বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন (৬৮২০-৬৮৬৭)
হাদিস ৬৮২০
আহমাদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন না আমার উম্মাত পূর্বপূরুষদের আচার-অভ্যাসকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে গ্রহন না করবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! পারস্য ও রোমকদের মত কি? তিনি বললেনঃ লোকদের মধ্যে আর কারা? এরাই তো।
হাদিস ৬৮২১
মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ নিশ্চটয় তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের আচার-আচরণকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরন করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও এতে তাদের অনূকরন করবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ এরা কি ইহুদি ও নাসারা? তিনি বললেনঃ আর কারা?
হাদিস ৬৮২২
হুমায়দী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন ব্যাক্তিকেই অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, তার পাপের হিস্যা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রথম (হত্যাকারী) পূত্রের উপরও বর্তাবে। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) তার রক্তপাত ঘটানোর অপরাধ তার উপরেও বর্তাবে উল্লেখ করেছেন। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার রীতি প্রবর্তন করে।
হাদিস ৬৮২৩
ইসমাঈল (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ সালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ইসলামের উপর বায়-আত গ্রহণ করল। এরপর সে মদিনায় জ্বরে আক্রান্ত হল। বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। পূনরায় সে এসে বলল, আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্বকৃতি জানালেন। এরপর সে আবার এসে বলল, আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। এবারও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্বীকৃতি জানালে বেদুঈন বেরিয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনা হয়েছে কামারের হাপরের মত। সে তার মধ্যকার-আবর্জনাকে বিদূরিত করে এবং খাঁটিটুকু ধরে রাখে।
হাদিস ৬৮২৪
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-কে পবিত্র কুরআনের তালীম দিতাম। উমর (রাঃ) যখন জীবনের সর্বশেষ হাজ্জ (হজ্জ) পালন করতে আসলেন, তখন আবদুর রহমান (রাঃ) মিনায় আমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি আজ আমীরুল মুমিনীনদের নিকট থাকলে দেখতে পেতে যে, তার কাছে এক ব্যাক্তি এসে বলল, জনৈক ব্যাক্তি বলেছে, যদি আমীরুল মুমিনীন মারা যেতেন, তাহলে আমরা অমুক ব্যাক্তির হাতে বায়-আত নিতে পারতাম। উমর (রাঃ) বললেন, আজ বিকেলে দাঁড়িয়ে আমি তাদেরকে সতর্ক করব, যারা মুসলমানদের অধিকারকে ছিনিয়ে নিতে চায় আমি বললাম, আপনি এটি করবেন না। কেননা, এখন হাজ্জের (হজ্জ) মৌসুম। এখন সাধারন লোকের উপস্থিতির সময়। তারা আপনার মজলিসকে ঘিরে ফেলবে। আমার ভয় হচ্ছে যে, তারা আপনার বক্তব্য যথাযথভাবে অনুধাবন করবে না। রদবদল করে চারদিকে ছড়িয়ে দেবে। বরং এখন আপনি হিজরত ও সুন্নাতের আবাসগৃহ মদিনায় পৌছা পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন। এরপর একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুহাজির ও আনসার সাহাবাদের নিকট আপনার বক্তব্য পেশ করুন। তারা আপনার বক্তব্য সংরক্ষণ করবে এবং তার যথাযথ মর্যাদা প্রদান করবে। উমর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি মদিনায় পৌছলে সবচেয়ে আগে এটি করব। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমরা মদিনায় উপিস্থিত হলাম। তখন উমর (রাঃ) ভাষণ প্রসঙ্গে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ -কে সত্য বানী দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। তন্মধ্যে ‘রজম’ (তথা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা)-এর আয়াতও রয়েছে।
হাদিস ৬৮২৫
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকটে ছিলাম। তিনি লাল রঙের দুটি কাতান পরিহিত ছিলেন। এরপর তিনি নাক পরিষ্কার করলেন এবং বললেনঃ বাহ! বাহ! আবূ হুরায়রা আজ কাতান দ্বারা নাক পরিস্কার করছে। অথচ আমি এমন অবস্হায়ও ছিলাম, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বর ও আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার মধ্যবর্তী স্থানে বেহুশ অবস্হায় পড়ে থাকতাম। আগন্তুক আসত, তার স্বীয় পা আমার গর্দানে রাখত! মনে হতো আমি যেন পাগল। অথচ আমার কিঞ্চিতও পাগলামী ছিল না। একমাত্র ক্ষুধার যন্ত্রণায় এমনটি হত।
হাদিস ৬৮২৬
মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু আবিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি-কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কোন ঈদে অংশ গ্রহণ করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যা। যদি তার দরবারে আমার বিশেষ একটা অবস্হান না থাকত তবে এত অল্প বয়সে তার সাথে যোগদানের সুযোগ পেতাম না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাসীর ইবনু সালতের বাতির নিকটস্থ স্হানের পতাকার কাছে তশরীফ আনলেন। এরপর ঈদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি ভাষণ প্রদান করলেন। রাবী আযান এবং ইকামত-এর উল্লেখ করেননি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রোতাদেরকে সাদাকা আদায়ের হুকম করলেন। নারীরা স্বীয় কান ও গলার (অলংকার) দিকে ইঙ্গিত করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) -কে (তাদের কাছে যাওয়ার জন্য) নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রাঃ) (তাদের নিকট থেকে অলংকারাদি নিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে এলেন।
হাদিস ৬৮২৭
আবূ নূআয়ম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে মসজিদে কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো সাওয়ার হয়ে আসতেন।
হাদিস ৬৮২৮
উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে বললেনঃ আমার মৃত্যুর পর আমাকে আমার অন্যান্য সঙ্গিনী (উম্মাতুল মুমিনীন)-দের সাথে দাফন করবে। আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে হুজরায় দাফন করবে না। কেননা তাতে আমাকে প্রাধান্য দেয়া হবে, আমি তা পছন্দ করি না। বর্ণনাকারী হিশাম তার পিতা উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠালেন, আমাকে আমার সঙ্গী তথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে দাফন হওয়ার অনুমতি দিন। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ হ্যা। আল্লাহর কসম! বর্ণনাকারী আরো বলেনঃ আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট যখনই সাহাবাদের কেউ এই অনুমতির জন্য কাউকে পাঠাতেন, তখনি তিনি বলতেন, না। আল্লাহর কসম! আমি তাদের সঙ্গে কাউকে প্রাধান্য দেব না।
হাদিস ৬৮২৯
আইউব ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর আমরা আওয়ালীঁ (মদিনার পার্শে উচ্চ টিলাবিশিষ্ট স্হান) যেতাম। তখন সূর্য উপরে থাকত। বর্ণনাকারী লায়স: ইউনূস (রহঃ) হতে আরো বর্ননা করেছেন যে, -আওয়ালীঁ মদিনা হতে চার অথবা তিন মাইল দুরে অবস্হিত।
হাদিস ৬৮৩০
আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যেগের সাঁ তোমাদের বর্তমানের এক মুদ ও এক মুদের এক-তৃতীয়াংশের বরাবর ছিল। অবশ্য (পরবর্তীকালে) তা বৃদ্ধি পেয়েছে (উক্ত হাদীসটি) কাসিম ইবনু মালিক (রহঃ) যুআয়দ (রহঃ) থেকে শুনেছেন।
হাদিস ৬৮৩১
আবদুল্লাহ ইবনু মাসালামা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে দোয়া করেছেনঃ হে আল্লাহ! মদিনাবাসীদের পরিমাপে বরকত দান করুন, বরকত দান করুন তাদের সা- এবং মুদে।
হাদিস ৬৮৩২
ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইহুদীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে এক ব্যভিচারী পুরুষ এবং এক ব্যভিচারিনা মহিলাকে নিয়ে উপস্থিত হল। তখন তিনি তাদের উভয়কে শাস্তি দানের হুকুম দিলে মসজিদে নববীর জানাযা রাখার নিকটবর্তী স্থানে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপ (রজম) করে মারা হয়।
হাদিস ৬৮৩৩
ইসমাঈল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা (পথিমধ্যে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড় দেখতে পেয়ে বললেনঃ এই পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে আর আমরাও এই পাহাড়কে ভালবাসি। হে আল্লাহ! ইবরাহীম(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কাকে হারামের মর্যাদা প্রদান করেছেন, আর আমি এই মদিনার দুঁটি প্রস্তরময় প্রান্তের মধ্যবর্তী স্হানকে সেই মর্যাদা প্রদান করছি। উহুদের বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদীস বর্ণনায় সাহাল (রাবী) আনাস (রাঃ) -এর অনুসরণ করেছেন।
হাদিস ৬৮৩৪
ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মসজিদে নববীর কিবলার দিকের প্রাচীর ও মিম্বরের মধ্যে মাত্র একটি বকরী যাতায়াতের স্হান ছিল।
হাদিস ৬৮৩৫
আমর ইবনু আলী (রহঃ) আবূ হুরাহারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার গৃহ ও আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্হান বেহেশতের বাগানগুলোর থেকে একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাওযের উপর।
হাদিস ৬৮৩৬
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। তীব্র গমনের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াগুলোর প্রতিযোগিতার স্হান ছিল হাফয়া হতে সানীয়্যাতুল বিদা পর্যন্ত। আর প্রশিক্ষণ বিহীনগুলোর স্থান ছিল সানীয়্যাতূল বিদা হতে বনী বুরায়ক-এর মসজিদ-পর্যন্ত। আবদুল্লাহও প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনকারীদের অন্তভুক্ত ছিলেন।
হাদিস ৬৮৩৭
ইসহাক (রহঃ) ইবনু উমর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বরে দাড়িয়ে (খুতবা দিতে) শুনেছি।
হাদিস ৬৮৩৮
আবূল ইয়ামান (রহঃ) সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে শুনেছি।
হাদিস ৬৮৩৯
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোসল করার জন্য এই পাত্রটি রাখা হত। আমরা সকলে এর থেকে গোসল করতাম।
হাদিস ৬৮৪০
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার ও মুহাজিরদেরকে আমার মদিনার বাড়িতে সম্প্রিতির বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন এবং বনী সুলায়মের গোত্রের জন্য বদদোয়া করার নিমিত্ত এক মাস কাল যাবত তিনি (ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)) কুনূত (নাযিলা)পড়েছেন।
হাদিস ৬৮৪১
আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মদিনায় আগমন করলে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আমাকে বললেনঃ চলুন ঘরে যাই। আমি আপনাকে এমন একটি পাত্রে পান করাবো, যেটিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করেছেন। আপনি ঐ সালাত (নামায/নামাজ)-এর জায়গাটিতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবেন, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন। এরপর আমি তার সঙ্গে গেলাম। তিনি আমাকে ছাতূর শরবত পান করালেন এবং খেজুর খাওয়ালেন। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের স্থানটিতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিলাম।
হাদিস ৬৮৪২
সাঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ আকীক নামক স্থানে অবস্হানকালে এক রাতে আমার পরওয়ারদিগারের নিকট থেকে একজন আগন্তুক (ফেরেশতা) আমার কাছে এলেন। তিন বললেনঃ এই বরকতময় প্রান্তরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করুন এবং বলুন উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) নিয়ত করছি। এদিকে হারুন ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) বলেনঃ আলী (রাঃ) আমার কাছে হতের সাথে উমরার নিয়ত করুন শব্দ বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৬৮৪৩
মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীকাত নির্ধারণ করেছেন নজদবাসীদের জন্য কারনকে সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফাকে এবং মদিনাবাসীদের জন্য যুল হুলায়ফাকে ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ আমি এগুলো (স্বয়ং) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আমার কাছে আরো সংবাদ পৌছেছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়ামানবাসীদের মীকাত হচ্ছে ইয়ালামলাম এবং ইরাকের কথা উল্লেখ করা হলে ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ তখন তো ইরাক ছিল না।
হাদিস ৬৮৪৪
আব্দুর রহমান ইবনু মুবারাক (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি যুল হুলায়ফা নামক স্থানে রাতের শেষ প্রহরে অবস্হানকালে তাকে বলা হলো আপনি একটি বরকতময় স্থানে রয়েছে।
হাদিস ৬৮৪৫
আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেযে রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় বলতে শুনেছেন, (হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আপনারই জন্য। তিনি আরো বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি অমুক অমুক ব্যাক্তির প্রতি লানত করুন। এরপর আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতখানা অবতীর্ন করেনঃ (হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )চুড়ান্তভাবে কোন কিছুর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দারিত্ব আপনার হাতে নেই। আল্লাহ হয়ত তাদেরকে তাওবার তাওফীক দিবেন নয়ত তাদেরকে শান্তি দিবেন। কেননা তারা সীমালংঘনকারী।
হাদিস ৬৮৪৬
আবূল ইয়ামান ও মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এবং রাসুল-কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-এর নিকট আসলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ কি? আলী (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের জীবন তো আল্লাহর হাতে। তিনি আমাদেরকে যখন (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ঘুম থেকে) জাগিয়ে দিতে চান, জাগিয়ে দেন। আলী (রাঃ)-এর এ কথা বলার সাথে সাথেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন, আলীর কথার কোন প্রতিউত্তর তিনি আর দিলেন না। আলী (রাঃ) বলেনঃ আমি শুনতে পেলাম, তিনি চলে যাচ্ছে, আর ঊরুতে হাত মেরে মেরে বললেনঃ মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়। আবূ আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ তোমার কাছে রাতে যে আগন্তুক আসে তাকে ঁতাবিক- বা নৈশ অতিথি বলে। তারিক- একটি নক্ষত্রকেও বলা হয়। আর ছাকিব অর্থ হল জ্যোতিষ্মান। এইজন্যই আগুন যে জালায় তাকে লক্ষ্য করে সাধারণত বলা হয়ে থাকে, তুমি আগুন জালিয়ে তোল।
হাদিস ৬৮৪৭
কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা মসজিদে নববীতে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ থেকে বের হয়ে আমাদেরকে বললেনঃ তোমরা চলো ইহুদীদের সেখানে যাই। আমরা তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে এলাম। অবশেষে আমরা বায়তুল মিদরাসে (তাদের শিক্ষাগারে) পৌছলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাড়িয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবুল কর, এতে তোমরা নিরাপদে থাকবে। ইহুদীরা বলল, হে আবূল কাসিম! আপনার পৌছানোর দায়িত্ব আপনি পালন করেছেন। এরপর তিনি বললেনঃ আমার ইচ্ছা তোমরা ইসলাম কবুল কর এবং শান্তিতে থাক। তারাও আবার বলল, হে আবূল কাসিম! আপনার পৌছানোর দায়িত্ব আপনি পালন করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ আমি এরুপই ইচ্ছা রাখি। তৃতীয়বারেও তিনি তাই বললেন। পরিশেষে রাসুরল্লাহ বললেনঃ জেনে রেখো, যমীন একমাত্র আল্লাহ ও তার রাসুলের। আমি তোমাদেরকে এই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে দিতে চাই। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাদের অস্থাবর সম্পত্তি আছে, তা যেন সে বিক্রি করে দেয়। অন্যথায় জেনে রেখো যমীন আল্লাহ ও তার রাসুলের।
হাদিস ৬৮৪৮
ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে (আল্লাহর সমীপে) হাযির করে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি (দ্বীনের দাওয়াত) পৌছে দিয়েছ? তখন তিনি বলবেন, হ্যা। হে আমার পরওয়ারদিগার। এরপর তাঁর উম্মতকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের কাছে নূহ (দাওয়াত) পৌছিয়েছে কি? তারা সবাই বলে উঠবে, আমাদের কাছে কোন ভীতি প্রদর্শকই (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও রাসুল) আসেনি। তখন নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলা হবে, তোমার (দাবির পক্ষে) কোন সাক্ষী আছে কি? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ ও তাঁর উম্মতগণই (আমার সাক্ষী)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদেরকে তখন নিসে আসা হবে এবং তোমরা নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এব পক্ষ্যে সাক্ষ্য দেবে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের নিম্নোক্ত বানীঃ পাঠ করলেন এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে মধ্যমপন্হী উম্মাতে নির্ধারণ করেছেন। (অর্থ ভারসাম্যপূর্ণ) তাহলে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষী হতে পারবে আর রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষী হবেন। জাফর ইবনু আউন (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৬৮৪৯
ইসমাঈল (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী আদী আনসারী গোত্রের অনেক ব্যাক্তিকে খায়বারের কর্নকর্তা নিয়োগ করে পাঠালেন। এরপর সে প্রত্যাবর্তন করল উন্নতমানের খেজুর নিয়ে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এত উন্নতমানের হয়? তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আল্লাহর কসম! সব খেজুরই এমন নয়। আমরা দুই সা মন্দ খেজুরের বিনিময়ে এরুপ এক সা ভাল খেজুব খরিদ করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এমনটি করো না। বরং সমানে সমানে ক্রয়-বিক্রয় করো। কিংবা এগুলো বিক্রয় করে এর মূল্য দ্বারা সেগুলো খরিদ করো। যেসব জিনিস ওযন করে কেনাবেচা হয়, সেসব ক্ষেত্রেও এই আদেশ সমভাবে প্রযোজ্য।
হাদিস ৬৮৫০
আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এই কথা বলতে শুনেছেন, কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার। আর যদি কোন বিচারক ইজতিহাদে ভুল করেন তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। রাবী বলেনঃ আমি হাদীসটি আবূ বকর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু হায়িম (রহঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এরুপ বর্ণনা করেছেন এবং আবদূল আযীয ইবনু আবদুল মুত্তালিব আবূ সালামা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৬৮৫১
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উবায়দ ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ আবূ মূসা (রাঃ) উমার (রাঃ)-এর কাছে আসার অনুমতি চাইলেন। আবূ মূসা (রাঃ) তাকে যেন কোন কাজে ব্যস্ত ভেবে চলে যাচ্ছিলেন। উমর (রাঃ) বললেনঃ আমি কি আবদুল্লাহ ইবনু কায়স-এর আওয়াজ শুনিনি? তাকে এখানে আসার অনুমতি দাও। এরপর তাকে ডেকে আনা হলে উমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, কি জিনিস আপনাকে ফিরে যেতে বাধ্য করল? আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ আমাদেরকে এরুপই করার নির্দেশ দেয়া হত। উমর (রাঃ) বললেনঃ আপনার উক্তির সপক্ষে প্রমাণ পেশ করুন, অন্যথায় আপনার সাথে মোকাবেলা করব। এরপর আনসারদের এক মজলিসে চলে গেলেন। তারা বলে উঠল আমাদের বালকরাই এর পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এরপর আবূ সাঈদ (রাঃ) দাড়িয়ে বললেনঃ হ্যা, আমাদেরকে এরুপ করারই নির্দেশ দেওয়া হত। এরপর উমর (রাঃ) বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এমন আদেশটি আমার অজানারয়ে গেল। বাজারের বেচাকেনার ব্যস্ত আমাকে এ কথা জানাথেকে বঞ্চিত রেখেছে।
হাদিস ৬৮৫২
আলী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের ধারনা আবূ হুরায়রা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় বাড়াবাড়ি করয়ে আল্লাহর কাছে একদিন আমাদেরকে হাযির হতে হবে। আমি ছিলাম একজন মিসকীন। খেয়ে না খেয়েই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সান্নিধ্যে লেগে থাকতাম। মুহাজিরদেরকে বাজারের বেচাকেনা লিপ্ত রাখত। আর আনসারগণকে ব্যস্ত রাখত তাদের ধন দৌলতের ব্যবস্তাপনা। একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত যে ব্যাক্তি স্বীয় চাঁদর বিছিয়ে তারপর তা গুটিয়ে নেবে, সে আমার কাছ থেকে শ্রুত বানী কোন দিন ভুলবে না। তখন আমি আমার গায়ের চাঁদরখানা বিছিয়ে দিলাম। সে সত্তার কসম, যিনি তাঁকে হকের সাথে প্রেরণ করেছেন। এরপর থেকে আমি তার কাছে যা শুনেছি, আর শুনিনি।
হাদিস ৬৮৫৩
হাম্মাদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু যুলকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে আল্লাহর কসম খেয়ে বলতে শুনেছি যে, ইবনু সায়িদ অবশ্যই (-একটা) দাজ্জাল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আল্লাহর কসম খেয়ে বলছেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ আমি উমর (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপস্থিতিতে কসম খেয়ে এ কথা বলতে শুনেছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা অস্বীকার করেননি।
হাদিস ৬৮৫৪
ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘোড়া ব্যবহারের দিক দিয়ে মানুষ তিন প্রকার। এক প্রকার লোকের জন্য ঘোড়া সাওয়ারের মাধ্যম আর এক প্রকার লোকের জন্য তা গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার অবলম্বন এবং আর এক প্রকার লোকের ব্জন্য তা শাস্তির কারণ। যার জন্য ঘোড়া সাওয়ারের মাধ্যম সে এমন ব্যাক্তি যে ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখে এবং চারণভূমি বা বাগানে প্রশস্ত রশিতে বেধে বিচরণ করতে দেয়। এই রশি যত প্রশস্ত এবং যত দুরত্বে ঘোড়া বিচরণ করতে পারে, সে তত বেশি প্রতিদান পায়। যদি ঘোড়া এ রশি ছিড়ে এক চরাচর অথবা দুটি চক্কর দেয়। তবে ঐ ঘোড়ার প্রতিটি পদক্ষেপ এবং মালের বিনিময়ে তাকে প্রতিদান দেওয়া হয়। ঘোড়া যদি কোন নদী বা নালায় গিয়ে পানি পান করে ফেলে অথচ মালিক পানি পান করানোর নিয়ত করেনি। এগুলো খুবই নেক কাজ। এর জন্য এ ব্যাক্তির সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যাক্তি ঘোড়া পালন করে একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্নতা এবং সূনির্ভরতা বজায় বাখার জন্য; এর সাথে সাথে ঘোড়ার ঘাড় ও পিঠে বর্তানো আল্লাহর হক সমূহও আদায় করতেও সে ভুলে যায় না। এ ক্ষেত্রে ঘোড়া তার জন্য শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হবে। আর যে ব্যাক্তি অহংকার ও আত্মগৌরব প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ঘোড়া পোষে, তার জন্য এই ঘোড়া শাস্তির কারন হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল গাধা সম্পর্কে তখন তিনি বললেনঃ এ সম্পর্কে আমার প্রতি ব্যাপক অর্থ বোধক একটি আয়াত ছাড়া আল্লাহ আর কিছু নাযিল করেননি। (তা হল এই) যে অণু পরিমাণ ভাল কাজও করবে, সে তাও দেখতে পাবে এবং যে অনু পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সেও তা দেখতে পাবে।
হাদিস ৬৮৫৫
ইয়াহইয়া ও মুহাম্মাদ ইবনু উকবা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল, হায়েয থেকে গোসল (পবিত্রতা অর্জন) কিভাবে করতে হয়? তিনি বললেনঃ তুমি সুগন্ধিমুক্ত এক টুকরা কাপড় হাতে নেবে। তারপর এর সারা পবিত্রতা অর্জন করে নেবে। মহিলা বলে উঠল, আমি এর দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করে নেব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করে নেবে। মহিলা আবার বলে উঠল, এর দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করে নেব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করে নেবে। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বুঝতে পারলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ এর দ্বারা কি বোঝাতে চাচ্ছেন? এরপর মহিলাটিকে আমার দিকে টেনে আনলাম এবং বিযয়টি তাকে জানিয়ে দিলাম।
হাদিস ৬৮৫৬
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হারিস ইবনু হাযনের কন্যা উম্মে হুফায়দ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উদ্দেশ্যে ঘি, পনির এবং কতওলো দবব (গুইসাপ) হাদিয়া পাথালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো চেয়ে নিলেন এবং এগুলো তাঁর দস্তরখানে বসে খাওয়া হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এগুলো ঘৃণার কারণে খেতে অপছন্দ করলেন। যদি এগুলো হারাম হত, তবে তাঁর দস্তরখানে তা খাওয়া যেত না এবং তিনিও এগুলো খাওয়ার অনুমতি দিতেন না।
হাদিস ৬৮৫৭
আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি রসুন কিংবা পেঁয়াজ কাচা খায়, সে ব্যাক্তি যেন আমাদের থেকে কিংবা আমাদের মসজিদ থেকে পৃথক থাকে। আর সে যেন তার ঘরে বসে খাকে। এরপর তার খেদমতে একটি পাত্র আনা হল। বর্ণনাকারী ইবনু ওয়াহব (রাঃ) বলেনঃ অর্থাৎ শাক-সব্জির একটি বড় পাত্র। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পাত্রে এক প্রকার গন্ধ অনুভব করলে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তাকে-পাত্রের মধ্যকার শাক-সজি সম্পর্কে অবগত করা হল। তিনি তা জনৈক সাহাবীকে খেতে দিতে বললেনঃ মিনি তার সাথে উপস্থিত রয়েছেন। এরপর তিনি যখন অনুভব করলেন, সে তা খেতে অপছন্দ করছে তখন তিনি বললেনঃ খাও। কারণ আমি যার সাথে গোপনে কথোপকথন করি, তুমি তাঁর সাথে তা কর না। ইবনু উফায়র (রহঃ) ইবনু ওয়াহব (রহঃ) (শাক-সজির একটি হাড়ি) বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে আবূ লায়স ও আবূ সাফওয়ান (রহঃ) হাড়ির ঘটনা উল্লেখ করেননি। এটি কি হাদীস বর্ণিত না যুহরী (রহঃ) এর উক্তি এ সম্পর্কে আমার জানানেই।
হাদিস ৬৮৫৮
উবায়দুল্লাহ ইবনু সা-দ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুৎঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হল। এবং তার সাথে কিছু বিষয়ে কথাবার্তা বলল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোন এক বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে দিলেন। এরপর মহিলা আবেদন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে যখন পাব না তখন কি করব? তিনি উত্তর দিলেনঃ যখন আমাকে পাবে না, তখন আসবে আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ বর্ণনাকারী হুমায়দী (রহঃ) ইবরাহীম ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে আরো- অতিরিক্ত বলেছেনঃ মহিলাটি সম্ভবত সেই আবেদন দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
হাদিস ৬৮৫৯
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আহলে কিতাব হিব্রু ভাষায় তাওরাত পাঠ করে মুসলমানদের সামনে তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। (এই প্রেক্ষিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আহলে কিতাবকে তোমরা সত্যবাদী মনে করো না এবং তাদেরকে মিথ্যাবাদীও ভেবো না। তোমরা বলে দাও, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ন হয়েছে এর প্রতি শেষ পর্যন্ত।
হাদিস ৬৮৬০
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উবায়দূল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ, তোমরা কিভাবে আহলে কিতাবদেরকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা কর? অথচ তোমাদের কিতাব (আল-কুরআন) তাঁর রাসূল) -এর উপর সদ্য নাযিল হয়েছে, তা তোমরা পড়ছ। যা পূত-পবিত্র ও নির্ভেজাল। এই কিতাব তোমাদেরকে বলে দিচ্ছে, আহলে কিতাবগণ আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তন ও বিকৃত করে দিয়েছে। তারা স্বহস্তে কিতাব লিখে তা আল্লাহর কিতাব বলে ঘোষণা দিয়েছে, যাতে তার দ্বারা সামান্য সুবিধা লাভ করতে পারে। তোমাদের কাছে যে (কিতাব ও সুন্নাহর) ইল্ম রয়েছে তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কোন মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে নিষেধ করছে না? আল্লাহর কসম! আমরা তো তাদের কাউকে দেখিনি কখনো তোমাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে।
হাদিস ৬৮৬১
মাক্কী ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু বাকর (রহঃ) আতা (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে এই কথা বলতে শুনেছি যে, তার সাথে তখন আরো কিছু লোক ছিল। আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) নিয়তে ইহরাম বেধেছিলাম। এর সাথে উমরার নিয়ত ছিল না। বর্ননাকারী আতা (রহঃ) বলেনঃ জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহাজ্জ মাসের চার তারিখ সকাল বেলায় (মক্কায়) আগমন করলেন। এরপর আমরাও যখন আগমন করলাম, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা ইহরাম খুলে ফেল এবং স্ত্রীদের সাথে মিলিত হও। (রাবী) আতা (রহঃ) বর্ণনা করেন, জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ (স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা) তিনি তাদের উপর বাধ্যতামূলক করেননি বরং মুবাহ করে দিয়েছেন। এরপর তিনি অবহিত হন যে, আমরা বলাবলি করছি আমাদের ও আরাফার দিনের মাঝখানে মাত্র পাচদিন বাকি। তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে- আমরা ইহরাম খুলে স্ত্রীদের সাথে মিকিত হই। তখন তো আমরা পৌছব আরাফায় আর আমাদের পূরুষাঙ্গ থেকে মযী ঝরতে থাকবে। আতা বলেনঃ জাবির (রাঃ) এ কথা বোঝানোর জন্য হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেছিলেন কিংবা হাত নেড়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে বললেনঃ তোমরা জানো, আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে অধিক ভয় করি, তোমাদের তুলনায় আমি বেশি সত্যবাদী ও নিষ্ঠাবান। আমার সাথে যদি কুরবানীর পশু না থাকত আমিও তোমাদের মত ইহরাম খূলে ফেলতাম। সুতরাং তোমরা ইহরাম খুলে ফেল। আমি যদি আমার কাজের পরিণাম আগে জানতাম যা পরে অবগত হয়েছি তবে আমি কুরবানীর পশু সঙ্গে আনতাম না। অতএব আমরা ইহরাম খুলে ফেললাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশ শোনলাম এবং তাঁর আনুগত্য করলাম।
হাদিস ৬৮৬২
আবূ মাঁমার (রহঃ) আবদুল্লাহ মুযানী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তবে তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ যার ইচ্ছা সে তা আদায় করতে পারে। লোকেরা (সাহাবীগণ) এটাকে সুন্নাত বলে ধরে নিক এটা তিনি পছন্দ করলেন না।
হাদিস ৬৮৬৩
ইসহাক (রহঃ) জুনদাব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, যাবত এর প্রতি তোমাদের হৃদয়ের আকর্যণ অব্যাহত থাকে। আর যখন তোমাদের মধ্যে কোন প্রকার মতবিরোধ দেখা দেয় তখন তা থেকে উঠে যাও। আবূ ব্দুল্লাহ (বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ আবদুর রহমান (রহঃ) সাল্লাম থেকে (উক্ত হাদীসটি) শুনেছেন (সুত্রে) বর্ণিত হয়েছে।
হাদিস ৬৮৬৪
ইসহাক (রহঃ) জুনদাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ততক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, যতক্ষন এর প্রতি তোমাদের হৃদয়ের আকর্যণ অব্যাহত থাকে। আর যখন বিরাগ মনা হয়ে যাও, তখন তা থেকে উঠে দাড়াও। ইয়াযিদ ইবনু হারুন (রহঃ) জুনদাব (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
হাদিস ৬৮৬৫
ইররাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাতের সময় ঘনিয়ে এল। রাবী বলেনঃ ঘরের মধ্যে তখন বহু লোক ছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেনঃ তোমরা লেখার সামগ্রী নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য নিয়ে যাব এমন জিনিস, যা সারা তার পরে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। উমর (রাঃ) মন্তব্য করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই কষ্টে রয়েছেন। তোমাদের কাছে তো কুরআন রয়েছেই, আল্লাহর এই কিতাবই আমাদেরব জন্য যথেষ্ট। এ সময় গৃহে অবস্হানকারীদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল। এবং তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে গেল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, লেখার সামগ্রী তোমরা নিয়ে এসো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের জন্য লিখে দিবেন এমন জিনিস যা সারা তার পরে তোমরা পথহারা হবে না। আবার কারো কারো কর্তব্য ছিল উমর (রাঃ)-এর কথারই অনুরুপ। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে তাদের কথা কাটাকাটি এবং মতপার্থক্য বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। বর্ণনাকারী উবায়দূল্লাহ বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলতেন, সমস্ত জটিলতার মূল উৎস। তা-ই, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার লেখার মাঝখানে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থাৎ তা কি তাদের মতবিরোধ ও কথা কাটাকাটি।
হাদিস ৬৮৬৬
আল উওয়ায়সী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যখন মিথ্যা অপবাদকারীরা তাঁর (আয়িশার) বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন (যিনার) অপবাদ রটিয়েছিল। তিনি বলেনঃ- ওহী আসতে বিলন্ব হচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনু আবূ তালিব ও উসামা ইবনু যায়িদের কাছে কিছু পরামর্শ করার জন্য তাদেরকে ডাকলেন। এবং তার সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ)-কে পৃথক করে দেওয়া সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। উসামা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিবারের পবিত্রতা সম্পর্কে তার যা জানাছিল তা উল্লেখ করলেন। আর আলী (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ আপনার জন্য তো কোন সীমাবদ্ধতা আরোপ করেননি। মহিলা তো তিনি ব্যতীত আরও অনেক আছেন। আপনি বাদীটির কাছে জিজ্ঞাসা করুন, সে আপনাকে সত্য যা, তাই বলবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরাকে ডাকলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সন্দেহের কিছু অবলোকন করেছ? তিনি বললেনঃ আমি এ ছাড়া আর অধিক কিছুই জানিনা যে, আয়িশা (রাঃ) হচ্ছে অল্পবয়স্কা মেয়ে। তিনি নিজের ঘরের আটা পিযে ঘুমিয়ে পড়েন, এমতাবস্হায় বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাড়িয়ে বললেনঃ হে মুসলিমগণ! যে ব্যাক্তি আমার পরিবারের অপবাদ রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার প্রতিকার করতে আমাকে সাহায্য করার মত কেউ আছ কি? আল্লাহর কসম! আমি আমার পরিবার সম্পর্কে ভালো ছাড়া মন্দ কিছুই জানিনা এবং তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর পবিত্রতার কথা বর্ণনা করলেন।
হাদিস ৬৮৬৭
আবূ উসামা ও মুহাম্মদ ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের (সামনে) খুতবা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুনগান বর্ননা করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ যারা আমার স্ত্রীর অপবাদ রটিয়ে ফিরছে- তাদের সম্পর্কে তোমরা আমাকে কি পরামর্শ দাও। আমি আমার পরিবারের কারো মধ্যে কোন প্রকার অশ্লীলতা বিন্দুমাত্র অনুভব করিনি। উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আয়িশাকে সেই অপবাদ সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে আমার পরিজনের (বাবা-মার) কাছে যাওয়ার অনুমতি দিবেন কি? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং তার সাথে একজন গোলামও পাঠালেন। জনৈক আনসারী বললেনঃ তুমই পবিত্র হে আল্লাহ। এ ধরনের কথা আমাদের মুখে শোভা পায় না। এটা ভিত্তিহীন ঘৃণ্য মিথ্যা অপবাদ। তোমারই পবিত্রতা হে আল্লাহ।
No comments: