Breaking News
recent

নামাযের আহকাম ও শর্ত

নামাযের আহকাম বা শর্ত
(নামায ছহীহ হইবার জন্য সাতটি শর্ত। যথাঃ ১। শরীর পাক হওয়া ২। কাপড় পাক হওয়া ৩। নামাযের জায়গা পাক হওয়া ৪। সতর ঢাকা ৫। ক্বেবলামুখী হওয়া ৬। ওয়াক্ত অনুসারে নামায পড়া ৭। নামাযের নিয়্যত করা।)-অনুবাদক
১।মাসআলাঃ নামায শুরু করিবার পূর্বে কতকগুলি কাজ ওয়াজিব ১। ওযূ না থাকিলে ওযূ করিয়া লইবে, গোসলের হাজত থাকিলে গোসল করিয়া লইবে, ২। শরীর বা কাপড়ে যদি কোন নাজাছাত থাকে, তবে তাহা পাক করিয়া লইবে, ৩। যে জায়গায় (বিছানায়, মাটিতে বা কাপড়ের উপর) নামায পড়িবে তাহাও পাক হওয়া চাই, ৪। সতর ঢাকা, (পুরুষের ফরয সতর নাভী হইতে হাঁটু পর্যন্ত; কিন্তু কাপড় থাকিলে পায়জামা, লুঙ্গি, কোর্তা ইত্যাদি পরিয়া নামায পড়া সুন্নত। স্ত্রীলোকের সতর হাতের কব্জি এবং পায়ের পাতা ব্যতিরেকে মাথা হইতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর) ৫। যে নামায পড়িবে সে মনে মনে চিন্তা করিয়া খেয়াল করিয়া লইবে যে, অমুক নামায, যেমন, ফজরের দুই রাকাআত নামায আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য পড়িতেছি। ৬। ওয়াক্ত হইলে নামায পড়িবে। (ওয়াক্ত হইবার পূর্বে নামায পড়িলে নামায হইবে না।) এই ছয়টি বিষয় নামাযের জন্য শর্ত নির্ধারিত করা হইয়াছে। ইহার মধ্য হইতে যদি একটিও ছুটিয়া যায়, তবে নামায হইবে না।- নূরুল ইযাহ
২।মাসআলাঃ যে পাতলা কাপড়ে শরীর দেখা যায়, সেইরুপ পাতলা কাপড় পরিয়া নামায পড়িলে নামায হইবে না। যেমন, ফিনফিনে পাতলা এবং জালিদার কাপড়ের তৈরী ওড়না পরিয়া নামায পড়া (দুরুস্ত নহে)। –বাহরুর রায়ে
৩।মাসআলাঃ নামায শুরু করিবার সময় যদি সতরের মধ্যে যতগুলি অঙ্গ আছে, তাহার কোন এক অঙ্গে এক চতুর্থাংশ খোলা থাকে, তবে নামাযের শুরুই দুরুস্ত হইবে না। ওই যায়গা ঢাকিয়া পুনরায় শুরু করিতে হইবে। যদি শুরু করিবার সময় ঢাকা থাকে, কিন্তু নামাযের মধ্যে খুলিয়া গিয়া এতটুকু সময় খোলা থাকে যে, তাহাতে তিনবার ছোবহানাল্লা বলা যায়, তবে নামায নষ্ট হইয়া যাইবে; পুনঃ নামায পড়িতে হইবে; কিন্তু যদি খোলা মাত্রই তৎক্ষনাৎ ঢাকিয়া লওয়া হয়, তবে নামায হইয়া যাইবে। এই হইল নিয়ম। এই নিয়মানুসারে স্ত্রীলোকের পায়ের নলার এক চতুর্থাংশ, হাতের বাজুর এক চতুর্থাংশ, এক কানের চারি ভাগের এক ভাগ, মাথার চারি ভাগের একভাগ, চুলের এক চতুর্থাংশ , পেট, পিঠ, ঘাড়, বুক বা স্তনের এক চতুর্থাংশ খোলা থাকিলে নামায হইবে না। (আর গুপ্ত অঙ্গ সমূহের কোন একটির যেমন রানের এক চতুর্থাংশ খোলা থাকিলে স্ত্রী বা পুরুষ কাহারও নামায আদায় হইবে না।) –বাহরুর রায়েক
৪।মাসআলা- নাবালেগা মেয়ে নামায পড়িবার সময় যদি তাহার মাথার ঘোমটা মাথা খুলিয়া যায়, তবে ইহাতে তাহার নামায নষ্ট হইবে না। কিন্তু বালেগা মেয়ে হইলে নামায নষ্ট হইবে- বাহর
৫।মাসআলা- যদি শরীরে বা কাপড়ের কিছু অংশ নাপাক থাকে ঘটনাক্রমে তাহা ধইবার জন্য পানি কোথাও পাওয়া না পাওয়া না যায়, তবে ঐ নাপাক কাপড় লইয়াই নামায পড়িবে, তবুও নামায ছাড়িবে না। - কানযুদ্দাকায়েক
     ৬।মাসআলা- কাহারও যদি সমস্ত কাপড় নাপাক থাকে বা চারি ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম পাক থাকে(এবং ধুইবার জন্য পানি কোথাও পাওয়া না যায়,) তবে তাহার জন্য ঔ নাপাক কাপড় লইয়া নামায পড়া দুরুস্ত আছে কিন্ত নাপাক কাপড় পরিয়াই নামায পড়া উত্তম। (কেননা তাহাতে ওযরবশত: সতর ঢাকার ফরয আদায় হইল) যদি এক চতুর্থাংশ বা বেশি পাক থাকে তবে কাপড় খুলিয়া রাখা জায়েয হইবে না। ঐ কাপড়ের নামায পড়া ওয়াজিব।
 ৭।মাসআলা- যদি কাহারও নিকট মোটেই কাপড় না থাকে, তবে বিবস্ত্র অবস্থায় নামায পড়িবে, কিন্তু এমন স্থানে নামায পড়িবে যেন কেহ দেথিতে না পায় এবং দাড়াইয়া নামায পড়িবে না, বসে পড়িবে এবং ইশারায় রুকূ সজদা করিবে। নামায হইয়া যাইবে, তবে বসিয়া পড়া ভাল।
৮।মাসআলা- অন্য কোথাও পানি পাওয়া না, সামান্য কতটুকু পানি কাছে আছে যে, ওযূ করিলে নাপাকী ধোয়া যায় না, আর নাপাকী ধুইলে ওযূ করা যায় না। এমতাবস্থায় ঐ পানি দ্বারা নাপাকী ধুইবে এবং পরে ওযূর পরিবর্তে তায়াম্মুম করিবে।
(মাসআলা: নাপাক কাপড় ধুইয়া পাক করিলে তখন সেই ভিজা কাপড়ে নামায দুরস্ত আছে।)
বেহেশতী গওহর হইতে
১।মাসআলা- যদি একখানা কাপড়ের এক কোন নাপাক হয় এবং অন্য কোন পরিয়া নামায পড়িতে চায়, তবে দেখিতে হইবে যে, নামায পড়িবার সময় নাপাক কোন টান লাগিয়া নড়েচড়ে কি না? যদি নাপাক কোন নড়েচড়ে, তবে নামায হইবে না, না নড়িলে আদায় হইয়া যাইবে। নামায পড়িবার কালে নামাযীর হাতে , জেবে বা কাধে কোন নাপাক জিনিস থাকিলে তাহার নামায হইবে না। কিন্তু যদি কোন নাপাক জীব নিজে আসিয়া তাহার শরীরে লাগে বা বসে অথচ তাহার শরীরে বা কাপড়ে কোন নাপাকী না লাগে, তবে তাহতে তাহার নামায নষ্ট হইবে না। অবশ্য নাপাকী লাগিলে নামায বিষ্ট হইয়া যাইবে। যেমন- কেহ নামায পড়িতেছে হঠাৎ একটি কুকুর তাহার গায়ে লাগয়া গেল, অথবা তাহার শিশু- সন্তান কোলে বা কাধে চড়িয়া বসিল। এমতাবস্থায় যদি কুকুর বা শিশুর গায়ে শুস্ক নাপাকী থাকে। তবে তাহতে নামায নষ্ট হইবে না। কিন্তু যদি ভিজা নাপাকী থাকে এবং নামাযীর গায়ে বা কাপড়ে লাগে, তবে নামায নষ্ট হইবে। যদি শিশুর গায়ে প্রস্রাব লাগিয়া বা বমি লাগিয়া তাহা ধুইবার পূর্বে শুকাইয়া যায়। সেই শিশুকে কোলে বা কাধে লইয়া নামায পড়িলে নামায হইবে না। ্্রইরুপ যদি কোন নাপাক বস্ত শিশিতে বা তাবিযে মুখ বন্ধ করিয়া সঙ্গে লইয়া নামায পড়ে, তবুও নামায হইবে না। কিন্তু নাপাক বস্ত স্থায়ী জন্মস্থানে থাকিলে তাহা (যেমন একটি পচা ডিম) সঙ্গে লইয়া নামায পড়িলে নামায হইয়া যাইবে; কেননা এই নাপাকী ঐরুপ যেমন মানুষের পেটেও নাপাকী থাকে।
২।মাসআলা- নামায পড়িবার জায়গাও নাজাছাত হইতে পাক হইতে হইবে (তাহা মাটিই হউক, বা বিছানাই হউক) কিন্তু নামাযের জায়গার অর্থ দুই পা সজদার সময় দুই হাটু দুই হাতের তালু কপাল এবং নাক রাখিবার জায়গা।
৩।মাসআলা- যদি শুধু এক পা রাখিবার জায়গা পাক, নামাযের সময় অপর পা উঠাইয়া রাখে, তবুও নামায হইয়া যাইবে।
৪।মাসআলা- কোন কাপড় বা বিছানার উপর নামায পড়িলে যদি ঐ কাপড় বা বিছানার সব জায়গা নাপাক থাকে শুধু উপরোক্ত পরিমান পাক থাকে, তবু নামায হইবে।
৫।মাসআলা- কোন নাপাক মাটি বা বিছানার উপর পাক কাপড় বিছাইয়া তাহার উপর নামায পড়িতে হইলে ঐ কাপড় পাক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হওয়া শর্ত আছে যে, মোটা হওয়া চাই এত কিন না হয় যাহাতে নীচের জিনিস দেখা যায়।
৬।মাসআলা- যদি নামায পড়ার সময় নামাযীর কাপড় কোন নাপাক স্থানে গিয়া পড়ে তবে কোন ক্ষতি নাই (যদি নাপাকী না লাগে)
৭।মাসআলা- নামায পড়িবার সময় যদি কোন অন্য লোকের কারনে ওযরবশত: সতর ঢাকিতে না পারে, তবে না ঢাকা অবস্থাতেই নামায পড়িবে। (যেমন জেলের ভিতর পুলিশ সতর ঢাকা পরিমাণ কাপড় না দেয় কিংবা কোন যালেম কাপড় পরিলে হত্যার ভয় দেখায়, তবে ঐ অবস্থাতেও নামায ছাড়া যাইবে না; নামায পড়িতেই হইবে; কিন্তু এই কারণ চলিয়া গেলে পরে ঐ নামায দোহরাইয়া পড়িতে হইবে। আর যদি সতর ঢাকিতে না পারার কারনের উৎপত্তি কোন লোকের পক্ষ হইতে না হয় যেমন; তাহার কাছে কাপড় মাত্রও নাই, তবুও উলঙ্গ অবস্থাতেই নামায পড়িতে হইবে। পরে কাপড় পাইলে ঐ নামায পুনরায় পড়ার আবশ্যক নাই।– বাহার।
৮।মাসআলা- কাহারও নিকট শুধু এতটুকু কাপড় আছে যে, তাহার দ্বারা সতর ঢাকিতে পারে, অথবা সম্পূর্ন নাপাক জায়গার উপর বিছাইয়া তাহার উপর নামায পড়িতে পাব, এমতাবস্থায় তাহার কাপড়-টকর দ্বারা সতর ঢাকিতে হইবে এবং একান্ত যদি পাক জায়গা না পায় তবে সেই নাপাক জায়গায়ই পড়িবে। নামায ছাড়িতে পারিবে না বা সতর খুলিতে পারিবে না।
৯, ১০। মাসআলা- কেহ হয়ত যোহরের  নামায পড়িয়া পরে জানিতে পাড়িল, যে সময় নামায পড়িয়াছে সে সময় যোহরের ওয়াক্ত ছিল না, আছরের ওয়াক্ত হইবার পূর্বেই নামায পড়িয়াছে, তবে সেই নামায আদৌ হইবে না। পুনরায় পড়িতে হইবে। আর যদি কেহ জ্ঞাতসারে ওয়াক্ত হইবার পূবেই নামায পড়িয়া পরে জানিতে পাড়িতে হইবে। আর যদি কেহ জ্ঞাতসারে ওয়াক্ত হইবার পূর্বেই নামায পড়িয়া থাকে , তাহাতে তো নামায হইবে না।
১১।মাসআলা- নামাযের নিয়্যত ফযর এবং শর্ত বটে কিন্তু মৌখিক বলার আবশ্যক নাই। মনে মনে এতটুকু খেয়াল রাখিবে যে, আমি আজিকার যোহরের ফরয নামায পড়িতেছিভ সুন্নত হইলে খেয়াল করিবে যে, যোহরের সুন্নত পড়িতেছে। এতটুকু খেয়াল করিয়া আল্লাহু আবকর বলিয়া হাত বাধিবে। ইহাতেই নামায হইয়া যাইবে। সাধারণের মধ্যে যে লম্বা চওড়া নিয়্যত মশহুর আছে, উহা বলার কোন প্রয়োজন নাই। তবে বুযুর্গানে দ্বীন আরবী নিয়্যত পছন্দ। করিয়াছেন; তাই আরবীতে নিয়্যত করিতে পারিলে ভাল। নিম্ন আরবী নিয়্যত লিখিয়া দেওয়া হইয়াছে। মূল কিতাবে নিয়্যত লিখা নাই। মুখে বলিবে ঠিক রাখা যায়, তাই আরবী ও বাংলা উভয় নিয়্যত লিখা হইল। ইচ্ছামত শিখিয়া লইবে। - অনুবাদ
ফজরের সুন্নতের নিয়্যত
…………………………………………… আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত নামাযের নিয়্যত করিলাম।
ফজরের ফরয নামাযের নিয়্যত
……………………………………………..  আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ফজরের দুই রাকাআত নামাযের নিয়্যত করিলাম।
যোহরের চারি রাকাআত সুন্নতের নিয়্যত
………………………………………………
আমি আল্লাহর জন্য যোহরের চারি রাকাআত সুন্নত নামায পড়িবার নিয়্যত করিলাম।
যোহেরর য়রযের নিয়্যত
…………………………………………. আমি যোহরের চারি রাকাআত ফরয নামাযের নিয়্যত করিলাম।
কছর নামাযের নিয়্যত
………………………………………………………………
আমি যোহরের দুই রাকাআত ফরয কছর নামাযের নিয়্যত করিলাম।
যোহরের পর দুই রাকাআত সুন্নতের নিয়্যত
…………………………………………. আমি যোহরের দুই রাকাআত সুন্নত পড়িবার নিয়্যত করিলাম।
টিকা
১। আল্লাহু আকবর নিয়্যতের অংশ নহে নামাযের অংশ।
তাহিয়্যাতুল ওযূ তাহিয়্যাতুল মসজিদ এবং অন্যান্য
যাবতীয় নফল (অতিরিক্ত) নামাযের নিয়্যত:
…………………………………………………………………………………..
আমি আল্লাহর ওয়াস্তে দুই রাকাআত নামায পড়িতেছি।
জুমুআর প্রথম চারি রাকাআত সুন্নতের নিয়্যত
………………………………………………………………………………………………
আমি ক্কাবলাল জুমুআর চারি রাকাআত সুন্নত নামাযের নিয়্যত করিতেছি।
জুমুআর ফরযের নিয়্যত
………………………………………………………….
যখন ইমামের সঙ্গে জমাআতের নামায পড়িবে তখন সব জায়গায়………………..
এই ইমামের পিছনে একতেদা করিলাম শব্দটি বাড়াইয়া বলিবে; যেমন আমি ইমামের পিছে জুমুআর দুই রাকাআত ফরয নামাযের নিয়্যত করিলাম।
জুমুআর পরে চারি রাকাআত সুন্নতের নিয়্যত
……………………………………………………………………………………..
আমি বাদাল জুমুআর চারি রাকাআত সুন্নতের নিয়্যত করিলাম।
জুমুআর পরে দুই রাকাআত সুন্নতের নিয়্যত
…………………………………………………………………………
আমি জুমুআর দুই রাকাআত সুন্নত নামায পড়িতেছি
আছরের সুন্নতের নিয়্যত নফলেরই মত।
আছরের ফরযের নিয়্যত
………………………………………………………..
আমি আছরের চারি রাকাআত ফরয নামাযের নিয়্যত করিলাম।
মাগরিবের ফরযের নিয়্যত
……………………………………………………….
আমি মাগরিবের তিন রাকাআত ফরয নামাযের নিয়্যত করিলাম।
মাগরিবের সুন্নতের নিয়্যত
……………………………………………………………………
মাগরিবের দুই রাকাআত সুন্নত নামায পড়িবার নিয়্যত করিলাম।
আউয়াবীনের নিয়্যত নফলেরই মত এবং এশার পূর্ববর্তী নিয়্যতও নফলেরই মত।
এশার চারি রাকাআত ফরযের নিয়্যত
………………………………………………………….
এশার চারি রাকাআত ফরয নামায পড়িবার নিয়্যত করিলাম।
শার পরে দুই রাকাআত সুন্নতের নিয়্যত
…………………………………………………………..
এশার দুই রাকাআত সুন্নত নামায পড়িবার নিয়্যত করিলাম।
বেৎরের নিয়্যত
………………………………………………………………
বেৎরের তিন রাকাআত ওয়াজিব নামায পড়িবার নিয়্যত করিলাম।
তাহাজ্জুদ এশরাক চাশত প্রভৃতির নিয়্যত নফলের মত; অর্থাৎ আল্লাহর ওয়াস্তে দুই রাকাআত নামায পড়িতেছি।
তারাবীহর নিয়্যত
……………………………………………………………
তারাবীহর দুই রাকাআত সুন্নত নামায পড়িবার নিয়্যত করিলাম।
ঈদুল ফেৎর নামাযের নিয়্যত
……………………………………………………………
ওয়াজিব ছয় তকবীরসহ দুই রাকাআত ঈদুল ফেৎর নামাযের নিয়্যত করিলাম।
ঈদুল আযহার নামাযের নিয়্যত
………………………………………………….
ওয়াজিব ছয তকবীরসহ দুই রাকাআত ঈদুল আযহার নামাযের নিয়্যত করিলাম।
ক্কাযা নামাযের নিয়্যত
………………………………………………………………….
য়জরের দুই রাকাআত ফাউত নামাযর নিয়্যত করিলাম।
কেহ বেহ আরবী নিয়্যত মুখস্থ করিতে পারে না বলিয়া নামাযই পড়ে না। ইহা তাহাদের মস্ত বড় ভুল। কেননা পূর্বেই বলিয়াছি যে, নিয়্যত গদ=বাধা আরবী এবারত পড়া ফরয বা ওয়াজিব কিছুই নহে। ফরয হইয়াছে মানের নিয়্যত।
।মাসআলা- যদি নিয়্যতের লফযগুলি মুখে বলিতে চায়, তবে দেল ঠিক করিয়া মুখে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, আজকার যোহরের চারি রাকাআত ফরয পরিতেছি, আল্লাহু আকবরা বা যোহরের চারি রাকাআত সুন্নত পরিতেছি, আল্লাহু আকবর ইত্যাদি। কাবা শরীফের দিকে মুখ করিয়া এই কথাটি বলিতেও পারে না বলিলেও দোষ নাই। তবে যে সময় ক্কেবলা মাসুল না হয় এবং তাহারই চিন্তা করিয়া ক্কেবলা ঠিক করিতে হয়, তখন দেল ঠিক করার সঙ্গে সঙ্গে মুখেও বলিয়া লওয়া তাল।
১৩।মাসআলা- কেহ হয়ত দেলে চিন্তা করিয়া এরাদা করিতেছে যে, যোহবের নামায পড়িবে কিন্তু মুখে বলার সময় ভুলে মুখ দিয়া আছরের নামায বলিয়া ফেলিয়াছে তবুও নামায হইয়া যাইবে।
১৪।মাসআলা- এইরূপে হয়ত কেহ দেলে ঠিক করিয়াছে যে, চারি রাকাআত বলিবে কিন্তু ভুলে মুখে তিন বা ছয় বলিয়া ফেলিয়াছে তবুও তাহার নামায হইয়া যাইবে দেলের নিয়্যতকেই ঠিক ধরা হইবে।
১৫।মাসআলা- যদি কাহারও কয়েক ওয়াক্ত নামায ক্কাযা হইয়া থাকে, তবে ক্কাযা পড়িবার সময় নির্দিষ্ট ওয়াক্তের নাম লইয়া নিয়্যত করিতে হইবে, যেমন হয়ত বলিবে অমুক ওয়াক্তের ফযর বা যোহরের ফরযের ক্কাযা পড়িতেছি ইত্যাদি। নির্দিষ্ট ওয়াক্তের নিয়্যত না করিয়া শুধু ক্কাযা পড়িতেছি বলিবে ক্কাযা দুনস্ত হইবে না, আবার পড়িতে হইবে।
১৬।মাসআলা- যদি কয়েক দিনের নামায ক্কাযা হইয়া থাকে তবে দিন তারিখ নিদিষ্ট করিয়া নিয়্যত করিতে হইবে, নতুবা ক্কাযা আদায় হইবে না, যেমন হয়ত কাহারও শনি, রবি, সোম এবং মঙ্গল এই চারি দিনের নামায ক্কাযা হইয়াছে। এখন যে নিয়্যত এইরূপ করিবে; যথা শনিবারের ফজরের ক্কাযা পড়িতেছি’ যোহরের ক্কাযা পড়িবার সময় বলিলে শনিবারের যোহরের ফরযের ক্কাযা পরিতেছি, এইরূপে শনিবারের সব নামায ক্কাযা পড়া হইলে তারপর  বলিবে, রবিবারের ফজরের ক্কাযা পড়িতেছি। এইরূপে দিন এবং ওয়াক্তের তারিখ ঠিঠক করিয়া নিয়্যত করিলে নামায হইবে, নতুবা হইবে না, যদি কয়েক মাসের বা কয়েক বৎসরের নামায ক্কাযা হইয়া থাকে, তবে সন মাস এবং তারিখের ফজরের ফরযের ক্কাযা পড়িতেছি, এইরূপে নির্দিষ্ট না করিয়া নিয়্যত করিলে ক্কাযা দুরুস্ত হইবে না।
১৭।মাসআলা- যদি কাহারও দিন তারিখ ইয়াদ না থাকে, তবে এইরূপ নিয়্যত করিবে: আমার যিম্মায় যত ফজরের ফরয রাহিয়া গিয়াছে, তাহার প্রথম দিনের ফজরের ফরযের ক্কাযা পড়িতেছি’ বা আমার যিম্মায় যত যোহরের ফরয রহিয়া গিয়াছে, তাহার প্রথম দিনের যোহরের ক্কাযা পড়িতেছি ইত্যাদি। এই রূপে নিয়্যত করিয়া বহুদিন যাবৎ ক্কাযা পড়িতে থাকিবে। যখন দেলে গাওয়াহী সাক্ষ্যা দিবে যে, এখন খুব সম্ভব আমার যত নামায ছুটিয়া গিয়াছিল সবের ক্কাযা পড়া হইয়া গিয়াছে তখন ক্কাযা পড়া ছাড়িবে। কিন্তু দেলে গাওয়াহী দিবার পূর্বে ছাড়িবে  না এবং সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে মাফও চাহিবে।
১৮। মাসআলা- সুন্নত, নফল,তারাবীহ (এশরাক, চাশত, আউয়াবীন, তাহাজ্জুদ) ইত্যাদি নামায পড়িবার কালে শুধু এতটুকু নিয়্যত করাই যথেষ্ট যে, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে দুই রাকাআত (বা চারি রাকাআত) নামায পড়িতেছি। সুন্নত বা নফল বা ওয়াক্তের নির্দিষ্ট করার তোনই আবশ্যক নাই। যদি কেহ ওয়াক্তিয়া সুন্নতের মধ্যে ওয়ােক্তর নামও লয় তাহা ভাল। কিন্তু তারাবীহর সুন্নতের মধ্যে সুন্নত তারাবীহ বলিয়াই নিয়্যত অধিক উত্তম।
বেহেশতী গওহার হইতে
১।মাসআলা- মোক্তাদীকে ইমামের এক্তেদারও নিয়্যত করিতে হইবে। (নতুবা নামায হইবে না। অর্থাৎ এই ইমামের পিছনে নামায পড়িতেছি এইরূপ নিয়্যত করিবে।
২।মাসআলা- ইমামের শুধু নিজের নামাযের নিয়্যত করিতে হইবে। ইমামতের নিয়্যত করা শর্ত নহে। অবশ্য যদি কোন স্ত্রীলোক জমাআতে শরীক হয় এবং সে পুরুষদের কাতারে দাড়ায় আর যদি ঐ নামায জানাংা জুমুআ অথবা ঈদের নামায না হয় তবে ইমাম ঐ স্ত্রীলোকটির নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য তাহার ইমামতের নিয়্যত করা শর্ত। আর যদি সে পুরুষ দের কাতারে না দাড়ায় কিংবা জানাযার জুমুআর নামায অথবা ঈদের নামায হয়, তবে তাহার ইমামতের নিয়্যত করা শর্ত নহে।
৩।মাসআলা- মুক্তাদী যখন ইমামের সঙ্গে এক্তদা করার নিয়্যত করিবে, তখন ইমামের নাম লইয়া নির্দিষ।ট করার দরকার নাই, শুধু এতটুকু বলিলেই চলিবে যে, এই ইমামের পিছে নামায পড়িতেছি। অবশ্য যদি নাম লইয়া নির্দিষ।ট করে তাহাও করিতে পারে, কিন্তু যাহার নাম লইয়াছে সে যদি ইমাম না হয় যেমন; যদি কেহ বলে, যায়েদের পিছে নামায পড়িতেছি অথচ ইমাম হইয়াছে, খালেদ তবে ঐ মুক্তাদীর নামায হইবে না।
৪।মাসআলা- নিয়্যত এইরূপ করিবেঃ জানাযার নামায পড়িতেছি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য এবং মুর্দার জন্য দোআ করিতে। মুর্দা পুরুষ বা স্ত্রী জানা না গেলে এইরূপ বলিবে, আমার ইমাম যাহার জন্য জানাযার নামায পড়িতেছেন আমিও তাহারই জন্য (এই ইমামের পিছে চারি তকবীর বিশিষ্ট) জানাযার নামায পড়িতেছি।
কোন কোন ইমামের ছহীহ অভিমত এই যে, ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত এবং নফল নামাযের নিয়্যত সুন্নত, নফল বা কোন ওয়াক্তের সুন্নত এবং এশরাক, চাশত, তাহাজ্জুদ, তারাবীহ, কুছুফ বা খুছুফ বলিয়া নির্দিষ্ট করার কোন দরকার নাই। শুধু নামাযের নিয়্যত করিলেই চলিবে। ওয়াক্তের নামকরন বা নফল সুন্নত ইত্যাদি শ্রেণী বিভাগ করিতে হইবে না (অবশ্য নির্দিষ্ট করিয়া নিয়্যত করাই উত্তম। কিন্তু ফরয ও ওয়াজিব নামায নির্দিষ্ট করিয়া নিয়্যত করা ব্যতীত শুদ্ধ হইবে না।)

No comments:

Powered by Blogger.