মুসলমানদের নযীর বিহীন যুদ্ধনীতি
মুসলমানদের নযীর বিহীন যুদ্ধনীতি
হযরত মু’আবিয়ার (রাযি.) জীবনের বড় একটি অংশ অতিক্রান্ত হয়েছে রোমীয় খ্রিষ্টানদের সঙ্গে জিহাদ করে। একবার রোমানদের সাথে তাঁর সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছিল। যুদ্ধ বিরতির সময় শেষ হওয়ার কিছু দিন পূর্বে হযরত মু’আবিয়া (রাযি.) সৈন্য সামন্ত নিয়ে বের হয়ে পড়লেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল শত্রু সৈন্যের কাছে ঘেষতে যত সময় লাগবে ততক্ষণে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকস্মিক হামলা শুরু করা হলে বিজয়ের সম্ভাবনাই বেশী। কারণ তখন শত্রুরা থাকবে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। পরিকল্পনা মত চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তিনি শত্রুদের সীমন্তে পৌঁছে গেলেন এবং তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন । যেহেতু রোমানরা এ জাতিয় কৌশল থেকে সম্পূর্ণ বে-খবর ছিল, অতএব এ অভিযান কতটুকু সফল ছিল তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু হযরত মু’আবিয়া (রাযি.) যখন অপ্রতিরোধ্যে গতিতে অভিযান অব্যাহুত রাখছিলেন, তখন পেছন হতে ভেসে আসল তাকবীর ধ্বনি। কেউ পেছন হতে “আল্লাহু আকবার” বলে হাঁক মেরে বল-
মুমিনের নীতি হল-বিশ্বস্ততা ও ওয়াদা পুরণ করা, অঙ্গিকার ভঙ্গ ও গাদ্দারী করা নয়। হযরত মু’আবিয়া (রাযি.) পেছনে তাকিয়ে দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আমর ইবনুল আবসা (রাযি.) ঘোড়ায় আরোহি অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার! হযরত আমর ইবনে (রাযি.) উত্তরে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেচছি–যে ব্যক্তি কারও সঙ্গে নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তিত আবদ্ধ, সে যেন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে চুক্তি ভঙ্গের ঘোষণা প্রদান করা ব্যতীত তাদের উপর হামলা না করে। হযরত মু’আবিয়া (রাযি.) এ হাদীস শনার পর সৈন্যদেরকে নিয়ে নিশ্চিত জয়ের দারপ্রান্ত হতে ফিরে গেলেন।-মেশকাত-৩৪৭
মানব ইতিহাসে এরূপ কোন দৃষ্টান্ত খুজে পাওয়া যাবে কী যে, শত্রু পক্ষের দাবী-দাওয়া ব্যতীত কেবল নিজেদের পক্ষ হতে কারও আহবান তথা পরামর্শে বিজীত এলাকা ছেড়ে চলে এসেছে? এ ঘটনা হতে সে সকল লোকেরা নিজেদের ভ্রান্ত অবস্থানকে জানতে পরবে আয়নার ফুটে ওঠা বস্তুর ন্যায়, যারা বলে থাকেন ইসলাম তলোয়ারের জোরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঐ সকল লোকদেরও জবাব হয়ে যাবে, যারা হযরত মু’আবিয়ার (রা.) আমানদারী, দীনদারী ও উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রসূতঃ অহেতুক নানা উদ্ভত প্রোপাগন্ডায় প্রভবিত হয়ে থাকে।
এই মু’আবিয়া (রাযি.) সম্পর্কে বলে থাকে যে, তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ইসলামের সর্ব সম্মত নিয়ম-নীতিকেও জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠিত হননি। অথচ উক্ত ঘটনাটি এর ভ্রান্ততার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এটা কোন ইতিহাস গ্রন্থের বুলি নয় বরং আবু দাউদ ও তিরমিযীর মত হাদিসের কিতাবের বর্ণনা।
হযরত আমর ইবনে মুররা (রাযি.) বলেন, আমি একদা হযরত মু’আবিয়া (রাঃ) কে বললাম–আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তিক আল্লাহ তা’আলা কোন সম্প্রদায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত করেন, অথচ সে তাদের খোজ-খবর ও প্রয়োজনাদীর প্রতি নযর না দেয় তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সঙ্গেও একই আচরণ করেন। হযরত মু’আবিয়া (রাযিঃ) এ হাদীস শুনেই প্রজাদের খবরা-খবর নেওয়ার জন্য একজন লোক নিয়োগ করেন।-মেশকাত – ৩২৪
সম্ভবতঃ এ হাদীদের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরতে গিয় ইমাম বাগবী (রহ.) আবু কুবাইসের সূত্রে নকল করেন যে, হযরত মু’আবিয়া (রাযি.) প্রত্যেক গোত্রে একজন করে লোক নিয়োগ দিয়েছিলেন কেবল মাত্র প্রজাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এরই অংশ হিসাবে আমাদের গোত্রে আবু ইয়াহইয়া নামের জনৈক ব্যক্তি প্রতিদিন ভোরে চক্কর দিত এবং ঘোষণা করত–রাতে তোমাদের গোত্রে অদ্য কোন নবজাতকের জন্ম হয়েছি কী? অদ্য রাতে তোমাদের গোত্রে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে কী? যদি কেউ তাঁর প্রশ্নের জবাবে বলত যে, অমুক আজ ইয়ামান হতে এখানে স্ত্রী-পুত্র তথ স্বপরিবারে চলে এসেছে, তাহলে সে ঘোষণা সমাপ্তির পর তাদের সকলের নাম বাইতুল মালের নথীতে অর্ন্তভূক্ত করে দিত। মিনহাজ ৩/১৮৫
No comments: