সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, অধ্যায়ঃ পানীয় দ্রব্য-১ম
পরিচ্ছেদঃ ১. মদ হারাম এবং আঙ্গুরের রস থেকে খুরমা ও কাঁচা-পাকা খেজুর এবং কিসমিস (ইত্যাদি) ও অন্যান্য নেশাকারক দ্রব্য হতে তা তৈরি হওয়ার বর্ণনা
৪৯৬৪. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদর দিবসে আমি গনীমত (যুদ্ধলব্ধ মাল) থেকে একটি বয়স্কা উটনী পেয়েছিলাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খুমুস থেকে) আমাকে আর একটি বয়স্কা উটনী দিয়েছিলেন। একদিন আমি জনৈক আনসারী ব্যক্তির দরজার সামনে সে দুটি বসিয়ে রাখলাম। আমার ইচ্ছা ছিল, সে দুটির পিঠে করে কিছু ইযখির (ঘাস) বয়ে আনবো, আর তা বিক্রয় করে ফাতিমা (রাঃ) এর ওলীমায় সাহায্য নিব। আমার সাথে ছিল বনু কায়নুকা গোত্রের জনৈক স্বর্ণকার। হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) সে বাড়িতেই মদ্যপান করছিল। তার সাথে ছিল একজন গায়িকা। সে (তার গানের মধ্যে) বললোঃ أَلاَ يَا حَمْزَ لِلشُّرُفِ النِّوَاءِ অর্থাৎ হে হামযা! হৃষ্টপুষ্ট উটনী দুটির কাছে যাও (এবং তোমার মেহমানদের জন্য তা যবেহ কর)।
এরপর হামযা সে দু'টির কাছে তরবারিসহ ছুটে গেল। পরে দুটিরই কুঁজ কেটে ফেললো এবং তাদের পাঁজর (পেট) ফেঁড়ে ফেললো। এরপর সে এ দু'টির কলিজা বের করে নিল। আমি ইবনু শিহাবকে বললাম, (বর্ণনায় কি এ কথা আছে যে,) তিনি কুঁজ (গোশত) থেকেও নিলেন? তিনি বললেন, (এভাবে আছে) কুঁজ দুটি কেটে সাথে নিয়ে গেলেন।
ইবনু শিহাব বলেন, আলী (রাঃ) বলেন, এ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। তাঁর কাছে ছিল যায়দ ইবনু হারিসা। তারপর আমি তাঁকে সমস্ত ঘটনা অবহিত করলাম। তিনি যায়দকে সাথে নিয়ে বের হলেন। আমিও তার সঙ্গে চললাম। হামযার কাছে গিয়ে তাকে কিছু কড়া কথা বললেন। হামযা (মাদকগ্রস্ত অবস্থায়) চোখ তুলে বললো, তোমরা তো আমার বাবার গোলাম বৈ কিছু নও। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছু হেঁটে চললেন এবং এভাবে তিনি তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসলেন।
৪৯৬৫. আবদ ইবন হুমায়দ (রহঃ) ...ইবন জুরায়জ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৯৬৬. আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বদরের দিন আমার জন্য গনীমত থেকে আমার অংশে একটি বয়স্কা উটনী ছিল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন এক-পঞ্চমাংশ থেকে আমাকে আর একটি পূর্ণ বয়স্কা উটনী দিয়েছিলেন। আমি যখন রাসুল-তনয়া ফাতিমা-এর সঙ্গে বাসর যাপনের ইচ্ছা করলাম, তখন বানু কায়নুকা গোত্রের জনৈক স্বর্ণকার ও আমি পরস্পর চুক্তিতে আবদ্ধ হলাম। সে আমার সঙ্গে যাবে আর আমরা (দু'জনে) ইযখির (ঘাস) নিয়ে আসবো। আমি ইচ্ছা করলাম, এগুলি স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রয় করে তা দিয়ে আমার বিবাহের ওলীমার ব্যাপারে সাহায্য নিব। আমি উট দুটির জন্য জীন, থলে এবং রশি ইত্যাদি জিনিস সংগ্রহ করছিলাম। আর আমার উট দুটি জনৈক আনসারী ব্যক্তির ঘরের পাশে বসানো ছিল। আমিও যা সংগ্রহ করবার সংগ্রহ করলাম।
এমন সময় হঠাৎ দেখি সে দুটির কুঁজ কেটে ফেলা হয়েছে,পাঁজর (পেট) ফেঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং উভয়ের কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। আমি এ দৃশ্য দেখে আমার দু'চোখ (এর অশ্রু) সহ্য করতে পারলাম না। আমি বলে উঠলম, এ কাজ কোন ব্যক্তি করলো? লোকেরা বললো, হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব। সে এ বাড়িতে আনসারদের একদল সুরাপায়ীর সাথে আছে। এক গায়িকা তাকে ও তার সাথীদেরকে গান শুনাচ্ছিল। সে তার গানে বললোঃ أَلاَ يَا حَمْزَ لِلشُّرُفِ النِّوَاءِ হে হামযা! তুমি মোটাসোটা উট দুটির প্রতি তোমার আকর্ষণ আছে কি? তখন হামযা তলোয়ার নিয়ে ডঠলো, উট দু'টির কুঁজ কেটে ফেললো, পেট (পাজর) ফেঁড়ে ফেললো এবং কলিজা বের করে নিলো।
আলী (রাঃ) বলেন, অবশেষে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তাঁর কাছে ছিল যায়দ ইবনু হারিসা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেহারার অবস্থা দেখে বুঝতে পারলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ, আজকের মত দিন আমি আর কখনও দেখিনি! হামযা আমার উট দুটির উপর চড়াও হয়ে উভয়ের কুঁজ দুটি কেটে ফেলেছে, পেট ফেঁড়ে ফেলেছে (এবং কলিজা বের করে নিয়েছে) সে ঐ বাড়িতে আছে আর তার সঙ্গে আছে সুরাপায়ীর এক দল।
তিনি বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাঁদর নিয়ে আসতে বললেন। পরে তা পরিধান করে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়দ ইবনু হারিসা তাঁর পিছনে পিছনে চললাম। অবশেষে তিনি হামযা যে ঘরে ছিল, সে ঘরের দরজায় এসে অনুমতি চাইলেন। তারা তাঁকে অনুমতি দিল। তিনি প্রবেশ করেই দেখতে পেলেন সুরাপায়ীর দল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযার কৃতকর্মের জন্য তাকে ভৎসনা করতে লাগলেন।
দেখা গেল, হামযার চোখ দুটি লাল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে তাকালো। এরপর সে তার দৃষ্টি ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে তুলে তা নিবদ্ধ করলো তাঁর হাঁটুর দিকে, তারপর আরো উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো তাঁর নাভির দিকে, এরপর দৃষ্টি তুললো তাঁর চেহারার দিকে। তারপর হামযা বললো, তোমরা তো আমার পিতার গোলাম বৈ কিছুই নও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বুঝতে পারলেন সে নেশাগ্রন্ত, তখন তিনি পিছনে হেঁটে বের হয়ে পড়লেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে বের হলাম।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কুহযায (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৯৬৭. আবূ রবী সুলায়মান ইবনু দাঊদ আতাকী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মদ হারাম হওয়ার দিন আমি আবূ তালহার বাড়িতে লোকদের মদ্যপান করাচ্ছিলাম। তারা শুকনো ও কাঁচা খেজুরের (রসে তৈরি) মদ্যপান করতো। হঠাৎ শুনতে পেলাম এক ব্যক্তি ঘোষণা দিচ্ছে। তিনি বললেন, বের হয়ে দেখ (কী ব্যাপার)। আমি বের হয়ে দেখলাম, এক ব্যক্তি ঘোষণা দিচ্ছেঃ শুনে রাখ, মদ হারাম করা হয়েছে। তিনি বলেন, এরপর মদিনার অলিগলি দিয়ে মদের ঢল প্রবাহিত হতে থাকে।
আবূ তালহা আমাকে বললেন, বের হও এবং এগুলো ঢেলে দিয়ে আস। তারপর আমি সেগুলো ঢেলে দেই। তারা সকলে বা তাদের কেউ কেউ বললেন, অমুক নিহত হয়েছে এবং অমুক নিহত হয়েছে, তাদের পেটে মদ আছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানি না একথাও আনাস (রাঃ) এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত কিনা। এরপর আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা যা খেয়েছে, তাতে তাদের কোন পাপ নেই যদি তারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ঈমান আনে ও সৎকাজ করে” (৫ঃ ৯৩)।
৪৯৬৮. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) ... আবদুল আযীয ইবনু সুহায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, লোকেরা আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলো “ফাযীখ” (খেজুরের তৈরি মদ) সমন্ধে। তিনি বললেন, তোমরা যাকে ‘ফাযীখ’ বলে থাক, তোমাদের এ ফাযীখ ছাড়া আমাদের অন্য কোন মদ-ই ছিল না। আমি আমাদের বাড়িতে আবূ তালহা, আবূ আইয়্যুব (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরো কিছু সাহাবীকে মদ্যপান করাচ্ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, তোমাদের নিকট কি কোন খবর পৌছেছে? আমরা বললাম, না। সে বললো, মদ তো হারাম করা হয়েছে। তিনি (আবূ তালহা) বললেন, হে আনাস! এ মটকাগুলো ঢেলে দাও। তিনি বলেনঃ তারা উক্ত ব্যক্তির খবরের পর কোন অনুসন্ধানও করেননি, এ সমন্ধে কোন প্রশ্নও করেননি।
৪৯৬৯. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি গোত্রের লোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে আমার চাচাদের “ফাযীখ” পান করাচ্ছিলাম। আর আমি তাদের সবার চেয়ে বয়সে ছোট ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বললো। মদ তো হারাম করা হয়েছে। তারা সকলে বললেন, হে আনাস! এ পাত্রগুলো উল্টিয়ে দাও। আমি সেগুলো উল্টে ফেলে দিলাম। তিনি বলেন, আমি আনাসকে বললাম, ফাযীখ কি? তিনি বললেন, কাঁচা-পাকা খেজুর (দ্বারা তৈরি মদ)। তিনি বলেন, আবূ বকর ইবনু আনাস বলেছেন, তখন এটাই ছিল তাদের মদ। সুলায়মান বলেনঃ আমার কাছে এক ব্যক্তি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আনাস) একথাও বলেছেন।
৪৯৭০. মুহাম্মাদ ইবনু আবদূল আলা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি গোত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদের মদ্যপান করাচ্ছিলাম। এরপর বর্ণনাকারী (পূর্ববর্তী রিওয়ায়াতের) ইবনু উলায়্যার অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেন, তারপর আবূ বাকর ইবনু আনাস বললেন, তখনকার দিনে ওটাই ছিল তাদের মদ। আনাস (রাঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি একথা অস্বীকার করেননি। ইবনু আবদুল আলা মু'তামির এর সুত্রে তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ যারা তাঁর সঙ্গে ছিল তাঁদের একজন আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, তিনি আনাসকে বলতে শুনেছেন তখনকার দিনে সেটাই ছিল তাদের মদ।
৪৯৭১. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আবূ তালহা, আবূ দুজানা ও মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) কে আনসারীদের একদল লোকসহ মদ্যপান করাচ্ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি আমাদের কাছে এসে বলল, একটি (নতুন) ব্যাপার ঘটেছে, মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর আমরা সেদিন পাত্রগুলো উপুড় করে ফেলে দিয়েছিলাম। সে মদ ছিল কাঁচা-পাকা মিশ্রিত খেজুরের তৈরি।
কাতাদা বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই মদ হারাম করা হয়েছে। তখনকার দিনে তাদের সাধারণ প্রচলিত মদ ছিলো কাঁচা-পাকা সংমিশ্রিত খেজুরের তৈরি।
৪৯৭২. আবূ গাসসান আল-মিসমাঈ, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি একটি মদ্যপাত্র থেকে, যাতে কাচা-পাকা খেজুরের মদ ছিল- আবূ তালহা, আবূ দুজানা ও সুহায়ল ইবনু বায়দা (রাঃ) কে মদ্যপান করাচ্ছিলাম। অতঃপর বর্ণনাকারী সাঈদ (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৪৯৭৩. আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে, তিনি তাঁকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁচা-পাকা খেজুর মিশিয়ে মদ তৈরি করা এবং তা পান করা থেকে নিষেধ করেছেন। যেদিন মদ হারাম করা হয়, সেদিন তা-ই ছিল তাদের সাধারণ মদ।
৪৯৭৪. আবূ তাহির (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ, আবূ তালহা ও উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে মদ্যপান করাচ্ছিলাম, যা ছিল কাঁচা ও শুকনো খেজুরের দ্বারা তৈরি। এরপর জনৈক আগন্তুক এসে বললো, মদ তো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, হে আনাস! তুমি এই কলসটির কাছে গিয়ে সেটি ভেঙে ফেল। আমি আমাদের মিহরাসটির (ছিদ্রযুক্ত পাথর) কাছে গেলাম এবং সেটিকে নিচের দিকে ফেলে দিয়ে আঘাত করলাম। ফলে সেটি ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে গেল।
৪৯৭৫. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাফর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তাআলা যে আয়াতে মদ হারাম করেছেন, সেটি এমন সময় নাযিল করেছেন, যখন মদিনায় খেজুরের তৈরি মদই পান করা হতো।
পরিচ্ছেদঃ ২. মদকে সিরকায় রূপান্তরিত করা নিষেধ
৪৯৭৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহিয়া ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মদকে সিরকায় রূপান্তরিত করা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. মদদ্বারা চিকিৎসা করা হারাম এবং তা ঔষধ হতে না পারার বিবরণ
৪৯৭৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ওয়াল আল-হাযরামী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তারিক ইবনু সুওয়ায়দ জুফী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মদ সন্মন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাঁকে নিষেধ করলেন, অথবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব খারাপ মনে করলেন। তিনি তারিক (রাঃ) বললেন, আমি তো ঔষধ প্রস্তুত করার জন্য মদ বানাই। তিনি বললেনঃ এটি তো (রোগ নিরামক) ঔষধ নয়, বরং এটি নিজেই রোগ।
পরিচ্ছেদঃ ৪. খেজুর ও আঙ্গুর থেকে যা কিছু পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়, তা-ই মদ নামে অবিহিত হওয়ার বর্ণনা
৪৯৭৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদ হয় এই দুটি বৃক্ষ থেকেঃ খেজুর ও আঙ্গুর।
৪৯৭৯. মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, মদ হয় ঐ দুটি বৃক্ষ থেকেঃ খেজুর ও আঙ্গুর।
৪৯৮০. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদ হয় ঐ দুটি বৃক্ষ থেকে আঙ্গুর ও খেজুর। আবূ কুরায়বের বর্ণনায় الْكَرْمَةِ وَالنَّخْلَةِ স্থলে الْكَرْمِ وَالنَّخْلِ রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. শুকনো খেজুর ও কিসমিস পানিতে একত্রে ভিজিয়ে নাবীয তৈরি করা মাকরূহ
৪৯৮১. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসমিস ও শুকনো খেজুর এবং কাঁচা-পাকা খেজুর একত্রে মিশ্রিত (করে নাবীয তৈরি) করতে নিষেধ করেছেন।
৪৯৮২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্র করে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও নিষেধ করেছেন কাঁচা-পাকা খেজুর একত্র মিশিয়ে নাবীয তৈরি করতে।
৪৯৮৩. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ রাফি (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা-পাকা খেজুর এবং কিসমিস ও খুরমা একত্র করে নাবীয তৈরি করো না।
৪৯৮৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসমিস ও খুরমা একত্র করে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি কাঁচা-পাকা খেজুর একত্রে ভিজিয়ে দিয়ে নাবীয তৈরি করতেও নিষেধ করেছেন।
৪৯৮৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুরমা ও কিসমিস একত্রে মিশিয়ে ভিজিয়ে নাবিয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন এবং কাঁচা ও পাকা খেজুরও একত্রে ভিজিয়ে নাবিয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।
৪৯৮৬. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (নাবীয তৈরির জন্য) কিসমিস ও শুকনো খেজুর এবং কাঁচা-পাকা খেজুর একত্রে মিশ্রিত করতে নিষেধ করেছেন।
৪৯৮৭. নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আবূ মাসলামা (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৪৯৮৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নাবীয (খেজুর বা আঙ্গুর ভেজানো পানি) পান করতে ইচ্ছুক, সে যেন কিসমিস বা শুকনো খেজুর কিংবা কাঁচা খেজুর দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে (ভিজিয়ে নাবীয বানিয়ে তা) পান করে।
আবূ বাকর ইবন ইসহাক (রহঃ) ... ইসমাঈল ইবনু মুসলিম আবদী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, আমরা যেন কাঁচা খেজুর শুকনো খেজুরের সাথে না মিশাই অথবা কিসমিস খুরমার সাথে না মিশাই কিংবা কিসমিস কাঁচা খেজুরের সাথে না মিশাই।
তিনি আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে যে তা পান করতে ইচ্ছুক ...... এরপর বর্ণনাকারী ওয়াকী (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেন।
৪৯৮৯. ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাঁচা-পাকা খেজুর একত্র করে নাবীয প্রস্তুত করবে না। কিসমিস ও খুরমা একত্র করেও নাবীয তৈরি করবে না, বরং প্রত্যেকটি পৃথকভাবে (পানিতে ভিজিয়ে) নাবীয তৈরি করবে।
৪৯৯০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
৪৯৯১. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা-পাকা খেজুর একত্র করে নাবীয তৈরি করবে না এবং পাকা খেজুর ও কিসমিস একত্র করে নাবীয তৈরি করবে না, বরং প্রত্যেকটি দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে নাবীয তৈরি করবে। ইয়াহইয়া বলেছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদার সঙ্গে সাক্ষাত করলে তাঁর পিতার সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার কাছে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আবূ বাকর ইবনু ইসুহাক (রহঃ) ... ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে উপরোক্ত দু'টি সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি কাঁচা খেজুর পাকা খেজুর এবং শুকনো খেজুর ও কিসমিস বলেছেন।
৪৯৯২. আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) সুত্রে তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁচা ও শুকনো খেজুর একত্রে মিশ্রিত করা থেকে এবং কিসমিস ও শুকনো খেজুর মিশ্রিত করা থেকে এবং কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশ্রিত করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটির দ্বারা পৃথকভাবে নাবীয তৈরি কর।
৪৯৯৩. উক্ত সনদে ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, আমার কাছে আবূ সালামা ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৯৯৪. যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসমিস ও শুকনো খেজুর এবং কাঁচা ও শুকনো খেজুর (একত্রে মিশ্রিত করে নাবীয তৈরি করা) থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটি দিয়ে পৃথকভাবে নাবীয তৈরি করা যেতে পারে।
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ... (এরপর বর্ণনাকারী) অনুরূপ (হাদীস বর্ণনা করেন)।
৪৯৯৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্রে এবং কাঁচা ও শুকনো খেজুর একত্র করে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ‘জুরাশ’ (ইয়েমেনের একটি শহব)-বাসীদের পত্র লিখে তাদেরকে শুকনো খেজুর ও কিসমিসের সংমিশ্রণে (নাবীয তৈরি করতে) নিষেধ করেন।
বর্ণনাকারী বলেন, আমাকে ওয়াহব ইবনু বাকিয়া খালিদ তাহ্হান (রহঃ) এর সুত্রে শায়বানী (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে শুকনো খেজুর ও কিসমিসের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি (ওয়াহব) কাঁচা ও শুকনো খেজুরের কথা উল্লেখ করেন নি।
৪৯৯৬. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলতেন, কাঁচা-পাকা খেজুর একত্রে এবং শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্রে নাবীয বানাতে নিষেধ করা হয়েছে।
৪৯৯৭. আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কাঁচা-পাকা খেজুর একত্রে এবং শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্রে নাবীয বানাতে নিষেধ করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. মুযাফফাত, দুব্বা, হানতাম ও নাকীর ইত্যাদিতে নাবীয তৈরি করার নিষেধাজ্ঞা এবং এ হুকুম রহিত (মানসুখ) হওয়া আর নেশা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এগুলো বৈধ হওয়ার বর্ণনা
৪৯৯৮. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।
মুযাফফাত হল আলকাতরা ও প্রলেপ লেপানো এক জাতীয় পাত্র, যাতে সূরা তৈরি করা হতো।
দুব্বা হল কদুর শুকনো খোল এর পাত্র, যাতে মদ তৈরি করা হয়।
হানতাম হল সবুজ রং এর (প্রলেপযুক্ত) কলসী, যাতে সুরা তৈরি করা হত।
নাকীর হল খেজুর গাছের গোড়ালী দিয়ে তৈরি বিশেষ পাত্র।
৪৯৯৯. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। বর্ননাকারী বলেনঃ আবূ সালামা (রহঃ)ও তাকে জানিয়েছেন, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি করো না। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, হানতাম এর ব্যবহার থেকেও তোমরা দূরে থাক।
৫০০০. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাফফাত, হানতাম ও নাকীর (ইত্যাদিতে নাবীয তৈরি করা) থেকে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হানতাম কি? তিনি বললেন, সবুজ রং এর কলসী।
৫০০১. নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল কায়েসের প্রতিনিধি দলকে বললেন, আমি তোমাদেরকে দুব্বা, হানতাম, নাকীর ও মুকাইয়ার থেকে নিষেধ করছি। হানতাম হল মাথা কাটা পাত্র। তবে তুমি তোমার চামড়ার তৈরি পাত্রে (মশাক তৈরি নাবীয) পান কর আর এর মুখ বন্ধ (ঢেকে) রাখ।
৫০০২. সাঈদ ইবনু আমর আশআসী, যুহায়র ইবনু হারব ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। এ হলো জারীর বর্ণিত হার্দীস। আবসার ও শু'বা (রহঃ) এর হাদীসে আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা ও মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।
৫০০৩. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আসওয়াদ (রহঃ) কে বললাম, আপনি কি উম্মুল মুমিনীনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিসে নাবীয তৈরি করা মাকরূহ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বলেছিলাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমাকে বলুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি আমাদের আহলে বাইতকে নিষেধ করেছেন আমরা যেন দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি না করি। তিনি [ইবরাহীম (রহঃ)] বলেনঃ আমি তাকে (আসওয়াদকে) বললাম, তিনি (আয়িশা) কি হানতাম ও কলসীর কথা উল্লেখ করেননি? তিনি বললেন, আমি যা শুনেছি, তাই তোমার নিকট বলছি যা শুনিনি তাও কি তোমার নিকট বলতে হবে?
৫০০৪. সাঈদ ইবনু আমর আশআসী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা ও মুযাফফাত নিষেধ করেছেন।
৫০০৫ মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।
৫০০৬. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... সুমামা ইবনু হাযন কুশায়রী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁকে নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমার নিকট বর্ননা করলেন যে, আবদুল কায়সের দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমণ করলো এবং তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নাবীয সমন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি তাদেরকে দুব্বা, নাকীর, মুয়াফফাত ও হানতাম এ নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করলেন।
৫০০৭. ইয়াকবুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা, হানতাম, নাকীর ও মুসাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।
৫০০৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইসহাক ইবনু সুওয়ায়দ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি “মুযাফফাত” এর স্থলে ‘মুকাইয়ার’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।
৫০০৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল কায়সের প্রতিনিধি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমণ করলে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে দুব্বা হানতাম, নাকীর এবং মুকাইয়ার থেকে নিষেধ করছি। হাম্মাদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে ‘মুকাইয়ার’ স্থলে ‘মুযাফফাত’ (শব্দটি) ব্যবহার করেছেন।
৫০১০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা, হানতাম, মুযাফফাত ও নাকীর থেকে নিষেধ করেছেন।
৫০১১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন দুব্বা, হানতাম, মুযাফফাত ও নাকীর থেকে এবং কাঁচা ও আধ-পাকা খেজুর একত্রে মিশ্রিত (করে নাবীয তৈরি) করা থেকে।
৫০১২. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা, নাকীর ও মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।
৫০১৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসীতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।
৫০১৪. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা, হানতাম, নাকীর ও মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।
৫০১৫. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণিত যে, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। এরপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেন।
৫০১৬. নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানতাম, দুব্বা ও নাকীর এর (পানীয় নাবীয) পান করতে নিষেধ করেছেন।
৫০১৭. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও সুরায়জ ইবনু ইউনূস (রহঃ) [শব্দ ভাষ্য আবূ বাকর (রহঃ) এর] ... সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ইবনু উমার (রাঃ) ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর পক্ষে যে, তালা উভয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা, হানতাম, মুযাফফাত ও নাকীর থেকে নিষেধ করেছেন।
৫০১৮. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে কলসীর নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসীর নাবীযকে হারাম করে দিয়েছেন। এরপর আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে এসে বললাম, আপনি কি ইবনু উমারের কথা শুনেছেন? তিনি বললেন, তিনি কি বলেন? আমি বললাম, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসীর নাবীয হারাম করেছেন। তিনি বললেন, ইবনু উমার সত্যই বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসীর নাবীযকে হারাম করেছেন। আমি বললাম, কলসীর নাবীয কি? তিনি বললেন, মাটি দিয়ে যে পাত্র তৈরি করা হয় তাই (কলসী)।
৫০১৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক যুদ্ধে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমি সে দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। কিন্তু আমি তার নিকট পৌছার পূর্বেই তিনি কথা শেষ করে ফেললেন। আমি (লোকদের) জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বললেন? তারা বললেনঃ তিনি দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয বানাতে নিষেধ করলেন।
৫০২০. কুতায়বা, ইবনু রুমহ, আবূ-রাবী ও আবূ কামিল, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুনায়র, ইবনু মুসান্না, ইবনু আবূ উমার, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি' ও হারূন আয়লী (রহঃ) ... উসামা (রহঃ) থেকে তাঁদের প্রত্যেকেই নাফি (রহঃ) এর সৃত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে মালিক (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে মালিক ও উসামা (রহঃ) ছাড়া অন্য কেউ ‘কোন এক যুদ্ধাভিযানে’ কথাটি উল্লেখ করেন নি।
৫০২১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলসীর নাবীয থেকে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন, লোকরা তাই বলে। আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন কি-না? তিনি বললেন, লোকরা তো তাই বলে।
৫০২২. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) ... তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু উমার (রাঃ) কে বললো, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলসীর নাবীয থেকে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তাউস বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর কাছ থেকে শুনেছি।
৫০২৩. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলসী ও কদুর খোলে নাবীয বানাতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
৫০২৪. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসী ও দুব্বা (নাবীয তৈরির জন্য ব্যবহার করা) নিষেধ করেছেন।
৫০২৫. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... তাঊস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলসী, দুব্বা ও মুযাফফাত এর নাবীয থেকে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
৫০২৬. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... মুহারিব ইবনু দিসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানতাম, দুব্বা ও মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর নিকট একাধিকবার শুনাছি।
৫০২৭. সাঈদ ইবনু আমর আশ-আসী (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয় তিনি 'নাকীর' এর কথাও বলেছেন।
৫০২৮. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসী, দুব্বা, মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা চামড়া নির্মিত পাত্রে নাবীয তৈরি কর।
৫০২৯. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানতাম নিষেধ করেছেন। তখন আমি বললাম, হানতাম কি? তিনি বললেন, (সবুজ) কলসী।
৫০৩০. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... যাযান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব পানীয়'' নিষেধ করেছেন সে সমন্ধে আপনি আপনার ভাষায় আমার নিকট বর্ণনা করুন এবং আমাদের ভাষায় তা ব্যাখ্যা করে দিন। কেননা আপনাদের ভাষা আমাদের ভাষা থেকে ভিন্ন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন হানতাম থেকে- হানতাম হলো কলসী। আর দুব্বা থেকে সেটা হলো কদু (এর খোল)। আর মুযাফফাত থেকে- সেটা হলো আলকাতরা মাখা পাত্র এবং নাকীর থেকে সেটা হলো খেজুর বৃক্ষের গোড়া, যার ভেতরের অংশ ফেলে দিয়ে ও খোদাই করে (পাত্রের মত) করা হয়। আর তিনি চামড়া নির্মিত পাত্রে নাবীয বানানোর আদেশ দিয়েছেন।
৫০৩১. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ দাঊদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শু'বা (রহঃ) উক্ত সনদে আমাদের নিকট হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৫০৩২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে এই মিম্বারের কাছে বলতে শুনেছি এ বলে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের প্রতি ইঙ্গিত করেন। আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমণ করলো এবং তাকে 'পানীয়' সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দুব্বা, নাকীর ও হানতাম নিষেধ করলেন। আমি বললাম, হে আবূ মুহাম্মদ! মুযাফফাতের কথা? আমরা ভাবলাম, তিনি হয়ত বিস্মিত হয়েছেন। তিনি বললেন, সে দিন আমি তাকে (আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) কে) একথা বলতে শুনিনি, তবে তিনি (এটাকে) অপছন্দ করতেন।
৫০৩৩. আহমদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ও ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকীর, মুযাফফাত ও দুব্বা থেকে নিষেধ করেছেন।
৫০৩৪. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কলসী, দুব্বা এবং মুযাফফাত (ইত্যাদিতে নাবীয তৈরি) থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ) কেও বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসী, মুযাফফাত ও নাকীর থেকে নিষেধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থা এই ছিল যে, যদি তাঁর জন্য নাবীয তৈরি করার অন্য কোন পাত্র না পেতেন তবে প্রস্তর নির্মিত পাত্রে তাঁর জন্য নাবীয তৈরি করা হতো।
৫০৩৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য প্রস্তর নির্মিত পাত্রে নাবীয তৈরি করা হতো।
৫০৩৬. আহমদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য চামড়া নির্মিত পাত্রে নাবীয তৈরি করা হতো। যদি তারা (লোকেরা) চামড়া নির্মিত পাত্র না পেতেন তবে প্রস্তর নির্মিত পাত্রে তাঁর জন্য নাবীয তৈরি করা হতো। তখন এক ব্যক্তি বললো, আমিও আবূ যুবায়র এর কাছে শুনেছি। তিনি বললেন, বারাম থেকে? বললেন, বারাম থেকে। বারাম অর্থ বড় পেয়ালা যা ডেগের মত।
৫০৩৭. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে চামড়ার পাত্র ছাড়া অন্য সমস্ত পাত্রের নাবীয থেকে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা সকল প্রকার পাত্রে (নাবীয তৈরি করে) পান করতে পার। তবে নেশাযুক্ত নাবীয পান করো না।
৫০৩৮. হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে মদ তৈরির সকল পাত্র নিষেধ করেছিলাম। পাত্রগুলো কিংবা তিনি বলেছেন, পাত্র তো কোন বস্তুকে হালাল করতে পারে না, হারামও করতে পারে না। আর সর্ব প্রকার নেশাকর বস্তুই হারাম।
৫০৩৯. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে চামড়ার সকল পাত্রে (নাবীয) পান করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা সব ধরনের পাত্রেই পান করতে পার। তবে নেশাকর বস্তু পান করো না।
৫০৪০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমর (শব্দ ভাষ্য ইবনু আবূ উমরের) (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (চামড়ার ব্যতীত) সকল পাত্রের নাবীয থেকে নিষেধ করলেন, তখন লোকেরা বলল, সবাই তো (চামড়ার পাত্র) পায় না। পরে তিনি আলকাতরার প্রলেপ মাখানো কলসী ছাড়া অন্য কলসীর ব্যপারে অনুমতি প্রদান করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৭. নেশা সৃষ্টিকারী সকল বস্তুই মদ; আর সর্বপ্রকার মদই হারাম
৫০৪১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিত (بِتْع) সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলো। তিনি বললেন, নেশা সৃষ্টি করে এমন যে কোন পানীয়ই হারাম। (الْبِتْعِ) জল মধু দিয়ে তৈরি নাবীয যা ইয়ামানবাসীদের পানীয় ছিল।
৫০৪২. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজীবী (রহঃ) ... আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিত (بِتْع) সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলো। তিনি বললেন, নেশা সৃষ্টি করে এমন যে কোন পানীয় হারাম।
৫০৪৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উয়ায়না (রহঃ) থেকে; অপর সনদে হাসান হুলওয়ানী, সালিহ থেকে অপর সনদে ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... মা'মার (রহঃ) থেকে তারা সকলে যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে সুফিয়ান ও সালিহ (রহঃ) এর হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘বিত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো' কথাটি নেই। তবে কথাটি মামার (রহঃ) এর হাদীসে আছে। আর সালিহ (রহঃ) এর হাদীসে আছে যে (আয়িশা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী পানীয় হারাম।
৫০৪৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠালেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের এলাকায় যব থেকে ‘মিরয’ নামক পানীয় এবং মধূ থেকে 'বিত’ (بِتْع) নামক শরাব (পানীয়) তৈরি করা হয়। তিনি বললেনঃ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম।
৫০৪৫. মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু আবূ বুরদা তাঁর পিতার সাধঁনে তাঁর দাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ও মু’আয (রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠালেন এবং তাদেরকে বললেনঃ তোমরা (মানুষকে) সুসংবাদ দেবে আর (দ্বীনকে) সহজভাবে তুলে ধরবে, (মানুষকে দ্বীন) শিক্ষা দেবে, (কাউকে দ্বীন থেকে) বিতৃষ্ণ করে দেবে না। আমার মনে হয় তিনি সমঝোতা করে (একমত হয়ে) কাজ করবে, কথাটিও বলেছেন। তিনি রওয়ানা করলে আবূ মূসা (রাঃ) ফিরে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাদের তো মধু থেকে তৈরি শরাব (পানীয়) আছে যা পাকিয়ে গাঢ় করা হয় এবং ‘মিরয’ আছে যা যব দ্বারা তৈরি করা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা কিছু নেশা সৃষ্টির মাধ্যমে সালাত থেকে বিমুখ করে, তা-ই হারাম।
৫০৪৬. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) ... আবূ বুরদা তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও মু’আয (রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠালেন এবং বললেনঃ তোমরা মানুষকে (দ্বীনের) দাওয়াত দেবে, সুসংবাদ দেবে, কাউকে বিতৃষ্ণ করে দেবে না। সহজ করবে, কঠিন করবে না। তিনি বলেন, অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়েমেনে আমরা দুধরনের শরাব প্রস্তুত করি, আপনি সে সমন্ধে আমাদেরকে অবহিত করুন। এক, “আল-বিত” যা মধু পাকিয়ে গাঢ় করে তৈরি করা হয়; দুই, “আল-মিরয” যা ভুট্রা ও যব পাকিয়ে গাঢ় করে প্রস্তুত করা হয়। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অল্প শব্দ অথচ ব্যাপক অর্থবোধক ও পরিপূর্ণতার সাথে প্রকাশ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেনঃ আমি প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু যা সালাত থেকে বিমুখ করে, তাই হারাম করছি।
৫০৪৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জায়শান থেকে এক ব্যক্তি আসলো। জায়শান ইয়েমেনের একটি এলাকা। এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের এলাকায় শস্য দ্বারা তৈরি 'মিযর' নামক যে শরাব পান করে, সে সমন্ধে জিজ্ঞাসা করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা কি নেশা সৃষ্টি করে? সে বললো, হা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যা নেশা সৃষ্টি করে, তাই হারাম। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তা'আলার প্রতিজ্ঞাতে, যে ব্যক্তি নেশা জাতীয় বস্তু পান করবে, তাকে তিনি “তীনাতুল খাবাল” পান করিয়ে ছাড়বেন। লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! “তীনাতুল খাবাল” কি? তিনি বললেন, দোযখবাসীদের ঘাম বা দোযখবাসীদের ক্ষত হতে নির্গত তরল পুজ ইত্যাদি প্রস্রাব-পায়খানা।
৫০৪৮. আবূ রাবী আতাকী ও আবূ কামিল (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যা নেশা সৃষ্টি করে তাই মদ। আর যা নেশা সৃষ্টি করে তাই হারাম। যে ব্যক্তি পৃথিবীতে মদ পান করবে এবং (অভ্যস্ত রূপে) সর্বদা এ কাজ করে তাওবা না করেই মৃত্যুবরণ করবে, সে পরকালে তা (জান্নাতের পানীয়) পান করতে পারবে না।
৫০৪৯. ইসহাক ইবন ইবরাহীম ও আবু বকর ইবন ইসহাক (রহঃ) ... ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যা নেশা সৃষ্টি করে তাই মদ, আর যা নেশা সৃষ্টি করে তাই হারাম।
৫০৫০. সালিহ ইবনু মিসমার সুলামি (রহঃ) ... মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৫০৫১. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই রিওয়ায়েত করেছেন। তিনি বলেন, যা নেশা সৃষ্টি করে, তাই মদ। আর মদ মাত্রই হারাম।
পরিচ্ছেদঃ ৮. মদ পানকারী ব্যক্তি যদি তওবা না করে তবে শাস্তিস্বরূপ পরকালে তাকে (জান্নাতী) শরাব থেকে বঞ্চিত রাখা হবে
৫০৫২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যাক্তি দুনিয়াতে শরাব (মদ) পান করবে, আখিরাতে সে তা থেকে বঞ্ছিত থাকবে।
৫০৫৩. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পৃথিবীতে শরাব (মদ) পান করবে এবং তাওবা করবে না, আখিরাতে সে তা থেকে বঞ্চিত হবে। তাকে তা পান করানো হবে না। মালিক (রহঃ) কে বলা হলো হাদীসটি কি তিনি (ঊর্ধ্বতন রাবী) মারফু' (সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে) বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
৫০৫৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... (আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) থেকে), অন্য সনদে ইবনু নুমায়র (রহঃ) (তার পিতা থেকে) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করবে, আখিরাতে সে তা পান করতে পারবে না। কিন্তু যদি তাওবা করে।
৫০৫৫. ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৯. যে নাবীয (খেজুর ভেজানো পানি) গাড় হয়নি এবং নেশা সৃষ্টিকারী হয়নি, তা মুবাহ হওয়া
৫০৫৬. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য রাতের প্রথমভাগে নাবীয তৈরি করা হতো। তিনি তা পান করতেন, সেদিন (রাত বিগত) সকালে, আগামী রাতে, পরবর্তী দিনে এরপরের রাতে এবং পরদিন আসর পর্যন্ত। এরপরও যদি কিছু অবশিষ্ট থেকে যেত তা তিনি তাঁর খাদিমকে পান করাতেন অথবা ফেলে দিতে আদেশ দিতেন।
৫০৫৭. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইয়াহইয়া বাহরানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট নাবীযের কথা আলোচনা করলে তিনি বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য (চামড়া) মশকে নাবীয তৈরি করা হতো। শু'বা বলেন, সোমবারের (পূর্ববর্তী রোববার দিন শেষের) রাতে করা হলে তিনি তা সোমবার দিন ও মঙ্গলবার আসর পর্যন্ত পান করতেন। এরপরও কিছু অবশিষ্ট থাকলে তিনি তা খাদিমকে পান করাতেন বা ফেলে দিতেন।
৫০৫৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কিসমিস ভিজিয়ে রাখা হতো। তিনি সেদিন তার পরের দিন এবং পরের দিনের পরে তৃতিয় দিন বিকাল পর্যন্ত তা পান করতেন। এরপর তিনি তা কাউকে পান করিয়ে দিতে অথবা ফেলা দিতে আদেশ করতেন।
৫০৫৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য মশকের (চামড়ার পাত্রে) মধ্যে কিসমিসের নাবীয তৈরী করা হতো। তিনি সেদিন, তার পরবর্তী দিন এবং পরের দিনের পরের দিন পর্যন্ত তা পান করতেন। তৃতীয় দিনের বিকাল হলে তিনি নিজে তা পান করতেন এবং অন্যকে পান করাতেন। এরপরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকত, তিনি তা ফেলে দিতেন।
৫০৬০. মুহাম্মাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) ... ইয়াহইয়া নাখঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক লোক ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে মদ ক্রয়-বিক্রয় ও এর ব্যবসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেন, তোমরা কি মুসলমান? তারা বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে এর ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা বৈধ হবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তারা তাঁকে নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সফরে গিয়ে যখন প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের থেকে কিছু লোক হানতাম, নাকীর ও দুব্বার মধ্যে নাবীয তৈরি করছিলো। তিনি আদেশ দিলে তা ঢেলে ফেলা হয়। এরপর তিনি মশক আনতে আদেশ দিলেন। তারপর তাতে কিসমিস ও পানি দিয়ে সারারাত রাখা হলো। সেদিন সকালে এবং আগামী রাত ও তার পরবর্তী বিকাল পর্যন্ত তিনি তা থেকে পান করেন আর অন্যদের পান করতে দেন। রাত অতিবাহিত হলে তিনি অবশিষ্ট অংশ সমন্ধে আদেশ দিলেন, তা ঢেলে ফেলা হলো।
৫০৬১. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... সুমামা ইবনু হাযন কুশায়রী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়িশা (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁকে নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। আয়িশা (রাঃ) এক হাবশী ক্রীতদাসীকে ডাকলেন এবং বললেন, একে জিজ্ঞাসা কর, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সে নাবীয তৈরি করতো। পরে হাবশী মেয়েটি বললো, রাতে আমি তাঁর জন্য মশকের মধ্যে নাবীয তৈরি করতাম এবং সেটি মুখ বন্ধ করে ঝুলিয়ে রাখতাম। সকাল হলে তিনি এর থেকে পান করতেন।
৫০৬২. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না আম্বারী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাবীয প্রস্তুত করতাম যেটির মুখ বন্ধ থাকত উপরের দিকে এবং যেটির (নিচের দিকে) অনেকশুলো ছিদ্র ছিল। আমরা সকালে নাবীয তৈরি করলে রাতেই তিনি পান করতেন। আবার রাতে করলে সকালেই তিনি পান করতেন।
৫০৬৩. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ উসায়দ সাঈদী (রাঃ) তাঁর বিবাহে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত করলেন। তাঁর নব বিবাহিত স্ত্রীই সেদিন তাদের খাদিম ছিলেন। সাহল (রাঃ) বললেন, তোমরা কি জান, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কী পান করতে দিয়েছিলেন? তিনি রাতে কিছু খেজুর একটি পাত্রে ভিজিয়ে রেখেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার সমাপন করলে তাই তিনি তাকে পান করতে দিয়েছিলেন।
৫০৬৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাহল (রহঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আবূ উসায়দ সাঈদী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত করলেন। তারপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি একথা বলেন নি যে, "আহার সমাপন করলে সে নাবীযটুকু তিনি তাঁকে পান করতে দেন।"
৫০৬৫. মুহাম্মাদ ইবনু সাহল-তামীমী (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেছেন, "পাথর নির্মিত পাত্রে" (ভেজানো হয়েছিল), এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার শেষ করলে তিনি তা নরম করে একমাত্র তাঁকেই পান করতে দিয়েছিলেন।
৫০৬৬. মুহাম্মাদ ইবনু সাহল তামীমী ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আরবের জনৈকা মহিলার প্রসঙ্গ আলোচিত হলো। তিনি আবূ উসায়দ (রাঃ) কে তার নিকট লোক পাঠানোর জন্য আদেশ দিলেন। তিনি লোক (দূত) পাঠালে উক্ত মহিলা এলো এবং সাঈদা গোত্রের দুর্গে অবস্থান গ্রহণ করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে তার নিকট আসলেন। তিনি যখন তার কাছে পৌছলেন তখন মহিলা মস্তকাবনত হয়ে বসেছিল। তিনি তার সাথে কথোপকথন করলে সে বললো, আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। তিনি বললেন, আমিও তোমাকে আশ্রয় (নিস্তার) দিলাম। লোকেরা মহিলাকে বললো, তুমি জান ইনি কে? সে বললো, না। তারা বললো, ইনি তো আল্লাহর রাসুল। তিনি তোমাকে বিবাহের প্রস্তাব করতে এসেছিলেন।
তখন সে বললো, আমি তো হতভাগী। সাহল (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন ফিরে এসে তার সাহাবীদের সাথে বনু সাঈদার সাকীফায় (বৈধ জায়গায়) উপবেশন করেন। এরপর তিনি সাহলকে বললেন, আমাদেরকে কিছু পান করাও। সাহল বলেনঃ পরে আমি একটি পেয়ালাটি বের করে তাদের সকলকেই তা থেকে পান করিয়েছিলাম। আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, সাহল (রাঃ) আমাদের সামনে পেয়ালাটি বের করলে আমরা তাতে পান করলাম। তারপর উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) তা চাইলে, তিনি তাঁকে সেটি দান করেন। আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) এর বর্ণনায় আছে, তিনি বললেন, হে সাহল! তুমি আমাদেরকে পান করাও।
৫০৬৭. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এ পেয়ালাটি দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সব ধরনের পানীয় (দ্রব্য) মধু, নাবীয, পানি, দুধ ইত্যাদি পান করিয়েছি।
পরিচ্ছেদঃ ১০. দুধপান জায়েয হওয়া
৫০৬৮. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) ... বারা' (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বাকর (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা যখন মক্কা থেকে (হিজরত করে) মদিনা অভিমুখে বের হলাম, এক পর্যায়ে আমরা এক রাখালের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃষ্ণার্ত হলে আমি তাঁর জন্য কিছু দুধ দোহন করে নিয়ে তাঁর কাছে আসলাম। আমার সন্তুষ্টি পরিমানে তিনি পান করলেন।
৫০৬৯. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... বারা' (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনার দিকে রওয়ানা দিলেন তখন সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জু'শুম তাঁর পিছে পিছে ধাওয়া করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর বদ দু'আ করলে তার ঘোড়া মাটিতে গেড়ে গেলো। সে বললো, আমার জন্য দুআ করুন, আমি আপনার কোন অনিষ্ট করবো না। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করলেন। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃষ্ণার্ত হলেন আর তাঁরা এক বকরীর রাখালের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, আমি একটি পেয়ালা নিয়ে তার জন্য কিছু দুধ দোহন করে আনলাম। তিনি তা এ পরিমাণ পান করলেন যে, আমি খুশি হলাম।
৫০৭০. মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মি’রাজ রাজনীতে বায়তুল মুকাদ্দাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মদ ও দুধের দুটি পেয়ালা পেশ করা হলে তিনি সে দুটির প্রতি তাকালেন, তারপর তিনি দুধ গ্রহণ করলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ সমন্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আপনাকে স্বভাব জাত (সঠিক) পথ গ্রহণের হিদায়াত দিয়েছেন। যদি আপনি মদ গ্রহণ করতেন তবে আপনার উম্মাত বিভ্রান্ত হয়ে যেত।
৫০৭১. সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আনা হলো ......। তারপর বর্ণনাকারী উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়েত করেছেন। তবে তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের কথা উল্লেখ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ১১. পাত্র আচ্ছাদিত করে রাখা অর্থাৎ ঢেকে রাখা, মশকের মুখ বন্ধ করা, দরজা বন্ধ করা ও এ সময়ে আল্লাহর নাম লওয়া, শয়নকালে বাতির আগুন নিভিয়ে দেয়া এবং মাগরিবের পর ছেলেমেয়ে ও গৃহপালিত জন্তুগুলোকে আটকে রাখা মুস্তাহাব
৫০৭২. যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাকী নামক স্থান থেকে এক পেয়ালা দুধ নিয়ে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। পেয়ালাটি ছিল অনাবৃত। তিনি বললেনঃ তুমি একে ঢাকলে না কেন, এর উপর একটি কাঠি রেখে হলেও? আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেনঃ তিনি আমাদেরকে রাত্রে মশকের মুখ ও দরজা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন।
৫০৭৩. ইবরাহীম ইবনু দীনার (রহঃ) ... আবূ হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক বাটি দুধ নিয়ে আসলেন। ...... পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, রাবী যাকারিয়া (রহঃ) আবূ হুমায়দ এর বর্ণনায় উল্লেখিত "রাতে" কথাটি উল্লেখ করেন নাই।
৫০৭৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি (কিছু) পান করতে চাইলে এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কি আপনাকে নাবীয পান করতে দেবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর লোকটি দ্রুত বেরিয়ে গেল এবং একটি পেয়ালা নিয়ে এলো যাতে নাবীয ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর উপর একটি কাঠি দিয়ে হলেও তুমি এটি ঢেকে আনলে না কেন? আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি পান করলেন।
৫০৭৫. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুমায়দ নামক এক ব্যক্তি ‘নাকী’ (নামক স্থান) থেকে এক পেয়ালা দুধ নিয়ে আসলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি এটা ঢেকে আনলে না কেন, এর ওপর একটা কাঠি দিয়ে হলেও?
৫০৭৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... লাইস (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (শয়নকালে) পাত্রসমুহ ঢেকে রাখবে, মশকগুলোর মুখ বন্ধ রাখবে, দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং বাতি নিভিয়ে দেবে। কারণ, শয়তান মশকের (বন্ধ) মুখ খুলতে পারে না, (বন্ধ) দরজা খুলতে পারে না এবং (আবৃত) পাত্রও অনাবৃত করতে পারে না। যদি তোমাদের কেউ তার পাত্রের উপর রাখার জন্য কাঠি ছাড়া অন্য কিছু না পায়, তবে সে যেন তাই রাখে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। কেননা দুষ্টু ইঁদুর বাড়িওয়ালাদের বাড়ি দ্রুত জ্বালিয়ে দেয়। কুতায়বা তাঁর হাদীসে "দরজা বন্ধ কর" কথাটির উল্লেখ করেন নি।
৫০৭৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে তিনি বলেছেন, তোমরা পাত্রের মুখ বন্ধ করবে অথবা (বলেছেন) তোমরা পাত্র ঢেকে রাখবে। আর তিনি পাত্রের উপর কাঠি রাখার কথা উল্লেখ করেন নাই।
৫০৭৮. আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দরজা বন্ধ করবে। অতঃপর রাবী লাইস (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তোমরা পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে। তিনি আরও বলেনঃ ওটা (ইদুর) গৃহবাসীদের পোশাক পুড়িয়ে (নষ্ট করে) দেয়।
৫০৭৯. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁদের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, ইঁদুর গৃহবাসীদের গৃহ পুড়িয়ে দেয়।
৫০৮০. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রাত ঘনিয়ে আসবে অথবা (বলেছেন) তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হবে, তখন তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের আটকে রাখবে। কেননা শয়তাণ সে সময় চলাফেরা করে। রাত ঘন্টাখানেক অতিক্রান্ত হলে তাদের ছেড়ে দাও। আর দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। কারণ, শয়তান কোন বন্ধ দুয়ার খোলে না। আর তোমরা নিজেদের মশক সমূহের মুখ এঁটে রাখবে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর নিজেদের পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে এবং যদি তার ওপর একটি কাঠি রেখেও হয় এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করবে। আর তোমাদের বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে।
৫০৮১. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আতা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ রিওয়ায়েত করেছেন। তবে তিনি আল্লাহর নাম স্মরণ করার কথা উল্লেখ করেন নাই।
৫০৮২. আহমাদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) আতা ও আমর ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে রাওহ (রহঃ)-এর রিওয়ায়াতের অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫০৮৩. আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ), অন্য সনদে ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের গৃহপালিত পশু এবং ছেলেমেয়েদেরকে সূর্যাস্তের সময় বের হতে দেবে না, যতক্ষন না রাতের আহারের কিছু অংশ অতিক্রান্ত হয়। কেননা সূর্যাস্তের পর থেকে রাতের আহারের কিয়দাংশ (প্রথমাংশ) অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত শয়তান বিচরণ করতে থাকে।
৫০৮৪. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যুহায়র (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে।
৫০৮৫. আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা পাত্র ঢেকে রাখবে এবং মশকের মুখ এঁটে রাখবে। কেননা বছরে একটি রাত আছে, যে রাতে মহামারী নাযিল হয়। যে কোন অনাবৃত পাত্র এবং বন্ধনমুক্ত মশকের উপর দিয়ে তা অতিক্রম করে, তাতেই সে মহামারী নেমে আসে।
৫০৮৬. নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ... লাইস ইবনু সা'দ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, কেননা বছরে একটি দিন আছে, যে দিনে মহামারী নেমে আসে। বর্ণনাকারী হাদীসের শেষাংশে অধিক বলেছেন যে, লাইস বলেছেন, আমাদের মধ্যে অনারবরা “প্রথম কানূন”* এ বিষয়ে মতামত অবলম্বন করে।
* রোমানদের বর্ষ গণনার তৃতীয় মাস, যা শুরু হয় খ্রিষ্টীয় ডিসেম্বর মাসের ছয় কিংবা তের তারিখ থেকে।
৫০৮৭. আবূ বাক্বর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গৃহে আগুন রেখে শয়ন করবে না।
- ৫০৮৮. সাঈদ ইবনু আমর আশআরী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ আমির আশ'আরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একবার) রাতে মদিনায় এক বাড়িতে আগুন লেগে তা পুড়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের অবস্থা সমন্ধে অবহিত করা হলে তিনি বললেনঃ এ আগুন তোমাদের শক্র। সুতরাং তোমরা শোয়ার সময় তা নিভিয়ে ফেলবে।
No comments: