Breaking News
recent

হজ্জের মূল সময় কোনটি


হজ্জের মূল সময় কোনটি?
৮ জিলহজ্জ থেকে ১২ জিলহজ্জ পর্যন্ত পাঁচদিন হজ্জের মূল সময়। ১৩ জিলহজ্জেও কিছু মুস্তাহাব আমল রয়েছে। (দেখুনঃ মুআল্লিমুল হুজ্জাজ)
 

৮ জিলহজ্জের দিনের আমলগুলো কি কি?

৮ জিলহজ্জ হজ্জের প্রথম দিন। এ দিন যথানিয়মে হারাম শরিফ বা বাসা থেকে শুধু হজ্জের নিয়তে ইহরাম বেঁধে জোহরের আগেই মিনায় পৌঁছে যাবেন। মিনায় ৮ জিলহজ্জ যোহর থেকে ৯ জিলহজ্জ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়–ন। তালবিয়া, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মশগুল থাকুন। এই মিনা থেকেই তাওহীদ ও দ্বীনের দাওয়াত বুলন্দ হয়ে ছিল । তাই সেখানে এশক-মুহাব্বাত এবং ঈমানী আলোচনার পরিবেশ গড়ে তুলুন। বিশেষ করে অনর্থক গল্প-গুজব থেকে বিরত থাকুন। (দেখুনঃ হজ নির্দেশিকা)

৯ জিলহজ্জের দিনের আমলগুলো কি কি?
হজ্জের দ্বিতীয় দিন ঃ ৯ জিলহজ্জ। এ দিন হজ্জের প্রধান রুকন (ফরজ) উকুফে আরাফা আদায় করতে হয়। উকুফে আরাফা মানে আরাফায় অবস্থান করা। ৯ জিলহজ্জ জোহরের ওয়াক্ত থেকে উকুফের সময় শুরু হয়। জোহরের ওয়াক্ত থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে ব্যক্তি আরাফায় উপস্থিত হবে তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফ করা ওয়াজিব। কেউ সূর্যাস্তের পূর্বে পৌঁছতে না পারলে আগত রাতের সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আরাফায় জ্ঞাত বা অজ্ঞাত সাবে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেও উকুফের ফরজ আদায় হয়ে যাবে। আরাফায় পৌঁছে উকুফের পূর্বে গোসল করা সুন্নাত । কাজেই সূর্য ঢলে যাওয়ার পর জোহরের নামাজের পূর্বে সম্ভব হলে গোসল করে নিন। শুধু অযু করলেও চলবে। আরাফার কেন্দ্রবিন্দু মসজিদে নামিরায় জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারলে জোহর ওরআসর একত্রে ইমাতের পিছনে আদায় করে নেবেন। কিন্তু মসজিদে নামিরায় জামাতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হলে জোহরের সময় জোহর এবং আসরের সময় আসর পড়বেন। আরাফায় অন্যতম করনীয় হল দুআ-মুনাজাত ও আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা।
আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে বিলম্ব না করা শ্রেয়। ৯ জিলহজ্জ দিবাগত রাতে মুযদালিফায় রাত্রিযাপন করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। এইদিন মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজান ও এক ইকামতে পড়বেন। তবে এ দুই নামায একত্রে পড়ার জন্য যামাত শর্ত নয়। একা পড়লেও দুই নামাজ একত্রে এশার সময় পড়বেন। তবে নিজেরা জামাত করে পড়া ভালো । এরাতের প্রধান আমল হল, ঘুমানো ও আরাম করা। (দেখুনঃ মুআল্লিমুল হুজ্জাজ)

১০ জিলহজ্জের দিনের আমলগুলো কি কি?
১০ জিলহজ্জ হজ্জের তৃতীয় দিন। এ দিন উকুফে মুজদালিফার সময় হল, সুবহে সাদিক থেকে চারদিক খুব ফর্সা হওয়া পর্যন্ত। সুবহে সাদিকের পর স্বল্প সময় অবস্থানের পর সূর্যোদয়ের কিছু আগে মুজদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন। মিনায় এই দিন শুধু বড় জামরায় কংকর মারার কাজ। মিনা থেকে মক্কার দিকে যাওয়ার পথে সর্বশেষ জামরাটিই হল বড় জামরা। কংকর মারার সময় হল, ১০ জিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য্য ঢলা অর্থাৎ জোহরের সময়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কংকর মারা উত্তম। সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কংকর মারা জায়েয । এ পর্যন্ত বিনা ওজরে বিলম্ব করলেও কোন ক্ষতি হবে না। কংকর মারার পর তামাত্তু ও কিরানকারী হাজ্বীদের জন্য দমে শোকর বা হজ্জের কোরবানী করা ওয়াজিব। জামরায়ে আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পর কোরবানী করবেন অতঃপর হলক করবেন (মাথা মুন্ডাবেন)। তামাত্তু ও কিরান হজ্বকারীদের জন্য প্রথমে কংকর নিক্ষেপ তারপর কোরবানী তারপর হলক করতে হবে। এ ধারাবাহিকতা রক্ষ করা ওয়াজিব। ইফরাদ আদায়কারী হাজ্বীদের যেহেতু কোরবানী নেই তাই তারা কংকর নিক্ষেপের পরই হলক করতে পারবেন । কংকর মারার আগে হলক করলে দম ওয়াজিব হবে। কোরবানীর সময় হল, ১০ জিলহজ্জ সুবহে সাদিকের পরে কংকর মারার পর থেকে ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ের ভিতরে কোরবানী করতে হবে। সুন্নাত সময় শুরু হয় ১০ জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর থেকে।
১০ জিলহজ্জের দিনে কোরবানীর পর থেকে ১২ জিলহজ্জ  সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত হলক করার সুযোগ আছে এর চেয়ে বিলম্ব করলে দম ওয়াজিব হবে।
এরপর তাওয়াফে জিয়ারত করতে হবে। এটি হজ্জের তৃতীয় ফরজ। সুন্নাত হল, জামরা আকাবার কংকর নিক্ষেপ, কোরবানী এবং মাথা কামানোর পর এই তাওয়াফ করা। আরাফায় অবস্থানের পর ১০ জিলহজ্জ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ্জের সূর্যাস্তের আগে এই তাওয়াফ করার অবকাশ রয়েছে। যদি ১২ জিলহজ্জ সূর্যান্ত হয়ে যায় এবং তাওয়াফে জিয়ারত করা না হয় তবে পরে হলেও তা আদায় করতে হবে এবং বিলম্বের কারণে দম দেওয়া জরুরি হবে।  (দেখুনঃ হজ নির্দেশিকা)

১১ জিলহজ্জের দিনের আমলগুলো কি কি?
এটি হজ্জের চতুর্থ দিন। ১১ ও ১২ জিলহজ্জের রাতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নাত। কেউ যদি মিনায় না থাকে তবে সুন্নাতের খেলাফ হবে কিন্তু কোনো প্রকার জরিমানা দিতে হবে না। মিনার এ দিনগুলো ইস্তিগফার, আল্লাহ আয়ালার শুকরিয়া, যিকির, দরূদ শরীফ, দুআ, তিলাওয়াত এবং নফল নামায ইত্যাদিতে খুব মশগুল থাকতে হবে। অযথা গল্প-গুজব, অনর্থক কাজ ইত্যাদি থেকে একে বারে বিরত থাকুন।
এ দিনের আমল কংকর নিক্ষেপ করা। ১১ জিলহজ্জ জোহরের সময় থেকে নিয়ে আগত রাত্রের সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত কংকর মারার সময়। তবে সম্ভব হলে সূর্যাস্তের আগে করে নেওয়া ভাল। সূর্যাস্তের পর মাকরূহ সময়। কিন্তু মহিলা ও দুর্বলদের জন্য এবং অধিক ভিড়ের কারণে তাদের জন্যও সূর্যাস্তের পর কংকর নিক্ষেপ করতে কোনো অসুবিধ নেই।  ১১ জিলহজ্জ তিন জামরাতেই কংকর মারতে হবে। প্রতম দুই জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করে কিবলামূখী হয়ে দোয়া করা সুন্নাত । জামরায়ে আকাবায় কাংকর মারার পর দোয়া নেই।  (দেখুনঃ হজ নির্দেশিকা)

১২ জিলহজ্জের দিনের আমলগুলো কি কি?
এটি হজ্জের পঞ্চম দিন। এ দিনের আমল হল, কংকর মারা। ১২ জিলহজ্জ জোহরের সময় থেকে আগত  রাতের সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত কংকর মারার সময়। অবশ্য সম্ভব হলে সূর্যাস্তের আগে কংকর মারা সুস্তাহাব। এই দিনও তিন জামরাতেই কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।  ১১ ও ১২ তরিখে জোহরের পূর্বে কংকর মারার সময় শুরুই হয় না। তাই এ সময় কেউ কংকর মারলে তা আদায় হবে না। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)

১৩ জিলহজ্জের দিনের আমলগুলো কি কি?
১২ জিলহজ্জ দিবাগত রাতে মিনায় থাকা উত্তম এবং ১৩ জিলহজ্জ কংকর মারাও উত্তম। তাই ১৩ জিলহজ্জ মিনায় থাকতে না চাইলে ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্তের আগেই মিনা ত্যাগ করতে হবে।
যদি ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্বে ঐ দিনের কংকর মেরে মিনা ত্যাগ করতে না পারে তাবে সূর্যাস্তের পর মিনা ত্যাগ করা মাকরূহ হবে। অবশ্য এ করণে দম বা কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। আর যদি মিনায় ১৩ জিলহজ্জ সুবহে সাদিক হয়ে যায় তবে ঐ দিন কংকর মারা ওয়াজিব হয়ে যায়। কংকর না মেরে চলে যাওয়া না জায়েয। এবং এতে দম ওয়াজিব হবে।
১৩ জিলহজ্জ সুবহে সাদেকের পর থেকেই কংকর মারা জায়েয। তবে জোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সুন্নাত সময়। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)

No comments:

Powered by Blogger.