সহিহ মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড, অধ্যায়ঃ সালাতুল কুসুফ
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই
১৯৬২. কূতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে সূর্য গ্রহণ হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং কিয়ামকে দীর্ঘায়িত করলে এরপর করলেন, রুকুকেও দীর্ঘায়িত করলেন। রুকু’ হতে মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিন্তু পূর্বের দাঁড়াবার সময়ের চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। এরপর রুকু’ করলেন এবং দীর্ঘ রুকু’ করলেন, কিন্তু প্রথম রুকু’ হতে কিছু কম। এরপর সিজদা করলেন, তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। কিন্তু, প্রথম কিয়াম হতে কম, এরপর রুকু’ করলেন এবং রুকু’কে দীর্ঘায়িত করলেন। প্রথম রুকু’ হতে কম, এর পর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাড়ালেন, কিন্তু পূর্বের কিয়াম হতে কম। এরপর পূনরায় রুকু' করলেন এবং রুকু’ দীর্ঘায়িত করলেন। কিন্তু পূর্ব হতে কম। অতঃপর সিজদা করলেন।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরলেন। এদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠল। অতঃপর লোকদের উদ্দেশে খূতবা দিতে গিয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা করলেন। এরপর বললেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদরতের বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না, যখন তোমরা সুর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পাও, তখন তাকবীর বলো, দু’আ করো, সালাত আদায় করো সাদাকা দাও। হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মাত! এ ব্যাপারে আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্নসম্মানবোধসম্পন্ন কেউ নেই যে, তার বান্দা ব্যাভিচার করবে এবং তাঁর বান্দী ব্যাভিচার করবে (অথচ তিনি শান্তি দিবেন না) হে মুহাম্মাদের উম্মাত! আল্লাহর কসম, যদি তোমরা জানতে, আমি যা জানি, তবে তোমরা কান্নাকাটি করতে অধিক এবং হাসতে অনেক কম। আমি কি আল্লাহর হুকুম যথাযথ ভাবে প্রচার করেছি? মালিকের বর্ণনায় আছে যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর বিশেষ নিদর্শনাবলীর মধ্যে দু'টি নিদর্শন।
১৯৬৩. ইয়াহহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত। তবে এতে এ কথা রয়েছে, এরপর তিনি বলেন, "অতঃপর সূর্য-চন্দ্র আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাবলীর মধ্যে দুটি নিদর্শন।" আরো বর্ণনা করেছেন যে, এরপর তিনি তাঁর দু'হাত উপরে উঠিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়ে দিয়েছি?
১৯৬৪. হারামালা ইবনু ইয়াহয়া, আবূ তাহির ও মুহাম্মদ ইবনু সালামা মুরাদী (রহঃ) ... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় একবার সূর্যগ্রহণ হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে মসজিদে গেলেন এবং তিনি দাঁড়ালেন, তাকবীর বললেন, লোকেরা তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হয়ে দাড়াল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিরা-আত পাঠ করলেন। তারপর তাকবীর বলে দীর্ঘ রুকু’ করলেন। এরপর মাথা উঠিয়ে সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা” রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ, বললেন এবং দাঁড়িয়ে দীর্ঘ কিরা-আত পাঠ করলেন, কিন্তু প্রথম কিরআতের তুলনায় অনেক কম, এরপর আল্লাহ আল্লাহ বলে দীর্ঘক্ষণ রুকু’ করলেন,কিন্তু প্রথম রুকু (হতে কম, তারপর সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা” রাব্বানা ওয়া লাকাম হামদ” বললেন এবং সিজদা করলেন।
[রাবী আবূ তাহির (রহঃ) সিজদা করার কথা উল্লেখ করেন নি।] এরপর দ্বিতীয় রাকআতও অনুরুপ করলেন। এভাবে তিনি (দু' রাক’আত) চার রুকু’ সিজদা পূর্ণ করেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদ হতে রেরিয়ে আসার পূর্বেই সূর্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এরপর দাঁড়িয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করলেন। আল্লাহ তা'আলার যথাযোগ্য হামদ ও সানা বর্ণনা করত বললেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনালীর মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে এদের গ্রহণ হয় না। তোমরা যখন গ্রহণ দেখতে পাও, তখন আতংকিত হয়ে সালাতের দিকে ছুটে যেও এবং তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের থেকে (সূর্য) পরিষ্কার না করা পর্যন্ত সালাত আদায় করতে থাক।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এখানে দাঁড়িয়ে ঐ সকল জিনিস দেখতে পেয়েছি যা তোমাদের সাথে ওয়াদা করা হয়েছে। এমনকি আমি দেখতে পেয়েছিলাম যে, আমি জান্নাতের আঙ্গুরের এক শুচ্ছ নিয়ে আসতে উদ্ধত হয়েছিলাম। যখন তোমরা আমাকে সম্মুখে অগ্রসর হতে দেখেছিলে। রাবী মুরাদী (রহঃ) أَتَقَدَّمُ বলেছেন। আমি জাহান্নামকে দেখতে পেলাম যে, এক অংশকে গ্রাস করছে। এটা সেই সময় যখন তোমরা আমাকে পিছু হটে আসতে দেখেছো।
আমর ইবনু লুহাইকে জাহান্নামে দেখেছি। সে হল ঐ ব্যাক্তি যে সর্বপ্রথম দেব-দেবীর নামে ষাড় ছেড়ে দিবার প্রথা চালু করেছিলেন। রাবী আবূ তাহির (রহঃ) "সালাতের দিকে ছুটে যেও" পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন, পরবর্তী অংশ বর্ণনা করেননি।
১৯৬৫. মুহাম্মদ ইবনু মিহরান রাযী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ লেগেছিল, তখন আস "সালাতূ জামিয়াতুন" বলে ডাকার জন্য তিনি আহবানকারী প্রেরণ করলেন। সবাই সমবেত হলেন। তিনি সম্মুখে অগ্রসর হলেন এবং তাকবীর বলে দু-রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং দু’ রাক”আতের মধ্যে চারটি রুকু’ ও চারটি সিজদা করলেন।
১৯৬৬. মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চন্দ্র গ্রহণের সালাতে কিরা'আত উচ্চস্বরে পাঠ করলেন এবং চার রাকআতের স্থলে দু' রাক'আত সালাত আদায় করলেন এবং চারটি রুকু ও চারটি সিজদা করলেন।
ইমাম যুহুরি (রহঃ) বলেন, কাসীর ইবনু আব্বাস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু' রাক'আত সালাতে চারটি রুকু ও চার সিজদা করেছেন।
১৯৬৭. হাজিব ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) ... কাসীর ইবনু আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিনের সালাত সম্পর্কে বর্ণনা করতেন, যেদিন সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। উরওয়া (রহঃ) কর্তৃক আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
১৯৬৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। তিনি দাঁড়াতেন এরপর রুকু করতেন, আবার দাঁড়াতেন আবার রুকু করতেন আবার দাঁড়াতেন এভবাবে দু' রাকআত সালাত আদায় করলেন। প্রতি রাক'আতে তিন রুকু’ দিয়ে ও চারটি করে সিজদা দিয়ে। এরপর তিনি প্রত্যাবর্তন করলেন এবং সুর্য পরিষ্কার হয়ে গেল।
যখন রুকু’ করতেন তখন আল্লাহু আকবার, বলতেন। আবার রুকু’ করতেন এবং মাথা উঠাবার সময় 'সামি আল্লাহু লিমান হামিদা' বলে দাঁড়িয়ে যেতেন। এরপর আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন এবং বলেন, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে হয় না। আর এটি হল আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্তুক্ত। এ দু'টি দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সর্তক করেন। অতএব যখন তোমরা সূর্যগ্রহণ দেখতে পাও, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, গ্রহণ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত।
১৯৬৯. আবূ গাসসান আন-মিসমায়ী ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছয়টি রুকু করেছেন এবং চারটি সিজদা করেছেন। প্রতি দু'রাকআতে তিনটি করে রুকু ও দু’টি করে সিজদা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১. সূর্যগ্রহনের সালাতে কবর আযাবের উল্লেখ
১৯৭০. আবদুল ইবনু মাসলামা কা’নাবী (রহঃ) ... জনৈকা ইয়াহুদী মহিলা আয়িশা (রাঃ) এর নিকট প্রশ্ন করতে এসে বলল, "আল্লাহ তোমাকে কবরের আযাব হতে রক্ষা করুন।" আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! মানুষকে কবরে আযাব দেয়া হবে কি? আমর বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ারীতে আরোহণ করলেন তখন সূর্যগ্রহণ দেখা দিল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি কয়েকজন মহিলাসহ বের হয়ে মসজিদের সে অংশে গেলাম যা হুজরার পাশ্চাৎভাগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাওয়ারী হতে নেমে যেখানে তিনি সালাত আদায় করতেন সে মূসাল্লায় পৌছলেন এবং সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। লোকেরাও তাঁর পিছনে দাঁড়ালেন।
আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর রুকু করলেন এবং রুকু করলেন অতি দীর্ঘ। তারপর মাথা তুললেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিন্তু এটা ছিল প্রথম দাঁড়ান হতে কিছু কম। আবার রুকু’ করলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকু’ করলেন। কিন্তু পূর্বের তুলনায় কিছু কম। এরপর মাথা তুললেন। তখন সূর্য পরিস্কার হয়ে গিয়েছে।
তখন তিনি বললেন, আমি দেখেছি তোমরা কবরে মহা পরীক্ষার সম্মুর্খীন হবে। যেমন তোমরা দাজ্জালের ফিতনার সম্মুখীন হবে। আমর বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাহান্নামের আযাব এবং কবরের আযাব হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাইতে শুনতাম।
১৯৭১. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইয়াহয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে সুলায়মান ইবনু বিলালের হাদীসের অনুরূপ অর্থবিশিষ্ট হাদিস বর্ণনা করেছেন।
১৯৭২. ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আদ দাওরাকী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। দিনটি ছিল ভীষণ গরম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। কিয়াম অত্যন্ত দীর্ঘ করলেন, অনেক সাহাবী দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর কারণে ঘুরে পড়ে যেতে শুরু করলেন। তারপর তিনি রুকু’তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকলেন। এরপর মাথা উঠালেন এবং অনেকক্ষণ দাঁড়ালেন। তারপর দুটি সিজদা করলেন। আবার দাঁড়িয়ে পূর্বের ন্যায় (কিয়াম ও রুকু) করলেন। এমতাবস্থায় দু'রাকআতে মোটি চার রুকু ও চার সিজদা হয়েছিল।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সেসব স্থানে প্রবেশ করবে যেসব স্থান আমাকে দেখান হয়েছে। আমার সামনে জান্নাত পেশ করা হয়েছিল। আমি সেখান থেকে একটি আঙ্গুর ধরতে চেয়েছিলাম। অথবা তিনি বলেছেন, একটি শাখা ধরতে চাইলে আমার হাত সে পর্যন্ত পৌছতে পারেনি এবং আমার সম্মুখে জাহান্নামও পেশ করা হয়েছিল।
সেখানে আমি বনী ইসরাঈলের জনৈকা মহিলাকে দেখতে পেলাম। বিড়ালের কারণে তাকে আযাব দেয়া হচ্ছিল। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল। তাকে খেতে দেয় নি ও ছেড়েও দেয় নি যাতে সে নিজে যমীনের কীট-পতঙ্গ খেয়ে বাঁচতে পারে। আর আমি দেখেছি আবূ সূমামা আমর ইবনু মালিককে। সে জাহান্নামের মধ্যে নিজের নাড়ি ভূড়ি নিয়ে হেচড়িয়ে চলেছে। আর লোক বলতো, কোন মহান ব্যক্তির মৃত্যু ব্যতীত চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ হয় না। অথচ এ দুটি হল আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যকার দুটি নিদর্শন। যা তোমাদেরকে দেখান হয়। যখনই এ দুটি গ্রহণ দেখা দেয়, তখন পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সালাত আদায় করতে থাকবে।
১৯৭৩. আবূ গাসসান মিসমায়ী (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন যে, (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন), আমি হিমাইয়ারী গোত্রের কালো দীর্ঘদেহী এক মহিলাকে জাহান্নামে দেখলাম। মহিলা বনী ইসরাঈলী ছিল এ কথা তিনি বলেন নি।
১৯৭৪. আবু বাকর ইবন আবু শায়রা ও মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। সেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূত্র ইবরাহীমের ইন্তিকাল হয়েছিল। তখন লোকেরা বলল, নিশ্চয়ই ইবরাহীমের ইন্তিকালের কারণে সূর্যগ্রহণ লেগেছে। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন এবং লোকদের নিয়ে ছয় রুকু ও চার সিজদায় সালাত আদায় করলেন।
সালাত তাকবীর বলে আরম্ভ করলেন এবং কিরা'আত অত্যন্ত দীর্ঘ করলেন। এরপর রুকু’ করলেন। প্রায় কিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকুতে থাকলেন। এরপর রুকু থেকে মাথা উঠালেন এবং কিরাআত পড়লেন যা পূর্বাপেক্ষা কিছু কম। তারপর আবার রুকু করলেন, যা ছিল কিয়ামের সমপরিমান। এরপর তিনি রুকু হতে মাথা তুললেন এবং দ্বিতীয়বার হতে কিছু কম সময় কিরা'আত পড়লেন। আবার রুকু করলেন এবং কিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকুতে থাকলেন।
এরপর রুকু থেকে মাথা উঠালেন ও সিজদায় গেলেন এবং দুটি সিজদা করলেন। এরপর দাঁড়ালেন এবং তিনটি রুকু’ করলেন এবং প্রতি আগের রুকু পরের রুকু অপেক্ষা দীর্ঘ হত। রুকু ছিল সিজদার সমপরিমাণ।
অতঃপর পিছনের দিকে সরে এলেন কাতারগুলো ও পিছনে সরে গেল শেষ সীমা পর্যন্ত। [আবু বকর (রাঃ) বলেন, মহিলাদের কাতার পর্যন্ত গেলেন অতঃপর পূর্বের স্থানে এলেন] লোকেরাও তাঁর সাথে এলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্ব স্থানে এসে দাঁড়ালেন। সালাত শেষ করে তিনি যখন ফিরে এলেন তখন সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে লোক সকল! সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে দুঁটি নির্দশন। এ দুটি গ্রহণ কোন ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে হয় না। [আবু বকর (রাঃ) বলেছেন, (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "কোন মানুষের মৃত্যুর কারণে" (এ দুটো গ্রহণ হয় না)]। যখন তোমরা এরূপ কিছু দেখ, তখন সূর্য পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতে থাক।
তোমাদের প্রতি যা কিছু ওয়াদা করা হয়েছে আমি এ সালাতে দেখতে পেয়েছি। আমার কাছে জাহান্নাম উপস্থিত করা হয়েছিল এবং তা ঘটেছিল যখন তোমরা আমাকে দেখেছ পেছনের দিকে সরে আসতে। কেননা আমার ভয় ছিল যে, আগুনের লেলিহান শিখা আমাকে স্পর্শ করবে। তাছাড়া আমি সেখানে লৌহ শলাকাধারী ব্যক্তিকে দেখেছি, সে জাহান্নামে তার নাড়িভূড়ি হেচড়িয়ে চলছে। সে ব্যক্তি লৌহ শলীকা দিয়ে হাজীদের মালামাল চুরি করত। যদি মালিক টের পেত তাহলে সে বলত, আমার লৌহশলাকায় আটকা পড়েছো আর টের না পেলে নিয়ে চলে যেত। আমি জাহান্নামে দেখেছি মহিলাকে যে বিড়াল বেঁধে রেখেছিল। সে বিড়ালটিকে খেতে দেয় নি, ছেড়েও দেয় নি, যাতে সে যমীনের কীট-পতঙ্গ খেতে পারে। এভাবে ক্ষুধায় সে মারা যায়।
এরপর আমার সম্মুখে জান্নাত হাযির করা হল। যখন তোমরা আমাকে সম্মুখে অগ্রসর হতে এবং পূর্ব স্থানে দাঁড়ান অবস্থায় দেখেছ। তখন আমি আমার হাত প্রসারিত করেছিলাম। আমি ফল আনতে ইচ্ছা করেছিলাম, যেন তোমরা দেখতে পার। এরপর মনে হল এমনটি না করাই উচিত। তোমাদেরকে যত জিনিসের ওয়াদা করা হয়েছে, সবই এ সালাতের সময় আমি দেখেছি।
১৯৭৫. মুহাম্মাদ ইবনু আলা আন-হামদানী (রহঃ) ... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। আমি আয়িশার গৃহে গমন করলাম। তিনি তখন সালাত আদায় করছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষের কি হয়েছে তারা সবাই সালাত আদায় করছে! তিনি মাথা নেড়ে আকাশের দিকে ইংগিত করলেন। আমি বললাম, কোন বিশেষ ঘটনা ঘটেছে কি? তিনি ইশারা করলেন, হ্যাঁ।
ঐ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন এবং কিয়াম অত্যন্ত দীর্ঘ করছিলেন। এমনকি আমি প্রায় বেহুশ হয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমার পাশে একটি পানি পাত্র নিলাম এবং তা থেকে আমার মাথায় ও মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিলাম। আসমা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রত্যাবর্তন করলেন তখন সূর্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। আল্লাহ পাকের হামদ ও সানা বর্ণনা করার পর বললেন, আমি যে সব জিনিস দেখি নি, সবই আজ এ স্থানে দেখেছি। জান্নাত ও জাহান্নামও দেখেছি। আর আমাকে জানানো হয়েছে যে, তোমরা কবরে ভীষণ পরীক্ষার সম্মুখীন হবে মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার কাছাকাছি বা এর অনুরূপ।
(রাবী বলেন), আমি জানি না আসমা (রাঃ) কোনটি বলেছিলেন। তোমাদের প্রত্যেকের কাছে ফেরেশতা আসবেন এবং বলবেন, ঐ ব্যক্তি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি জান? রাবী বলেছেন আসমা (রাঃ) মুমিন অথবা মু'কিন (বিশ্বাসী) কোনটি বলেছেন তা আমার জানা নাই। সে বলবে, তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমাদের জন্য হিদায়াত ও নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাঁর দাওয়াত গ্রহণ ও আনুগত্য স্বীকার করেছিলাম। এ কথা তিনবার বললেন। তখন তাকে বলা হবে নিদ্রায় থাক। আমরা জানতাম তুমি তার উপর ঈমান এনেছিলে। তুমি উত্তমরূপে ঘুমিয়ে থাক। আর মুনাফিক অথবা সন্দেহ পোষণকারী বলবে, আমি জানি না। [রাবী বলেন, আসমা (রাঃ) যে কোন শব্দ বলেছিলেন, তা আমার জানা নেই।] মানুষকে একটি কথা বলতে শুনেছি তাই আমিও বলেছি।
১৯৭৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে এলাম। আমি লোকদের সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। আয়িশাকেও সালাতে দেখলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষের কি হয়েছে? এর পর তিনি হিশাম সুত্রে ইবনু নূমায়েরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন।
১৯৭৭. ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, [সূর্যগ্রহণ বুঝানোর জন্য] "কাসাফাতিশ শামস" না বলে তোমরা বলতে "খাসাফাতিশ শামস"।
১৯৭৮. ইয়াহয়া ইবনু হাবিব হারিসী (রহঃ) ... আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। রাবী বলেন, অর্থাৎ সে দিন যে দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তিনি [তাড়াহুড়া করে] একটি লৌহবর্ম নিলেন। পরে তাঁকে পরিধানের জন্য একটি চাঁদর দেয়া হল। এরপর তিনি লোকদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ সালাতের দাঁড়ালেন যে, যদি কোন আগন্তুক আসে তাহলে সে বুঝতে পারত না যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু’ করেছেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর কারণে মনে হবে না যে তিনি রুকু’ করেছেন।
১৯৭৯. সাঈদ ইবনু ইয়াহয়া আল উমাবী (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) পূর্বোক্ত সনদে তদ্রুপ বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এও বলেছেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন তারপর রুকু থেকে উঠে দাঁড়ালেন, তারপর আবার রুকু করলেন। তবে রাবী অতিরিক্ত বলেছেন যে, (ঐ সময়ে) আমার চেয়েও অধিক বয়স্ক মহিলাদেরকে এবং রোগাক্রান্ত মহিলাদেরকে দেখতে পেলাম।
১৯৮০. আহমাদ ইবনু সাঈদ আদ দারিমী (রহঃ) ... আসমা বিনতে আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তিনি তা দেখে শংকিত হয়ে পড়েছিলেন। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়তে তিনি ভুলক্রমে লৌহবর্ম নিয়ে নিলেন। অবশেষে চাদর দিয়ে তাঁর ভুল শোধরানো হল। আসমা (রাঃ) বলেন, আমি তাড়াতাড়ি আমার প্রয়োজনাদি পূরণ করে নিলাম। এরপর এসে মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমিও দাঁড়িয়ে সালাতে শামিল হলাম। এরপর আমি (সেখানে) দুর্বল মহিলা দেখতে পেয়ে মনে মনে বললাম, এসব মহিলা তো আমার চেয়েও দুর্বল, কাজেই আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। এরপর তিনি রুকু করলেন এবং দীর্ঘ সময় রুকু করলেন। এরপর তিনি মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। (অবস্থা এমন দাঁড়াল যে) কেউ যদি বাহির হতে আসে তবে তার কাছে মনে হবে যে, তিনি রুকুই করেননি।
১৯৮১. সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করলেন। লোকেরা তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি এত দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন যে, এ সময়ের মধ্যে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা যায়। এরপর তিনি দীর্ঘ রুকু’ করলেন। এরপর তিনি মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন। কিন্তু পূর্বের কিয়াম হতে কিছু কম। এর পর আবার দীর্ঘক্ষণ রুকু’ করলেন। কিন্তু পূর্ব রুকু হতে কিছু কম।
এরপর সিজদা করলেন ও দীর্ঘ কিয়াম করলেন। কিন্তু পূর্বপেক্ষা কিছু কম। আবার দীর্ঘ রুকু করলেন কিন্তু প্রথম রুকু হতে কিছু কম। এরপর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করলেন। কিন্তু প্রথম কিয়ামের তুলনায় কিছু কম। আবার রুকু’ করলেন কিন্তু পুর্বের তুলনায় কম। তারপর সিজদা করলেন ও সালাত থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে হতে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু ও জন্মের কারণে এগুলোতে গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা গ্রহণ দেখতে পাও তখন আল্লাহর যিকর কর।
সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার এ অবস্থান থেকে আপনাকে কিছু নিতে দেখলাম। আবার আপনাকে দেখলাম, হাত গুটিয়ে নিতে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি জান্নাত দেখতে পেলাম এবং আঙ্গুর নিতে নিতে চাইলাম। যদি আমি তা নিতাম, তবে যত দিন দুনিয়া থাকত ততদিন তোমরা এ থেকে খেতে পারতে। এরপর জাহান্নাম দেখতে পেলাম। আজকের দিনের মত দৃশ্য আমি আর কখনো দেখিনি। আমি অধিক সংখ্যায়ে মহিলাদের জাহান্নামে দেখেছি। (উপস্থিত) মহিলাগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তা কেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের কুফরের কারণে। মহিলাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফর করে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না বরং তারা জীবন সহচরদের সাথেও কুফর করে এবং অনুগ্রহের প্রতি অকৃতজ্ঞ থাকে। তুমি যদি তাদের একজনের প্রতি সারা যুগ ধরে অনুগ্রহ কর, তারপর কখনো সামান্য ক্রটি দেখতে পায়, তখন সে বলে উঠে তোমার থেকে কখনো কোন ভাল ব্যবহার পাই নি।
১৯৮২. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে। তবে তিনি বলেন, "আমরা আপনাকে পিছু সরতে দেখলাম।"
১৯৮৩. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণকালে আট রুকু ও চার সিজদায় দু' রাক’আত সালাত আদায় করলেন। আলী (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।
১৯৮৪. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণকালে সালাত আদায় করলেন। কিরা'আত পড়লেন তারপর রুকু’ করলেন। আবার কিরা'আত পড়লেন এবং রুকু’ করলেন। আবার কিরা'আত পড়লেন এবং রুকু’ করলেন। তারপর সিজদায় গেলেন। রাবী বলেন পরবর্তী রাকা'আতও অনুরূপ।
১৯৮৫. মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যখন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, তখন সালাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ঘোষণা দেয়া হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক’আতে দু’ রুকু করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে দু’ রুকু করে আরেক রাকআত পড়লেন। এরপর সূর্য পরিস্কার হয়ে যায়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এর চেয়ে দীর্ঘ রুকু ও দীর্ঘ সিজদা আমি আর কখনো করি নি।
১৯৮৬. ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) ... আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে দুটি নিদর্শন। এরদ্বারা আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বান্দাদের সতর্ক করে থাকেন। এ দুটির গ্রহন কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারনে হয় না। যখন তোমরা এ গ্রহন দেখতে পাবে, তখন সালাত আদায় করে দু’আ করবে তোমাদের দুর্যোগ না কেটে যাওয়া পর্যন্ত।
১৯৮৭. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারি (রহঃ) ও ইয়াহইয়া হাবীব (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্য ও চন্দ্রের গ্রহন কোন বিশেষ ব্যাক্তির জন্ম বা মৃত্যুর কারনে হয় না। বরং এ হল আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে দুটি নিদর্শন। যখন তোমরা গ্রহন দেখতে পাও তখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর।
১৯৮৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) সকলেই ইসমাঈল (রহঃ) থেকে ঐ সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে সুফিয়ান ও ওয়াকী (রহঃ) এর বর্ণনায় আছে যে, যেদিন ইবরাহীম এর ইন্তেকাল হয় সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন মানুষ বলতে লাগল, সূর্যগ্রহন হয়েছে, ইবরাহীম এর মৃত্যুর কারণে।
১৯৮৯. আবূ আমির আশ-আরী আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ, মুহাম্মাদ ইবনুল আলী (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তিনি দাঁড়ালেন এ আশংকায় যে, কিয়ামতের মহাপ্রলয় বুঝি সংঘটিত হবে। তিনি (তাড়াতাড়ি) মসজিদে এলেন। অত্যন্ত দীর্ঘ কিয়াম, দীর্ঘ রুকু ও দীর্ঘ সিজদার সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। আমি আর কোন সালাতে কখনো এরূপ দেখিনি। এরপর তিনি (রাসুল) বলেন, আল্লাহর প্রেরিত এসব নিদর্শনাবলী কারো মৃত্যুর জন্য হয় না, কারো জন্মের জন্যও হয় না। তিনি এগুলো প্রেরণ করেন তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য। যখন তোমরা এসব নিদর্শনাবলীর কিছু দেখতে পাও তখন তোমরা আতংকিত হৃদয়ে আল্লাহর যিকর, দুআ ও ইস্তিগফারে মশগুল হও।
১৯৯০. উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় একবার আমি আমার তীর-ধনুক অনুশীলন করছিলাম। হঠাৎ সূর্যগ্রহন দেখা দিল। আমি তীর ধনুক রেখে দিলাম এবং মনে মনে বললাম, আজ সূর্যগ্রহণকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করেন, তা আমার দেখতে হবে। যখন আমি গিয়ে পৌছলাম তখন তিনি হাত তুলে দু'আ করেছিলেন এবং তাকবীর হামদ ও তাহলীল এ মশশুলে ছিলেন। তারপর সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দুটি সূরা পড়লেন এবং দু' রাক’আত সালাত আদায় করলেন।
১৯৯১. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশিষ্ট সাহাবা। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় আমি মদিনায় তীরন্দাজ অনুশীলন করছিলাম। এসময় সূর্যগ্রহণ ঘটল। আমি তীর-ধনূক রেখে দিলাম এবং বললাম, সূর্যগ্রহণকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করেন তা অবশ্যই দেখব। আমি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে আছেন। হাত তুলে তিনি তাসবীহ, হামদ, তাহলীল, তাকবীর ও দু'আয় মশশুল আছেন। এরপর সূর্যগ্রহণ কেটে যাওয়ার পর তিনি দুটি সূরা পড়লেন ও দু'রাক'আত সালাত আদায় করলেন।
১৯৯২. মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলে তীর ধনুকের অনুশীলন করছিলাম। হঠাৎ সুর্যগ্রহণ দেখা দিল। এর পর উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করলেন।
১৯৯৩. হারূন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন যে, তিনি বলেছেন, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কোন ব্যাক্তির মৃত্যু ও জন্মের কারণে হয় না। বরং এ দুটি হল আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শন। যখন তোমরা গ্রহণ দেখতে পাও তখন সালাত আদায় কর।
১৯৯৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... যিয়াদ ইবনু ইলাকা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুগীরা ইবনু তুবা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তার ছেলে ইব্রাহীমের ইন্তিকালের দিন সুর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে দুটি নিদর্শন। এর গ্রহণ কারো মৃত্যুর বা জন্মের কারণে হয় না। যখন তোমরা গ্রহণ দেখতে ,পাও তখন দু'আ কর, সালাত আদায় কর, যে পর্যন্ত না তা পরিষ্কার হয়।
No comments: