Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ খবরে ওয়াহিদ অধ্যায় (৬৭৫২-৬৭৭১)



 হাদিস ৬৭৫২

মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলাম। আমাদের সকলেই সমবয়সী যুবক ছিলাম। আমরা বিশ রাত পর্যন্ত তাঁর কাছে অবস্হান করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি যখন অনুমান করতে পারলেন যে আমরা আমাদের স্ত্রী-পরিজনের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছি, কিংরা আসক্ত হয়ে পড়েছি তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমরা বাড়িতে কাদেরকে রেখে এসেছি। আমরা তাকে অবহিত করলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মাঝে অবস্থান কর, আর তাদেরকে (দ্বীন) শিক্ষা দিও। আর তাদের নির্দেশ দিও। তিনি (মালিক) কতিপয় বিষয়ের উল্লেখ করেছিলেন, যা আমি স্বরণ রেখেছি বা রাখতে পারিনি। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছিলেন) তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখছ সেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উপস্থিত হয়, তখন যেন তোমাদের কোন একজন তোমাদের উদ্দেশ্যে আযান দেয়, আর তোমাদের মধ্যে যে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।

হাদিস ৬৭৫৩

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে স্বীয় সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না করে। কেননা, সে আযান দিয়ে থাকে, কিংবা বলেছিলেন ঘোষনা দিয়ে থাকে, তোমাদের যারা সালাত (নামায/নামাজ) বিরত হচ্ছিল তারা যেন সালাত (নামায/নামাজ) থেকে বিরত হয় এবং যারা ঘুমিয়েছিল তারা যেন জাগ্রত হয়। এরুপ হলে ফজর হয় না- এই বলে ইয়াহইয়া উভয় হাতের তালুদ্বয়কে একত্রিত করলেন (অর্থাৎ আলো আকাশের দিকে দীর্ঘ হলে) বরং এরুপ হলে ফজর হয়, এ বলে ইয়াহইয়া তার দুই তর্জনীকে ডানে-বামে প্রসারিত করলেন অর্থাৎ ভোরের আলো পূর্বাকাশে উত্তরে দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়লে)।

হাদিস ৬৭৫৪

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ বিলাল (রাঃ) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকে, অতএব তোমরা পানাহার করতে পার যতক্ষন না ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) আযান দেয়।

হাদিস ৬৭৫৫

হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) পড়তে পাচ রাকাত আদায় করলেন। তাকে বলা হল সালাত (নামায/নামাজ) কি বর্ধিত করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? তারা বললেনঃ আপনি পাঁচ রাকাত আদায় করেছেন। তখন তিনি সালাম শেষে দুটো সিজদা (সিজদায়ে সাহু) দিলেন।

হাদিস ৬৭৫৬

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইরাকাত আদায় করেই সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে দিলেন। তখন যুল ইয়াদাইন (রাঃ) তাকে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ , সালাত (নামায/নামাজ) কি সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন। তিনি বললেনঃ যুল ইয়াদাইন কি সত্য বলছে? লোকেরা বলল, হ্যা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং অবশিষ্ট দুঁরাকাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং তাকবীর বলে পূর্বের সিজদার ন্যায় কিংবা তার চেয়ে দীর্ঘ করে সিজদা করলেন এবং মাথা উঠালেন, তারপর আবার তাকবীর বলে পূর্বের ন্যায় সিজদা করলেন ও মাথা উঠালেন।

হাদিস ৬৭৫৭

ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্গিত। তিনি বলেনঃ লোকেরো কুবার মসজিদে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলেন, এমন সময় একজন আগন্তুক এসে বলল, (গত) রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর কুরআন অবতীর্ণ -করা হয়েছে এবং কাঁবাকে কিবলা বানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূতরাং তোমরা কাবা-এর দিকে মুখ করে দাড়াও। তখন তাদের চেহারা ছিল সিরিয়ার দিকে, তারপর তারা কাবার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।

হাদিস ৬৭৫৮

ইয়াহইয়া (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করেন, তখন যোল অথবা সতের মাস বায়তূল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর তিনি কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তারপর আল্লাহ নাযিল করলেন: আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্যই লক্ষ করছি। সুতরাং তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি যা তুমি পছন্দ কর। (২-১৪৪) তখন তাঁকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আর তারসাথে এক ব্যাক্তি আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিল। এরপর সে বেরিয়ে এক সম্প্রদায়ের কাছ দিয়ে গমন করল এবং সে সাক্ষ্য দিয়ে বলল যে সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে এসেছে আর কিবলা কাবার দিকে ফিরিয়ে দেওয় হয়েছে। তখন তারা দিক পরিবর্তন করলেন। এ সময় তাঁরা আসরের সালাত (নামায/নামাজ) রুকু অবস্থায় ছিলেন।

হাদিস ৬৭৫৯

ইয়াহইয়া ইবনু কাযাআ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ তালহা আনসারী, আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ ও উবাই ইবনু কাবকে আধাপাকা খেজুরের তৈরি সালাব পরিবেশন করতাম। তখন তাদের কাছে একজন আগন্তুক এসে বলল, নিঃসন্দেহে শরাব হারাম করে দেওয়া হয়েছে। আবূ তালহা (রাঃ) বললেনঃ হে আনাস! তুমি গিয়ে এ মটকাগুলো ভেঙ্গে ফেল। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি উঠে গিয়ে আমাদের ঘটি দিয়ে তার তলায় আঘাত করলাম আর তা ভেঙ্গে গেল।

হাদিস ৬৭৬০

নূনায়মান ইবনু হারব (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজরানের অধিবাসীদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমি তোমাদের জন্য এমন-একজন লোক পাঠাব, যিনি সস্পূর্ণরুপে বিশ্বস্ত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীরা এর জন্য প্রতীক্ষা করছিলেন। পরে তিনি আবূ উবাদাকে পাঠালেন।

হাদিস ৬৭৬১

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক উম্মাতের মাঝে একজন বিশ্বস্ত লোক থাকে আর এ উম্মাতের বিশ্বস্ত ব্যাক্তিটি হল আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ)।

হাদিস ৬৭৬২

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ জনৈক আনসারী সাহাবী ছিলেন, তিনি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে অনুপস্থিত থাকতেন আমি তার কাছে উপস্থিত থাকতাম। তাহলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এখানে যা কিছু ঘটত তা আমি তাকে বর্ণনা করতাম। আর যদি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুপস্থিত থাকতাম আর তিনি উপস্থিত থাকতেন, তাহলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে যা কিছু ঘটত তিনি এসে তা আমাকে বর্ণনা করতেন। 

 হাদিস ৬৭৬৩

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করোব যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ক্ষুদ্র সেনাদল প্রেরণ করলেন এবং এক ব্যাক্তিকে তাদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তিনি (আমীর) অগ্নিকুণ্ড প্রজ্জলিত করে বললেনঃ তোমরা এতে প্রবেশ কর। কতিপয় লোক (আমীরের আনুগত্যের মানসে) তাতে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। এ সময় অন্যরা বলল, আমরা তো (ইসলাম গ্রহণ করে) আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে চেয়েছি। পরে তারা এ ঘটনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ব্যক্ত করলেন। তখন তিনি যারা আগুনে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ যদি তারা তাতে প্রবেশ করত তাহলে কিয়ামত পর্যন্তই সেখানে থাকত। আর অন্যদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কোনরুপ আনুগত্য নেই। আনুগত্য করতে হবে কেবলমাত্র বৈধ কাজে।

হাদিস ৬৭৬৪

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) বর্ননা করেন যে দু-ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট-একটি মুকাদ্দামা দায়ের করল। তবে আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এ বর্ননায় উল্লেখ করা হয় যে, তিনি (আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ- আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় একজন বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহ তাঁআলার কিতাব অনুসারে আমার (বিচারের) ফায়সালা করে দিন। তখন তার প্রতিপক্ষ দাড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি ঠিকই বলেছেনঃ, আল্লাহর কিতাব অনুসারে তার ফায়সালা করে দিন। এবং (অনুগ্রহ করে) আমাকে বলার অনুমতি দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি বল। তখন সে বলল, আমার ছেলে এ লোকটির বাড়িতে মজুর ছিল। বর্ণনাকারী বলেনঃ হাদীসে উক্ত। ‘আসিফু’ শব্দটি শ্রমিকের অর্থে ব্যবহত হয়েছে। সে ছেলে এ লোকের স্ত্রীর সাথে যিনায় লিপ্ত হয়। কতিপয় লোক আমাকে বলল যে, আমার ছেলের উপর ‘রজমঁ’ (প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা)-এর বিধান কার্যকর হবে। তখন আমি আমার ছেলের মুক্তিপণ হিসাবে সেই মহিলাকে) একশ বকরী ও একটি দাসী দেই। এরপর আমি আলেমদের নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি। তাঁরা আমাকে বললেনঃ যে, তাঁর স্ত্রীর উপর ঁরজম-এর হুকুম অবধারিত। আর আমার ছেলের জন্য রয়েছে একশ- বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তরের হুকুম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, অবশ্যই আমি তোমাদের দু-জনের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করব। বকরী ও বাঁদী ফিরিয়ে নাও, আর তোমার ছেলের উপর একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তরের হুকুম কার্যকর হবে। এরপর তিনি আসলাম গোত্রের জনৈক ব্যাক্তিকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে উনায়স! তুমি এর স্ত্রীর নিকট যাও, যদি সে স্বীকার করে তাহলে তাকে “রজম’ করো। উনায়স সেই স্ত্রীলোকটির নিকট গেলেন, সে স্বীকার করল তখন তিনি তাকে রজম করলেন।

হাদিস ৬৭৬৫

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, খন্দকের যুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে আহবান জানালেন। যুবায়র (রাঃ) তাঁর আহবানে সাড়া দিলেন। তিনি আবার আহবান জানালেন। এবারও যুবায়র (রাঃ) সাড়া দিলেন। তিনি পুনরায় আহবান জানালেন। এবারেও যুবায়র (রাঃ) সাড়া দিলেন। তিনবার এরুপ হওয়ার পর তিনি বললেনঃ প্রত্যেক নাবী এর একজন হাওয়ারী (সাহায্যকারী) থাকে, আর যুবায়র হল আমার হাওয়ারী। সুফিয়ান (রহঃ) বলেনঃ আমি এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইবনু মুনকাদির থেকে হিফয করেছি। একবার আইউব তাকে বললেনঃ হে আবূ বকর (রাঃ), আপনি জাবির (রাঃ)-এর হাদীস বর্ণনা করুন। কেননা, লোকদের নিকট জাবির (রাঃ) কর্তৃক বর্নিত হাদীস খুবই পছন্দনীয়। তখন তিনি সে মজলিসে বললেনঃ আমি জাবির (রাঃ) থেকে শুনেছি। এ বলে তিনি ধারাবাহিক অনেক হাদীস বর্ননা করলেন, যেগুলো আমিও জাবির (রাঃ) থেকে শুনছি। আমি সুফিয়ানকে বললাম যে, সাওরী বলেছেন যে, সেটা ছিল বনূ কুরায়যার যুদ্ধের দিন। তিনি বললেনঃ তুমি যেমন আমার কাছে বসা, ঠিক তেমনি কাছে বসে আমি মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির থেকে হিফয করেছি যে, সেটি ছিল খন্দকের দিন। সুফিয়ান বলেনঃ এটা একই দিন। তারপর তিনি মুচকি হাসি দিলেন।

হাদিস ৬৭৬৬

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাগানে প্রবেশ করলেন এবং আমাকে দরজায় পাহাবাদারী করার জন্য নির্দেশ দিলেন। এক লোক এসে প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের খোশখবরী দাও। তিনি ছিলেন আবূ বকর (রাঃ)। তারপর উমর (রাঃ) আসলেন। তিনি বললেনঃ তাকেও অনুমতি দাও এবং জান্নাতের খোশখবরী দাও। তারপর উসমান (রাঃ) আসলেন। তিনি বললেনঃ তাকেও অনুমতি দাও এবং জান্নাতের খোশখবরী দাও।

হাদিস ৬৭৬৭

আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আসলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দ্বিতল কক্ষে অবস্হানরত ছিলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কৃষ্ণকায় গোলামটি দরজার সন্মুখে দাড়ানো। আমি তাকে বললাম, তুমি বল এই উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এসেছে। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।

হাদিস ৬৭৬৮

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পারস্য সমরাট) কিসরার নিকট তারচিঠি পাঠালেন। তিনি ডেকে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, সে যেন এ টিঠি নিয়ে বাহরাইনের শাসনকর্তার নিকট দেয়। আর বাহরাইনের শাসনকর্তা যেন তা (সমরাট) কায়সারের নিকট পৌছিয়ে দেয়। কায়সার এ চিঠি পাঠ করার পর তা টুকরা টুকরা করে ফেলল। ইবনু শিহাব বলেন আমার ধারণা ইবনু মূসা ইয়্যেব বলেছেনঃ যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি বদ দোয়া করেছিলেন, তাদেরকেও আল্লাহ তায়ালা পূর্নরুপে টুকরা টুকরা করে দেন।

হাদিস ৬৭৬৯

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন আসলাম কবীলার এক ব্যাক্তিকে বললেনঃ তোমার গোত্রে ঘোষনা কর কিংবা বলেছিলেনঃ লোকের মাঝে ঘোষণা কর যে, যারা আহার করে ফেলেছে তারা যেন অবশিষ্ট দিন পূর্ন করে, আর যারা আহার করেনি তারা যেন রোযা পালন করে।

হাদিস ৬৭৭০

আলী ইবনু জাদ (রহঃ) ও ইসহাক (রহঃ) আবূ জামরা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি-বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে তার খাটে বসাতেন। তিনি আমাকে বললেনঃ আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদল যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসল। তিনি। বললেনঃ এ কোন প্রতিনিধিদল? তারা বলল, আমরা রাবীআ গোত্রের। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গোত্র ও তার প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ, যারা অপমানিত হয়নি এবং লজ্জিতও হয়নি। তারা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার ও আমাদের মাঝে মুদার গোত্রের কাফেররা (প্রতিবন্ধক) রয়েছে। সুতরাং আমাদের এমন নির্দেশ দিন, যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি এবং আমাদের পরবর্তীদেরকেও অবহিত করতে পারি। তারা পানীয় দ্রব্য সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল। তিনি তাদের চারটি বিষয় থেকে বারণ করলেন এবং চারটি বিষয়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি তাদের আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান কি তোমরা জানো? তারা বলল, আল্লাহ ও তার রাসুলই অধিক জানেন। তিনি বললেনঃ এ মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল এবং সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় তাতে রোযার কথাও ছিল। আর গনীমতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ প্রদান কর এবং তিনি তাদের (লাউয়ের খোলস থেকে তৈরি পাত্র)- হানতাম (মাটির সবুজ রঙের পাত্র), মুযাফফাত তৈলাত্ত পাত্র বিশেষ), নাফীর (কাঠের খোদাই করা পাত্র) থেকে নিষেধ করলেন। কোন কোন বর্ননায় নাফীর -এর স্থলে মুকাইয়ার- শব্দের উল্লেখ রয়েছে। এবং তিনি তাদের বললেনঃ এ কথাগুলো ভাল করে মনে রেখ এবং তোমাদের পিছনে যারা রয়েছে তাদের নিকট পৌছিয়ে দিও।

হাদিস ৬৭৭১

মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) তাওবা আনবারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ শাবী আমাকে বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাসান (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের (সংখ্যাধিক্যের) বিষয়টি কি দেখতে পাচ্ছো না? অথচ আমি ইবনু উমর (রাঃ)-এর সাথে দুইবছর কিংবা দেড় বছর অবস্হান করেছি। কিন্তু তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদীসটি ছাড়া অন্য কোন হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি। তিনি বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের মাঝে কতিপয় ব্যাক্তি সমবেত ছিলেন, তাদের মাঝে সা’দও ছিলেন, তারা গোশত খাচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুদঁই-এর সহধর্মিনাদের কেউ তাদের ডেকে বললেনঃ যে, এটা গুই সাপের গোশত। তারা (আহার থেকে) বিরত রইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খাও বা আহার কর, এটা হালাল। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ এটা (খেতে) কোন অসুবিধা নেই। তবে এটা আমার খাদ্য নয়। 


No comments:

Powered by Blogger.