Breaking News
recent

পীড়িত অবস্থায় নামায(বেঃ জেওর)

পীড়িত অবস্থায় নামায(বেঃ জেওর)
১।মাসআলাঃ কোন অবস্থায়ই নামায ছাড়িবে না। যাবৎ দাঁড়াইয়া নামায পড়িতে সক্ষম হয় দাঁড়াইয়া নামায পড়িবে, আর দাঁড়াইতে না পারিলে বসিয়া নামায পড়িবে, বসিয়া বসিয়া রুকূ করিবে, রুকূ করিয়া উভয় সজদা করিবে, এবং রুকূর জন্য এতটুকু ঝুঁকিবে, যেন কপাল হাঁটুর বরাবর হইয়া যায়।
২।মাসআলাঃ যদি রকূ, সজদা করারও ক্ষমতা না থাকে, তবে ইশারায় রুকূ ও সজদা আদায় করিবে। এই সজদার জন্য রুকূর চেয়ে বেশী ঝুঁকিবে।
৩।মাসআলাঃ সজদা করিবার জন্য বালিশ ইত্যাদি কোন উঁচু বস্তু রাখা এবং তাহার উপর সজদা করা ভাল নহে, সজদা করিতে না পারিলে ইশারা করিয়া লইবে, বালিশের উপর সজদা করার প্রয়োজন নাই।
৪।মাসআলাঃ কোন রোগীর যদি এরূপ অবস্থা হয় যে, ইচ্ছা করিলে দাঁড়াইতে পারে; কিন্তু ইহাতে অনেক কষ্ট হয় বা রোগ বাড়িয়া যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা হয়, তবে তাহার জন্য বসিয়া নামায পড়া দুরুস্ত আছে।
৫।মাসআলাঃ যদি কোন রোগীর এরূপ অবস্থা হয় যে, সে দাঁড়াইতে পারে কিন্তু রুকূ-সজদা করিতে পারে না, তবে তাহার জন্য উভয় ছুরতই জায়েয আছেদাঁড়াইয়া নামায পড়ুক এবং দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া ইশারা দ্বারা রুকূ-সজদা আদায় করুক, বা বসিয়া নামায পড়ুক এবং বসিয়া বসিয়া ইশারা দ্বারা রুকূ-সজদা আদায় করুক। অবশ্য এরূপ অবস্থায় বসিয়া ইশারা করাই উত্তম।
৬।মাসআলাঃ রোগীর যদি নিজ ক্ষমতায় বসার শক্তি না থাকে, কিন্তু গাও-তাকিয়ায় বা দেওয়ালে হেলান দিয়া অর্ধ বসা অবস্থায় শুইতে পারে, তবে তাহাকে তদ্রূপ গাও-তাকিয়া মাথার এবং পিঠের নীচে দিয়া পশ্চিম দিকে মুখ করিয়া শোয়াইবে যাহাতে কতকটা বসার মত অবস্থা হয় এবং পা ক্বেবলার দিকে প্রসারিত করিয়া দিবে, পা গুটাইয়া হাঁটু যদি খাড়া করিয়া রাখিতে পারে, তবে তদ্রূপ করিয়া দিবে এবং যদি হাঁটু খাঁড়া করিয়া না রাখিতে পারে, তবে হাঁটুর নীচে বালিশ রাখিয়া দিবে যাহাতে পা’খানি ক্বেবলার দিক হইতে যথাসম্ভব ফিরিয়া থাকে, কারণ (বিনা ওযরে) ক্বেবলার দিকে পা করা মকরূহ। এইরূপ বসিয়া মাথার ইশারা দ্বারা রুকূ-সজদা আদায় করিয়া নামায পড়িবে, তবুও নামায ছাড়িবে নাঃ অবশ্য সজদার ইশারার সময় রুকূর ইশারা অপেক্ষা মাথাটা কিছু বেশী ঝুঁকাইবে। যদি এরূপ হেলান দিয়াও বসিতে না পারে, তবে মাথার নীচে কিছু উঁচু বালিশ দিয়া শোয়াইয়া দিবে, যাহাতে মুখটা আকাশের দিকে না থাকিয়া যথাসম্ভব ক্বেবলার দিকে থাকে, তারপর মাথার ইশারা দ্বারা রুকূ-সজদা আদায় করিয়া নামায পড়িবে। রুকূর ইশারা একটু কম করিবে এবং সজদার ইশারা একটু বেশী করিবে।
৭।মাসআলাঃ যদি কেহ উহার পরিবর্তে ডান বা বাম কাতে শোয় এবং ক্বেবলার দিকে মুখ করিয়া অর্থাৎ, ডান কাতে শুইলে উত্তর দিকে শিয়র দিয়া এবং বাম কাতে শুইলে দক্ষিণ দিকে শিয়র করিয়া মাথার ইশারায় রুকূ-সজদা আদায় করিয়া নামায পড়ে, তবে তাহাও দুরুস্ত আছে। কিন্তু চিৎ হইয়া শুইয়া নামায পড়া অধিক উত্তম।
৮।মাসআলাঃ রোগীর যদি মাথা দ্বারা ইশারা করার ক্ষমতাও না থাকে তবে শুধু চক্ষুর দ্বারা ইশারায় নামায আদায় হইবে না, আর এরূপ অবস্থায় নামায ফরযও থাকে না। অবশ্য ঐরূপ অবস্থা যদি মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা কাল অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামায পর্যন্ত থাকে, তবে ঐ সময়ের নামাযগুলির ক্বাযা পড়িতে হইবে; কিন্তু এইরূপ যদি চব্বিশ ঘণ্টা কালের (পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের) বেশী থাকে, তবে তাহার ক্বাযাও পড়িতে হইবে না; নামায সম্পূর্ণ মাফ হইয়া যাইবে। চব্বিশ ঘণ্টা কাল বা তাহার কম এইরূপ অবস্থা থাকার পর যদি অবস্থা কিছু ভাল হয় এবং শুইয়া মাথার ইশারা দ্বারা নামায পড়িবার মত শক্তি পায়, তবে ঐ অবস্থায়ই মাথার ইশারা দ্বারা রুকূ-সজদা আদায় করিয়াই এ কয়েক ওয়াক্তের নামাযের ক্বাযা পড়িয়া লইবে। একথা মনে করিবে না যে, সম্পূর্ণ ভাল হইয়া তারপর ক্বাযা পড়িব। কারণ, হয়ত ঐ অবস্থায় মৃত্যু আসিয়া পড়িতে পারে, তাহা হইলে গোনাহগার অবস্থায় মরিবে।
৯।মাসআলাঃ এইরূপ যদি কোন লোক হঠাৎ বেহুঁশ হইয়া পড়ে এবং এক দিন রাত বা তাহার কম বেহুশ থাকে অর্থাৎ, পাঁচ ওয়াক্ত বা তাহার চেয়ে কম নামায ছুটিয়া যায়, তবে ঐ কয়েক ওয়াক্ত নামাযের ক্বাযা পড়িতে হইবে। আর যদি এক দিন রাতের চেয়ে বেশী সময় বেহুঁশ থাকে অর্থাৎ, বেহুঁশ অবস্থায় পাঁচ ওয়াক্তের চেয়ে বেশী নামায ক্বাযা হয়, তবে তাহা আর পড়িতে হইবে না।
১০।মাসআলাঃ কোন লোক নামায শুরু করার সময় বেশ ভাল সুস্থ অবস্থায় ছিল, কিছু নামায আরম্ভ করার পর হঠাৎ রগের উপর রগ উঠিয়া বা অন্য কোন রোগ উপস্থিত হইয়া এরূপ হইয়া গেল যে, উঠিয়া দাঁড়াইবার শক্তি রহিল না, তবে অবশিষ্ট নামায বসিয়াই আদায় করিবে। এমন কি, বসিয়া বসিয়া যদি রুকূ-সজদা করিতে পারে, করিবে; নতুবা মাথার ইশারায় রুকূ-সজদা করিয়াও নামায পূর্ণ করিবে, তবুও নামায ছাড়িবে না। এমন কি, যদি বসিতে না পারে, তবে শুইয়া অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করিবে।
১১।মাসআলাঃ কোন লোক অসুস্থ অবস্থায় দাঁড়াইতে না পারায় বসিয়া পড়ার নিয়্যত বাঁধিয়াছে এবং বসিয়া বসিয়া রুকূ-সজদা করিয়া দুই এক রাকা’আত পড়িয়াছে, তারপর কিছু সুস্থ হইয়া দাঁড়াইবার মত শক্তি পাইয়াছে, এই অবস্থায় অবশিষ্ট নামায দাঁড়াইয়া পূর্ণ করিবে। (নতুন নিয়্যত বাঁধিবার আবশ্যক নাই।)
১২।মাসআলাঃ রোগীর অবস্থা যদি এমন শোচনীয় হয় যে, রুকূ-সজদা করিয়া নামায পড়িতে পারে না মাথার ইশারায় বসিয়া বা শুইয়া নামায পড়ে এবং ঐ অবস্থায় নামাযের নিয়্যত বাঁধিয়া দুই এক রাকা’আত নামায পড়িয়াছে, তারপর বসিয়া বা দাঁড়াইয়া রুকূ-সজদা করার মত যদি শক্তি পায়, তবে যখন এইরূপ শক্তি পাইবে তখনই পূর্বের নামাযের নিয়্যত বাতিল হইয়া যাইবে এবং নতুন নিয়্যত বাঁধিয়া নামায পড়িতে হইবে।
১৩।মাসআলাঃ রোগীর যদি এরূপ শোচনীয় অবস্থা হয় যে, (বসিয়া পায়খানাও করিতে পারে না, শুইয়া শুইয়া পেশাব-পায়খানা করে,) পানির দ্বারা এস্তেঞ্জাও করিতে পারে না, তবে পুরুষ হইলে তাহার স্ত্রী এবং স্ত্রী হইলে তাহার স্বামী যদি পানির দ্বারা এস্তেঞ্জা করাইয়া দেয়, তবে অতি ভাল, নতুবা নেকড়ার দ্বারা মুছিয়া ফেলিয়া ঐ নাপাক অবস্থায়ই নামায পড়িবেতবুও নামায ছাড়িবে না। পুরুষের যদি ছেলে বা ভাই থাকে বা স্ত্রীর যদি মেয়ে বা ভগ্নী থাকে, তবে তাহারা ওযূ করাইয়া দিতে পারিবে বটে, কিন্তু এস্তেঞ্জা করাইতে পারিবে না। কারণ ছেলে, মেয়ে, মা, বাপ, বোন, কাহারও গুপ্তস্থান দেখা বা স্পর্শ করা জায়েয নহে। স্বামী-স্ত্রীর জন্য একে অন্যের গুপ্তস্থান দেখা বা ছোঁয়া জায়েয আছে। রোগী যদি নিজে ওযূ বা তায়াম্মুম করিতে না পারে, তবে অন্য কেহ ওযূ বা তায়াম্মুম করাইয়া দিবে। যদি নেকড়ার দ্বারা মুছিবার মত শক্তিও না থাকে, (এবং পুরুষের স্ত্রী বা স্ত্রীর স্বামী না থাকে,) তবে ঐ অবস্থায়ই নামায পড়িবে, তবুও নামায ছাড়িবে না।
১৪।মাসআলাঃ কোন ব্যক্তির সুস্থ অবস্থায় কিছু নামায ক্বাযা হইয়াছিল, রোগে পড়িয়া স্মরণ হইয়াছে। এখন বসিয়া, শুইয়া বা ইশারা করিয়া যেভাবে ওয়াক্তিয়া নামায পড়িবে, সেইভাবেই ঐ ক্বাযা নামায পড়িয়া লইবে। কখনও মনে করিবে না যে, সুস্থ হইয়া পড়িবে বা যখন দাঁড়াইয়া নামায পড়িতে পারে, তখন পড়িবে বা যখন বসিয়া রুকূ-সজদা দ্বারা নামায পড়িতে পারে, তখন পড়িবে। এইসব খেয়াল শয়তানী ধোঁকা, কাজেই এরূপ খেয়াল করিবে না, যখন মনে আসে, তখনই পড়িয়া লইবে; দেরী করিবে না।
১৫।মাসআলাঃ রোগীর বিছানা যদি নাপাক হইয়া যায় এবং বিছানা বদলাইতে রোগীর অতিশয় কষ্ট হয় (বা এতটুকু নাড়াচাড়াতেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তবে ঐ নাপাক বিছানায়ই নামায পড়িবে।
১৬।মাসআলাঃ ডাক্তার চোখ অপারেশন করিয়াছে এবং নড়াচড়া করিতে নিষেধ করিয়াছে, এমতাস্থায় শুইয়া শুইয়া নামায পড়িবে।

No comments:

Powered by Blogger.