বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড অধ্যায়: কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন (৬৭৭২-৬৮১৯)
হাদিস ৬৭৭২
হুমায়দী (রহঃ) তারিক ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ এক ইহুদী উমর (রাঃ)-কে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমাদের উপর যদি এই আয়াত “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সস্পূর্ন করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম- (৫ :৩) অবতীর্ন হত, তাহলে সে দিনটিকে আমরা ঈদ (উৎসবের) দিন হিসাবে গণ্য করতাম। উমর (রাঃ) বললেনঃ আমি অবশ্যই জানি এ আয়াতটি কোন দিন অবতীর্ণ হয়েছিল। আরাফার দিন জুমুআ দিবসে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল। হাদীসটি সুফিয়ান (রহঃ) মিসআর (রহঃ) থেকে, মিসআর কায়স থেকে, কায়স (রহঃ) তারিক থেকে শুনেছেন।
হাদিস ৬৭৭৩
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, দ্বিতীয় দিবসে যখন মুসলিমরা আবূ বকর (রাঃ)-এর বায়আত -গ্রহণ করেছিল এবং তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মিম্বরের উপর উপবিষ্ট ছিলেন। উমর (রাঃ)-কে আবূ বকর (রাঃ)-এর পুর্বে হামদ ও ছানা ও কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে তিনি (আনাস) শুনেছেন। তিনি বললেনঃ এরপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল) -এর জন্য তোমাদের কাছে যা ছিল তার চেয়ে তার নিকট যা আছে সেটাকেই পছন্দ করেছেন। আর এই সে কিতাব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের রাসুল কে হেদায়েত করেছেন। সূতরাং একে তোমরা আকড়িয়ে ধর। তাহলে এর দ্বারা আল্লাহ তাঁর রাসুল -কে যে হেদায়েত দান করেছিলেন তোমরাও সেই হেদায়েত লাভ করবে।
হাদিস ৬৭৭৪
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর দেহের সাথে) আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ! একে কিতাবের জ্ঞান দান কর।
হাদিস ৬৭৭৫
আবদুল্লাহ ইবনু সাববাহ (রহঃ) আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে ইসলাম ও মুহাম্মাদ -এর দ্বারা অমুখাপেক্ষী করেছেন। কিংবা বলেছেনঃ পরিপূর্ন করেছেন।
হাদিস ৬৭৭৬
ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ানের বায়আত গ্রহন প্রসঙ্গে লিখলেন। আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতের ভিত্তিতে আমার সাধ্যানুসারে (আপনার নির্দেশ) শোনা ও মানার অস্বীকার করছি।
হাদিস ৬৭৭৭
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি -জাওয়ামিউল কালিম- (ব্যাপক অর্থ বোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য) সহ প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি ঘুমন্ত অবস্হায় দেখতে পেলাম, পৃথিবীর ভাণ্ডারসমুহের চাবি আমাকে দান করা হয়েছে এবং তা আমার হাতে রেখে দেওয়া হায়ছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন। আর তোমরা তা ব্যবহার করছ কিংবা বলেছিলেন তোমরা তা থেকে উপকৃত হচ্ছ কিংবা তিনি অনুরুপ কোন বাক্য বলেছিলেন।
হাদিস ৬৭৭৮
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবী কেই কোন-না-কোন বিশেষ নিদর্শন প্রদান করা হয়েছে। যার অনুরুপ তাঁর উপর ঈমান আনা হয়েছে, কিংবা লোকেরা তার উপর ঈমান এনেছে। আর আমাকে যা দেওয়া হয়েছে, সে হল ওহী, যা আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর অবতীর্ন করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি যে, কিয়ামতের দিন আমার অনুসারীর সংখ্যা তাদের তূলনায় সর্বাধিক হবে।
হাদিস ৬৭৭৯
আমর ইবনু আব্বাস (রহঃ) আবূ ওয়ায়েল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি এই মসজিদে শায়বার (রহঃ) কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বললেনঃ তুমি যেরুপ (আমার কাছে) বসে আছ, উমর (রাঃ) অনুরুপভাবে এ জায়গায় বসা ছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, আমি ইচ্ছা করছি যে, এতে সোনা ও রুপার কোন কিছুই অবশিষ্ট রাখব না বরং সবকিছু মুসলমানদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে দিব। আমি বললাম, আপনার জন্য এটা করা ঠিক হবে না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কেন? আমি বললাম, আপনার সঙ্গীদ্বয় (অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ)) এটা করেননি। তিনি বললেনঃ তাঁরা দু-জন অনুসরণ করার মত ব্যাক্তই ছিলেন।
হাদিস ৬৭৮০
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, আমানত আসমান থেকে মামুষের অন্তর্মুলে অবগামী হয়েছে, তারপর কুরআন অবতীর্ন হয়েছে এবং মানুষ তা পাঠ করেছে এবং সুন্নাত শিক্ষা করেছে।
হাদিস ৬৭৮১
আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম আদর্শ হল মুহাম্মাদ এর আদর্শ আর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম বিষয় হল কুসংস্কারসমুহ। তোমাদের কাছে যা ঘোষণা করা হচ্ছে তা বাস্তবায়িত হবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে না (৬ - ১৩৪)।
হাদিস ৬৭৮২
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। (এ সময়) তিনি বললেনঃ অবশ্যই আমি আল্লাহ তাআলার কিতাব অনুযাযী তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব।
হাদিস ৬৭৮৩
মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করল।
হাদিস ৬৭৮৪
মুহাম্মদ ইবনু আবাদা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদল ফেরেশতা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমন করলেন। তিনি তখন ঘুমন্ত ছিলেন। একজন ফেরেশতা বললেনঃ তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )নিদ্রিত। অপর একজন বললেনঃ চক্ষু নিদ্রিত বটে, কিন্তু অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বললেনঃ তোমাদের এ সাথীর একটি উপমা আছে সুতরাং তার উপমাটি তোমরা বর্ননা কর। তখন তাদের কেউ বলল- তিনি তো নিদ্রিত, আর কেউ বলল, চক্ষু নিদ্রিত তবে অন্তরাত্তা জাগ্রত। তখন তারা বলল, তাঁর উপমা হল সেই ব্যাক্তির মত, যে একটি গৃহ নির্মান করল। তারপর সেখানে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করল এবং একজন আহবানকারীকে (লোকদের ডাকতে) পাঠাল। যারা আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিল, তারা গৃহে প্রবেশ করে খালা খাওয়ার সূযোগ লাভ করল। আর যারা আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিল না, তারা গৃহেও প্রবেশ করতে পারল না এবং খানাও খেতে পারল না। তখন তারা বললেনঃ উপমাটির ব্যাখ্যা করুন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন। তখন কেউ বলল, তিনি তো নিদ্রিত, আর কেউ বলল, চক্ষু নিদ্রিত, তবে অন্তরাত্তা জড়িত। তখন তারা বললেনঃ গৃহটি হল জান্নাত, আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ যারা মুহাম্মাদ -এর অনূসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ এর অবাধ্যতা করল, তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের মানদণ্ড। কুতায়বা জাবির (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন, এই বাক্যটি বলছেন।
হাদিস ৬৭৮৫
আবূ নূআয়ম (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হে কুরআন পাঠকারী সমাজ! তোমরা (কুরআন ও সুন্নাহর উপর) সুদৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক পিছনে পড়ে আছ। আর যদি তোমরা (সিরাতে মুস্তাকীম থেকে সরে গিয়ে) ডান কিংবা বামের , পথ অনুসরণ কর তাহলে তোমরা (হেদায়েত থেকে) অনেক দুরে সরে যাবে।
হাদিস ৬৭৮৬
আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ও আমাকে আল্লাহ যা কিছু দিয়ে প্রেরন করেছেন তার উপমা হল এমন যে, এক ব্যাক্তি কোন এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে বলল, হে কাওম! আমি নিজের চোখে সেনাবাহিনীকে দেখে এসেছি। আমি সুস্পষ্টসতর্ককারী। সূতরাং তোমরা আত্নরক্ষার চেষ্টা কর। কাওমের কিছু লোক তার কথা মেনে নিল, সূতরাং রাতের প্রথম ভাগে তারা সে স্হান ছেড়ে রওনা হল এবং একটি নিরাপদ স্থানে গিয়ে পৌছল। ফলে তারা রক্ষা পেল তাদের থেকে আর একদল লোক তার কথা অবিশ্বাস করল, ফলে তারা নিজেদের আবাসস্থলেই রয়ে গেল। প্রভাভে শক্রবাহিনী তাদের উপর আক্রমণ করল, তাদেরকে ধ্বংস করে দিল এবং তাদেরকে ধংশ করে দিল। এটাই হল তাদের উপমা, যারা আমার আনুগত্য করে এবং আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসরন করে। আর যারা আমার নাফরমানী করে এবং আমি যে সত্য নিয়ে এসেছি তাকে নিথ্যা প্রতিপন্ন করে।
হাদিস ৬৭৮৭
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন। আর তার পরে আবূ বকর (রাঃ)-কে খলীফা নির্বাচন করা হল এবং আরবের যারা কাফের হওয়ার তারা কাফের হরে গিয়েছিল। তখন উমর (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনি কি করে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মানুষেরসাথে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাওয়ার জন্য নির্দেশিত হয়েছি। অতএব যে ব্যাক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- বলে ফেলল- সে তার জানো ও মাল আমার থেকে নিরাপদ ও সংরক্ষিত করে ফেলল। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়ে গেলে সে ভিন্নকথা। তাদের প্রকৃত হিসাব আল্লাহর কাছে হবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ যারা সালাত (নামায/নামাজ) ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্যই তাদের সাথে যুদ্ধ করব। কেননা, যাকাত হল সম্পদের হক (অবশ্য পালনীয় বিধান)। আল্লাহর শপথ! যদি তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যা আদায় করত, এখন তা (সেভাবে) দিতে অস্বীকার করে, তাহলেও আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব। উমর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি দেখছিলাম যে, যুদ্ধ করার ব্যাপারে আল্লাহ তা আলা আবূ বকরের সিনা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম এ সিদ্ধান্তই সঠিক।
হাদিস ৬৭৮৮
ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উয়ায়না ইবনু ইবনু ইবনু হুযায়ফা ইবনু বাদর (রহঃ) তাঁর ভ্রাতূষ্পূত্র হুর ইবনু কায়স ইবনু ইবনুু-এর নিকট এলেন। উমর (রাঃ) যাদের নিজের সান্নিধ্যে রাখতেন, হুর ইবনু কায়স (রহঃ) ছিলেন তাদেরই একজন। যুবক হোক কিংবা বৃদ্ধ কারী (আলিম) ব্যাক্তিরাই উমর (রাঃ)-এর মজলিসের সভাসদ ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়ায়না তার ভাতিজাকে বললেনঃ হে ভাতিজা! তোমার কি আমীরের নিকট এভটুকু প্রভাব আছে যে আমার জন্য সাক্ষাতের অনুমতি গ্রহণ করতে পারবে? সে বলল, আমি আপনার ব্যাপারে তাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ তিনি (হুর) উয়ায়নার জন্য অনুমতি চাইলেন। তারপর যখন উয়ায়না (রাঃ) উমর (রাঃ)-এর নিকট গেলেন, তখন সে বলল, হে ইবনু খাত্তাব! আপনি আমাদের (প্রচুর পরিমাণে) মাল দিচ্ছেন না, আবার ইনসাফের ভিত্তিতে আমাদের মাঝে ফায়সালাও করছেন না। তখন উমর (রাঃ) রাগান্বিত হলেন, এমন কিন্তু তিনি তাকে প্রহার করতে উদ্যত হলেন। তখন হুর বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন। আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলেছেনঃ তুমি ক্ষমা। পরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও, আর অজ্ঞদেরকে উপেক্ষা কর। (৭-১৯৯)। এ লোকটি নিঃসন্দেহে একজন মুর্খ। আল্লাহর শপথ! উমর (রাঃ)-এর সামনে এই আয়াতটি পাঠ করা হলে তিনি মোটেও তা লংঘন করলেন না। বস্তুত তিনি মহান আল্লাহ তাঁআলার কিতাবের বড়ই অনুগত ছিলেন।
হাদিস ৬৭৮৯
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার সুর্যগ্রহণের সময় আমি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট এলাম। লোকেরা তখন (সালাত (নামায/নামাজ)) দাঁড়িয়েছিল এবং তিনিও দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, লোকদের কি হল? তিনি হাত দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করলেন এবং বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তখন তিনি মাথা দুলিয়ে হাঁ বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন, তখন (প্রথমে) তিনি আল্লাহর হামদ ও ছানা পাঠ করলেন। তারপর বললেনঃ আমি যা দেখিনি তার সবকিছুই আজকের এই স্থানে দেখেছি। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নামও দেখেছি। আর আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, কবরে তোমাদের পরীক্ষায় ফেলা হবে, যা প্রায় দাজ্জালের পরীক্ষার ন্যায়ই (কঠিন) হবে। তবে যারা মুমিন হবে, অথবা (বলেছিলেন) মুসলিম হবে। বর্ননাকারী বলেনঃ আসমা (রাঃ) -মুমিন- বলেছিলেন, না মুসলিম- বলেছিলেন তা আমার স্বরন নেই। তারা বলবে, মুহাম্মাদ আমাদের কাছে সূস্পষ্ট দলীল নিয়ে এসেছিলেন, আমরা তার আহবানে সাড়া দিয়েছি এবং ঈমান এনেছি। তখন তাকে বলাহবে, তুমি আরামে ঘুমিয়ে থাক, আমরা জানি তুমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী ছিলে। আর যারা মুনাফিক হবে অথবা (বলেছিলেন) সন্দেহকারী হবে, বর্ণনাকারী বলেনঃ আসমা মুনাফিক- বলেছিলেন না সন্দেহকারী- বলেছিলেন তা আমার মনে নেই। তারা বলবে, আমি কিছুই জানিনা, আমি মানুষকে কিছু কথা বলতে শুনেছি, আমিও তাই বলেছি।
হাদিস ৬৭৯০
ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাক, যতক্ষন না আমি তোমাদের কিছু বলি। কেননা, তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের অধিক প্রশ্ন করা ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের সাথে মতবিরোধ করার কারনেই ধ্বংস হয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদের কোন বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা থেকে বেচে থাক। আর যদি বেশি বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্যমত পালন কর।
হাদিস ৬৭৯১
আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ মুকরী (রহঃ) আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় অপরাধী সেই ব্যাক্তি যে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে যা পূর্বে হারাম ছিল না। কিন্তু তার প্রশ্নের কারণে তা হারাম হয়ে গেছে।
হাদিস ৬৭৯২
ইসহাক (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাই দিয়ে মসজিদে একটি কামরা তৈরি করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে কয়েক রাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এতে লোকেরা তার সঙ্গে সমবেত হত। তারপর এক রাতে তারা তার আওয়াজ শুনতে পেল না এবং তারা মনে করল- তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ গলা খাকার দিতে শুরু করল, যেন তিনি তাদের কাছে বেরিয়ে আসেন। তখন তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেনঃ তোমাদের নিত্য দিনের কার্যকলাপ আমি লক্ষ্য করছি, তাতে আমার ভয় হচ্ছে যে, তোমাদের উপর তা ফরয করে দেওয়া হয়। কিন্তু যদি তোমাদের উপর ফরব করে দেওয়া হয় তাহলে তোমরা তা কায়েম করবে না। অতএব হে লোকেরা! তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করো। কেননা, ফরয সালাত (নামায/নামাজ) ছাড়া একজন লোকের সবচেয়ে উত্তম সালাত (নামায/নামাজ) হল যা সে তার ঘরে আদায় করে।
হাদিস ৬৭৯৩
ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এমন কতিপয় বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল যা তিনি অপছন্দ করেন। কিন্তু লোকেরা যখন ভাঁকে বেশি বেশি প্রশ্ন করতে শুরু করল, তিনি রাগাম্বিত হলেন এবং বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর। তখন এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা কে? ডিনি বললেনঃ তোমার পিতা হল হুযাফা। এরপর আর একজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শায়বার আযাদকৃত গোলাম সালিম। উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারায় রাগের লক্ষণদেখতে পেয়ে বললেনঃ আমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করছি।
হাদিস ৬৭৯৪
মূসা (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-এর কাতিব (কেরানী) ওয়াররাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুআবিয়া (রাঃ) মুগীরা (রাঃ)-এর নিকট এ মর্মে লিখে পাঠালেন যে, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা কিছু শুনেছ তা আমাকে লিখে পাঠাও। তিনি বলেনঃ তিনি তাকে লিখলেন যে, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর বলতেনঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি একক! তার কোন শরীক নেই, সমরাজ্য কেবলমাত্র তারই, আর সকল প্রশংসা একমাত্র তারই জন্য, তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করবে তাকে ঠেকাবার মত কেউ নেই, আর তুমি যে বিষয়ে বাধা প্রদান করবে তা দেওয়ার মত কেউ নেই। ধন-প্রাচুর্য তোমার দরবারে প্রাচুর্বধারীদের কোনই উপকারে আসবে না। তিনি আরো লিখেছিলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তর্ক-বিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া, অধিক প্রশ্ন করা ও ধন-সস্পদ অনর্থক বিনষ্ট করা থেকে নিষেধ করতেন। আর তিনি মায়েদের অবাধ্যতা, কন্যা সন্তানদের জীবন্ত প্রোথিত করা ও প্রাপকের প্রাপ্য দিতে হাত গুটিয়ে নেওয়া এবং আদায়ের ব্যাপারে হাত বাড়িয়ে দেওয়া থেকে নিষেধ করতেন। আবূ আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ তারা (কাফের) জাহিলিয়াতের যুগে স্বীয়-কন্যাদেরকে হত্যা করতেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁআলা তা হারাম করে দেন।
হাদিস ৬৭৯৫
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা উমর (রাঃ)-এর কাছে (উপবিষ্ট) ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমাদের কৃত্রিমতা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
হাদিস ৬৭৯৬
আবূল ইযামান (রহঃ) ও মাহমূদ ইবনু গায়লান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। দ্বিপ্রহরের পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসলেন এবং যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি মিম্বরে উঠে দাঁড়ালেন এবং কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি উল্লেখ করলেন যে, কিয়ামতের পূর্বে অনেক বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হবে। তারপর তিনি বললেনঃ কেউ যদি আমাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে ভাল মনে করে, তাহলে সে তা করতে পাররে। আল্লাহর শপথ! আমি এখানে অবস্হান করা পর্যন্ত তোমরা আমাকে যে বিষয়েই জিজ্ঞাসা করবে, আমি তা তোমাদের অবহিত করব। আনাস (রাঃ) বলেনঃ এতে লোকেরা খুব কাদতে থাকল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বলতে থাকলেন। তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তখন এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার আশ্রয়স্থল কোথায়? তিনি বললেনঃ জাহান্নাম। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা (রাঃ) দাড়িয়ে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফা। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তারপর তিনি বার বার বলতে থাকলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর। তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। এতে উমর (রাঃ) হাটু গেড়ে বসে পড়লেন এবং বললেনঃ আমরা আল্লাহকে রব হিসাঁবে মেনে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মাদ -কে রাসুল হিসাবে বিশ্বাস করে সন্তুষ্ট আছি। আনাস (রাঃ) বলেনঃ উমর (রাঃ) যখন এ কথা বললেনঃ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উত্তম! যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, এইমাত্র আমি যখন সালাত (নামায/নামাজ) ছিলাম তখন এই দেয়ালের প্রস্হে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সন্মুখে পেশ করা হয়েছিল। আজকের ন্যায় এমন কল্যান ও অকল্যান আমি আর দেখিনি।
হাদিস ৬৭৯৭
মুহাম্মদ ইবনু আব্দুর রহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! কে আমার পিতা? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা অমুক। তারপর এই আয়াত অবতীর্ন হল (মহান আল্লাহর বানী) হে মুমিনরা! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করবে না, ষা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে (৫-১০১)।
হাদিস ৬৭৯৮
হাসান ইবনু সাববাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকেরা পরস্পরে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, ইনি (আল্লাহ) সবকিছুই স্রষ্টা, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করলেন?
হাদিস ৬৭৯৯
মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ ইবনু মায়মূন (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মদিনার এক শস্যক্ষেত্রে ছিলাম। তিনি একটি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে হাঁটছিলেন। এ। সময় ইহুদীদের একটি দলের নিকট দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন। তাদের কেউ বলল, তাকে রুহ (আত্না) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। আর কেউ বলল তাকে জিজ্ঞাসা করো না এতে তোমাদের অপছন্দনীয় উত্তর শুনতে হতে পারে। তারপর তারা তার কাছে উঠে গিয়ে বলল, হে আবূল কাসিম! আমাদের রুহ সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ দাড়িয়ে তাকিয়ে রইলেন। আমি বুঝতে পারলাম, তাঁর কাছে ওহী নাযিল হলে, আমি তার থেকে একটু পিছু সরে দাঁড়ালাম। ওহী অবতরণ শেষ হল। তারপর তিনি বললেনঃ (মহান আল্লাহর বানী): তোমাকে তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রুহ আমার! প্রতিপালকের আদেশ (১৭- ৮৫)।
হাদিস ৬৮০০
আবূ নুআয়ম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি স্বর্ণের আংটি বানিয়ে ছিলেন। (তার দেখাদেখি) লোকেরাও স্বর্নের আংটি বানিয়েছিল। এরপর (একদিন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি অব স্বর্ণের আংটি বানিয়ে ছিলাম- তারপর তিনি তা ছুড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেনঃ আমি আর কোন দিনই তা পরিধান করব না। ফলে লোকেরা তাদের আংটিগুলো ছুড়ে ফেলে দিল।
হাদিস ৬৮০১
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (ইফতার না করে) লাগাতার রোযা পালন করো না। সাহাবীরা বললেনঃ আপনি তো (ইফতার না করে) লাগাতার রোযা পালন করেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মতো নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার প্রভু আমাকে পানাহার করান। কিন্তু ডাঁরা লাগাতার রোযা পালন করা থেকে বিরত হল না। ফলে তাদের সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইদিন অথবা (বর্ণনাকারী বলেছিলেন) দু রাত লাগাতার রোযা পালন করেন। এরপর তারা (ঈদের) চাঁদ দেখতে পেলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি চাঁদ (আরও কয়েক দিন) দেরী করে উদিত হত, তাহলে আমিও (লাগাতার রোযা পালন করে) তোমাদের রোযার সময়কে দীর্ঘায়িত করতাম, যেন তিনি তাঁদের কাজকে পছন্দ করছেন না।
হাদিস ৬৮০২
উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) ইবরাহীম তায়মী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, একবার আলী (রাঃ) পাকা ইটে নির্ষিত একটি মিম্বরে আরোহণ করে আমাদের খুতবা পাঠ করলেন। তাঁর সঙ্গে একটি তরবারী ছিল, যার মাঝে একটি সহীফা ঝূলন্ত ছিল। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব এবং যা এই সহীফাতে লিপিবদ্ধ আছে এ ছাড়া অন্য এমন কোন কিতাব নেই যা পাঠ করা যেতে পারে। তারপর তিনি তা খুললেন। তাতে উটের বয়স সম্পর্কে লেখা ছিল এবং লেখা ছিল যে, ঁআয়র” (পর্বত) থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদিনা হারাম (পবিত্র এলাকা) বলে বিবেচিত হবে। যে কেউ এখানে কোন অন্যায় করবে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাকুল ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের অভিসস্পাত। আর আল্লাহ তাঁআলা তার ফরয ও নফল কোন ইবাদতই কবুল করবেন না এবং তাতে আরও ছিল যে, এখানকার সকল মুসলমানের নিরাপত্তা একই পর্যায়ের। একজন-নিম্ন পর্যায়ের ব্যাক্তিও (অন্য কাউকে) নিরাপত্তা দান করতে পারবে। যদি কোন ব্যাক্তি অপর একজন মুসলমানের প্রদত্ত নিরাপত্তাকে লংঘন করে, তাহলে তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাকুলের ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের লানত (অভিসস্পাত)। আল্লাহ তা’আলা তার ফরয ও নফল কোন ইবাদতই কবুল করবেন না। তাতে আরও ছিল, যদি কোন ব্যাক্তি তার (আযাদকারী) মনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে নিজের (গোলাম থাকাকালীন সময়ের) মনিব বলে উল্লেখ করে, তাহলে তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাকুলের ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ তা’আলা তার ফরয, নফল কোন ইবাদতই গ্রহণ করবেন না।
হাদিস ৬৮০৩
উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে একটি কাজ করলেন এবং তাতে তিনি অবকাশ দিলেন। তবে কিছু লোক এর থেকে বিরত রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ সংবাদ পৌছল। তিনি আল্লাহর হামদ ও ছানা পাঠ করলেন, তারপর বললেনঃ লোকদের কি হল যে, তারা এমন কাজ থেকে বিরত থাকে যা আমি নিজে করি আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহ সম্পর্কে তাদের থেকে অধিক জানি এবং আমি তাদের তূলনায় আল্লাহকে অধিক ভয় করি।
হাদিস ৬৮০৪
মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ইবনু আবূ মুহায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ দুইজন অতি ভাল লোক ধ্বংসের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলেন। তারা হলেন আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)। বনী তামীমের প্রতিনিধি দল যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে আসল, তখন তাদের একজন। উমর (রাঃ) আকরা ইবনু হাবিস হানযালী নামে বনী মুজাশে গোত্রের ভ্রাতা জনৈক ব্যাক্তির দিকে ইশারা করলেন, অপরজন আবূ বকর (রাঃ) অন্য আর একজনের প্রতি ইশারা করলেন। এতে আবূ বকর (রাঃ) উমর (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনার ইচ্ছা হল আমার বিরোধিতা করা। উমর (রাঃ) বললেনঃ আমি আপনার বিরোধিতার ইচ্ছা করিনি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তাঁদের দু’জনেরই আওয়াজ বুলন্দ হয়ে যায়। ফলে নিন্নোক্ত আয়াতটি) নাযিল হয়ঃ হে মুমিনগগ! তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উচু করবে না (৪৯- ২)। ইবনু আবূ মুলায়কা বলেনঃ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, এরপরে উমর (রাঃ) যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কোন কথা বলতেন, তখন গোপন বিষয়ের আলাপকারীর ন্যায় চুপেচুপে বলতেন, এমন কি তা শোনা যেত না, যতক্ষন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে পূনরায় জিজ্ঞাসা না করতেন। এ হাদীসের রাবী ইবনু যুবায়র তার পিতা অর্থাৎ নানা আবূ বকর (রাঃ) থেকে উল্লেখ করেননি।
হাদিস ৬৮০৫
ইসমাঈল (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অসুস্থতার সময় বললেনঃ তোমরা আবূ বকরকে বল, লোকদের নিয়ে যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম যে, আবূ বকর (রাঃ) যদি আপনার স্থানে দাঁড়ান তাহলে কান্নার কারনে মানুষকে তার আওয়াক্ত শুনতে পারবেন না। সূতরাং আপনি উমর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তিনি পূনরায় বললেনঃ তোমরা আবূ বকরকে বল, যেন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি হাফসা (রাঃ)-কে বললাম, তুমি বল যে, আবূ বকর আপনার জায়গায় দাড়ালে কান্নার কারনে লোকদের তার আওয়াজ শোনাতে পারবেন না। সুতরাং আপনি উমর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিন। তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। হাফসা (রাঃ) তাই করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তো ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর (বিভ্রান্তকারিনা) মহিলাদের ন্যায়। আবূ বকরকে বল, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। হাফসা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ)-কে বললেনঃ আমি আপনার কাছ থেকে কখনই ভাল কিছু পাওয়ার মত নই।
হাদিস ৬৮০৬
আদম (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উওয়ায়মির (রাঃ) আসিম ইবনু আদীর কাছে এসে বলল, আচ্ছা বলুন তো, যদি কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য কাউকে পায় এবং তাকে হত্যা করে ফেলে, তাহলে এর জন্য (কিসাস হিসাবে) আপনারা কি তাকে হত্যা করবেন? হে আসিম! আপনি আমার জন্য এ বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করুন যা তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহেন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাকে অপছন্দ করলেন এবং দূঃনিয় মনে করলেন। আসিম (রাঃ) ফিরে এসে তাকে জানাল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টিকে খারাপ মনে করেছেন। উওয়ায়মির (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি নিজেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যাব। তারপর তিনি আসলেন আসিম (রাঃ) চলে যাওয়ার পরেই আল্লাহ তা আলা কুরআন নাযিল করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা কুরআনের আয়াত নাযিল করেছেন। তিনি তাদের দু”জনকেই (সে ও তার স্ত্রী) ডাকলেন। তারা উপস্থিত হল এবং লিআন করল। তারপর উওয়ায়মির (রাঃ) বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আমি তাকে আটকিয়ে রাখি তাহলে তো আমি তার উপর মিথ্যা আরোপ করেছি, এ বলে তিনি তার সাথে বিবাহ বন্ধনকে ছিন্ন করলেন। অবশ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে বলেননি। পরে লিআন কারীদের মাঝে (বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার) এ প্রথাই প্রচলিত হয়ে পড়ে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মহিলাটি সম্পর্কে) বললেনঃ একে লক্ষ্য রেখ, যদি সে খাটো ওয়াহারার (এক জাতীয় পোকা) ন্যায় লালচে সন্তান প্রসব করে, তাহলে আমি মনে করব উওয়ায়মির মিথ্যাই বলেছে। আর যদি সে কাল চোখবিশিষ্ট ও অপেক্ষাকৃত বৃহৎ নিতম্বধারী সন্তান প্রসব করে, তাহলে মনে করব উওয়ায়মির তার সম্পর্কে সত্যই বলেছে। পরে সে অবাঞ্ছিত সন্তানই প্রসব করে।
হাদিস ৬৮০৭
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মালিক ইবনু আওস নাযরী (রহঃ) আমাকে এ হাদীসটি বর্ননা করেছেন। অবশ্য মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়র ইবনু মুতঈম এ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন। পরে আমি মালিকের নিকট যাই এবং তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তখন তিনি বলেনঃ উমর (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে তার দরবারে উপস্থিত হলাম। এমন সময় তার দাররক্ষক ইয়ারফা এসে বলল, উসমান, আব্দুর রহমান, যুবাইর এবং সা’দ (রাঃ) আসতে চাচ্ছেন। আপনার পক্ষ থেকে অনুমতি আছে কি? তিনি বললেন- হ্যা। তারপর তাঁরা প্রবেশ করলেন এবং সালাম দিয়ে আসন গ্রহণ করলেন। দাররক্ষক (পূনরায় এসে) বলল, আলী এবং আব্বাসের ব্যাপারে আপনার অনুমতি আছে কি? তিনি তাদের উভয়কে অনুমতি দিলেন। আববাস (রাঃ) এসে বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আমার ও সীমাংঘনবকারীর মাঝে ফায়সালা করে দিন। এবং তারা পরস্পরে গালমন্দ করলেন। তখন দলটি বললেনঃ উসমান ও তার সঙ্গীরা, হে আমীরুল মূমিনীন! এ দু-জনের মাঝে ফায়সালা করে দিয়ে -একজনকে অপরজন থেকে শাস্তি দিন। উমর (রাঃ) বললেনঃ আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন। আমি আপনাদেরকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি যার নামে আসমান ও যমীন স্বস্থানে বিদ্যমান, আপনারা কি এ কথা জানেন? যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ আমাদের সস্পদ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন হয় না, আমরা যা রেখে যাই তা সাদাকা হিসাবে গণ্য হয়। এ কথা দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকেই উদ্দেশ্য করেছিলেন। (আগত) দলের সকলেই বললেনঃ হ্যা তিনি এ কথা বলেছিলেন। তারপর উমর (রাঃ) আলী ও আব্বাস (রাঃ)-এর দিকে ফিরে বললেনঃ আপনাদের দুজনকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনারা কি জানেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছিলেন? তাঁরা দূজনেই বললেনঃ হ্যা। উমর (রাঃ) বললেনঃ আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা-আলা এই সম্পদের একাংশ তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন, অপর কারো জন্য দেওয়া হয়নি। এ মর্মে আল্লাহ তা-আলা ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ ইহুদীদের কাছ থেকে তার রাসুলকে যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি (৫৯- ৬)। সুতরাং এ সম্পদ একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। তারপর আল্লাহর কসম! তিনি আপনাদেরকে বাদ দিয়ে এককভাবে নিজের জন্য তা সষ্ণিত করে রাখেননি কিংবা এককভাবে আপনাদেরকেও দিয়ে দেননি। বরং তিনি আপনাদের সকলকেই তা থেকে প্রদান করেছেন এবং সকলের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে তা থেকে এই পরিমান সস্পদ অবশিষ্ট রয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সস্পদ থেকে তার পরিবার-পরিজনের জন্য তাদের বছরের খরচ দিতেন। এরপর যা অবশিষ্ট থাকত তা আল্লাহর মাল যে পথে ব্যয় হয় সে পথে ব্যয়ের জন্য রেখে দিতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় এরুপ করতেন। আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি! আপনারা কি এ সম্পর্কে অজ্ঞাত আছেন? সকলেই বললেনঃ হ্যা। তারপর আলী (রাঃ) ও আব্বাস (রাঃ) -কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদের দূজনকে জিজ্ঞাসা করছি! আপনারা কি এ সম্পর্কে জানেন? তারা দু-জনেই বললেনঃ হ্যা। এরপর আল্লাহ তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ওফাত দান করলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ-আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্থলাভিষিক্ত। অতএব তিনি সে সম্পদ অধিগ্রহণ করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে খাতে এ সম্পদ খরচ করতেন তিনিও হুবহু সেভাবেই খরচ করতেন। আপনারা তখন ছিলেন। তারপর আলী (রাঃ) ও আব্বাস (রাঃ)-এর দিকে ফিরে বললেনঃ আপনারা দু-জন তখনও মনে করতেন যে আবূ বকর (রাঃ) এ ব্যাপারে এরুপ ছিলেন। আল্লাহ জানেন এ ব্যাপারে সত্যবাদী, সৎপরায়ণ, ন্যায়নিণ্ঠ ও হকের অনুসারী ছিলেন। তারপর আল্লাহ তাআ’লা আবূ বকর (রাঃ)-কেও ওফাত দিলেন। তখন আমি বললাম, এখন আমি আবূ বকর ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং দুবছর আমি তা আমার তত্ত্বাবধানে রাখলাম এবং আবূ বকর (রাঃ) ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা যে খাতে ব্যয় করতেন, আমিও অনুরুপ করতে লাগলাম। তারপর আপনারা দু-জন আমার কাছে এলেন। আপনাদের দু-জনের একই কথা ছিল, দাবিও ছিল অভিন্ন। আপনি এসেছিলেন ম্বীয় ভ্রাতুষ্পূত্র থেকে নিজের অংশ আদায় করে নেওয়ার দাবি নিয়ে, আর ইনি (আলী) এসেছিলেন তাঁর স্ত্রীর পৈতৃক সুত্রে প্রাপ্ত অংশ আদায় করে নেওয়ার দাবি নিয়ে। আমি বললাম যদি আপনারা চান তাহলে আমি আপনাদেরকে তা দিয়ে দিতে পারি, তরে এ শর্তে যে, আপনারা আল্লাহর নামে এই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হবেন যে, এ সস্পদ রাসুলুলাহ ও আবূ বকর (বা) যে ভাবে ব্যয় করতেন এবং আমি এর দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর যেভাবে তা ব্যয় করেছি, আপনারাও অনুরুপভাবে ব্যায় করবেন। তখন আপনারা দু-জনে বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের হাতে অর্পণ করুন। ফলে আমি তা আপনাদের কাছে সোপর্দ করে দিয়েছিলাম। আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি! আমি কি সেই শর্তের উপর এদেরকাছে সে সম্পদ দিয়ে দেইনি? সকলেই বলল, হ্যা। তখন তিনি আলী (রাঃ) ও আব্বাস (রাঃ)-এর দিকে ফিরে বললেনঃ আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাদের দু-জনকে জিজ্ঞাসা করছি! আমি কি ঐ শর্তে আপনাদেরকে সে সস্পদ দিয়ে দেইনি? তারা দু-জন বললেনঃ হ্যা। তখন তিনি বললেনঃ আপনারা কি আমার কাছ থেকে এর ভিন্ন কোন মিমাংসা পেতে চান? সে সঁত্তার কসম করে বলছি, যার নির্দেশে আকাশ ও যমীন স্বস্থানে বিদ্যমান, কিয়ামতের পুর্বে আমি এ ব্যাপারে নতুন কোন মিমাংসা করব না। যদি আপনারা এর তত্ত্বাবধানে অক্ষম হন, তাহলে তা আমার নিকট দিয়ে দিন। আপনাদের দু-জনের স্থলে আমি একাই এর তত্ত্বাবধায়ের জন্য যথেষ্ট।
হাদিস ৬৮০৮
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মদিনাকে হারাম (সংরক্ষিত এলাকা) হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যা, অমুক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত। এ এলাকার কোন গাছ কাটা যাবে না, আর যে ব্যাক্তি এখানে বিদআত সৃষ্টি করবে। তার উপর আল্লাহ তা’আলা, ফেরেশতা ও সকল মানব সম্প্রদায়ের লানত। আসিম বলেনঃ আমাকে মূসা ইবনু আনাস বলেছেনঃ বর্ননাকারী ‘কিংবা বিদআত সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেয় বলেছেন।
হাদিস ৬৮০৯
সাঈদ ইবনু তালীদ (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) আমাদের এ দিক দিয়ে হাজ্জে (হজ্জ) যাচ্ছিলেন। আমি শুনতে পেলাম, তিনি বলছেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে ইল্ম দান করেছেন, তা হঠাৎ করে ছিনিয়ে নেবেন না বরং ইল্মের বাহক উলামায়ে কিরামকে তাদের ইল্মসহ ক্রমশ তুলে নেবেন। তখন শুধুমাত্র মূর্খ লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তাদের কাছে ফাতওয়া চাওয়া হবে। তারা মনগড়া ফাতওয়া দেবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। উরওয়া (রাঃ) বলেনঃ আমি এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) কে বললাম। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) পুনরায় হজ করতে এলেন। তখন আয়িশা (রাঃ) আমাকে বললেনঃ হে ভাগ্নে! তুমি আবদুল্লাহর কাছে যাও এবং তার থেকে যে হাদীসটি তুমি আমাকে বর্ণনা করেছিলে, তার সত্যাতা পূনরায় তাঁর নিকট থেকে যাচাই করে আস। আমি তার নিকট গেলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে ঠিক সে রুপই বর্ণনা করলেন, যেরুপ পূর্বে বর্ণনা করেছিলেন। আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে ফিরে এসে এ কথা জানালাম। তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং বললেনঃ আল্লাহর কসম! আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) ঠিকই স্বরণ রেখেছে।
হাদিস ৬৮১০
আবদান (রহঃ) আমাস (রহঃ) বলেন। আমি আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি সিফফীনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেনঃ হ্যা। মূসা ইবনু ইসমাঈল সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) বলেনঃ হে লোকেরা! দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের মনগড়া মতামতকে নির্ভরযোগ্য মনে করো না। কেননা আবূ জানো্দাল দিবসে (হুদায়বিয়ার দিবসে) আমার এমন মনে হচ্ছিল যে, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করতে পারতাম তাহলে অবশ্যই আমি তা প্রত্যাখ্যান করতাম। যে কোন ভয়ষ্কর যুদ্ধের জন্য আমরা যখনই তরবারী কাঁধে ধারণ করেছি, তখনই তরবারী আমাদের কাঙ্ক্ষিত লড়ার দিকে পথ সুগম করে দিয়েছে। বর্তমান বিষয়টি ম্বতস্ত্র। রাবী বলেনঃ আবূ ওয়ায়েল (রাঃ) বলেছেনঃ আমি সিফফীনের যুদ্ধে শরীক ছিলাম বড়ই মন্দ ছিল সিফফীনের লড়াই।
হাদিস ৬৮১১
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি অসুস্থ ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) আমাকে দেখতে এলেন। তাঁরা দূজনেই হেঁটে এসেছিলেন। তারা যখন আমার কাছে আসলেন, তখন আমি বেহুশ অবস্হায় ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং ওযুর পানি আমার উপর ঢেলে দিলেন। ফলে আমি হুশ ফিরে পেলাম। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! বর্ননাকারী সুফিয়ান কোন কোন সময় বলতেন হে আল্লাহর রাসুল, আমার সম্পদের ব্যাপারে কি ফায়সালা করব? আমার সম্পদগুলো কি করব? তিনি আমাকে কোন জবাব দিলেন না অবশেষে মীরাসের আয়াত নাযিল হল।
হাদিস ৬৮১২
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈকা মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার হাদীস তো কেবলমাত্র পূরুষ শুনভে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারন করে দিন, যে দিন আমরা আপনার নিকট আসব, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শিক্ষা দিবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক স্থানে সমবেত হবে। তারপর (নির্দিষ্ট দিনে) তাঁরা সমবেত হলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহতাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় (মৃত্যুবরণ করে) তাহলে এ সন্তানরা তার জন্য জাহান্নামের পথে অন্তরায় হয়ে যাবে। তাদের মাঝ থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি দু-জনহয়? বর্ণনাকারী বলেনঃ মহিলা কথাটি পরপর দুইবার জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দু-জন হলেও, দু-জন হলেও, দু-জন হলেও।
হাদিস ৬৮১৩
উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর হুকুম অর্থাৎ কিয়ামত আসা পর্যন্ত আমার উম্মাতের এক জামাআত সর্বদাই বিজয়ী থাকবে। আর তাঁরা হলেন (সেই দল যারা প্রতিপক্ষের উপর) প্রভাবশালী।
হাদিস ৬৮১৪
ইসমাঈল (রহঃ) মুআবিয়া ইরন আবূ সুফয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি তো (ইল্মের) বন্টনকারী মাত্র; আল্লাহ তা প্রদান করে থাকেন। এ উম্মাতের কর্মকাণ্ড কিয়ামত পর্যন্ত কিংবা বলেছিলেন, মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম আসা পর্যন্ত (সত্যের উপর) সুদৃঢ় থাকবে।
হাদিস ৬৮১৫
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এই আয়াতঃ বল, তিনি সক্ষম তোমাদের ঊধর্বদেশ থেকে শাস্তি প্রেরন করতে নাযিল হল, তখন তিনি বললেনঃ (হে আল্লাহ) আমি আপনার কাছে (এহেন আযাব থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা করি (তারপর যখন নাযিল হল) অথবা তোমাদের পায়ের নিচে থেকে। তখনও তিনি বললেনঃ (হে আল্লাহ) আমি আপনার নিকট (এছেন আযাব থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা করি। এরপর যখন অবতীর্ণ হলঃ অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে এবং একদলকে অপর দলের সংঘর্ষের স্বাদ গ্রহন করাতে তখন তিনি বললেনঃ এ দুটি অপেক্ষাকৃত নরম অথবা বলেছেন সহজ।
হাদিস ৬৮১৬
আসবাগ ইবনু ফারজ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক বেদূঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, আমার স্ত্রী একটি কালো সন্তান প্রসব করেছে। আর আমি তাকে (আমার সন্তান হিসাবে) অস্বীকার করছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি উট আছে? সে বলল হ্যা আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সেগুলোর কি রং? সে বলল, লাল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সেগুলোর মাঝে সাদা কালো মিশ্রিত রঙের কোন উট আছে কি? সে বলল, হ্যা, সাদা কালো মিশ্রিত রঙের অনেকগুলোই আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন এ রুং কি করে এল বলে তুমি মনে কর? সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! বর্নের পূর্ব সুত্রের প্রভাবে এরুপ হয়েছে। তিনি বললেনঃ সম্ভবত তোমার সন্তানও বংশের পূর্ব সূত্রের প্রভাবে এরুপ হয়েছে (অর্থাৎ পূর্বপূরুষের কারো বর্ণ কালো ছিল বলে এ সন্তান কালো হয়েছে) এবং তিনি এ সন্তানকে অস্বীকার কবার অনুমতি তাকে দিলেন না।
হাদিস ৬৮১৭
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈকা মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, আমার মাতা হাজ্জ (হজ্জ) কবার মানত করেছিলেন। এরপর তিনি হাজ্জ (হজ্জ) কবার পুর্বেই মৃত্যু বরণ করেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে দেব? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যা, তার পক্ষ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে দাও। মনে কর যদি তার উপর ঝণ থাকত তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে? সে বলল, নিশ্চয়ই। তিনি বললেনঃ অতএব তার উপর যে মানত রয়েছে তা তুমি আদায় করে দাও। আল্লাহ তাআলা অধিক হকদার, তার মানত পূর্ণ করার।
হাদিস ৬৮১৮
শিহাব ইবনু আব্বাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু-এরকম লোক ছাড়া কারো প্রতি ঈর্ষা করা বৈধ নয়। (এক) যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দিয়েছেন এবং ন্যায়পথে ব্যয় করার ক্ষমতা দান করেছেন। (দুই) যাকে আল্লাহ তা’আলা হিকমাত (শরয়ী বিচক্ষণতা) দান করেছেন, আর সে এর আলোকে বিচার করে এবং তা অপরকে শিক্ষা দেয়।
হাদিস ৬৮১৯
মুহাম্মাদ (রহঃ) মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উমর (রাঃ) মহিলাদের গর্ভপাত সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন অর্থাৎ তার পেটে আঘাত কবা হয় যার ফলে সন্তানের গর্ভপাত ঘটে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে কিছু শুনেছ। আমি বললাম আমি শুনেছি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি শুনেছ? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ ব্যাপারে আমি বলতে শুনেছি যে, এ কারণে শুরু রা অর্থাৎ একটি দাস কিংবা দাসী প্রদান করতে হবে। এ শুনে তিনি বললেনঃ তুমি যে হাদীস বর্ণনা করেছ এর প্রমাণ উপস্থিত না করা পর্যন্ত তুমি এখান থেকে যেও না। তারপর আমি বের হলাম এবং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ)-কে পেলাম। আমি তাকে নিয়ে উপস্থিত হলাম, সে আমার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করল যে, তিনিও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, এতে শুরু রা অর্থাৎ একটি গোলাম কিংবা বাঁদী প্রদান করতে হবে। ইবনু আবূ যিনাদ মুগীরা (রাঃ) থেকে অনুরুপ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
No comments: