Breaking News
recent

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, অধ্যায়ঃ পানীয় দ্রব্য-২য়






পরিচ্ছেদঃ ১২. পানাহারের আদবসমূহ ও তার বিধান


৫০৮৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন যিয়াফত উপলক্ষে আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উপস্থিত হতাম, যতক্ষন তিনি শুরু না করতেন ততক্ষন আমরা নিজেদের হাত (খাবারে) রাখতাম না। একবার আমরা তাঁর সঙ্গে এক খাওয়ার মজলিসে হাযির হলাম। এমন সময় একটি মেয়ে এল। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়ানো হয়েছে। সে আহারে তার হাত দিতে গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর একজন বেদুঈন এল। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িত করা হচ্ছিল। তিনি তাঁর হাত ধরে ফেললেন। 

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা না হলে শয়তান সে খাদ্যকে হালাল করে ফেলে। আর সে এ বালিকাটিকে নিয়ে এসেছে যাতে তার দ্বারা হালাল করতে পারে। তারপর আমি তার হাত ধরে ফেললে সে এ বেদুঈনকে নিয়ে এসেছে যাতে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। আমি তারও হাত ধরে ফেলেছি। সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, নিঃসন্দেহে তার (শয়তানের) হাত বালিকার (এ দু'জনের হাতের সঙ্গে) আমার হাতের মুঠোয় রয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ১১. পাত্র আচ্ছাদিত করে রাখা অর্থাৎ ঢেকে রাখা, মশকের মুখ বন্ধ করা, দরজা বন্ধ করা ও এ সময়ে আল্লাহর নাম লওয়া, শয়নকালে বাতির আগুন নিভিয়ে দেয়া এবং মাগরিবের পর ছেলেমেয়ে ও গৃহপালিত জন্তুগুলোকে আটকে রাখা মুস্তাহাব


৫০৯০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কোন খাবারের জন্য দাওয়াত করা হতো ...... অতঃপর বর্ণনাকারী আবূ মুআবিয়া (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেন। তবে তিনি এর يدفع স্থলে يُطْرَدُ এবং বালিকার বেলায় تدفع স্থলে تُطْرَدُ শব্দ উল্লেখ করেন। আর এ হাদীসে তিনি বালিকাটির আসার পূর্বে বেদুঈনের আগমণের কথা উল্লেখ করেছেন এবং হাদীসের শেষাংশে তিনি বলেছেন, অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহ বলেন এবং আহার গ্রহণ করেন। 

আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে তিনি প্রথমে বালিকার আগমণ ও পরে বেদুঈনের আগমণের কথা উল্লেখ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১২. পানাহারের আদবসমূহ ও তার বিধান



৫০৯১.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, যখন কোন লোক তার গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে ও আহারকালে মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, তখন শয়তান (তার সাথীদের) বলে, তোমাদের (এখানে) রাত্রি যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে কিন্তু প্রবেশকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রিবাসের (থাকার) জায়গা পেয়ে গেলে। আর যখন সে আহারের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে না, তখন সে বলে, তোমাদের রাত্রি যাপন ও রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা হল। 

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, ...... অতঃপর বর্ণনাকারী আবূ আসিম (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রেওয়ায়াত করেন। তবে তিনি لَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ طَعَامِهِ শব্দের স্থলে وَإِنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ عِنْدَ طَعَامِهِ এবং فَلَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ এর স্থলে وَإِنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ عِنْدَ دُخُولِهِ বলেছেন।


৫০৯২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বাম হাতে খাবে না। কারণ শয়তান বাম হাতে খায়।

৫০৯৩.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন আহার করে, তখন সে যেন ডান হাতে আহার করে। আর যখন পান করে সে যেন ডান হাতে পান করে। কারণ শয়তান বাম হাতে আহার করে এবং বাম হাতে পান করে।

৫০৯৪.    কুতায়বা (রহঃ) ... (মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) থেকে), অন্য সনদে ইবনু নুমায়র (রহঃ) পিতা নুমায়র থেকে, অপর একটি সনদে ইবনু মুসান্না (রহঃ) ইয়াহইয়া আল-কাততান (রহঃ) থেকে, শেষোক্ত দু'জন উবায়দুল্লাহ থেকে, আর তারা সকলে যুহরী (রহঃ) থেকে সুফিয়ান (রহঃ) এর (অনুরূপ) সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

৫০৯৫.    আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বাম হাতে পানাহার না করে। কারণ শয়তান বাম হাতে পানাহার করে। বর্ণনাকারী বলেন, নাফি (রহঃ) এতে অধিক বলতেন, বাম হাতে যেন (কিছু) গ্রহণ না করে এবং প্রদানও না করে। আবূ তাহির (রহঃ)-এর বর্ণনায় أَحَدٌ مِنْكُمْ এর স্থলে أَحَدُكُمْ শব্দ রয়েছে।

৫০৯৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বাম হাতে আহার করছিল। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ডান হাতে খাও। সে বললো, আমি পারবো না। তিনি বললেনঃ তুমি যেন না-ই পার। অহঙ্কারই তাকে বাধা দিচ্ছে। সালামা (রাঃ) বলেন, সে আর তা (তার ডান হাত) মুখের কাছে তুলতে পারেনি।

৫০৯৭.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর লালন পালনে ছিলাম। খাবার পাত্রে আমার হাত চতুর্দিকে যেত। তিনি আমাকে বললেনঃ হে বালক! বিসমিল্লাহ বল, তোমার ডান হাতে খাও এবং নিজ পার্শ্ব থেকে খাও।

৫০৯৮.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আহার করলাম। আমি বর্তনের বিভিন্ন পাশ থেকে গোশত নিতে লাগলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি নিজ পাশ থেকে খাও।

৫০৯৯.    আমুর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশক উল্টিয়ে ধরে (মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে) পান করতে নিষেধ করেছেন।

৫১০০.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশক উল্টিয়ে ধরে এর মুখে মুখ লাগিয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।

৫১০১.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী মা'মার বলেছেন خْتِنَاثُهَا অর্থ মশকের মাথা উল্টিয়ে তাতে মুখ লাগিয়ে পান করা।

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দাঁড়িয়ে পান করা প্রসঙ্গে


৫১০২.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করা ব্যাপারে ধমক দিয়েছেন।

৫১০৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যাক্তির দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদা বলেন, আমরা বললাম, তবে খাওয়া? তিনি বললেন, সেটা তো আরো খারাপ, আরো নিকৃষ্ট।

৫১০৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী হিশাম (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) এর উক্তি উল্লেখ করেননি।

৫১০৫.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে কঠোরভাবে হুমকী প্রদান করেছেন।

৫১০৬.    যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।

৫১০৭.    আব্দুল জাব্বার ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কখনো দাঁড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে গেলে সে যেন পরে বমি করে ফেলে।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা


৫১০৮.    আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যমযম থেকে পানি পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়ান অবস্থায় তা পান করেন।

৫১০৯.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযম কূপ থেকে বালতি দিয়ে পানি তুলে দাঁড়িয়ে পান করেছেন।

৫১১০.    সুরায়জ ইবনু ইউনুস, ইয়াকুব দাওরাকী ও ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে যমযম থেকে পানি পান করেছেন।

৫১১১.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যমযম থেকে পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়িয়ে পান করেছেন এবং তিনি পানি চেয়ে পাঠালেন, তখন তিনি বায়তুল্লাহর সন্নিকটে ছিলেন।

৫১১২.    মুহাম্মদ ইবনু বাশশার ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের উভয়ের হাদীসে আছে আমি তাঁর কাছে একটি বালতি নিয়ে আসলাম।

পরিচ্ছেদঃ ১৫. পান করার সময় সরাসরি পাত্রে শ্বাস ফেলা মাকরূহ এবং পাত্রের বাইরে তিনবার শ্বাস গ্রহন করা মুস্তাহাব


৫১১৩.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রহঃ) [তার পিতা] থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের ভিতরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে নিষেধ করেছেন।

৫১১৪.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার সময় তিনবার পাত্রে (পাত্রের বাইরে) শ্বাস গ্রহণ করতেন। (তিন শ্বাসে পান করতেন)।

৫১১৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পান করার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার শ্বাস গ্রহণ করতেন এবং বলতেন এতে উত্তমরুপে তৃপ্তিলাভ হয়, পিপাসার ক্লেশ সত্বর দূর হয় এবং অতি সহজে গলাধঃকরণ হয়। আনাস (রাঃ) বলেন, পান করার সময় আমিও তিনবার শ্বাস প্রহণ করে থকি।

৫১১৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী হিশাম فِي الشَّرَابِ শব্দের স্থলে فِي الإِنَاءِ (পাত্রে) বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. পানি, দুধ ইত্যাদি পরিবেশনে সূচনাকারী (পরিবেশক) তার ডান থেকে আরম্ভ করবে


৫১১৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পানি মিশ্রিত কিছু দুধ আনা হলো। তার ডানদিকে ছিল একজন বেদুঈন, বামদিকে ছিল আবূ বাকর (রাঃ)। তিনি পান করলেন। তারপর উক্ত বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেনঃ ডান, অতঃপর ডানে অধিক অধিকার সম্পন্ন।

৫১১৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমণ করেন তখন আমার বয়স ছিল দশ বছর। তিনি যখন ইন্তেকাল করেন তখন আমার বয়স বিশ বছর। আমার মা-খালাগণ আমাকে তাঁর খিদমত করার জন্য উৎসাহিত করতেন। একদিন তিনি আমাদের বাড়িতে আগমণ করলে, আমরা তাঁর জন্য পালিত ছাগলের দুধ দোহন করলাম, বাড়ির একটি কুপ থেকে কিছু পানি মিশ্রিত করা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁর বামদিকে ছিলেন। উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আবূ বকরকে দিন। কিন্তু তিনি তার ডানদিকের বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেনঃ ডনি দিক থেকে, ডানরা অধিক অধিকার সম্পন্ন।


৫১১৯.    ইয়াহয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু হুজর ও আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়িতে আগমণ করে (কিছু) পান করতে চাইলেন। আমরা তাঁর জন্য একটি বকরী দোহন করলাম। অতঃপর আমি আমার এ কুপটি থেকে কিছু পনি দুধের সঙ্গে মিশ্রিত করলাম। তিনি (আনাস) বলেন, তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। 

আবূ বকর (রাঃ) তার বামদিকে ছিলেন। উমরে (রাঃ) তাঁর সামনে আর এক বেদুঈন ছিল তার ডানদিকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পান করা শেষ করলেন, তখন উমর (রাঃ) আবূ বকরকে দেখিয়ে দিয়ে তাঁকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, এই তো আবূ বকর (তাকে দিন)। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও উমার (রাঃ) কে (আগে) না দিয়ে সে বেদুঈনকে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ডানদিকের লোকদের, ডানদিকের লোকদেরই অগ্রাধিকার রয়েছে। আনস (রাঃ) বলেন, সুতরাং তাই সুন্নাত, তাই সুন্নাত, তাই সুন্নাত।


৫১২০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা'দ সাঈদী (রাঃ) থেকে-বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু পানীয় আনা হলে তিনি কিছু-পান করলেন। তাঁর ডানদিকে ছিল একটি বালক আর বামদিকে কতিপয় বয়স্ক লোক। তিনি বালকটিকে বললেন, তুমি কি তাদেরকে দেয়ার জন্য আমাকে অনুমতি দিবে? বালকটি বললো না, আল্লাহর কসম! আপনার কাছ থেকে প্রাপ্ত আমার অংশে আমি কাউকে প্রাধান্য দিব না। আনাস (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধের পেয়ালা তার হাতেই দিয়ে দিলেন।

৫১২১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ রিওযায়াত করেছেন। তবে তারা উভয়ে فَتَلهُ (তার হাতে দিলেন) শব্দটি উল্লেখ করেননি। কিন্তু ইয়াকুব (রহঃ) এর বর্ণনায় فَتَلهُ এর স্থলে فَأَعْطَاهُ (তাকেই দিলেন) কথাটি উল্লেখিত হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. আঙ্গুল ও বর্তন চেটে খাওয়া এবং পড়ে যাওয়া খাদ্যে যে ধুলাবালু লেগেছে তা মুছে খাওয়া মুস্তাহাব। আর চেটে খাওয়ার পূর্বে হাত মুছে ফেলা মাকরূহ। কারণ ঐ অবশিষ্ট অংশের মধ্যে খাদ্যের বরকত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং তিন আঙ্গুলে খাওয়া সুন্নত হওয়া প্রসঙ্গে


৫১২২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, সে যেন স্বীয় হাত মুছে না ফেলে যতক্ষন না সে তা চেটে খায় বা অন্যকে দিয়ে চাটায়।

৫১২৩.    হারুন ইবনু আবদুল্লাহ, আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... (ইবনু জুরায়জ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাবার খায়, সে যেন তার হাত মুছে অথবা ধুয়ে না ফেলে যতক্ষন না সে তা নিজে চেটে খায় বা অন্যকে দিয়ে চাটায়।

৫১২৪.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার আঙ্গুল তিনটি থেকে খানা চেটে খেতে দেখেছি। তবে ইবনু হাতিম (রহঃ) ثلاَثَ (তিন) শব্দটি উল্লেখ করেননি। আর ইবনু আবূ শায়বা তাঁর রিওয়ায়াতে আবদুর রাহমান ইবনু কা’ব (রহঃ) সুত্রে তাঁর পিতা থেকে সনদটির কথা বলেছেন।

৫১২৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ... কা’ব ইবনু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঙ্গুলে আহার করতেন এবং হাত মুছে ফেলার পূর্বে তা চেটে খেতেন।

৫১২৬.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঙ্গুলে আহার করতেন এবং আহার শেষে আঙ্গুলগুলো চেটে খেতেন।

৫১২৭.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৫১২৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল ও বর্তন চেটে খেতে আদেশ করেছেন। আর তিনি বলেছেনঃ তোমরা জানো না (খাদ্যের) কোন অংশে বরকত আছে।

৫১২৯.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো লুকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয়। অতঃপর তাতে যে ময়লা লেগেছে তা যেন দূর করে এবং খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন তা ফেলে না রাখে। আর তার আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে।

৫১৩০.    ইসহাক ইবুন ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... সুফিয়ান (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তাঁদের উভয়ের হাদীসে আছে, সে যেন তার হাত রুমাল দ্বারা মুছে না ফেলে যতক্ষণ না সে নিজে তা চেটে খায় বা অন্যকে দিয়ে চাটায়। এরপরে অবশিষ্ট অংশ বর্ননা করেছেন।

৫১৩১.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্গিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান তোমাদের প্রতিটি কাজে উপস্থিত হয়। এমনকি তোমাদের কারো আহারের সময়ও সে উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের কারো যদি লুকমা পড়ে যায়, সে যেন লেগে যাওয়া ময়লা দূর করে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। আহার শেষে সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না, তার খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে।

৫১৩২.    আবূ কূরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) খেকে উল্লেখিত সনদে রিওয়ায়াত করেছেন যে, যখন তোমাদের কারো লুকমা পড়ে যায় ...... হাদীসের শেষ পর্যন্ত। তবে আবূ মুআবিয়া (রহঃ) হাদীসের প্রথমাংশ "শয়তান তোমাদের প্রতিটি কাজে উপস্থিত হয়" ...... উল্লেখ করেননি।

৫১৩৩.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চেটে খাওয়া প্রসঙ্গে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। আবূ সুফইয়ান (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন, তিনিও তাদের দু'জনের হাদীসের ন্যায় লুকমার কথা উল্লেখ করেছেন।

৫১৩৪.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আবূ বকর ইবনু নাফি আবদী (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন খাবার খেতেন তখন তাঁর আঙ্গুল তিনটি চেটে নিতেন এবং তিনি বলেছেনঃ যদি তোমাদের কারো লুকমা পড়ে যায় তবে সে যেন তা থেকে ময়লা দূর করে এর খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে, শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। আর তিনি আমাদের বাসন মুছে খেতে আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, কেননা তোমরা জান না, তোমাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে।


৫১৩৫.    মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি আহার করে, সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে। 

আবূ বাকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... হাম্মাদ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি বর্ণিত। তবে তিনি বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন বাসন মুছে খায়, আর তিনি فِي أَىِّ طَعَامِكُمُ الْبَرَكَةُ أَوْ يُبَارَكُ لَكُمْ উল্লেখ করেছেন।


পরিচ্ছেদঃ ১৮. মেযবানের দাওয়াত ছাড়াই যদি কেউ মাহমানের অনুগামী হয়, তবে মেহমান কি করবে? অনুগমনকারীর জন্য মেযবান থেকে অনুমতি নেয়া মুস্তাহাব



৫১৩৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ শু'আয়ব নামক জনৈক আনসারী ব্যক্তি ছিলেন, তার একজন কসাই গোলাম ছিল। লোকটি একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখে তাঁর চেহারায় ক্ষুধার আভাস উপলব্ধি করলেন। পরে তার গোলামকে বললো, ওহে কপাল পোড়া! আমাদের পাঁচজনের জন্য তুমি খাবার প্রস্তুত কর। কেননা আমি পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত দিতে ইচ্ছা করেছি। 

তিনি (বর্ণনাকারী) বললেন, তখন সে খাবার প্রস্তুত করলো। অতঃপর লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে সহ পাঁচজনকে দাওয়াত দিল। এক ব্যক্তি তাঁদের অনুগমন করলো। দরজা পর্যন্ত পৌছলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটি আমাদের অনুসরণ করেছে। তুমি ইচ্ছা করলে তাকে অনুমতি দিতে পার, আর যদি চাও, তবে সে ফিরে যাবে। লোকটি বললো, না, আমি বরং তাকে অনুমতি দি ইয়া রাসুলাল্লাহ!।



৫১৩৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, নাসর ইবনু আলী জাহযামী, আবূ সাঈদ আশাজ্জ, উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জারীর (রাঃ) এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। 

নাসর ইবনু আলী এই হাদীসে তাঁর বর্ণনায় বলেন, আবূ উসামা (রহঃ) আ'মাশ (রহঃ) শাকীক ইবনু সালমা (রহঃ) এবং আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) এ সুত্র পরম্পরায় তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।


৫১৩৮.    মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে এবং অন্য সনদে সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৫১৩৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন পারসিক প্রতিবেশী ভাল ঝোল (সুপ ইত্যাদি) পাকাতে পারতো। একবার সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত করে তাঁকে দাওয়াত করতে আসলো। তিনি আয়িশার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এই আয়িশাও আমার সঙ্গে যাবে। সে বললো, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (তাহলে আমিও) না। এরপর সে আবার তাঁকে দাওয়াত করতে আসল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ আয়িশাও। সে বললো, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (তা হলে আমিও) না। এরপর সে আবার তাঁকে দাওয়াত করতে আসল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনিও? লোকটি তৃতীয়বারে বললো, হ্যাঁ। অতঃপর তারা দু'জনেই উঠলেন এবং একজনের পিছনে আর একজন চলে তার বাড়িতে এসে পৌঁছলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. মেযবানের সন্তুষ্টি সম্পর্কে পরিপূর্ণ নিশ্চিত থাকলে অন্যকে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে উপস্থিত হওয়া জায়েয। আর সমবেতভাবে খাওয়া মুস্তাহাব



৫১৪০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক দিনে কিংবা এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আবূ বাকর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) কে দেখতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ সময় কিসে তোমাদের বাড়ি থেকে বের করেছে? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ!। ক্ষুধার তাড়নায়। তিনি বললেন, যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ, যা তোমাদের বের করে এনেছে, আমাকেও তাই বের করে এনেছে। চলো। তাঁরা তাঁর সাথে চলতে লাগলেন। অতঃপর তিনি এক আনসারীর বাড়িতে এলেন। তখন তিনি গৃহে ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী তাঁকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) দেখে বললো, মারহাবা ওয়া আহলান (مَرْحَبًا وَأَهْلاً)। (সুস্বাগতম আসুন নিজের বাড়িতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, অমুক কোথায়? 

মহিলাটি বললো, তিনি আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন। তখনই আনসারী লোকটি উপস্থিত হয়ে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দুই সঙ্গীকে দেখতে পেয়ে বললেন, আল্লাহর শোকর, আজ মেহমানের দিক থেকে আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। অতঃপর তিনি গিয়ে একটি খেজুরের কাঁদি নিয়ে আসলেন। তাতে কাঁচা পাকা ও শুকনা খেজুর ছিল। তিনি বললেন, আপনারা এ খেজুর থেকে খেতে খাকুন। এ সময় তিনি একটি ছুরি নিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, সাবধান, দুধওয়ালা বকরি যবেহ করবে না। 

তারপর তাদের জন্য বকরি যবেহ করলে তারা বকরি ও কাদির খেজুর খেলেন ও (মিঠা) পানি পান করলেন। তাঁরা যখন ক্ষুধা নিবারন করলেন ও পরিতৃপ্ত হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও উমার (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! কিয়ামতের দিন এ নিয়ামত সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। ক্ষুধা তোমাদের ঘর থেকে বের করে এনেছে অথচ তোমরা এ নিয়ামত লাভ না করে প্রত্যাবর্তন করনি।


৫১৪১.    ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবূ বাকর (রাঃ) বসা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে উমার (রাঃ)ও ছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এসে বললেনঃ কিসে তোমাদের এখানে বসিয়ে রেখেছে? তাঁরা বললেন সে সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন। ক্ষুধা আমাদের গৃহ থেকে থেকে আমাদের বের করে নিয়ে এসেছে ...... তারপর বর্ণনাকারী খালফ ইবনু খালীফা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেন।


৫১৪২.    হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পরিখা খননের সময় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে ক্ষুধার লক্ষণ দেখতে পেলাম। তারপর আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে এসে তাকে বললাম, তোমার নিকট কিছু আছে কি? কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অতি ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখেছি। সে একটি চামড়ার থলে বের করলো, যাতে এক সা' পারিমাণ যব ছিল। আর আমাদের একটি গৃহপালিত বাচ্চা মেষ ছিল। আমি সেটা যবেহ করলাম, আর স্ত্রী যবগুলো পিষে নিল। আমার কাজ সমাধার সাথে সাথে সেও তার কাজ সমাধা করলো। আমি (রান্নার জন্য) গোশত কেটে ডেগচিতে রাখলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফিরে এলাম। (যাওয়ার সময়) স্ত্রী আমাকে বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সঙ্গীদের দ্বারা (অধিক লোকের দাওয়াত করে) আমাকে লজ্জিত করবেন না। 

তিনি বলেন, অতঃপর আমি তাঁর কাছে এসে চুপেচুপে তাঁকে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা একটি মেষ যবেহ করেছি আর আমার স্ত্রী আমাদের এক সা' পরিমাণ যব ছিল, তাই পিষে নিয়েছে। কাজেই আপনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চকণ্ঠে বললেন, হে পরিখা খননকারীরা! জাবির তোমাদের জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত করেছে। তোমরা সকলে চল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, আমি না আসা পর্যন্ত তোমাদের ডেগ (চুলা থেকে) নামাবে না এবং খামীর দিয়ে রুটি তৈরি করবে না। 

আমি এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে আসলেন। আমি আমার স্ত্রীর কাছে এলে সে আমাকে (তিরস্কার করে) এই দেখে বললো, (তোমার সর্বনাশ হোক, তোমার সর্বনাশ হোক)। আমি বললাম, আমি তাই করেছি, তুমি যা আমাকে বলেছিলে। অতঃপর সে খামীরগুলো বের করলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে একটু লালা দিলেন এবং বরকতের দু’আ করলেন। অতঃপর তিনি ডেগের কাছে গিয়ে তাতেও একটু লালা দিলেন এবং বরকতের দু’আ করলেন। 

তারপর তিনি বললেন, রুটি প্রস্তুতকারিনাকে ডাক, যে তোমার সাথে রুটি প্রস্তুত করবে। আর তুমি ডেগ থেকে পেয়ালা ভরে ভরে নিবে। আর ডেগ (চুলা থেকে) নামাবে না। তারা ছিলেন এক হাজার লোক। আল্লাহর কসম! তাঁরা সকলে আহার করলেন। অবশেষে তাঁরা তা ছেড়ে এমন অবস্থায় ফিরে গেলেন যে, আমাদের ডেগ পুর্বের মত উথলাচ্ছিল। আর আমাদের খামীর থেকে আগের মত রুটি তৈরি করা হচ্ছিল।



৫১৪৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) আবূ তালহা (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) কে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুর্বল আওয়াজ শুনে বুঝতে পেরেছি যে, তাঁর ক্ষুধা পেয়েছে। তাই তোমার নিকট কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি যবের কয়েক টুকরা রুটি বের করলেন। তারপর তার ওড়না নিলেন এবং এর একাংশ দ্বারা রুটিগুলো পেঁচিয়ে আমার কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন আর অন্য অংশ আমার শরীরে জড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠালেন। 

তিনি (আনাস) বলেন, আমি এগুলোসহ গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মসজিদে বসা পেলাম। তাঁর সাথে আরো লোক ছিলেন। আমি তাঁদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাকে আবূ তালহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, খাওয়ার ব্যাপারে? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীদের বললেন, সবাই চল। 

আনাস বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা দিলেন। আর আমি তাদের আগে আগে চলতে লাগলাম। অবশেষে আমি আবূ তালহার নিকট এসে তাঁকে (ঘটনা) অবহিত করলাম। তখন আবূ তালহা বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো লোকদের নিয়ে আসছেন, অথচ আমাদের নিকট সে পরিমাণ নেই যা তাদের খাওয়াতে পারি। (উম্মু সুলায়ম) বললেন, (কোন চিন্তা করো না) আল্লাহ এবং তার রাসুলই ভাল জানেন। 

আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আবূ তালহা (রাঃ) গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে এসে (উভয়ে) গৃহে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলায়মকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার নিকট যা আছে নিয়ে এস। তিনি সেই রুটিগুলো নিয়ে আসলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলে সেগুলো টুকরা টুকরা করা হলো। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) চামড়া নির্মিত ঘি এর পাত্রটি চিপে তা সালুন হিসেবে দিলেন। আর এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ইচ্ছামত কিছু পড়লেন। 

তারপর বললেন, দশজনকে আসতে বলো। তাদের ডাকা হলে তারা এসে তৃপ্তিসহ আহার করে বেরিয়ে গেলেন। তারপর তিনি বললেনঃ আরো দশজনকে ডাক। তাদের ডাকা হলে তারা পেটপুরে খেয়ে চলে গেলেন। তিনি আবার বললেনঃ দশজনকে ডাক। এভাবে দলের সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। তাঁদের দলে ছিল সত্তর কিংবা আশিজন।



৫১৪৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তালহা (রাঃ) কিছু খাবার প্রস্তুত করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমাকে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমার দিকে তাকালেন। আমি লজ্জাসহকারে বললাম, আপনি আবূ তালহার দাওয়াত গ্রহণ করুন। তখন তিনি লোকদের বললেনঃ তোমরা সকলে চলো। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো কেবল আপনার জন্য কিছু খাবার তৈরি করেছি। আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার গুলো স্পর্শ করলেন এবং এতে বরকতের দু’আ করলেন। 

তারপর বললেনঃ আমার সঙ্গীদের থেকে দশজনকে ঘরে নিয়ে এসো। তিনি তাদের বললেন, তোমরা খাও। তিনি তাদের জন্য তার আঙ্গুলের মাঝ থেকে কিছু বের করে দিলেন। তারা সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করার পর বেরিয়ে গেলেন। এরপর বললেন, আরো দশজনকে ঘরে নিয়ে এস। তারাও খেয়ে বের হয়ে গেলেন। এভাবে দশজন ঘরে প্রবেশ করেন এবং দশজন বের হয়ে যান। এমনকি তাদের মধ্য থেকে একজনও অবশিষ্ট থাকেননি যিনি প্রবেশ করে পরিতৃপ্ত হয়ে খাননি। পড়ে সে পাত্রটি ঠিকঠাক করে দেখলেন, সকলে আহার করার শুরুতে যেমন ছিল এখনও তেমনি রয়েছে।


৫১৪৫.    সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া উমাবী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তালহা (রাঃ) আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠালেন। বর্ণনাকারী ইবনু নুমায়র (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেন। তবে হাদীসটির শেষাংশে তিনি বলেন, এরপর তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশিষ্টাংশ একত্রিত করে এতে বরকতের দু’আ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ পরে তা যেমনি ছিল, পুনরায় তেমনি হয়ে গেল। আর তিনি বললেনঃ এ থেকে তোমরা নিতে থাক।

৫১৪৬.    আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শুধুমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাবার প্রস্তুত করতে আবূ তালহা (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) কে নির্দেশ দিলেন। তারপর তিনি আমাকে তার নিকট পাঠালেন ...... তারপর বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। এতে তিনি বলেছেন, তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে হাত রাখলেন এবং আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ্‌) উচ্চারণ করলেন। তারপর বললেনঃ দশজনকে আসতে বলো। তাদের আসতে বললে তারা প্রবেশ করলো। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা বিসমিল্লাহ বলে আহার কর। তারা আহার করলো। এমনিভাবে আশিজনের সঙ্গে এরূপ করলেন। অবশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বাড়ির লোকেরা আহার করলেন এবং তারা কিছু অবশিষ্টও রেখে গেলেন।

৫১৪৭.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আবূ তালহা (রাঃ) এর খাবারের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। এতে বর্ণনাকারী বলেছেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসা পর্যন্ত আবূ তালহা (রাঃ) দরজায় দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর তাঁকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এতো সামান্য (খাবার) মাত্র। তিনি বললেনঃ তাই নিয়ে এস। আল্লাহ অবশ্যই এতে বরকত দান করবেন।

৫১৪৮.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, এ হাদিস বলেছেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার করলেন। গৃহবাসীরাও আহার করলো। তারা কিছু অবশিষ্ট রাখলেন যা তাদের প্রতিবেশীদের নিকট পৌছানো হল।


৫১৪৯.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তালহা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মসজিদে কাত হয়ে শুয়ে আছেন এবং পেট ও পিঠ ওলট পালট করছেন। তখন তিনি উম্মু সুলায়ম (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন, আমি দেখতে পেয়েছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কাত হয়ে শুয়ে পেট ও পিঠে ওলট-পালট করছেন। আমার মনে হলো, তিনি ক্ষুধার্ত। অতঃপর বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত হাদীসটি রিওয়ায়াত করেন।

এতে তিনি বলেছেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহা (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ও আনাস (রাঃ) আহার করলেন। কিছু অবশিষ্ট থেকে গেল। আমরা তা প্রতিবেশীদের নিকট হাদিয়া পাঠালাম।



৫১৫০.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজীবী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাকে দেখতে পেলাম, তিনি তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলছেন। আর তিনি তাঁর পেট একটি বস্ত্রখন্ড দ্বারা পট্রি বেধে রেখেছেন। মধ্যবর্তী বর্ণনাকারী উসামা বলেন, (পট্রি) পাথরসহ ছিল কিনা, এতে আমার সন্দেহ রয়েছে। আমি তাঁর কোন সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন? তারা বললেন, ক্ষুধার কারণে। 

এরপর আমি আবূ তালহা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি উম্মু সুলায়ম বিনত মিলহান (রাঃ) এর স্বামী ছিলেন। আমি বললাম, আব্বা! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম তিনি কাপড় দিয়ে তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন। আমি তার জনৈক সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেন, ক্ষুধার কারণে। তারপর আবূ তালহা (রাঃ) আমার মাতার কাছে গেলেন এবং বললেন, কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমার নিকট কয়েক টুকরা রুটি আর কয়েকটি খেজুর আছে। যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের গৃহে একাকী আসেন, তাহলে আমরা তাঁকে পরিতৃপ্ত করতে পারি। আর যদি অন্য কেউ তাঁর সঙ্গে আসে, তা হলে তাঁদের কম হবে। অতঃপর বর্ণনাকারী ঘটনাসহ পূর্ণ হাদীসটি উল্লেখ করেন।


৫১৫১.    হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ তালহার খাবারের ব্যাপারে তাঁদের (উপরোক্ত বর্ণনাকারীদের) হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ২০. ঝোল খাওয়া জায়েয এবং কদু খাওয়া মুস্তাহাব। আর মেযবান অপছন্দ না করলে, মেহমান হয়েও একই দস্তরখানে উপবেশনকারীদের একজন অন্যজনকে প্রাধান্য দেয়া জায়েয


৫১৫২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক দর্জি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কিছু খাবার তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করলো। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, সে দাওয়াতে আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে গেলাম। অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে যরের রুটি, কদু দেয়া ঝোল ও গোশত শুটকী উপস্থিত করলো। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম, তিনি প্লেটের চতুর্দিক থেকে কদু খুঁজে খুঁজে নিচ্ছিলেন। সেদিন থেকে আমিও কদু পছন্দ করতে লাগলাম।

৫১৫৩.    মুহাম্মদ ইবনু আলা আবু কুরায়র (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত করলো। আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। তরকারী (ঝোল) আনা হলো যাতে কদু ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে কদুগুলো খেতে লাগলেন। কদু তাঁর কাছে ভাল লাগছিল। তিনি বলেন, এরূপ দেখে আমি নিজে না খেয়ে এগুলো তাঁর কাছে এগিয়ে দিতে লাগলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর থেকে সর্বদাই কদু আমার পছন্দনীয় হয়ে যায়।

৫১৫৪.    হাজ্জাজ ইবনু শাঈর ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক দর্জি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত করলো। বর্ণনাকারী অধিক যোগ করেছেন যে, সাবিত (রহঃ) বলেছেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, এরপর আমার জন্য যদি খাদ্য প্রস্তুত করা হতো, এতে কদু দিতে আমি সক্ষম হলে তাই করা হতো।

পরিচ্ছেদঃ ২১. খেজুরের বিচি খেজুরের বাইরে ফেলা মুস্তাহাব এবং মেযবানের জন্য মেহমানের দু'আ করা, নেককার মেহমানের কাছে দু'আ চাওয়া ও মেহমানের তা সাড়া দেওয়া মুস্তাহাব



৫১৫৫.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতার নিকট আগমণ করলেন। আমরা তাঁর সামনে কিছু খাবার ও ওতবা (খেজুর চুর্ণ, পনির ও ঘি মিশিয়ে তৈরি এক প্রকার হালুয়া) উপস্থিত করলাম। তিনি কিছু খেলেন। তারপর খেজুর আনা হলে তিনি তা খেতে লাগলেন। আর বিচি গুলো মধ্যমা ও শাহাদত অঙ্গুলী একত্র করে দুআঙ্গুলের মাঝ দিয়ে ফেলতে লাগলেন। 

শু'বা বলেন, এটা আমার ধারণা। তবে ইনশা আল্লাহ এতে দু’আঙ্গুলের মাঝ দিয়ে বিচি ফেলার কথাটি আছে। তারপর তাঁর কাছে পানীয় আনা হলে তিনি তা পান করেন। পরে তিনি তাঁর ডান পাশের ব্যক্তিকে দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) বলেন, এরপর আমার পিতা তাঁর সাওয়ারীর লাগাম ধরে বললেন, আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন। তখন তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! তুমি তাদের রিযিকে বরকত দাও, তাদের ক্ষমা কর এবং তাদের প্রতি রহম কর।


৫১৫৬.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তারা উভয়েই দু’আঙ্গুলের মাঝ দিয়ে বিচি ফেলে দেয়ার ব্যাপারে (শু'বার) সন্দেহের কথা উল্লেখ করেননি।

পরিচ্ছেদঃ ২২. কাঁকুড় ও তাজা খেজুর মিশিয়ে খাওয়া


৫১৫৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী ও আবদুল্লাহ ইবনু আওন হিলালী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু জা'ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাজা খেজুরের সাথে কাঁকুড় খেতে দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ২৩. আহারকারীর বিনয়-নম্রতা মুস্তাহাব আর তার উপবেশনের পদ্ধতি


৫১৫৮.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দুই পা (গোছা) খাড়া করে উপরি বসে খেজুর খেতে দেখেছি।

৫১৫৯.    যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শুকনা খেজুর আনা হলে তিনি তা বণ্টন করতে লাগলেন এবং তিনি নিজে উঁচু উঁচু হয়ে বসা অবস্থায় দ্রুত এগুলো থেকে খাচ্ছিলেন। যুহায়র (রহঃ) এর বর্ণনায় أَكْلاً ذَرِيعًا শব্দের স্থলে أَكْلاً حَثِيثًا শব্দ উল্লেখিত হয়েছে (উভয় শব্দের অর্থই দ্রুত)।

পরিচ্ছেদঃ ২৪. একত্রে বসে আহারকারীদের জন্য এক লুকমায় দু'টি করে খেজুর ইত্যাদি খাওয়া নিষেধ, তবে যদি সাথীরা অনুমতি দেয় (তবে জায়েয)


৫১৬০.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবালা ইবনু সুহায়ম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু যুবায়র (রাঃ) আমাদের খাদ্য হিসেবে খেজুর দিতেন। সে সময় মানুষ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছিল। আমরা তাই খেয়ে থাকতাম। একবার আমরা খাচ্ছিলাম, এমন সময় ইবনু উমার (রাঃ) আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি বললেন, তোমরা একাধিক (দুই) খেজুর এক সাথে খেও না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সঙ্গে একাধিক (দুই দুই) খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি কেউ তার (সাথী) ভাই থেকে অনুমতি নিয়ে নেয় (তাহলে খেতে পারে)। শু'বা (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয়, অনুমতি নেয়ার কথাটা ইবনু উমার (রাঃ) এরই কথা।

৫১৬১.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তাদের হাদীসে শু'বা (রহঃ) এর উক্তি এবং জাবালা (রহঃ) এর এ উক্তি নেই যে, সে সময় মানুষ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছিল।

৫১৬২.    যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবালা ইবনু সুহায়ম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তির এক সঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৫. খেজুর ইত্যাদি খাদ্য পরিবারের লোকজনের জন্য সঞ্চিত রাখা


৫১৬৩.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে পরিবারের লোকদের কাছে খেজুর আছে, তারা ক্ষুধার্ত হতে পারে না।

৫১৬৪.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আয়িশা! যে বাড়িতে খেজুর নাই, সে বাড়ির লোকজন ক্ষুধার্ত। হে আয়িশা! যে বাড়িতে খেজুর নাই, সে বাড়ির লোকজন ক্ষুধার্ত অথবা (তিনি বলেছেন) ক্ষুধার্ত হয়েছে। কথাটি তিনি দু'বার অথবা তিনবার বলেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬. মদীনার খেজুরের শ্রেষ্ঠত্ব


৫১৬৫.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওযাক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদিনার দুই প্রস্তরময় প্রান্তের মাঝে উৎপন্ন খেজুরের সাতটি করে প্রত্যহ সকালে আহার করে, তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন বিষ ক্ষতি করতে পারে না।

৫১৬৬.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকালে সাতটি করে আজওয়া (মদিনায় উৎপন্ন উৎকৃষ্ট মানের খেজুর) আহার করে, সেদিন তাকে কোন বিষ বা যাদু ক্ষতি করবে না।

৫১৬৭.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ), অন্য সনদে ইসহাক ইবন ইবরাহীম (রহঃ) ... হাশিম ইবনু হাশিম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ রিওয়াত করেছেন। তবে তাদের রিওয়ায়াতে "আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি" উক্তিটি উল্লেখ করেন নি।

৫১৬৮.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু আয়্যুব ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার আলিয়া অঞ্চলের (উঁচু ভূমির) আজওয়া খেজুরে শেফা (রোগমুক্তি) রয়েছে। অথবা তিনি বলেছেনঃ প্রতিদিন সকালের এর আহার বিষনাশক (ঔষধের কাজ করে)।

পরিচ্ছেদঃ ২৭. কামআ এর ফযিলত ও এর দ্বারা চোখের চিকিৎসা


৫১৬৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জারির (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কামআ (মাশরুম) মান্না জাতীয়। আর এর পানি (রস) চোখের জন্য ঔষধ বিশেষ।

৫১৭০.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কামআ 'মান্ন' জাতীয়। আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ (বিশেষ)।

৫১৭১.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। শু'বা (রহঃ) বলেন, হাকাম (রহঃ) যখন আমার কাছে হাদীসটি বর্ণনা করলেন, তখন আমি আবদুল মালিক (রহঃ) এর হাদীসটিকে আর ‘গরীব’ (যে হাদীসের সনদের কোন স্তরে মাত্র একজন বর্ণনাকারী থাকেন) মনে করলাম না।

৫১৭২.    সাঈদ ইবনু আমর আল-আশআসী (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কামআ সে 'মান্ন' জাতীয় যা বনী ইসরাঈলের উপর মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত আল্লাহ তা'আলা অবতীর্ণ করেছিলেন আর এর রস চোখের ঔষধ (বিশেষ)।

৫১৭৩.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কামআ সে মান্ন জাতীয় যা মহান ও মহিয়ান আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর অবতীর্ণ করেছিলেন। আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ (বিশেষ)।

৫১৭৪.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কামআ সেই মান্ন জাতীয় যা মহান ও মহিয়ান আল্লাহ বনী ইসরাঈলের উপর অবতীর্ণ করেছিলেন। আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ (বিশেষ)।

৫১৭৫.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কামআ মান্ন জাতীয়, আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ (বিশেষ)।

পরিচ্ছেদঃ ২৮. কালো কাবাস (পিলু ফল) এর ফযিলত


৫১৭৬.    আবূ তাহির (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে 'মাররুয যাহরান' নামক স্থানে কাবাস (পিলু ফল) কুড়াচ্ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের শুধু কালোগুলো কুড়ানো উচিত। রাবী বলেন, আমরা তখন বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি মনে হয় বকরী চরিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, প্রত্যেক নাবীই বকরী চরিয়েছেন। (রাবী বলেন) অথবা তিনি প্রায় এরূপ কোন কথা বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৯. সিরকার ফযীলত এবং তা সালুন (বাঞ্জন) হিসেবে ব্যবহার করা


৫১৭৭.    আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিরকা কতই না উত্তম বাঞ্জন (সালুন)। তিনি أُدُمُ (বহুবচন) অথবা إِدَامُ (একবচন) বলেছেন।

৫১৭৮.    মূসা ইবনু কুরায়শ ইবনু নাফি তামীমী (রহঃ) ... সুলায়মান ইবনু বিলাল (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে তিনি نِعْمَ الأُدُمُ বলেছেন نِعْمَ الأُدُمُ - أَوِ الإِدَامُ বলে শব্দের মধ্যে কোন সন্দেহ প্রকাশ করেননি।

৫১৭৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের লোকদের কাছে সালুন চাইলে তারা বললো, সিরকা ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কিছু নেই। তখন তিনি তাই আনতে বললেন এবং খেতে খেতে বললেনঃ সিরকা কতই ভাল তরকারী, সিরকা কতই উত্তম তরকারি!

৫১৮০.    ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে তার ঘরে গেলেন। পরে এক টুকরা রুটি তাঁর সামনে উপাস্থিত করা হলে তিনি বললেনঃ কোন তরকারি আছে কি? তারা বললেন, না। তবে সামান্য কিছু সিরকা আছে। তিনি বললেন, সিরকা তো উত্তম তরকারি। জাবির (রাঃ) বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একথা শ্রবণ করার পর আমি সিরকা পছন্দ করতে থাকি। তালহা (রহঃ) বলেন, আমিও জাবির (রাঃ) এর নিকট একথা শ্রবণ করার পর থেকে সিরকা পছন্দ করতে লাগলাম।

৫১৮১.    নাসর ইবনুু-আলী জাহযামী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) তার হাত ধরে তার ঘরে নিয়ে গেলেন। এরপর বর্ণনাকারী সিরকা কত উত্তম তরকারি-পর্যন্ত ইবনু উলায়্যা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু তিনি এর পরের অংশটি উল্লেখ করেন নি।

৫১৮২.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি বাড়িতে উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে ইশারা করলে আমি তাঁর কাছে উঠে গেলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন। এরপর আমরা চললাম। অবশেষে তিনি তাঁর কোন এক স্ত্রীর গৃহে প্রবেশ করলেন। এরপর তিনি আমাকে অনুমতি দিলে আমি পর্দার ভিতরে প্রবেশ করলাম। তিনি বললেনঃ খাবার কিছু আছে কি? তারা বললেন, হ্যাঁ। পরে তিনটি রুটি আনা হলো এবং তা দন্তরখানে রাখা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি রুটি নিয়ে তাঁর সামনে রাখলেন। অন্য একটি নিয়ে আমার সামনে রাখলেন। এরপর তৃতীয়টি নিয়ে দু'ভাগ করলেন এবং এর অর্ধেক তাঁর সামনে ও বাকি অর্ধেক আমার সামনে রাখলেন। এরপর বললেনঃ কোন তরকারি কি আছে? তাঁরা বললেনঃ সামান্য সিরকা আছে। তিনি বললেন, তাই নিয়ে আস। সেটা তো কতই উত্তম তরকারি।

পরিচ্ছেদঃ ৩০. রসুন খাওয়া বৈধ। আর যে ব্যক্তি 'বড়দের' সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে, তার জন্য এটা খাওয়া বর্জন করা উচিত। এ ধরনের অন্যান্য (দুর্গন্ধযুক্ত) বস্তুর হুকুমও তাই


৫১৮৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ আইয়ুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কোন খাবার আনা হলে তিনি কিছু খেতেন আর অবশিষ্টটুকু আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। একদিন তিনি এমন কিছু খাবার পাঠিয়ে দিলেন যা থেকে কিছুই গ্রহণ করেননি; কেননা তাতে রসুন ছিল। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম- এটা কি হারাম? তিনি বললেনঃ না। তবে আমি গন্ধের দরুন ওটা অপছন্দ করি। তিনি বললেন, তাহলে আমিও অপছন্দ করবো, যা আপনি অপছন্দ করেন।

৫১৮৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেন।


৫১৮৫.    হাজ্জাজ ইবনু শাঈর ও আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর (রহঃ) ... আবূ আইয়ুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (হিজরতের সময়) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে অতিথি হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থাকতেন নীচ তলায়, আর আবূ আইয়ুব (রাঃ) থাকতেন উপর তলায়। এক রাত্রে আবূ আইয়ুব (রাঃ) জাগ্রত হয়ে বললেন, আমরা তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার উপর চলাফেরা করি। তখন তাঁরা সেখান থেকে সরে গিয়ে এক কোণে রাত কাটালেন। এরপর (সকালে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তিনি বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বললেনঃ নীচ তলায়ই বেশি সুবিধা। তখন তিনি বললেন, আপনি নীচে থাকবেন এমন ছাদে আমি উঠবো না। 

এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর তলায় এবং আবূ আইয়্যুব (রাঃ) নীচ তলায় স্থান পরিবর্তন করলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাবার তৈরি করতেন। যখন (অবশিষ্ট) খাবার ফিরিয়ে আনা হতো, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন স্থানে তাঁর আঙ্গুল লাগিয়েছেন? এরপর তাঁর আঙ্গুলের স্থান থেকে বেছে বেছে খেতেন। 

একদিন তিনি তাঁর জন্য খাবার তৈরি করলেন, যাতে ছিল রসুন। তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনা হলে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আঙ্গুলের স্থান সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁকে বলা হলো, তিনি এগুলো আহার করেননি। এতে তিনি ঘাবড়িয়ে গেলেন এবং তাঁর নিকট গেলেন। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন ওটা কি হারাম? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না। তবে আমি ওটা অপছন্দ করি। তিনি বললেন, তাহলে আপনি যা অপছন্দ করেন, আমিও তা অপছন্দ করি। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তখন ওহী আসত।


পরিচ্ছেদঃ ৩১. মেহমানের সমাদর করা ও তাকে প্রাধন্য দেওয়ার ফযীলত



৫১৮৬.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, আমি খুব ক্ষুধার্ত। তিনি তাঁর কোন এক স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালে তিনি বললেন, যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ! আমার কাছে পানি ছাড়া কিছু নেই। তিনি অন্য এক স্ত্রীর কাছে লোক পাঠলে তিনিও একই কথা বললেন। এভাবে তাঁরা সকলে একই কথা বললেন যে, সেই সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, আমার নিকট পানি ছাড়া অন্য কিছু নেই। তখন তিনি বললেন, আজ রাতে কে লোকটির মেহমানদারী করবে? আল্লাহ তার উপর রহম করবেন। 

এ সময় জনৈক আনসারী ব্যক্তি উঠে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি। এরপর লোকটিকে নিয়ে আনসারী নিজ গৃহে গেলেন এবং তার স্ত্রীকে বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বললো, না। শুধু বাচ্চাঁদের জন্য সামান্য কিছু খাবার আছে। তিনি বললেন, তুমি তাদের কিছু দিয়ে ভুলিয়ে রাখ। আর যখন মেহমান প্রবেশ করবে, তখন তুমি আলোটা দিয়ে দেবে। তুমি তাকে দেখাবে যে, আমরাও আহার করছি। সে (মেহমান) যখন খাওয়া শুরু করবে, তখন তুমি আলোর কাছে গিয়ে সেটা নিভিয়ে দেবে। 

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তারা বসে রইলেন, আর মেহমান খেতে লাগলো। সকাল বেলা তিনি (আনসারী) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলে, তিনি বললেনঃ আজরাতে মেহমানের সাথে তোমাদের দুজনের আচরণে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন।


৫১৮৭.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক আনসারী ব্যক্তির গৃহে এক মেহমান রাত যাপন করলেন। তাঁর কাছে তাঁর ও বাচ্চাদের জন্য সামান্য খাবার ছাড়া আর কিছু ছিল না। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, বাচ্চাদের ঘুমিয়ে দাও, আলোটা নিভিয়ে দাও এবং তোমার কাছে যা আছে তাই মেহমানের জন্য উপস্থিত করবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ঃ "তারা নিজেদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেয় যদিও তাদের প্রচণ্ড অভাব (ক্ষুদা) থাকে।"

৫১৮৮.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেহমান হয়ে জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে এলেন। কিন্তু তাঁর নিকট এমন কিছু ছিল না যদ্বারা তিনি তার মেহমানদারী করবেন। তখন তিনি বললেনঃ এর মেহমানদারী করার মতো কেউ আছে কি? আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন! এ সময় আবূ তালহা নামক জৗনক আনসারী ব্যক্তি উঠলেন এবং লোকটিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলেন ......। এরপর বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত হাদীসটি জারীর (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। আর তিনি ওকী' (রহঃ) এর মত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন।


৫১৮৯.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... মিক্বদাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও আমার দুই সাথী সামনের দিকে চলতে থাকলাম, এমন অবস্থায় প্রচণ্ড খাদ্যাভাবে আমার ও আমার দু'সঙ্গীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি লোপ পাচ্ছিল। পরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের কাছে নিজেদের পেশ করতে লাগলাম। কিন্তু তাঁদের কেউ আমাদেরকে গ্রহণ করলেন না। অবশেষে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলে তিনি আমাদের নিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে গেলেন। সেখানে তিনটি মেষ ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা দুধ দোহন করবে। এ দুধ আমরা ভাগ করে পান করব। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ পান করতো। আর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য তার অংশ তুলে রাখতাম। 

মিকদাদ (রাঃ) বলেন, তিনি রাতে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত না হয় আর জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। রাবী বলেন, এরপর তিনি মসজিদে এসে সালাত আদায় করতেন ও ফিরে এসে দুধপান করতেন। এক রাতে আমার কাছে শয়তান আসলো। আমি তো আমার অংশ পান করে ফেলেছিলাম। সে বললো, মুহাম্মাদ আনসারীদের কাছে গেলে তারা তাঁকে তোহফা (উপঢৌকন) দিয়ে থাকে এবং তাদের কাছে তিনি (খাদ্য) খেয়ে থাকেন। তাঁর এ সামান্য দুধের প্রয়োজনীয়তা নেই। এরপর আমি এসে সেটুকুও পান করে ফেললাম। দুধ যখন ভালভাবে আমার পেটে প্রবেশ করলো এবং আমি বুঝলাম, এ দুধ বের করার আর কোন উপায় নেই, তখন শয়তান আমার থেকে দূর সরে গিয়ে বললো, তোমার সর্বনাশ হোক তুমি কি কাণ্ড করলে! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুধপান করে ফেলেছ? তিনি এসে যখন তা পাবেন না, তখন তোমার উপর বদ দু’আ করবেন। তাতে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমার দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। 

আমার গায়ে ছিল একটা চাঁদর। যদি আমি তা আমার পদযুগলের উপর রাখি তাহলে আমার মাথা বের হয়ে পড়ে, আর যদি আমি তা আমার মাথার উপর রাখি তাহলে আমার পদযুগল বেরিয়ে পড়ে। আমার ঘুম আসছিলো না। আমার সঙ্গীদ্বয় তো ঘুমাচ্ছিল। তারা তো আমার মতো কাজ করেনি। তিনি বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে যেভাবে সালাম দিতেন সেভাবেই সালাম দিলেন। তারপর তিনি মসজিদে এসে সালাত আদায় করলেন। এরপর দুধের কাছে এসে ঢাকনা খুলে সেখানে কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি তার মাথা আসমানের দিকে তুললেন। আমি তখন (মনে মনে) বললাম, এখনই তিনি আমার ওপর বদ দু’আ করবেন, আর আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমাকে আহার করায়, তাকে তুমি আহার করাও। আর যে আমাকে পান করায়, তাকে তুমি পান করাও। 

মিকদাদ (রাঃ) বলেন, এ সময় আমি চাঁদরটি নিয়ে শরীরে বাঁধলাম, আর একটি ছুরি নিলাম, তারপর (এই ভেবে) মেষগুলির কাছে গেলাম যে, এগুলোর মাঝে যেটি সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা, আমি সেটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য যবেহ করবো। গিয়ে দেখলাম, সেটি দুধে পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য সব মেষও দুধে পরিপূর্ণ। এরপর আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারের একটি পাত্র নিয়ে এলাম যাতে তাঁরা দুধ দোহানোর কথা ভাবতেন না। (পাত্রটি বড় হওয়ার কারণে)। 

তিনি [মিকদাদ (রাঃ)] বলেনঃ আমি তাতেই দুধ দোহন করলাম, এমনকি পাত্রের উপরিভাগে ফেনা ভেসে উঠলো। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি রাতের দুধ পান করেছেন? তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি পান করুন। তিনি পান করলেন, এরপর আমাকে দিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি পান করুন। তিনি পান করে আবার আমাকে দিলেন। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং আমি তাঁর দু'আ পেয়ে গেছি, তখন আমি হাসতে হাসতে যমীনে পড়ে গেলাম। 

তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মিকদাদ! এ তোমার এক অপকর্ম (দুষ্টমি)? তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার এ ই কাণ্ড ঘটে গেছে। অথবা তিনি বলেছেন, আমি এরূপ কাজ করে ফেলেছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা একমাত্র আল্লাহর মেহেরবানী! তুমি কেন আমাকে অবহিত করলে না? আমরা আমাদের সাথীদ্বয়কে জাগ্রত করতাম, তাহলে তারাও এর ভাগ পেত! তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ! আপনি যখন পেয়েছেন, অথবা বলেছেন, আমি যখন আপনার সাথে ভাগ পেয়েছি, তখন অন্য কোন লোক পাওয়া না পাওয়ার আমি পরওয়া করি না।


৫১৯০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সুলায়মান ইবনু মুগীরা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে।


৫১৯১.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী, হামিদ ইবনু উমার বাকরাবী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একশ ত্রিশজন লোক (এক সফরে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এক সময়) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কারো কাছে খাদ্যদ্রব্য আছে কি? দেখা গেল, এক ব্যক্তির কাছে এক সা' বা অনুরূপ পরিমাণ খাদ্য আছে। তা (গুলিয়ে) খামীর করা হলো। এরপর এলোকেশী দীর্ঘদেহী এক মুশরিক ব্যক্তি কিছু বক্বরী হাকিয়ে নিয়ে এলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এগুলো বিক্রি করবে না উপহার হিসেবে দিবে? অথবা (উপহার শব্দের পরিবর্তে) তিনি দান করবে বলেছিলেন। লোকটি বললো, না, আমি বরং বিক্রি করবো। 

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার থেকে একটি বকরী খরিদ করলেন। বকরীটা যবেহ করা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কলিজা ভুনা করতে আদেশ দিলেন। রাবী আবদুর রহমান (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম, একশ ত্রিশজনের মধ্যে একজনও এমন ছিলনা যাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক টুকরা কলিজা দেন নাই। যারা উপস্থিত ছিল, তাদেরকে তো তখনই দিয়েছেন। আর যারা অনুপস্থিত ছিল তাদের জন্য তুলে রেখেছেন। রাবী বলেনঃ গোশত দুটি পাত্রে ভাগ করে রাখলেন। আমরা সকলে সে দুটি থেকে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলাম। এরপরও পাত্র দুটিতে গোশত উদ্বৃত্ত থাকলো। আমি তা উটের পিঠে বহন করে নিয়ে গেলাম। অথবা তিনি (বর্ণনাকারী) যেভাবে বর্ণনা করেছেন।



৫১৯২.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী, হামিদ ইবনু উমার বাকরাবী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা কায়সী (রহঃ) ... আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে আসহাবে সুফফায় অবস্থানকারী লোকজন ছিলেন দরিদ্র। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেনঃ যার নিকট দুজেনের খাবার আছে সে যেন তিন (তৃতীয়) একজনকে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের খাবার আছে, সে যেন পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়ে যায়। অথবা বর্ণনাকারী যেভাবে বর্ণনা করেছেন। 

রাবী বলেন, আবূ বাকর (রাঃ) তিন জন কে নিয়ে আললেন। আর আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজনকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তিন জন কে নিলেন এ কারণে যে, (আমাদের পরিবারে আমরা ছিলাম) তিনজন। আমি, আমার পিতা ও আমার মাতা। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানি না, তিনি বলেছেন, কি না যে, আমার স্ত্রী। আর ছিল আমাদের ও আবূ বাকরের বাড়িতে শরিক খাদিম। রাবী বলেন, আবূ বাকর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওখানে রাতের খানা খেলেন। এরপর তিনি অপেক্ষা করলেন। অবশেষে ইশার সালাত আদায় করা হলো। সালাত থেকে প্রত্যাবর্তন করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তন্দ্রাচন্ন হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করলেন। তারপর আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী রাতের একটি পরিমাণ অতিবাহিত হলে তিনি (ঘরে) ফিরে আসলেন। 

তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমান রেখে দেরী করলেন কেন? তিনি বললেন, কেন? তুমি কি তাঁদের রাতের খাবার খাওয়াও নি? তাঁর স্ত্রী বললেন আপনি না আসা পর্যন্ত তাঁরা আহার করতে অস্বীকার করেছেন। (কয়েকবারই) খাবার পেশ করা হয়েছে কিন্তু মেহমানরা তাঁদের (বাড়ির লোকদের) মধ্যস্থ করেছেন তারা তাদের কথা থেকে হটেননি। আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আমি গিয়ে লুকিয়ে রইলামা তিনি বললেন, হে নির্বোধ! তারপর তিনি আমাকে বকাবকি করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, ভাল হলো না। আপনারা আহার করুন। তিনি আরও বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এ আহার গ্রহণ করবো না। 

তিনি [আবদুর রহমান (রাঃ)] বলেন, আল্লাহর শপথ! আমরা যে লোকমাই গ্রহণ করছিলাম তার নীচে তার চেয়ে অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। এমনকি আমরা পরিতৃপ্ত হয়েও আমাদের খাদ্য পূর্বে যা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেল। আবূ বাকর (রাঃ) খাবারের প্রতি লক্ষ্য করে দেখলেন, তা যেমন ছিল তেমনি আছে বা তার চেয়েও অধিক হয়েছে। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে বনী ফিরাসের বোন, একি ব্যাপার! তিনি বললেন, কিছু না। আমার চোখের প্রশান্তি, এগুলি পূর্বে যা ছিল তার চেয়ে তিন গুন বেড়ে গেছে। আবদুর রহমান বলেন, এরপর আবূ বকর (রাঃ) কিছু খেলেন এবং বললেন, ওটা অর্থাৎ কসমটা ছিল শয়তানের পক্ষ থেকে। অতঃপর আরও এক লুকমা খেলেন। তারপর সেগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে গেলেন। আমিও তাঁর কাছে সকাল পর্যন্ত থাকলাম। 

তিনি বলেন, আমাদের এবং কোন এক সম্প্রদায়ের মাঝে একটি চুক্তি ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। প্রতিপক্ষ চুক্তি নবায়নের জন্য আগমন করল। আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে বিভক্ত করলাম। প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে অনেক লোক ছিল। আল্লাহই ভাল জানেন, প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে কতজন লোক ছিল। তাদের প্রত্যেকের নিকট এ খাবার পাঠানো হলো। আর তারা সকলেই সে খাবার খেলেন। অথবা বর্ণনাকারী যেভাবে বর্ণনা করেছেন।



৫১৯৩.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কিছু মেহমান আমাদের বাড়িতে এলেন। (রাবী বলেন)। আমার পিতা রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আলাপ আলোচনা করতেন। তাই তিনি যাওয়ার সময় বললেন, হে আবদুর রহমান! মেহমানদারীর সব কাজ সম্পন্ন করবে। আবদুর রাহমান বলেন, সন্ধ্যা হলে আমি মেহমানদের খাবার নিয়ে এলাম। কিন্তু তারা খেতে রাযী হলেন না। তারা বললেন, বাড়ির মালিক যতক্ষন পর্যন্ত এসে আমাদের সাথে আহার না করবেন, (ততক্ষন পর্যন্ত আমরা আহার করবো না)। আমি তাঁদের বললাম, তিনি কড়া মেজাজের (রাগী) মানুষ। আপনারা যদি আহার না করেন তাহলে আমার ভয় হচ্ছে, আমাকে তাঁর বকাবকি শুনতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা রাযী হলেনই না। 

আমার পিতা এসে প্রথমেই তাঁদের সংবাদ নিলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি মেহমানদারীর কাজ সম্পন্ন করেছ? তাঁরা বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমরা সম্পন্ন করতে পারি নি। তিনি বললেন, আমি কি আবদুর রহমানকে নির্দেশ দেইনি? আবদুর রাহমান বলেন, আমি তাঁর দৃষ্টি থেকে সরে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, হে আবদুর রহমান! আমি আরও সরে গেলাম। তিনি পুনরায় বললেন, নির্বোধ! আমি কসম করে তোমাকে বলছি তুমি যদি আমার আওয়ায শুনে থাক, তাহলে হাযির হও। তিনি বলেন, তখন আমি হাযির হয়ে বললাম, আল্লাহর কসম! আমার কোন অপরাধ নেই। আপনার মেহমানদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন আমি তাঁদের খাবার নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু আপনি না আসা পর্যন্ত তাঁরা খেতে সম্মত হলেন না। 

তখন তিনি (মেহমানদের) বললেন, আপনাদের কি হয়েছে? আপনারা কেন আমাদের আপ্যায়ন গ্রহণ করেননি? আবদুর রাহমান বলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি আজ আর খাব না। বর্ণনাকারী বলেন, তারা বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি না খাওয়া পর্যন্ত আমরাও খাব না। তিনি বললেন, তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আজকের রাতের মত এত খারাপ রাত আমি আর দেখিনি। সর্বনাশ, আপনারা কেন আমাদের মেহমানদারী গ্রহণ করবেন না? 

রাবী বলেন, তিনি বললেন, প্রথমে যা হয়েছে (না খাওয়ার কসম) তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। তোমরা খাবার নিয়ে আস। তিনি বলেন, এরপর খাবার আনা হলে তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে খেতে লাগলেন। তাঁরাও খাওয়া শুরু করল। আবদুর রাহমান (রাঃ) বলেন, পরদিন সকালে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারা তো ভাল কাজই করেছেন কিন্তু আমি কসম ভেঙ্গে ফেলেছি। তিনি (বর্ণনাকারী) বললেন, অতঃপর তিনি তাকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) ঘটনাটি খুলে বললেন। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং তুমি সবচেয়ে বেশি সৎকর্মশীল এবং সবচেয়ে ভাল। রাবী বলেন, কাফফারার কথা আমার কাছে পৌছেনি।


পরিচ্ছেদঃ ৩২. স্বল্প খাদ্য সমমর্তীতার ফযীলত এবং দু'জনের খাবার তিনজনের জন্য এবং অনুরূপ ক্রমধারায় যথেষ্ট হওয়া


৫১৯৪.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য আর তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।


৫১৯৫.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট। আর দুজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট, আবার চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট। 

ইসহাক (রহঃ) এর রিওয়ায়াতে আছে, "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন" তিনি "আমি শুনেছি" কথাটি উল্লেখ করেন নি।


৫১৯৬.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... সুফিয়ান (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে।

৫১৯৭.    ইয়াইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজনের খাবার দু'জনের জন্য যথেষ্ট। আর দুজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।

৫১৯৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এক ব্যক্তির খাবার দু'ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। দু'ব্যাক্তির খাবার চার ব্যক্তির জন্য যখেষ্ট। আর চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩. মু'মিন ব্যক্তি এক আঁতে খায় আর কাফির ব্যক্তি সাত আঁতে খায়


৫১৯৯.    যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কাফির ব্যক্তি সাত আঁতে খায় আর মুমিন খায় এক আঁতে।

৫২০০.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।

৫২০১.    আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ বাহিলী (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) জনৈক মিসকীনকে দেখলেন, সে শুধু সামনে (খাবার) রাখতে দেখলেন। আর এভাবে সে অনেক খাবার খেয়ে ফেলেছে। তিনি (নাফি') বলেন, তখন ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, তুমি এ ধরনের লোককে আর কখনো যেন আমার কাছে আনা না হয়। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কাফির ব্যক্তি সাত আঁতে খায়।

৫২০২.    মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবির ও ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন এক আঁতে আহার করে, আর কাফির সাত আঁতে আহার করে।

৫২০৩.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। এখানে বর্ণনাকারী ইবনু উমার (রাঃ) এর কথা উল্লেখ করেন নি।

৫২০৪.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনু আ'লা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মুমিন এক আঁতে খাদ্য খায়, আর কাফির সাত আঁতে খাদ্য খায়।

৫২০৫.    কুতায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁদের সকলের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে।

৫২০৬.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক কাফির ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেহমান হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বকরীর দুধ দোহন করতে আদেশ দিলেন। দুধ দোহন করা হলে লোকটি সে দুধ টুকু পান করল। এরপর অপর একটি বক্বরী দোহন করা হলে সে তাও পান করল। আবার অন্য একটি দোহন করা হলে সেটার দুধও সে পান করলো। এমনিভাবে সে সাতটি বকরীর দুধ পান করে ফেলল। পরদিন সকালে সে ইসলাম গ্রহণ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার তার জন্য একটি বকরীর দুধ দোহন করতে আদেশ দিলেন। (দোহন করা হলে) সে তা পান করল। তিনি পুনরায় আর একটি দোহন করার আদেশ দিলে সে আর তার সবটুকু পান করতে পারল না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মু'মিন এক আঁতে পান করে। আর কাফির সাত আঁতে পান করে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪. খাবারের দোষ বর্ণনা করবে না


৫২০৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাবারকে খারাপ বলেনি। কোন খাবার পছন্দ হলে খেয়েছেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন।

৫২০৮.    আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৫২০৯.    আবদ ইবনু হুমায়াদ (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৫২১০.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা, আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কখনো কোন খাবারের দোষ বর্ণনা করতে শুনিনি। তাঁর মনে চাইলে তিনি খেতেন আর মনে না চাইলে চুপ থাকতেন।

৫২১১.    আবূ কুরায়র ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।

No comments:

Powered by Blogger.