কূপের মাসআলা
কূপের মাসআলা
কূপের মাসআলা
১। মাসআলাঃ (১০০ বর্গ হাতের চেয়ে ছোট) কূপে কোন নাপাক জিনিস পড়িলে কূপ নাপাক হইয়া যায়, বেশী পড়ুক আর কমই পড়ুক উহার পানি সম্পূর্ণ বাহির করিয়া ফেলিলে উহা পাক হইয়া যায়। যখন সমস্ত পানি বাহির হইয়া যাইবে, তখন কুপের ভিতরের চারি দেওয়াল ইত্যাদ আর ধোয়ার দরকার পরে না, শুধু পানি বাহির করিয়া ফেলিলে সব পাক হইয়া যাইবে। যে বালতি, ডুলচি বা দড়ির দ্বারা পানি বাহির করা হয় তাহাও ধোয়ার দরকার নাই। পানি বাহির হইয়া যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সব পাক হইয়া যায়। সমস্ত পানি বাহির করার অর্থ এই যে, এত পরিমাণ পানি উঠাইবে যে, কূপের পানি কম হইয়া যায় এবং এখন আর বালতি অর্ধেকও ভরে না তখনই বুঝিবে সব পানি উঠান হইয়াছে। ━হেদায়া
২। মাসআলাঃ কবুতর বা চড়ুইর মল কূপে পড়িলে পানি নাপাক হইবে না। মুরগীর বা হাঁসের মল পড়িলে নাপাক হইবে। তখন সমস্ত পানি বাহির করা ওয়াজিব হইবে। ━মুনইয়া
৩। মাসআলাঃ কূপে কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল প্রস্রাব করিলে বা অন্য কোন নাজাছাত পড়িলে সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। ━মুনইয়া
৪। মাসআলাঃ কূপে মানুষ, কুকুর, বকরী বা এই শ্রেণীর অন্য কোন জন্তু পড়িয়া মরিয়া গেলে সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে; আর যদি বাহিরে মরিয়া ভিতরে পড়ে তাহাতেও এই একই হুকুম। ━হেদায়া
৫। মাসআলাঃ কোন জন্তু ছোট হউক বা বড় হউক কূপে পড়িয়া মরিয়া ফুলিয়া পঁচিয়া গেলে সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। অতএব, যদি ইঁদুর বা চড়ুই পাখীও পড়িয়া মরিয়া ফাটিয়া বা ফুলিয়া যায়, তবে সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। ━হেদায়া
৬। মাসআলাঃ ইঁদুর, চড়ুই পাখী বা এই শ্রেণীর অন্য কোন প্রাণী যদি কূপে পড়িয়া শুধু মরিয়া যায়, কিন্তু ফাটেও নাই, ফুলেও নাই, তবে প্রথমে মৃত প্রাণীটি বাহির করিয়া ফেলিবে, তৎপর ২০ বালতি পানি বাহির করা ওয়াজিব। এবং ৩০ বালতি বাহির করা বেশী ভাল। মৃত প্রাণীকে বাহির নাকরিয়া পানি বাহির করার কোনই সার্থকতা নাই। যদি মৃত প্রাণীকে বাহির করার পূর্বে পানি বাহির করিতে মুরু করিয়া থাকে, তবে তাহার হিসাব ঐ মৃত প্রাণী বাহির করার পর হইতে ধরিতে হইবে; উহা বাহির করার পূর্বে যত বালতি বাহির করা হইয়াছে তাহা হিসাবে ধরা হইবে না। ━হেদায়া
৭। মাসআলাঃ বড় গিরগিট (কাকলাস) যাহার মধ্যে প্রবহমান রক্ত থাকে, তাহা কূপে পড়িয়া মরিয়া গেলে যদি ফুলিয়া ফাটিয়া না থাকে, তবে ২০ বালতি পানি বাহির করিতে হইবে, কিন্তু ৩০ বালতি বাহির করা বেশী ভাল। আর যে সব গিরগিটের (টিকটিকির) মধ্যে প্রবহমান রক্ত নাই তাহা মরিলে পানি নাপাক হয় না। ━হেদায়া
৮। মাসআলাঃ কবুতর, মুরগী, বিড়াল বা এই ধরণের অন্য কোন জন্তু কূপে পড়িয়া মরিয়া যদি ফুলিয়া না থাকে, তবে ৪০ বালতি পানি বাহির করা ওয়াজিব, ৬০ বালতি বাহির করা বেশী ভাল। ━হেদায়া
৯। মাসআলাঃ যে কূপে যে বালতি বা ডুলচি ব্যবহার করা হয় সেই কূপের জন্য সেই বালতিরই হিসাব ধরা হইবে! আর যদি অনেক বড় বালতির দ্বারা পানি বাহির করা হয়, তবে নিত্যকার ব্যবহৃত বালতির পরিমাণে হিসাব করিয়া লইবে। যেমন, হয়ত ৩০ বালতি পানি বাহির করিতে হইবে; আর যে বালতি দ্বারা বাহির করিতেছে তাহাতে এই কূপের বালতির ২ বালতি পানি ধরে, তবে ঐ বড় বালতির ১৫ বালতি বাহির করিলেই চলিবে। আর যদি ৪ বালতি পানি ধরে, তবে ৪ বালতি ধরিতে হইবে। মোটকথা, যত বালতি পানি ধরিবে তত বালতি হিসাব করিতে হইবে এবং সেই পরিমাণ পানি বাহির করিয়অ ফেলিতে হইবে। (কূপ বলিতে কাঁচা এবং পাকা উভয়ই বুঝায়।) ━হেদায়া
১০। মাসআলাঃ যদি কূপ এমন হয় যে, সব সময়ই নিম্ন হইতে বেগে পানি উঠিতে থাকে, কিছুতেই পানি শেষ করা যায় না, তবে অনুমান করিয়া যে পরিমাণ পানি প্রথমে ছিল সে পরিমাণ বাহির করিতে হইবে।
পানি অনুমান করিবার কয়েকটি ছুরত আছে; একটি এই যে, যেমন, পাঁচ হাত পানি আছে, তবে একদমে ১০০ বালতি পানি বাহির করিয়া দেখিবে যে, কত কম হইয়াছে। যদি এক হাত কম হইয়া থাকে, তবে এই হিসাবে পাঁচ হাত পানি বাহির করিতে ৫০০ বালতি পানি বাহির করিতে হইবে। দ্বিতীয় ছুরত এই যে, যাহারা পানির সঠিক অনুমান করিতে পারে সেই রকম দুইজন পরহেযগার মুসলমানের দ্বারা অনুমান করাইবে। তাহারা যত বালতি বলে তত বালতি বাহির করিয়া ফেলিবে। এই উভয় ছুরতের কোনটিই পারা না গেলে ৩০০ বালতি বাহির করাইয়া দিবে। ━হেদায়া
১১। মাসআলাঃ কূপে মৃত ইঁদুর বা অন্য কিছু মৃত দেখা গেল, উহা পতিত হওয়ার সময় জানা নাই; কিন্তু ফুলেও নাই, ফোটেও নাই। এমতাবস্থায় যাহারা ঐ কূপের পানির দ্বারা ওযূ করিয়া নামায পড়িয়াছে তাহাদের দেখার সময় হইতে এক দিন এক রাতের নামায দোহরাইতে হইবে। আর এক দিন এক রাতের মধ্যে যে সব কাপড় চোপড় ধোয়া হইয়াছে সে সব পুনরায় ধুইতে হইবে। ━হেদায়া
আর যদি মরিয়া বা ফুলিয়া ফাটিয়া থাকে, তবে তিন দিন তিন রাতের নামায দোহরাইতে হইবে। কিন্তু যাহারা ঐ পানির দ্বারা ওযূ করে নাই তাহাদের অবশ্য দোহরাইতে হইবে না। এই ব্যবস্থাই বেশী উত্তম! (ইহা ইমাম আযম ছাহেবের মত।) কিন্তু কোন কোন আলেম বলিয়াছেন, নাপাকী দেখার সময় হইতেই কূপ নাপাক ধরিতে হইবে, তাহার পূর্বের নামায ও ওযূ সব দুরুস্ত হইয়া গিয়াছে। যদি কেহ এই শেষোক্ত মাসআলা অনুযায়ী আমল করে, তবে তাহাও দুরুস্ত হইবে। ━হেদায়া, মুনইয়া, দুররুল মুখতার
১২। মাসআলাঃ কাহারও গোছলের হাজত হইয়াছে। সে বালতি উঠাইবার জন্য কূপের ভিতর নামিয়াছে, কিন্তু তাহার শরীরে বা কাপড়ে কোন নাপাকী লাগে নাই; তবে তাহাতে কূপ নাপাক হইবে না। এমন কি যদি কোন কাফের কূপে নামে আর তাহার শরীরে বা কাপড়ে কোন নাপাকী না থাকে, তবে কূপ নাপাক হইবে না। আর যদি শরীরে বা কাপড়ে কোন নাপাকী লাগিয়া থাকে, তবে কূপ নাপাক হইয়া যাইবে, সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। আর নাপাকী সম্বন্ধে সন্দেহ থাকিলে, শুধু সন্দেহের কারণে কূপ নাপাক হইবে না, এই সন্দেহ অবস্থায় ২০/৩০ বালতি পানি বাহির করিয়া ফেলা ভাল।
১৩। মাসআলাঃ বকরী বা ইঁদুর কূপের মধ্যে পড়িয়া জীবিতই বাহির ইয়া আসিয়াছে, তবে পানি পাক আছে, পানি বাহির করিতে হইবে না। ━দুররে মুখতার
১৪। মাসআলাঃ বিড়াল ইঁদুর ধরিয়া যখম করার রক্ত বাহির হইতেছে এবং বিড়ালের দাঁত হইতে ছুটিয়া গিয়া রক্তসহ কূপে পড়িয়া গিয়াচে, এমতাবস্থায় সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। ━শামী
১৫। মাসআলাঃ ইঁদুর নাপাক ড্রেন হইতে বাহির হইয়া শরীরের নাপাকীসহ কূপে পড়িয়া গিয়াছে, তবে মরুক বা না মরুক ঐ পানি বাহির করিতে হইবে। ━শামী
১৬। মাসআলাঃ ইঁদুরের লেজ কাটিয়া কূপে পড়িলে সমস্ত পানি বাহির করিতে হইবে। রক্ত বিশিষ্ট গিরগিটের লেজ পড়িলেও এই হুকুম। ━রদ্দুল মোহতার
১৭। মাসআলাঃ যে জিনিস পড়ায় কূপ নাপাক হইয়াছে, শত চেষ্টা সত্ত্বেও তাহা বাহির করা যায় না, তবে উহা যদি এরকম জিনিস হয় যে, নিজে তো পাক কিন্তু অন্য নাপাক জিনিস লাগিয়া গিয়াছিল যেমন, নাপাক কাপড়, নাপাক বল, নাপাক জুতা, এমতাবস্থায় শুধু সমস্ত পানি বাহির করিয়া ফেলিলেই কূপ পাক হইয়া যাইবে। আর যদি সে জিনিস নিজেই নাপাক হয় যেমন━কোন মৃত জন্তু ইঁদুর ইত্যাদি, তবে যে পর্যন্ত এই এক্বীন না হইবে যে, ঐ জিনিস পচিয়া গলিয়া সম্পূর্ণ মাটি হইয়া গিয়াছে, সে পর্যন্ত ঐ কূপ পাক হইতে পারে না। যখন এই এক্বীন হইবে, তখন সমস্ত পানি বাহির করিয়া ফেলিলে অবশ্য কূপ পাক হইয়া যাইবে। ━ফাতাওয়ায় হিন্দিয়া
১৮। মাসআলাঃ যে পরিমাণ পানি বাহির করিবার হুকুম তাহা এক বারে বাহির করুক, বা অল্প অল্প করিয়া কয়েক বারে বাহির করুক সব অবস্থাই (হুকুমের পরিমাণ পানি বাহির করা হইলে) কূপ পাক হইয়া যাইবে। ━রদ্দুল মোহতার।
No comments: