Breaking News
recent

মুসাফিরের নামায

মুসাফিরের নামায
১।মাসআলাঃ এক মঞ্জিল অথবা দুই মঞ্জিলের সফর যদি কেহ করে, তবে তাহাতে শরীঅতের কোন হুকুম পরিবর্তন হয় না এবং শরীঅত অনুযায়ী তাহাকে মুসাফিরও বলা যায় না। সমস্ত হুকুম তাহার জন্য অবিকল ঐরূপই থাকিবে যেইরূপ বাড়িতে থাকে। চারি রাকা’আত নামায চারি রাকা’আতই পড়িতে হইবে, (রোযা ছাড়িতে পারিবে না) এবং চামড়ার মোজার উপর এক দিন এক রাত অপেক্ষা অধিক কাল মছেহ করিতে পারিবে না।
২।মাসআলাঃ যে ব্যক্তি (কমের পক্ষে) তিন মঞ্জিল দূরবর্তী স্থানে যাইবার নিয়্যত করিয়া বাড়ি হইতে বাহির হইবে, তাহাকে শরীয়ত অনুযায়ী মুসাফিল বলা যাইবে। যখন সে নিজ শহরের আবাদি (লোকালয়) অতিক্রম করিবে, তখন তাহার উপর মুসাফিরের হুকুম হইবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আবাদির মধ্যে থাকিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুসাফির হইবে না। (আর যদি আবাদির বাহির হয়, তবে ষ্টেশনে পৌঁছিলে সে মুসাফিল হইবে।)
৩।মাসআলাঃ প্রঃ তিন মঞ্জিল কাহাকে বলে? উঃ (ক্বাফেলা বাঁধিয়া চলিলে খাওয়া-দাওয়া, পাক-ছাফ এবং আরাম-বিশ্রামের সময় বাদ দিয়া) স্বাভাবিকভাবে হাঁটিয়া চলিয়া বা নৌকায় বসিয়া বা ‍উটের পিঠে সওয়ার হইয়া তিন দিনে যতদূর পৌঁচা যায়, তাহাকে তিন মঞ্জিল বলে। আরব দেশে প্রায়ই মঞ্জিল নির্ধারিত আছে। আমাদের দেশে মোটামুটি হিসাবে ইহার আনুমানিক দূরত্ব (প্রচলিত ইংরেজি মাইল হিসাবে) ৪৮ মাইল। (প্রকাশ থাকে যে, শরয়ী মাইল এবং ইংরেজি মাইলের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। ইংরেজি মাইল হয় ১৭৬০ গজে এবং শরয়ী মাইল হয় ২০০০ গজে। এখানে আমরা হিসাবের সুবিধার্থে ইংরেজি মাইল লিখিলাম।)
৪।মাসআলাঃ যদি কোন স্থান এত পরিমাণ দূরবর্তী হয় যে, স্বাভাবিকভাবে পায়ে হাঁটিয়া নৌকাযোগে বা ‍উটযোগে গেলে তিন দিন লাগে, কিন্তু কোন দ্রুতগামী যানবাহন যেমনঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ী, ষ্টীমার, রেলগাড়ী, (দ্রুতগামী নৌকা, মোটর, এরোপ্লেন) ইত্যাদিতে তদপেক্ষা কম সময় লাগে এরূপ অবস্থায় শরীঅত অনুযায়ী মুসাফিরই হইবে।
(মাসআলাঃ যদি কম পক্ষে তিন মঞ্জিল যাইবার নিয়্যত না করে, আর সমস্ত দুনিয়া ঘুরিয়া আসে, তবুও সে মুসাফির হইবে না।)
(মাসআলাঃ কোন স্থানে যাইবার যদি দুইটি রাস্তা থাকে, একটির দূরত্ব সফর পরিমাণ হয়, অন্যটির দূরত্ব পরিমাণ হয় না, তবে যে রাস্তা দিয়া যাইবে, সেই রাস্তারই হিসাব ধরা হইবে, অন্য রাস্তার হিসাব ধরা হইবে না।)
৫।মাসআলাঃ যে বক্তি শরীঅত অনুসারে মুসাফির, সে যোহর, আছর ও এশার নামায দুই দুই রাকা’আত পড়িবে এবং সুন্নতের হুকুম এই যে, যদি ব্যস্ততা থাকে, তবে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত ছাড়িয়া দেওয়া দুরুস্ত আছে, ইহাতে কোন গোনাহ হইবে না, আর যদি ব্যস্ততা না থাকে এবং সঙ্গীগণ হইতে পশ্চাতে থাকিয়া যাইবার ভয় না থাকে, তবে ছাড়িবে না। সফর অবস্থায় সুন্নত পুরাপুরি পড়িবে, সুন্নতের কছর হয় না।
৬।মাসআলাঃ ফজর মাগরিব এবং বেৎরের নামাযে ক্বছর নাই, সব সময় যে ভাবে পড়িয়া থাকে তদ্রূপ পড়িবে।
৭।মাসআলাঃ যোহর, আছর এবং এশা এই তিন ওয়াক্তের নামায সফরের হালতে ইচ্ছা করিয়া চারি রাকা’আত পড়িলে গোনাহ হইবে। যেমন কেহ যদি যোহরের নামায ছয় রাকা’আত পড়ে, তবে গোনাহগার হইবে।
৮।মাসআলাঃ সফরের হালতে যদি কেহ ভুলে চারি রাকা’আত পড়ে, তবে যদি দুই রাকা’আতের পর বসিয়া আত্তাহিয়্যাতু পড়িয়া থাকে তবে ফরয আদায় হইয়া যাইবে, অতিরিক্ত দুই রাকা’আত নফল হইবে এবং ছহো সেজদা করিতে হইবে। আর যদি দুই রাকা’আতের পর না বসিয়া থাকে, তবে ফরয আদায় হয় নাই। ঐ নামায সব নফল হইবে, ফরয পুনরায় পড়িতে হইবে।
৯।মাসআলাঃ (তিন মঞ্জিলের নিয়্যত করিয়া বাড়ী হইতে বাহির হওয়ার পর) পথিমধ্যে কোন স্থানে যদি কয়েক দিন থাকার ইচ্ছা হয়, তবে যতক্ষণ ১৫ দিন (বা তদূর্ধ্বকাল) থাকার নিয়্যত না করিবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুসাফিরের ন্যায় কছর পড়িতে থাকিবে। অবশ্য যদি ১৫ দিন বা তদূর্ধ্বকাল থাকিবার নিয়্যত করে, তবে যখন এইরূপ নিয়্যত করিবে, তখন হইতেই পুরা নামায পড়া শুরু করিবে। তারপর যদি নিয়্যত বদলাইয়া যায় এবং পনর দিনের আগেই চলিয়া যাওয়ার ইচ্ছা করে, তবে পরা নামাযই পড়িতে হইবে, ক্বছর পড়া জায়েয হইবে না। এইরূপে পনর দিন থাকার নিয়্যত করিয়া মুক্বীম হইয়া যাওয়ার পর যখন ঐ স্থান হইতে অন্য স্থানে রওয়ানা হইবে, তখন দেখিতে হইবে যে, যে স্থানে যাইবার ইচ্ছা করিয়াছ সে স্থানের দূরত্ব কত? যদি সেই স্থানের দূরত্ব ঐ অবস্থানের স্থান হইতে তিন মঞ্জিল অর্থাৎ ৪৮ মাইল হয়, তবে আবার ক্বছর পড়িতে হইবে, আর যদি তাহার দূরত্ব ৪৮ মাইল না হয়, ত েক্বছর পড়িতে পারিবে না, পুরা নামাযই পড়িতে হইবে। (এইরূপ পনর দিন অবস্থানের স্থানকে ‘ওতনে এক্বামত’ বলে।)
১০।মাসআলাঃ এক ব্যক্তি যখন বাড়ি হইতে বাহির হইয়াছে, তখন তিন মঞ্জিল অর্থাৎ ৪৮ মাইল দূরবর্তী স্থানেই যাইবার নিয়্যত করিয়াছে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ইহাও নিয়্যত করিয়াছে যে,  পথিমধ্যে এক মঞ্জিল বা দুই মঞ্জিল দূরবর্তী অমুক গ্রামে পনর দিন থাকিবে, তবে সে মুসাফিল হইবে না। সমস্ত রাস্তায়ই তাহার পুরা নামায পড়িতে হইবে। তারপর সেই গ্রামে গিয়া যদি পনর দিন না-ও থাকে, তবুও পুরা নামাযই পড়িতে হইবে, ক্বছর পড়া জায়েয হইবে না।
১১।মাসআলাঃ এক ব্যক্তি যে স্থান হইতে চলিয়াছে সে স্থান হইতে গন্তব্য স্থান তিন মঞ্জিল বটে, কিন্তু পথিমধ্যে তাহার নিজের গ্রামে আসিল, তবে সে মুসাফির হইবে না, সমস্ত রাস্তায় তাহার পুরা নামায পড়িতে হইবে। কারণ, যদিও বাড়িতে অবস্থান না করে বা বাড়িতে প্রবেশও না করে, তবুও নিজ গ্রামের সীমানায় পা রাখা মাত্রেই তাহার সফর বাতিল হইয়া যাইবে।
১২।মাসআলাঃ কোন মেয়েলোক ঋতু অবস্থায় ৪ মঞ্জিল যাইবার ইচ্ছা করিয়া বাড়ি হইতে চলিয়াছে। দুই মঞ্জিল যাওয়ার পর সে পাক হইয়াছে, সে মুসাফির হইবে না। গোসল করিয়া অবশিষ্ট রাস্তায় পুরা নামায পড়িবে। অবশ্য যদি পাক হওয়ার পরও অবশিষ্ট রাস্তা তিন মঞ্জিল পরিমাণ থাকে বা বাড়ি হইতে যখন চলিয়াছে যথন পাক ছিল, তিন্তু নিজ শহর অতিক্রম করার পর পথিমধ্যে ঋতু শুরু হইয়া্ছে, তখন সে মুসাফির, পাক হওয়ার পর ক্বছর পড়িবে।
১৩।মাসআলাঃ এক ব্যক্তি যখন নামায শুরু করিয়াছে তখন মুসাফির ছিল, কছরেরই নিয়্যত করিয়াছে। কিন্তু নামাযের মধ্যে নিয়্যত বদলিয়া ১৫ দিন থাকার নিয়্যত হইয়া গিয়াছে, তবে ঐ নামায এবং উহার পরবর্তী সব নামায পুরা পড়িবেঃ।
১৪।মাসআলাঃ যদি কেহ বাড়ি হইতে তিন মঞ্জিল অপেক্ষা বেশী দূরে যাইবার নিয়্যত করিয়া বাহির হয়, কিন্তু পথিমধ্যে ঘটনাক্রমে কোন স্থানে দুই চারি দিন থাকিবার দরকার পড়িয়াছে, তারপর রোজই ধারণা থাকে যে, কাল পরশুই চলিয়া যাইবে, কিন্তু যাওয়া হয় না, এইরূপে যদি বহুকালও ঐ স্থানে থাকা হয এবং কোন সময়ই পনর দিন থাকার ধারণা না হয়, তবে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকিবে মুসাফিরই থাকিবে, মুক্বীম হইবে না।
১৫।মাসআলাঃ এক ব্যক্তি তিন মঞ্জিল যাইবার নিয়্যত করিয়া বাড়ি হইতে বাহির হইয়াছিল, কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর নিয়্যত বদলিয়া গেল এবং বাড়ি ফিরিয়া আসিল, তবে যখন হইতে বাড়ি ফিরিবার ইচ্ছা করিয়াছে, তখন হইতেই তাহার পুরা নামায পড়িতে হইবে। (অবশ্য এইরূপ ধারণা হইবার পূর্বে যাহা ক্বছর পড়িয়াছে তাহা জায়েয হইয়াছে।)
১৬।মাসআলাঃ স্ত্রী যদি স্বামীর সহিত সফর করে ও স্বামীর সঙ্গ ছাড়া অন্যত্র যাইবার ধারণা না থাকে, তবে স্ত্রীর নিয়্যতের কোন মূল্য নাই, স্বামী যেরূপ নিয়্যত করিবে স্ত্রীরও সেইরূপ নামায পড়িতে হইবে। (মনিবের সঙ্গে চাকরেরও এইরূপ হুকুম।)
১৭।মাসআলাঃ এক ব্যক্তি তিন মঞ্জিল যাওয়ার পর যেখানে পৌঁছিয়াছে যদি উহা তাহার নিজ বাড়ি হয় এবং সেখানে কম বেশী যে কয়দিন থাকুক নিজ গ্রামের সীমানায় পা রাখা মাত্রই তাহার পুরা নামায পড়িতে হইবে, আর যদি তাহা অন্যের বাড়ি হয় এবং তথায় পনর দিন থাকার নিয়্যত থাকে, তবে সে গ্রাম বা শহরের সীমানায় পা রাখার পর হইতে পুরা নামায পড়িতে হইবে, আর যদি পনর দিন থাকার নিয়্যত না থাকে এবং নিজ বাড়িও না হয়, তবে সেখানে পৌঁছার পরও ক্বছর পড়িতে থাকিবে।
১৮।মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি তিন মঞ্জিল যাইবার এরাদা করিয়া বাড়ি হইতে বাহির হইয়াছে কিন্তু পথিমধ্যে কয়েক জায়গায় থামিবার ইচ্ছা আছে কোথাও ৫ দিন, কোথাও ১০ দিন, কিন্তু ১৫ দিন থাকিবার ইচ্ছা কোথাও নাই, তবে এই সব জায়গায় সে ক্বছরই পড়িতে থাকিবে।
১৯।মাসআলাঃ কেহ যদি জন্মভূমি সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করিয়া অন্যত্র গিয়া বাড়ি করে, তবে ঐ জন্মভূমির হুকুম এবং বিদেশের হুকুম একই হইবে, অর্থাৎ সেই জন্মভূমির গ্রামে বা সেই শহরে প্রবেশ করিলে বিনা নিয়্যতে সে মুক্বীম হইবে না। (কিন্তু যদি তাহা সম্পূর্ণ পরিত্যাগ না করে, প্রথম বাড়িও রাখে অন্যত্রও বাড়ি তৈয়ার করে, তবে উভয় স্থানকেই তাহার ‘ওতনে আছিল’ ধরা হইবে এবং উভয় স্থানেই প্রবেশ করা মাত্র বিনা নিয়্যতে মুক্বীম হইয়া যাইবে।)
(মাসআলাঃ যদি কেহ বিদেশে বাসা করিয়া ভাড়াটিয়া বাড়িতে বা জায়গীরে বা চাকুরির স্থানে বহুকাল যাবৎ থাকে এবং এইসব স্থান বাড়ী হইতে তিন মঞ্জিল দূরবর্তী হয়, তবে ১৫ দিনের নিয়্যত ব্যতিরেকে এসব স্থানে প্রবেশ করিলে সফর বাতিল হইবে না, আর যদি বাড়ি হইতে তিন মঞ্জিলের কম দূরবর্তী হয়, তবে বাড়ি হইতে আসিলে আদৌ সফর হইবে না এবং অন্য স্থান হইতে সফর করিয়া আসিলে ঐ সব স্থানে আসিয়াও ১৫ দিনের নিয়্যত ব্যতিরেকে সফর বাতিল হইবে না।)
২০।মাসআলাঃ যদি কাহারও মুসাফিরী হালতে নামায ক্বাযা হয় ও সেই নামায মুক্বিমী হালতে ক্বাযা পড়িতে চায়, তবে যোহর, আছর এবং এশার দুই রাকা’আতই ক্বাযা পড়িবে। এইরূপ মুক্বিমী হালতে যদি নামায ক্বাযা হইয়া থাকে এবং সেই নামায মুসাফিরী হালতে ক্বাযা পড়িতে চায়, তবে চারি রাকা’আত বিশিষ্ট নামাযের ক্বাযা চারি রাকা’আতই পড়িবে, দুই রাকা’আত পড়িবে না।
২১।মাসআলাঃ বিবাহের পর মেয়েকে যখন স্বামীর বাড়িতে নেওয়া হইবে এবং তথায়ই থাকা সাব্যস্ত হইবে, তখন হইতে স্বামীর বাড়িই তাহার আপন বাড়ি (ওতনে আছলী) বলিয়া সাব্যস্ত হইবে। অতএব, তার মা-বাপের বাড়ি যদি স্বামীর বাড়ি হইতে তিন মঞ্জিল পরিমাণ দূরবর্তী হয়, তবে বাপ-মার বাড়িতে গিয়া যদি ১৫ দিন থাকার নিয়্যত না করে, তবে তাহার ক্বছর করিতে হইবে। আর যদি স্বামীর বাড়ি স্থায়ীভাবে থাকিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না করে, তবে পূর্ব ওতনে আছলী অর্থাৎ মা-বাবার বাড়ী এখনও ওতনে আছলী থাকিবে। অবশ্য যতদিন স্বামীর বাড়িতে উঠাইয়া না নেওয়া হইবে, ততদিন শুধু বিবাহের দ্বারা তাহার ওতনে আছলী বাতিল হইবে না। (পুরুষের পক্ষেও শ্বশুর বাড়ি যদি তিন মঞ্জিল দূরবর্তী হয়, তবে শুধু বিবাহের দ্বারা শ্বশুর বাড়ি ওতনে আছলীর মধ্যে গণ্য হইবে কিনা এ বিষয়ে আলেমগণের মতভেদ আছে। মতভেদের কারণে সন্দেহস্থলে পুরা নামায পড়াই উত্তম, কিন্তু এইরূপে সন্দেহের অবস্থায় ইমামত না করা উচিত। অবশ্য যদি ঘর-জামাই থাকা শর্তে বিবাহ করে, তবে বিনা মতভেদে তাহার পূর্ণ নামায পড়িতে হইবে এবং ঐ স্থান তাহার ওতনে আছলী বলিয়া গণ্য হইবে।
২২।মাসআলাঃ নৌকায় যাতায়াতকালে যদি নামাযের ওয়াক্ত হয়, তবে চলতি নৌকায়ও নামায পড়া জায়েয। যে সকল নামাযে (ফরয, ওয়াজিব এবং ফজরের সুন্নতে) দাঁড়ান ফরয, সে সকল নামায যতক্ষণ পর্যন্ত কোন গুরুতর ওযর (যেমন, গুরুতর রোগ বা মাথা ঘুরান) না পাওয়া যাইবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়ান মাফ হইবে না। অবশ্য যদি নৌকা দাঁড়াইবার উপযুক্ত না হয় বা দাঁড়াইলে মাথা ঘুরাইয়া পড়িয়া যাইবার আশঙ্কা হয়, (এবং কূলে নামিবারও কোন উপায় না থাকে, বা নামাযের সময় বৃষ্টি হইতে থাকে তজ্জন্য বাহির হওয়া না যায়, বা চতুর্দিকে কাদাময় স্থান হয় নামায পড়িবার মত শুকনা জায়গা পাওয়া না যায়) তবে অবশ্য বসিয়া নামায পড়া দুরুস্ত হইবে। (এইরূপে নামাযের মধ্যে ক্বেবলা দিকে মুখ করাও ফরয, এই ফরযও কিছুতেই মাফ হইতে পারে না। যদি নৌকা বা ষ্টীমার ঘুরিয়া যায়, তবে নামাযের মধ্যেই ঘুরিয়া দাঁড়াইতে হইবে, নতুবা নামায হইবে না। নৌকা যদি কূলে বা ঘাটে বাঁধা থাকে, তবে তাহাতে দাঁড়াইতে হইবে, নতুবা নামায হইবে না। নৌকা যদি কূলে বা ঘাটে বাঁধা থাকে, তবে তাহাতে দাঁড়াইয়া নামায পড়িলে দুরুস্ত হইবে বটে, কিন্তু এই অবস্থায় নৌকার তলি যদি মাটির সঙ্গে সংলগ্ন না থাকে, তবে কোন কোন আলেমের মতে দাঁড়াইয়া নামায পড়িলেও দুরুস্ত হইবে না। অবশ্য নৌকার তলি মাটির সঙ্গে লাগান হইলে দাঁড়াইয়া নামায পড়িলে সকলের মতেই দুরুস্ত হইবে।)
২৩।মাসআলাঃ এইরূপে রেলগাড়ীতে যাতায়াতকালেও পথিমধ্যে নামাযের ওয়াক্ত হইলে গাড়ীতে নামায পড়া দুরুস্ত আছে, যদি কাহারও মাথা ঘুরাইয়া পড়িয়া যাইবার প্রবল আশঙ্কা হয়, তবে তাহার জন্য অবশ্য বসিয়া নামায পড়া দুরুস্ত হইবে। (নতুবা দাঁড়াইয়াই পড়িতে হইবে।)
২৪।মাসআলাঃ নামায পড়ার মধ্যে যদি গাড়ী বা নৌকা ঘুরিয়া যায়, তবে তৎক্ষণাৎ ঘুরিয়া ক্বেবলা যে দিকে সেই দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইতে হইবে।
২৫।মাসআলাঃ মেয়েলোকের জন্য তিন মঞ্জিল দূরবর্তী স্থানে স্বামী বা বাপ-ভাই ইত্যাদি মাহরাম পুরুষ রিশতাদের সঙ্গে ছাড়া একাকী সফর (যাতায়াত) করা জায়েয নহে, এইরূপ স্থানে একাকী যাতায়াত করিলে অতিশয় গোনাহ হইবে। এক মঞ্জিল বা দুই মঞ্জিল দূরবর্তী স্থানে মেয়েলোকের জন্য একাকী সফর করা হারাম নহে বটে; কিন্তু তাহাও ভাল নহে। হাদীস শরীফে ইহারও কঠোর নিষেধ আসিয়াছে।
২৬।মাসআলাঃ মাহরাম রিশতাদার যদি ধর্মভীরু না হয়, এবং গোনাহর কাজে তাহার ভয় না থাকে, তবে তাহার সঙ্গেও মেয়েলোকের জন্য সফর করা জায়েয নহে।
২৭।মাসআলাঃ গরুর গাড়ী বা ঘোড়ার গাড়ীতে যাতায়াতকালে যদি নামাযের ওয়াক্ত হয়, তবে গাড়ী থামাইয়া বোরকা পরিয়া নীচে নামিয়া নামায পড়িবে, (গাড়ীতে বসিয়া নামায পড়িলে নামায হইবে না)। যদি ওযূ না থাকে এবং গাড়ীর ভিতর ওযূ করার সুযোগ না থাকে, তবে বোরকা পরিয়া নীচে নামিয়া কিছু আড়ালে বসিয়া ওয়ু করিয়া লইবে, যদি বোরকা না থাকে, তবে বড় কোন কাপড় বা চাদর দ্বারা আপাদমস্তক আবৃত করিয়া নীচে নামিয়া নামায পড়িবে। শরীঅতে পর্দার এবং লর্জ্জাশীলতার খুব তাকীদ ও প্রশংসা আছে বটে, কিন্তু প্রত্যেক জিনিসেরই একটা সীমা আছে। সীমা অতিক্রম করিয়া গেলে কোন জিনিসই ভাল থাকে না। অতএব, লজ্জার কারণে বাহির হইয়া নামায না পড়া বা ওযূ না করা কিছুতেই সঙ্গত নহে অবশ্য যথাসম্ভব পর্দা নিশ্চয়ই করিতে হইবে এবং অকারণে পর্দা-পালনে ত্রুটি করা নির্লজ্জতা ও গোনাহ। (এইরূপে চলতি নৌকায় ইমাম আযম ছাহেবের মতে বসিয়া নামায পড়া জায়েয আছে বটে, কিন্তু ছাহেবাইনের মতে বিনা ওযরে জায়েয নাই এবং ফৎওয়াও ছাহেবাইনের ক্বওলের উপর। অতএব, মেয়েলোকেরও লজ্জার খাতিরে নীচু ছইয়ের ভিতরে বসিয়া নামায পড়া সঙ্গত নহে, স্বামী বা বাপ-ভাই যিনি সঙ্গে থাকেন তাঁহার দ্বারা যথাসম্ভব পর্দা করাইয়া তীরে নামিয়া নামায পড়াই উচিত এবং এইরূপে স্বামী, বাপ, ভাই ইত্যাদি মাহরামের সঙ্গে ছাড়া দেবর, ভাসুর, চাচাত ভাই, ভাসুরের পুত্র, ভাগিনা, ননদের পুত্র ইত্যাদি গায়ের মাহরামের সঙ্গে সফর করা উচিত নহে।) অনুবাদক
২৮।মাসআলাঃ (অবশ্য) যদি এমন রোগী হয় যে, রোগের কারণে অক্ষম হওয়াবশতঃ তাহার জন্য বসিয়া নামায পড়া জায়েয, তবে তাহার জন্য ঘোড়া বা গরুর গাড়ীতে বসিয়া নামায পড়া দুরুস্ত হইবে বটে, কিন্তু তবুও চলতি গাড়ীতে বা যতক্ষণ গাড়ীর যোঁয়াল ঘোড়া বা গরুর উপর থাকিবে ততক্ষণ তাহাতে নামায পড়া দুরুস্ত হইবে না। গাড়ী থামাইয়া ঘোড়া বা গরু ছাড়িয়া দিয়া তারপর নামায পড়িবে।
২৯।মাসআলাঃ এইরূপে পালকি বা ডুলি যতক্ষণ বাহকের কাঁধে থাকিবে ততক্ষণ তাহাতে নামায পড়া দুরুস্ত হইবে না। অতএব, যদি পথিমধ্যে নামাযের ওয়াক্ত হয়, তবে পালকি থামাইয়া নামায পড়িবে। যদি সুস্থ শরীর হয়, তবে বোরকা পরিয়া পালকি হইতে বাহির হইয়া দাঁড়াইয়া নামায পড়িবে, আর যদি এ রকম রোগগ্রস্থ হয় যে দাঁড়াইয়া নামায পড়িতে পারে না, তবে পালকি জমিনে রাখিয়া পালকির মধ্যেই নামায পড়িলে তাহা দুরুস্ত হইবে।
৩০।মাসআলাঃ এইরূপে উট বা ঘোড়ার (পিঠেও বিনা ওযরে বসিয়া বসিয়া ফরয নামায পড়া দুরুস্ত নহে। অবশ্য যদি) গাড়ী বা ঘোড়া হইতে নামিলে জান মাল ধ্বংস হইবার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে না থামিয়া তথায়ই বসিয়া নামায পড়িলে তাহাও ‍দুরুস্ত হইবে। (নফল নামায ঘোড়ার পিঠে বা গাড়ীতে বা নৌকায় সর্বাবস্থায়ই বসিয়া পড়া জায়েয আছে।)
বেহেশতী গওহর হইতে
১।মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি যদি মুসাফির হালতে দুই গ্রাম মিলাইয়া ১৫ দিন অবস্থান করার নিয়্যত করে এবং ঐ গ্রামদ্বয়ের মধ্যে এতটা ব্যবধান হয় যে, এক গ্রাম হইতে অন্য গ্রামে আযানের আওয়ায না পৌঁছে, যেমন যদি কেহ মক্কা শরীফে ১০ দিন এবং মিনাবাজের পাঁচ দিন থাকার নিয়্যত করে, তবে মুক্বীম হইবে না, মুসাফিরই থাকিবে। প্রকাশ থাকে যে, মক্কা হইতে মিনা তিন মাইল।
২।মাসআলাঃ অবশ্য যদি ঐ দুই গ্রামের মধ্যে অল্প ব্যবধান হয়, এক গ্রাম হইতে অন্য গ্রামে আযানের আওয়ায পৌঁছার মত হয়, তবে এইরূপ দুই গ্রাম মিলাইয়া ১৫ দিনের নিয়্যত করিলেও সে মুক্বীম হইবে।
৩।মাসআলাঃ এইরূপে বেশী ব্যবধান হওয়া সত্ত্বেও যদি রাত্রে একই জায়গায় ১৫ দিন থাকার নিয়্যত থাকে, দিনে অন্যত্র কাজের জন্য যায়, রাত্রে আসিয়া একই জায়গায় থাকে, তবে তাহাকেও মুক্বীমই বলা হইবে এবং উভয় স্থানেই পুরা নামায পড়িতে হইবে। কিন্তু যদি দিনের কর্মস্থান রাত্রের বাসস্থান হইতে তিন মঞ্জিল দূরবর্তী হয়, তবে দিনে যখন সেখানে যাইবে তখন মুসাফির হইবে এবং ক্বছর পড়িবে, অন্যথায় মুক্বীম থাকিবে। আবার রাত্রে যখন ডেরায় ফিরিয়া আসিবে, তখন মুক্বীম হইবে এবং পুরা নামায পড়িবে।
৪।মাসআলাঃ মুক্বীমের জন্য মুসাফির ইমামের এক্তেদা সর্বাবস্থায় জায়েয আছে, আদায়ী নামায হউক বা ক্বাযা নামায হউক। কিন্তু মুসাফির ইমাম (চারি রাকা’আত বিশিষ্ট নামাযে) যখন দুই রাকা’আত পড়িয়া সালাম ফিরাইবে অর্থাৎ উভয় দিকে সালাম ফিরাইয়া সারিবে তখন মুক্বীম আল্লাহু আকবার বলিয়া দাঁড়াইবে এবং অবশিষ্ট দুই রাক’আত নিজে নিজে পড়িবে, কিন্তু এই নামাযের ভিতর তাহার কেরাআত পড়িতে হইবে না; বরং চুপ থাকিবে, কেননা, সে লাহেক। অর্থাৎ সূরা-ফাতেহা পরিমাণ চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রুকূ-সেজদা করিয়া নামায পুরা করিবে।
ক্বা’দায়ে উলা ওয়াজিব বটে, কিন্তু যেহেতু মুসাফির ইমামের জন্য উহা ক্বা’দায়ে আখিরা বলিয়া ফরয। কাজেই ইমামের বটে, কিন্তু যেহেতু মুসাফির ইমামের জন্য উহা ক্বা’দায়ে আখিরা বলিয়া ফরয। কাজেই ইমামের তাবে’ হইয়া মুক্তাদীর উপরও ফরয হইবে।
মুসাফির ইমামের জন্য সালাম ফিরানের সঙ্গে সঙ্গেই উচ্চঃস্বরে সকলকে জানাইয়া দেওয়া মোস্তাহাব যে, ‘আমি মুসাফির, ক্বছর পড়িয়াছি, আপনারা যাঁহারা মুক্বীম আছেন তাঁহারা নিজ নিজ নামায পুরা করিয়া লইবেন; নামায শুরু করার পূর্বেই এরূপ বলিয়া দেওয়া অধিক উত্তম।
৫।মাসআলাঃ আদায়ী নামাযে মুসাফিরও মুক্বীমের এক্তেদা করিতে পারে। ক্বাযা নামাযে মাগরিব ও ফজরে এক্তেদা করিতে পারে। ক্বাযা নামাযে যোহর, আছর ও এশার এক্তেদা করিতে পারে না। কেননা, মুসাফির যখন ক্বাযা নামাযে মুক্বীমের এক্তেদা করিবে তখন ইমামের তাবেদারীর কারণে মুক্তাদীও চারি রাকা’আত পড়িবে, অথচ ইমামের প্রথম বৈঠক ফরয নহে; কিন্তু মুক্তাদীর জন্য ফরয, অতএব, ফরয পাঠকের এক্তেদা গায়ের ফরয পাঠকের পিছনে হইল, সুতরাং ইহা দুরুস্ত নহে।
৬।মাসআলাঃ মুসাফির যদি নামাযের ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ, সেজদা ছহো কিংবা সালাম ফিরানের আগে নামাযের মধ্যে যে কোন সময়ে এক্বামতের নিয়্যত করে, তবে তাহার পুরা নামায পড়িতে হইবে, কিন্তু নামাযের মধ্যেই যদি ওয়াক্ত চলিয়া যায় এবং তদবস্থায় এক্বামতের নিয়্যত করে, কিংবা লাহেক অবস্থায় এক্বামতের নিয়্যত করে, তবে ঐ নামায পুরা পড়িতে হইবে না, ক্বছরই পড়িতে হইবে।
১। যেমন, মুসাফির যোহরের নামায এক রাকা’আত পড়ার পর ওয়াক্ত চলিয়া গেল এবং এক্বামতের নিয়্যত করিল, এই নামায ক্বছর পড়িতে হইবে।
২। মুসাফির অন্য মুসাফিরের এক্তেদা করিল এবং লাহেক হইল। অতঃপর অতীত নামায আরম্ভ করিল, এমতাবস্থায় এক্বামতের নিয়্যত করিলে যদি ইহা চারি রাকা’আতী নামায হয়, তবে ক্বছর পড়িতে হইবে।

No comments:

Powered by Blogger.