নফল নামাযের আহকাম
নফল নামাযের আহকাম
নফল নামাযের আহকাম
১।মাসআলাঃ দিনে বা রাত্রে নফল নামাযের নিয়্যত একসঙ্গে দুই বা চারি রাকা‘আতের করা যায়। কিন্তু দিনে একইসঙ্গে চারি রাকাতের বেশী ও রাত্রে আট রাকা‘আতের বেশী নিয়্যত করা মকরুহ।
২।মাসআলাঃ একসঙ্গে চারি রাকা‘আতের নিয়্যত করিয়া যদি নফল নামায পড়িতে চায়, তবে দ্বিতীয় রাকা‘আতে যখন আত্তাহিয়্যাতু পড়িবার জন্য বসিবে, তখন শুধু আত্তাহিয়্যাতু (আবদুহু ওয়া রাসূলুহু পর্যন্ত) পড়িয়া উঠিয়া বিসমিল্লাহ, আলহামদু হইতে শুরু করিয়া চতুর্থ রাকা‘আতে আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরুদ ও দোআ পড়িয়া সালাম ফিরানও দুরুস্ত আছে, এবং দ্বিতীয় রাকা‘আতে আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরুদ এবং দোয়া সবকিছু পড়িয়া (শুধু সালাম বাকী রাখিয়া) দাঁড়াইয়া তৃতীয় রাকা‘আতে সোবহানাকা, আউযুবিল্লাহ হইতে শুরু করিয়া আবার চতুর্থ রাকা‘আতে আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরুদ ও দোআ সবকিছু পড়িয়া সালাম ফিরানও দুরুস্ত আছে। উভয় ছুরতেই জায়েয। কোন ছুরতেই কোন দোষ নাই। এইরুপে যদি রাত্রের নামাযে ছয় বা আট রাকা‘আতের নিয়্যত এক সঙ্গে করিয়া পড়িতে চায়, তবে প্রত্যেক দ্বিতীয় রাকা‘আতে বসিয়া শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়িয়া উঠিতে পারে এবং শেষ রাকা‘আতে দুরুদ ও দোআ পড়িয়া সালাম ফিরাইবে, বা প্রত্যেক দ্বিতীয় রাকা‘আতে দুরুদ ও দোআ পড়িয়া সালাম ফিরাইবে, বা প্রত্যেক দ্বিতীয় রাকা‘আতে দুরুদ ও দোয়া পড়িয়া তৃতীয়, পঞ্চম, বা সপ্তম রাকা‘আতে সোবহানাকা হইতে শুরু করিবে, উভয় রকম জায়েয আছে, (কিন্তু প্রত্যেক দ্বিতীয় রাকা‘আতে বসা ফরজ। ক্ববলাল জুমুয়া, বাদাল জুমুয়া এবং যোহরের চারি রাকা‘আত সুন্নতের মধ্যে দুই রাকা‘আতের পর বসা ওয়াজিব; কিন্তু এই তিনটি সুন্নত নামাযের মধ্যে ফরয নামাযের মত দ্বিতীয় রাকা‘আতে দুরুদ ও দোয়া পড়িবে না শুধু আত্তাহিয়্যাতু (আবদুহু ওয়া রাসূলুহু পর্যন্ত) পড়িয়াই উঠিয়া যাইবে এবং তৃতীয় রাকা‘আত বিসমিল্লাহ হইতে শুরু করিবে)
৩।মাসআলাঃ ফরয নামায দুই রাকা‘আতের বেশী হইলেই শুধু দুই রাকা‘আতেই সূরা মিলাইতে হয়; কিন্তু সুন্নত (বেৎর) এবং নফল নামাযের প্রত্যেক রাকা‘আতে আলহামদুর সহিত সূরা মিলান ওয়াজিব। ইচ্ছাপূর্বক না মিলাইলে গোনাহ হইবে এবং ভুলে না মিলাইলে ছহো সেজদা ওয়াজিব হইবে। ছহো সেজদার বর্ণনা সামনে আসিতেছে।
৪।মাসআলাঃ নফল নামাযের নিয়্যত করিয়া নামায শুরু করিয়া দিলে তখন আর ঐ নামায নফল (ইচ্ছাধীন) থাকে না, ওয়াজিব হইয়া যায়। অতএব, (বিনা কারণে) নামায ছাড়িয়া দিলে গোনাহ হইবে। (কোন ওযরবশতঃ) ছাড়িলে তাহার ক্বাযা পড়িবে। নফল নামাযের প্রত্যেক দুই রাকা‘আত পৃথক ধরা হয়, কাজেই যদি কেহ চারি (ছয় বা আট) রাকা‘আতেরও নিয়্যত করা সত্বেও দুই রাকা‘আত পুরা করিয়া সালাম ফিরায়, তবে তাহাতে তাহার গোনাগ হইবে না (বা ক্বাযাও পড়িতে হইবে না)
৫।মাসআলাঃ যদি কেহ চারি রাকা‘আত নফল নামাযের নিয়্যত বাধে এবং দুই রাকা‘আত পুরা হইবার পূর্বেই নিয়্যত ছাড়িয়া দেয়(বা কোন কারণবশতঃ নামায ফাসেদ হইয়া যায়) তবে মাত্র দুই রাকা‘আতের ক্বাযা পড়িতে হইবে। (চারি রাকা‘আতের ক্বাযা পড়িতে হইবে না)।
৬।মাসআলাঃ যদি কেহ চারি রাকা‘আত নফল নামাযের নিয়্যত বাধিয়া তৃতীয় বা চতুর্থ রাকা‘আতে নিয়্যত ছাড়িয়া দেয়, তবে যদি দ্বিতীয় রাকা‘আতের পর বসিয়া আত্তাহিয়্যাতু ইত্যাদি পড়িয়া থাকে তবে দুই রাকা‘আতের ক্বাযা পড়িতে হইবে, আর যদি দ্বিতীয় রাকা‘আতের পর না বসিয়া থাকে এবং (ভুলে বা ইচ্ছাপূর্বক) আত্তাহিয়্যাতু না পড়িয়াই দাড়াইয়া থাকে, তবে চারি রাকা‘আতের ক্বাযা পড়িতে হইবে।
৭।মাসআলাঃ যোহরের (এইরুপে ক্ববলাল জুমুআ এবং বাদাল জুমুআর) চারি রাকা‘আত সুন্নতের নিয়্যত করার পর যদি নিয়্যত ছাড়িয়া দেয় (বা কোন কারণবশতঃ ভাঙ্গিয়া দিতে হয়) তবে দ্বিতীয় রাকআতে বসিয়া আত্তাহিয়্যাতু ইত্যাদি পড়ুক বা না পড়ুক উভয় ছুরতে চারি রাকা‘আতের ক্বাযা পড়িতে হইবে।
৮।মাসআলাঃ নফল নামায বিনা ওযরেও বসিয়া পড়া জায়েয আছে, কিন্তু অর্ধেক ছওয়াব পাইবে, কাজেই সব নামায দাঁড়াইয়া পড়াই ভাল; বিনা ওযরে বসিয়া পড়া উচিত নহে। বেৎরের পর নফলের এই হুকুম।
৯।মাসআলাঃ নফল নামায বসিয়া বসিয়া শুরু করিয়া পরে কতক্ষণ দাঁড়াইয়া পড়িলে তাহাও জায়েয হইবে।
১০।মাসআলাঃ নফল নামায দাঁড়াইয়া শুরু করার পর প্রথম বা দ্বিতীয় রাকা‘আতে বসিয়া পড়লেও জায়েয হইবে।
১১।মাসআলাঃ নফল নামায দাঁড়াইয়া পড়িতে পড়িতে যদি দূর্বলতার কারণে ক্লান্ত হইয়া যায়, তবে লাঠির খুঁটি, দেওয়াল বা বেড়ার সঙ্গে টেক লাগাইয়া পড়িলেও মকরুহ হইবে না; দুরুস্ত আছে।
No comments: