Sunday, March 16 2025

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৮ম খন্ড, অধ্যায়ঃ নিয়ামতসমূহ ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ




পরিচ্ছেদঃ ১. জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামতসমূহ ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ


৬৮৬৯.    আবদুরল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা এবং জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে কামনা-বাসনা বস্তু দ্বারা।

৬৮৭০.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৮৭১.    সাঈদ ইবনু আমর আশআছী ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কখনো কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনি। আল-কুরআনে এর সত্যায়ন রয়েছে "কেউ জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।" (সূরা সাজদাঃ ১৭)

৬৮৭২.    হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং কোন হৃদয়-মন যা কখনো কল্পনাও করেনি। এসব নিয়ামত আমি সঞ্চিত রেখে দিয়েছি। আল্লাহ তোমাদেরকে যা জানিয়েছেন তা রাখ (তা-তো আছেই)।

৬৮৭৩.    আবূ বকর ইবনু আবী শায়বা ও আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরী করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং যা কোন মন কখনো কল্পনাও করেনি। এগুলো আমি তোমদের জন্য জমা করে রেখে দিয়েছি। এসব ছাড়া আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দেখিয়েছেন তা তো আছেই। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন, “কেউই জানেনা তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।” (সূরা সাজদাঃ ১৭)।

৬৮৭৪.    হারুন ইবনু মারুফ ও হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... সা’দ ইবনু সা’দ আস সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বর্ননাতীতভাবে জান্নাতের প্রশংসা করে শেষ পর্যায়ে বললেন, এতে এমন সব নিয়ামত রয়েছে যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং কোন মন কখনো কল্পনাও করেনি। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন, "তারা শয্যা ত্যাগ করতঃ তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আশায় ও আশংকায় এবং তাদেরকে যে রিযক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানেনা তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকরণ কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।"

পরিচ্ছেদঃ ২. জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশত বছর পর্যন্ত সফর করেও তা অতিক্রম করতে পারবে না


৬৮৭৫.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত সফর করতে পারবে।

৬৮৭৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে অধিক রয়েছে যে, এতেও সে তা অতিক্রম করতে পারবে না।

৬৮৭৭.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... সাহুল ইবনু সা’দ (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর সফর করেও তা শেষ করতে পারবে না। 

বর্ণনাকারী আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, নু'মান ইবনু আবূ আয়্যাশ যুরাকীর নিকট আমি এ হাদীস বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, আমাকে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেছেনঃ জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যা (উন্নতজাতের প্রশিক্ষিত) দ্রুতগামী অশ্বের আরোহী একশ' বছর পর্যন্ত সফর করেও অতিক্রম করতে পারবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৩. জান্নাতবাসিগনের উপর (চিরস্থায়ী) সন্তুষ্টি অবতরণ করা এবং আর কখনো অসন্তুষ্ট না হওয়া


৬৮৭৮.    মুহাম্মাদ ইবনু আবারে রহমান ইবনু সাহম (অন্য সনদে) হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতী লোকদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার নিকটে উপস্থিত আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। অতঃপর তিনি বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা উত্তর দেবে, হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমরা সন্তুষ্ট হবো না? অথচ আপনি আমাদেরকে এমন জিনিস দান করেছিল যা আপনার সৃষ্টি জগতের অন্য কাউকে দান করেননি। তিনি বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর থেকে উত্তম জিনিস দান করব না? তারা বলবে, হে রব! এর চাইতে উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অবতরণ (স্থাপন) করব। এরপর তোমাদের উপর আমি আর কখনো অসন্তুষ্ট হবো না।

পরিচ্ছেদঃ ৪. জান্নাতিগন আকাশের তারকারাজি দেখার ন্যায়ই বালাখানাসমূহের বাসিন্দাগন দেখতে পাবে


৬৮৭৯.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতী লোকেরা জান্নাতের সুউচ্চ বালাখালাসমূহ দেখতে পাবে, তোমরা যেমন আকাশের তারকারাজি দেখে থাক। বর্ণনাকারী বলেন, নু'মান ইবনু আবূ আয়্যাশের নিকট এ হাদীসটি আমি বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, যেমনিভাবে তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম দিগন্তের তারকা দেখে থাক।

৬৮৮০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত দুই সনদে ইয়াকুবের হাদীসে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৬৮৮১.    আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু খালিদ (অন্য সনদে) হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতের বাসিন্দাগণ জান্নাতের সুউচ্চ বালাখানাসমূহ দেখতে পাবে, যেমন অস্তগামী (দূরবর্তী) উজ্জ্বল তারকা তোমরা আকাশের পৃর্ব বা পশ্চিম দিগন্তে দেখতে পাও। কেননা তাদের পরস্পরে মর্যাদার ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান থাকবে। (এ কথা শুনে) সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ স্তরসমুহ তো নবীদের জন্য নির্দিষ্ট। তাদের ব্যতীত অন্যেরা তো এ স্তরে কখনো পৌছতে পারবে না। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পারবে। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ আমি তাঁর কসম (করে বলছি)! যে সমস্ত লোক আল্লাহতে ঈমান আনয়ন করেছে এবং তাঁর রাসুলদের প্রতি আস্থা স্থাপন করেছে, (তারা সকলেই এ মর্যাদা সম্পন্ন স্তরসমূমুহে অবস্থান করতে সক্ষম হবে)।

পরিচ্ছেদঃ ৫. যারা নবী (ﷺ) কে তাদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের বিনিময়ে দেখতে ভালবাসবে


৬৮৮২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে আমাকে অধিক মহব্বাতকারী ঐ সমস্ত লোকেদের মধ্যে তারাও হবে, যারা আবির্ভুত হবে আমার তিরোধানের পর, তারা কামনা করবে, হায় যদি তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধন ঐশ্বর্যের বিনিময়েও আমাকে দেখতে পেত।

৬৮৮৩.    আবূ উসমান সাঈদ ইবনু আবদুল জাব্বার আল বাসরী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমআয় (সপ্তাহে) জান্নাতী লোকেরা এতে সমবেত হবে। অতঃপর উত্তরের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমন্ডল ও কাপড় চোপড়ে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের রূপ ও সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তারা নিজ পরিবারের নিকট ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদের গায়ের রং এবং সৌন্দর্য বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর কসম! আমাদের নিকট হতে যাবার পর তোমাদের রূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের যাবার পর তোমাদের রূপ সৌন্দর্য বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ . সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত তাদের চেহারা দীপ্তমান হবে এবং তাদের গুনাবলী ও তাদের স্ত্রীদের বিবরণ


৬৮৮৪.    আমর নাকিদ ও ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আদদাওরাকী (রহঃ) ... মুহাম্মদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা হয়ত গর্ব প্রকাশ করে বলল, অথবা আলোচনা করতঃ বলল, জান্নাতে পুরুষ বেশী হবে, না নারী? এ কথা শুনে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন নি, প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দপ্তীয়মান। তাদের পর যারা জান্নাতে যাবে তাদের চেহারা হবে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায়। তাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে দু জন স্ত্রী। গোশতের ওপাশ হতে তাদের পায়ের গোছার (অস্থির) মগজ দেখা যাবে। জান্নাতের মধ্যে কেউ অবিবাহিত থাকবে না।

৬৮৮৫.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে কারা অধিক জান্নাতী হবে, এ বিষয়ে পুরুষ ও মহিলাগণ বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হল। অতঃপর তারা এ বিষয়ে আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন, আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ......। ইবনু উলায়্যার (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।

৬৮৮৬.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (অন্য সনদে) কুতায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রথমে যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দীপ্তিমান হবে। তাদের পর যারা (জান্নাতে প্রবেশ করবে) তাদের চেহারা আকাশের অতিশয় উজ্জ্বল তারকারাজির ন্যায় হবে। তারা পেশাব-পায়খানা করবে না, থুথু ফেলবে না এবং নাক ঝাড়বেনা। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের। তাদের শরীরের ঘাম হতে মিশকের ঘ্রাণ আসবে এবং তাদের আংটি হবে 'ধুপদানী' হবে আগর কাষ্ঠের তৈরী। তাদের স্ত্রীরা হবে আয়তলোচনা হুর। তাদের চরিত্র হবে একই ব্যক্তির চরিত্রের ন্যায়। আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতি হবে তাদের আকৃতি। ষাট হাত লম্বা হবে তাদের দেহ।

৬৮৮৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রথমে আমার উম্মাতের যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের চেহারা হরে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দীপ্তিমান। অতঃপর যারা (জান্নাতে যাবে) তাদের চেহারা হবে আকাশের অতিশয় উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায়। অতঃপর যারা জান্নাতে যাবে তাদের বহু স্তর হবে। তারা পেশাব-পায়খান করবে না, নাক ঝাড়বেনা এবং থুথু ফেলবে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের এবং তাদের ধুপদানী হবে অগর কাঠের তৈরী। তাদের (শরীরের) ঘাম হতে মিশকের ঘ্রাণ বিচ্ছুরিত হবে। তাদের চরিত্র একই ব্যক্তির চরিত্রের ন্যায় হবে। তারা তাদের আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) এর ন্যায় ষাট হাত লম্বা হবে। 

অতঃপর ইবনু আবী শায়বা ও আবূ কুরায়বা দু'জনই عَلَى خَلْقِ رَجُلٍ বর্ণনা করেছেন। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) বলেছেন, তাদের আকৃতি তাদের পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতি হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৭. জান্নাত ও জান্নাতবাসীগন পাঠের এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাদের তাসবীহ


৬৮৮৮.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ হচ্ছে (সে সব হাদীস) যা আবু হুরায়রা (রাঃ) আমাদের শুনিয়েছেন,এভাবে তিনি কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করেন। এর থেকে একটি হল এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দলটি প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দীপ্তিমান হবে। সেখানে তারা থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বেনা এবং পায়খানাও করবে না। তাদের বরতন এবং চিরুনিসমূহ স্বর্ণ এবং রৌপ্য নির্মিত হবে। তাদের ধুপদানীগুলো হবে অগর কাঠের। তাদের ঘাম হবে মিশক এর ন্যায় সুঘ্রাণযুক্ত। তাদের প্রত্যেকেরই দু'জন করে এমন স্ত্রী থাকবে যে, সৌন্দর্যের কারণে গোশতের উপর থেকে তাদের পায়ের গোছার মগজ দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য থাকবে না এবং থাকবে না কোন হিংসা বিদ্বেষ। তাদের হৃদয় একই হৃদয়ের ন্যায় হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে।

৬৮৮৯.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতী লোকেরা জান্নাতে পানাহার করবে। তবে থুথু ফেলবে না, পেশাব-পায়খানা করবে না এবং নাকও ঝাড়বেনা। (এ কথা শুনে) তারা (সাহাবীগণ) বললেন, তবে (ভক্ষিত) খাদ্য কি হবে? তিনি বললেন, ঢেকুরে এবং মিশকের বিচ্ছুরনের ন্যায় ঘাম (দ্বারা হজম হয়ে যাবে)। তাসবীহ-তাহলীল করা তাদের অন্তকরণে ইলহাম করা হবে যেমন ইলহাম করা হবে তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের বিষয়টি।

৬৮৯০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে كَرَشْحِ الْمِسْكِ পর্যন্ত অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৬৮৯১.    হাসান ইবনু আলী আন-হুলওয়ানী ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতী লোকেরা সেখানে পানাহার করবে। তবে তারা পায়খানা করবে না এবং নাকও ঝাড়বেনা, পেশাবও করবে না। তাদের (ঐ) খাদ্য (নিঃশেষ হয়ে যাবে) মিশকের সুঘ্রান বিচ্ছুরণের ন্যায় ঢেকুর (দ্বারা)। তাসবীহ-তাহলীল তাদের অন্তকরণে ইলহাম করা হবে যেমনিভাবে শ্বাস প্রশ্বাস তোমাদের মনে ইলহাম করা হয়েছে। তবে হাজ্জাজের হাদীসে রয়েছে طَعَامُهُمْ ذَلِكَ - (ذَلِكَ এর স্থানে)।

৬৮৯২.    সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া আল উমাবী (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। তবে এতে বর্ণিত রয়েছে যে, يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّكْبِيرَ كَمَا يُلْهَمُونَ النَّفَسَ।

পরিচ্ছেদঃ ৮. জান্নাতীগনের নিয়ামত চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহর বানীঃ এবং তাদের আহ্বান করে বলা হবে, তোমরা যা করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে


৬৮৯৩.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে আরাম আয়েশে থাকবে ও চিন্তা মুক্ত থাকবে। তার কাপড় কখনো পুরাতন হবে না এবং তার যৌবন কখনো নিঃশেষ হবে না।

৬৮৯৪.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন আহবানকারী জান্নাতী লোকদেরকে আহবান করে বলবে, এখানে (সর্বদা) তোমরা সুস্থ থাকবে, আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা যুবক থাকবে, কখনো আর তোমরা বৃদ্ধ হবে না। তোমরা (সর্বদা) সুখ-সাচ্ছন্দ্যে থাকবে, কখনো আর তোমরা কষ্ট-ক্লেশে পতিত হবে না। এ মর্মে মহামহিম আল্লাহর বানীঃ এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, তোমরা যা করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৯. জান্নাতের তাঁবু এবং তাতে মু'মিনগণের স্ত্রীদের বর্ণনা


৬৮৯৫.    সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে মুমিনদের জন্য ভেতর ফাঁকা একক মুক্তার একটি তাঁবু হবে। এর দৈর্ঘ হবে ষাট মাইল। মুমিনদের স্ত্রীগণও এতে থাকবে। তারা তাদের চতুষ্পার্শ্বে ঘুরাফেরাও করবে। তবে তারা একে অন্যকেই দেখতে পাবে না।

৬৮৯৬.    আবূ গাসসান আল মিসমাঈ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে মুমিনদের জন্য ভেতর ফাঁকা মুক্তার তাঁবু হবে। এর প্রস্থ হবে ষাট মাইল। এর প্রত্যেক প্রান্তেই পরিবার (স্ত্রী) থাকবে। তারা ঘুরে ঘুরে তাদের সাথে মেলামেশা করবে অন্যদের দেখতে পাবে না।

৬৮৯৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মনি-মুক্তার তাঁবু হবে। আকাশের দিকে এর উচ্চতা হবে ষাট মাইল। এর প্রত্যেক কোণে মুমিনদের স্ত্রীগণ থাকবে। তবে তারা অন্যদের দেখতে পাবে না।

পরিচ্ছেদঃ ১০. দুনিয়াতে (বিদ্যমান) জান্নাতের নহরসমূহ


৬৮৯৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সায়হান, জায়হান, ফুরাত ও নীল এসব জান্নাতের নহর সমূহেরই অন্তর্ভুক্ত।

পরিচ্ছেদঃ ১১. জান্নাতে এমন অনেক দল জান্নাতে যাবে যাদের হৃদয় পাখির হৃদয়ের ন্যায়


৬৮৯৯.    হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এমন বহুদল লোক জান্নাতে যাবে, যাদের হৃদয় পাখীর হৃদয়ের ন্যায়।

৬৯০০.    মুহাম্মদ ইলূন রাফি' (রহঃ) ... হাম্মাম ইবন মুনাব্বি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হচ্ছে (সে সব হাদীস) যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের শুনিয়েছেন। (এভাবে) তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। এর মধ্যে একটি হল এ ই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম) কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তার দৈর্ঘ্য হল ষাট হাত। তাকে সৃষ্টি করার পর তিনি তাকে বললেন, যাও, এ দলটিকে সালাম কর। তারা হচ্ছে ফিরিশতাদের উপবিষ্ট একটি দল। সালামের জবাবে তারা কি বলে তা খুব মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর। কেননা তোমার এবং তোমার বংশধরদের অভিবাদন এ-ই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি গেলেন ও বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম'। উত্তরে তারা বললেন, 'আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ'। তাঁরা ওয়া রামাতুল্লাহ বাড়িয়ে বলেছেন। এরপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে সে আদম (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতিতে যাবে। তার দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এরপর হতে সৃষ্টি (-র দেহের) দেহের পরিমাণ দিন দিন কমতে থাকে আজ পর্যন্ত।

পরিচ্ছেদঃ ১২. জাহান্নামের আগুনের প্রবল উত্তাপ এবং তার গভীরতা


৬৯০১.    উমার ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) ... আদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামকে আনা হবে। সেদিন তাতে সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। তারা উহা টেনে নিয়ে যাবে।

৬৯০২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের এ অগ্নি যা আদম সন্তানগণ প্রজ্জলিত করে তা জান্নামের আগুনের তাপমাত্রার সত্তর ভাগের একভাগ। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আল্লাহর কসম! এ আগুন যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেনঃ (তবুও) সে আগুনকে এ আগুনের তুলনায় উনসত্তর গুন বেশী তাপমাত্রা সম্পন্ন করা হয়েছে। এর (উনসত্তরের) প্রতিটি গুন তার তাপের (দুনিয়ার আগুনের) সমমানের।

৬৯০৩.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ যিনাদের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে হাম্মাম (রহঃ) كُلُّهَا এর স্থলে كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا বলেছেন।

৬৯০৪.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসাছিলাম। হঠাৎ 'ধপাস' আওয়াজ তিনি শুনতে পেলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কিসের আওয়াজ, তোমরা কি জান? বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ একটি পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অতঃপর তা কেবল গড়াতে থাকে। যেতে যেতে এখন তা তার অতল তলে গিয়ে পৌঁছেছে।

৬৯০৫.    মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে আছে যে, এ সে (পাথরটি) এখন জাহান্নামের অতল তলে গিয়ে পৌছেছে, তাই তোমরা তার (থপাস করে) আওয়াজ শুনতে পেয়েছে।

৬৯০৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, (জাহান্নামীদের) কাউকে তো অগ্নি তার উভয় টাখনু পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে; আবার কাউকে তার কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে এবং কাউকে তার গর্দান পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে।

৬৯০৭.    আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) ... সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অগ্নি জাহান্নামীদের কাউকে তার উভয় টাখনু পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, কাউকে তার উভয় কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, কাউকে তার কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, আবার কাউকে তার হাঁসুলী (কষ্ঠা) পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে।

৬৯০৮.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মূহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সাঈদ (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে حُجْزَتِهِ এর পরিবর্তে حَقْوَيْهِ (তার কোমরের দুই পাশ) শব্দটি বর্ণিত আছে।

পরিচ্ছেদঃ ১৩. দুর্দান্ত প্রতাপশালীরা জাহান্নামে এবং দুর্বলেরা জান্নাতে যাবে


৬৯০৯.    ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নাম ও জান্নাত পরস্পর ঝগড়া করল। অতঃপর জাহান্নাম বলল, প্রতিপত্তি সম্পন্ন অহংকারী লোকেরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। জান্নাত বলল, দুর্বল ও নিঃস্ব, লোকেরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। তখন আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার আযাব, যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা শাস্তি দেব। কোন কোন সময় তিনি (রাবী) বলেছেন, যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা বিপদগ্রস্থ করব। এরপর তিনি জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার রহমত, যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা করুণাসিক্ত করব। তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে ভরপুর (খোরাক)।

৬৯১০.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা জাহান্নাম ও জান্নাত বিতর্কে লিপ্ত হল। জাহান্নাম বলল, অহংকারী এবং প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন লোক দ্বারা আমাকে প্রাধন্য দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলল, আমার কি হল, মানুষের মাঝে যারা দুর্বল, নীচু স্তরের এবং অক্ষম, তারাই আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। (এ কথা শুনে) আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার রহমত, আমার বান্দাদের যার প্রতি ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা করুনা বর্ষণ করব। এরপর তিনি জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার আযাব, আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা শাস্তি দেব। তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে ভরপুর হিস্যা। তবে (প্রথমে) জাহান্নাম পূর্ণ হবে না। তাই আল্লাহ তাআলা এতে তার পা রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, ব্যাস, ব্যাস। এ সময়ই জাহান্নাম পূর্ণ হবে এবং তার (জাহান্নামীদের) এক অংশ অপর অংশের সাথে প্রচণ্ড চাপ খাবে।

৬৯১১.    আবদুল্লাহ ইবনু আউন হিলালী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ একদা জান্নাত ও জাহান্নাম তর্ক যুদ্ধে লিপ্ত হল। অতঃপর ইবনু আবূ যিনাদের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৯১২.    মুহাম্মাদ ইবনু রাফি' (রহঃ) ... হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি হাদীস হচ্ছে এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর তর্কযুদ্ধ করেছে। জাহান্নাম বলল, প্রতিপত্তিশালী ও দম্ভকারীদের দ্বারা আমাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলল, আমার কি হল, আমাতে কেবল দূর্বল ও নগণ্য সাদাসিধা লোকেরাই প্রবেশ করবে। 

এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা, জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার রহমত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে চাই তার প্রতি আমি রহমত নাযিল করব। এবং তিনি জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার আযাব। তোমার দ্বারা আমি আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আযাব দিব। বস্তুতঃ তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে ভরপুর হিস্যা। কিন্ত্বু জাহান্নাম কিছুতেই পূর্ণ হবে না। অবশেষে আল্লাহ্‌ তা'আলা তার পা তাতে স্থাপন করবেন। তখন জাহান্নাম বলবে ব্যস, ব্যস। তখনি জাহান্নাম পুর্ণ হবে এবং এর এক অংশ অন্য অংশের সাথে চেপে সংকুচিত হয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তার সৃষ্টির কারো উপর জুলুম করবেন না। আর জান্নাত পূর্ণ করার জন্য আল্লাহ তাআলা মাখলুক সৃষ্টি করবেন।

৬৯১৩.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম বিতর্ক করল। অতঃপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْكُمَا مِلْؤُهَا এর পরিবর্তে وَلِكِلَيْكُمَا عَلَىَّ مِلْؤُهَا (অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যেককে ভরপুর হিস্যা প্রদান করা আমার দায়িত্ব) কথাটি বর্ণিত আছে। কিন্তু এর পরবর্তী বর্ধিত অংশটুকু উল্লেখ করেননি।

৬৯১৪.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নাম সর্বদা বলবে, আরো অধিক আছে কি? শেষ পর্যন্ত আল্লাহ রাব্বুল ইযযাত তার 'পা' তাতে স্থাপন করবেন। তখন সে বলবে, আপনার ইজ্জতের কসম! ব্যস, ব্যস। তখন এর এক অংশ অন্য অংশের সাথে চেপে গিয়ে সংকুচিত হয়ে আসবে।

৬৯১৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শায়বানের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৯১৬.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ রুযযী (রহঃ) আবদুল ওয়াহহাব ইবন আতা (রহঃ) থেকে ... মহান আল্লাহর বাণীঃ (স্মরণ কর সে দিনটি) যেদিন আমি জাহান্নামকে বলব, তুমি (পেট) পূর্ণ হয়েছ কী এবং সে বলতে থাকবে, আরো আছে কি? يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ‏ এর ব্যাখ্যায় আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অব্যাহতভাবে (জাহান্নামীদেরকে) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তবুও জাহান্নাম বলবে, আরো অধিক আছে কি? শেষ পর্যন্ত (আল্লাহ) রাব্বুল ইযযত এতে তার পা স্থাপন করবেন। তখন এর এক অংশ অপর অংশের সাথে মিলে গিয়ে সংকুচিত হয়ে আসবে এবং বলবে, তোমার ইজ্জত ও অনুগ্রহের কসম! ব্যস। আর সর্বদা জান্নাতের মধ্যে স্থান খালি থেকে যাবে। অবশেষে আল্লাহ এর জন্য অন্য মাখলুক পয়দা করবেন এবং খালি স্থানে তাদেরকে আবাসন দিবেন।

৬৯১৭.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহর যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ স্থান জান্নাতে খালি থাকবে। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা নিজ ইচ্ছা মুতাবিক এর জন্য (নতুন) মাখলুক সষ্টি করবেন।

৬৯১৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মৃত্যু কে উপস্থিত করা হবে একটি সাদা মেষের আকারে। আবূ কুরায়ব অধিক বর্ণনা করেন, অতঃপর তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে দাঁড় করানো হবে। এরপর উভয়ই অবশিষ্ট হাদীস একই রকম বর্ণনা করেছেন। ...... তখন কেউ বলবে, হে জান্নাতীগন! তোমরা কি একে চিনো? তখন তারা মাথা তুলে দেখবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বলা হবে, হে জাহান্নামীগণ! তোমরা কি একে চিনো? তখন তারা মাথা তুলে দেখবে এবং বলবে, হ্যাঁ, এতো মৃত্যু। অতঃপর আর্দেশ দেয়া হবে এবং উহাকে যবাহ করা হবে। 

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বলা হবে, হে জান্নাতীগণ! মৃত্যু নেই, তোমরা অনন্তকাল এখানে থাকবে। হে জাহান্নামীরা! মৃত্যু নেই, তোমরা অনন্তকাল (এখানেই থাকবে)। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেনঃ “তুমি তাদেরকে সতর্ক করে দাও-পরিতাপের দিবস সমন্ধে, যখন সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। এখন তারা গাফিল এবং তারা বিশ্বাস করে না।” এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত দ্বারা দুনিয়ার প্রতি ইংগিত করলেন।

৬৯১৯.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন জান্নাতী লোকদেরকে জান্নাতে দাখিল করা হবে এবং জাহান্নামী লোকদেরকে জাহান্নামে দাখিল করা হবে, তখন বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগণ! ......অতঃপর [জারীর (রহঃ)] আবূ মুআবিয়া (রহঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم এর পরিবর্তে فَذَلِكَ قَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ কথাটি উল্লেখ করেছেন এবং এতে অতঃপর তিনি তার হাত দ্বারা দুনিয়াকে ইংগিত করেছেন। একথাটিও তিনি উল্লেখ করেননি।

৬৯২০.    যুহায়র ইবনু হারব, হাসান ইবনু আলী-আন হুলওয়নী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর পর তাদের মধ্যখানে জনৈক ঘোষণাকারী দাঁড়িয়ে ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীগণ! (এখন) মৃত্যু নেই, হে জাহান্নামীরা! (এখন) মৃত্যু নেই। অনন্তকাল তোমরা স্ব-স্ব-স্থানেই থাকবে।

৬৯২১.    হারুন ইবনু সাঈদ আল আইলী ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন মৃত্যু কে আনা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে দাঁড় করিয়ে যবাহ করে দেয়া হবে। অতঃপর একজন ঘোষক ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীগণ! এখানে আর তোমাদের মৃত্যু নেই। অনুরূপভাবে জাহান্নামীদেরকেও বলা হবে, হে জাহান্নামীরা! আর তোমাদের মৃত্যু নেই। এতে জান্নাতীদের খুশীর সাথে আরো খুশী বৃদ্ধি পাবে এবং জাহান্নামীদের দুঃখের সাথে আরো দুঃখ সংযোজিত হবে।

৬৯২২.    সুরায়জ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কাফিরদের দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমতুল্য হবে এবং তাদের চামড়ার পুরত্ব হবে তিন দিনের (পথের দূরত্ব পর্যন্ত)।

৬৯২৩.    আবূ কুরায়ব ও আহমাদ ইবনু উমার ওয়াকীঈ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারফু সুত্রে হিসাবে বর্ণিত। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামে কাফিরদের দুই কাঁধের মধ্যখানে দ্রুতগামী আরোহী ব্যক্তির তিন দিনের সফরের পথ হবে। তবে ওয়াকিঈ فِي النَّارِ কথাটি উল্লেখ করেননি।

৬৯২৪.    আবদুল্লাহ ইবনু মু’আয আনবারী (রহঃ) ... হারিসা ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমি কি তোমদেরকে জান্নাতবাসীর সম্পর্কে অবহিত করব? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেনঃ তারা হবে দুর্বল এবং নম্র স্বভাবের লোক। যারা আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে দোযখবাসীর সম্পর্কে অবহিত করব? সাহাবীগণ বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বরলেন, তারা হবে অত্যাচারী, দাম্ভিক ও অহংকারী লোক। 

মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) সুত্রে উল্লেখিত সনদে অনুরূপ। তবে তিনি أَلاَ أُخْبِرُكُمْ স্থলে أَلاَ أَدُلُّكُمْ বলেছেন।

৬৯২৫.    মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হারিসা ইবনু ওয়াহাব খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতী লোকদের পরিচয় আমি কি তোমাদেরকে অবহিত করব? (তারা হলো) দূর্বল-নম্র স্বভাবের লোক। যারা আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। তিনি পুনরায় বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের পরিচয় অবহিত করব? তারা হবে দাম্ভিক, কুখ্যাত এবং অহংকারী লোক।

৬৯২৬.    সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বহুলোক এমন আছে, যারা ধুলায় ধুসরিত, দ্বার দ্বার হতে বিতাড়িত। তারা যদি আল্লাহর নামে শপথ করে তবে আল্লাহ (তা পূরণ করেন) তাকে (শপথের) দায়মুক্ত করেন।

৬৯২৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যাম'আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দানকালে সালেহ (আলাইহিস সালাম) এর উষ্ট্রী সম্পর্কে এবং যে ব্যক্তি তার পা কেটেছিল তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেনঃ যখন ঐ উষ্ট্রীকে হত্যা করার জন্য তাদের কাওমের সবচেয়ে দুর্ভাগা লোকটি উদ্যত হয়েছিল, তখন এ কাজের জন্য উঠেছিল ঐ কাওমের সবচে শক্তিশালী, নিষ্ঠুর, বিদ্রোহী ও দূর্ভাগা লোকটি। সে ছিল এ যুগের আবূ যামআর মত ব্যক্তি। এ খুতবায় তিনি মহিলাদের সম্পর্কেও আলোচনা করলেন এবং তাদেরকে উপদেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে মারপিট করে। আবূ বকরের বর্ণনায় আছে, ক্রীতদাসীর মত মারপিট করে। কিন্তু আবার ঐ দিন শেষে রাতের বেলা তার সাথে মিলিত হয়। তারপর তিনি বায়ু নিঃসরণের কারণে হাসি দেয়া সম্পর্কে ওয়ায করলেন এবং বললেনঃ এমন কাজের ব্যাপারে তোমরা কেন হাসবে যা নিজেও করবে।

৬৯২৮.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি বনী কা'বের সদস্য (পিতৃতুল্য) আমর ইবনু লুহায় ইবনু কামআ ইবনু খিনদাফকে জাহান্নামের মধ্যে দেখেছি। (পেট হতে তার সব) নাড়ী-ভুড়ি (বেরিয়ে পড়ছে, আর সে সেগুলো) টেনে নিয়ে হাঁটছে।

৬৯২৯.    আমর নাকিদ, হাসান আল-হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সাঈদ ইবনুল মূসায়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “বাহীরা” তথা সে উষ্ট্রী, যা কোন দেবতার নামে মানত করে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হত। দেবতার সন্তুষ্টির জন্য তার দুধ খাওয়া নিষিদ্ধ হত। তাকে মানুষ দোহন করে না। সাইবা সেই উষ্ট্রী, যা কাফিররা তাদের দেবতার নামে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিত। এর পিঠে কোন বোঝা বহন করা হতো না। ইবনু মূসায়্যিব (রাঃ) বলেছেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জাহান্নামের মধ্যে আমর ইবনু আমির খুযাঈকে দেখেছি, সে তার নাড়ী-ভুড়ি টেনে নিয়ে হাটছে। দেবদেবীর নামে সে-ই সর্বপ্রথম উট ছেড়ে ছিল।

৬৯৩০.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই প্রকার মানুষ জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে দেখিনি। এক প্রকার ঐ সমস্ত মানুষ যাদের নিকট গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। তারা এর দ্বারা লোকদের প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় প্রকার ঐ সমস্ত মহিলা, যারা বস্ত্র পরিহিতা কিন্তু উলঙ্গ, আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা। যাদের মাথার খোপা বুখতী উটের উঁচু কুঁজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ এতো-এতো দূরত্বে থেকে পাওয়া যাবে।

৬৯৩১.    ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অচিরেই দীর্ঘ হায়াত পেলে তুমি দেখতে পাবে এমন এক কওম, যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক। সকাল হবে তাদের আল্লাহর গযবের মধ্যে এবং সন্ধ্যা হবে তাদের আল্লাহর অসন্তুষ্টির মধ্যে।

৬৯৩২.    উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু নাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, দীর্ঘ হায়াত পেলে অচিরেই তুমি এমন এক সম্প্রদায় দেখতে পাবে, যাদের সকাল হবে আল্লাহর অসন্তুষ্টির মধ্যে এবং সন্ধ্যা হবে আল্লাহর অভিসম্পাতের মধ্যে। তাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক।

পরিচ্ছেদঃ ১৪. দুনিয়া বিনাশ হওয়া ও কিয়ামতের দিন হাশর (সমবেত) করার বিবরণ


৬৯৩৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (অন্য সনদে) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াইয়া (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... বনূ ফিহরের ভ্রাতা মুসতাওরিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ! দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় অতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি নদীতে ভিজিয়ে দেখলো যে, এতে কি পরিমাণ পানি লেগেছে। এ সময় বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইশারা করেছেন। ইয়াহইয়া ব্যতীত সকলের বর্ণনায় আছে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি। আবূ উসামার বর্ণনার মধ্যে এ কথা উল্লেখিত রয়েছে যে, (রাবী) ইসমাঈল বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা ইশারা করেছেন।

৬৯৩৪.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন লোকদেরকে একত্রিত করা হবে খালি পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাৎনা বিহীন অবস্থায়। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! পূরুষ এবং মহিলা এক সাথেই উত্থিত হবে কি? তবে তো তারা পরস্পর একে অন্যের প্রতি নযর করবে। অতঃপর তিনি বলেলেন, হে আয়িশা! তখনকার অবস্থা তারা একে অন্যের প্রতি দেখার অবস্থা থেকে কঠিন হবে।

৬৯৩৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... হাতিম ইবনু সাগীরা থেকে এ সনদে অনুরূপ (হাদীস বর্ণনা করেছেন)। তবে তিনি এত غُرْلاً খাতনাবিহীন শব্দটি উল্লেখ করেন নি।

৬৯৩৬.    আবূ বকর ইবনু শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবাইয় একথা বলতে শুনেছেন যে, অবশ্যই তোমরা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে পায়ে হেঁটে, খালি পা, নগ্নদেহ ও খাতনাহীন অবস্থায়। তবে যুহায়র (রহঃ) তার হাদীসে 'খুতবায়' কথাটি উল্লেখ করেননি।

৬৯৩৭.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উপদেশ সম্বলিত ভাষণ দানের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দণ্ডায়মান হয়ে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সামনে খালি পা এবং নগ্নদেহ অবস্থায় উপস্থিত হবে। যেমন প্রথম দিন সৃষ্টি শুরু করেছিলাম, তেমনি তার পুনরাবৃত্তি করবো। এটা আমার একটা ওয়াদা, তা পালন অবশ্যই আমি (সম্পাদন) করব। শুনে রাখ, কিয়ামতের দিন সবার মাঝে সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কে পোশাক পরানো হবে। ওহে! আমার উম্মতের অনেক লোককে আনা হবে এবং তাদেরকে বাঁ দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। 

তখন আমি বলবো, হে আমর রব! এরা তো আমরে উম্মাত। জবাবে আমাকে বলা হবে, তুমি জানো না তোমার পরে এরা কত নতুন বিষয় উদ্ভাবন করেছিল। আমি তখন আল্লাহর নেক বান্দা [ঈসা (আঃ)] এর মত বলবো, এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী; কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সর্ব বিষয়ে সাক্ষী, তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তখন বলা হবে, তুমি তাদের থেকে বিদায় গ্রহণের পর তারা সর্বদা মুখ ফিরিয়ে উল্টো পথে চলছিল। ওয়াকী এবং মুআযের হাদীসের মধ্যে রয়েছে فَيُقَالُ إِنَّكَ لاَ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ।

৬৯৩৮.    যুহায়র ইবনু হারব (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ লোকদেরকে তিন দলে বিভক্ত করে একত্রিত করা হবে। প্রথম দল (জান্নাতের) আশাবাদী এবং (জাহান্নামের ভয়ে) ভীত লোকদের দল। দ্বিতীয় দলে সে সব লোক যাদের দু'জন থাকবে এক উটৈর উপর, কোন উটের উপর তিনজন, কোনটির উপর চারজন, আর কোনটির উপর সাওয়ার হবে দশজন। অবিশিষ্টদের আগুন তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তারা যেখানে রাত্রিযাপন করবে আগুনও তাদের সঙ্গে রাত কাটাবে। তারা যেখানে দিবা শয়ন (বিশ্রাম) করবে আগুনও তাদের সাথে বিশ্রাম করবে। যেখানে তারা সকাল করবে আগুনও তাদের সাথে সকাল করবে। আর সেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে একই সঙ্গে আগুনও তাদের সাথে সন্ধ্যা করবে।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. দুনিয়াতে জান্নাতে ও জাহান্নামী লোকদের পরিচয় প্রদায়ক গুন (বিষয়)-সমূহ


৬৯৩৯.    যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ (মানুষ উত্থিত হবে সেদিন যেদিন মানুষ রাব্বুল আলামিনের সামনে দাঁড়াবে) এর ব্যাখ্যায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেদিন মানুষ তার দুই কানের মাঝ বরাবর কর্ণ পর্যন্ত ঘামে ডুবন্ত দণ্ডায়মান হবে। ইবনু মুসান্নার বর্ণনায় তিনি يَوْم শব্দটি উল্লেখ করা ব্যাতিরেখে শুধু يَقُومُ النَّاسُ উল্লেখ করেছেন।

৬৯৪০.    মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক মুসায়্যিবী (অন্য সনদে) সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (অন্য সনদে) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইয়াহইয়া (অন্য সুত্রে) আবূ নাসর তাম্মার (অন্য সনদে) হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ... নাফি (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে মূসা ইবনু উকবা ও সালিহ (রহঃ) এর হাদাসের মধ্যে আছে حَتَّى يَغِيبَ أَحَدُهُمْ فِي رَشْحِهِ إِلَى أَنْصَافِ أُذُنَيْهِ (يَقُومُ স্থলে يَغِيب আছে)।

৬৯৪১.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন ঘাম সত্তর বাঁও (উভয় হাতের প্রশস্ততা) পরিমিত ভূমিতে ছড়িয়ে পড়বে এবং তা মানুষের মুখমন্ডল পর্যন্ত বা কান পর্যন্ত পৌছে যাবে। [আবুল গায়স (রহঃ)] 'মুখ' ও 'কান' কোনটির কথা বলেছেন, এ বিষয়ে (বর্ণনাকারী) সাওর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

৬৯৪২.    হাকাম ইবনু মূসা আবূ সালিহ (রহঃ) ... মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন সূর্যকে মানুষের নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। ফলে তা মানুষের থেকে 'মীল; পরিমাণ দুরুত্বে চলে আসবে। বর্ণনাকারী সুলায়মান ইবনু আমির (রহঃ) বলেন, আমি জানিনা, مِيل বলে কি বুঝানো হয়েছে, ভূমির দুরত্ব, না চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা। মানুষ তাদের আমল অনুপাতে ঘামের মধ্যে (ডুবন্ত) থাকবে। কেউ তার দুই গোড়ালি পর্যন্ত ঘামের মধ্যে থাকবে, কেউ তার দুই হাঁটু পর্যন্ত (ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে), কেউ কোমরের দুই পাশ পর্যন্ত (ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে), আর কারো মুখ পর্যন্ত লাগাম পরিয়ে দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মুখের প্রতি ইশারা করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৬. দুনিয়াতে জান্নাতে ও জাহান্নামী লোকদের পরিচয় প্রদায়ক গুন (বিষয়)-সমূহ


৬৯৪৩.    আবূ গাসসান আল-মিসমাঈ, মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইয়ায ইবনু হিমার আল মুজাশিঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ রত অবস্থায় বললেনঃ শোন, আমার প্রতিপালক আজ আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে তোমাদেরকে এমন বিষয়ের শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি আমাকে আদেশ করেছেন, যে বিষয়ে তোমরা অজ্ঞ। তা হল এই যে, আমি আমার বান্দাদেরকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছি তা পরিপূর্ণরূপে হালাল। আমি আমার সমস্ত বান্দাদেরকে একনিষ্ঠ (মুসলিম) হিসাবে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দ্বীন হতে বিচ্যুত করে দেয়। আমি যে সমস্ত জিনিস তাদের জন্য হালাল করেছিলাম সে তা হারাম করে দেয়। অধিকন্তু সে তাদেরকে আমার সাথে এমন বিষয়ে শিরক করার জন্য নির্দেশ দিল, যে বিষয়ে আমি কোন সনদ পাঠাইনি। 

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীরবাসীদের প্রতি নযর করে কিতাবীদের কতিপয় লোক ব্যতীত আরব-আজম সকলকে অপছন্দ করেছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে এবং তোমার দ্বারা অন্যদেরকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে আমি তোমাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছি এবং তোমার প্রতি আমি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা পানি কখনো ধুয়ে-মুছে ফেলতে পারবে না। ঘুমন্ত ও জাগ্নত অবস্থায় তুমি তা পাঠ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কুরায়শ গোত্রের লোকদেরকে জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তখন বললাম, হে আমার প্রতিপালক! আমি যদি এ কাজ করি তবে তারা তো আমার মাথা ভেঙ্গে রুটির ন্যায় টুকরা টুকরা করে ফেলবে। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ তারা যেমনিভাবে তোমাকে বহিস্কার করেছে ঠিক তুদ্রূপ তুমিও তাদেরকে বহিস্কার করে দাও। তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আমি তোমাকে সাহায্য করব। ব্যয় কর (আল্লাহর পথে), তোমার জন্যও ব্যয় করা হবে। তুমি একটি বাহিনী প্রেরণ কর, আমি অনুরূপ পঞ্চ বাহিনী প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যারা তোমর বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের সাথে লড়াই কর। 

তিন প্রকার মানুষ জান্নাতী হবে। (এক প্রকার মানুষ) তারা, যারা রাষ্ট্রীয় কর্ণধার, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং নেক কাজের তাওফীক লাভে ধন্য লোক। (দ্বিতীয়) তারা ঐ সমস্ত মানুষ, যারা দয়ালু এবং আত্নীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত। (তৃতীয়) ঐ সমস্ত মানুষ, যারা পুত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যাঞ্চাকারী নয় এবং সন্তানাদি সম্পন্ন লোক। 

অতঃপর তিনি বললেনঃ পাঁচ প্রকার মানুষ জাহান্নামী হবো (এক) এমন দুর্বল মানুষ, যাদের মাঝে (ভাল-মন্দ) পার্থক্য করার বুদ্ধি নেই, যারা তোমাদের এমন তাবেদার যে, না তারা পরিবার-পরিজন চায়, না ধনৈশ্বর্য। (দুই) এমন খিয়নতকারী মানুষ, সাধারণ বিষয়েও যে খিয়ানত করে যার লোভ কারো নিকটই লুক্কায়িত নেই। (তিন) ঐ লোক, যে তোমার পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদের ব্যাপারে তোমার সাথে সকাল-সন্ধ্যা প্রতারণা করে। (চার) কৃপণতা ও (পাঁচ) মিথ্যাবলার কথাও উল্লেখ করেছেন। আর বলেছেন 'শিনজীর' হল চরম অশ্লীলতাবাদী। 

তবে আবূ গাসসান (রহঃ) তার হাদীসের মধ্যে وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقَ عَلَيْكَ কথাটি উল্লেখ করেননি।

৬৯৪৪.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلاَلٌ কথাটি উল্লেখ করেন নি।

৬৯৪৫.    আবদুর রহমান ইবনু বিশর আল আবদী (রহঃ) ... ইয়ায ইবনু হিমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন। এরপর তিনি পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করলেন। শেষাংশে রয়েছে, কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি মুতাররিফকে বলতে শুনেছি ......।

৬৯৪৬.    আবূ আম্মার হুসায়ন ইবনু হুরায়স (রহঃ) ... বনূ মুজাশি' এর সদস্য ইয়ায ইবনু হিমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দানকালে আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করেছেন। অতঃপর তিনি কাতাদা (রহঃ) থেকে হিশামের সুত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি (রাবী) অধিক বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি প্রত্য্যদেশ করেছেন যে, তোমরা নম্রতা প্রদর্শন কর, যেন কেউ কারো উপর গর্ব না করে এবং যেন কেউ কারো প্রতি সীমালংঘন না করে। এ হাদীসে একথাও রয়েছে যে, তারা তোমাদের এমন অনুগামী যে, না তারা স্ত্রী চায় আর না তারা ধন-সম্পদ চায়। 

কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আবূ আবদুল্লাহ! এমনটি কি হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। জাহিলিয়্যাতের যুগে আমি তাদেরকে পেয়েছি। এক গোত্রে কোন এক ব্যক্তি ছিল। সে বকরী চরাতো। মনিবের দাসী ব্যতীত সেখানে তার নিকট কেউ যেতো না। তার সাথেই সে সহবাস করতো।

পরিচ্ছেদঃ ১৭. মৃত ব্যক্তিকে তার জান্নাত কিংবা জাহান্নামের ঠিকানা প্রদর্শন করানো, কবর আযাবের প্রমান এবং তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দু'আ করা


৬৯৪৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর সকাল-সন্ধ্যা তার সামনে তার ঠিকানা পেশ করা হয়। যদি সে জান্নাতবাসী হয় তবে জান্নাতবাসীদের থেকে আর যদি জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নামীদের থেকে। আর তাকে বলা হবে, এটাই তোমার বাসস্থান। কিয়ামতে তোমাকে পুনরুত্থিত পর্যন্ত (এ অবস্থা চলতে থাকবে)।

৬৯৪৮.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন কোন মানুষ মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যা তার নিকট তার ঠিকানা পেশ করা হয়। যদি সে জান্নাতবাসী হয় তবে জান্নাত আর যদি জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নাম। অতঃপর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার ঐ বাসস্থান যেথায় তুমি কিয়ামতের দিন প্রেরিত হবে।

৬৯৪৯.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) এর সুত্রে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম না, বরং আমাকে যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজ্জার গোত্রের একটি প্রাচীর বেষ্টিত বাগানে তাঁর একটি খচ্চরের উপর সাওয়ার ছিলেন। এ সময় আমরা তাঁর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ সেটি (খচ্চর) লাফিয়ে উঠলো এবং তাঁকে ফেলে দেয়ার উপক্রম করল। দেখা গেল, সেখানে ছয়টি কিংবা পাঁচটি অথবা চারটি কবর রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, জুবায়রী অনুরূপ বর্ণনা করতেন। 

অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ কবরবাসীদেরকে কে চিনে? তখন এক ব্যক্তি বললেন, আমি (চিনি)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ তারা কখন মৃত্যূবরণ করেছে? তিনি বললেন, তারা শিরকের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ উম্মাতকে তাদের কবরের মধ্যে বিপদগ্রস্ত করা হবে। তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা বর্জন করবে, এ আশংকা না হলে আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করতাম যেন তিনি তোমাদেরকেও কবরের আযাব শুনান যা আমি শুনতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি আমাদের প্রতি তাঁর মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নিয়ে বললেনঃ তোমরা সকলে জাহান্নামের শাস্তি হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। 

তারা (সাহাবীগণ) বললেন, জাহান্নামের শাস্তি হতে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা সকলে কবরের আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। সাহবীগণ বললেন, কবরের আযাব হতে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। অতঃপর বললেনঃ তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন সমুদয় ফিতনা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। তার বললেন, প্রকাশ্য ও গোপন সমুদয় ফিতনা হতে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। এরপর তিনি আবারো বললেনঃ তোমরা দাজ্জালের ফিতনা হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাও। তারা (সাহাবীগণ) বললেন, দাজ্জালের ফিতনা হতে আমরা আল্লাহর নিকট পানাহ চাই।

৬৯৫০.    মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা বর্জন করবে এ ভয় না থাকলে আমি আল্লাহর নিকট দুআ করতাম যেন তিনি তোমাদেরকে কবরের আযাব শুনিয়ে দেন।

৬৯৫১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) উবায়দুল্লাহ ইবনু মূআয (অন্য সনদে) মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (অন্য সনদে) যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্তমিত হবার পর বের হলেন। এ সময় তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী লোকদেরকে তাদের কবরের মধ্যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।

৬৯৫২.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরের মধ্যে রেখে তার সঙ্গী-সাথীরা তথা হতে ফিরে আসে এবং সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায় তখন তার নিকট দু'জন ফিরিশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসায়। অতঃপর তাকে তারা প্রশ্ন করে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলতে? মুমিন বান্দা তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল। তখন তাকে বলা হয়, জাহান্নামে তুমি তোমার আসন দেখে নাও। আল্লাহ তাআলা তোমার এ আসনকে জান্নাতের আসনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তখন সে তার উভয় আসন দেখে নেয়। 

বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতঃপর তার কবরকে (দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে) সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সবুজ (শ্যামল গাছের) দ্বারা ভরপুর করে দেয়া হয় কিয়ামতে তাদের (মানুষের) উত্থিত হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে।

৬৯৫৩.    মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল দারীর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মৃত ব্যক্তিকে যখন তার কবরে রাখা হয় তখন সে তার সঙ্গী-সাথীদের প্রত্যাবর্তন কালে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়।

৬৯৫৪.    আমর ইবনু যুরারাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রেখে তার সঙ্গী-সাথীগণ ফিরে আসে। ...... অতঃপর সাঈদ (রহঃ) শায়বান (রহঃ) সুত্রে কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৬৯৫৫.    মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ইবনু উসমান আবদী (রহঃ) ... বারা' ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বাণীঃ يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ "যারা শ্বাশত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত (অবিচল) রাখবেন" সম্পর্কে বলেন, এ আয়াত কবরের আযাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কবরে তাকে প্রশ্ন করা হয়, তোমার রব কে? সে বলে, আমার রব আল্লাহ এবং আমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এটাই আল্লাহর এ বাণীর বাস্তবায়ন, "যারা শ্বাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহ-জগতে ও পর-জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন।"

৬৯৫৬.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও আবূ বাকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে আল্লাহর বাণীঃ يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে "যারা শ্বাশ্বত বানীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহ-জগতে ও পর-জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন" এ আয়াতটি কবরের আযাব-সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।

৬৯৫৭.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারিরী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যক্তির রুহ কবয করার পর দু'জন ফিরিশতা এসে তার রুহ ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এখানে ঐ রুহের সুগন্ধি এবং মিশকের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আকাশের বাসিন্দারা বলতে থাকে, কোন পবিত্রাত্না পৃথিবী হতে আগমন করেছে! আল্লাহ তোমার প্রতি এবং তোমার আযাদকৃত শরীরের প্রতি রহমত নাযিল করুন। অতঃপর তাকে তার প্রতিপালকের নিকট নিয়ে যায় এবং তারা বলতে থাকে, তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও, কিয়ামত পর্যন্ত (তোমরা এখানেই বসবাস করবে)। 

আর যখন কোন কাফির ব্যক্তির রুহ বের হয়- বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এখানে তার দুর্গন্ধ এবং তার প্রতি অভিসম্পাতের কথা উল্লেখ করেছেন। তখন আকাশের অধিবাসীরা বলতে থাকে, কোন খবীস আত্না পৃথিবী হতে এসেছে। অতঃপর বলা হল, তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। কিয়ামত পর্যন্ত তারা এখানেই বসবাস করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়ে জড়ানো একটি পাতলা কাপড় দ্বারা নিজের নাকটি এভাবে ধরলেন।

৬৯৫৮.    ইসহাক ইবনু উমার ইবনু সালীত আল হুযালী (অন্য সনদে) শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) এর সাথে একদা আমরা মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে ছিলাম। তখন আমরা চাঁদ দেখাছিলাম। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন ছিলাম, তাই আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আমি ব্যতীত কেউ বলেনি যে, সে চাঁদ দেখেছে। তিনি বলেনঃ আমি উমার (রাঃ) কে বলছিলাম, আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? এ-ই তো চাঁদ। কিন্তু তিনি দেখছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমার (রাঃ) বলছিলেন, অল্পক্ষণের মাঝেই আমি দেখতে পাব। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় তিনি আমাদের নিকট বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কাফিরদের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন। বললেন, আগের দিন বদর যুদ্ধাদের ধরাশায়ী হবার স্থান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দেখাচ্ছিলেন। 

তিনি বলছিলেন, ইনশাআল্লাহ্‌ এটা আগামীকাল অমুকের ধরাশায়ী হবার স্থান। বর্ণনাকারী বলেন, উমার (রাঃ) বলেছেন, শপথ সে সত্তার, যিনি তাকে সত্য বানী সহ প্রেরণ করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সীমারেখা বলে দিয়েছেন, তারা সে সীমারেখা একটুও অতিক্রম করেনি। অতঃপর তাদেরকে একটি কুপে এক জনের উপর অপর জনকে নিক্ষেপ করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট গিয়ে বললেনঃ হে অমুকের ছেলে অমুক, হে অমুকের ছেলে অমুক! আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যে ওয়াদা তোমাদের সাথে করেছেন তোমরা কি তা সঠিক পেয়েছো? আমার প্রতিপালক আমার সাথে যে ওয়াদা করেছেন আমি তা সঠিক পেয়েছি। তখন উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে সব দেহে প্রাণ নেই, আপনি তাদের সাথে কিভাবে কথা বলছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যা বলছি, তা তোমরা তাদের চেয়ে বেশী শুনছ না। তবে তারা এ কথার উত্তর দিতে সক্ষম নয়।

৬৯৫৯.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধে নিহত লোকদেরকে তিন দিন পর্যন্ত ফেলে রেখে দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি তাদের নিকট এসে তাদের (লাশের) সান্মুখে দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে আওয়াজ দিয়ে বললেন, হে হিশামের পুত্র আবূ জাহল, হে উমায়্যা ইবনু খালফ, হে উকবা ইবনু রাবীআ, হে শায়বা ইবনু রাবীআ! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের সাথে যা ওয়াদা করেছেন তোমরা কি তা সঠিক পাওনি? আমার প্রতিপালক আমার সাথে যা ওয়াদা করেছেন আমি তা সঠিক পেয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ কথা উমার (রাঃ) শুনে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! তারা তো দুর্গন্ধময় মৃত (লাশ)। কিভাবে তারা শুনবে এবং কিভাবে তারা উত্তর দিবে? তিনি বললেনঃ আমি তাদেরকে যা বলছি এ কথা তাদের থেকে তোমরা অধিক শুনছ না। তবে তারা জবাব দিতে সক্ষম নয়। অতঃপর তিনি তাদের সম্পর্কে আদেশ দিলে তাদেরকে হেঁচড়িয়ে নিয়ে বদরের কুপে নিক্ষেপ করা হল।

৬৯৬০.    ইউসূফ ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) ... আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাফিরদের উপর জয়লাভ করলেন, তখন তিনি বিশের অধিক কুরায়শ নের্তৃবৃন্দ রাওহ বলেন, চব্বিশ জন কুরায়শ নের্তৃবৃন্দ সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাদের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কুপে নিক্ষেপ করা হল। অতঃপর তিনি আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত সাবিতের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৮. হিসাব নিকাশের বাস্তবতার বিবরণ


৬৯৬১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন যার হিসাব যাচাই করা হরে তার আযাব অবধারিত। আমি প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ তায়ালা কি বলেন নিঃ فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا‏ “তার হিসাব-নিকাশ সহজেই লওয়া হবে”। একথা শুনে তিনি বললেনঃ এ তো হিসাব নয় বরং এ তো শুধু নামে মাত্র পেশ করা। কারণ কিয়ামতের দিন যার হিসাব যাচাই করা হবে তার আযাব অবধারিত।

৬৯৬২.    আবূ রাবী-আতাকী ও আবূ কামিল (রহঃ) ... আইউব (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৯৬৩.    আবদুর রহমান ইবনু বিশর ইবনুুূল হাকাম আল আবাদী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যারই হিসাব যাচাই করা হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ কথা শুনে আমি প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ কি সহজ হিসাবের কথা বলেন নি? তিনি বললেনঃ এ তো শুধু নামে মাত্র পেশ করা। কারণ যার হিসাব যাচাই করা হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।

৬৯৬৪.    আবদুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যার হিসাব যাচাই করা হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর উসমান ইবনু আসওয়াদ (রহঃ) আবূ ইউনুস (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. মৃত্যুর সময় আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করা


৬৯৬৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে তাকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন আল্লাহর প্রতি নেক ধারণা পোষণরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

৬৯৬৬.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৯৬৭.    আবূ দাঊদ সুলায়মান ইবনু মা'বাদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের তিন দিন পূর্বে আমি তাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন আল্লাহর প্রতি নেক ধারণা পোষণ করা অবস্থায় মারা যায়।

৬৯৬৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক বান্দা কিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উত্থিত হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।

৬৯৬৯.    আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি سَمِعْتُ না বলে عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ১৯. মৃত্যুর সময় আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করা


৬৯৭০.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজিবী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি, আল্লাহ যখন কোন সম্প্রদায়কে আযাব দেয়ার ইচ্ছা করেন তখন এ আযাব ঐ সম্প্রদায়ে অবস্থিত সকলকেই গ্রাস করে নেয়। অতঃপর কিয়ামতের দিন তাদের আমলের (নিয়তের) উপর উত্থিত হবে।

No comments:

Powered by Blogger.