বুখারী শরীফ ৯ম খন্ড, অধ্যায়ঃ পোষাক-পরিচ্ছদ ২ (৫৪২৭-৫৪৮৬)
হাদিস ৫৪২৭
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) খালিদের কন্যা উম্মে খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু কাপড় আনা হয়। তার মধ্যে একটি নকশাযুক্ত কাল চাঁদর ছিল। তিনি বললেনঃ আমি এ চাঁদরটি কাকে পরিধান করাব এ ব্যাপারে তোমাদের অভিমত কি? সবাই নিরব থাকল। তিনি বল্লেনঃ উম্মে খালিদকে আমার কাছে নিয়ে এসো। সুতরাং তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হল। তিনি স্বহস্তে তাকে ঐ চাঁদর পরিয়ে দিয়ে বললেনঃ পুরাতন কর ও দীর্ঘদিন ব্যবহার কর। তারপর তিনি চাঁদরের নকশার দিকে তাকাতে লাগলেন এবং হাতের দ্বারা আমাকে ইঙ্গিত করে বলতে থাকলেনঃ হে উম্মে খালিদ! এ সানা, যে উম্মে খালিদ! এ সানা। হাবশী ভাষায় “সানা” অর্থ সুন্দর। ইসহাক (রহঃ) বলেনঃ আমার পরিবারের জনৈক মহিলা আমাকে বলেছে, যে উক্ত চাঁদর উম্মে খালিদের পরিধানে দেখেছে।
হাদিস ৫৪২৮
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূরুষদের যাফরানী রং -এর কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।
হাদিস ৫৪২৯
আবূ মুআইম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, মুহরিম ব্যাক্তি যেন ওয়ারস ঘাসের কিংবা যাফরানের রং দ্বারা রঞ্জিত কাপড় না পরে।
হাদিস ৫৪৩০
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির। আমি তাকে লাল হুল্লা পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। তাঁর চেয়ে অধিক সুন্দর আর কিছু আমি দেখিনি।
হাদিস ৫৪৩১
কাবীসা (রহঃ) বারা বলেনঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেনঃ রোগীর সেবা জানাযার অংশ গ্রহণ এবং হাঁচিদাতার জবাব দান। আর তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন: রেশমী কাপড়, মিহিন রেশমী কাপড় রেশম মিশ্রিত কাতান কাপড়, মোটা রেশমী কাপড় এবং লাল মীসারা কাপড় পরিধান করতে।
হাদিস ৫৪৩২
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ মাসলামা সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -না-লাইন পায়ে রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন কি? তিনি বলেছেন: হ্যা।
হাদিস ৫৪৩৩
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-কে বলেনঃ আমি আপনাকে এমন চারটি কাজ করতে দেখেছি, যা আপনার সঙ্গীদের মধ্যে কাউকে করতে দেখিনি। তিনি বললেনঃ সেগুলো কি! হে ইবনু জুরায়জ? তিনি বললেনঃ আমি দেখেছি আপনি তাওয়াফ করার সময় (কাবার) রুকনগুলোর মধ্য হতে ইয়ামানী দুটি রুকন ছাড়া অন্য কোনটিকে স্পর্শ করেন না। আমি দেখেছি। আপনি পশ ম বিহীন চামড়ার জুতা পরিধান কলেন। আমি দেখেছি আপনি হলুদ বর্ণের কাপড় পরেন এবং যখন আপনি মক্কায় ছিলেন তখন দেখেছি, অন্য লোকেরা (যিলহজের) চাঁদ দেখেই ইহরাম বাধতো, আর আপনি তালবিয়ার দিন (অর্থাৎ আট তারিখ) না আসা পর্যন্ত ইহরাম বাধতেন না। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তাকে বললেনঃ আরকান সম্পর্কে কথা এই যে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ইয়ামানী দুটি রুকন ব্যতীত অন্য কোনটিকে স্পর্শ করতে দেখনি। আর পশম বিহীন চামড়ার জুতার ব্যাপার হলো! আমি দেখেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরুপ জুতা পরতেন, যাতে কোন পশম থাকতো না এবং তিনি জুতা পরিহিত অবস্হায়ই উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন (অর্থাৎ পা ধুতেন)। তাই আমি অনুরুপ জুতা পরতেই পছন্দ করি। আর হলুদ রঙের কথা হলো, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ রং দিয়ে রঙ্গিন করতে দেখেছি। সুতরাং আমিও এর দ্বারাই রং করতে ভালবাসি। আর ইহরাম বাধার ব্যাপারে কথা এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তার বাহনে হাজ্জের (হজ্জ) কাজ আরম্ভ করার জন্য উঠার আগে ইহরাম বাধতে দেখিনি।
হাদিস ৫৪৩৪
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন যে ইহরাম বাধা ব্যাক্তি যেন যাফরান কিংবা ওয়ারস ঘাস দ্বারা রং করা কাপড় পরিধান না করে। তিনি বলেছেনঃ যে (মুহরিম) ব্যাক্তির জুতা নেই, সে যেন মোজা পরে এবং টাখনুর নীচ থেকে (মোজার উপরের অংশ) কেটে ফেলে (যাতে তা জুতার না ন্যয় হয়ে যায়)।
হাদিস ৫৪৩৫
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে (মুহরিম) লোকের ইযার নেই। সে যেন পায়জামা পরে, আর যার জুতা নেই-সে যেন মোজা পরিধান করে।
হাদিস ৫৪৩৬
হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্রতা অর্জন করতে, মাথা আচড়াতে ও জুতা পায়ে দিতে ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন।
হাদিস ৫৪৩৭
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ জুতা পরিধান করে তখন সে যেন ডান দিক থেকে আরম্ভ করে, আর যখন খোলে, তখন সে যেন বাম দিক থেকে আরম্ভ করে, যাতে পরার বেলায় উভয় পায়ের মধ্যে ডান পা প্রথমে হয় এবং খোলার সময় শেষে হয়।
হাদিস ৫৪৩৮
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ এক পায়ে জুতা পরে যেন না হাটে। হয় উভয় পা সম্পূর্ণ খোলা রাখবে অথবা উভয় পায়ে পরিধান করবে।
হাদিস ৫৪৩৯
হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চপ্পলে দুটি করে ফিতা ছিল।
হাদিস ৫৪৪০
মুহাম্মাদ (রহঃ) ঈসা ইবনু তাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার আনাস ইবনু মলিক (রাঃ) এমন দুটি চপ্পল আমাদের কাছে আনলেন যার দুটি করে ফিতা ছিল। তখন সাবিত বুনানী বললেনঃ এটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চপ্পল ছিল।
হাদিস ৫৪৪১
মুহাম্মদ ইবনু আর-আরা (রহঃ) আওনের পিতা (ওহর ইবনু আবদুল্লাহ) (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলাম। তখন তিনি একটি লাল চামড়ার তাঁবুতে ছিলেন। আর বিলালকে দেখলাম তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি উঠিয়ে দিচ্ছেন এবং লোকজন উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি নেয়ার জন্য ছুটাছুটি করছে। যে ওখান থেকে কিছু পায়, সে তা মুখে মেখে নেয়। আর যে সেখান থেকে কিছু পায় না, সে তার সাথীর ভিজা হাত থেকে কিছু নিয়ে নেয়।
হাদিস ৫৪৪২
আবূল ইয়ামান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের কাছে সংবাদ পাঠান এবং তাদের (লাল) চামড়ার একটি তাবুতে সমবেত করেন।
হাদিস ৫৪৪৩
মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিবেলা চাটাই দ্বারা ঘেরাও দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর দিনের বেলা তা বিছিয়ে তার উপর বসতেন। লোকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সমবেত হবে তার সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগল। এমন কি লোক সমবেত হল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আমল করতে থাক তোমাদের সামর্থ অনূযায়ী। কারন, আল্লাহ তাআলা ক্লান্ত হন না, অবশেষে তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আর আল্লাহর নিকট ঐ আমল সবচেয়ে প্রিয়, যা সর্বদা করা হয় যদিও তা কম হয়।
হাদিস ৫৪৪৪
আদম (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি জিনিস থের্কে নিষেধ করেছেন: স্বর্ণের আংটি বা তিনি বলেছেন। স্বর্নের বলয়, মিহি রেশম, মোটা রেশম ও রেশম মিশ্রিত কাপড় রেশম এর তৈরী লাল রঙের পেলান বা হাওদা, রেশম মিশ্রিত কিসসী কাপড় ও রুপার পাত্র আর আমাদের সাতটি কাজের আদেশ করেছেনঃ রোগীর শশ্রুষা, জানাযার পেছনে চলা, হাচির উত্তর দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, দাওয়াত, গ্রহন করা, কসমকারীর কসম পূরনে সাহায্য করা এবং মাযলূম ব্যাক্তির সাহায্য করা।
হাদিস ৫৪৪৫
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি স্বর্নের আংটি ব্যবহার করতে নিনেধ করেছেন। আমর (রহঃ) বাশীর (রহঃ)-কে অনুরুপ বর্ণনা করতে শুনেছেন।
হাদিস ৫৪৪৬
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্নের একটি আংটি ব্যবহার করেন। আংটির মোহর হাতের তাবুর দিকে ফিরিয়ে রাখেন। লোকেরা অনুরুপ (আংটি) ব্যবহার করা আরম্ভ করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের আংটিটি ফেলে দিয়ে চাঁদি বা রৌপ্যের আংটি বানিয়ে নিলেন।
হাদিস ৫৪৪৭
ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের একটি আংটি পরিধান করেন। আংটির মোহর হাতের তাবুর ভিতরের দিকে ফিরিয়ে রাখেন। তাতে তিনি ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ খোদাই করেছিলেন। লোকেরাও অনুরুপ আংটি ব্যবহার করতে আরম্ভ করেন। যখন তিনি দেখলেন যে, তারাও অনুরুপ আংটি ব্যবহার করছে, তখন তিনি তা ছুড়ে ফেলেন এবং কখনও এ ব্যবহার করব না। এরপর একটি রুপার আংটি ব্যবহার করেন। লোকেরাও রুপার আংটি ব্যবহার আরম্ভ করে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরে আবূ বকর (রাঃ), তারপর উমর (রাঃ) ও তারপর উসমান (রাঃ) তা ব্যবহার করেছেন। শেষে উসমান (রাঃ) এর (হাত) থেকে আংটিটি আরীস নামক কুপের মধ্যে পড়ে যায়।
হাদিস ৫৪৪৮
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের একটি আংটি ব্যবহার করতেন। এরপর তা ছেড়ে দেন এবং বলেনঃ আমি আর কখনও তা ব্যবহার করবো না। লোকেরাও তাদের আংটি খূলে ফেলে দেয়।
হাদিস ৫৪৪৯
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেবো বর্ণিত যে, তিনি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে রুপার একটি আংটি দেখেলেন। তারপর লোকেরাও রুপার আংটি তৈরি করে এবং ব্যবাহার করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে তার আংটি পরিহার করেন। লোকেরাও তাদের আংটি পরিহার করে। যুহরীর সূত্রে ইবরাহীম ইবনু স্বাদ, বিয়াদ ও শুয়াইব (রহঃ)ও অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
হাদিস ৫৪৫০
আবদান (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হয় যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আংটি পরেছেন কি না? তিনি বললেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে এশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করেন। এরপর তিনি আমাদের মাঝে আসেন। আমি যেন তার আংটির চমক দেখতে পেলাম। তিনি বললেন লোকজন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে শুয়ে পড়েছে। আর যতক্ষন থেকে তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর অপেক্ষায় রয়েছ, ততক্ষন তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যেই রয়েছ।
হাদিস ৫৪৫১
ইসহাক (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আংটি ছিল রুপার। আর তার নাগিনাটিও ছিল রুপার। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, হুমায়দ, আনাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৫৪৫২
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল: আমি নিজেকে হিবা (দান-বিবাহ) করে দেওয়ার জন্য এসেছি। এ কথা বলে সে দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকল। তিনি তাকালেন ও মাথা নীচু করে রাখলেন। মহিলাটির দাড়িয়ে থাকা যখন দীর্ঘায়িত হল, তখন এক ব্যাক্তি বলল : আপনার যদি প্রয়োজন না থাকে, তবে একে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তোমার কাছে মোহর দেওয়ার মত কিছু আছে কি? সে বলল: না। তিনি বললেনঃ খুজে দেখ। সে চলে গেল। কিছু সময় পর ফিরে এসে বলল: আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পেলাম না। তিনি বললেনঃ আবার যাও এবং তালাশ করো, একটি লোহার আংটিও যদি হয় (নিয়ে এসো) সে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বলল: কসম আল্লাহর! কিছুই পেলাম না, একটি লোহার আংটিও না। তার পরিধানে ছিল একটি মাত্র রসি তার উপর চাঁদর ছিল না। সে আরয করল: আমি এ লুঙ্গিটি তাকে দান করে দেব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার লুঙ্গি যদি সে পরে তবে তোমার পরনে কিছুই থাকে না। আর যদি তুমি পর, তবে তার গায়ে এর কিছু থাকে না। এরপর লোকটি একটু দূরে সরে গিয়ে বসে পড়ল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে, সে পিছু ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি তাকে থাকার জন্য হুকুম দিলেন। তাকে ডেকে আন! হল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার কি কুরআনের কিছু মুখস্ত আছে? সে বললঃ অমুক অমুক সূরা। সে সূরাগুলোকে গননা করে শোনাল। তিনি বলেনঃ তোমার কাছে কুরআনের যা কিছু মুখস্ত আছে, তার বিনিময়ে মেয়ে লোকটিকে তোমার মালিকানায় দিয়ে দিলাম।
হাদিস ৫৪৫৩
আব্দুল আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনারব একটি দলের কাছে বা কিছু লোকের কাছে পত্র লিখতে ইচ্ছা করেন। তখন তাকে জানোান হল যে, তারা এমন পত্র গ্রহণ করে না যার উপর মোহরাঙ্কিত না থাকে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুপার একটি আংটি তৈরী করেন। তাতে অংকিত ছিল ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ (বর্ণনাকারী- আনাস (রাঃ) বলেন) আমি যেন (এখনও) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আঙ্গুলে বা তার হাতে সে আংটির উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি।
হাদিস ৫৪৫৪
মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুপার একটি আংটি তৈরী করেন। সেটি তার হাতে ইছিল। এরপর তা আবূ বকর (রাঃ)- এর হাতে আসে। পরে তা উমর (রাঃ)-এর হাতে আসে। এরপর তা উসমান (রাঃ)-এর হাতে আসে। শেষকালে তা আরীস নামক এক কুপের মধ্যে পড়ে যায়। তাতে অংকিত ছিল ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’।
হাদিস ৫৪৫৫
আবূ মা-মার (রহঃ) - আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আংটি তৈরী করেন। তারপর তিনি বলেনঃ আমি একটি আংটি তৈরী করেছি এবং তাতে একটি নকশা করেছি। সুতরাং কেউ যেন নিজের আংটিতে নকশা না করে। তিনি (আনাস) বলেনঃ আমি যেন তাঁর কনিষ্ঠ আংগুলে আংটিটির দ্যূতি (এখনঁও) দেখতে পাচ্ছি।
হাদিস ৫৪৫৬
আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোম সমরাটেরর নিকট পত্র লিখতে মনস্থ করেন- তখন তাঁকে বলা হল, আপনার পত্র যদি মোহরাংকিত না হয়, তবে তারা তা পড়বে না। এরপর তিনি রুপার একটি আংটি বানান এবং তাতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ খোদাই করা ছিল। (আনাস (রাঃ) বলেন) আমি যেন (এখনও) তার হাতে সে আংটির শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করছি।
হাদিস ৫৪৫৭
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের একটি আংটি তৈরি করেন। যখন তিনি তা পরতেন তখন তার নাগিনা হাতের তালুর দিকে রাখতেন। (তার দেখাদেখি) লোকেরাও স্বর্নের আংটি তৈরি আরম্ভ করে। এরপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাবলী প্রকাশ করার পর বলেনঃ আমি এ আংটি তৈরি করেছিলাম। বিত তা আর পরব না। এরপর তিনি তা ছুড়ে ফেলেন। লোকেরাও (তাদের আংটি) ছুড়ে ফেলল। জুওয়ায়রিয়া (রহঃ) বলেনঃ আমার ধারনা যে, বর্ণনাকারী (নাফি)এ কথাও বলেছেন যে আংটিটি তার ডান হাতে ছিল।
হাদিস ৫৪৫৮
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুপার একটি আংটি-তৈরী করেন। তাতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ এর নকশা খোদাই করেন। এরপর তিনি বলেনঃ আমি একটি রুপার আংটি বানিয়েছি এবং তাতে ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’-এর নকশা খোদাই করেছি। সূতরাং কেউ সেন তার আংটিতে এ নকশা খোদাই না করে।
হাদিস ৫৪৫৯
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ বকর (রাঃ) যখন খলীফা নির্বাচিত হন, তখন তিনি তার (আনাস) (রাঃ) কাছে (যাকাতের পরিমাণ সম্পর্কে) একটি পত্র লেখেন। আংটিটির নকশা তিন লাইনে ছিল। এক লাইনে ছিল ‘মুহাম্মাদ’ এক লাইনে ছিল, ‘রাসুল’ আর এক লাইনে ছিল ‘আল্লাহ’ আবূ আবদুল্লাহ হিশাম বুখারী) বলেনঃ আহমাদের সূত্রে আনাস (রাঃ) থেকে এ কথা অতিরিক্ত বর্ণিত আছে। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আংটি (তার জীবদ্দশায়) তার হাতেই ছিল। তার (ইন্তেকালের) পরে তা আবূ বকর (রাঃ) এর হাতে থাকে। আবূ বকর (রাঃ)- এর (ইন্তেকালের) পরে তা উমার (রাঃ) এর হাতে থাকে। যখন উসমান (রাঃ) এর আমল এল, তখন (একদিন) তিনি ঐ আংটি হাতে নিয়ে) আরীস নামক কুপের উপর বসেন। আংটিটি বের করে নাড়চাড়া করছিলেন। হঠাৎ তা (কুপের মধ্যে) পড়ে যায়। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তিন দিন যাবত উসমানের (রাঃ) সাথে অনুসন্ধান চালানাম কুপের পানি ফেলে দেয়া হল কিন্তু আংটি আর আমরা পেলাম না।
হাদিস ৫৪৬০
আবূ আসিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর সাথে এক ঈদে উপস্হিত ছিলাম। তিনি খুতবার আগেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বলেনঃ ইবনু ওহাব, ইবনু জুরায়জ থেকে এতটুকু বেশী বর্ণনা করেছেন যে, এরপর তিনি মহিলাদের কাছে আসেন। তারা (সা’দকা হিসেবে) বিলাল (রাঃ) এর কাপড়ে মালা ও আংটি ফেলতে লাগল।
হাদিস ৫৪৬১
মুহাম্মদ হঁবন আর-আর (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ঈদের দিনে বের হন এবং (ঈদের) দু রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তার আগে এবং পরে আর কোন নফজ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি। তারনর তিনি মহিলাদের কাছে আসেন এবং তাদের স্বাদকা করার জন্য আদেশ দেন। মহিলারা তাদের হার ও মালা স্বাদকা করতে থাকল।
হাদিস ৫৪৬২
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার কোন এক সফরে) আসমার একটি হার (আমার নিকট থেকে) হারিমে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন পূরুষ লোককে তার সন্ধানে পাঠান। এমন সময় সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উপস্থিত হল। তাদের কারও উযূ (ওজু/অজু/অযু) ছিল না এবং তারা পানিও পেল না। সুতরাং বিনা উযূ (ওজু/অজু/অযু)তেই তাঁরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিলেন। (ফিরে এসে) তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ বিষয়টির উল্লেখ করলেন। তখন আল্লাহর তা আলা তাইয়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন। ইবনু নুমায়র হিশামের সূত্রে এ কথা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ঐ হার আয়িশা (রাঃ) -আসমা (রাঃ) থেকে হাওলাত নিয়েছিলেন।
হাদিস ৫৪৬৩
হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) ঈদের দিনে দু রাকঁআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। না এর আগে তিনি কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন না এর পরে। তারপরে তিনি মহিলাদের কাছে আসেন, তখন তাঁর সাথে ছিলেন বিলাল (রাঃ) তিনি মহিলাদের সা’দকা করার নির্দেশ দেন। তারা নিজেদের কানের দুল ছুড়ে ফেলতে লাগল।
হাদিস ৫৪৬৪
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মদিনার কোন এক বাজারে ছিলাম। তিনি (বাজার থেকে) ফিরে আসলেন। আমিও ফিরে আসলাম। তিনি বললেনঃ ছোট শিশুটি কেথায়? এ কথা তিনবার বললেন। হাসান ইবনু আলীকে ডাক। দেখা গেল হাসান ইবনু আলী হেঁটে চলছে। তার গলায় ছিল মালা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ভাবে তার হাত উত্তোলন করলেন। হাসানও এভারে নিজের হাত উত্তোলন করলেন। তারপর তিনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ আমি একে ভালবাসি, আপনিও তাকে ভালবাসুন এবং যে ব্যাক্তি তাকে ভালবাসে, তাকেও আপনি ভালসাসুন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একথা বলার পর থেকে হাসান ইবনু আলীর চেয়ে কেউ আমার কাছে অধিক প্রিয় হয়নি।
হাদিস ৫৪৬৫
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব পুরুষকে লানত করেছেন। যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ঐসব নারীকে যারা পূরুষের বেশ ধারণ করে।
হাদিস ৫৪৬৫
মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূরুষ হিজড়াদের উপর এবং পূরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদের উপর হল নত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুককে বের করেছেন এবং উমর (রাঃ) অমুককে বের করে দিয়েছেন।
হাদিস ৫৪৬৭
মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তার ঘরে ছিলেন। তখন ঐ ঘরে একজন হিজড়া ছিল। সে উম্মে সালামার ভাই আবদুল্লাহকে বলল হে আবদুল্লাহ! আগামী কাল তায়েফের উপর যদি তোমাদের জন্মলাভ হয় তবে আমি তোমাকে বিনত গায়লানকে দেখানো। সে যখন সামনের দিকে আসো তখন (তার পেটে) চার ভাজ দৃষ্ট হয়। আর যখন সে পিছনের দিকে যায়, তখন (তার পিঠে) আট ভাজ দৃষ্ট হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওরা যেন তোমাদের নিকট কখনও না আসে।
হাদিস ৫৪৬৮
মাককী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত: তিনি বলেছেনঃ গৌফ কেটে ফেলা ফিতরাত (স্বভাবের) অন্তর্ভুক্ত।
হাদিস ৫৪৬৯
আলী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন ফিতরাত (অর্থাৎ মানূষের সৃষ্টিগত স্বভাব) পাচটি খাতনা করা, ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভির নীচে), বোগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ ছোট করা।
হাদিস ৫৪৭০
আহমাদ ইবনু আবূ রাজা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নাভির নীচের পশম কামানো, নখ কাটা ও গোঁফ ছোট করা মানুষের ফিতরাত।
হাদিস ৫৪৭১
আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি ফিতরাত পাচটি: খাতনা করা- (নাভির নীচে) ক্ষুর ব্যবহার করা, গোঁফ ছোট করা- নখ কাটা ও বোগলের পশম উপড়ে ফেলা।
হাদিস ৫৪৭২
মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবে: দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে। ইবনু উমর (রাঃ) যখন হাজ্জে (হজ্জ) বা উমরা করতেন, তখন তিনি তার দাঁড়ি খাট করে ধরতেন এবং মুষ্টের বাইরে যতটুকু অতিরিক্ত থাকত তা কেটে ফেলতেন।
হাদিস ৫৪৭৩
মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গোঁফ বেশী ছোট করবে এবং দাড়ি বড় রাখবে।
হাদিস ৫৪৭৪
মুআলা ইবনু আস্বাদ (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খিযাব লাগিয়েছেন? তিনি বললেনঃ বার্ধক্য তাকে অতি সামান্যই পেয়েছিল।
হাদিস ৫৪৭৫
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিযাব লাগান সম্পর্কে জিজাসা করা হলা তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খিযাব লাগাবার অবস্থা পর্যন্ত পৌছেননি। আমি যদি তার সাদা দাড়িগুলো গুণতে চাইতাম, তবে সহজেই গুণতে পারতাম।
হাদিস ৫৪৭৬
মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমাকে আমার পরিবারের লোকেরা এক পেয়ালা পানি সহ উম্মে সালামার কাছে পাঠাল। (উম্মে সালামার কাছে রক্ষিত) একটি রুপায় (পানি ভর্তি) পাত্র থেকে (আনাসের পূত্র) ইসরাঈল তিনটি আঙ্গুল দিয়ে কিছু পানি তুলে নিব। ঐ পাত্রের মধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কয়েকটি মুবারক চুল ছিল। কোন লোকের যদি চোখ লাগতো কিংবা অন্য কোন রোগ দেখা দিত তবে উম্মে সালামার কাছ থেকে পানি আনার জন্য একটি পাত্র পাঠিয়ে দিত। আমি সে পাত্রের মধ্যে একবার লক্ষ্য করলাম দেখলাম লাল রং এর কয়েকটি চুল আছে।
হাদিস ৫৪৭৭
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) আমি উম্মে সালামার (রাঃ) নিকট গেলাম। তখন তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কয়েকটি চুল বের করলেন, যাতে খিযাব লাগান ছিল। আবূ নু-আইম ইবনু মাওহাবের সুত্রে বর্ননা করেছেন যে- উম্মে সালামা (রাঃ) তাকে ইবনু মাওহাব) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর লাল রং এর চুল দেখিয়েছেন।
হাদিস ৫৪৭৮
ছমায়দী (রহঃ) আবূ ছুলায়সা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদ ও নাসারারা (চুল ও দাড়িতে) রং লাগায় না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করবে।
হাদিস ৫৪৭৯
ইসমাঈল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিরিক্ত লম্বা ছিলেন না খাটও ছিলেন না। ধবধবে সাদা ছিলেন না, আর না ফ্যাকাশে সাদা ছিলেন। চুল অতিশয় কোকড়ানও ছিল না, আর সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তাকে নবুয়াত দান করেন। এরপর মক্কায় দশ বছর এবং মদিনায় দশ বছর অবস্থান করেন। ষাট বছর বয়সে আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেন। এ সময় তার মাথায় ও দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা হয়নি।
হাদিস ৫৪৮০
মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বললেনঃ লাল জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অন্য কাউকে আমি অধিক সুন্দর দেখিনি। (ইমাম বুখারী বলেন)- আমার জনৈক সংগী মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাথার চুল তার কাঁধ পর্যন্ত পৌছতো। আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেনঃ আমি বারা (রাঃ)-কে একাধিকরার এ হাদীস বর্ননা করতে শুনেছি। যখনই তিনি এ হাদীস বর্ণনা করতেন, তখনই হেসে দিতেন। শুবা বলেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চুল তার উভয় কানের লতি পর্যন্ত পৌছতো।
হাদিস ৫৪৮১
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসূফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এক রাতে স্বপ্নে কাবা ঘরের নিকট একজন গেরুয়া বর্নের পূরুষ লোক দেখতে পেলাম। এমন সুন্দর গেরুয়া লোক তুমি কখনও দেখনি। তার মাথার চুল ছিল কাঁধ, পর্যন্ত। কাঁধ পর্যন্ত লম্বা এমন সুন্দর চুল তুমি কখনও দেখনি। লোকটি চুল আচড়িয়েছে, আর তা থেকে ফোটা ফোটা পানি পড়ছে। সে দূ-জন লোকের উপর ভর করে কিম্বা দু-জন লোকের কাঁধের উপর ভর করে কাবা ঘর তাওয়াফ করছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ এ লোকটি কে? জবাব দেওয়া হলো তিনি মরিয়মের পূত্র (ঈসা) মাসীহ! আর দেখলাম অন্য একজন লোক, যার চুল ছিল অতিশয় কোকড়ান, ডান চোখ টেরা, যেন তা একটি ফুলে উঠা আঙ্গুর। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ লোকটি কে? বলা হলো: ইনি মাসীহ দাজ্জাল।
হাদিস ৫৪৮২
ইসহাক (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাথার চুল (কখনও কখনও) কাঁধ পর্যন্ত।
হাদিস ৫৪৮৩
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চুল (কোন কোন সময়) কাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ হতো।
হাদিস ৫৪৮৪
আমর ইবনু আলী (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চুল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল মধ্যম ধরনের ছিল না একেবারে সোজা লম্বা, না অতি কোকড়ান। আর তা ছিল দু-কান ও দু-কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত।
হাদিস ৫৪৮৫
মুসলিম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুবারক হাড় গোশতে পরিপূর্ণ ছিল। তার পরে আর কাউকে অমন এমন দেখিঁনি। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা ছিল মধ্যম ধরনের বেশী কৌকড়ানোও না আর বেশী সোজাও না।
হাদিস ৫৪৮৬
আবূ নূ’মান (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দু-হস্তে ও দু- পা ছিল মাংসবহুল। চেহারা ছিল সুন্দরতর আগে ও তার পরে আমি তার মত অপর (কাউকে এত অধিক সুন্দর) দেখিনি। তার হাতের তার ছিল চওড়া।
No comments: