মাযূরের মাসআলা
মাযূরের মাসআলা
১। মাসআলাঃ যাহার নাক বা অন্য কোন যখম হইতে অনবরত রক্ত বহিতে থাকে বা অনর্গল পেশাবের ফোঁটা আসিতে থাকে, এমন কি নামাযের সম্পূর্ণ ওয়াক্তের মধ্যে এতটুকু সময়ও বিরাম হয় না যাহাতে শুধু ফরয অঙ্গগুলি ধুইয়া ওযূর সহিত সংক্ষেপে ফরয নামায আদায় করিয়া লইতে পারে, এইরূপ ব্যক্তিকে মাযুর বলে। মাযুরের হুকুম এই যে, প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে তাজা ওযূ করিয়া নামায পড়িতে হইবে। যে পর্যন্ত ঐ ওয়াক্ত থাকিবে সে পর্যন্ত তাহার ওযূ থাকিবে; (ওযরজনিত রক্ত বা পেশাব বাহির হওয়ার কারণে তাহার ওযূ যাইবে না।) কিন্তু যে রোগের কারণে মাযুর হইয়াছে, তাহা ছাড়া ওযূ টুটার অন্য কোন কারণ পাওয়া গেলে অবশ্য ওযূ টুটিয়া যাইবে এবং আবার ওযূ করিতে হইবে। যেমন, কাহারও নাক দিয়া অনবরত রক্ত বাহির হইতে থাকে, একেবারেই বন্ধ হয় না, সে যোহরের সময় ওযূ করিল তবে যে পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকিবে সে পর্যন্ত ঐ নাকের রক্তের কারণে তাহার ওযূ টুটিবে না; কিন্তু যদি পেশাব-পায়খানা করিয়া থাকে, বা সূঁচ বিদ্ধ হইয়া রক্ত বাহির হইয়া থাকে, তবে ওযূ টুটিয়া যাইবে এবং পুনরায় ওযূ করিতে হইবে। যখন যোহরের ওয়াক্ত অতীত হইয়া আছরের ওয়াক্ত আসিবে, তখন আবার ওযূ করিতে হইবে। এইরূপে প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে তাজা ওযূ করিতে হইবে এবং ওযূর দ্বারা ফরয, নফল সব নামায পড়িতে পারিবে। ━শরহে তানবীর
২। মাসআলাঃ মাযুর ব্যক্তি ফজরের সময় ওযূ করিয়াছে সূর্যোদয় হইলে সেই ওযূ দিয়া আর নামায পড়িতে পারিবে না, আবার ওযূ করিতে হইবে। যদি সূর্যোদয়ের পর ওযূ করিয়া থাকে, তবে সে ওযূ দিয়া যোহরের নামায পড়িতে পারে, নতুন ওযূ করিতে হইবে না। কিন্তু আছরের ওয়াক্ত আসিলে নতুন ওযূ করিতে হইবে। যদি অন্য কোন কারণে ওযূ টুটিয়া থাকে, তবে পৃথক কথা। ━শরহে বেদায়া
৩। মাসআলাঃ কাহারও একটি যখম ছিল তাহা হইতে সব সময় রক্ত বাহির হইত; কিন্তু ওযূ করিবার পর আর একটা যখম হইয়া আরও রক্ত বাহির হইতে লাগিল, তখন তাহার ওযূ টুটিয়া গিয়াছে, আবার ওযূ করিতে হইবে। ━শরহে তানবীর
৪। মাসআলাঃ মাযুরের হুকুম পাইবার জন্য শর্ত এই যে, একটা ওয়াক্ত সম্পূর্ণ এমনভাবে গুযারিয়া যাইবে, যেন অবিরাম রক্ত বাহির হইতে থাকে, এতটুকু সময়ের জন্যও বন্ধ হয় না যে, শুধু ঐ ওয়াক্তের ফরয নামাযটা ওযূর সহিত পড়িয়া লইতে পারে। যদি সম্পূর্ণ ওয়াক্তের মধ্যে এতটুকু সময় মিলে যে ওযূর সহিত ঐ ওয়াক্তের ফরয নামায পড়িয়া লইতে পারে, তবে আর তাহাকে মাযুর বলা যাইবে না। মাযুরের জন্য যে হুকুম আর যে মাফ আছে, তাহাও সে পাইবে না; কিন্তু এক ওয়াক্ত সম্পূর্ণ এরূপভাবে গুযারিয়া গেল যে, পবিত্রতার সহিত নামায পড়ার সুযোগ পায় নাই, তখন সে মাযুর হইল। এখন তাহাকে প্রত্যেক ওয়াক্তে নতুন ওযূ করিতে হইবে। তারপর যখন দ্বিতীয় ওয়াক্ত আসিবে, তখন সম্পূর্ণ ওয়াক্তের রক্ত বাহির হওয়া শর্ত নয়; বরং যদি পূর্ণ ওয়াক্তের মধ্যে একবারও রক্ত আসে আর সব সময় ভাল থাকে, তবুও সে মাযুরেরই হুকুম পাইবে। যদি এক ওয়াক্ত সম্পূর্ণ এরকম গুযারিয়া যায় যে, রক্ত একবারও বাহির হয় নাই, তখন আর সে মাযুর থাকিবে না। যতবার রক্ত বাহির হইবে, ততবারই ওযূ টুটিয়া যাইবে। (মাসআলাটা কিছু কঠিন, ভালমতে বুঝিয়া রাখিবে!) ━শরহে তানবীর
৫। মাসআলাঃ যোহরের ওয়াক্ত আরম্ভ হইলে পর যদি কাহারও রক্ত বাহির হইতে শুরু হয়, তবে তাহার যোহরের শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত (অর্থাৎ, যখন এতটুকু সময় থাকে যে, ফরয ওযূর অঙ্গগুলি ধুইয়া শুধু ফরয চারি রাকাআত নামায আদায় করিতে পারে, তখন পর্যন্ত) অপেক্ষা করিতে হইবে। যদি রক্ত বন্ধ হইয়া যায়, তবে ত ভালই, নতুবা ওযূ করিয়া নামায পড়িয়া লইবে, (কিন্তু মাযুরের হুকুম পাইবে না।) তারপর আবার আছরের সময়ও যদি সম্পূর্ণ ওয়াক্ত এই রকমভাবেই রক্ত বাহির হইতে থাকে যে, নামায পড়িবার জন্য বিরাম পাওয়া যায় না, তবে এখন আছরের ওয়াক্ত গুযারিয়া যাওয়ার পর তাহার উপর মাযূরের হুকুম লাগান হইবে। যদি আছরের ওয়াক্ত কিছু থাকিতে রক্ত বন্ধ হইয়া থাকে, তবে আর সে মাযূর হইবে না। যে সব নামায এই ওয়াক্তের মধ্যে পড়িয়াছে তাহা দুরুস্ত হয় নাই; সুতরাং দোহরাইয়া পড়িতে হইবে। (আছরের ওয়াক্তেও মাকরূহ ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে হইবে। যদি রক্ত বন্ধ হইয়া যায়, তবে ত ভালই, নতুবা ওযূ করিয়া নামায মাকরূহ ওয়াক্তের আগেই পড়িয়া লইবে; কিন্তু (মাকরূহ) ওয়াক্ত থাকিতে থাকিতে রক্ত বন্ধ হইয়া গেলে ঐ নামায আবার পড়িতে হইবে।) ━রঃ মোহতার
৬। মাসআলাঃ উপরোক্ত নিয়মানুসারে যাহার উপর মাযূরের হুকুম লাগান হইয়াছে এরকম একজন লোক পেশাব-পায়খানা ইত্যাদির কারণে ওযূ করিয়াছি, ওযূ করিবার সময় রক্ত (অর্থাৎ, যে কারণে সে মাযূরের হুকুম পাইয়াছে তাহা) বন্ধ ছিল, ওযূ শেষ করার পর রক্ত বাহির হইতে শুরু হইয়াছে, এখন এই রক্ত বাহির হওয়ার কারণে তাহার ওযূ টুটিয়া যাইবে; কিন্তু বিশেষ করিয়া ঐ রক্ত বাহির হওয়ার কারণে যে ওযূ করিবে, সে ওযূ অবশ্য আবার রক্ত বাহির হওয়ার কারণে টুটিবে না। ━আলমগীরী
৭। মাসআলাঃ যদি এই রক্ত ইত্যাদি (অর্থাৎ, যাহার কারণে মাযূরের হুকুম লাগান হইয়াছে তাহা) কাপড়ে লাগে এবং এরূপ মনে হয় যে, নামায শেষ করিবার পূর্বে আবার লাগিয়া যাইবে, তবে ঐ রক্ত ধোয়া ওয়াজিব নয়। আর যদি মনে হয় যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে রক্ত লাগিবে না; পাক কাপড়েই নামায শেষ করিতে পারিবে, তবে ধুইয়া লওয়া ওয়াজিব, রক্ত এক দেরহাম১ পরিমাণ অপেক্ষা বেশী হইলে উহা না ধুইলে নামায হইবে না। ━শরহে তানবীর
No comments: