সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৮ম খন্ড, অধ্যায়ঃ ফিতনা ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী........
৭০৫১. যুহায়র ইবনু হারব ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অচিরেই এমন হবে যে, ইরাকবাসীরা না খাদ্যশস্য পাবে না দিরহাম পাবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কোন দিক থেকে এ বিপদ আসবে? তিনি বললেন, অনারবদের পক্ষ থেকে। তারা তা (খাদ্য শস্য ও দিরহাম) আসতে বাধা দিবে। তিনি আবার বললেন অচিরেই সিরিয়াবাসীর নিকট কোন দ্বীনার আসবে না এবং কোন খাদ্যশস্যও আসবে না। আমরা বললাম, এ বিপদ কোন দিক থেকে আগমন করবে? তিনি বললেন, রোমের দিক থেকে। অতঃপর তিনি (রাবী) কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের শেষভাগে একজন খলীফা হবে। সে হাত ভরে ভরে অর্থ সম্পদ দান করবে, গণনা করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবূ নাদরা ও আবূল আলাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের কি মনে করেন তিনি উমার ইবনু আবদুল আযীয? তারা জবাবে বললেন, না।
৭০৫২. ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জুরায়রী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭০৫৩. নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (অন্য সনদে) আলী ইবনু হুজর সা'দী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের খলীফাদের মধ্যে একজন খলীফা এমন হবে, যে হাত ভরে ভরে দান করবে এবং মালের কোন গণনাই করবে না। ইবনু হুজর (রহঃ)-এর রেওয়ায়েতে يَحْثُو الْمَالَ এর পরিবর্তে يَحْثِي الْمَالَ বর্ণিত আছে।
৭০৫৪. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ ও জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আখেরী যুগে এমন খলীফা পয়দা হবে, যে মাল বণ্টন করবে কিন্তু মোটেই গণনা করবে না।
৭০৫৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৫৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন যে, আম্মার (রাঃ) যখন পরিখা খনন করছিলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে (তাঁকে সম্বোধন করে) বলেছেনঃ সুমাইয়ার পুত্রের জন্য ভয়াবহ সংকট (আপতিত হবে) এবং একটি বিদ্রোহী দল তোমাকে হত্যা করবে।
৭০৫৭. মুহাম্মাদ ইবনু মু’আয ইবনু আব্বাদ আল আনবারী ও হুরায়ম ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইসহাক ইবনু মানসূর, মাহমুদ ইবনু গায়লান ও মুহাম্মাদ ইবনু কুদামা (রহঃ) ... আবূ মাসলামা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
তবে নাদরের হাদিসে রয়েছে যে, أَخْبَرَنِي مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي أَبُو قَتَادَةَ এবং খালিদ ইবন হারিসের হাদীসে أُرَاهُ يَعْنِي أَبَا قَتَادَةَ আমার মনে হয় যে তিনি আবু কাতাদাকে বুঝিয়েছেন। খালিদের হাদীসে يؤس ابْنِ سُمَيَّةَ এর স্থলে وَيْسَ বা ياويس ابْنِ سُمَيَّةَ বর্ণিত আছে।
৭০৫৮. মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা (অন্য সনদে) উকবা ইবনু মুকাররাম আম্মী ও আবূ বাকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মার (রাঃ) কে বলেছেনঃ তোমাকে বিদ্রোহী (রাষ্ট্রদ্রোহী) লোকেরা হত্যা করবে।
৭০৫৯. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... উম্মে সালমা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৬০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আম্মারকে রাষ্ট্রদ্রোহী লোকেরা হত্যা করবে।
৭০৬১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরায়াশের এ গোত্রটি আমার উম্মাতকে ধংস করবে। (এ কথা শুনে) সাহাবীগন বললেন, আপনি আমাদের কি আদেশ দিচ্ছেন। তিনি বললেনঃ তখন যদি লোকেরা তাদের থেকে দূরে সরে যায়।
৭০৬২. আহমাদ ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) ... শু'বা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭০৬৩. আমর নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিসরা (পারস্য রাজ) মারা গেছে। অতঃপর পারস্য রাজ্য আর হবে না। এবং যখন কায়সার (রোম সম্রাট) মারা যাবে তারপর আর কোন কায়সার (রোম সম্রাট) হবে না। শপথ ঐ সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা তাদের ধন-ভাণ্ডার অবশ্যই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে।
৭০৬৪. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া অন্য সনদে ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে সুফিয়ান (রহঃ) এর সুত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭০৬৫. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এগুলো সে সব হাদিস যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে একটি হাদীস হচ্ছে এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিসরা (পারস্য রাজ্য) নিপাত গিয়েছে, এরপর আর কেউ কিসরা (পারস্য রাজ) হবে না। কায়সার (রোম সম্রাট) অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর আর কোন কায়সার (রোম সম্রাট) হবে না। তোমরা তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহর পথে বন্টন করবে।
৭০৬৬. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কিসরা (পারস্য রাজ) নিপাত যাবে, এরপর আর কেউ কিসরা (পারস্য রাজ) হবেনা। অতঃপর জাবির (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭০৬৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুসলমান অথবা মুমিনদের একটি দল শুভ্র প্রাসাদে সংরক্ষিত কিসরা পারস্য রাজ্য পরিবারের ধনভাণ্ডার জয় করবে। বর্ণনাকারী কুতায়বা দ্বিধাহীনভাবে মুসলমানদের কথা উল্লেখ করেছেন।
৭০৬৮. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি ...... আবূ আওয়ানা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
৭০৬৯. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি ঐ শহরের কথা শুনেছ, যার এক প্রান্তে স্থল ভাগে এবং এক প্রান্তে সাগরে? তারা (সাহবীগণ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! শুনেছি। অতঃপর বললেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত ইসহাক (ইসমাইল) (আলাইহিস সালাম) এর সন্তানদের সত্তর হাজার লোক এ শহরের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করবে। তারা শহরের দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়ে কোন অস্ত্র দ্বারা যুদ্ধ করবে না এবং কোন তীরও চালাবে না; বরং তারা একবার لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ বলবে; অমনি এর একপ্রান্ত পতিত (পদানত) হয়ে যাবে।
বর্ণনাকারী সাওর (রহঃ) বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে, আমার কাছে বর্ণনাকারী ব্যক্তি সাগর প্রান্তের কথা বলেছিলেন। অতঃপর দ্বিতীয়বার তারা لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ বলবে। এতে শহরের অপর প্রান্ত পতিত (পদানত) হয়ে যাবে। এরপর তারা তৃতীয় বার لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ বলবে তখন তাদের জন্য (নগর তোরণ) খুলে দেয়া হবে। তখন তারা সেখানে (প্রচুর) গনীমত লাভ করবে। তারা যখন গনীমতের মাল বন্টনে ব্যস্ত থাকবে, তখন কেউ চীৎকার করে ঘোষণা করবে, দাজ্জালের আবির্ভাব হয়েছে। এ কথা শুনতেই তারা সব কিছু ফেলে প্রত্যাবর্তন করবে।
৭০৭০. মুহাম্মাদ ইবনু মারযুক (রহঃ) ... সাওর ইবনু যায়দ দীলী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৭১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ অবশ্যই তোমরা ইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে, এমনও হবে যে, পাথর বলবে, হে মুসলিম! এ-ই তো ইয়াহুদী। তুমি তাকে হত্যা কর।
৭০৭২. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে هَذَا يَهُودِيٌّ وَرَائِي অর্থাৎ এই তো আমার পশ্চাতে এক ইয়াহুদী (লুকিয়ে) আছে।
৭০৭৩. আবূ বকর ইবনু আবী শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এবং ইয়াহুদী সম্প্রদায় পরস্পর লড়াই করবে। অবশেষে পাথরও বলবে, হে মুসলিম! এই তো ইয়াহুদী আমার পাশ্চাতে (লুকিয়ে আছে), এসো তাকে তুমি হত্যা কর।
৭০৭৪. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদী সম্প্রদায় তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর তাদের উপর তোমাদের প্রাধান্য দেয়া হবে। অবশেষে পাথর বলবে, হে মুসলিম! এই তো ইয়াহুদী আমার পশ্চাতে লুকিয়ে আছে, তাকে তুমি হত্যা কর।
৭০৭৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত মুসলমানগন ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই না করবে। মুসলমানগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইয়াহুদী আমার পশ্চাতে। এসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু 'গারকাদ' গাছ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইয়াহুদীদের গাছ।
৭০৭৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) আবূ কামিল আল-জাহদারী (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি, কিয়ামতের পূর্বে কতিপয় মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব হবে। তবে আবূল আহওয়াসের বর্ণনায় এ কথা বর্ণিত আছে যে, আমি তাকে [জাবির (রাঃ)] কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শুনেছো? তিনি বললেন, হ্যাঁ (শুনেছি)।
৭০৭৭. ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সিমাক (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সিমাক (রহঃ) বলেনঃ আমি আমার ভাইকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, জাবির (রাঃ) বলেছেন, তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাকবে।
৭০৭৮. যুহায়ব ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব হয়। আবির্ভাবের পর তারা প্রত্যেকেই দাবী করবে, সে আল্লাহর রাসুল।
৭০৭৯. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রাবী حَتَّى يُبْعَثَ স্থলে حَتَّى يَنْبَعِثَ বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. ইবন সায়্যাদের আলোচনা
৭০৮০. উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এ সময় আমরা কতিপয় বালকের নিকট দিয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে ইবনু সায়্যাদও বিদ্যমান ছিল। বালকেরা পালিয়ে গেল এবং ইবনু সায়্যাদ বসে রইল। এ দেথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা বিরক্তিবোধ করলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার দুই হাত ধুলায় ধুসরিত হোক। তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসুল! সে বলল, না। বরং আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে আমি আল্লাহর রাসুল। একথা শুনে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যা মনে করছো, যদি সে সে-ই হয়, তবে তো তুমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না।
৭০৮১. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হাঁটছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি ইবনু সায়্যাদের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার জন্য আমি একটি কথা গোপন রেখেছি। বল তো তা কি? সে (ইবনু সায়্যাদ) বলল, (আপনার অন্তরে) دخ (ধুঁয়া) শব্দটি লুকায়িত আছে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দুর্ভাগা! তুই তোর পরিমণ্ডল অতিক্রম করতে পারবি না। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ছেড়ে দিন। এক্ষণি আমি তার গর্দান উড়িযে দেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে রেখে দাও, যার সম্পর্কে তুমি আশংকা করছো সে যদি ঐ ব্যাক্তিই হয়ে থাকে তবে তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না।
৭০৮২. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মদ্বীনার কোন এক গলিতে ইবনু সায়্যাদের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর ও উমর (রাঃ) এর সামনাসামনি দেখা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও, আমি আল্লাহর রাসুল? জবাবে সে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতাগণের প্রতি ও তার কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কি দেখতে পাও? সে বলল, আমি পানির উপর আরশ দেখতে পাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তো সমুদ্রে ইবলীসের আরশ (সিংহাসন) দেখতে পাও। আচ্ছা তুমি আর কি দেখতে পাচ্ছ? সে বলল, আমি দুজন সত্যবাদী ও একজন মিথ্যাবাদীকে অথবা দুইজন মিথ্যাবাদী ও একজন সত্যবাদীকে দেখতে পাচ্ছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একে ছেড়ে দাও। সে অস্পষ্টতার শিকার।
৭০৮৩. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু সায়্যাদকে দেখলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আবূ বকর ও উমর (রাঃ) ও ছিলেন। এবং ইবনু সায়্যাদ ছিল কতিপয় বালকের সাথে ...... অতঃপর জুরায়রী (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৮৪. উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মক্কা যাওয়ার পথে) ইবনু সায়্যাদ মক্কা পর্যন্ত আমার সফর সঙ্গী ছিল। পথিমধ্যে সে আমায় বলল, মানুষের কানাঘুষায় আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তারা মনে করছে, আমিই দাজ্জাল। আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ শুনেছি। তখন সে বলল, আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জাল মক্কা ও মদীনা প্রবেশ করতে পারবে না? আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। সে বলল, দেখুন, আমি তো মদীনায় জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এখন মক্কা যাবার ইচ্ছা করছি। এ সব কথা বলার পর উপসংহারে সে বলল, আল্লাহর কসম! তবে আমি জানি, দাজ্জাল কোথায় জন্মগ্রহণ করেছে, তার বাড়ী কোথায় এবং এখন সে কোথায় আছে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, (এহেন কথা বলে) সে আমাকে মহা ফাঁপরে ফেলে দিল।
৭০৮৫. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ইবনু সায়্যাদ আমার সাথে কিছু কথাবার্তা বলল। এতে আমি লজ্জিত হচ্ছিলাম। (সে বলল), লোকদের নিকট ওযর পেশ করছি, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথীরা! আমার ব্যাপারে তোমাদের কি হয়েছে? আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এ কথা বলেননি যে, দাজ্জাল ইয়াহুদী হবে? আমি তো মুসলমান হয়েছি। তিনি তো বলেছেনঃ দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না। আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। তিনি তো এও বলেছেন যে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের উপর মক্কায় প্রবেশ করা হারাম করে দিয়েছেন। অথচ আমি তো হজ্জও করেছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, সে অনর্গল এমনভাবে বলে যেতে লাগল, যার ফলে আমি তাকে সত্যবাদী মনে করার কাছাকাছি পৌছে গেলাম। অতঃপর সে বলল, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমি জানি, দাজ্জাল এখন কোথায় আছে। আমি তার পিতামাতাকেও চিনি। লোকেরা ইবনু সায়্যাদকে প্রশ্ন করল, তুমি দাজ্জাল হও, একি তুমি পছন্দ কর? জবাবে সে বলল, যদি আমাকে দাজ্জাল হওয়ার প্রস্তাব করা হয়, তবে আমি তা অপছন্দ করব না।
৭০৮৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। আমাদের সাথে ছিল ইবনু সাইয়াদ। অতঃপর এক স্থানে আমরা অবতরণ করলাম। লোকেরা এদিক-ওদিক চলে গেল। কেবল আমি এবং সে রয়ে গেলাম। লোকেরা ইবনু সাইয়াদ সম্পর্কে যে কথা বলাবলি করছে, এ কারণে আমি তার থেকে ভীষণ একাকীত্ব (আতংক)-বোধ করছিলাম। তিনি বলেন, সে তার মাল-পত্র আমার মালের সাথে এনে রাখল। আমি বললাম, গরম খুব প্রচণ্ড। তুমি যদি তোমার মালামাল ঐ গাছের নীচে নিয়ে রাখতে। এ কথা শুনে সে তাই করল। অতঃপর আমাদের সামনে কতগুলো বকরী এল। এ দেখে ইবনু সাইয়াদ সেখানে গেল এবং এক পাত্র দুধ নিয়ে এল। এরপর সে আমাকে বলল, হে আবূ সাঈদ। তুমি দুধ পান করে নাও। আমি বললাম, গরম খুব প্রচন্ড। দুধও গরম। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, দুধ পান না করার কারণ এটাই ছিল যে, তার হাতে দুধ পান করা বা তার হাত থেকে দুধ গ্রহণ করা আমি পছন্দ করিনি।
এ দেখে ইবনু সাইয়াদ বলল, হে আবূ সাঈদ! লোকেরা আমার সম্পর্কে যে কথা কানাঘুষা করে বলছে, এ কারণে এখন আমার ইচ্ছা যে, আমি একটি রশি নিয়ে উহা গাছে লটকিয়ে ফাঁসি দিয়ে মরে যাই। অতঃপর সে বলল, হে আবূ সাঈদ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস ওটা কারো নিকট লুক্কায়িত থাকলেও আনসার সম্প্রদায়ের নিকট তা লুকায়িত নয়। আর তুমি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস সম্পর্কে তাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞাত নও?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেননি যে, দাজ্জাল কাফির হবে অথচ আমি মুসলমান। তিনি কি বলেননি যে, দাজ্জাল (বন্ধ্যা এবং) সন্তানহীন হবে? অথচ মদ্বীনায় আমি আমার সন্তান রেখে এসেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেননি যে, দাজ্জাল মক্কা মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না? অথচ আমি মদীনা থেকে এসেছি এবং মক্কা যাবার ইচ্ছা করছি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, তার কথায় আমি তার পক্ষ অবলম্বন করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। অতঃপর সে (ইবনু সাইয়াদ) বললঃ আল্লাহর কসম! আমি তাকে (দাজ্জালকে) চিনি, তার জনাস্থান চিনি এবং এখন সে কোথায় আছে, তাও আমি জানি। এ কথা শুনে আমি বললাম, তোমার সমস্ত দিন ধ্বংস হোক, অকল্যাণকর হোক।
৭০৮৭. নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু সাইদকে প্রশ্ন করেছেন, জান্নাতের মাটি কিরূপ হবে? সে বলল, হে আবূল কাসিম! (জান্নাতের মাটি) সাদা ময়দা এবং মিশকের মত সুগন্ধিযুক্ত হবে। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি সত্য বলেছ।
৭০৮৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু সায়্যাদ জান্নাতের মাটি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ জান্নাতের মাটি ময়দার মত সাদা এবং খাঁটি মিশকের ন্যায় সুগন্ধিযুক্ত হবে।
৭০৮৯. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আল আনবারী (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে আল্লাহর নামে শপথ করে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ইবনু সায়্যাদই হলো দাজ্জাল। আমি বললাম, আপনি আল্লাহর নামে শপথ করে এ কথা বলছেন? তিনি বললেন, আমি উমর (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শপথ করে এ বিষয়ে শপথ করতে শুনেছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কথাকে প্রত্যাখ্যান করেননি।
৭০৯০. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হারামালা ইবনু ইমরান আত-তুজীবী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একদল মানুষ সহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইবনু সায়্যাদের নিকট গেলেন। তখন তাকে বনী মাগলার কিল্লার নিকট একদল বালকের সাথে ক্রীড়ারত অবস্থায় পেলেন। তখন ইবনু সায়্যাদ বালিগ হবার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু সে তা জানত না। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দ্বারা তার পৃষ্ঠে আঘাত করে বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসুল? এ কথা শুনে ইবনু সায়্যাদ তার প্রতি তাকাল এবং বলল যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। অতঃপর ইবনু সায়্যাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করল যে, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছেড়ে দিলেন এবং (এর সরাসরি উত্তর না দিয়ে) বললেন আমি ঈমান আনয়ন করেছি আল্লাহর প্রতি ও তার রাসুলগণের প্রতি।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি দেখতে পাও? ইবনু সায়্যাদ বলল, আমার নিকট সত্যবাদী ও মিথ্যাবদী লোক আসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার বিষয়টি সঠিক-বেঠিক মিশ্রিত (হযবরল) হযে গিয়েছে। তোমাকে জিজ্ঞেস করার জন্য একটি কথা আমি মনে মনে গোপন রেখেছি। ইবনু সায়্যাদ বলল, তা হচ্ছে دخ (ধুয়া)। তৎপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দূর হয়ে যা। তুই তোর পরিধি অতিক্রম করতে পারবি না। অতঃপর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এক্ষণি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি সে দাজ্জাল হয়, তবে তো তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। আর যদি সে দাজ্জাল না হয় তবে তাকে হত্যা করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই।
সালাম ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, পরবর্তী সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উবায় ইবনু কাব (রাঃ) সেই খেজুর বাগানের দিকে চললেন, যেখানে ইবনু সায়্যাদ বসবাস করত। বাগানের মধ্যে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করতে চেষ্টা করছিলেন, যাতে ইবনু সায়্যাদ তাঁকে দেখার পূর্বে তিনি তার কথা শুনে নেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখলেন যে, সে তার বিছানায় একটি চাঁদরে আবৃত অবস্থায় গুনগুন করে কি যেন বলছিল। এদিকে ইবনু সায়্যাদের মা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখল যে, তিনি বৃক্ষের আড়ালে আত্নগোপনের চেষ্টা করছেন। সে ততক্ষণাৎ ইবনু সায়্যাদকে বলে উঠলঃ হে সাফ! এটা ইবনু সায়্যাদের নাম। মুহাম্মাদ এসে গেছে। (এ কথা শুনতেই) ইবনু সায়্যাদ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার মা তাকে সাবধান না করলে সে পরিষ্কার বলে ফেলত।
সালিম (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দিলেন। তাতে আল্লাহ তা’আলার যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুনকীর্তনের পর দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেনঃ আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিৎনা সম্পর্কে সতর্ক করছি যেমন প্রত্যেক নাবী তাঁর সম্প্রদায়কে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এমনকি নূহ (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর কাওমকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি যা কোন নাবী তার সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হল এই যে, তোমরা জেনে রাখ, দাজ্জাল কানা হরে। আল্লাহ তাআলা কানা নন।
ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী তাকে অবহিত করেছেন যে, যে দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সে দিন তিনি বলেছেন, যে তাঁর চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে কাফির (كافر) অথবা (ك ف ر) লেখা থাকবে। যে ব্যক্তি তার কার্যক্রম অপছন্দ করবে সে তা পাঠ করতে পারবে অথবা প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তই তা পাঠ করতে সক্ষম হবে। তিনি এও বলেছেন যে, তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতিপালককে দেখতে সক্ষম হবে না।
৭০৯১. হাসান আল-হুলওয়ানি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীসহ চললেন। এতে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি ইবনু সায়্যাদকে বালিগ হওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় বালক রূপে অন্য বালকদের সাথে ক্রীড়ারত অবস্থায় বনী মুআবিয়্যার কিল্লার নিকট দেখতে পেলেন। ...... অতঃপর তিনি উমার ইবনু সাবিতের হাদীসের শেষ পর্যন্ত ইউনুসের অনুরূপ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে ইয়াকুব থেকে অধিক বর্ণিত রয়েছে যে, আমার পিতা لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ এর স্থলে لَوْ تَرَكَتْهُ أُمُّهُ بَيَّنَ أَمْرَهُ (যদি তার মা তাকে তার অবস্থায় রেখে দিত তবে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যেতো) বর্ণিত আছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. কিয়ামতের পূর্বে মদীনার বসতি ও আবাদী
৭০৯২. আবদ ইবনু হুমায়দ ও সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীসহ ইবনু সায়্যাদের পাশ দিয়ে গেলেন। এদের মধ্যে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)ও ছিলেন। এ সময় সে বনী মাগালার কিল্লার নিকট এক দল বালকের সাথে খেলাধূলা করছিল। তখন সে বালক ছিল। বর্ণনাকারী এ হাদীসটি ইউনূস এবং সালিহ (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) এর হাদীস তথা উবায় ইবনু কা'বের সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাগানের দিকে যাওয়ার হাদীসটি উল্লেখ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. ইবন সায়্যাদের আলোচনা
৭০৯৩. আবদ ইবনু হুমায়দ ও উবাদা (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনার কোন রাস্তায় ইবনু উমর (রাঃ) ইবনু সায়্যাদের সাক্ষাৎ পান। তিনি তাকে এমন কিছু কথা বলেন, যার ফলে সে রাগে ফুলতে থাকে। সে এমন ফুলল যে, সমগ্র গলি যেন পূর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর ইবনু উমর (রাঃ) হাফসা (রাঃ) এর নিকট গেলেন। তাঁর কাছে এ ঘটনার সংবাদ পৌঁছে গেল। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন। ইবনু সায়্যাদের কাছে তোমার এমন কি প্রয়োজন ছিল? তুমি কেন তাকে খোঁচা দিতে গেলে? তুমি কি জানেন না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হওয়ার কারণেই দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
৭০৯৪. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, ইবনু সায়্যাদের সাথে আমার দু'বার সাক্ষাৎ হয়েছে একবার সাক্ষাতের পর আমি জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি বলেন যে, সে-ই (ইবনু সায়্যাদ) দাজ্জাল? জবাবে সে বলল, আল্লাহর শপথ, কখনো না। আমি বললাম, তাহলে তো আমাকে মিথ্যা বলেছেন। আল্লাহর কসম! আপনাদের জনৈক ব্যক্তি তো আমাকে এ মর্মে সংবাদ দিয়েছে যে, সে মৃত্যূবরণ করবে না, যতক্ষন পর্যন্ত সে আপনাদের মধ্যে সর্বাধিক বিত্তশালী এবং সন্তান-সন্ততি সস্পন্ন না হবে। আজ তো অনুরূপই হয়েছে বলে তারা বলছে। অতঃপর (ইবনু সায়্যাদ) আমাদের সাথে আলোচনা করল। এরপর আমি তাকে ছেড়ে চলে আসলাম।
ইবনু সায়্যাদের সাথে আরেকবার আমার সাক্ষাৎ হল। তখন তার চোখ ফুলে উঠে ছিল। আমি তাকে বললাম, তোমার চোখের এ অবস্থা কখন হল, যা আমি দেখতে পাচ্ছি? সে বলল, আমি জানিনা। আমি বললাম, সেটি তোমার মাথায়ই রয়েছে অথচ তুমি জাননা! অতঃপর সে বলল, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার এ লাঠিতেও তিনি চোখ পয়দা করে দিতে পারেন। এরপর সে গাধার ন্যায় এমন বিকট আওয়াজে চিৎকার করল।
তিনি (ইবন উমর) বলেন, পরে আমার কোন সাথী বলেছে যে, আমি তাকে আমার সাথে থাকা লাঠি দ্বারা প্রহার করেছি যে, লাঠিটি টুকরা টুকরা হয়ে পড়েছে। আল্লাহর কসম অথচ এ সম্পর্কে আমি তা অনুভব করতে পারি না। নাফি (রহঃ) বলেন, তারপর আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) উম্মুল মুমিনীন [হাফসা (রাঃ)] এর নিকট এলেন এবং তার নিকট এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। একথা শুনে তিনি বললেন, ইবনু সায়্যাদের নিকট তোমার কি প্রয়োজন ছিল? তুমি কি জান না যে, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কারো প্রতি ক্রোধই প্রথমে দাজ্জালের প্রথম প্রকাশ ঘটবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দাজ্জাল, তার পরিচয় এবং তার সাথে যা থাকবে তার বিবরণ
৭০৯৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে দাজ্জালের আলোচনা করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা কানা নন। শোন! দাজ্জালের ডান (চোখ) কানা হবে। তার চোখ যেন আঙ্গুরের ন্যায় ফোলা হবে।
৭০৯৬. আবূর রাবী ও আবূ কামিল (রহঃ) (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৯৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক নবীই তার উম্মাতকে কানা মিথ্যাবাদী সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। জেনে রাখ! দাজ্জাল কানা হবে। তোমাদের প্রতিপালক কানা নন। দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে ك - ف - ر লেখা থাকবে।
৭০৯৮. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাজ্জালের চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে ك ف ر অর্থাৎ كَافِرٌ (কাফির) লেখা থাকবে।
৭০৯৯. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের চক্ষু বিকৃত হবে। তার চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে كَافِرٌ (কাফির) লেখা থাকবে। পরে তিনি 'বানান' করে বলেন, ك ف ر প্রত্যেক মুসলমানই তা পাঠ করতে পারবে।
৭১০০. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের বাম চোখ কানা হবে। (তার দেহে) ঘন চুল হবে। তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। (মুলতঃ) তার জাহান্নাম জান্নাত হবে এবং তার জান্নাত জাহান্নাম হবে।
৭১০১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের সাথে কি থাকবে, এ সম্পর্কে আমি নিশ্চিত অবগত আছি। তার সাথে প্রবাহমান দুটি নহর থাকবে। একটি দৃশ্যত সাদা পানি এবং অপরটি দৃশ্যত লেলিহান অগ্নি মনে হবে। যদি কেউ সুযোগ পায় তবে সে যেন ঐ নহরে প্রবেশ করে যাকে দৃশ্যত আগুন মনে হবে এবং (এই) চক্ষু বন্ধ করতঃ মাথা অবনমিত করে সে যেন তা থেকে পানি পান করে। তা হবে ঠাণ্ডা পানি। দাজ্জালের এক চোখ বিকৃত হবে এবং তার চোখের উপরে ঝুলন্ত চামড়া থাকবে এবং দুই চোখের মাঝখানে كَافِرٌ অথবা ك ف ر লেখা থাকবে। শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল মুমিন ব্যক্তি তা পাঠ করতে পারবে।
৭১০২. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাজ্জালের সাথে পানি ও আগুন থাকবে। (কিন্তু প্রকৃতপক্ষে) তার আগুনই হবে সুশীতল পানি এবং তার পানিই হবে আগুন। সুতরাং তোমরা ভুল সিদ্ধান্ত করে নিজেদের ধ্বংস করো না। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস শুনেছি।
৭১০৩. আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমির ও আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) বলেন, আমি তার [উকবা ইবনু আমির ও আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ)] এর সাথে হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তারপর উকবা (রাঃ) হুযায়ফা (রাঃ) কে বললেন, আপনি দাজ্জাল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা যা শুনেছেন তা আমাদেরকেও শোনান। তিনি বললেন, দাজ্জাল যখন আবির্ভূত হবে তখন তার সাথে পানি ও আগুন থাকবে। কিন্ত্বু মানুষ যাকে পানি দেখবে সেটা হবে দাহনশীল আগুন। আর যেটাকে মানুষ আগুন দেখবে সেটা হবে সুমিষ্ট ঠাণ্ডা পানি। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ সময়কাল পায় সে যেন দৃশ্যত যাকে আগুন দেখা যাচ্ছে তাতেই প্রবেশ করে। কেননা প্রকৃতপক্ষে সেটা হবে সুপেয় সুমিষ্ট পানি। তারপর হুযায়ফা (রাঃ) এর সত্যায়নে উকবা [আবু মাসউদ (রাঃ)] বলেন, আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস শুনেছি।
৭১০৪. আলী ইবনু হুজর সা’দী ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুযায়ফা ও আবূ মাসউদ (রাঃ) একত্রিত হলেন। তখন হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, দাজ্জালের সাথে যা থাকবে এ সম্পর্কে আমি তার থেকে অধিক জ্ঞাত। তার সাথে একটি পানির নহর এবং একটি আগুনের নহর থাকবে। যেটাকে তোমরা আগুন রূপে দেখতে পাবে সেটাই (হবে) পানি। আর যেটাকে তোমরা পানি (রূপে) দেখবে সেটাই হবে আগুন। তোমাদের কেউ যদি এ সময়কাল পায় এবং সে পানি পান করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন যা সে আগুন রূপে দেখতে পাবে তা থেকে পান করে। কেননা এখানেই সে পানি পাবে। বর্ণনাকারী আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমিও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরূপ বলতে শুনেছি।
৭১০৫. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদেরকে এমন বিষয় বলব না কি, যা কোন নাবী তার কাওমকে আজ পর্যন্ত বলেননি? শোন, দাজ্জাল কানা হবে এবং তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিকৃতির ন্যায় কিছু বস্তু থাকবে। সে যেটিকে জান্নাত বলবে সেটি (আসলে হবে) জাহান্নাম। দেখ, দাজ্জালের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি, যেমন নূহ (আলাইহিস সালাম) তাঁর সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন।
৭১০৬. আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান রাবী (রহঃ) ... নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আলোচনাকালে তিনি কখনো আওয়াজ ছোট করলেন, আবার কখনো আওয়াজ বড় করলেন। ফলে আমরা মনে করলাম যে, দাজ্জাল বৃক্ষরাজির এ ঝাড়ের মধ্যেই বুঝি এসে পড়েছে। অতঃপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাদের মাঝে এর কিছু আলামত দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের কি অবস্থা? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এতে আপনি কখনো আওয়াজ ছোট করেছেন, আবার কখনো বড় করেছন। ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ ঝাড়ের মধ্যেই বিদ্যমান। এ কথা শুনে তিনি বললেন, দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক আশংকা করছি।
শোন, আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব। তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্থায় দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে একে প্রতিহত করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধায়ক। দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে। তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গুরের ন্যায়। আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবনু কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! অবিচল থাকবে।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? জবাবে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দাজ্জাল পৃথিবীতে তার গতির দ্রুততা কেমন হবে? তিনি বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের ন্যায়। সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে। তারা তার উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে।
এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুঁ'জ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্থায় তাদের নিকট ফিরে আসবে। অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে। অমনি তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার অনুগমন করবে, যেমন মৌমাছি তাদের সর্দারের অনুগমন করে।
অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দু'ফাঁক করে ফেলবে। অতঃপর সে পুনরায় তাকে ডাকবে। যুবক দীপ্তমান হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে প্রেরণ করবেন। তিনি দুই ফিরিশতার কাঁধের উপর ভর করে লাল-গোলাপী (জাফরানী) রং এর জোড়া পরিহিত অবস্থায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের শ্বেত মিনারের উপর অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকাবেন তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িযে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের নিকট যাবেন সেই তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর দৃষ্টি যতদুর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততাদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে লুদুদ নামক আরণ্যের কাছে পেয়ে যাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন। তাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দিবেন।
এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি এ মর্মে অহী নাযিল করবেন যে, আমি আমার এমন কিছু বিশেষ বান্দা আবির্ভূত করেছি, যাদের সাথে কারোই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমার বান্দাদের তূর পর্বতে সমবেত কর। তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাযুয সম্প্রদায়কে প্রেরণ করবেন। তারা প্রতি উঁচু ভূমি হতে ছুটে আসবে। তাদের প্রথম দলটি তবরিস্তান উপসাগরের নিকট এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে। অতঃপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্থান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে এক সময় অবশ্যই পানি ছিল। তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ দ্বীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট প্রতিপন্ন হবে।
তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুয-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব প্রেরণ করবেন। তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে। এতে একজন মানুষের মৃত্যুর ন্যায় তারাও সবাই মরে খতম হয়ে যাবে। অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হতে যমীনে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ পুনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা উটের ঘাড়ের ন্যায় লম্বা এক ধরনের পাখি প্রেরণ করবেন। তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক স্থানে নিয়ে ফেলবে।
এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্যণ করবেন যার ফলে কাচা-পাকা কোন ঘরই তাকে বাধাগ্রস্ত করবে না। এতে যমীন বিধৌত হয়ে পরিচ্ছন্ন পিচ্ছিল মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে। দুধের মধ্যে বরকত হবে। ফলে দুগ্নবতী একটি উটই ছোট ছোট অনেক গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী এক বড় গোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানের (গোষ্ঠীর) জন্য। এ সময় আল্লাহ তায়াআলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাস সমস্ত ঈমানদার লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলমানদের রুহ কবয করে নিয়ে যাবে। তখন একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে। তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হবে। এদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
৭১০৭. আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ ইবনু জারির (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে “এখানেও এক সময় পানি ছিল” এ কথার পর অধিক এ কথাও বর্ণিত আছে যে, অতঃপর তারা এগুতে থাকবে। অবশেষে যেতে যেতে তারা খামার পর্বত নামক স্থানে গিয়ে পৌছবে। এ হল, বায়তুল মুকাদ্দাসের একটি পাহাড়। এখানে পৌছে তারা বলবে, আমরা তো দুনিয়াবাসীদেরকে খতম করে দিয়েছি। এসো, আসমানের সত্তাকেও খতম করে দেই। এ বলেই তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকবে। আল্লাহ তীর রক্তে রঞ্জিত করে তাদের প্রতি আবার ফিরিয়ে দিবেন। বর্ণনাকারী ইবনু হুজরের বর্ণনায় রয়েছে যে, আল্লাহ বলবেন, আমি আমার এমন কিছু বিশেষ বান্দাদেরকে অবতরণ করোছি, যাদের সাথে যুদ্ধ করা ক্ষমতা কারো নেই।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দাজ্জালের পরিচিতি, মদীনা (প্রবেশ) তার জন্য হারাম হওয়া এবং একজন মু'মিনকে হত্যা ও তাকে জীবিত করার বিবরণ
৭১০৮. আমর নাকিদ, হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ বর্ননা দিলেন। দাজ্জাল সম্পর্কে তিনি এও বললেন যে, দাজ্জাল আসবে, কিন্তু মদীনার রাস্তা ঘাটে প্রবেশ করা তার জন্য হারাম ও অসাধ্য কাজ হবে। কাজেই সে মদীনার আশে পাশে কোন লবণাক্ত অনুর্ভর ভূমিতে অবতরণ করবে। তার মুকাবিলার জন্য মদীনা থেকে এক ব্যক্তি তার কাছে যাবে, যে সেদিন শ্রেষ্ঠ মানব হবে। সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিয়ে বলছি যে, তুই সে দাজ্জাল যার কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শুনিয়েছিলেন। দাজ্জাল বলবে, লোক সকল! যদি আমি এ ব্যক্তিকে হত্যা করি অতঃপর জীবিত করি তবে তোমাদের মনে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকবে কি? লোকেরা বলবে, না। অতঃপর সে তাকে হত্যা করবে; অতঃপর জীবিত করবে; জীবিত করার পর সে ব্যক্তি বলবে, আল্লাহর কসম! এখনি তো তোমার ব্যাপারে আমার জ্ঞান আরো বেড়ে গেছে, যা ইতিপূর্বে কখনো ছিল না। দাজ্জাল আবারো তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু করতে সক্ষম হবে না।
আবু ইসহাক (রহঃ) বলেন, কথিত আছে যে, এ ব্যক্তিই হলেন খিজির (আঃ)।
৭১০৯. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭১১০. মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাহয়ায (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের আবির্ভাবের পর জনৈক মুসলিম ব্যক্তি তার দিকে অগ্রসর হবে। অতঃপর রাস্তায় অস্ত্রধারী দাজ্জাল বাহিনীর সাথে তার সাক্ষাৎ হবে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে, কোথায় যাবে? সে বলবে, আবির্তূত দাজ্জালের নিকট যাব। তারা তাকে আবারো জিজ্ঞেস করবে, তুমি কি আমাদের রবের উপর ঈমান আনয়ন করনি? সে বলবে, আমাদের প্রতিপালকের ব্যাপারে কোন অস্পষ্টতা নেই। দাজ্জালের লোকেরা বলবে, তোমরা তাকে হত্যা কর। তখন তাদের পরস্পর একে অপরকে বলবে, আমাদের রব কাউকে তার সামনে নেয়া ব্যতিরেকে হত্যা করতে তোমাদেরকে নিষেধ করেননি? অতঃপর তারা তাকে নিয়ে দাজ্জালের নিকট যাবে। দাজ্জালকে দেখা মাত্রই সে বলবে, হে লোক সকল! এ-তো সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বর্ণনা দিয়েছেন।
এরপর দাজ্জাল (তার লোকদেরকে) আদেশ করলে তাকে টানা হেঁচড়া করা হবে। তখন সে বলবে, তাকে ধর এবং তাকে ক্ষত বিক্ষত করে দাও। অতঃপর তার পেট ও পৃষ্ঠে আঘাত করা হবে। পুনরায় দাজ্জাল তাকে বলবে, তুমি কি আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর না। সে বলবে, তুমি তো মাসীহ দাজ্জাল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর দাজ্জাল তার সম্পর্কে হুকুম দিবে। দাজ্জালের হুকুমে মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকে করাতে চিরে দু'ফাঁক করে দেয়া হবে। অতঃপর দাজ্জাল দুই টুকরার মধ্যস্থলে হেঁটে গিয়ে তাকে সম্বোধন করে বলবে, উঠ। তখন সে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে।
অতঃপর সে (দাজ্জাল) তাকে বলবে, তুমি কি আমার প্রতি ঈমান রাখ না? সে বলবে, তোমার ব্যাপারে প্রতীতি আমার মাঝে কেবল বেড়েই চলবে। অতঃপর আগন্তুক ব্যক্তি বলবে, হে লোক সকল! আমার পর দাজ্জাল আর কারো সাথে এমন আচরণ করতে সক্ষম হবে না। এরপর যবাহ করার জন্য দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করবে। কিন্তু তার গলা হতে হাসুলী পর্যন্ত শরীর তামায় পরিণত হয়ে যাবে। ফলে দাজ্জাল তাকে যবাহ করতে সক্ষম হবে না। উপায় না দেখে দাজ্জাল তখন তার হাত-পা ধরে তাকে ছুঁড়ে মারবে। লোকেরা মনে করবে, দাজ্জাল তাকে আগুনে নিক্ষেপ করেছো বস্তুতঃ সে নিক্ষিপ্ত হবে জান্নাতে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ রাব্বূল আলামীনের নিকট এ ব্যক্তই হবে মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম শহীদ।
৭১১১. শিহাব ইবনু আব্বাদ আল আবাদী (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু'বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাজ্জাল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার তুলনায় এতো অধিক আর কেউ জিজ্ঞেস করেনি। তিনি বলেছেনঃ তার ব্যাপারে তোমার কিসের এত চিন্তা? সে তোমার কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! লোকেরা বলাবলি করছে যে, তার সাথে খাদ্য এবং পানির নহর থাকবে। তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এটা তো আল্লাহর নিকট তার চাইতেও অনেক তুচ্ছ।
৭১১২. সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু'বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাজ্জাল সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার চাইতে অধিক জিজ্ঞেস আর কেউ করেনি। আর তিনি আমাকে বলেছেন, কেন তোমার প্রশ্ন? তিনি বলেন, উত্তরে আমি বললাম, যেহেতু লোকেরা বলাবলি করছে যে, তার সাথে রুটি ও গোশতের পাহাড় এবং (পানির) নহর থাকবে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা তো আল্লাহর নিকট তার চাইতেও তুচ্ছ।
৭১১৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (অন্য সনদে) ইবনু আবূ উমর (অন্য সনদে) আবূ বকর ইবনু শায়বা (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইসমাঈল (রহঃ) থেকে এ সনদে ইবরাহীম ইবনু হুমায়দের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে ইয়াযীদের হাদীসে অধিক রয়েছে যে, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, হে বৎস!।
পরিচ্ছেদঃ ২০. দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ এবং দুনিয়াতে তার অবস্থান, ঈসা (আঃ) এর অবতরণ এবং তার দ্বারা দাজ্জালকে হত্যা করা, দুনিয়া থেকে ভাল লোক এবং ঈমানের বিদায় গ্রহন, এবং মন্দ লোকদের অবস্থান, তাদের মূর্তিপূজা, শিঙ্গায় ফুৎকার এবং কবর থেকে সকলের উত্থান
৭১১৪. উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আল আনবারী (রহঃ) ... ইয়াকুব ইবনু আসিম ইবনু উরওয়া ইবনু মাসউদ সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, একদা এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বললেন এ কেমন হাদীস আপনি বর্ণনা করছেন যে, এতো এতো দিনের মধ্যে কিয়ামত সংগঠিত হবে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ অথবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অথবা অনুরূপ কোন শব্দ। অতঃপর তিনি বললেন, আমি তো কেবল এ কথাই বলেছিলাম যে অচিরেই তোমরা এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে যা ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে এবং এমন ঘটবে এমন ঘটবে ......।
অতঃপর তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি উরওয়া ইবনু মাসউদের অনুরূপ হবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। অতঃপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দুই ব্যক্তির মাঝে কোন দুশমনী থাকবে না। তখন আল্লাহ তাআলা সিয়িয়ার দিক হতে ঠান্ডা বায়ু প্রবাহিত করবেন। ফলে যার অন্তরে কল্যাণ বা ঈমান থাকবে, এ ধরনের কোন ব্যক্তই এ পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং এ ধরনের প্রত্যেকের জান আল্লাহ তায়ালা কবয করে নিবেন। এমন কি তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি পাহাড়ের অভ্যন্তরে গিয়েও আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বায়ু তার নিকট পৌছে তার জান কবয করে নিবে।
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছি যে, তখন মন্দ লোকগুলো দুনিয়াতে বাকী থাকবে। দ্রুতগামী পাখী এবং জ্ঞানশূন্য হিংস্রপ্রানীর ন্যায় তাদের আখলাক হবে। তারা কল্যাণকে কল্যাণ বলে জানবে না এবং অকল্যাণকে অকল্যাণ বলে মনে করবে না। এ সময় শয়তান এক আকৃতিতে তাদের নিকট এসে বলবে, তোমরা কি ডাকে সাড়া দিবে না? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে কোন বিষয়ের আদেশ দিচ্ছেন? তখন সে তাদেরকে মূর্তি পূজার নির্দেশ দিবে। সে সময় তাদের জীবনোপকরণে প্রাচুর্য থাকবে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করবে। তখনই শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। যেই এ আওয়ায শুনবে সেই তার ঘাড় একদিকে অবনমিত করবে এবং অন্য দিকে উত্তলোন করবে।
এ আওয়ায সর্বপ্রথম ঐ ব্যক্তই শুনতে পাবে যে তার উটের জন্য হাউয মেরামতের কাজে মগ্ন থাকবে। আওয়ায শুনমাত্রই সে বেহুশ হয়ে পড়ে যাবে। সাথে সাথে অনান্য লোকেরাও বেহুশ হয়ে যাবে। অতঃপর মহান আল্লাহ শুক্র বিন্দুর মত গুড়িগুড়ি বৃষ্টি প্রেরণ করবেন বা ছায়ার বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।
বর্ণনাকারী নুমান (রহঃ) طل ও ظل সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এতে মানুষর শরীর উদগত হবে। পুনরায় সিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। তৎক্ষণাৎ তারা দণ্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবো অতঃপর আহবান করা হবে যে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আস। অতঃপর বলা হবে, তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। এরপর বলা হবে, জাহান্নামী দল বের কর। জিজ্ঞেস করা হবে, কত জন? বলা হবে, প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শ' নিরানব্বই জন। অতঃপর তিনি বললেন, এ ই তো ঐ দিন, যেদিন শিশুদের পরিণত করবে বৃদ্ধে এবং এ-ই চরম সংকটের দিন।
৭১১৫. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... ইয়াকুব ইবনু আসিম ইবনু উরওয়া ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে শুনেছি যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনি কি বলেছেন, অমুক অমুক সময় কিয়ামত কায়িম হবে? একথা শুনে তিনি বললেন, আমি ইচ্ছা করেছি, তোমদেরকে কোন কথাই আমি আর বলব না। আমি তো একথাই বলেছি যে, অল্প কিছু দিন পরেই তোমরা একটি ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে। যা ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে ভষ্মীভূত করে দিবে। বর্ণনাকারী শু'বা এ কথা বা অনুরূপ কথাই বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। ...... অতঃপর তিনি মুআযের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, যার অন্তরে অণুপরিমাণ ঈমান থাকবে, এ ধরনের কোন ব্যক্তই তখন আর বাকী থাকবে না। বরং তা (বায়ু) তার জান কবয করে নেয়া হবে। মুহাম্মাদ ইবনু জাফর (রহঃ) বলেন, শুবা (রহঃ) এ হাদীস আমার নিকট কয়েকবার বর্ণনা করেছেন এবং আমিও তাকে কয়েকবার পড়ে শুনিয়েছি।
৭১১৬. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমি একটি হাদীস মুখস্থ করেছি, যা কখনো আমি ভুলিনি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল, পূর্ব দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া এবং পূর্বাহ্নের সময় দাব্বা (মানুষ রূপ পশু-গরু) বের হওয়া। এ দুটির যে কোনটি প্রথমে সংঘটিত হবে অবিলম্বে দ্বিতীয়টিও তড়িৎ প্রকাশিত হবে।
৭১১৭. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ যুরআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনায় মারওয়ান ইবনুল হাকামের নিকট তিনজন মুসলমান উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি কিয়ামতের নিদর্শন সমুহের বিবরণ দিচ্ছিলেন এবং তারা তা শুনছিলেন। (আলোচনায় তিনি বলছিলেন যে), কিয়ামতের নিদর্শন সমূহের প্রথম নিদর্শন হল, দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া। তখন আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বললেন, মারওয়ানের কথা কিছুই হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এমন একটি হাদীস আমি মুখস্থ করেছি, যা আজ পর্যন্ত আমি ভুলিনি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি ...... অতঃপর তিনি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭১১৮. নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) ... আবূ যুর'আ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মারওয়ানের নিকট লোকেরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি ...... পূর্বোক্ত হাদীস দু'টোর অনুরূপ। তবে এতে তিনি 'পূর্বাহ্নে'র শব্দটি উল্লেখ করেন নি।
৭১১৯. আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদুস সামাদ ইবনু আবদুল ওয়ারিস ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... আমির ইবনু শারাহীল শা'বী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি যাহহাক ইবনু কায়সের বোন ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন। যে সমন্ত মহিলাগণ প্রথমে হিজরত করেছিলেন, তিনি তাদের অন্যতম। তিনি বলেন, আপনি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীস শুনেছেন, অন্যের দিকে সন্মোধন করা ব্যতিরেকে, এমন একটি হাদীস আপনি আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি শুনতে চাও, তবে অবশ্যই আমি বর্ণনা করবো। সে বলল, হ্যাঁ আপনি বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আমি ইবনু মুগীরাকে বিবাহ করেছি। তখন তিনি কুরায়শী যুবকদের উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে প্রথম যুদ্ধে শরীক হয়েই তিনি শহীদ হয়ে যান। আমি বিধবা হয়ে যাবার পর আবদুল রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) আমার নিকট বিবাহের পয়গাম পাঠান। পয়গাম পাঠান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরো কতিপয় সাহাবী।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাঁর আযাদকৃত গোলাম উসামা ইবনু যায়িদের জন্য পয়গাম পাঠান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ হাদীসটি আমি পূর্বেই শুনেছিলাম যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে সে যেন উসামাকেও ভালবাসে। ফাতিমা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করার পর আমি তাকে বলেছি, আমার বিষয়টি আপনার ইখতিয়ারে ছেড়ে দিলাম। আপনি যার সাথে ইচ্ছা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিন। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি উম্মে শারীকের নিকট চলে যাও। উম্মে শারীক একজন আনসারী বিত্তশালী মহিলা। আল্লাহর পথে সে অধিক ব্যয় করে এবং তার নিকট অধিক অতিথি আসে। একথা শুনে আমি বললাম, আমি তাই করব।
তখন তিনি বললেন, তুমি উম্মে শারীকের নিকট যেয়ো না। কেনানা উম্মে শারীকের কাছে অনেক মেমমানের আনাগোনা এবং আমি এটাও পছন্দ করিনা যে, তোমার উড়না পড়ে যাক বা তোমার পায়ের গোছা হতে কাপড় খসে যাক আর লোকেরা তোমার শরীরের এমন স্থান দেখে নিক যা তুমি কখনো পছন্দ করনা। তবে তুমি তোমার চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ ইবনু মাকতুমর নিকট চলে যাও। তিনি বনী ফিহরের এক ব্যক্তি। ফিহর কুরায়শেরই একটি শাখা গোত্র। ফাতিমা যে খান্দানের লোক তিনিও সে খান্দানেরই মানুষ।
আমি তার নিকট চলে গেলাম। অতঃপর আমার ইদ্দত সমাপ্ত হলে আমি জনৈক আহবানকারীর আওয়াজ শুনতে পেলাম। বস্তুতঃ তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত আহবানকারী ছিলেন। তিনি এ মর্মে আহবান করছিলেন যে সালাতের উদ্দেশ্যে তোমরা একত্রিত হয়ে যাও। অতঃপর আমি মসজিদের দিকে রওয়ানা হলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি বলেন, কাওমের পেছনে যে কাতারে মহিলাগণ ছিলেন আমি সে কাতারেই ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযান্তে হাসিমুখে মিম্বরে বসে গেলেন। অতঃপর বললেনঃ প্রত্যেকেই আপন আপন স্থানে বসে যাও। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, আমি কি জন্য তোমাদেরকে একত্রিত করেছি? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে কোন আশা বা ভীতি প্রদর্শনের জন্য একত্রিত করিনি। তবে আমি তোমাদেরকে কেবল এ জন্য একত্রিত করেছি যে, তামীমদারী (রাঃ) প্রথমে খ্রীষ্টান ছিল। সে আমার নিকট এসে বায়আত গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। সে আমার কাছে এমন একটি কাহিনী বর্ণনা করেছে যদ্বারা আমার সেই বর্ণনার সত্যায়ন হয়ে যায়, যা আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের বর্ণনা করেছিলাম।
সে আমাকে বলেছে যে, একবার সে লাখম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশজন লোকসহ একটি সামুদ্রিক নৌকায় আরোহণ করেছিল। সামুদ্রিক তুফান এক মাস পর্যন্ত তাদেরকে নিয়ে খেলা করতে থাকে। অতঃপর (একদিন) সূর্যাস্তের সময় তারা সমুদ্রের এক দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর তারা ছোট ছোট নৌকায় বসে ঐ দ্বীপে প্রবেশ করে। দ্বীপে নামতেই একটি জন্তু তাদের দৃষ্টিগোচর হল। তার সমগ্র দেহ লোমে আবৃত ছিল। লোমের কারণে তার সম্মুখ অঙ্গ ও পশ্চাত অঙ্গ চিনা যাচ্ছিল না। লোকেরা তাকে বলল, হতভাগা, তুই কে? সে বলল, আমি দাজ্জালের গুপ্তচর। লোকেরা বলল, গুপ্তচর আবার কি? সে বলল! লোক সকল! ঐ যে গীর্জা দেখা যায় সেখানে চল। সেখানে এক ব্যক্তি অধীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করছে।
তামীমদারী (রাঃ) বলেন, তার মুখে এক ব্যক্তির কথা শুনে আমরা ভীত ছিলাম যে, সে আবার শয়তান তো নয়! আমরা দ্রুত হেটে গীর্জায় প্রবেশ করতঃ এক বিশালদেহী ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। ইতিপূর্বে এমন আমরা আর কখনো দেখিনি। লোহার শিকলে বাধা অবস্থায় দুই হাঁটুর মধ্য দিয়ে তার উভয় হাত ঘাড়ের সাথে মিলানো। আমরা তাকে বললাম, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলল, তোমরা আমার সন্ধান কিছু না কিছু পেয়েই গেছ। এখন তোমরা বল, তোমাদের পরিচয় কি? তারা বলল, আমরা আরবের বাসিন্দা। আমরা সমুদ্রে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ করছিলাম। আমরা সমূদ্রকে উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেলিত অবস্থায় পেয়েছি। এক মাস পর্যন্ত ঝাড়ের কবলে থেকে আমরা তোমার এ দ্বীপে এসে পৌছেছি। অতঃপর ছোট ছোট নৌকায় আরোহণ করে এ দ্বীপে আমরা প্রবেশ করেছি। এখানে আমরা একটি সর্বাঙ্গ লোমে আবৃত জন্তুকে দেখতে পেয়েছি। লোমের আধিক্যের কারণে আমরা তার সম্মুখ অঙ্গ ও পশ্চাত অঙ্গ চিহ্নিত করতে পারছিলাম না। আমরা তাকে বলেছি, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলেছে, সে নাকি দাজ্জালের গুপ্তচর। আমরা বললাম, গুপ্তচর আবার কি! তখন সে বলেছে, ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, তোমরা সেখানে চল। সেখানে এক ব্যক্তি অধীর আগ্রন্থে তোমাদের অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা দ্রুত তোর কাছে এসে গেছি।
আমরা তার কথায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি; না জানি এ আবার কোন শয়তান (জ্বীন ভূত) কিনা? অতঃপর সে বলল, তোমরা আমাকে বায়সানের খেজুর বাগানের খবর বল। আমরা বললাম, এর কোন বিষয়টি সম্পর্কে তুই সংবাদ জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, বায়সানের খেজুর বাগানে ফল আসে কি না, এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি। তাকে আমরা বললাম, হ্যাঁ, আছে। সে বলল, সেদিন নিকটেই যেদিন এগুলোতে ফল ধরবে না। অতঃপর সে বলল, আচ্ছা, তাবারিয়া সমুদ্র সম্পর্কে আমাকে অবগত কর। আমরা বললাম, এর কোন বিষয় সম্পর্কে তুই আমাদের থেকে জানতে চাচ্ছিস! সে বলল, এর মধ্যে পানি আছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, সেখানে বহু পানি আছে। অতঃপর সে বলল, সেদিন বেশী দূরে নয়, যখন এ সাগরে পানি থাকবে না।
সে আবার বলল, যুগার এর ঝর্ণা সম্পর্কে তোমরা আমাকে অবহিত কর। তারা বলল, তুই এর কি সম্পর্কে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিস। সে বলল, এতে পানি আছে কি? এবং এ জনপদের লোকেরা তাদের ক্ষেত্রে এ ঝর্ণার পানি দেয় কি! আমরা বললাম- হাঁ, এ তে বহু পানি আছে এবং এ জনপদের লোকেরা এ পস্রবনের পানি দ্বারা চাষাবাদ করে কি? সে পূনরায় বলল, তোমরা আমাকে উম্মীদের নবী সম্পর্কে সংবাদ দাও। সে এখন কি করছে? তারা বলল, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদ্বীনায় চলে এসেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবের লোকেরা তার সাথে যুদ্ধ করছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, করেছে। সে বলল, সে তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছে। আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, তিনি আরবের পার্শ্ববর্তী এলাকায় জয়ী হয়েছেন এবং তারা তার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, এ কি হয়েই গেছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, বশ্যতা স্বীকার করে নেয়াই জনগণের জন্য মঙ্গলজনক ছিল।
এখন আমি নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে বলছি, আমিই মাসীহ দাজ্জাল। অতিসত্ত্বরই আমি এখান থেকে বাইরে যাবার অনুমতি পেইয়ে যাব। বাইরে যেয়ে আমি সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ প্রদক্ষিণ করবো। চল্লিশ দিনের ভেতর এমন কোন জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ না করব। তবে মক্কা ও তায়বা এ দু'টি স্থানে আমি প্রবেশ করব না। যখন আমি এ দুটির কোন একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফিরিশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে সামনে এসে আমাকে বাধা দিবে। এ দুটি স্থানের সকল রাস্তায় ফিরিশতাদের পাহারা থাকবে।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ছড়ি দ্বারা মিম্বরে আঘাত করে বললেন, এই হচ্ছে তায়বা, এই হচ্ছে তায়বা, এই হচ্ছে তায়বা। অর্থাৎ তায়বা অর্থ এই মদীনাই। সাবধান! আমি কি এ কথাটি ইতিপূর্বে তোমাদেরকে বলিনি? তখন লোকেরা বলল, হ্যাঁ, আপনি বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তামীমদারীর বর্ণনাটি আমাকে বিমোহিত করেছে। যেহেতু তা সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার ঐ বর্ণনার, যা আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মাদীনা ও মক্কা সম্পর্কে ইতিপূর্বে বলেছি। তিনি আরো বললেন, সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান সাগরে বরং পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে। এসময় তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) বলেন, এ হাদীস আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুখস্থ করেছি।
৭১২০. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী (রহঃ) ... শা'বী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) এর নিকট গেলাম। অতঃপর তিনি আমাকে তাজা খেজুর হাদিয়া দিলেন। এ খেজুরকে رُطَبُ ابْنِ طَابٍ 'ইবন টান খেজুর' নামে পরিচিতি এবং যবের ছাতু পান করালেন। এরপর আমি তাকে তিন তালাক- পাপ্তা মাহলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে সে কোথায় ইদ্দত পালন করবে? জবাবে তিনি বললেন আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দেয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আমার বাপের বাড়ীতে ইদ্দত পালনের অনুমতি দিয়েছিলেন। ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) বলেন, তখন লোকদের উদ্দেশ্যে ঘোষনা দেয়া হল, সালাতের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়ে যাও। অতঃপর এ ঘোষণা শুনে যারা সমবেত হলেন তাদের সাথে আমিও গেলাম এবং পুরুষের কাতারের পেছনে মহিলাদের কাতারের প্রথম সারিতে আমি দাঁড়ালাম। সালাতান্তে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বরে বসে খুৎবারত অবস্থায় একথা বলতে শুনলাম যে, তামীমদারীর জ্ঞাতি ভাই একবার সমুদ্রে নৌকায় ভ্রমণ করছিল। অতঃপর তিনি হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রাবী আরো বলেছেন যে, তিনি (ফাতিমা) বলেন, আমি যেন এখনো দেখতে পাচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোমর হেলিয়ে মাটির দিকে ইশারা করে বলেছেন, এই হচ্ছে তায়বা অর্থ মদীনা।
৭১২১. হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী ও আহমাদ ইবনু উসমান নাওফিলী (রহঃ) ... ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তামীমদারী আসল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ মর্মে অবগত করল যে, একদা সে সমুদ্রে নৌযান আরোহণ করল। তখন তার জাহাজ পথ হারিয়ে এক দ্বীপে গিয়ে ভিড়ল। অতঃপর সে পানির উদ্দেশ্যে দ্বীপ অভ্যন্তরে প্রবেশ করল। সেখানে পৌছে সে এমন এক ব্যক্তিকে দেখল, যে তার লোম টানছিল ...... অতঃপর তিনি হাদীসের পূর্ণ রূপে বর্ণনা করলেন।
তবে এতে এও রয়েছে যে, সে (দাজ্জাল) বলবে, আমাকে যদি বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয় তবে আমি তায়বা ব্যতীত সমগ্র পৃথিবী প্রদক্ষিণ করব। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামীমদারীকে লোকদের মাঝে নিয়ে এলেন এবং সে তাদেরকে পূর্ণ বৃত্তান্ত বর্ণনা করে শুনালেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এই তায়বা এবং ঐ ব্যক্তই দাজ্জাল।
৭১২২. আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ... ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসে বললেন, হে লোক সকল! তামীমদারী আমার নিকট বর্ণনা করেছে যে, এক সময় তার গোত্রের কতিপয় লোক জাহাজে করে সমুদ্রে ভ্রমণ করাছিল। অতঃপর তাদের জাহাজটি ভেঙ্গে যায়। তখন তাদের কেউ কেউ জাহাজের কাঠে চড়ে সাগরের কোন দ্বীপে গিয়ে পৌছে ...... অতঃপর আবূ যিনাদ হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭১২৩. আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মক্কা মদীনা ব্যতীত পৃথীবির সমস্ত জানপদেই দাজ্জাল বিচরণ করবে। (তবে মক্কা মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না।) কেননা এ দুই শহরের প্রতিটি রাস্তায়ই ফিরিশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এর পাহারাদারীতে নিয়োজিত থাকবে। অবশেষে দাজ্জাল মদীনার এক নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করবে। তখন মদীনাতে তিনবার ভূ-কম্পন হবে। যার ফলে প্রত্যেক মুনাফিক ও কাফির মদীনা থেকে বের হয়ে তার নিকট চলে যাবে।
৭১২৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর (হাম্মাদ ইবনু সালামাহ) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে, দাজ্জাল এসে জুরুফের এক অনুর্বর লবণাক্ত ভূমিতে অবতরণ করবে এবং এখানেই সে তার শিবির স্থাপন করবে। যার ফলে প্রত্যেক মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক মহিলা তার নিকট চলে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ২১. দজ্জাল সম্পর্কে আরো কতিপয় হাদীস
৭১২৫. মানসুর ইবনু আবী মুযাহিম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুগামী হবে, তাদের গায়ে থাকবে তায়লাসান চাদর।
৭১২৬. হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... উম্মে শারীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, লোকেরা দাজ্জালের ভয়ে পাহাড়ে পালিয়ে যাবে। এ কথা শুনে উম্মু শারীক (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেদিন আরবের লোকেরা কোথায় থাকবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ তখন তারা সংখ্যায় কম হবে।
৭১২৭. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৭১২৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ দাহমা, আবূ কাতাদা ও আরো কতিপয় ব্যক্তি থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, হিশাম ইবনু আমিরের সন্মুখে দিয়ে আমরা ইমরান ইবনু হুসায়নের নিকট যেতাম। একদা হিশাম বললেন, তোমরা আমাকে অতিক্রম করে এমন মানুষের নিকট যাচ্ছ, যারা আমার তুলনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে অধিক উপস্থিত হয়নি এবং যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস সম্পর্কে আমার তুলনায় অধিক জ্ঞাত নয়। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আদম (আলাইহিস সালাম) এর পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের মাঝে দাজ্জালের তুলনায় মারাত্মক আর কোন সৃষ্টি হবে না।
৭১২৯. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... হুমায়দ (রহঃ) এর সম্প্রদায়ের তিন ব্যক্তি থেকে বর্ণিত, এদের মধ্যে আবূ কাতাদাও আছেন, তারা আবদুল আযীয ইবনু মুখতারের মতই বলেছেন যে, আমরা হিশাম ইবনু আমিরের সম্মুখ দিয়ে ইমরান ইবনু হুসায়নের নিকট যেতাম। তবে এতে (خَلْقٌ أَكْبَرُ مِنَ الدَّجَّالِ এর স্থলে) أَمْرٌ أَكْبَرُ مِنَ الدَّجَّالِ কথাটি উল্লেখ আছে।
৭১৩০. ইয়াহইয়া ইবনু আইউব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পুর্বে তোমরা নেক আমলের প্রতিযোগিতা কর, (তা হল) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া অথবা ধুঁয়া অথবা দাজ্জাল অথবা দাব্বাতুল আরদ, মানুষরুপী পশু অথবা তোমাদের কারো খাস বিষয় (অর্থাৎ মৃত্যু) ও আম (ব্যাপক) বিষয় (অর্থাৎ কিয়ামত)।
৭১৩১. উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে তোমরা নেক আমল করতে আরম্ভ কর। তা হল দাজ্জাল, ধোঁয়া, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া ব্যাপক বিষয় (কিয়ামত) এবং খাস বিষয় (ব্যাক্তির মৃত্যু)।
৭১৩২. যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২২. ফিতনা-দুর্যোগকালে ইবাদত করার ফযীলত
৭১৩৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (অন্য সনদে) কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... মা'কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ফিতনা-দুর্যোগের সময় ইবাদত করা আমার নিকট হিজরত করার সমতুল্য।
আবূ কামিল (রহঃ) ... হাম্মাদ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়া
৭১৩৪. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিকৃষ্ট মানুষের উপরই কিয়ামত কায়িম হবে।
৭১৩৫. যাঈদ ইবনু মানসুর (অন্য সনদে) কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আমি ও কিয়ামত প্রেরিত হয়েছি এ দুটির মত (কাছাকাছি)।
৭১৩৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও কিয়ামত প্রেরিত হয়েছি এ দুটির মত। শু'বা (রহঃ) বলেন, আমি কাতাদা (রহঃ) এর নিকট শুনেছি, তিনি তার ওয়াজে বলতেন, এক আঙ্গুল অন্য আঙ্গুলের তুলনায় যতটুকু বড়। অতঃপর শু'বা বলেন, এ কথাটি কাতাদা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন না নিজের থেকেই বলছেন, তা আমি নিশ্চিত জানি না।
৭১৩৭. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এবং কিয়ামত এ দুটির মত প্রেরিত হয়েছি। এ কথাটির বিবরণ দিতে গিয়ে শু'বা তার শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলিকে এক সাথে মিলালেন।
৭১৩৮. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (এ সনদে) অনুরূপ বর্ননা করেছেন।
৭১৩৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ (হাদীস বর্ণনা করেছেন)।
৭১৪০. আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এবং কিয়ামত প্রেরিত হয়েছি এ দুটির মত। রাবী বলেন (এ সময়) তিনি তার শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলিকে একত্রিত করেছেন।
৭১৪১. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বেদুঈনরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসেই তাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, বলত, কিয়ামত কবে হবে? তখন তিনি তাদের মাঝে কম বয়স লোকটির প্রতি নযর করে বলতেন, এ যদি বেঁচে থাকে তবে সে বৃদ্ধ হওয়ার পুর্বেই আমাদের উপর তোমাদের কিয়ামত সংগঠিত হবে।
৭১৪২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামত কবে হবে? তখন তাঁর নিকট মুহাম্মাদ নামক এক আনসারী বালক উপিস্থিত ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বালক যদি বেঁচে থাকে তবে সে বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বেই কিয়মত সংগঠিত হয়ে যাবে।
৭১৪৩. হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন যে, কিয়ামত কবে হবে? এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ পর্যন্ত চুপ করে থাকেন। অতঃপর তিনি সম্মুখস্থ আয্দ-শানু'আ গোত্রের এক বালকের প্রতি তাকালেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ এ বালক যদি দীর্ঘ হায়াত পায় তবে তার বার্ধক্যে পদার্পণ করার পূর্বেই কিয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন এ বালক আমার সমবয়স্ক ছিল।
৭১৪৪. হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) এর এক গোলাম একদা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, সে ছিল আমার সমবয়স্কা। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তার হায়াত দীর্ঘায়িত হয় তবে সে বার্ধক্যে পৌছার পূর্বেই কিয়ামত কায়িম সংগঠিত হবে।
৭১৪৫. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত উন্নীত সনদে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি তার উষ্ট্রী দোহন করতে থাকবে; কিন্তু পাত্র তার মুখের কাছে পৌছার পুর্বেই কিয়ামত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে ব্যক্তি কাপড় বেচা-কেনায় লিপ্ত থাকবে। তারা বেচা-কেনা শেষ না করতেই কিয়ামত কায়িম হয়ে যাবে। এমনিভাবে এক ব্যক্তি তার হাউয মেরামত করতে থাকবে। কিন্তু মেরামত শেষ করার পুর্বেই কিয়ামত এসে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. দুই ফুঁৎকারের মাঝে ব্যবধান
৭১৪৬. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দুইবার ফুঁৎকারের মাঝে চল্লিশ হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আবূ হুরায়রা! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমি অস্বীকার করলাম। তারা বললেন, এ কি চল্লিশ মাস? তিনি বললেন, আমি অস্বীকার করলাম। তারা বললেন, এ কি চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, অস্বীকার করলাম (অর্থাৎ আমারও জানা নেই)। অতঃপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে, এতে তারা উদগত হবে যেমন সবজি উদগত হয়। অতঃপর তিনি বললেন, তখন একটি হাড় ব্যতীত মানুষের সমস্ত শরীর পঁচে যাবে। আর সে হাড়টি হল, মেরুদণ্ডের (সর্বনিম্নভাগের এবং নিতম্বের উপরের) হাড়। কিয়ামতের দিন এ হাড় থেকেই আবার মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করা হবে।
৭১৪৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষের সব কিছুই মাটি খেয়ে ফেলবে। কেবল মেরুদণ্ডের সর্বনিম্ন হাড় বাকী থাকবে। এর দ্বারাই (প্রথমতঃ) মানুষ করা হয়েছে এবং এর দ্বারাই (আবার তাদেরকে) সংযোজন (সৃষ্টি) করা হবে।
৭১৪৮. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হচ্ছে তা যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের শুনিয়েছেন। তিনি কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে একটি হাদীস হচ্ছে এই যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের শরীরে এমন একটি হাড্ডি আছে, যা যমীন কখনো ভক্ষণ করবে না। কিয়ামতের দিন এর দ্বারাই সংযোজিত (পুনরায় মানুষ সৃষ্টি) করা হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ আবার কোন হাড়? তিনি বললেন, এ হল, মেরুদণ্ডের সর্বনিম্নের হাড়।
No comments: