Breaking News
recent

বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ কোমল হওয়া অধ্যায় ২ (৬০২৩-৬০৭৫)

 হাদিস ৬০২৩

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেন। তিনি বলেছেনঃ তোমরা ঠিক ঠিকভাবে মধ্যম পন্থায় আমল করতে থাক। আর সুসংবাদ নাও। কিন্তু (জেনে রেখো) কারো আমল তাকে জান্নাতে নেবে না। তারা বললেনঃ তবে কি আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ তায়াআলা আমাকে মাগফিরাত ও রহমতে ঢেকে রেখেছেন। তিনি বলেছেনঃ এটিকে আমি ধারণা করছি আবূ নাযর আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আফফান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) -নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তোমরা সঠিকভাবে আমল কর আর সুসংবাদ নাও।

হাদিস ৬০২৪

ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর মিম্বরে উঠে মসজিদের কিবলার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ যখন আমি তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম, তখন এ প্রাচীরের সান্মুখে আমাকে জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখানো হল। আনি আজকের মত ভাল ও মন্দ আর কোন দিন দেখিনি। এ শেষ কথাটি তিনি দু-বার বললেন।

হাদিস ৬০২৫

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তাআলা রহমত সৃষ্টির দিন একশটি রহমত সৃষ্টি করেছেন। নিরানব্বইটি তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন এবং একটি রহমত সমন্ত সৃষ্টির মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। যদি কাফির আল্লাহর কাছে সুরক্ষিত রহমত সম্পর্কে জানে তাহলে সে জান্নাত লাভ থেকে নিরাশ হবে না। আর মুমিন যদি আল্লাহর কাছে শাস্তি সম্পর্কে জানে তা হলে সে জাহান্নাম থেকে বে-পরওয়া হবে না।

হাদিস ৬০২৬

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ননা করেন। একবার আনসারদের কিছু সংখ্যক লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যা চাইলেন, তিনি তা-ই দিলেন, এমন কি তাঁর কাছে যা কিছুছিল তা শেষ হয়ে গেল। যখন তাঁর দু-হাত দিয়ে দান করার পর সবকিছু শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে যা কিছু মালামাল থাকে, তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্য যে নিজেকে মুখাপেক্ষি তাতে রাখতে চায়, আল্লাহ তাকে তাই রাখেন; আর যে ব্যাক্তি ধৈর্য ধারণ করে তিনি তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে ব্যাক্তি পরনির্ভর হতে চায় না, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। সবর অপেক্ষা বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কস্মিনকালেও তোমাদেরকে দান করা হবে না।

হাদিস ৬০২৭

খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) যিয়াদ ইবনু ইলাকাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তাঁর পদযুগল ফূলে যেত। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতেন:আমি কি অত্যধিক কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?।

হাদিস ৬০২৮

ইসহাক (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক- যারা ঝাড়ফুকের শরণাপন্ন হয় না, কুযাত্রা মানে না এবং নিজেদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।

হাদিস ৬০২৯

আলী ইবনু মুসলিম (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-এর কাতিব ওয়াররাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুয়াবিযা (রাঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-কে লিখলেন যে, আপনি আমার কাছে একটা হাদীস লিখে পাঠান, যা আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) তাঁর কাছে লিখে পাঠালেন, আমি নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত (নামায/নামাজ) থেকে ফিরার সময় বলতে শুনেছি। “আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং হামদ তাঁরই। তিনি সবার উপর শক্তিমান। আর তিনি নিষেধ করতেন অনর্থক কথাবার্তা, অধিক সাওয়াল, মালের অপচয়, উচিত বস্তুকে দেওয়া। অনুচিতকে চাওয়া, মাতাপিতার অবাধ্যতা এবং কন্যাদেরকে জীবিত কবর করা থেকে। হুশায়ম (রহঃ) আবদুল মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ওয়াররাদ (রাঃ)-কে আন মুগীরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি।

হাদিস ৬০৩০

মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমার (সন্তুষ্টির) জন্য তার দু-চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহবা) এবং দু-এরানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্হান) এর হিফাযত করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি।

হাদিস ৬০৩১

আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নয়তো নীরব থাকে। এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে।

হাদিস ৬০৩২

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ সুরাইয়া আল খুযায়ী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমার কান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছে এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষন করেছে, মেহমানদারী তিন দিন, সৌজন্য সহ জিজ্ঞাসা করা হলো, সৌজন্য কি? তিনি বললেনঃ এক দিন ও এক রাত (বিশেষ আতিথেয়তা)। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানেরু সম্মান করে আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে।

হাদিস ৬০৩৩

ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুয়লুল্লাহ -কে বলতে শুনেছেন যে- নিশ্চয় বান্দা এমন কথা বলে যার পরিনাম সে চিন্তা করে না অথচ এ কথার কারণে সে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব মাশরিক-এর দূরত্বের চাইতে অধিক।

হাদিস ৬০৩৪

আবদুল্লাহ ইবনু মুগীর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা উচ্চারন করে অথচ সে কথার গুরুত্ব সম্পর্কে চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা অনেক গুন বাড়িয়ে দেন। আবার বান্দা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কোন কথা বলে ফেলে যার পরিনতি সম্পর্কে সে সচেতন নয়, অথচ সে-কথার কারণে সে জাহান্নামে পতিত হবে।

হাদিস ৬০৩৫

মুহাম্মাদ ইরন বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নযী বলেছেনঃ সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তা-আলা ছায়া দেবেন। এক জাতীয় ব্যাক্তি হবে আল্লাহর যিকর করে চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত করল।

হাদিস ৬০৩৬

উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের এক ব্যাক্তি ছিল, যে তার আমল সম্পর্কে তুচ্ছ ধারনা পোষণ করত। সে তার পরিবারের লোকদেরকে বলল, যখন আমি মারা যাবো, তখন তোমরা আমাকে নিয়ে (জ্বালিয়ে দিবে) অতঃপর প্রচণ্ড গরমের দিনে আমার ভস্মগুলো সমুদ্রে ছিটিয়ে দেবে। তার পরিবারের লোকেরা সে অনুযায়ী কাজ করলো। অতঃপর আল্লাহ তায়াআলা সেই ভস্ম একত্রিত করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি যা করলে, তা কেন করলে, সে বললো, একমাত্র আপনার ভিতি আমাকে এটিতে বাধ্য করেছে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে করলেন।

হাদিস ৬০৩৭

মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব অথবা তোমাদের পূর্ন যুগের এক ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাকে ধন-সস্পদ ও সন্তানাদি দান করেছিলেন। যখন সে মৃত্যুর সম্মুর্খীনহল তখন সে তার সন্তানদেরকে জিজ্ঞাসা করলো, আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলল, উত্তম। সে বললো, যে আল্লাহর কাছে কোন সম্পদ সঞ্চয় রাখেনি, সে আল্লাহর কাছে হাযির হলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন। তোমরা লক্ষ্য রাখবে, আমি মারা গেলে আমাকে জালিয়ে দেবে। আমি যখন কয়লা হয়ে যাব তাকে ছাই ভস্ম করে ফেলবে। অতঃপর যখন প্রবল বাতাস বইবে, তখন তোমরা তা তাতে উড়িয়ে দেবে। এভাবে সে তাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিল। বাযী বলেনঃ আমার প্রতিপালকের কসম! তারা যথাযথ তাই করল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বললেনঃ অস্বিত্তে এসে যাও। হঠাৎ এক ব্যাক্তিরুপে দণ্ডায়মান হল। তখন তিনি বললেনঃ হে আমার বান্দা! তুমি এমনটি কেন করলে? সে বললো তা একমাত্র আপনার ভয়ে। তখন তিনি এর প্রতিদানে তাকে ক্ষমা করে দিলেন আপনার ভীতি অথবা আপনার থেকে সরে থাকার কারণে। আমি আবূ উসমানকে বর্ণনা করেছি, তিনি বলেছেনঃ আমি সালমানকে অনেছি, তিনি এতদ্ব্যতীত অতিরিক্ত করেছেন আমার ভম্মগুলো সমুদ্রে ছিটিয়ে দেবে। অথবা তিনি যেমনটি বর্ণনা করেছেন। মু’আয (রহঃ) উকবা (রহঃ) বলেনঃ আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-কে শুনেছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে।

হাদিস ৬০৩৮

মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ মূসা আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও আমাকে যা দিয়ে আল্লাহ পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হলো এমন ব্যাক্তির মত, যে তার কওমের কাছে এসে বললো, আমি স্ব-চক্ষে শত্রু সেনাদলকে দেখেছি আর আমি স্পষ্ট সতর্ককারী। সূতরাং তোমরা সত্বর আজ রক্ষার ব্যবস্হা কর। অতঃপর একদল তার কথায় সাড়া দিয়ে শেষ রজনীতে নিরাপদ গন্তব্যে পৌছে বেঁচে গেল। এদিকে আরেক দল তাকে মিথ্যারোপ করে, যদ্দরুন তাদেরকে ভোর বেলায় শত্রুসেনা এসে সমূলে নিপাত করে দিল। 

 হাদিস ৬০৩৯

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, আমার ও লোকদের দৃষ্টান্ত এমন ব্যাক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো আর যখন তার চতূর্দিক আলোকিত হয়ে গেল, তখন পতঙ্গ ও ঐ সমস্ত প্রানী যেগুলো আগুনে পড়ে, তারা তাতে পড়তে লাগলো। তখন সে সেগুলোকে আগুন থেকে বাচাবার জন্য টানতে লাগলো। কিন্তু তারা আগুনে পূড়ে মরলো। তদ্রুপ আমি তোমাদের কোমরে ধরে দোযখের আগুন থেকে বাচাতে চেষ্টা করি অথচ তারা তাতেই প্রবেশ করবে।

হাদিস ৬০৪০

আবূ নূয়াঈম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমান (প্রকৃত) সেই ব্যাক্তি, যার যবান ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির (প্রকৃত) সে, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করে।

হাদিস ৬০৪১

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে তবে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম আর কাদতে বেশি।

হাদিস ৬০৪২

সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে তবে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম আর কাদতে বেশি।

হাদিস ৬০৪৩

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নাম প্রবৃত্তি দিয়ে বেষ্টিত। আর জান্নাত বেষ্টিত দুঃখ-ক্লেশ দিয়ে।

হাদিস ৬০৪৪

মূসা ইবনু মাসউদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত তোমাদের কারো জুতার ফিতার চাইতেও বেশি কাছাকাছি আর জাহান্নামও তদ্রুপ।

হাদিস ৬০৪৫

মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বাধিক সত্য কবিতা যা জনৈক কবি বলেছেনঃ তোমরা জেনে রেখো আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই অনর্থক।

হাদিস ৬০৪৬

ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো দৃষ্টি যদি এমন ব্যাক্তির উপর নিপতিত হয়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে বেশি মর্যাদা দেয়া হয়েছে তবে সে যেন এমন ব্যাক্তির দিকে তাকায়, যে তার চেয়ে হীন অবস্হায় রয়েছে।

হাদিস ৬০৪৭

আবূ মা-মার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হাদীসে কুদসী স্বরুপ) তার রব থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা নেকী ও বদীসমূহ চিহ্নিত করেছেন। এরপর সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন সূতরাং যে ব্যাক্তি কোন সং কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে এর জন্য পূর্ন নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর সে ইচ্ছা করল ভাল কাজের এবং তা বাস্তবেও পরিণত করল তবে আল্লাহ তাঁআলা তার কাছে তার জন্য দশ গুন থেকে সাতশ- গুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অনেক গুণ বেশি সাওয়াব লিখে দেন। আর যে ব্যাক্তি কোন অসৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তাআলা তার কাছে তার জন্য পূর্ন নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর যদি সে ওই অসৎ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে ফেলে, তবে তার জন্য আল্লাহ তাঁআলা মাত্র একটা পাপ লিখে দেন।

হাদিস ৬০৪৮

আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) বলেনঃ তোমরা এমন সব কাজ করে থাক, যা তোমাদের চোখে চুল থেকেও সূক্ষ্ম দেখায়। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যমানায় আমরা এগুলোকে ধবংসাত্মক মনে করতাম। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন অর্থাৎ “ধ্বংসাত্বক”।

হাদিস ৬০৪৯

আলী ইবনু আইয়্যাস (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দঁ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের সাথে যুদ্ধরত এক ব্যাক্তির দিকে তাকালেন। সে ব্যাক্তি অন্যান্য লোকের চাইতে ধনী ছিল। তিনি বললেনঃ কেউ যদি জাহান্নামী লোক দেখতে চায়, সে যেন এই লোকটিকে দেখে। (এ কথা শুনে) এক ব্যাক্তি তার পেছনে পেছনে যেতে লাগল। সে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে আহত হয়ে গেল। সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করল, সে তারই তরবারীর অগ্রভাগ বুকে লাগিয়ে উপূড় হয়ে সজোরে এমনভাবে চাপ দিল যে, তলোয়ারটি তার বক্ষস্থল ভেদ করে পার্শ্বদেশ অতিক্রম করে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন বান্দা এমন কাজ করে যায়, যা দেখে লোকেরা একে জান্নাতী লোকের কাজ মনে করে। কিন্তু বাস্তবে সে জাহান্নামিদের অন্তভুক্ত। আর কোন বান্দা এমন কাজ করে যায়, যা মানুষের চোখে জাহান্নামীদের কাজ বলে মনে হয়। অথচ সে জান্নাতী লোকদের অন্তর্ভূক্ত। নিশ্চয়ই মানুষের যাবতীয় আমল পরিণামের সাথে নির্ভরশীল।

হাদিস ৬০৫০

আবূল ইয়ামান ও মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একজন বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে আরয করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোন ব্যাক্তি সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেনঃ সে ব্যাক্তি যে নিজের জানো ও মাল দিয়ে জিহাদ করে, আর সে ব্যাক্তি যে পর্বতের কোন গুহায় তার রবের ইবাদত করতে থাকে এবং মানুষকে তার অনিষ্ট থেকে রেহাই দেয়। যুবায়দী সুলায়মান (রহঃ) ও নোমান (রহঃ) যূহরী (রহঃ) থেকে শুআইব (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। মামার (রহঃ) আবূ সায়ীদ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। ইউনুস (রহঃ), ইবনু মূসা ফির (রহঃ) ও ইয়াহইয়া ইবনু সায়ীদ (রহঃ) জনৈক সাহাবী কতৃক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অর্থাৎ আবূল ইয়ামানের হাদীসের ন্যায় কোন ব্যাক্তি সবচাইতে উত্তম বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬০৫১

আবূ নুয়াঈম (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রহঃ) বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে যখন মুসলমানের উত্তম সম্পদ হবে বকরির পাল। সে তা নিয়ে পাহাড়ী উপত্যকা ও বারি ভূমির অনুসরণ করবে, তার দ্বীনকে নিয়ে ফিতনা থেকে দুরে থাকার উদ্দেশ্যে।

হাদিস ৬০৫২

মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আমানত বিনষ্ট হয়ে যাবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করবে। সে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আমানত কেমন করে নষ্ট হযে যাবে, তিনি বললেনঃ যখন অযোগ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে, তখনই তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে।

হাদিস ৬০৫৩

মুহামাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) বর্ননা করেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে দুটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি তো আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষা করছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমানত মানুষের অন্তর্মুলে অগ্রোগামী হয়। তারপর তারা কুরআন থেকে জ্ঞান অর্জন করে। এরপর তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জ্ঞান অর্জন করে। আবার বর্ণনা করেছেন আমানত তুলে নেয়া সম্পর্কে, যে ব্যাক্তিটি (ঈমানদার) এক পর্যাইয়ে ঘূমালে পর, তার অন্তর থেকে আমানত তুলে নেয়া হবে, তখন একটি বিন্দুর মত চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। পুনরায় ঘূমাবে। তখন আবার উঠিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর তার চিহ্ন ফোস্কার মত অবশিষ্ট থাকবে। তোমার পাযের উপর গড়িয়ে পড়া অনার সূক্ষ চিহ্ন, যেটিকে তুমি ফেলা মনে করবে, অথচ তার মধ্যে আদো কিছু নেই। মানুষ কারবার করবে বটে, কেউ আমানত আদায় করবে না। তারপর লোকেরা বলাবলি করবে যে, অমূক বংশে লোকজন আমানতদার লোক রয়েছে। সে ব্যাক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করা হবে যে, সে কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিঁচক্ষণ, কতই না বাহাদুর? অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও থাকবে না। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার উপর এমন এক যমানা অতিবাহিত হয়েছে যে, আমি তোমাদের কারো সাথে বেচাকেনা করলাম, সেদিকে আক্ষেপ করতাম না। কারণ সে মুসলমান হাল ইসলামই আমার হক ফিরিয়ে দেবে। আর সে নাসরানী হলে তার শাসকই আমার হক ফিরিয়ে দেবে। অথচ বর্তমানে আমি অমুক অমুককে ছাড়া বেচাকেনা করি না।

হাদিস ৬০৫৪

আবূল হামাল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে -শুনেছি তিনি বলতেনঃ নিশ্চয়ই মানুষ তো উটের ন্যায়, যাদের মধ্য থেকে নাওয়ারীর উপযোগী একটি পাওয়া তোমার পক্ষে দূস্কর।

হাদিস ৬০৫৫

মূসা’দ্দাদ ও আবূ নূআয়ম (রহঃ) সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জুন্দুবকে বলতে শুনেছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। তিনি ব্যতীত আমি অন্য কাউকে “নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- এরুপ বলতে শুনিনি। আমি তার কাছে গেলাম এবং তাকে বলতে শুনলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি লোক শোনানো ইবাদত করে আল্লাহ তাঁআলা এর বিনিময়ে লোক শোনানো দিবেন। আর যে ব্যাক্তি লোক-দেখানো ইবাদত করবে আল্লাহ এর বিনিময়ে “লোক দেখানো দিবেন। 

 হাদিস ৬০৫৬

হুদবাহ ইবনু খালিদ (রহঃ) মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহযাত্রী ছিলাম। অথচ আমার ও তার মাঝখতেন ব্যবধান ছিল শুধু সাওয়ারীর গদির কাষ্ঠ-খণ্ড। তিনি বললেনঃ হে মুয়ায। আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ ওয়া সাদাইকা! তারপর আরও কিছুক্ষণ চলার পরে আবার বললেনঃ হে মুয়ায। আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ ওয়া সাদাইকা! তারপর আরও কিছুক্ষন চলার পর আবার বললেনঃ হে মুয়ায ইবনু জাবাল! আমিও আবার বললাম, লাব্বাইকা ইযা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ালাহ ওয়া সাদাইকা। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি জানো যে, বান্দার উপর আল্লাহর হক কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল অধিক জানেন। তিনি বললেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে এই যে, সে তারই ইবাদত করবে, এতে তার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না। এরপর আরও কিছুক্ষন পথ চলার আবার ডাকলেন, হে মুয়ায ইবনু জাবাল! আমি বললাম, লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি-বললেনঃ যদি বান্দা তা করে তখন আল্লাহর কাছে বান্দার প্রাপ্য কি হবে, তা কি তুমি জানো? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেনঃ তখন বান্দার হক আল্লাহর কাছে হল তাদেরকে আযাব না দেওয়া।

হাদিস ৬০৫৭

মালিক ইবনু ইসমাঈল ও মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঁআযবা- নামী একটি উইনী ছিল। তাকে অতিক্রম করে যাওয়া যেত না। একবার একজন বেদুঈন তার একটি উটে সাওয়ার হয়ে আসলে সেটি তার আগে চলে গেল। মুসলিমদের কাছে তা কঠোর মনে হল। তারা বলল যে, আযবা-কে তো অতিক্রম করে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তায়াআলার বিধান হলো, দুনিয়ার কোন জিনিসকে উস্থিত করা হলে তাকে পতিতও করা হয়।

হাদিস ৬০৫৮

মুহাম্মাদ ইবনু উসমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা-আলা বলেনঃ যে ব্যাক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে শক্রতা রাখবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করি। আমার বান্দা আমি যা তার উপর ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন-- করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে আমই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে। আর আমই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমই তার পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু সাওয়াল করে, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যে কোন কাজ করতে চাইলে এটাতে কোন রকম দ্বিধা সংকোচ করি-না যতটা দ্বিধা সংকোচ মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে করি। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার কষ্ট অপছন্দ করি।

হাদিস ৬০৫৯

সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে কিয়ামতের সাথে এ রকম। এ বলে তিনি আঙ্গুল দূটিকে প্রসারিত করে ইশারা করেন।

হাদিস ৬০৬০

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে কিয়ামতের সাথে এ রকম।

হাদিস ৬০৬১

ইয়াহইয়া ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ও কিয়ামতের আবির্ভাব এ রকম। অর্থাৎ এ দুটি আঙ্গুলের ন্যায়।

হাদিস ৬০৬২

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষন না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে, আর লোকজন তা প্রত্যক্ষ করবে, তখন সকলেই ঈমান নিয়ে আসবে। তখনকার সম্পর্কেই (আল্লাহ তালার বানী) “সেদিন তার ঈমান কাজে আসবে না, ইতিপূর্বে যে ব্যাক্তি ঈমান আনেনি, কিংবা যে ব্যাক্তি-ঈমানের মাধ্যমে কল্যান অর্জন করেনি। কিয়ামত সংঘটিত হবে এ অবস্থায় যে, দু-ব্যাক্তি (বেচা কেনার) জন্য পরস্পরের সামনে কাপড় ছড়িয়ে রাখবে। কিন্তু তারা বেচাকেনার সময় পাবে না। এমন কি তা ভাজ করারও অবকাশ পাবে না। আর কিয়ামত এমন অবস্হায় অবশ্যই কায়েম হবে যে, কোন ব্যাক্তিতার উটনীর দুধ দোহন করে ফিরে আসার পর সে তা পান করার অবকাশ পাবে না। আর কিয়ামত এমন অবস্হায় সংঘটিত হবে যে, কোন ব্যাক্তি (তার উটকে পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে) চৌবাচ্চা তৈরি করবে। কিন্তু সে এ থেকে পানি পান করানোর সুযোগ পাবে না। আর কিযামত এমন অবস্হায় কায়েম হবে যে, কোন ব্যাক্তি তার মুখ পর্যন্ত লোকমা উঠাবে, কিন্তু সে তা খেতে পারবে না।

হাদিস ৬০৬৩

হাজ্জাজ (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহব সাক্ষাত লাভ করা ভালবাসে, আল্লাহ তাঁআালাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা ভালবাসেন। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করে না, আল্লাহ তা-আলাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করেন না। তখন আয়িশা (রাঃ) অথবা তাঁর অন্য কোন সহধর্মিনা বললেনঃ আমরাও তো মৃত্যুকে পছন্দ করি না। তিনি বললেনঃ বিষয়টা এরুপ নয়। আসলে ব্যাপারটা হল এই যে, যখন মুমিন বান্দার মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার সম্মানিত হওয়ার সুসংবাদ শোনানো হয়। তখন তার সামনের সুসংবাদের চাইতে তার নিকট বেশি পছন্দনীয় কিছু থাকে না। সুতরাং সে তখন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করাকেই পছন্দ করে, আর আল্লাহ তাঁআলাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা ভালবাসেন। আর কাফিরের যখন অন্তিমকাল উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর আযাব ও শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়। তখন তার সামনের আযাবের সংবাদের চাইতে তার কাছে অধিক অপছন্দনীয় কিছুই থাকে না। সুতরাং সে (এ সময়) আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করা অপছন্দ করে, আর আল্লাহ তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।

হাদিস ৬০৬৪

মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর মূলাকাতকে ভালবাসে, আল্লাহ তাঁলাও তার মুলাকাতকে ভালবাসেন। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর মুলাকাতকে ভালবাসে না, আল্লাহ তা’আলাও তার মুলাকাত ভালবাসেন না।

হাদিস ৬০৬৫

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থাবস্হায় প্রায়ই এ কথা বলতেন যে, কোন নাবী রই (জানো) কবয করা হয় না, যতক্ষন পর্যন্ত তাকে তাঁর জান্নাতের ঠিকানা না দেখানো হয়, আর তাকে (জীবন অথবা মৃত্যুর) অধিকার না দেওয়া হয়। সূতরাং যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যু কাল ঘনিয়ে এলো, এ সময় তার মাথা আমার রানের উপর ছিল, তখন কিছুক্ষণের জন্য তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ঁলেন। বেহুশ থেকে সুস্থ হওয়ার পর তিনি তাঁর চোখ উপরের দিকে তুলে ছাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ “আল্লাহুম্মার রাফীকালআলা”- (অর্থাৎ ইয়া আল্লাহ! আমি আমার পরম বন্ধুর সান্নিধ্যই পছন্দ করলাম)। আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, তখনই আমি (মনে মনে) বললাম যে, তিনি এখন আর আমাদেরকে পছন্দ করবেন না। আর আমি বুঝতে পারলাম যে, এটাই হতে সেই হাদীসের মর্ম, যা তিনি ইতিপূর্বে প্রায়ই বর্ণনা করতেন এবং এটাই ছিল তার শেষ কথা, যা তিনি বলেছেনঃ আমি আমার পরম বন্ধুর সান্নিধ্যই পছন্দ করলাম।

হাদিস ৬০৬৬

মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ ইবনু মায়ফা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে চামড়ার অথবা কাঠের একপাত্রে কিছু পানি রাখা ছিল (উমর সন্দেহ করতেন) তিনি তাঁর উভয় হাত ঐ পানির মধ্যে দাখিল করতেন। এরপর নিজ মুখমণ্ডলে উভয় হাত দ্বারা মাসেহ করতেন এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতেন। আরও বলতেনঃ নিশ্চয়ই মৃত্যুর অনেক যন্ত্রণা রয়েছে। এরপর দু-হাত তুলে দোয়া করতে লাগলেন। ইয়া আল্লাহ! আমাকে সর্বোচ্চ বন্ধুর দরবারে পৌছিয়ে দিন। এ সময়ই তার (রুহ) কবয করা হল। আর হাত দুঁটি ঢলে পড়ল।

হাদিস ৬০৬৭

সাদাকা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কিছু সংখ্যক কঠিন মেজাজের গ্রাম্য লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করতো কিয়ামত কবে হবে? তখন তিনি তাদের সর্ব-কনিষ্ঠ ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে বলতেন: যদি এ ব্যাক্তি কিছু দিন বেচে থাকে তবে তার বুড়ো হওয়ার আগেই তোমাদের কিয়ামত এসে যাবে। হিশাম বলেন যে, এ কিয়ামতের অর্থ হলো, তাদের মৃত্যু।

হাদিস ৬০৬৮

ইসমাঈল (রহঃ) কাতাদা ইবনু রিবঈ আনসারী (রাঃ) বর্ণনা করেন। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পাশ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হল। তিনি তা দেখে বললেনঃ সে শান্তি প্রাপ্ত অথবা তার থেকে শাস্তিপ্রাপ্তা লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! মুস্তারিহ ও -মুস্তারাহ মিনহু--এর অর্থ কি? তিনি – বললেনঃ মুমিন বান্দা মরে যাওয়ার পর দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমতের দিকে পৌছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দা মরে যাওয়ার পর তার আচার-আচরণ থেকে সকল মানুষ, শহর-বন্দর, গাছ-পেলা ও প্রানীকূল শান্তি প্রাপ্ত হয়।

হাদিস ৬০৬৯

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যাক্তি হয়ত মুস্তারীহ (নিজে শান্তিপ্রাপ্ত) হবে অথবা মুস্তারাহ মিনহু (লোকজন) তার থেকে শান্তি লাভ করবে। মুমিন (দুনিয়ার ফিতনা যাতনা থেকে) শান্তি লাভ করে।

হাদিস ৬০৭০

হুমায়দী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি জিনিস মৃত ব্যাক্তির অনুসরণ করে থাকে। দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথে থেকে যায়। তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল তার অনুসরণ করে খাকে। তার পরিবারবর্গ ও তার মাল ফিরে আসে- পক্ষান্তরে তার আমল তার সাথে থেকে যায়।

হাদিস ৬০৭১

আবূ নূমান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) বর্ননা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন ব্যাক্তির মৃত্যু হয়, তখন কবরেই প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় তার জান্নাত অথবা জাহান্নামের ঠিকানা তার সামনে পেশ করা হয়। এবং বলা হয় যে, এই হল তোমার ঠিকানা। তোমার পূনরুত্থান পর্যন্ত।

হাদিস ৬০৭২

আলী ইবনু জা'দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মৃত ব্যাক্তিদেরকে গালি দিও না। কারণ তারা তাদের কৃতকর্মের পরিণাম ফল পর্যন্ত পৌছে গিয়েছে।

হাদিস ৬০৭৩

আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ দু-ব্যাক্তি পরস্পরে গালাগালি করল। একজন মুসলমান, অপরজন ইহুদী। মুসলমান বলল, শপথ ঐ মহান সত্তার, যিনি মুহাম্মাদ -কে জগতবাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। ইহুদী বলল, শপথ ঐ মহান সত্তার, যিনি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জগতবাসীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। রাবী বলেনঃ এতে মুসলমান রাগাম্বিত হয়ে গেল এবং ইহুদীর মুখমণ্ডলে একটি চপেটাঘাত করে বসল। এরপর ইহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গিয়ে তার মাঝে এবং মুসলমানের মাঝে যা ঘটেছিল এ সম্পর্কে তাকে অবহিত করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমাকে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ওপর প্রাধান্য দিও না। কেননা কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে, আর আমই হব সেই ব্যাক্তি যে সর্বপ্রথম হুশে আসব। হুশ হয়েই আমি দেখতে পাব যে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরশে আযীমের কিনারা ধরে আছেন। আমি জানিনা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি সেই লোক যিনি বেহুশ হবেন আর আমার পূর্বেই প্রকৃতিস্থ হয়ে যাবেন। নাকি তিনি সেই লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন যাদেরকে আল্লাহ তাঁআলা বেহুশ হয়ে যাওয়া থেকে সতন্ত্র রেখেছেন।

হাদিস ৬০৭৪

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কিয়ামত হরে তখন সমস্ত মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। আর আমই হব সর্বপ্রথম ব্যাক্তি, যে হুশ হয়ে দাড়াবো। আর আমি দেখতে পাব যে, মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরশে আযীমকে ধরে আছেন। মূলত আমি জানিনা যে, তিনি বেহুশীদের অন্তর্ভুক্ত কি না? এ হাদীস আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ৬০৭৫

মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তাঁআলা যমীনকে আপন মুঠোয় আবদ্ধ করবেন আর আকাশকে ডান হাত দিয়ে লেপটে দিবেন। এরপর তিনি বলবেন:আমই বাদশাহ, দুনিয়ার বাদশাহরা কোথায়?

No comments:

Powered by Blogger.