সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৫ম খন্ড, অধ্যায়ঃ বর্গাচাষ-২য়
পরিচ্ছেদঃ ১৩. সুদ
৩৯০৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান ব্যতিরেকে বিক্রি করো না, তার এক অংশ অন্য অংশ অপেক্ষা বেশী করো না। আর রূপার বিনিময় রূপা সমান সমান ব্যতিরেকে বিক্রি করো না এবং তার এক অংশ অপর অংশ অপেক্ষা বেশী করো না। আর এগুলোর কোনটিকেই নগদের বিনিময়ে বাকীতে বিক্রি করো না।
৩৯১০. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) এর সুত্রে বর্ণিত যে, লায়স গোত্রের জনৈক ব্যক্তি ইবনু উমর (রাঃ) কে বলল যে,আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেনঃ কুতায়বার বর্ণনা অনুযায়ী এরপর আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) নাফি' কে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন। আর ইবনু রুমহর বর্ণনা মতে নাফি (রহঃ) বলেন, এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) চলে গেলেন, আমিও লায়সী গোত্রের লোকটি তার সাথে ছিলাম। তিনি [আবদুল্লাহ (রাঃ)] আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর কাছে পৌঁছে বললেন, এ (লায়স) আমাকে জানিয়েছে যে, আপনি এ হাদিস অবহিত করছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপার বিনিময়ে রূপা সমতার পরিমাণ ব্যতীত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, তদ্রূপ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ পরিমাণের সমতা ব্যতীত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) তার আঙ্গুলি দ্বারা তাঁর দুই চোখ ও দুই কানের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমার দুই চোখ দেখেছে ও দুই কান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একথা বলতে শুনেছে যে, তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রি করো না এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি করো না- সমান সমান পরিমাণ ব্যতীত। আর তোমরা উহার এক অংশকে অন্য অংশ অপেক্ষা বেশী করো না এবং হাতে হাতে ব্যতীত নগদের বিনিময়ে বাকীতে বিক্রি করো না।
৩৯১১. শায়বান ইবনু ফাররুখ ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নাফি' থেকে লায়স এর হাদীসে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৩৯১২. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ওযন ও পরিমাণ সমান সমান হওয়া ব্যতিরেকে তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি করো না।
৩৯১৩. আবূ তাহির, হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এক দীনারকে দুই দীনারের বিনিময়ে এবং এক দিরহামকে দুই দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করো না।
৩৯১৪. কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ... মালিক ইবনু আউস ইবনু হাদাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এ কথা বলতে বলতে অগ্রসর হলাম যে, দিরহাম বিনিময় (কেনা-বেচা) করতে পারে এমন কে আছে? তখন তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নিকটেই ছিলেন- তিনি বললেন, তোমার স্বর্ণ আমাদেরকে দেখাও এবং তুমি পরে এসো। আমাদের খাদিম যখন আসবে তখন তোমার রৌপ্য দিয়ে দিব। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেনঃ কখনও নয়; আল্লাহর শপথ, হয় তুমি তার দিরহাম এখনই প্রদান কর অন্যথায় তার স্বর্ণ তাকে ফেরৎ দাও। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ নগদ নগদ (হাতে হাতে বিক্রি) না হলে সুদ হবে, গমের বিনিময়ে গম নগদ নগদ এবং হাতে হাতে (বিক্রি) না হলে সুদ হবে, যবের বিনিময়ে যব নগদ নগদ না হলে সুদ হবে এবং খেজুরের বিনিময়ে খেজুর নগদ নগদই (বিক্রি) না হলে সুদে পরিণত হবে।
৩৯১৫. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে (উক্ত রূপ বর্ণিত হয়েছে।)
৩৯১৬. উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শামে (সিরিয়ায়) এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। তথায় মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রাঃ)ও ছিলেন। এমন সময় আবূল আশ'আস আগমন করলেন। তারা বলল, আবূল আশ'আস, আমিও বললাম, আবূল আশ-আস (এসেছেন)। অতঃপর তিনি বসলেনঃ আমি তাঁকে বললাম, আমাদের ভাইদের নিকট উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) এর হাদীসটি শোনান। তিনি বললেন, আচ্ছা; আমরা একবার এক যুদ্ধে অবতীর্ণ হই। মুআবিয়া (রাঃ) ছিলেন সেনাপতি। প্রচুর পরিমাণ গনীমত আমাদের হস্তগত হয়। আমাদের এই গনীমতের মধ্যে রূপার একটা পাত্রও ছিল। মুআবিয়া (রাঃ) সেটি লোকদের বেতন-ভাতার বিনিময়ে বিক্রি করার জন্য একজনকে আদেশ দান করেন। লোকজন এ ব্যাপারে সকলেই আগ্রহ প্রকাশ করল।
উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি দণ্ডায়মান হন এবং বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিষেধ করতে শুনেছি- স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবনের বিনিময়ে লবন বিক্রি করতে, পরিমাণে সমান সমান ও নগদ নগদ ব্যতিরেকে। যে অতিরিক্ত দিবে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করবে সে সুদের কাজ কারবার করল।
এরপর লোকজন যা কিছু নিয়েছিল তা ফেরত দিল এবং মুআবিয়া (রাঃ) এর নিকট এ সংবাদ পৌছে দিল। তিনি ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, মানুষের একি আবস্থা হল, তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন বহু হাদীস বর্ণনা করেন যা আমরা তাঁর থেকে শুনি নাই অথচ আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত থাকতাম এবং তাঁরই সান্নিধ্য লাভ করতাম। এরপর উবাদা (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং বর্ণনার পুনরাবৃত্তি করে বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা কিছু শুনেছি তা অবশ্যই বর্ণনা করব, যদিও মুআবিয়া (রাঃ) তা অপছন্দ করেন অথবা বলেছেন যে, যদিও মুআবিয়া তাতে অপমানিত বোধ করেন। আমি পরোয়া করি না যে, তার বাহিনীতে এক কালো রাত্র না থাকি। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, তিনি এ কথাই বলেছেন কিংবা এর অনুরূপ কিছু।
৩৯১৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আয়্যুব (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৩৯১৮. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণ স্বর্ণের বিনিময়ে, রৌপ্য বৌপ্যের বিনিময়ে, গম গমের বিনিময়ে, যব যবের বিনিময়ে, খেজুর খেজুরের বিনিময়ে এবং লবন লবনের বিনিময়ে সমান সমান সমপরিমাণ ও হাতে হাতে হতে (নগদ) হবে। অবশ্য এই দ্রব্যগুলো যদি একটা অপরটার সাথে বিনিময় হয়। (অর্থাৎ পণ্য এক জাতীয় না হয়) তোমরা যেরূপ ইচ্ছা করতে পার যদি হাতে হাতে (নগদে) হয়।
৩৯১৯. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, বৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবনের বিনিময়ে লবন সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। এরপর কেউ যদি তা প্রদান করে বা গ্রহণ করে তবে তা সুদে পরিণত হবে গ্রহণকারী ও প্রদানকারী এতে সমপর্যায়ভূক্ত হবে।
৩৯২০. আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্নের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান হতে হবে। অতঃপর উপরের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৩৯২১. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ওয়াসিল ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিমযে যব ও লবনের বিনিময়ে লবন সম পরিমাণ ও হাতে হাতে হতে হবে। কেউ যদি বেশী দেয় বা বেশী নেয় তবে সুদ হবে। তবে যদি এর প্রকার (পণ্য) পরিবর্তন হয়। (তবে কম বেশী জায়িয হবে)।
৩৯২২. আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... ফুযায়ল ইবনু গায্ওয়ান (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণিত। তবে তিনি “হাতে হাতে” কথটি উল্লেখ করেন নাই।
৩৯২৩. আবূ কুরায়ব ও ওয়াসিল ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমওযনে ও সমপরিমাণে এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য সমওযনে ও সমপরিমাণ (সমান সমান) করতে হবে। যে অতিরিক্ত দিবে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করবে, তা সুদ হবে।
৩৯২৪. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কানাবী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দীনারের বিনিময়ে দীনার, উভয়ের মধ্যে কোনটি বেশী হতে পারবে না এবং দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম উভয়ের মধ্যে কোনটি বেশী হতে পারবে না।
৩৯২৫. আবূ তাহির (রহঃ) ... মূসা ইবনু আবূ তামীম (রহঃ) এর সনদে উপরোক্ত হাদীস অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩৯২৬. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) ... আবূল মিনহাল (রহঃ) এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার এক শরীক মওসুম পর্যন্ত বা হজ্জ পর্যন্ত কিছু রূপা বাকীতে বিক্রি করে। অতঃপর সে আমার কাছে আসে এবং আমাকে জানায়। আমি বললাম, এ কাজটি ঠিক হয় নাই। সে বলল, আমি ইহা বাজারে বিক্রি করেছি এবং কেউ আমাকে এ থেকে নিষেধ করে নাই। এরপর আমি বারা ইবনু আযিব (রাঃ) নিকট এসে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন আমরা এ জাতীয় ক্রয়-বিক্রয় করতাম। তিনি বললেন, যদি নগদ নগদ হয় তাহলে কোন আপত্তি নেই, আর যদি বাকীতে হয় তবে সুদ হবে। তুমি যায়িদ ইবনু আরকওমের (রাঃ) নিকট যাও, যেহেতু তিনি আমার চেয়ে বড় ব্যবসায়ী। অতঃপর আমি তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনিও অনুরূপ বললেন।
৩৯২৭. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু'আয আম্বারী (রহঃ) ... আবুল মিনহাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু আযিবকে “সার্ফ” (মুদ্রার বিনিময়ে মুদ্রা বিক্রি) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যায়িদ ইবনু আরকামকে জিজ্ঞাসা কর। কেননা, তিনি অধিক বিজ্ঞলোক। সুতরাং আমি যায়িদ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, বারা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস কর। তিনি অধিক বিজ্ঞ। আর দুইজনেই বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য বাকীতে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।
৩৯২৮. আবূর রাবী আতাকী (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য ও স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান ব্যতিরেকে নিষেধ করেছেন এবং স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য ক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন, যে ভাবে (পরিমাণ কম বেশি করে) আমরা চাই এবং রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয় করতে যেরূপে আমরা ইচ্ছা করি। অতঃপর জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, হাতে হাতে? তিনি বললেন, এরূপই আমি শুনেছি।
৩৯২৯. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, অতঃপর উক্ত রূপ বর্ণনা করেন।
৩৯৩০. আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... ফুযালা ইবনু উবাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরে আবস্থানকালে তাঁর নিকট গনীমতের একটা হার উপস্থিত করা হয়। উহাতে পূতি ও স্বর্ন লাগানো ছিলো। হারটি বিক্রি হচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারের সাথে লাগানো স্বর্ণের ব্যাপারে আদেশ দান করেন। অতঃপর তা তুলে আলাদা করা হয়। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান ওযনে বিক্রি করতে হবে।
৩৯৩১. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ফুযালা ইবনু উবায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খায়বার দিবসে বার দীনার এর বিনিময়ে একটি হার ক্রয় করি। তাতে স্বর্ণ ও পুতি ছিল। এরপর আমি তা আলাদা করলাম এবং বার দীনারের চেয়ে অধিক পেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে বিষয়টি আমি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন (স্বর্ণ) আলাদা না করে বিক্রি করা যাবে না।
৩৯৩২. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে উক্তরূপ বর্ণিত।
৩৯৩৩. কুতায়বা (রহঃ) ... ফুযালা ইবনু উবায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খায়বার দিবসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। ইয়াহুদীদের সাথে এক ঊকিয়া স্বর্ণ দুই বা তিন দীনারের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ স্বর্ণের সম ওযন ব্যতিরেকে বিক্রি করো না।
৩৯৩৪. আবূ তাহির (রহঃ) ... হানাশ (রহঃ) এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে ফাযালা ইবনু উবায়দের সঙ্গে ছিলাম। আমার ও আমার সাথীদের অংশে একটি হার আসে যার মধ্যে স্বর্ণ, রৌপ্য ও জাওহার (মুক্তা) খচিত ছিল। আমি তা খরিদ করে রাখতে ইচ্ছা করলাম। তাই ফাযালা ইবনু উবায়দকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন এর স্বর্ণ আলাদা করে এক পাল্লায় রাখ আর তোমার স্বর্ণ অন্য পাল্লায় রাখ এবং সমপরিমাণ ব্যতিরেকে গ্রহণ করো না। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন সমপরিমাণ ব্যতিরেকে গ্রহণ না করে।
৩৯৩৫. হারুন ইবনু মা'রূপ ও আবূ তাহির (রহঃ) মামার ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এক সা গমসহ তার গোলামকে পাঠিয়েছেন এবং বলে দেন যে, তা বিক্রি করে তা দিয়ে যব কিনে আন। গোলাম চলে যায় এবং এক সা' ও সায়ের কিছু অতিরিক্ত গ্রহণ করে। যখন সে মা'মার (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলে এবং যখন তাকে এ বিষয়ে অবহিত করল, তখন মামার (রাঃ) তাকে বলল, তুমি এরূপ কেন করেছ? পূনরায় যাও ও তাকে ফেরৎ দাও, সমপরিমাণ ব্যতীত কিছুতেই গ্রহণ করবে না। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ খাদ্যের বিনিময়ে খাদ্য সমান সমান হতে হবে। আর ঐ সময়ে যব ছিল আমাদের খাদ্য। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তা তো ওটার অনুরূপ নয় (ভিন্ন পণ্য)। তিনি বললেন, অনুরূপ হওয়ার আশংকাবোধ করছি।
৩৯৩৬. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেন যে, আনসারদের আদী গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে আমীল (তাহশীলদার) নিযুক্ত করেন। সে উন্নত জাতের খেজুর নিয়ে আসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, খায়বারের সমস্ত খেজুরেই কি এই ধরনের? সে বলল, না; আল্লাহর কসম ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা মিশ্রিত খেজুরের দুই সা' এর বিনিময়ে এক সা' খরিদ করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ করো না বরং সমান সমানভাবে করো অথবা একটা বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে অন্যটা খরিদ করবে, অনুরূপভাবে ওযনের ক্ষেত্রেও।
৩৯৩৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে খায়বরের আমিল নিযুক্ত করেন। সে উন্নতমানের খেজুর নিয়ে তার নিকট আগমন করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ খায়বারের সমস্ত খেজুর কি এই শ্রেনীর? সে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম, এরূপ নয়। আমরা এই শ্রেনীর এক সা' দুই সা’র বিনিময়ে এবং দুই সা' তিন সা'র বিনিময়ে খরিদ করে থাকি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ করো না। মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করো। তারপর দিরহামের বিনিময়ে উন্নতমানের খরিদ করো।
৩৯৩৮. ইসহাক ইবনু মানসূর, মুহাম্মাদ ইবনু সাহল তামীমী ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 'বারনী' জাতীয় খেজুর নিয়ে বিলাল (রাঃ) আগমন করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কোথেকে এনেছ? বিলাল (রাঃ) বলল, আমাদের নিকট নিম্ন শ্রেনীর খেজুর ছিল আমি তা থেকে দু'সা' এক সা' এর বিনিময়ে বিক্রি করেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খাওয়ানোর জন্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ হায় আফসোস! এভো প্রত্যক্ষ সুদ, এরূপ করো না, বরং যখন তুমি খেজুর ক্রয় করতে চাও, তখন এটাকে বিক্রি কর, তারপর এর মূল্য দ্বারা খরিদ করো। ইবনু সাহব (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় عِنْدَ ذَلِكَ 'তখন' শব্দটি উল্লেখ করেন নাই।
৩৯৩৯. সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু খেজুর আনা হয়। তিনি বললেন, আমাদের খেজুরে এ খেজুর কীরূপে এল? এ খেজুর তো খুবই উত্তম। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের দু' সা খেজুর এর এক সা'র বিনিময়ে বিক্রি করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ তো সুদ। এ ফেরৎ দাও, তারপর আমাদের খেজুর বিক্রি কর এবং এই জাতীয় খেজুর আমাদের জন্য খরিদ কর।
৩৯৪০. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলে সংগৃহীত খেজুর আমাদের দেওয়া হত আর তা হচ্ছে মিশ্রিত খেজুর। আমরা এর দু-সা' এক সা'র বিনিময়ে বিক্রি করতাম। এ সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছল। তিনি বললেন, দু'সা খেজুর এক সা'র বিনিময়ে, দু'সা গম এক সা'র বিনিময়ে এবং দু' দিরহাম এক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করা জায়িয নয়।
৩৯৪১. আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ নাদরা (রহঃ) এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে ‘সারফ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেন, নগদ নগদ? আমি বললাম, হাঁ। তিন বললেন, এতে কোন আপত্তি নেই। অতঃপর আমি সাঈদকে জানালাম এবং বললাম, আমি ইবনু আব্বাসের নিকট সারফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, নগদ নগদ? আমি বলেছি, হ্যাঁ। তিনি বলেছেন, কোন অসুবিধা (অবৈধতা) নেই। অথবা এ ধরনের কিছু বলেছেন। তিনি [যায়দ (রাঃ)] আমি শিগ্রই তাকে লিখে দিচ্ছি। অতঃপর তিনি আর তোমাদেরকে এ ফাতওয়া দিবেন না।
তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন কর্মচারী কিছু খেজুর নিয়ে আসে। সে বলল, ইহা আমাদের দেশের খেজুরর মধ্যে অথবা আমাদের এ বছরের খেজুরের মধ্যে কিছুটা সমস্যা ছিল। সুতরাং আমি এটা গ্রহণ করেছি এবং (বিনিময়ে) কিছু বাড়িয়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, বেশী দিয়েছ তো সুদ প্রদান করেছ, এর কাছেও যেয়ো না। যখন তোমার খেজুরের মধ্যে কোন সমস্যা (খেজুর খারাফ) পরিলক্ষিত হবে তখন তা বিক্রি করে দিবে, পরে যে খেজুর পছন্দ করো তা খরিদ করবে।
৩৯৪২. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ নাদরা (রাঃ) এ সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট এ ‘সারফ’ (মুদ্রা ও স্বর্ণ রৌপ্যের বিনিময়) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তারা এতে কোন দোষ মনে করেন নি। পরবর্তীকালে একবার আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট বসা ছিলাম। তার নিকট ‘সারফ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যা অতিরিক্ত হবে তা সুদ। কিন্তু তাদের দু'জনের মতের কারণে আমি এর প্রতিবাদ করলাম। এরপর তিনি বললেন, আমি রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছি তাই তোমার কাছে বর্ণনা করছি।
একদিন তার নিকট খেজুরের বাগানের এক মালিক এক সা’ উৎকৃষ্ট খেজুর নিয়ে আসে। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেজুরের ও এই শ্রেনীরই ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এ তুমি কোথায় পেলে? সে বলল, আমি দু’সা নিয়ে (বাজারে) যাই এবং তার বিনিময়ে এই এক সা' ক্রয় করি। কেননা বাজারে এটার মূল্য এতো এবং ওটার মূল্য এতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মন্দ তোমার কপাল! তুমি সুদের কারবার করেছ। যখন এরূপ করতে চাও, তখন তোমার খেজুর কোন বস্তুর বিনিময়ে বিক্রি করে দিবে। পরে তোমার বস্তুর বিনিময়ে যে প্রকার খেজুর চাও কিনে নিবে।
আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, সুতরাং খেজুরের বিনিময়ে খেজুর সুদ হওয়ার বিষয়টি প্রযোজ্য নাকি রৌপ্যের বিনিময়ে অতিরিক্ত রৌপ্য সুদ হওয়ার বিষয়টি।
রাবী বলেন, পরবর্তীকালে আমি ইবনু উমর (রাঃ) এর নিকট এসেছি এবং তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন। আর আমি ইবনু আব্বাসের কাছে যাই নি। রাবী বলেন, আবূস সাহবা (রহঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, এ ব্যাপারে ইবনু আব্বাসের কাছে মক্কায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন তখন তিনি তা অপছন্দ করেছেন।
৩৯৪৩. মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দীনারের বিনিময়ে দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম সমান সমান হওয়া চাই। যে অধিক দিবে বা অধিক নিবে সে সূদের লেনদেন করল। আমি তাকে বললাম, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তো অন্য কিছু বলে থাকেন। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাসের সাথে সাক্ষাৎ করেছি এবং জিজ্ঞাসা করেছি যে, আপনি এই যা বলছেন, তা কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন, না কি আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইহা শুনি নাই এবং আল্লাহর কিতাবেও পাই নি বরং উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদ হয় বাকী বিক্রয়ে।
৩৯৪৪. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) জানিয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদ কেবল বাকীতে (বাকি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে) হয়।
৩৯৪৫. যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নগদ বিক্রিতে সুদ নেই।
৩৯৪৬. হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আতা ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘সারফ’ সম্পর্কে আপনার যে মত, তার কিছু কি আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন, না কি আল্লাহর কুরআনে কিছু পেয়েছেন? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, কোনটই আমি বলছি না। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তথা হাদিস) সম্পর্কে তো আপনারা অধিক অবগত এবং আল্লাহর কিতাবেও তা আমি জানি না। বরং উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) আমর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদ বাকীতেই হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. সুদখোর ও সুদদাতার প্রতি অভিসম্পাত
৩৯৪৭. উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদখোরের প্রতি ও সূদ প্রদানকারীর প্রতি লানত করেছেন। রাবী বলেন, আমি বললামঃ এর লেখকের প্রতি ও সাক্ষীদ্বয়ের প্রতিও। তিনি বললেন, আমরা কেবল তাই বর্ণনা করি যা আমরা শুনেছি।
৩৯৪৮. মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন, সুদ গ্রহীতার উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও উহার সাক্ষীদ্বয়ের উপর এবং বলেছেন এরা সকলেই সমান।
পরিচ্ছেদঃ ১৫. হালাল গ্রহন ও সন্দেহজনক সবকিছু বর্জন করা
৩৯৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র হামদানী (রহঃ) ... নূমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছিঃ (অর্থাৎ তিনি বলেন) আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, রাবী বলেনঃ এ সময় নু'মান তাঁর দুই আঙ্গুল দ্বারা কানের দিকে ইঙ্গিত করেন, (নিশ্চই) হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এ সব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দুরে থাকে সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে, আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন কোন রাখাল সংরক্ষিত (সরকারী) চারণভূমির আশ-পাশে পশু চরায়, আশংকা রয়েছে সে পশু তার অভ্যন্তরে গিয়ে ঘাস খাবে। সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল তার হারামকৃত বিষয়সমূহ। জেনে রাখো, দেহের মধ্যে এক টুকরা গোশত আছে। যখন তা সুস্থ থাকে তখন সমস্ত শরীরই সুস্থ থাকে। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন সমস্ত শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। স্মরণ রেখো, তা হল 'কালব' হৃদয়।
৩৯৫০. আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... যাকারিয়্যা (রহঃ) এর সুত্রে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ননা করেন।
৩৯৫১. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও কুতায়বা (রহঃ) ... নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। অবশ্য যাকারিয়্যা (রহঃ) বর্ণিত হাদীস তাদের হাদীস থেকে পরিপূর্ণ ও অধিক বর্ণনা সম্পন্ন।
৩৯৫২. আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) ... নুমান ইবনু বাশীর ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন সাহাবী। তিনি হিমসে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। অতঃপর তিনি শাবী (রহঃ) থেকে যাকারিয়্যা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন তার উক্তিঃ ’উহার অভ্যন্তরে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে’ পর্যন্ত।
৩৯৫৩. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তার উটের উপর আরোহণ করে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি উটটি ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা করেন। তিনি বলেন, এরপর আমার সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমার জন্য দুআ করেন এবং উটটিকে আঘাত করলেন। এরপর উট এমনভাবে চলতে থাকে যে, তেমন আর কখনও চলে নি। তিনি বললেন, এটি আমার নিকট এক "উকিয়ার" বিনিময়ে বিক্রি কর। আমি বললাম, না। তিনি পুনরায় বললেন, আমার নিকট এটাকে বিক্রি করে দাও। অতঃপর এক উকিয়ার বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিলাম এবং আমার বাড়ী পর্যন্ত তাতে আরোহণ করার শর্ত করলাম। যখন আমি (মদিনায়) পৌঁছলাম তখন তাঁর নিকট উট নিয়ে আসলাম। তিনি আমাকে তার মূল্য পরিশোধ করলেন। পরে আমি প্রত্যাবর্তন করলাম। তিনি ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, আমি কি তোমার উট নেওয়ার জন্য মূল্য কম বলেছিলাম? তোমার উট এবং তোমার দিরহাম নিয়ে যাও। তা তোমার জন্যই।
৩৯৫৪. আলী ইবনু খাসরাম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে ইবনু নূমায়রের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৩৯৫৫. উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে জিহাদে গমন করি। পথিমধ্যে তিনি আমাকে পেয়ে বললেন, আমি একটি মন্থরগতির উটের পিঠে চলছিলাম, যে চলতে প্রায় অক্ষম হয়ে পড়েছিল। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমার উটের কি হয়েছে? আমি বললাম, অসুখ হয়েছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশ্চাতে গেলেন এবং উটকে ধমক দিলেন ও দু'আ করলেন। এরপর তা সকল উটের অগ্রভাবে চলতে থাকে। তিনি বললেন, এখন তোমার উটের অবস্থা কি? আমি বললাম, ভালই; আপনার বরকতের পরশ লেগেছে। তিনি বললেন, এটা আমার নিকট বিক্রি করবে কি? আমি লজ্জিত-হলাম। কারণ ইহা ভিন্ন আমাদের অন্য কোন পানি বহনকারী উট ছিল না। অবশেষে বললাম, হাঁ। সুতরাং তাঁর নিকট ইহা এই শর্তে বিক্রি করলাম যে, মদিনা পর্যন্ত তার পিঠ আমার অধিকারে থাকবে।
তিনি বললেন, এরপর আমি আরয করলাম হে আল্লাহর রাসুল! আমি সদ্য বিবাহিত। তাই আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। সুতরাং অন্যান্য লোকের আগেই আমি মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হলাম। যখন শেষ সীমায় পৌঁছলাম তখন আমার মামার সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। তিনি আমার কাছে উটের অবস্থা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি তাকে সে সব কথা জানালাম যা এ ব্যাপারে আমি করেছি। তিনি এ জন্য আমাকে তিরস্কার করলেন।
জাবির (রাঃ) বললেন, আমি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করি তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি কুমারী না পূর্ব বিবাহিতা বিবাহ করেছ? বললাম, আমি পূর্ব বিবাহিতা নারীকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, কেন কুমারী বিবাহ কর নাই? যার সাথে তুমি আমোদ প্রমোদ করতে আর সেও তোমার সাথে আমোদ প্রমোদ করত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রেখে আমার পিতা ইন্তেকাল করেন অথবা (বলেন) শাহাদাত বরণ করেন। তাই আমি অপছন্দ করি তাদের নিকট তাদেরই অনুরূপ আর একজনকে বিবাহ করে আনতে যে তাদের সুশিক্ষা দিতে ও দায়িত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না। এ কারণে আমি পূর্ব বিবাহিতা নারীকে বিবাহ করেছি, যাতে সে তাদের লালন পালন করে ও সুশিক্ষা দিতে পারে।
জাবির (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় পৌঁছলেন, আমি প্রত্যুষে উটসহ তাঁর নিকট হাযির হলাম। তিনি তার মূল্য আমাকে প্রদান করেন এবং উটও ফেরত দেন।
৩৯৫৬. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মক্কা থেকে মদিনায় প্রত্যাগমন করি। অতঃপর আমার উট অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পুর্ণ ঘটনাসহ তিনি হাদীস বর্ণনা করেন। আর এ বর্ণনায় আছে যে, তিনি আমাকে বললেন, আমার নিকট তোমার এ উট বিক্রি কর। আমি বললাম, না বরং এটা আপনারই। তিনি বললেন, না বরং আমার নিকট বিক্রি কর। আমি বললাম, না বরং এটা তো আপনারই হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন না, বরং এটা আমার নিকট বিক্রি কর। আমি বললাম, তাহলে আমার উপর এক ব্যক্তির এক উকিয়া স্বর্ণ পাওনা আছে তার বিনিময়ে এটা আপনার। তিনি বললেন আমি এটা গ্রহন করলাম। তুমি এতে আরোহণ করে মদিনা পর্যন্ত যেতে পারবে।
জাবির (রাঃ) বললেন, যখন আমি মদিনায় পৌছলাম তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে বললেন, একে এক উকিয়া ,স্বর্ণ দাও এবং কিছু অতিরিক্ত দাও। অতঃপর তিনি আমাকে এক উকিয়া স্বর্ণ দিলেন এবং এক কীরাত অতিরিক্ত দিলেন।
জাবির (রাঃ) বলেন, আমি (মনে মনে) বললামঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত (বরকতময়) অতিরিক্তটুকু কখনও আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। রাবী বলেন, অতঃপর তা আমার নিকট একটি থলির মধ্যে থাকত। সিরিয়াবাসীরা হাররা (দুর্যোগের) ঘটনায় সিরীয়রা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
৩৯৫৭. আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমার উট পিছনে থেকে যায় এবং ...... হাদীসটি পূর্ণ বর্ণনা করেন। আর তার মধ্যে বলেনঃ অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটটিকে খোঁচা দিলেন। আরেজা বলেন, ... সর্বদা আমাকে বাড়িয়ে দিতে থাকেন এবং বলতে থাকেন 'আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন।'
৩৯৫৮. আবূর রাবী আতাকী (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমার নিকট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তখন আমার উট ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, তিনি উটটিকে খোঁচা দিলেন। এতে সে দৌড়াতে আরম্ভ করল। পরে আমি তার কথা শোনার জন্য তার লাগাম টেনে রাখছিলাম, কিন্তু তা আমি পেরে উঠছিলাম না। অবশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সহিত মিলিত হন এবং বলেন, আমার নিকট একে বিক্রি কর। সেটি পাঁচ উকিয়ার বিনিময়ে আমি বিক্রি করি।
জাবির (রাঃ) বলেন, আমি এই শর্ত করলাম যে, মদিনা পর্যন্ত আমি এতে আরোহণ করব। তিনি বলেন, মদিনা পর্যন্ত তুমি আরোহণ করতে পারবে। জাবির (রাঃ) বলেন, যখন আমি মদিনায় পৌঁছলাম তখন উটসহ আমি তাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে আরো এক উকিয়া অতিরিক্ত দেন এবং পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটটিও আমাকে দান করে দেন।
৩৯৫৯. উকবা ইবনু মুকরাম আম্মী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক সফরে তার সফর সঙ্গী ছিলাম। রাবী বলেন, আমার বিশ্বাস তিনি জিহাদের সফরের কথা বলেছেন এবং পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে অতিরিক্ত আছে যে, তিনি বললেনঃ হে জাবির! তুমি পূর্ণ মুল্য বুঝে পেয়েছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, মূল্য তোমার, উটও তোমার, মূল্য তোমার, উটও তোমার।
৩৯৬০. উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার থেকে একটি উট দু উকিয়া ও এক দিরহাম বা দুই দিরহামের বিনিময়ে খরিদ করেন। যখন তিনি সিরার নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন একটি গাভী যবেহ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেন। আমি যবেহ করলাম। তারা সকলেই তা খেলেন। যখন তিনি মদিনায় পৌঁছেন তখন আমাকে মসজিদে আসার ও দুরাক’আত সালাত আদায়ের হুকুম করেন। তিনি আমাকে উটের মুল্য ওযন করে দেন এবং কিছু বেশী দেন।
৩৯৬১. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। অবশ্য এতে তিনি বলেন যে, তিনি আমার থেকে সেই দামে উহা খরিদ করেন যার পরিমাণ তিনি (জাবের) উল্লেখ করেছেন তবে দুই উকিয়া ও এক দিরহাম এবং দুই দিরহামের কথা উল্লেখ করেন নি। আর তিনি বলেন যে, গাভীর যবহের জন্য আদেশ দেন। সুতরাং তা নহর করা হয় ও পরে গোশত বণ্টন করেন।
৩৯৬২. আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, আমি চার দীনারের বিনিময়ে তোমার উট নিলাম, আর এর পিঠে চড়ে তুমি মদিনায় যেতে পারবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৬. জীবজন্তু ধার লওয়া বৈধ এবং তার কাছে প্রাপ্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট (জন্তু) দ্বারা ধার পরিশোধ করা মুস্তাহাব
৩৯৬৩. আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ... আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির থেকে একটি উটের বাচ্চা ধার নেন। এরপর তার নিকট সাদাকার উট আসে। তিনি আবু রাফি' কে সে ব্যক্তির উট পরিশোধ করার আদেশ দান করেন। আবূ রাফি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফিরে এসে জানালেন যে, সাদাকার উটের মধ্যে আমি সেরূপ উট পাই না, তার চেয়ে উৎকৃষ্ট উট আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওটাই তাকে দাও। মানুষের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে, যে তাদের মধ্যে ধার পরিশোধে উত্তম।
৩৯৬৪. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবা বয়সের একটি উট ধার করেন, এরপর উক্তরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে তিনি বলেন যে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে যে দেনা পরিশোধে উত্তম।
৩৯৬৫. মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এক ব্যক্তির ঝণ ছিল। সে তার সাথে রুঢ় ব্যবহার করে। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাকে (শাসন করতে) উদ্যত হন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পাওনাদারে কিছু বলার অধিকার আছে। তারপর তিনি সাহাবীদেরকে বললেনঃ তোমরা তার জন্য একটি উট খরিদ কর এবং তাকে দিয়ে দাও। তারা বললেন- আমরা এমন উট পাচ্ছি যা তার উটের চেয়ে উত্তম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ওটা খরিদ কর ও তাকে দিয়ে দাও। কারণ তোমাদের মধ্য থেকে বা তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে দেনা পরিশোধ করার ব্যাপারে তোমাদের ব্যপারে উত্তম।
৩৯৬৬. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি (বিশেষ বয়সের) উট ধার করে আনেন। অতঃপর এর চেয়ে বড় একটি উট তাকে দেন এবং বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে উত্তম ভাবে ধার পরিশোধ করে।
৩৯৬৭. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে উট দাবী করতে থাকে। তিনি বললেন, তার উটের চেয়ে উৎকৃষ্ট (বয়সের) উট তাকে দাও এবং বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে, যে ধার পরিশোধের ক্ষেত্রে উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. একই শ্রেণীর পশু কম-বেশী করে বিনিময় (বিক্রয়) করা বৈধ
৩৯৬৮. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গোলাম এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হিজরতের উপর বায়'আত গ্রহণ করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারেন নি যে, সে লোকটি গোলাম। অতঃপর তার মুনিব তাকেনিয়ে যাওয়ার জন্য আগমন করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ আমার কাছে একে বিক্রি করে দাও। তারঃপর তিনি দু'জন কালো রং বিশিষ্ট গোলামের বিনিময়ে একে খরিদ করেন। এরপর থেকে তিনি গোলাম কি না? জিজ্ঞাসা না করা পর্যন্ত তিনি কারো বায়'আত নিতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮. বন্ধক রাখা এবং প্রবাসের ন্যায় আবাসেও তার বৈধতা
৩৯৬৯. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর থেকে কিছু খাদ্য বস্তু বাকীতে ক্রয় করেন এবং তাঁর বর্মটি তাকে বন্ধক হিসাবে প্রদান করেন।
৩৯৭০. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম হানযালী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর থেকে কিছু খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করেন এবং তাঁর লৌহ বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন।
৩৯৭১. ইসহাক ইবনুু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক ইয়াহুদী থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (বাকিতে) কিছু খাদ্য ক্রয় করেন এবং তাঁর একটি লৌহ বর্ম তার নিকট বন্ধক রাখেন।
৩৯৭২. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে লৌহের কথা উল্লেখ নাই।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. আগাম ক্রয় 'সালাম' প্রসঙ্গে
৩৯৭৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় আগমনকালে মদিনাবাসীরা এক বা দুই বছর মেয়াদে বিভিন্ন প্রকার ফল অগ্রিম ক্রয় করত। তিনি বলেন, যে কেউ খেজুর অগ্রিম ক্রয় করবে, সে যেন নির্ধারিত পরিমাপে বা নির্ধারিত ওযনে এবং নির্ধারিত মেয়াদে ক্রয় করে।
৩৯৭৪. শাইবান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন কালে মদিনার লোকজন খেজুর অগ্রিম ক্রয় করত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ যে অগ্রিম ক্রয় করতে চায় সে যেন নির্ধারিত পরিমাপ ও নির্ধারিত ওযন ব্যতীত ক্রয় না করে।
৩৯৭৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) সকলেই ইবনু উয়ায়নার সুত্রে ইবনু আবূ নাজীহ (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে আবদুল ওয়ারিস (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের ন্যায় হাদীস বর্ণনা করেন। তবে ইবনু উয়ায়না (রহঃ) নির্ধারিত সময়ের কথা উল্লেখ করেন নি।
৩৯৭৬. আবূ কুরায়ব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... সুফিয়ানের সুত্রে ইবনু আবূ নাজীহ (রহঃ) থেকে তাদের (পূর্ববর্তীদের) সনদে ইবনু উয়ায়নার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং সুফিয়ান (রহঃ) এতে নির্ধারিত সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২০. খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখা হারাম
৩৯৭৭. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ) ... মামার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গুদামজাত করে সে অপরাধী। তখন (মধ্যবর্তী রাবী) সাঈদকে বলা হল, আপনি তো গুদামজাত করেন। সাঈদ (রহঃ) বললেন যে, মা'মার এ হাদীস বর্ণনা করছেন তিনিও গুদামজাত করতেন।
৩৯৭৮. সাঈদ ইবনু আমর আল আশ'আসী (রহঃ) ... মামার ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অপরাধী লোক ব্যতীত কেউ গুদামজাত করে না।
৩৯৭৯. (ইবরাহীম বলেন, মুসলিম বলেছেন) আমাদের জনৈক সাথী (মুহাদ্দিস) আমর ইবনু আওনের সুত্রে ... আদী ইবনু কাব গোত্রের মা’মার ইবনু আবূ মা'মার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর ইয়াহইয়া থেকে সুলায়মান ইবনু বিলাল (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২১. বেচাকেনায় কসম খাওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
৩৯৮০. যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কসম পণ্যদ্রব্য পরিচালনকারী বিক্রয় বর্ধিতকারী ও মুনাফা বিলোপকারী।
৩৯৮১. আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা ব্যবসায়ের মধ্যে অধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাক। কেননা, তা পণ্য বিক্রয়ে সহায়তা করে কিন্তু (বরকত) মিটিয়ে দেয়।
পরিচ্ছেদঃ ২২. শুফ'আ (অগ্র ক্রয় অধিকার)
৩৯৮২. আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জমি অথবা (খেজুর) বাগানে যদি কারও কোন শরীক থাকে, তবে ঐ শরীকের অনুমতি না নিয়ে সে (অংশ) বিক্রি করতে পারবে না। তার পছন্দ হলে গ্রহণ করবে আর অপছন্দ হলে ছেড়ে দিবে।
৩৯৮৩. আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব শরিকী বিষয়ে শুফআর আর হুকুম দিয়েছেন যা বণ্টন করা হয় নি- জমি হোক বা বাগান। শরীককে অবগত করা ব্যতীত তা বিক্রি করা বৈধ নয়। সে ইচ্ছা করলে (শরীক) রেখে দিবে আর ইচ্ছা করলে ত্যাগ করবে। যদি সে বিক্রি করে এবং শরীককে অবগত না করায় তবে সে তাতে অগ্রাধিকারী হবে।
৩৯৮৪. আবূ তাহির (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি শরিকী বিষয়ে ও শুফ'আর অধিকার আছে- জমি হোক বা বাড়ী অথবা বাগান। শরীকের নিকট প্রস্তাব করা ব্যতীত বিক্রি করা তার পক্ষে বৈধ হবে না । অতঃপর হয়ত সে গ্রহণ করবে অথবা পরিত্যাগ করবে। যদি সে তাতে অস্বীকৃত হয়ে (না জানিয়ে বিক্রি করে) তবে তার শরীকই বেশী অধিকারী, যতদিন তাকে অবহিত না করা হবে।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রতিবেশীর প্রাচীরে কাঠ স্থাপন করা
৩৯৮৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার প্রাচীর গাত্রে (কড়ি) কাঠ স্থাপন করতে যেন আপন প্রতিবেশীকে নিষেধ না করে। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, কি ব্যাপার! আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে অনীহাসম্পন্ন দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাদের ঘাড়ে ছুঁড়ে মারবো (অর্থাৎ তোমাদের অপছন্দ হলেও প্রকাশ্যে বর্ণনা করব)।
৩৯৮৬. যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. যুলুম করা ও জমি ইত্যাদি জোরপূর্বক দখল করা হারাম
৩৯৮৭. ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারও এক বিঘত জমি জোর দখল করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার গলায় সাত স্তর যমীন হতে বেড়িররূপে পরিয়ে দিবেন।
৩৯৮৮. হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আরওয়া (নামক এক মহিলা) বাড়ীর কিছু অংশ নিয়ে তার সহিত বিবাদ করে। তিনি বললেন, তোমরা ওকে ছেড়ে দাও এবং জমির দাবীও ত্যাগ কর। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ বিনা অধিকারে এক বিঘত জমি জবর দখল করবে কিয়ামতের দিন তাকে ঐ পরিমানে সাত স্তর যমীনের বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে। হে আলাহ! যে (আরওয়া) যদি মিথ্যাবাদী হয় তবে তার চোখ অন্ধ করে দিন এবং তার ঘরেই তার কবর দাফন করুন।
রাবী বলেন, পরবর্তীকালে আমি আরওয়াকে অন্ধ অবস্থায় দেখেছি, প্রাচীর খুজে খুজে চলত। সে বলত, সাঈদ ইবনু যায়িদের বদ দুআ আমায় লেগেছে। একদিন সে বাড়ীর মধ্যে চলাচল করছিল। বাড়ীর মধ্যে এক কুয়ার কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সে তাতে পড়ে যায় কুয়াই তার কবর হয়।
৩৯৮৯. আবূর রাবী আতাকী (রহঃ) ... উরত্তয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আরওয়া বিনত উয়ায়স সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) এর উপর দাবী করেন যে, তিনি তার জমির কিছু অংশ জবর দখল করেছেন। সে মারওয়ান ইবনু হাকামের নিকট এর বিচার দাবী করে। সাঈদ বললেনঃ আমি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে ঐ কথা শোনার পরে তার জমির কিছু অংশের জবর দখলকারী হতে পারি? তিনি বললেন, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কি কথা শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাপ জমি জোর পূর্বক দখল করবে তাকে সাত স্তর পর্যন্ত জমির বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে।
মারওয়ান বললেন, অতঃপর আপনার নিকট আর সাক্ষীর কথা জিজ্ঞাসা করব না। এরপর সাঈদ বললেন, হে আল্লাহ! আরওয়া যদি মিথ্যাবাদিনী হয় তবে তার দুই চক্ষু অন্ধ করে দিন এবং তার জমিতে তাকে মৃত্যু দান করুন। রাবী বলেন, এরপর সে অন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করে নাই। পরে তার জমিতে চলার সময় আকস্মাৎ এক গর্তে পড়ে মারা যায়।
৩৯৯০. আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জোরপূর্বক এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত স্তর জমিনের বেড়ি লাগিয়ে দেওয়া হবে।
৩৯৯১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি এক বিঘত জমি বিনা অধিকারে জবর দখল করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সাত স্তর যমীনের বেড়ি পরিয়ে দিবেন।
৩৯৯২. আহমাদ ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ সালামা (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন। তার ও তার গোত্রের মধ্যে একটি জমি নিয়ে বিবাদ ছিল। তিনি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গমন করেন এবং তাকে সে বিষয়ে জানান। আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে আবূ সালামা! জমি থেকে বেঁচে থাক। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে নিবে তাকে সাত স্তর জমির বেড়ি পরানো হবে।
৩৯৯৩. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ সালামা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হন। অতঃপর উক্তরূপ বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. রাস্তার পরিমাণ, যখন তাতে মতবিরোধ হয়
৩৯৯৪. আবূ কামিল ফুযাইল ইবনু হুসাইন জাহদারী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা রাস্তার ব্যাপারে মতবিরোধ করবে তখন তা সাত হাত প্রশস্ত সাব্যস্ত করা হবে।
No comments: