Breaking News
recent

জমা’আতে শামিল হওয়া

জমা’আতে শামিল হওয়া
১।মাসআলাঃ নামাযের জমা’আতের খুব খেয়াল রাখিবে। জমা’আতের সমেয়ের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিবে। জমা’আত শুরু হওয়ার সময়ের কিছু পূর্বে মসজিদে পৌঁছিবে, সুন্নত পড়িবে বা তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়িবে এবং নামাযের আগে ও পরে কিছুক্ষণ চক্ষু বন্ধ করিয়া মাথা ঝুঁকাইয়া নামাযের বিষয়, খোদার দরবারে হাযিরের বিষয়ও চিন্তা করিবে, খোদার রহমত এবং নিজের দোষ-ত্রুটি দেখিবে। খেয়াল রাখা সত্ত্বেও যদি (দৈবাৎ কোন দিন দেরী হইয়া যায় এবং) মসজিদে গিয়া দেখে যে, জমা’আত হইয়া গিয়াছে, তবে (ঐ মসজিদে ছানী জমা’আত করা সুন্নতের খেলাফ) জমা’আতের তালাশে অন্য মসজিদে যাওয়া মোস্তাহাব, বাড়িতে ফিরিয়া বাড়ির ছেলেপেলেদের এবং মেয়েলোকদের লাইয়াও জমা’আত করিতে পারে (বা মসজিদেই একা চুপে চুপে নামায পড়িয়া আসিতে পারে। জমা’আতের খেয়াল ছিল বলিয়া জমা’আত তরকের গোনাহ হইবে না।)
২।মাসআলাঃ ঘটনাক্রমে বাড়িতে একা ফরয নামায পড়িয়া যদি মসজিদে আসিয়া দেখে যে, মসজিদে জমা’আত হইতেছে বা এখনই হইবে। তখন যদি যোহর বা এশার নামায হয়, তবে তো তাহার জমা’আতে শরীক হওয়া উচিত, এই নামায তাহার নফল হইয়া যাইবে; আর যদি ফজর, আছর বা মাগরীবের নামায হয়, তবে জমা’আতে শরীক হইবে না; কেননা, ফজর এবং আছরের পর নফল পড়া মকরূহ এবং মগরিবের নামায তিন রাকা’আত অথচ তিন রাকা’আত নফল শরীঅতে নাই।
৩।মাসআলাঃ কেহ ফরয নামায শুরু করিয়াছে, তারপর ঐ নামাযেরই জমা’আত শুরু হইল, এখন তাহার কি করা ‍উচিত? যদি দুই বা তিন রাকা’আতওয়ালা নামায হয় এবং যদি এখন সে দ্বিতীয় রাকা’আতের সজদা না করিয়া থাকে, তবে তৎক্ষণাৎ (ডান দিকে এক সালাম ফিরাইয়া) জমা’আতে শরীক হইবে।
আর যদি দ্বিতীয় রাক’আতের সজদা করিয়া থাকে, তবে ঐ নামাযই পুরা করিতে হইবে, (জমা’আতে শরীক হইবে না।) আর যদি চারি রাকা’আতওয়ালা নামায হয় এবং প্রথম রাকা’আতের সজদা না করিয়া থাকে, তবে তৎক্ষণাৎ ডান দিকে এক সালাম ফিরাইয়া জমা’আতে শরীক হইবে; কিন্তু যদি এক সজদাও করিয়া থাকে, তবে তাহার দুই রাকা’আতই পূর্ণ করিয়া সালাম ফিরাইয়া জমা’আতে শরীক হইবে।
যদি দুই রাকা’আত পূর্ণ করিয়া তৃতীয় রাকা’আতের জন্য দাঁড়াইয়া থাকে এবং এখনও তৃতীয় রাকা’আতে সজদা না করিয়া থাকে, তবে ঐ দণ্ডায়মান অবস্থায়ই সালাম ফিরাইয়া জমা’আতে শরীক হইতে হইবে; কিন্তু যদি তৃতীয় রাকা’আতের সজদা করিয়া থাকে, তবে ঐ নামায ছাড়িতে পারিবে না, চারি রাকা’আত পূর্ণ করিতে হইবে। তখন যদি যোহর বা এশার ওয়াক্ত হয়, তবে চারি রাকা’আত পূর্ণ করিয়া সালাম ফিরাইয়া পুনরায় জমা’আতে শরীক হইতে হইবে, আর যদি আছরের ওয়াক্ত হয়, তবে চারি রাকা’আত পূর্ণ করিয়া জমা’আতে শরীক হইতে পারিবে না।
৪।মাসআলাঃ যদি সুন্নত বা নফল নামায শুরু করিবার পর, জমা’আত বা জুমু’আর খোৎবা শুরু হয়, তবে সেই নামায ছাড়িবে না, দুই রাকা’আত পূর্ণ করিয়া সালাম ফিরাইয়া তারপর জমা’আতে শরীক হইবে, যদি চারি রাকা’আতের নিয়্যত বাঁধিয়া থাকে, তবুও দুই রাকা’আত পড়িয়া সালাম ফিরাইয়া জমা’আতে শরীক হইবে। আর যদি চারি রাকা’আতের নিয়্যত বাঁধিয়া থাকে এবং তৃতীয় রাকা’আতের জন্য দাঁড়াইয়া থাকে; তারপর জমা’আত (বা জুমু’আর খোৎবা) শুরু হয়, তবে চারি রাকা’আতই পূর্ণ করিবে।
৫।মাসআলাঃ যদি যোহর বা জুমু’আর সুন্নতে মোয়াক্কদা চারি রাকা’আত শুরু করার পর, জুমু’আর খোৎবা বা যোহরের জমা’আত শুরু হয় এবং খোৎবা শুনে, তবে দুই রাকা্’আতের পর সালাম ফিরাইয়া গিয়া জুমু’আতে শরীক হইবে। তবে ফরযের পর পুনরায় এই চারি রাকা’আত পড়িতে হইবে। কিন্তু যদি আছর বা এশার সুন্নত চারি রাকা’আতের নিয়্যত করার পর জমা’আত শুরু হওয়ার কারণে দুই রাকা’আত পড়িয়া সালাম ফিরাইয়া জমা’আতে শরীক হয়, তবে অবশিষ্ট দুই রাকা’আত আর পড়িতে হইবে না।
৬।মাসআলাঃ ফরয নামায শুরু হইলে তখন আর সুন্নত বা নফল অন্য কোন নামায হইতে পারে না। (অবশ্য আগের ওয়াক্তের ফরয নামায যদি কোন কারণবশতঃ না পড়িয়া থাকে, তবে শুধু ফরয রাকা’আতগুলি পড়িয়া লইতে হইবে তারপর জমা’আতে শরীক হইতে হইবে, কিন্তু ফজরের সুন্নতের খুব বেশী তাকীদ আসিয়াছে, সেই জন্য যদি সুন্নত পড়িয়া জমা’আতের সঙ্গে এক রাকা’আতও পাওয়ার আশা থাকে এবং সন্নিকটে নামায পড়িবার জায়গা থাকে বা মসজিদের বারান্দা থাকে, তবে সেইখানে সুন্নত পড়িয়া লইবে, (কিন্তু যদি এক রাকা’আতও পাইবার আশা না থাকে, তবে ঐ সময় সুন্নত পড়িবে না, ফজরের জমা’আতে শামিল হইয়া যাইবে এবং সুন্নত সূর্যোদয়ের পূর্বে পড়িবে না, বেলা উঠিবার পর পড়িবে। কিন্তু কর্মব্যস্ত লোক হইলে এবং পরে পড়িবার সুযোগ পাইবার আশা না থাকিলে, যদি ফরযের পরই পড়িয়া লয়, তবে তাহাকে নিষেধ করিবে না।) জমা’আত শুরু হইয়া যাওয়ায় যদি যোহরের পূর্বের চারি রাকা’আত সুন্নত থাকিয়া যায় তবে তাহা ফরযের পরবর্তী দুই রাকা’আত সুন্নতের পরে পড়াই ভাল।
৭।মাসআলাঃ যদি ভয় হয় যে, ফজরের সুন্নতের সমস্ত মোস্তাহাব এবং সুন্নত আদায় করিয়া পড়িতে গেলে জমা’আত ছুটিয়া যাইবে, তবে মোস্তাহাব এবং সুন্নত বাদ দিয়া, শুধু ফরয এবং ওয়াজিব আদায় করিয়া সুন্নত পড়িয়া লইবে। অর্থাৎ, রুকূ সজদার তসবীহ না পড়িয়া, শুধু তাশাহহুদ পড়িয়া ছালাম ফিরাইয়া নামায শেষ করিবে। দুরূদ ও দো’আ মাছুরা পড়িবে না।
৮।মাসআলাঃ জমা’আত হওয়াকালীন তথায় অন্য কোন নামায পড়া মকরূহ তাহরীমী। কাজেই ফজরের জমা’আত শুরু হইয়া গেলে, যদি ফজরের সুন্নত পড়িতে হয়, তবে বারান্দায় বা বাহিরে পড়িবে। একান্ত যদি জায়গা না পাওয়া যায়, তবে পিছনের এক কোণে গিয়া পড়িবে, কাতারে দাঁড়াইয়া পড়িবে না।
৯।মাসআলাঃ জমা’আতের সঙ্গে যদি আখেরী বৈঠক (ক্বা’দায়ে আখিরা) পায়, তবুও জমা’আতের ছওয়াব পাইবে।
১০।মাসআলাঃ ইমামের সঙ্গে যে রাকাআতের রুকূ পাইবে সে রাকা’আত পাওয়ার মধ্যে গণ্য হইবে, কিন্তু যদি রুকূ না পাওয়া যায়, তবে সে রাকা’আত পাওয়ার হিসাবের মধ্যে ধরা যাইবে না, (অবশ্য শরীক হইয়া যাইতে হইবে এবং পরে আবার সেই রাকা’আত পড়িতে হইবে।

No comments:

Powered by Blogger.