বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ কাফের ও ধর্মত্যাগী অধ্যায় (৬৩৪৬-৬৩৯৫)
হাদিস ৬৩৪৬
আলী ইবনু আবদূল্লাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উকল গোত্রের একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহন করল। কিন্তু মদিনার আবহাওয়া তাদের অনুকুল হলনা। তাই তিনি তাদেরকে সাদাকার উট পালের কাছে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুগ্ন পান করার আদেশ করেন। তারা তাই করল ফলে সুস্থ হয়ে গেল। অবশেষে তারা দ্বীন ত্যাগ করে উটপালের রাখালদেরকে হত্যা করে সেগুলো নিয়ে চলল। এদিকে তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তাদেরকে (ধরে) আনা হল। আর তাদের হাত-পা কাটলেন ও লৌহাশলাকা দ্বারা তাদের চক্ষুগুলো ফুঁড়ে দিলেন। কিন্তু তাদের ক্ষতস্থানে লৌহ পূড়ে দাগ দিলেন না। অবশেষে তারা মারা গেল।
হাদিস ৬৩৪৭
মুহাম্মাদ ইবনু সালত (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উরাইনা গোত্রীয় লোকদের (হাত, পা) কাটলেন, অথচ তাদের ক্ষতস্থানে লোহার দাগ দেননি। অবশেষে তারা মারা গেল।
হাদিস ৬৩৪৮
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ)……আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উকল গোত্রের একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসল। তারা সুফফায় অবস্থান করত। মদিনার আবহাওয়া তাদের অনুকুলে না হওয়ায় তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জন্য দুধ তালাশ করুন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেয় জন্য এ ছাড়া কিছু পাচ্ছি না যে, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উট পালের কাছে যাবে। তারা সেগুলোর কাছে আসল। আর সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করল। ফলে তারা মোটা তাজা হয়ে উঠল ও রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাকিয়ে নিয়ে চলল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সংবাদ পৌছলে তাদের খোজে লোক পাঠালেন। রৌদ্র প্রখর হবার পূর্বেই তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তখন লৌহ শলাকা আনার নির্দেশ দিলেন। তা গরম করে তদ্দ্বারা তাদের চক্ষু ফুড়ে দিলেন এবং তাদের হাত-পা কেটে দেয়া হল। অথচ লৌহ গরম করে দাগ লাগাননি। এরপর তাদেরকে উত্তপ্ত মরুভূমিতে ফেলে দেওয়া হল। তারা পানি পান করতে চাইল কিন্তু পান করানো হল না। অবশেষে তারা মারা গেল। আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেনঃ তারা চুরি করেছিল, হত্যাও করেছিল, আর আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
হাদিস ৬৩৪৯
কুতায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে উকল গোত্রের একদল (অথবা তিনি বলেন উরাইনা গোত্রের-আমার জানামতে তিনি উকল গোত্রেরই-বলেছেন) মদিনায় এছেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দুগ্নবতী উটের কাছে যাওয়ার নির্দেশ করলেন। তাদেরকে আরো নির্দেশ করলেন যেন তারা সে সব উটের কাছে গিয়ে সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করে। তারা তা পান করল। অবশেষে যখন তারা সুস্থ হয়ে গেল, তখন রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাকিয়ে নিয়ে চলল। ভোরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ সংবাদ পৌছল। তিনি তাদের খোঁজে লোক পাঠালেন। রৌদ্র চড়ার আগেই তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তাদের সম্পর্কে তিনি নির্দেশ করলেন, তাদের হাত-পা কাটা হল। লৌহশলাকা দিয়ে তাদের চোখগুলো ফূড়ে দেয়া হল। এরপর প্রখর রৌদ্র তাপে ফেলে রাখা হল। তারা পানি পান করতে চাইল। কিন্তু পান করানো হলনা। আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেনঃ ঐ লোকগুলো এমন একটি দল যারা চুরি করেছিল, হত্যাও করেছিল, ঈমান আনার পর কুফরী করেছিল আর আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।
হাদিস ৬৩৫০
মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত প্রকারের লোক, যাদেরকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ভিন্ন অন্য কোন ছায়া হবে না। ১/ ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ২/ আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত যুবক। ৩/ এমন যে ব্যাক্তি আল্লাহকে নির্জনে স্বরণ করে আর তার চক্ষুযূগল অশ্রুসিক্ত হয়। ৪/ এমন ব্যাক্তি যার অন্তর মসজিদে আটকে থাকে। ৫/ এমন দু-ব্যাক্তি যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করে। ৬/ এমন ব্যাক্তি যাকে কোন সুন্দরী রুপসী রমনী নিজের দিকে আহব্বান করল; আর সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৭/ এমন ব্যাক্তি যে সা’দকা করল আর এমন গোপনে করল যে, তার বাম হাত জাননা যে তার ডান হাত কি করে।
হাদিস ৬৩৫১
মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) ও খলীফা সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ আমার জন্য তার দু-পা ও দুচোয়ালের মধ্যবর্তী স্থানের দায়িত্ব নেবে আমি তার জন্য বেহেশতের দায়িত্ব নেব।
হাদিস ৬৩৫২
দাউদ ইবনু শাবীব (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদেরকে আনাস (রাঃ) বলেছেনঃ যে আমি তোমাদেরকে এমন এক হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পরে তোমাদেরকে কেউ বর্ণনা করবে না। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে না অথবা তিনি বলেছেনঃ কিয়ামতের পুর্ব নিদর্শন সমুহের মধ্যে হল এই যে, ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হবে, মূর্খতার প্রসার ঘটবে, মদ পান করা হবে, ব্যাপকভাবে ব্যাভিচার-হবে, পুরুষের সংখ্যা কমবে, নারীর সংখ্যা এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে যে, পঞ্চাশ জন নারীর তত্ত্বাবধায়ক হবে একজন পূরুষ।
হাদিস ৬৩৫৩
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন হিসেবে বহাল থাকা অবস্হায় কোন ব্যাক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। মুমিন থাকা অবস্থায় কোন চোর চুরি করে না। মুমিন থাকা অবস্থায় কেউ মদ পান করে না। মুমিন থাকা অবস্থায় কেউ হত্যা করে না। ইকরামা (রহঃ) বলেনঃ আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তার থেকে ঈমান কিভাবে ছিনিয়ে নেয়া হয়? তিনি বললেনঃ এভাবে। আর অঙ্গুলীগুলি পরস্পর জড়ালেন, এরপর অঙ্গূলীগুলি বের করলেন। যদি সে তাওবা করে তবে পূর্নবৎ এভাবে ফিরে আসে। এ বলে অঙ্গুলীগুলি পূনরায় পরস্পর জড়ালেন।
হাদিস ৬৩৫৪
আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যভিচারী ব্যাভিচার করা অবস্হায় মুমিন থাকে না। চোর চুরি করা অবস্হায় মুমিন থাকে না। মদ্যপায়ী মদ্যপানকালে মুমিন থাকে না। তবে তারপরও তওবা অবারিত।
হাদিস ৬৩৫৫
আমর ইবনু আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আনি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোন পাপটি সবচেযে বড়? তিনি বললেনঃ তুমি আল্লাহর কোন সমকক্ষ সাব্যস্ত করবে। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার সাথে আহার করবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা। আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা। ইয়াহইয়া (রহঃ)-আবদুল্লাহ (রাঃ) আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল, অনুরুপ বর্ননা করেছেন। আমর (রহঃ)- আবূ মায়সারা (রহঃ) বলেন-এটিকে ছেড়ে দাও, এটিকে ছেড়ে দাও।
হাদিস ৬৩৫৬
আদম (রহঃ) শাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আলী (রাঃ) জুমআর দিন জনৈকা মহিলাকে যখন রজম করেন তখন বলেনঃ আমি তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাত অমূযায়ী রজম করলাম।
হাদিস ৬৩৫৭
ইসহাক (রহঃ) শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ হ্যা। আমি বললাম, সূরায়ে নূর এর আগে না পরে? তিনি বললেনঃ আমি অকাত নই।
হাদিস ৬৩৫৮
মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আসলাম গোত্রের এক ব্যাক্তি রাসুলুলাহ এর কাছে এল। এসে বলল, সে যিনা করেছে এবং নিজের বিরুদ্ধে বারবার সাক্ষ্য প্রদান করল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন, তাকে রজম করা হল। আর সে বিবাহিত ছিল।
হাদিস ৬৩৫৯
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল। তিনি তখন মসজিদে ছিলেন। সে তাকে ডেকে বলল, হে আল্লাহর রাসুল। আমি যিনা করেছি। তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে কথাটি সে চারবার পুনরাবৃতি করল। যখন সে নিজের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য প্রদান করল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মধ্যে কি পাগলামীর দোষ আছে? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে কি তুমি বিবাহিত? সে বলল, হ্যা। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - বললেনঃ তোমরা তাকে নিয়ে যাও আর রজম করো। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ আমাকে এমন এক ব্যাক্তি বর্ননা করেছেন, যিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি তার রজমকারীদের মধ্যে একজন ছিলাম। আমরা তাকে জানাযা আদায়ের স্থানে রজম করি। পাথরের আঘাত যখন তার অসহ্য হচ্ছিল তখন সে পালাতে লাগল। আমরা হাররা নামক স্থানে তার নাগাল পেলাম। আর সেখানে তাকে রজম করলাম।
হাদিস ৬৩৬০
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ সা’দ ও ইবনু যামআ (রাঃ) ঝগড়া করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবদ ইবনু যামআ! এ সন্তান তোমারই। সন্তান শয্যাধিপতির। আর হে সাওদা! তুমি তার থেকে পর্দা কর। কুতায়বা (রহঃ) লায়স (রহঃ) থেকে আমাদেরকে এ বাক্যটি বেশি বলেছেনঃ যে ব্যভিচারীর জন্য পাথর।
হাদিস ৬৩৬১
আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিছানা যার সন্তান তার। আর ব্যভিচারীর জন্য পাথর।
হাদিস ৬৩৬২
মুহাম্মদ ইবনু উসমান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ইহুদী পুরুষ ও এক ইহুদী নারীকে হাযির করা হল। তারা উভয়েই যিনা করেছে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যাপারে তোমরা তোমাদের কিতাবে কি পাচ্ছ? তারা বলল, আমাদের পদ্রীরা চেহারা কালো করার ও উভয়কে গাধার পিঠে বিপরীতমুখী বসিয়ে প্রদক্ষিণ করানোর প্রথা চালু করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল। তাদেরকে তাওরাত নিয়ে আসতে বলুন। এরপর তা নিয়ে আসা হল। তাদের একজন রজমের আয়াতের উপর নিজের হাত রেখে দিল এবং এর অগ্রপাচাৎ পড়তে লাগল। তখন ইবনু সালাম (রাঃ) তাকে বললেনঃ তোমার হাত উঠও। (হাত উঠাতে দেখা গেল) তার হাতের নিচে রয়েছে রজমের আয়াত। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়ের সমন্ধে নির্দেশ দিলেন, উভয়কে রজম করা হল। ইবনু উমর বলেনঃ তাদের উভয়কে সমতল স্থানে রজম করা হয়েছে। তখন ইহুরী পূরুষটাকে দেখেছি ইহুদী নারীটির উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে।
হাদিস ৬৩৬৩
মাহমূদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত। আসলাম গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে হাযির হয়ে যিনার স্বীকারোক্তি করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে সে নিজের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য প্রদান করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি পাগল? সে বলল, না। তিনি তার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন। তখনঁ তাকে ঈদগাঁহে রজম করা হল। পাথর যখন তাকে অসহনীয় যন্ত্রণা দিচ্ছিল তখন সে পালাতে লাগল। তারপর তাকে ধরা হল ও রজম করা হল। অবশেষে সে মারা গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সমন্ধে ভালো মন্তব্য করলেন ও তার সালাত (নামায/নামাজ) জানাযা আদায় করলেন। ইউনুস ও ইবনু জুরাইজ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে ‘ফাসলি আলাইহি’ বাক্যটি বলেননি। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছে- ‘সাল্লি আলাইহি’ বর্ণনাটি কি বিশুদ্ধ? তিনি বললেনঃ এটিকে মা’মার বর্ননা করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো এটিকে মা-মার ব্যতীত অন্যরা বর্ণনা করেছে কি? তিনি বললেনঃ না।
হাদিস ৬৩৬৪
কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যাক্তি রমযানে আপন স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সংযোগ করে ফেললো। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ফতোয়া জানতে চাইল। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, একটি গোলাম আযাদ করার সামর্থ্য তোমার আছে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে কি দু-মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে ষাটজন মিসকীনকে আহার করাও। লায়স (রহঃ)-এর সুত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, জনৈক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে মসজিদে আসল। তখন সে বলল, আমি ধংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ তা কার সাথে? সে বলল, আমি রমযানের মধ্যে আমার স্ত্রীর সাথে সংগম করে ফেলেছি। তখন তিনি তাকে বললেনঃ তুমি সা’দকা কর। সে বলল, আমার কাছে কিছুই নেই। সে বসে রইল। এমতাবস্হায় এক ব্যাক্তি একটি গাধা হাকিয়ে নযী -এর কাছে এল। আর তার সাথে ছিল খাদ্যদ্রব্য। আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ আমি অকাত নই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কি আসল? অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাক্তিটি কোথায়? সে বলল, এই তো আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সা’দকা করে দাও। সে বলল আমার চেয়ে অধিক অভাবী লোকদের? আমার পরিবারের কাছে সামান্য আহার্যও নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে তা তোমরাই খেয়ে নাও।
হাদিস ৬৩৬৫
আবদুল কুদ্দুস ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি তার কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ঘটনা আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমার উপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। কিন্তু তিনি তাকে অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন না। আনাস (রাঃ) বলেন। তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় এসে গেল। সে ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, তখন সে ব্যাক্তিতার কাছে গিয়ে দাড়াল এবং বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমার উপর আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করান। তিনি বললেনঃ তুমি কি আমার সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করনি? সে বলল, হ্যা। তিনি বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। অথবা বললেনঃ তোমার শাস্তি (মাফ করে দিয়েছেন)।
হাদিস ৬৩৬৬
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ জু’ফী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ যখন মাযিয ইবনু মালিক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল তখন তাকে বললেনঃ সম্ভবত তুমি চুম্বন খেয়েছ অথবা ইশারা করেছ অথবা (কু দৃষ্টিতে) তাকিয়েছ? সে বলল, না, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ তাহলে কি তার সাথে তুমি সঙ্গম করেছ? কথাটি অস্পষ্ট করে বলেননি। সে বলল হ্যা। তখন তাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন।
হাদিস ৬৩৬৭
সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল। তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। এসে তাকে ডাক দিল হে আল্লাহর রাসুল। আমি যিনা করেছি, সে নিজেকেই উদ্দেশ্য করেছে। তখন তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু সে ঐদিকেই সরে দাড়াল, যে দিকটিতার থেকে মুখ ফিরিয়ে সন্মুখে করলেন, এবং বললঃ হে আল্লাহর রাসুল আমি যিনা করেছি। তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন, আর সে এদিকেই এল যে দিকে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। লোকটি যখন স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য প্রদান করল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন। এরপর জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার মধ্যে পাগলামী আছে কি? সে বলল, না, হে আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেনঃ তা হলে তুমি কি বিবাহিত? সে বলল, হ্যা, হে আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে নিয়ে যাও এবং রজম করো। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ আমাকে এ হাদীস এমন ব্যাক্তি বর্ণনা করেছেন যিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, তার রজমকারীদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমরা তাকে ঈদগাহে বা জানাযা আদায়ের স্থানে রজম করেছি। পাথরের আঘাত যখন তাকে ব্যাকুল করে তূলল, তখন সে দ্রুত দৌড়াতে লাগল। অবশেষে আমরা হাররা নামক স্থানে তার নাগাল পাই এবং তাকে রজম করি।
হাদিস ৬৩৬৮
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তারা বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ছিলাম। জনৈক ব্যাক্তি দাঁড়িয়েবলল, আমি আপনাকে (আল্লাহর) কসম দিয়ে বলছি আপনি আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মত ফায়সালা করুন। তখন তার প্রতিপক্ষ লোকটি দাড়াল। আর সে তার চেয়ে বুদ্ধিমান ছিল। তাই সে বলল, আপনি আমাদের ফায়সালা আল্লাহর কিতাব অনুযাযী-ই করে দিন। আর আমাকে অনুমতি দিন। তিনি বললেনঃ বল। সে বলল, আমার ছেলে ঐ ব্যাক্তির অধীনে চাকর ছিল। সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা করে ফেলে। আমি একাশ ছাগল ও একজন গোলামের বিনিময়ে তার সাথে আপোস করে নেই। তারপর আমি আলিমদের অনেককে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা আমাকে বললেনঃ আমার ছেলের শাস্তি একশ কশাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন। আর রজম হল তার স্ত্রীর শাস্তি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কসম ঐ সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্যই আমি কিতাবুল্লাহ অনুযায়ী তোমাদের উভয়ের ফায়সালা করব। একশ- ছাগল ও গোলাম তোমার কাছে ফেরত যাবে। আর তোমার ছেলের উপর একশত কষাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন। হে উনাইস! তুমি প্রত্যূষে ঐ ব্যাক্তির স্ত্রীর কাছে যাবে। যদি সে স্বীকার করে তরে তাকে রজম করবে। পরদিন প্রত্যুষে তিনি তার কাছে গেলেন। অরে সে স্বীকার করল। ফলে তাকে রজম করলেন। আমি সুফিয়ান (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ ব্যাক্তি কি এ কথা বলেনি যে, লোকেরা আমাকে বলেছে যে, আমার ছেলের ওপর রজম হবে। তখন তিনি বললেন, যুহরী (রহঃ) থেকে এ কথা জনেছি কিনা, এ ব্যাপারে আমার সন্দেহ ররেছে। তাই কখনো এ কথা বর্ণনা করি। আর কখনো চুপ থাকি।
হাদিস ৬৩৬৯
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উমর (রাঃ) বলেছেনঃ আমার আশঙ্কা হতে যে, দীর্ঘ যুগ অতিক্রান্ত হবার পর কোনব্যাক্তি এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে রজমের বিধান পাচ্ছিনা। ফলে এমন একটি ফরয পরিত্যাগ করার দরুন তারা পথভ্রষ্ট হবে যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। সাবধান! যখন প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ বা স্বীকারোক্তি বিদ্যমান থাকবে তখন ব্যভিচারীর জন্য রজমের বিধান নিঃসন্দেহ অবধারিত। সুফিয়ান (রহঃ) বলেনঃ অনুরুপই আমি স্বরণ রেখেছি। সাবধান! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন, আর আমরাও তারপরে রজম করেছি।
হাদিস ৬৩৭০
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মুহাজিরদের কতক লোককে পড়াতাম। তাঁদের মধ্যে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) অন্যতম ছিলেন। একদা আমি তার মিনাস্থ বাড়িতে ছিলাম। তখন তিনি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে তার সর্বশেষ হাজ্জ (হজ্জ)ে রয়েছেন। ইত্যবসরে আব্দুর রহমান (রাঃ) আমার কাছে ফিরে এসে বললেনঃ যদি আপনি ঐ লোকটিকে দেখতেন, যে লোকটি আজ আমীরুল মুমিনীন-এর কাছে এসেছিল এবং বলেছিলঃ হে আমীরুল মুমিনীন! অমুক ব্যাক্তির ব্যাপারে আপনার কিছু করার আছে কি? যে লোকটি বলে থাকে যে, যদি উমর মারা যান তাহলে অবশ্যই অমুকের হাতে বায়আত করব। আল্লাহর কসম! আবূ বকরের বায়আত আকম্মিক ব্যাপার ছিল। ফলে তা সংঘটিত হয়ে যায়। এ কথা শুনে তিনি ভীষণভাবে রাগাম্বিত হলেন। তাঁরপর বললেনঃ ইনশা আল্লাহ সন্ধায় আমি অবশ্যই লোকদের মধ্যে দাঁড়াব আর তাদেরকে ঐসব লোকের থেকে সতর্ক করে দিব, যারা তাদের বিষয়াদি আত্মসাৎ করতে চায়। আবদুর রহমান (রাঃ) বলেনঃ তখন আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি এমনটা যেন না করেন। কেননা, হাজ্জের (হজ্জের) মওসুম নিম্নস্তরের ও নির্বোধ লোকদেরকে একত্রিত করে। আর এরাই আপনার নৈকট্যের সুযোগে প্রাধান্য বিস্তার করে ফেলবে, যখন আপনি লোকদের মধ্যে দাঁড়াবেন। আমার ভয় হচ্ছে, আপনি যখন কোন কথা বলবেন তখন তা সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। আর তারা তা যথাযথভাবে আয়ত্ত করতে পারবে না। আর যথাযথ স্থানে রাখতেও পারবে না। সূতরাং মদিনা পৌছা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর তা হল হিজরত ও সুন্নাতের কেন্দ্রস্থল। ফলে তথায় জ্ঞানী ও সুধীবর্গের সঙ্গে মিলিত হবেন। আর যা বলার তা দৃঢ়তার সাথে বলড়ে পারবেন। জ্ঞানী ব্যাক্তিরা আপনার কথাকে যথাযথভাবে আয়ত্ত করে নেবে ও যথাস্থানে ব্যবহার করবে। তহান উমর (রাঃ) বললেনঃ জেনে রেখে! আল্লাহর কসম! ইনশা আল্লাহ আমি মদিনা পৌছার পর সর্ব প্রথম এ কাজটি নিয়ে ভাষনের জন্য দাঁড়াব। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমরা যিলহাজ্জ মাসের শেষ দিকে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলাম। যখন জুমআর দিন এল সূর্য অস্তগমনের- সাথে সাথে আমি মসজিদে গমন করলাম। পৌছে দেখলাম, সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমর ইবনু নূফাইল (রাঃ) মিম্বরের গোড়ায় বসে আছেন, আমিও তার পার্শে এমনভাবে বসলাম যেন আমার হাটু তার হাঁটুকে স্পর্শ করয়ে অল্পক্ষণের মধ্যে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বেরিয়ে আসলেন। আমি যখন তাকে সামনের দিকে আসতে দেখলাম তখন সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমবু ইবনু নূফাইলকে বললাম! আজ সন্ধায় অবশ্যই তিনি এমন কিছু কথা বলবেন যা তিনি খলীফা হওয়া থেকে আজ-পর্যন্ত বলেননি। কিন্তু তিনি আমার কথাটি উড়িয়ে দিলেন এবং বললেনঃ আমার মনে হয় না যে, তিনি এমন কোন কথা বলবেন, যা এর পুর্বে বলেননি। এরপর উমর (রাঃ) মিম্বরের উপরে বসলেন। যখন মুয়াযযিনগণ আযান থেকে ফারিগ হয়ে গেলেন তখন তিনি দাড়ালেন। আর আল্লাহর যথোপযূক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেনঃ আম্মা বাদ! আজ আমি তোমাদেরকে এমন কথা বলতে চাই, যা আমারই বলা কর্তব্য। হয়তবা কথাটি আমার মৃত্যুর নিকটবর্তী হচ্ছে তাই যে ব্যাক্তি কথাগুলো -যথাযথভাবে অনুধাবন করে সংরক্ষন করবে সে যেন কথাগুলো ঐসব স্থানে পৌছিয়ে দেয় যেথায় তার সওয়ারী পৌছবে। আর যে ব্যাক্তি কথাশুনেছেন যথাযথভাবে অনুধাবন করতে আশংকাবোধ করছে আমি তার জন্য আমার ওপর মিথ্যা আরোপ করা ঠিক মনে করছি না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মাদ -কে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। অহর তার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এবং আল্লাহর অবতীর্ণ বিযয়াদির একটি হচ্ছে রজমের আয়াত। আমরা সে আয়াত পড়েছি, অনুধাবন করেছি, আয়োত্ত করেছি। আল্লাহর রাসুল রজম করেছেন। আমরাও তার পরে রজম করেছি। আমি আশংকা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত - হওয়ার পর কোন ব্যাক্তি এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আল্লাহর কসম! আমরা আল্লাহর কিতাবে রজমের আয়াত পাচ্ছি না। ফলে তারা এমন একটি ফরয বর্জনের দরুন পথভ্রষ্ট হবে, যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ঐ ব্যাক্তির উপর রজম অবধারিত, যে বিবাহ বন্ধলে আবদ্ধ হবারপর যিনা করবে, চাই সে পূরুষ হোক বা নারী। যখন সূষ্পষ্ট প্রমান পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ বা স্বীকারোক্তি বিদ্যমান থাকবে। অনুরুপভাবে আমরা আল্লাহর কিতাবে এও পড়তাম যে, তোমরা তোমাদের বাপ-দাদা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। এটি তোমাদের জন্য কুফরী যে, তোমরা স্বীয় বাপ-দাদা থেকে বিমুখ হবে। অথবা বলেছেনঃ এটি তোমাদের জন্য কুফরী, যে স্বীয় বাবা-দাদা থেকে বিমূখ হবে জেনে রেখো! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার সীমাতিরিক্ত প্রশংসা করো না, যেভাবে ঈসা ইবনু মরিয়ামের সীমাতিরিক্ত প্রশংসা করা হয়েছে। তোমরা বল, আল্লাহব বান্দা ও তাঁর রাসুল। এরপর আমার কাছে এ কথা পৌছেছে যে, তোমাদের কেউ এ কথা বলছে যে, আল্লাহর কসম! যদি উমর মৃত্যুবরণ করেন তাহলে আমি অমুকের হাতে বায়আত করব। কেউ যেন এ কথা বলে ধোকায় পতিত না হয় যে আবূ বকর-এর বায়আত আকম্মিক ঘটনা ছিল। ফলে তা সংঘটিত হয়ে যায়। জেনে রেখো! তা অবশ্যই এরুপ ছিল। তবে আল্লাহ আকম্মিক বায়আতের ক্ষতি প্রতিহত করেছেন। সফর করে সওয়ারীসমূহের ঘাড় ভেঙ্গে পড়ে-- এমন স্হান পর্যন্তদের মধ্যে আবূ বকরের ন্যায় কে আছে? যে কেউ মুসলমানদের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোন ব্যাক্তির হাতে বায়আত করবে, তার অনুসরণ করা যাবে না এবং ঐ ব্যাক্তিরও না, যে তার অনুসরন করবে। কেননা উভয়েরই হত্যার শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে। যখন আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওফাত দান করেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি। অবশ্য আনসারগণ আমাদের বিরোধিতা করেছেন। তারা সবাই বনী সাঈদার চত্বরে সমবেত হয়েছেন। আমাদের থেকে বিমূখ হয়ে আলী, যুবাইর ও তাদের সাথীরাও বিরোধিতা করেছেন। অপরদিকে মুহাজিরগণ আবূ বকরের কাছে সমবেত হলেন। তখন আমি আবূ বকরকে বললাম, হে আবূ বকর! আমাদেরকে নিয়ে আমাদের ঐ আনসার ভাইদের কাছে চলুন। আমরা তাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যখন আমরা তাদের নিকটবর্তী হলাম তখন আমাদের সাথে তাদের দূ-জন পূণ্যবান ব্যাক্তির সাক্ষাৎ হল। তারা উভয়েই ঐ বিষয়ের আলোচনা করলেন যে বিষয়ে লোকেরা ঐকমত্য করছিল। এরপর তারা বললেনঃ হে মূহাজির দল! আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? তখন আমরা বললাম, আমরা আমাদের ঐ আনসার ভাইদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। তারা বললেন- না আপনাদের তাদের নিকট না যাওয়াই উচিত। আপনারা আপনাদের বিষয় সমাপ্ত করে নিন। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই তাদের কাছে যাব। আমরা চললাম। অবশেষে বনী সাঈদার চত্তরে তাদের কাছে এলাম। আমরা দেখতে পেলাম তাদের মাঝখানে এক ব্যাক্তি বস্ত্রাবৃত অবস্হায় রয়েছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ঐ ব্যাক্তি কে! তারা জবাব দিল ইনি সা’দ ইবনু উবাদা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ওনার কি হয়েছে? তারা বলল, তিনি জ্বরাক্রান্ত। আমরা কিছুক্ষণ বসার পরই তাদের খতীব উঠে দাড়িয়ে কালিমায়ে শাহাদাত পড়লেন এবং আল্লাহর যথোপযূক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেনঃ আম্মা বাদ। আমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী ও ইসলামের সেনাদল এবং তোমরা হে মুহাজির দল! একটি নগণ্য দল মাত্র। যে দলটি তোমাদের গোত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমাদের কাছে পৌছেছে অথচ এরা এখন আমাদেরকে মূল থেকে সরিয়ে দিতে এবং খিলাফত থেকে বঞ্চিত করে দিতে চাচ্ছে। যখন তিনি নীরব হয়ে গেলেন তখন আমি কিছু বলার মনস্থ করলাম। আর আমি পূর্ব থেকেই কিছু কথা সাজিয়ে রেখেছিলাম, যা আমার কাছে ভাল লাগছিল। আমি ইচ্ছে করলাম যে, আবূ বকর (রাঃ)-এর সামনে কথাটি পেশ করব। আমি তার ভাষণ থেকে সৃষ্ট রাগকে কিছুটা প্রশমিত করতে মনস্থ করলাম। আমি যখন কথা বলতে চাইলাম তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ তুমি থাম। আমি তাকে রাগাম্বিত করাটা পছন্দ করলাম না। তাই আবূ বকর (রাঃ) কথা বললেনঃ আর তিনি ছিলেন আমার চেয়ে সহনশীল ও গম্ভিড়। আল্লার কসম! তিনি এমন কোন কথা বাদ দেননি যা আমি সাজিয়ে রেখেছিলাম। অথচ তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অনুরুপ বরং তার চেয়েও উত্তম কথা বললেন। অবশেষে তিনি কথা বন্ধ করে দিলেন এরপর আবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের ব্যাপারে যেসব উত্তম কাজের কথা উল্লেখ করেছ বস্তুত তোমরা এর উপযুক্ত। তবে খিলাফতের ব্যাপারটি কেবল এই কুরাইশ বংশের জন্য নির্ধারিত। তারা হচ্ছে বংশ ও আবাসভূমির দিক দিয়ে সর্বোত্তম আরব। আর আমি এ দু-জনের থেকে যে-কোন একজনকে তোমাদের জন্য মনোনয়ন করলাম। তাই তোমাদের ইচ্ছা যে-কোন একজনের হাতে বায়আত করে নাও। এরপর আমার ও আবূ উবাইদা ইবনু জাররাহ (রাঃ)-এর হাত ধরলেন। তিনি আমাদের মাঝখানেই বসা ছিলেন। আমি তার এ কথা ছাড়া যত কথা বলেছেনঃ কোনটাকে অপছন্দ। আল্লাহর কসম! আবূ বকর যে জাতির মধ্যে বর্তমান রয়েছেন সে জাতির উপর আমি শাসক নিযূক্ত হওয়ার চেয়ে এটাই শ্রেয় যে, আমাকে পেশ করে আমার ঘাড় ভেঙ্গে দেয়া হবে, ফলে তা আমাকে কোন গুনাহের কাছে আর নিয়ে যেতে পারবে না। হে আল্লাহ! হয়ত আমার সাথী আমার মৃত্যুর সময় এমন কিছু আকাঙ্ক্ষা করতে পারে,। এখন আমি পাচ্ছি না। তখন আননারদের এক ব্যাক্তি বলে উঠল, আমি এ জাতির অভিজ্ঞ ও ক্ষেত্রজ্ঞ এবং শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষের ন্যায় সম্ভ্রান্ত। হে কুরাইশগণ! আমাদের থেকে হবে এক আমীর আর তোমাদের থেকে হবে এক আমীর। এ পর্যায়ে অনেক কথা শুনে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। আমি এ মতবিরোধের দরুন শংকিত হয়ে পড়লাম। তাই আমি বললাম, হে আবূ বকর! আপনি হাত বাড়ান। হাত বাড়ালেন। আমি তাঁর হাতে বায়আত করলাম। মুহাজিরগণও তাঁর হাতে বায়আত করলেন। তারপর আনসারগণও তার হাতে বায়আত করলেন। আর আমরা সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) এর দিকে অগ্রসর হলাম। তখন তাদের এক ব্যাক্তি বলে উঠল, তোমরা সা-দ ইবনু উবাদাকে জানে মেরে ফেলেছ। তখন আমি বললাম, আল্লাহ সা’দ ইবনু উবাদাকে হত্যা করেছেন। উমর (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমরা সে সময়কার জরুরী বিষয়াদির মধ্যে আবূ বকরের বায়আতের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছুকে মনে করিনি। আমাদের ভয় ছিল যে! যদি বায়আতের কাজ অসম্পূন্ন থাকে, আর এ জাতি থেকে পৃথক হয়ে যাই তাহলে তারা আমাদের পরে তাদের কারো হাতে বায়আত করে নিতে পারে। তারপর হয়ত আমাদেরকে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের অনুসরণ করতে হত, না হয় তাদের বিরোধিতা করতে হত, ফলে তা মারাত্বক ফ্যাসা’দর কারণ হয়ে দাড়াত। অতএব যে ব্যাক্তি মুসলমানদের পরামর্শ ব্যাক্তিরেকে কোন ব্যাক্তির হাতে বায়আত করবে তার অনুসরণ করা যাবে না। আর ঐ ব্যাক্তিরও না, যে তার অনুসরণ করবে। কেননা, উভয়েরই হত্যার শিকার হওয়ার আশংকা বিদ্যমান।
হাদিস ৬৩৭১
মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) যায়িদ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নির্দেশ দিতে শুনেছি ঐ ব্যাক্তি সম্বন্ধে একশ কশাঘাত করার ও এক বছরের জন্য নির্বাসনের, যে অবিবাহিত অবস্থায় যিনা করেছে। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ আমাকে উরওয়া ইবনু যুরায়র (রাঃ) বলেছেনঃ - যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নির্বাসিত করতেন। তারপর সর্বদাই এ সুন্নাত চালু রয়েছে।
হাদিস ৬৩৭২
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যাক্তি সম্বন্ধে যে যিনা করেছে অথচ সে অবিবাহিত হদ, প্রয়োগসহ এক বছরের জন্য নির্বাসনের ফায়সালা করেছেন।
হাদিস ৬৩৭৩
মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাঁনত করেছেন নারীরা পুরুষ ও পুরুষরা নারীদের উপর এবং বলেছেনঃ তাদেরকে বের করে দাও তোমাদের ঘর হতে এবং তিনি অমুক অমুককে বের করে দিয়েছেন।
হাদিস ৬৩৭৪
আসিম ইবনু আলী (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এল। এ সময় তিনি ছিলেন উপবিষ্ট। সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মুতাবিক ফয়সালা করে দিন। এরপর তারা প্রতিপক্ষ দাঁড়াল এবং বলল, এ সত্যই বলেছে হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কিতাব মুতাবিক আমাদের ফায়সালা করে দিন। আমার ছেলে তার অধীনে চাকর ছিল, সে তার স্ত্রীর সহিত যিনা করে ফেলে। তখন লোকেরা আমাকে জানাল যে, আমার ছেলের উপর রজমের হুকুম হবে। ফলে আমি একশ ছাগল ও একজন দাসীর বিনিময়ে আপোস করে নেই। এরপর আমি আলিমদেরকে জিজ্ঞাসা করি, তখন তারা বললেনঃ যে আমার ছেলের হদ হল একশ- কশাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন। তা শুনে তিনি বললেনঃ কসম ঐ সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের উভয়ের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করে দেব। ঐ ছাগল ও দাসীটি তোমার কাছে ফেরত যাবে এবং তোমার ছেলের ওপর অর্পিত হবে একশ কশাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন। হে উলাইস! তুমি প্রত্যূষে ঐ মহিলার কাছে যাও এবং তাকে রজম কর। উলাইস সকালে গেলেন ও তাকে রজম করলেন।
হাদিস ৬৩৭৫
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবিবাহিতা দাসী যিনা-করলে তার হুকুম সষ্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেনঃ সে যদি যিনা করে তাকে তোমরা কশাঘাত করবে। পূনঃ যদি যিনা করে তাহলেও কশাঘাত করবে। তারপরও যদি যিনা করে তাহলেও কশাঘাত করবে। এরপর তাকে একগুচ্ছ চুলের বিনিময়ে হলেও বিক্রি করে ফেলবে। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ আমি অকাত নই যে, (বিক্রির কথা) তৃতীয়বারের পর না চতূর্থবারের পর।
হাদিস ৬৩৭৬
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাসী যখন যিনা করে আর প্রমাণিত হয়ে যায়, তখন যেন তাকে কশাঘাত করে এবং তিরষ্কার না করে। পূনরায় যদি যিনা করে তাহলেও যেন কশাঘাত করে, তিরষ্কার না করে। যদি তৃতীয়বারও যিনা করে তাহলে যেন চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দেয়। ইসমাঈল ইবনু উমাইয়া (রহঃ) সাঈদ আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে লায়স (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।
হাদিস ৬৩৭৭
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) শায়বানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফা (রাঃ)-কে রজম সন্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন। আমি বললাম, সুরায়ে নূরের (এ সম্পকীয় আয়াত নাযিলের) আগে না পরে? তিনি বললেনঃ তা আমি অকাত নই। আলী ইবনু মুসহির, খালিদ ইবনু আবদুল্লাহ মুহায়িবী ও আবিদা ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আশ-শায়বানী (রহঃ) থেকে আবদুল ওয়াহিদ এর অনুসরণ করেছেন।
হাদিস ৬৩৭৮
ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইহুদীগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে জানাল তাদের একজন পূরুষ ও একজন নারী যিনা করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমরা তাওরাতে রজম সস্পবেহ কি পাচ্ছ? তারা বলল, তাদেরকে অপমান ও কশাঘাত করা হয়। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেনঃ তোমরা মিথ্যে বলেছ। তাওরাতে অবশ্যই রজমের উল্লেখ রয়েছে। তারা তাওরাত নিয়ে এল এবং তা খুলল। আর তাদের একজন রজমের আয়াতের ওপর হাত রেখে দিয়ে তার আংশিক পাঠ করল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেনঃ তোমার হাত উঠাও। সে তার হাত উঠালে দেখা গেল যে, তাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তারা বলল, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম সত্যই বলেছেনঃ হে মুহাম্মাদ! তাতে রজমের আয়াত সত্যই বিদ্যমান রয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয় সম্বন্ধে নির্দেশ করলেনএবং তাদের উভয়কে রজম করা হল। আমি দেখলাম, পুরুষটি নারীটির ওপর উপুড় হয়ে আছে। সে তাকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা করছে।
হাদিস ৬৩৭৯
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। দু-জন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তাদের বিবাদ নিয়ে এল। তাদের একজন বলল, আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করে দিন। অপরজন বলল, আর সে ছিল উভয়ের মধ্যে অধিক বিজ্ঞ। হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী আমাদের বিচার করে দিন। আর আমাকে কথা বলার অনুমতি দিন। তিনি বললেনঃ বল। সে বলল, আমার ছেলে তার মজুর ছিল। মালিক (রাবী) (রহঃ) বলেনঃ আসীফ অর্থ মজুর। সে তার স্ত্রীর সহিত যিনা করে ফেলে। লোকেরা আমাকে বলল যে, আমার ছেলের উপর শাস্তি হবে রজম। আমি এর বিনিময়ে তাকে একশ- ছাগল ও আমার একজন দাসী দিয়ে দেই। তারপর আলিমদেরকে জিজ্ঞেস করি। তারা আমাকে বললেনঃ যে, আমার ছেলের শাস্তি একশ কশাঘাত ও এক বছরের নির্ধাসন। আর রজম তার স্ত্রীর ওপরই প্রযোজ্য হবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জেনে রেখ! কসম ঐ সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্যই আমি আল্লাহর কিতাব অনূযায়ী তোমাদের উভয়ের ফয়সালা করব। তোমার ছাগল ও দাসী তোমার কাছে ফেরত আসবে এবং তার ছেলেকে একশ- কশাঘাত করলেন ও এক বছরের জন্য নির্বাসিত করলেন। আর উলাইস আসলামী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন যেন সে অপর ব্যাক্তির স্ত্রীর কাছে যায় এবং যদি সে স্বীকার করে তাহলে যেন তাকে রজম করে। সে স্বীকার করল। ফলে তাকে সে রজম করল।
হাদিস ৬৩৮০
ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আবূ বকর (রাঃ) এলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মাথা মূবারক আমার উরূর ওপর রেখে আছেন। তখন তিনি বললেনঃ তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লোকদেরকে আটকে রেখেছ, এদিকে তাদের পানির কোন ব্যবস্হা নেই। তিনি আমাকে তিরষ্কার করলেন ও স্বীয় হাত দিয়ে আমার কোমরে আঘাত করতে লাগলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অবস্হানই আমাকে নড়াচড়া থেকে বিরত রাখছিল। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন।
হাদিস ৬৩৮১
ইয়াহইয়া ইবনু সূলায়মান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একদা আবূ বকর (রাঃ) এলেন ও আমাকে খুব জোরে ঘুষি মারলেন এবং বললেনঃ তুমি লোকদেরকে একটি হারের জন্য আটকে রেখেছ। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবসানের দরুন মৃতসদৃশ ছিলাম। অথচ তা আমাকে ভীযণ যন্ত্রণা দিয়েছে। সামনে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৬৩৮২
মূসা (রহঃ) মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সা-দ ইবনু উবাদা (রাঃ) বলেছেনঃ যদি আমি আমার স্ত্রীর সাথে কোন পরপূরুষকে দেখি তাহলে অজি তাকে তরবারীর ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব। তার এ উক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌছল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি সা’দ এর আত্নমর্যাদাবোধে বিস্মিত হচ্ছ? আমি ওর চেয়েও বেশি আত্মসম্মানী। আর আল্লাহ আমার চেয়েও বেশি আত্নসম্মানের অধিকারী।
হাদিস ৬৩৮৩
ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্ত্রী একটি কালো ছেলে জন্য দিয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ তোমার কোন উট আছে কি? সে বলল, হ্যা আছে। তিনি বললেনঃ সেগুলোর রং কি? সে বলল, লাল। তিনি বললেনঃ সেগুলোর মধ্যে কি ছাই বর্নের কোন উট আছে? সে বলল, হ্যা আছে। তিনি বললেনঃ এটা কোথা থেকে হল? সে বলল, আমার ধারণা যে, কোন শিরা (বংশমূল) একে টেনে এনেছে। তিনি বললেনঃ তাহলে তো তোমার এ পুত্র একে কোন শিরা (বংশমূল) টেনে এনেছে।
হাদিস ৬৩৮৪
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ আল্লাহর নির্ধারিত হদ সমুহের কোন হদ ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে দশ কশাঘাতের উর্দ্বে দন্ড প্রয়োগ করা যাবে না।
হাদিস ৬৩৮৫
আমর ইবনু আলী (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এমন একজন থেকে বর্ণনা করেন যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহর নির্ধারিত হদসমূহের কোন হদ ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে দশ প্রহারের বেশি কোন শাস্তি নেই।
হাদিস ৬৩৮৬
ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আবূ বুরদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর হদসমূহের কোন হদ ব্যতীত অন্যত্র দশ কশাঘাতের বেশি প্রয়োগ করা যাবে না।
হাদিস ৬৩৮৭
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাগাতার সিয়াম পালন থেকে নিষেধ করেছেন। তখন মুসলমানদের থেকে এক ব্যাক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো লাগাতার সিয়াম পালন করেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার মত তোমাদের মধ্যে কে আছে? আমি তো রাত্রি যাপন করি এমন অবস্থায় যে, আমার রব আমাকে পানাহার করান। যখন তারা লাগাতার সিয়াম পালন থেকে বিরত থাকল না তখন তিনি একদিন তাদের সাথে লাগাতার (দিনের পর দিন) সিয়াম পালন করতে থাকলেন। এরপর যখন তারা নতূন চাঁদ দেখল তখন তিনি বললেনঃ যদি তা আরো দেরি হতো তাহলে আমি তোমাদের আরো বাড়িয়ে দিতাম। কথাটি যেন শাসন স্বরুপ বললেন। যখন তারা বিরত রইল না। শুআয়ব, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ও ইউনুস (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উকায়ল (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। আবদুর রহমান ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৬৩৮৮
আইয়াশ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে প্রহার করা হত যখন তারা অনুমানের ভিত্তিতে খাদ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করত। তারা তা যেন তাদের স্থানে বিক্রি না করে যে পর্যন্ত না তারা তা আপন বিক্রয়স্থলে ওঠায়।
হাদিস ৬৩৮৯
আবদান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য তার উপর অতিরিক্ত বিষয়ের কোন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, যে পর্যন্ত না আল্লাহর অলংঘনীয় সীমালঙ্ঘন করা হয়। এমন হলে তিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন।
হাদিস ৬৩৯০
আলী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি দু-জন লি-আনকারীর ব্যাপারে দেখেছি যে, তাদের উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো হয়েছে। আমি তখন পনের বছরের যুবক ছিলাম। এরপর তার স্বামী বলল আমি যদি তাকে রেখে দেই তাহলে তাব উপর আমি মিথ্যা আরোপ করেছি। বর্ননাকারী বলেনঃ আমি যুহরী (রহঃ) থেকে তা স্বরন রেখেছি যে, যদি সে এই এই আকৃতির সন্তান জন্ম দেয় তাহলে সে সত্যবাদী। আর যদি এই এই আকৃতির সন্তান জন্ম দেয় যেন টিকটিকির ন্যায় লাল, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। আমি যুহরী (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সে সন্তানটি ঘৃণ্য আকৃতির জন্ম নেয়।
হাদিস ৬৩৯১
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, ইবনু আববাস (রাঃ) দুজন লি আনকারী সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সা’দ্দাদ (রহঃ) বললেনঃ এ কি সে মহিলা যার সম্বন্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোন মহিলাকে বিনা প্রমাণে রজম করতাম? তিনি বললেনঃ- না। ওটা ঐ মহিলা যে প্রকাশ্যে অপকর্ম করত।
হাদিস ৬৩৯২
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট নি আনকারীদের সষ্পর্কে আলোচনা করা হল। তখন আসিম ইবনু আদী (রাঃ) তার সম্বন্ধে কিছু কটূক্তি করলেন। তারপর তিনি ফিরে গেলেন। তখন তার স্বগোত্রের এক ব্যাক্তি তার কাছে এসে অভিযোগ করল যে সে তার স্ত্রীর কাছে অন্য এক ব্যাক্তিকে পেয়েছে। আসিম (রাঃ) বলেনঃ আমি আমার এ উক্তির দরুনই এ পরীক্ষায় পড়েছি। এরপর তিনি তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে গেলেন। আর সে তাঁকে ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে জানার যার সাথে তার স্ত্রীকে পেয়েছে। এ ব্যাক্তিটি গৌর বর্ন। হালকা-পাতলা, সোজা চুল বিশিষ্ট ছিল। আর যে ব্যাক্তি সমন্ধে দাবি করেছে যে, সে তাকে তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছে সে ছিল মেটে বর্নের, মোটা গোড়ালী, স্থুল গোশত বিশিষ্ট। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আল্লাহ! স্পষ্ট করে দিন। ফলে সে মহিলাটি ঐ ব্যাক্তি সদৃশ সন্তান জন্ম দিল যরে কথা তার স্বামী উল্লেখ করেছিল যে, তাকে তার স্ত্রীর সাথে পেরেছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ের মধ্যে লি-আন কার্যকর করলেন। তখন এক ব্যাক্তি এ মজলিসেই ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলল, এটা কি সে মহিলা যার সষ্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি আমি কাউকে বিনা প্রমাণে রজম করতাম তাহলে একে রজম করতাম? তিনি বলেনঃ না। ওটা ঐ মহিলা যে ইসলামে থাকা অবস্হায় প্রকাশ্যে অপকর্ম করত।
হাদিস ৬৩৯৩
আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তোমরা সাতটি ধবংসকারী বস্তু থেকে বেচে থাক। তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা, জাদু, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা সাধ্বী বিশ্বাসী সরলমনা রমনাদের প্রতি অপবাদ আরোপ করা।
হাদিস ৬৩৯৪
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূল কাসিম -কে বলতে শুনেছি যে কেউ আপন ক্রীতদাসের প্রতি অপবাদ আরোপ করল। অথচ সে তা থেকে পবিত্র যা সে বলেছে। কিয়ামত দিবসে তাকে কশাঘাত করা হবে। তবে যদি এমনই হয় যেমন সে বলেছে (সে ক্ষেত্রে কশাঘাত করা হবে না )।
হাদিস ৬৩৯৫
মুহাম্মাদ ইবনু ইউসূফ (রহঃ) আবূ হুরায়রাঁ ও যায়িদ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি নীবী - এর নিকট এসে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি আপনি আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করবেন। তখন তার প্রতিপক্ষ দাড়াল, আর সে ছিল তার চেয়ে অধিক বিজ্ঞ এবং বলল, সে ঠিকই বলেছে। আপনি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী আমাদের মাঝে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে অনুমতি দিন, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ বল। তখন সে বলল, আমার ছেলে এই ব্যাক্তির পরিবারে মজুর ছিল, সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা করে বসে। ফলে আমি একাশ, ছাগল ও একটি গোলামের বিনিময়ে তার থেকে আপোস করে নেই। তারপর কজন আলিমকে জিজ্ঞাসা করি। তাঁরা আমাকে জানালেন যে আমার ছেলের ওপর একশ কশাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন। আর এ ব্যাক্তির স্ত্রীর উপর রজম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই আল্লাহর কিতাব অমুযায়ী তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব। একশ- (ছাগল) আর গোলাম তোমার কাছে ফেরত হবে। আর তোমার ছেলের উপর আসবে একশ কশাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন। হে উলাইস! তুমি প্রত্যূষে মহিলার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করবে। যদি সে স্বীকার করে তাহলে তাকে রজম করবে। সে স্বীকার করল। ফলে তাকে সে রজম করল।
No comments: