Breaking News
recent

মোজার উপর মাসেহ

মোজার উপর মছহে
১। মাসআলাঃ ওযূ করিয়া যদি চামড়ার মোজা পরার পরে ওযূ ‍টুটিয়া যায়, তবে আবার ওযূ করিবার নময় মোজার উপর মছহে করিয়া লওয়া দুরুস্ত। যদি মোজা খুলিয়া ফেলিয়া পা ধুইয়া নেয়, তবে সবচেয়ে ভাল।
২। মাসআলাঃ চামড়ার মোজা যদি এত ছোট হয় যে, টাখনা (ছোট গিরা) ঢাকা যায় না, তবে সে মোজার উপর মছহে করা দুরুস্ত হইবে না। এইরূপ যদি বিনা ওযূতে চামড়ার মোজাই পরিয়া থাকে, তবে তাহার উপর মছহে করা দুরুস্ত হইবে না; মোজা খুলিয়া পা ধুইতে হইবে।
৩। মাসআলাঃ শরয়ী সফর হালাতে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মছহে করিয়া পারিবে; আর সফল ব্যতীত (যেমন, বাড়ি থাকিয়া) এক দিন এক রাত পর্যন্ত মছহে করিতে পারিবে। আর যেই  ওযূ করিয়া মোজা পরিয়াছে সেই ওযূর পর প্রথমে যখন ওযূ টুটিবে সেই সময় হইতে একদিন এক রাত বা তিন দিন তিন রাতের হিসাব ধরা হইবে। যে সময় মোজা পরিয়াছে সে সময় হইতে হিসাব ধরা হইবে না। যেমন, হয়ত কেহ যোহরের সময় ওযূ করিয়া মোজা পরিল, তারপর সূর্যাস্তের সময় ওযূ ‍টুটিল, তবে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মছহে করিতে পারে, আর সফরের অবস্থায় তৃতীয় দিনের সূর্যাস্তের সময় পর্যন্ত মছহে করিতে পারিবে; যখন সূর্য ডুবিয়া যাইবে, তখন আর মছহে করিতে পারিবে না।
৪। মাসআলাঃ গোছলের হাজত হইলে মোজা খুলিয়া ফেলিতে হইবে; গোছলের সঙ্গে মোজার উপর মছহে করা চলিবে না।
৫। মাসআলাঃ পায়ের পিঠে মোজার উপর মছহে করিবে, পায়ের তলায় মছহে করিবে না।
৬। মাসআলাঃ মোজার উপর মছহে করিবার সময় হাতের আঙ্গুলগুলি পানিতে ভিজাইয়া পায়ের পাতার অগ্রভাগে রাখিবে যেন সম্পূর্ণ মোজার উপর আঙ্গুলগুলির চাপ পড়ে। অতঃপর হাতের পাতা শূন্য রাখিয়া ক্রমশঃ আঙ্গুলগুলি টানিয়া পায়ের টাখনার দিকে আনিবে। আর যদি হাতের পাতাসহ মোজার উপরে টানিয়া আনে, তবে তাহাও দুরুস্ত আছে।
৭। মাসআলাঃ যদি কেহ উল্টা মছহে করে অর্থাৎ, টাখনার দিক হইতে টানিয়া পায়ের আঙ্গুলের দিকে আনে তবুও মছহে দুরুস্ত হইবে, কিন্তু এরূপ করা মোস্তাহাবের খেলাফ। যদি লম্বাভাবে মছহে না করিয়া মোজার চওড়া দিকে মছহে করে, তবুও মছহে দুরুস্ত হইবে; কিন্তু মোস্তাহাবের খেলাফ হইবে।
৮। মাসআলাঃ যদি শুধু মোজার তলার দিকে বা গোড়ালীর দিকে মছহে করে, তবে দুরুস্ত হইবে না।
৯। মাসআলাঃ আঙ্গুলগুলি সম্পূর্ণ না লাগাইয়া যদি কেবল আঙ্গুলের মাথা লাগাইয়া উপরের দিকে টানিয়া আনে, মছহে দুরুস্ত হইবে না। কিন্তু যদি আঙ্গুল হইতে অনবরত পানি ঝরিতে থাকে এমন কি, ঐ পানি বহিয়া তিন আঙ্গুল পরিমাণ মোজায় লাগিয়া যায়, তবে অবশ্য মছহে দুরুস্ত হইবে।
১০। মাসআলাঃ মছহের মোস্তাহাব হইল হাতের আঙ্গুলের ভিতর দিক দিয়া মছহে করিবে। আঙ্গুলের পিঠ দিয়া মছহে করাও দুরুস্ত আছে।
১১। মাসআলাঃ কেহ হয়ত মোজার উপর মছহে করিল না, কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে বা শিশিরের মধ্যে হাটায় মোজা ভিজিয়া গেল, তবে ইহাতেই মছহে হইয়া যাইবে।
১২। মাসআলাঃ হাতের তিন আঙ্গুল পরিমাণ স্থান প্রত্যেক মোজার উপর মছহে করা ফরয; ইহার কম মছহে করিলে দুরুস্ত হইবে না।
১৩। মাসআলাঃ যে যে কারণে ওযূ টুটিয়া যায়, তাহাতে মছহেও টুটিয়া যায়। অতএব, উপরোক্ত মুদ্দতের মধ্যে ওযূর সঙ্গে সঙ্গে মছহে করিবে। মোজা খুলিলেও মছহে টুটিয়া যায়; সুতরাং যদি কাহারও ওযূ টুটিয়া না থাকে, কেবল মোজা খুলিয়া গিয়া থাকে, তবে তাহার মছহে টুটিয়া যাইবে, তখন শুধু উভয় পা ধুইয়া লইবে, আবার পুরা ওযূ করিতে হইবে না।
১৪। মাসআলাঃ যদি একটি মোজা খুলিয়া থাকে, তবুও মছহে টুটিয়া যাইবে; এখন অপরটিও খুলিয়া উভয় পা ধোয়া ওয়াজিব হইবে।
১৫। মাসআলাঃ মছহের মুদ্দত পুরা হইয়া গেলেও মছহে টুটিয়া যায়। সুতরাং যদি ওযূ না টুটিয়া থাকে, আর মছহের মুদ্দত শেষ হইয়া যায়, তবে মোজা খুলিয়া শুধু পা দুইখানি ধুইয়া লইবে; পুরা ওযূ করিতে হইবে না। আর যদি ওযূ টুটিয়া যাইয়া থাকে, তবে মোজা খুলিয়া সম্পূর্ণ ওযূ করিবে।
১৬। মাসআলাঃ মোজার উপর মছহে করার পর কোথাও পানির মধ্যে পা পড়িয়া গিয়াছে, ঢিলা থাকার কারণে মোজার ভিতরে পানি ঢুকিয়া সম্পূর্ণ পা বা পায়ের অর্ধেকের বেশী ভিজিয়া গিয়াছে, এ রকম অবস্থা হইলেও মছহে টুটিয়া যাইবে, উভয় পায়ের মোজা খুলিয়া ভালরূপে পা ধুইতে হইবে।
১৭। মাসআলাঃ মোজা এত ছিঁড়িয়া গিয়াছে যে, হাঁটিবার সময় পায়ের ছোট আঙ্গুলের তিন আঙ্গুল পরিমাণ খুলিয়া যায়, এমতাবস্থায় মোজার উপর মছহে দুরুস্ত হইবে না। আর যদি উহা অপেক্ষা কম খোলে তবে মছহে দুরুস্ত আছে।
১৮। মাসআলাঃ মোজার সেলাই খুলিয়া গিয়াছে, কিন্তু পা দেখা যায় না, মছহে দুরুস্ত হইবে। যদি হাঁটিবার সময় তিন আঙ্গুল পরিমাণ পা দেখা যায়, কিন্তু দাঁড়ান থাকিলে পা দেখা যায় না, তবে মছহে দুরুস্ত হইবে না।
১৯। একটা মোজা এতটুকু ছেঁড়া যে, ইহাতে দুই আঙ্গুল পরিমাণ পা দেখা যায়, আর অপরটির এক আঙ্গুল পরিমাণ দেখা যায়, তবে মছহে দুরুস্ত হইবে। একটা মোজারই কয়েক জায়গা ছেঁড়া, কিন্তু সব মিলাইয়া তিন আঙ্গুল পরিমাণ হয়, তবে মছহে দুরুস্ত হইবে না। যদি সব ছেঁড়া মিলাইয়াও তিন আঙ্গুল পরিমাণ না হয়, তবে মছহে দুরুস্ত হইবে।
২০। মাসআলাঃ কেহ বাড়িতে মছহে করা শুরু করিয়াছে, কিন্তু এক দিন এক রাত পুরা হওয়ার পূর্বেই সফরে গিয়াছে; তবে এখন সে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মছহে করিতে পারিবে। আর যদি সফর শুরু করার পূর্বেই এক দিন এক রাত গুযারিয়া থাকে, তবে মুদ্দত পুরা হইয়া গিয়াছে, এখন আর মছহে করিতে পারিবে না। পা ধুইয়া আবার মোজা পরিতে হইবে।
২১। মাসআলাঃ কেহ সফরে থাকাকালে মছহে করা শুরু করিয়াছিল, এখন বাড়ি আসিয়া যদি এক দিন একরাত হইয়া যায়, তবে মোজা খুলিয়া ফেলিবে, আর মছহে করিতে পারিবে না। যদি এক দিন এক রাতও না হইয়া থাকে, তবে এক দিন এক রাত পর্যন্ত মছহে করিতে পারিবে, ইহার বেশী পারিবে না।
২২। মাসআলাঃ কাপড়ের মোজার উপর যদি চামড়ার মোজা পরিয়া থাকে, তবুও মছহে জায়েয হইবে।
২৩। মাসআলাঃ কাপড়ের মোজার উপর মছহে করা জায়েয নহে, কিন্তু যদি কাপড়ের মোজার উপর চামড়া লাগাইয়া লয় বা অন্ততঃ পুরুষের জুতার পরিমাণ চামড়া লাগাইয়া লয়, অথবা যদি কাপড়ের মোজা এমন শক্ত ও মোটা হয় যে, বাঁধা ছাড়াই পায়ে দাঁড়াইয়া থাকে এবং পায়ে দিয়া তিন চারি মাইল পথ হাঁটা যাইতে পারে এই সব ছুরতে কাপড়ের মোজার উপর মছহে করা দুরুস্ত হইবে।
২৪। মাসআলাঃ বোরকা এবং হাত-মোজার উপর মছহে করা জায়েয নহে।
২৫। মাসআলাঃ বুটজুতা যদি পাক হয় এবং ফিতা দ্বারা খুব আটিয়া বাঁধা হয় যাহাতে টাখনা পর্যন্ত পা ঢাকা থাকে তবে যেমন চামড়ার মোজার উপর মছহে করা জায়েয আছে তদ্রূপ বুটজুতার উপরও মছহে করা জায়েয আছে।
২৬। মাসআলাঃ যাহার উপর গোছল ফরয হইয়াছে, তাহার পক্ষে চামড়ার মোজার উপর মছহে করা জায়েয নহে।
২৭। মাসআলাঃ মাযূর যদি মছহে করে, তবে ওয়াক্ত গুযারিয়া গেলে যেমন তাহার ওযূ টুটিয়া যাইবে তদ্রূপ তাহার মছহে টুটিয়া যাইবে। ওযূ করিবার সময় তাহার মোজা খুলিয়া পাও ধুইতে হইবে। কিন্তু যদি ওযূ করিবার সময় এবং মোজা পরিবার সময় কোন ওযর না থাকে, তবে অন্যান্য সুস্থ লোকের ন্যায় সেও মছহে করিতে পারিবে।
২৮। মাসআলাঃ যদি কোন প্রকারে চামড়ার মোজার মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়া পায়ের অধিকাংশ স্থান ধোয়া হইয়া থাকে, তবে তাহার মছহে করা চলিবে না, মোজা খুলিয়া পা ধুইতে হইবে।

No comments:

Powered by Blogger.