিন যেন এ চাঁদরটি আমার কাফন হয়। সাহল (রাঃ) বলেনঃ এটি তার কাফনই হয়েছিল।

হাদিস ৫৩৯৫

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাযারের একটি দল (বিনা হিসাবে) জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন তাদের মুখ মণ্ডল চাঁদের ন্যায় হবে। উককাশা ইবনু মিহসান তার পরিহিত রংগীন ডোরাযুক্ত চাঁদর উপরে তুলে ধরে বলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর নিকট আমার জন্য দু আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি দু আ করলেন: ইয়া আল্লাহ! একে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। তারপর আনসারদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে বলল: ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উককাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়েছে।

হাদিস ৫৩৯৬

আমর ইবনু আসিম (রহঃ) কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম: কোন জাতীয় কাপড় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বেশী প্রিয় ছিল? তিনি বললেনঃ হিবারা-ইয়ামনী চাঁদর।

হাদিস ৫৩৯৭

আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিবারা ইয়ামনী চাঁদর পরিধান করতে বেশী পছন্দ করতেন।

হাদিস ৫৩৯৮

আবূল ইয়ামান (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুরাহ যখন ইন্তেকাল করেন তখন ইয়ামনী চাঁদর দ্বারা তাঁকে ঢেকে রাখা হয়।

হাদিস ৫৩৯৯

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত তখন তিনি তার কারুকার্যময় চাঁদর দ্বারা মুখমণ্ডস ঢেকে রাখেন। যখন তার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসতো তখন তার মুখ থেকে সরিয়ে নিতেন। এমতাবস্থায় তিনি বলতেন: ইয়াহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়েছে। তাদের কর্মের কথা উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করছিলেন।

হাদিস ৫৪০০

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আয়িশা (রাঃ) একবার একথানি কম্বল ও মোটা ইযার নিয়ে আমাদের কাছে আসেন এবং তিনি বললেনঃ এ দুটি পরিহিত অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রুহ করয করা হয়।

হাদিস ৫৪০১

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাঁদর গায়ে দিয়ে সাদাত আদায় করলেন। চাঁদরটি ছিল কারুকার্য খচিত। তিনি কারুকার্যের দিকে এক দুটিতে তাকালেন, তারপর সালাম ফিরিয়ে বললেনঃ এ চাঁদরটি আবূ জাহমের কাছে নিয়ে যাও। কারণ এখনই তা আমার সালাত (নামায/নামাজ) থেকে অন্যমনস্ক করে দিয়েছে। আর আবূ জাহম ইবনু হুজায়ফার কারুকার্জ বিহীন কাপড়টি আমার জন্য নিয়ে এসো। সে হচ্ছে আদি ইবনু কাব গোত্রের লোক।

হাদিস ৫৪০২

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলামাসা’ ও ‘মুনাবাযা’ থেকে নিষেধ করেছেন এবং দু’ সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা থেকেও অর্থাৎ ফজরের (সালাত (নামায/নামাজ)-এর) পর সূর্য উপরে উঠা পর্যন্ত এবং আসরের (সালাত (নামায/নামাজ)-এর) পর সূর্যাসত্ম পর্যন্ত। আরও নিষেধ করেছেন একটি মাত্র কাপড় এমনভাবে পড়তে, যাতে লজ্জাস্থানের উপরে তার ও আকাশের মাঝখানে আর কিছুই থাকে না। আর তিনি কাপড় মুড়ি দিয় বসতে নিষেধ করেছেন।

হাদিস ৫৪০৩

ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ প্রকার কাপড় পরিধান করতে ও দু প্রকার ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। ক্রয়-বিক্রয়ে তিনি ‘মূলামাসা’ ও ‘মুনাবাযা’ থেকে নিষেধ করেছেন। মূলামাসা হল রাতে বা দিনে একজন অপর জনের কাপড় হাত দিয়ে স্পর্শ করা। এইটুকু ছাড়া তা আর উলট-পেলট করে দেখে না। আর মুনাবাযা হল-এক লোক অন্য লোকের প্রতি তার কাপড় নিক্ষেপ করা। আর দ্বিতীয় ব্যাক্তিও তার কাপড় নিক্ষেপ করা, এবং এর দ্বারাই তাদের ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়া, দেখা ও পারস্পরিক সম্মতি ব্যতিরেকেই। আর দু-প্রকার পোশাক পরিধানের (এর এক প্রকার) হচ্ছে ইসতিমালুস-সাম্মা। সাম্মা হল এক কাঁধের উপর কাপড় এমনভাবে রাখা যাতে অন্য কাঁধ খালি থাকে, কোন কাপড় থাকে না। পোশাক পরার অন্য প্রকার হচ্ছে বসা অবস্থায় নিজের কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঘিরে রাখা। যাতে লজ্জাস্থানের উপর কাপড়ের কোন অংশ না থাকে।

হাদিস ৫৪০৪

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধরনের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। একটি কাপড়ে পুরুষের এমনভাবে পেঁচিয়ে থাকা যে, তার লজ্জাস্থানের উপর সে কাপড়ের কোন অংশই থাকে না। আর একটি কাপড় এমনভাবে পেঁচিয়ে পরা যে, শরীরের এক অংশ খোলা থাকে। আর -মুলামাসা- ও মুনাবাসা থেকেও (তিনি নিষেধ করেছেন)।

হাদিস ৫৪০৫

মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেনঃ শরীরের এক পাশ খোলা রেখে অন্য পাশ ঢেকে পরতে। আর এক কাপড়ে পূরুষকে এমনভাবে ঢেকে বসতে, যাতে তার লজ্জাস্থানের উপর ঐ কাপড়ের কোন অংশ না থাকে।

হাদিস ৫৪০৬

আবূ নুআইম (রহঃ) উম্মে খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু কাপড় নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে কিছু কালো নকশীদার ছোট চাঁদর ছিল। তিনি বললেনঃ আমরা এগুলো পরবো, তোমাদের মত কি? উপস্থিত সবাই নীরব থাকলো। তারপর তিনি বললেনঃ উম্মে খালিদকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাকে বহন করে আনা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাতে একটি চাঁদর নিলেন এবং তাকে পরিয়ে দিলেন। এরপর বললেনঃ: (এটি) তুমি পুরান কর ও ছিড়ে ফেল (অথাৎ তুমি দীর্ঘজীবী হও)। ঐ চাঁদয়ে সবুজ অথবা হলুদ রঙের নকশী ছিল। তিনি বললেনঃ হে খালেদের মা! এ খানি কত সুন্দর! তিনি হাবশী ভাষায় বললেনঃ সানাহ অর্থাৎ সুন্দর। 

 হাদিস ৫৪০৭

মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ উম্মে সুলায়ম (রাঃ) যখন একটি সন্তান প্রসব করলেন তখন আমাকে জানালেন , হে আনাস! শিশুটিকে দেখ, যেন সে কিছু না খায়, যতক্ষণ না তুমি একে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট নিয়ে যাও, তিনি এর তাহনীক করবেন। আমি তাকে নিয়ে গেলাম। দেখলাম, তিনি একটা বাগানের মধ্যে আছেন, আর তার পরিধানে হুবায়সিয়া নামক চাঁদর রয়েছে। তিনি যে উটে করে মক্কা বিজয়ের দিনে অভিযানে গিয়েছিলেন তার পিঠে ছিলেন।

হাদিস ৫৪০৮

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইকরামা (রাঃ) থেকে বর্নিত। রিফাআ তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। পরে আবদূর রহমান কুরাবী তাকে বিবাহ করে। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তার গায়ে একটি সবুজ রঙের উড়না ছিল। সে আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করলেন এবং (স্বামীর প্রহারের দরুন) নিজের গায়ের চামড়ার সবুজ বর্ণ দেখালো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এলেন, আর লোকেরা একে অন্যের সহযোগিতা করে থাকে, তখন আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ কোন মুমিন মহিলাকে এমনভাবে প্রহার করতে আমি কখনও দেখিনি। মহিলাটির চামড়া তার কাপড়ের চেয়ে অধিক সবুজ হয়ে গেছে। বর্ণনকারী বলেনঃ আবদূর রহমান শুনতে পেল যে, তার স্ত্রী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসেছে। সুতরাং সেও তার অন্য স্ত্রীর দুটি ছেলের সাথে করে এলো। স্ত্রীলোটি বললঃ আল্লাহর কসম! তার উপর আমার এ ছাড়া আর কোন অভিযোগ নেই সে, তার কাছে যা আছে, তা আমাকে এ জিনিসের চেয়ে বেশী তৃপ্তি দেয় না। এ বলে তার কাপড়ের আচল ধরে দেখান। আবদূর রহমান বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে মিথ্যা কাছে, আমি তাকে ধোলাই করি চামড়া ধোলাই করার ন্যায়। (অর্থাৎ পূর্ণ শক্তির সাথে দীর্ঘস্থায়ী সংম করি)। কি! সে অবাধ্য স্ত্রী, রিফা-আর কাছে ফিরে যেতে চায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ব্যাপার যদি তাই হল তাহলে রিফাআ তোমার জন্য হারাম হবে না, অথবা তুমি তার যোগ্য হতে পার না, যতক্ষন না আব্দুর রহমান তোমার মূল্য আস্বাদন করবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুর রহমানের সাথে তার পূত্রদ্বয়কে দেখে বললেনঃ এরা কি তোমার পূত্র? সে বললঃ হ্যা। তিনি বললেনঃ এই আসল ব্যপার, যে জন্য স্ত্রী লোকটি এরুপ করছে। আল্লাহর কসম কাকের সাথে কাকের যেমন সা’দৃশ থাকে, তার চেয়েও অধিক মিল রয়েছে ওদের সাথে এর (অর্থাৎ আব্দুর রহমানের সাথে তার পূত্রদের)।

হাদিস ৫৪০৯

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উহুদের দিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডানে ও বামে দুজন পূরুষ লোককে দেখতে পেলাম। তাদের পরিধানে সাদা পোশাক ছিল। তাদের এর আগেও দেখিনি আর পরেও দেখিনি।

হাদিস ৫৪১০

আবূ মামার (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসলাম। তার পরিধানে তখন সাদা পোশাক ছিল। তখন তিনি নিদ্রিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর আবার এলাম! তখন তিনি জেগে গেছেন। তিনি বললেনঃ যে কোন বান্দা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- বলবে এবং এ অবস্থার উপরে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম: সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে? তিনি বললেনঃ যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও? তিনি বললেনঃ হ্যা সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও। আমি বললাম: যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও? তিনি বললেনঃ যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আবূ যারের নাসিকা ধূলাচ্ছন্ন হলেও। আবূ যার (রাঃ) যখনই এ হাদীস বর্ণনা করতেন তখনি আবূ মামারের নাসিকা ধূলাচ্ছন্ন হলেও বাক্যটি বলতেন। আবূ আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী) বলেন এ কথা প্রযোজ্য হয় মৃত্যুর সময় বা তার পূর্বে যখন সে তাওবা করে ও লজ্জিত হয় এবং বলে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-, তখন তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

হাদিস ৫৪১১

আদম (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আবূ উসমান নাহদী (রাঃ) এর থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমাদের কাছে উমর (রাঃ)-এর থেকে এক পত্র আসে, এ সময় আমরা উতবা ইবনু ফারকাদের সঙ্গে অবস্থান করছিলাম। (তাতে লেখা ছিল) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশম ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন! তবে এতটুকু এবং ইশারা করলেন, বৃদ্ধা আঙ্গুলের সাথে মিলিত দু’আঙ্গুল দ্বারা (বর্ননাকারী বলেনঃ) আমরা বুঝলাম যে (বৈধতার পরিমাণ) জানিয়ে তিনি পাড় ইত্যাদি উদ্দেশ্য করেছেন।

হাদিস ৫৪১২

আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আজারবাইযানে ছিলাম। এ সময় উমর (রাঃ) আমাদের কাছে লিখে পাঠান যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশমী কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন; কিন্তু এতটুকু এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দূআঙ্গুল দ্বারা এর পরিমাণ আমাদের বলে দিয়েছেন। যুহায়র মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুল তুলে ধরে দেখিয়েছেন।

হাদিস ৫৪১৩

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে আমরা উকবার সাথে ছিলাম। উমর (রাঃ) তার কাছে লিখে পাঠান যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে আখিরাতে রেশম পরিধান করানো হবে না সে ব্যতীত অন্য কেউ দুনিয়ার রেশম পরিধান করবে না। হাসান ইবনু উমর (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) তার দু’আঙ্গুল অর্থাৎ শাহাদাত ও মধ্যমা দ্বারা ইঙ্গিত করলেন।

হাদিস ৫৪১৪

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন হুযায়ফা (রাঃ) মাদাইনে অবস্থানরত ছিলেন। তিনি পানি পান করতে চাইলেন। এক গ্রাম্য লোক একটি রুপার পাত্রে কিছু পানি নিয়ে আসলো। হুযায়ফা (রাঃ) তা ছুড়ে মারলেন এবং বললেনঃ আমি ছুঁড়ে মারতাম না; কিন্তু আমি তাকে নিষেধ করেছি, সে নিবৃত হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোনা, রুপা, পাতলা ও মোটা রেশম তাদের জন্য (কাফিরদের জন্য) দুনিয়ায় এবং তোমাদের (মুসলিমদের) জন্য পরকালে।

হাদিস ৫৪১৫

আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। শুবা (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম: এ কথা কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত? তিনি জোর দিয়ে বললেনঃ হ্যা! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। যে ব্যাক্তি দুনিয়ায় রেশমী কাপড় পরিধান করবে, সে আখিরাতে তা কখনও পরিধান করতে পারবে না।

হাদিস ৫৪১৬

আলী ইবনু জাদ (রহঃ) উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দুনিয়ায় রেশমী কাপড় পরবে, পরকালে সে তা পরবে না।

হাদিস ৫৪১৭

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইমরান ইবনু হিত্তান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট রেশম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকটে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাস কর। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন। ইবনু উমরের নিকট জিজ্ঞেস কর। ইবনু উমরকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ আবূ হাফস অর্থাৎ উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনীয়ায় রেশমী কাপড় সে ব্যাক্তই পরবে, যার আখিরাতে কোন অংশ নেই। আমি বললামঃ তিনি সত্য বলেছেন। আবূ হাফস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর উপর মিথ্যা আরোপ করেননি। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রাঃ) ইমরানের সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৫৪১৮

উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য একখানা রেশমী কাপড় হাদিয়া পাঠানো হয়। আমরা তা স্পর্শ করলাম এবং বিস্ময় প্রকাশ করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এতে বিস্ময় প্রকাশ করছো? আমরা বললামঃ হা। তিনি বললেনঃ জান্নাতে স্বাদ ইবনু মুআযের রুমাল এর চাইতে উত্তম হবে।

হাদিস ৫৪১৯

আলী (রহঃ) হুয়ায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সোনা ও রুপার পাত্রে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি মোটা ও মিহিন রেশমী কাপড় পরিধান করতে ও তাতে বসতে বারণ করেছেন।

হাদিস ৫৪২০

মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) বারা- ইবনু অযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের লাল রঙের মীছারা ও কাসসী পরতে নিষেধ করেছেন।

হাদিস ৫৪২১

মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়ের ও আবদুর রহমান (রাঃ) কে তাদের চর্মরোগের কারণে রেশমী কাপড় পরার অনুমতি দিয়েছিলেন।

হাদিস ৫৪২২

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি রেশমী হুল্লা পরতে দেন। আমি তা পরে বের হই। কিন্তু তাঁর (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) চেহারায় অসন্তোষের ভাব লক্ষ্য করি। সূতরাং আমি তা ফেঁড়ে আমার পরিবারের মহিলাদের মধ্যে বণ্টন করে দই।

হাদিস ৫৪২৩

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উমর (রাঃ) একটি রেশমী হুল্লা বিক্রী হতে দেখে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি যদি এটি খরীদ করে নিতেন, তা হলে যখন কোন প্রতিনিধি দল আপনার কাছে আসে তখন এবং জুমূআর দিনে পরিধান করতে পারতেন। তিনি বললেনঃ এটা সে ব্যাক্তই পরতে পারে যার আখিরাতে কোন অংশ নেই। পরবর্তী সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর (রাঃ) এর নিকট ডোরাকাটা রেশমী হুব্বা পাঠান। তিনি কেবল তাকেই পরতে দেন। উমর (রাঃ) বললেন আপনি এখনি আমাকে পরতে দিয়েছেন, অথচ এ সম্পর্কে যা বলার তা আমি আপনাকে বলতে শুনেছি। তিনি বললেন আমি তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে তুমি এটি বিক্রি করে দিবে অথবা কাউকে পরতে দিবে।

হাদিস ৫৪২৪

আবূল ইয়ামন (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা উম্মে কুলসুমের পরিধানে হালকা নকশা করা রেশমী চাঁদর দেখেছেন।

হাদিস ৫৪২৫

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি এক বছর যাবত অপেক্ষায় ছিলাম যে, উমর (রাঃ)-এর কাছে সে দুটি মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবো যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর বিরুদ্ধে জোট বেঁধে ছিলো। কিন্তু আমি তাকে খুব ভয় করে চলতাম। একদিন তিনি কোন এক স্থানে নামলেন এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজনে) আরাক গাছের কাছে গেলেন। যখন তিনি বেরিয়ে এলেন, আমি তাকে (সে সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ (তারা হলেন) আয়িশা (রাঃ) হাফস (রাঃ)। এরপর তিনি বললেনঃ জাহিলী যুগে আমরা নারীদের কোন কিছু বলে গন্যই করতাম না। যখন ইসলাম আবির্ভূত হলো এবং (কুরআনে) আল্লাহ তাদের (মর্যাদার কথা) উল্লেখ করলেন। তাতে আমরা দেখলাম যে, আমাদের উপর তাদের হক আছে এবং এতে আমাদের হস্তক্ষেপ করা-চলবে না। একদা আমার স্ত্রী ও আমার মধ্যে কিছু কথাবার্তা হাছিল। সে আমার উপর রুঢ় ভাষা ব্যবহার করলো। আমি তাকে বললামঃ তুমি তো সে স্থানেই। স্ত্রী বললেনঃ তুমি আমাকে এরুপ বলছ, অথচ তোমার কন্যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দিচ্ছে। এরপর আমি হাফসার কাছে এলাম এবং বললাম আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের নাফরমানী করা থেকে আমি তোমাকে সতর্ক করে দিচ্ছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দেওয়ায় আমি হাফসার কাছেই প্রথমে আসি। এরপর আমি উম্মে সালামাঁ (রাঃ)-এর কাছে এলাম এবং তাকেও অনুরূপ বললাম। তিনি বললেনঃ তোমার প্রতি আমার বিস্ময় হে উমর। তুমি আমার সকস ব্যাপারেই দখল দিছে, কিছুই বাকী রাখনি, এমন কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সহধর্মিনাগণের ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করছ। এ কথা বলে তিনি (আমাকে) প্রত্যাখ্যান করলেন। এক লোক ছিলেন আনসারী। তিনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মজলিস থেকে দুরে থাকতেন এবং আমি উপস্থিত থাকতাম, যা কিছু হতো সে সব আমি তাকে গিয়ে জানোাতাম। আর আমি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মজসিস থেকে অনুপস্থিত থাকতাম, আর তখন তিনি উপস্থিৎ থাকতেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এখানে সা কিছু ঘটতো তা এসে আমাকে জানাতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চারপাশে যারা (রাজা-বাদশা) ছিল তাদের উপর রাসুলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্টিত হয়েছিল। কেবল বাকী ছিল শামের (সিরিয়ার) গাসসান শাসক। তার আক্রমণের আমরা আশংকা করতাম। যধি আনসারী ব্যাক্তিটি যখন বললোঃ এক বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে। আমি তাকে বললামঃ কি সে ঘটনা! গাসসানী কি এসে পড়েছে? তিনি বললেনঃ এর চাইতেও ভয়াবহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সকল সহধর্মিনাকে তালাক দিয়েছেন। আমি সেখানে গেলাম। দেখলাম সকল কক্ষ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কক্ষের চিলে কুঠুরিতে অবস্থান করছিলেন। প্রবেশ পথে অল্প বয়স্ক একজন খাদিম বসে আছে। আমি তার কাছে গেলাম এবং বললামঃ আমার জন্য অনুমতি চাও। অনুমতি পেয়ে আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। দেখলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে আছেন। যা তার পার্শ্বদেশে দাগ বসিয়ে দিয়েছে। তার মাথার নীচে চামড়ার একটি বালিশ। তার ভেতরে রয়েছে খেজুর গাছের ছাল। কয়েকটি চামড়া ঝূলানো রয়েছে এবং বিশেষ গাছের পাতা। এরপর হাফসা ও উম্মে সালামাকে আমি যা বলেছিলাম এবং উম্মে সালামা আমাকে যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সে সব আমি তাঁর কাছে ব্যক্ত করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন। তিনি উনত্রিশ রাত তথায় অবস্থান করার পর অবতরণ করেন।

হাদিস ৫৪২৬

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন। তখন তিনি বলছিলেনঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, কত যে ফিতনা এ রাতে নাযিল হয়েছে। আরও কত যে ফিতনা নাযিল হয়েছে, কে আছে এমন, যে এ হুজরাবাসীগণকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেবে। পৃথিবীতে এমন অনেক পোশাক পরিহিতা মহিলাও আছে যারা কিয়ামতের দিন বিবিস্ত্র থাকবে। যুহরী (রহঃ) বলেন, হিন্দ বিনত হারিস এর জামার আস্তিনদ্বয়ে বুতাম লাগানো ছিল। 

No comments:

Powered by Blogger.