মিকদাদ ইবন ’আমর (রা:) এর জীবনী
মিকদাদ ইবন ’আমর (রা:) এর জীবনী
নাম মিকদাদ, কুনিয়াত আবুল আসওয়াদ, আবু ’আমর ও আবু সাঈদ। পিতা ’আমর ইবন সা’লাবা। তাঁর পিতৃ পুরুষের আদি বাসস্থান ‘বাহারা’। ইবনুল কালবী বর্ণনা করেন, মিকদাদের পিতা ’আমর তাঁর গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ‘কিসাস’ বা প্রতিশোধের ভয়ে ‘হাদরামাউতেই’ পালিয়ে যান এবং কিন্দার সাথে মৈত্রী চুক্তি করেন। এ কারণে তাঁকে ‘কিন্দী’ বলা হয়। তিনি হাদরামাউতের এক নারীকে বিয়ে করেন এবং তার গর্ভেই ‘মিকদাদ’ জম্মগ্রহণ করেন। এই হাদরামাউতেই মিকদাদ বেড়ে ওঠেন। এখানে আবু শাম্মার ইবন হাজার আল কিন্দী নামক এক ব্যক্তির সাথে তাঁর ঝগড়া হয় এবং তরবারির এক আঘাতে তার একটি পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। অতঃপর পালিয়ে মক্কায় চলে যান। মক্কায় তিনি আল-আসওয়াদ ইবন ’আবদ ইয়াগূসের সাথে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে থাকেন। আল-আসওয়াদের সাথে তাঁর সম্পর্ক এত মধুর ও ঘনিষ্ঠ হয় যে, মিকদাদকে তিনি পালিত পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন। এভাবে তিনি মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (আসওয়াদের পুত্র মিকদাদ) নামে পরিচিতি লাভ করেন। অতঃপর পবিত্র কুরআনের ‘ওয়াদয়ূহুম লি আবায়িহিম’ (তাদেরকে তাদের পিতার নামেই ডাক)-এ আয়াতটি নাযিল হলে তিনি আল-আসওয়াদের পরিবর্তে ‘মিকদাদ ইবন আমর’ (আমরের পুত্র মিকদাদ)-এ পরিচিতি গ্রহণ করেন। আর এ কারণে ইতিহাসে কোথাও তাঁকে মিকদাদ ইবন আমর আবার কোথাও মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (আল-ইসাবা, উসুদুল গাবা)।
মিকদাদ মক্কায় আশ্রয় নেয়ার পর কিছুদিন যেতে না যেতে তাওহীদের আওয়ায তাঁর কানে প্রবেশ করে। হযরত রাসূলে করীমের দাওয়াত ও তাবলীগ তাঁকে ইসলামের সাথে প্রথম পরিচয় করে দেয়। এ সেই সময়ের কথা যখন ইসলামের কট্টর দুশমনরা মুসলমানদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছিল। তাদের ভয়ে অনেকেই তখন ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রেখেছিল। কিন্তু মিকদাদ ইসলাম গ্রহণ করার পর সত্যকে গোপন করে রাখা সমীচীন মনে করলেন না। তিনি প্রথম পর্যায়ের সাত ব্যক্তির অন্যতম, যারা সেই চরম সন্ত্রাসের মুহূর্তে প্রকাশ্যে নিজেদের ঈমান আনার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই সাত জনের অন্য ছয়জন হলেন রাসূলুল্লাহ (সা), আবু বকর, ’আম্মার, তাঁর মা সুমাইয়্যা, সুহাইব ও বিলাল (রা)। (হায়াতুস সাহাবা-১/২১৮)।
রাসূলুল্লাহর (সা) চাচাতো বোন ‘দুবায়া বিনতু যুবাইর ইবন আবদিল মুত্তালিবের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বর্ণিত আছে, একদিন আবদুর রহমান ইবন আউফের সাথে তিনি বসে আছেন। হঠাৎ আবদুর রহমান জিজ্ঞেস করেন, মিকদাদ তুমি বিয়ে করছো না কেন? মিকদাদ সরলভাবে সাথে সাথে জবাব দেন, তোমার মেয়েকেই আমার সাথে বিয়ে দাও না। এ কথায় আবদুর রহমান অপমান বোধ করেন। তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন এবং মিকদাদকে যথেষ্ট গালমন্দ করেন। মিকদাদ রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে এসে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। রাসূল (সা) বললেন, আমিই তোমার বিয়ে দেব। অতঃপর তিনি চাচাত বোন ‘দুবায়া’-র সাথে মিকদাদের বিয়ে দেন। (আল-ইসাবা)
প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেয়ার পর মিকদাদের ওপর মুসীবত নেমে আসে। রাসূলুল্লাহর (সা) অনুমতি নিয়ে তিনি হাবশায় হিজরাত করেন। সেখানে কিছুকাল অবস্থানের পর আবার মক্কায় ফিরে আসেন। তখন মদীনায় হিজরাতের হিড়িক পড়ে গেছে। বিশেষ কিছু অসুবিধার কারণে তিনি মদীনায় হিজরাত করতে পারলেন না। এমন কি রাসূলুল্লাহর মদীনায় হিজরাতের পরও তিনি মক্কায় থেকে গেলেন। মক্কা ও মদীনার মধ্যে সাময়িক সংঘর্ষ হলে তিনি এবং উতবা ইবন গাযওয়ান কুরাইশদের একটি অগ্রবর্তী অনুসন্ধানী দলের সদস্য হিসাবে মদীনার দিকে রওয়ানা হন। এই বাহিনীর নেতা ছিলেন ইকরিমা ইবন আবী-জাহল। পথিমধ্যে মদীনার মুজাহিদদের একটি দলের সাথে তাদের ছোট খাট একটা সংঘর্ষ হয়। এই মুসলিম মুজাহিদ দলের নেতা বা আমীর ছিলেন হযরত উবাইদা ইবনুল হারিস (রা)। সুযোগ বুঝে এ সময় মিকদাদ ও উতবা ইবন গাযওয়ান মুসলিম মুজাহিদ দলে ভিড়ে যান এবং তাদের সাথে মদীনায় পৌঁছেন। মদীনায় তাঁরা হযরত কুলসুম ইবন হিদামের অতিথি হন। (উসুদুল গাবা) মদীনায় তিনি হযরত উবাই ইবন কা’বের (রা) অনুরোধে বনী আদীলা (মতান্তরে জাদীলা)-তে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাসূল (সা) তাঁকে সেই এলাকায় একখণ্ড জমি দান করেন।
হিজরী দ্বিতীয় সনে শিরক ও তাওহীদের মধ্যে প্রথম প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘর্ষ শুরু হয়। এ বছরই কুরাইশ বাহিনী বদর প্রান্তরে উপনীত হয়। রাসূলুল্লাহর (সা) সাহাবীদের জন্য এ ছিল প্রথম পরিক্ষা। রাসূল (সা) এ ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ চেয়ে তাঁদের ঈমানের পরীক্ষা নিতে চাইলেন। হযরত সিদ্দীকে আকবর ও ফারুকে ’আজম প্রমুখ সাহাবা ভাষণ দিয়ে তাঁদের কুরবানী ও আত্মত্যাগের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হযরত মিকদাদও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি এক আবেগময় ভাষণ দান করেন। ভাষণে তিনি রাসূলকে (সা) আশ্বাস দান করে বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলুন। আপনার সাথে আছি। আল্লাহর কসম, বনী-ইসরাইলরা তাদের নবী মুসাকে বিলেছিলঃ তুমি ও তোমার রব দু’জন যাও এবং যুদ্ধ কর, আর আমরা এখানে বসে থাকি – আমরা আপনাকে তেমন কথা বলবো না। বরং আমরা আপনাকে বলবোঃ আপনি ও আপনার রব দু’জন যান ও তাদের সাথে যুদ্ধ করুন আমরাও আপনাদের সাথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। যিনি সত্যসহ আপনাকে পাঠিয়েছেন সেই সত্তার কসম, আপনি যদি আমাদের ‘বারকুল গিমাদ’ পর্যন্ত নিয়ে যান, আমরা আপনার সাথে যাব এবং আপনার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। আমরা আপনার ডানে, বামে, সামনে ও পেছনে সর্বদিক থেকে যুদ্ধ করবো –যতক্ষণ না আল্লাহ আপনাকে বিজয় দান করেন।” (রিজালুন হাওলার রাসূল) তাঁর এই আবেগময় ভাষণ শুনে খুশীতে রাসূলুল্লহর (সা) চেহারা মুবারক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
মিকদাদ মক্কায় আশ্রয় নেয়ার পর কিছুদিন যেতে না যেতে তাওহীদের আওয়ায তাঁর কানে প্রবেশ করে। হযরত রাসূলে করীমের দাওয়াত ও তাবলীগ তাঁকে ইসলামের সাথে প্রথম পরিচয় করে দেয়। এ সেই সময়ের কথা যখন ইসলামের কট্টর দুশমনরা মুসলমানদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালাচ্ছিল। তাদের ভয়ে অনেকেই তখন ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রেখেছিল। কিন্তু মিকদাদ ইসলাম গ্রহণ করার পর সত্যকে গোপন করে রাখা সমীচীন মনে করলেন না। তিনি প্রথম পর্যায়ের সাত ব্যক্তির অন্যতম, যারা সেই চরম সন্ত্রাসের মুহূর্তে প্রকাশ্যে নিজেদের ঈমান আনার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই সাত জনের অন্য ছয়জন হলেন রাসূলুল্লাহ (সা), আবু বকর, ’আম্মার, তাঁর মা সুমাইয়্যা, সুহাইব ও বিলাল (রা)। (হায়াতুস সাহাবা-১/২১৮)।
রাসূলুল্লাহর (সা) চাচাতো বোন ‘দুবায়া বিনতু যুবাইর ইবন আবদিল মুত্তালিবের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বর্ণিত আছে, একদিন আবদুর রহমান ইবন আউফের সাথে তিনি বসে আছেন। হঠাৎ আবদুর রহমান জিজ্ঞেস করেন, মিকদাদ তুমি বিয়ে করছো না কেন? মিকদাদ সরলভাবে সাথে সাথে জবাব দেন, তোমার মেয়েকেই আমার সাথে বিয়ে দাও না। এ কথায় আবদুর রহমান অপমান বোধ করেন। তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন এবং মিকদাদকে যথেষ্ট গালমন্দ করেন। মিকদাদ রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে এসে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। রাসূল (সা) বললেন, আমিই তোমার বিয়ে দেব। অতঃপর তিনি চাচাত বোন ‘দুবায়া’-র সাথে মিকদাদের বিয়ে দেন। (আল-ইসাবা)
প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেয়ার পর মিকদাদের ওপর মুসীবত নেমে আসে। রাসূলুল্লাহর (সা) অনুমতি নিয়ে তিনি হাবশায় হিজরাত করেন। সেখানে কিছুকাল অবস্থানের পর আবার মক্কায় ফিরে আসেন। তখন মদীনায় হিজরাতের হিড়িক পড়ে গেছে। বিশেষ কিছু অসুবিধার কারণে তিনি মদীনায় হিজরাত করতে পারলেন না। এমন কি রাসূলুল্লাহর মদীনায় হিজরাতের পরও তিনি মক্কায় থেকে গেলেন। মক্কা ও মদীনার মধ্যে সাময়িক সংঘর্ষ হলে তিনি এবং উতবা ইবন গাযওয়ান কুরাইশদের একটি অগ্রবর্তী অনুসন্ধানী দলের সদস্য হিসাবে মদীনার দিকে রওয়ানা হন। এই বাহিনীর নেতা ছিলেন ইকরিমা ইবন আবী-জাহল। পথিমধ্যে মদীনার মুজাহিদদের একটি দলের সাথে তাদের ছোট খাট একটা সংঘর্ষ হয়। এই মুসলিম মুজাহিদ দলের নেতা বা আমীর ছিলেন হযরত উবাইদা ইবনুল হারিস (রা)। সুযোগ বুঝে এ সময় মিকদাদ ও উতবা ইবন গাযওয়ান মুসলিম মুজাহিদ দলে ভিড়ে যান এবং তাদের সাথে মদীনায় পৌঁছেন। মদীনায় তাঁরা হযরত কুলসুম ইবন হিদামের অতিথি হন। (উসুদুল গাবা) মদীনায় তিনি হযরত উবাই ইবন কা’বের (রা) অনুরোধে বনী আদীলা (মতান্তরে জাদীলা)-তে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাসূল (সা) তাঁকে সেই এলাকায় একখণ্ড জমি দান করেন।
হিজরী দ্বিতীয় সনে শিরক ও তাওহীদের মধ্যে প্রথম প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘর্ষ শুরু হয়। এ বছরই কুরাইশ বাহিনী বদর প্রান্তরে উপনীত হয়। রাসূলুল্লাহর (সা) সাহাবীদের জন্য এ ছিল প্রথম পরিক্ষা। রাসূল (সা) এ ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ চেয়ে তাঁদের ঈমানের পরীক্ষা নিতে চাইলেন। হযরত সিদ্দীকে আকবর ও ফারুকে ’আজম প্রমুখ সাহাবা ভাষণ দিয়ে তাঁদের কুরবানী ও আত্মত্যাগের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হযরত মিকদাদও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি এক আবেগময় ভাষণ দান করেন। ভাষণে তিনি রাসূলকে (সা) আশ্বাস দান করে বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলুন। আপনার সাথে আছি। আল্লাহর কসম, বনী-ইসরাইলরা তাদের নবী মুসাকে বিলেছিলঃ তুমি ও তোমার রব দু’জন যাও এবং যুদ্ধ কর, আর আমরা এখানে বসে থাকি – আমরা আপনাকে তেমন কথা বলবো না। বরং আমরা আপনাকে বলবোঃ আপনি ও আপনার রব দু’জন যান ও তাদের সাথে যুদ্ধ করুন আমরাও আপনাদের সাথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। যিনি সত্যসহ আপনাকে পাঠিয়েছেন সেই সত্তার কসম, আপনি যদি আমাদের ‘বারকুল গিমাদ’ পর্যন্ত নিয়ে যান, আমরা আপনার সাথে যাব এবং আপনার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। আমরা আপনার ডানে, বামে, সামনে ও পেছনে সর্বদিক থেকে যুদ্ধ করবো –যতক্ষণ না আল্লাহ আপনাকে বিজয় দান করেন।” (রিজালুন হাওলার রাসূল) তাঁর এই আবেগময় ভাষণ শুনে খুশীতে রাসূলুল্লহর (সা) চেহারা মুবারক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
বদর যুদ্ধ শুরু হলো। এ যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদদের মধ্যে মাত্র তিনজন ছিলেন অশ্বরোহী। মিকদাদ ইবন আমর, মুরছেদ ইবন আবী মুরছেদ ও যুবাইর ইবনুল আওয়াম। এ তিনজন ছাড়া অন্য সকলেই ছিলেন পদাতিক ও উষ্ট্ররোহী। তবে একাধিক বর্ণনা মতে এ যুদ্ধে মিকদাদই ছিলেন একমাত্র অশ্বরোহী মুজাহিদ। এ কারণে বলা হয়েছে, ‘মিকদাদই সর্বপ্রথম আল্লাহর রাস্তায় তাঁর ঘোড় দৌড়িয়াছেন।’
বদর ছাড়াও উহুদ, খন্দকসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করে বীরত্বর পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। হিজরী ২০ সনে হযরত আমর ইবনুল আস মিসর অভিযান পরিচালনা করেন। রাজধানী মদীনায় তিনি অতিরিক্ত সামরিক সাহায্য চেয়ে পাঠান। খলীফা উমার (রা) দশ হাজার সিপাহী ও চারজন অফিসার পাঠান। এই চারজনের একজন মিকদাদ ইবন আমর। খলীফা একটি চিঠিতে আমর ইবনুল আসকে লিখে জানান, ‘এই চার জনের প্রত্যেকেই শত্রু পক্ষের দশ হাজার সিপাহীর সমান’। এই সিপাহীদের যোগদানের পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র মিসরে ইসলামের পতাকা উডডীন হয়।
হযরত খুবাইবকে (রা) মক্কার মুশরিকরা শূলে চড়িয়ে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ (সা) খুবাইবের লাশ রাতের আঁধারে শূল থেকে নামিয়ে আনার জন্য যুবাইর ও মিকদাদকে পাঠান। তাঁরা খুবাইবের লাশ শূল থেকে নামিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে যখন রওয়ানা দেন তখন কুরাইশরা টের পেয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। (হায়াতুস সাহাবা)
হযরত মিকদাদের পেটটি ছিল খুবই মোটা। এ কারণে বার্ধক্যে তিনি ভীষণ কষ্ট পেতে থাকেন। এ কষ্ট লাঘব করার উদ্দেশ্যে তাঁর এক রোমান দাস তার পেটে অস্ত্রোপচার করে; কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় তিনি মদীনা থেকে তিন মাইল দূরে ‘জুরুফ’ নামক স্থানে হিজরী ৩৩ সনে ইহলোক ত্যাগ করেন। আমীরুল মুমিনীন হযরতব উসমান (রা) তাঁর জানাযার নামায পড়ান। লাশ মদীনার বাকী গোরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭০ বছর।
হযরত মিকদাদের মধ্যে সর্বোত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটেছিল। বদর যুদ্ধের সময় তিনি যে নিষ্ঠা ও সততাপূর্ণ আবেগ প্রকাশ করেন তাতে সমগ্র সাহাবা সমাজ তাঁকে ঈর্ষা করতে থাকে। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) বলতেনঃ ‘আফসূস! আমি যদি তখন বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণের উপযুক্ত হতাম এবং মিকদাদের কথাগুলি আমার মুখ থেকে বের হতো’। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন, ‘বদর যুদ্ধে আমি মিকদাদের সাথে ছিলাম। এ যুদ্ধে তাঁর সাথে থাকার বিষয়টি আমার কাছে এত প্রিয় যে, তার তুলনায় দুনিয়ার সব কিছু একেবারেই মূল্যহীন’। ইসলামের সূচনালগ্নের চরম দারিদ্র ও অভাব তাঁকে অনেকখানি সহনশীল ও বাস্তববাদী করে তুলেছিল। তিনি বলেন, “হিজরাত করে আমি যখন মদীনায় আসলাম, আমার থাকা-খাওয়ার কোন ঠিক-ঠিকানা ছিল না। ক্ষুধায় আমার মরণ-দশা হয়েছিল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সা) আমার দু’জন সংগীসহ আমাকে তাঁর আশ্রয়দাতা কুলসুম ইবন হিদামের বাড়ীতে স্থান দেন। তখন রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট মাত্র চারটি ছাগী। আমরা এতগুলি মানুষ এই ছাগীগুলির দুধপান করেই জীবন ধারণ করতাম। একদিন রাতে রাসূলুল্লাহ (সা) বাইরে কোথাও বেরিয়ে গেলেন। ফিরতে দেরী হল। আমি মনে করলাম, হয়তো কোন আনসারী তাঁকে দাওয়াত দিয়েছেন, তিনি খেয়েই ফিরবেন। এই ধারণা আমার মনে উদয় হতেই আমি উঠে পড়লাম এবং রাসূলুল্লাহর (সা) জন্য রাখা দুধটুকু এক চুমুকে পান করে ফেললাম। কিন্তু পরক্ষণেই চেতনা হলো, আমার ধারণা যদি ভুল হয় তাহলে তো ভীষণ লজ্জায় পড়তে হবে। আমার এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রাসূল (সা) ফিরে আসলেন এবং সোজা দুধ যেখানে থাকে সেদিকে এগিয়ে গেলেন। দেখলেন, পেয়ালা শুন্য। আমি আমার ভুলের জন্য লজ্জা ও অনুশোচনায় জর্জরিত হতে লাগলাম। বিশেষ করে তিনি যখন কিছু বলার জন্য হাত উঠালেন তখন আমার ভয়ের কোন সীমা থাকলো না। আমার ধারণা হল, রাসূলুল্লাহর (সা) বদ দুআয় এখনই আমার ইহ-পরকাল সব বরবাদ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁকে আমি বলতে শুনলাম, ‘আল্লাহুম্মা আতয়িমহু মান আতয়ামানী ওয়া আসকি মান সাকানী’- হে আল্লাহ, যে আমাকে আহার করালো তাকে তুমি আহার করাও, যে আমাকে পান করালো তাঁকে তুমি পান করাও। এই দুআ শুনে আমার মধ্যে সাহস সঞ্চার হলো। আমি উঠে ছাগীগুলির কাছে গেলাম, কোন ছাগীর ওলানে কিছু দুধ পাওয়া যায় কিনা এই আশায়। কিন্তু আল্লাহর সীমাহীন কুদরতে যে ছাগীর উলানেই হাত দিই না কেন প্রত্যেকটি দুধে পরিপূর্ণ পেলাম। প্রচুর পরিমাণে দুধ দুইয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) সামনে পেশ করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা সবাই পান করেছ কি? আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি প্রথমে পান করুন, তারপর সমস্ত ঘটনা খুলে বলছি। রাসূল (সা) পেট ভরে পান করলেন। আমার পূর্বের ভুল ও অনুশোচনার কথা মনে হওয়ায় হঠাৎ হেসে উঠলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আবুল আসওয়াদ, হাসছো কেন?’ আমি সব কথা খুলে বললাম। সব কিছু শুনে তিনি বললেন, “এ ছিল আল্লাহর রহমত। তুমি তোমার সাথী দু’জনকে ঘুম থেকে জাগালে না কেন, তারাও অনুগৃহীত হতো?”
বদর ছাড়াও উহুদ, খন্দকসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করে বীরত্বর পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। হিজরী ২০ সনে হযরত আমর ইবনুল আস মিসর অভিযান পরিচালনা করেন। রাজধানী মদীনায় তিনি অতিরিক্ত সামরিক সাহায্য চেয়ে পাঠান। খলীফা উমার (রা) দশ হাজার সিপাহী ও চারজন অফিসার পাঠান। এই চারজনের একজন মিকদাদ ইবন আমর। খলীফা একটি চিঠিতে আমর ইবনুল আসকে লিখে জানান, ‘এই চার জনের প্রত্যেকেই শত্রু পক্ষের দশ হাজার সিপাহীর সমান’। এই সিপাহীদের যোগদানের পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র মিসরে ইসলামের পতাকা উডডীন হয়।
হযরত খুবাইবকে (রা) মক্কার মুশরিকরা শূলে চড়িয়ে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ (সা) খুবাইবের লাশ রাতের আঁধারে শূল থেকে নামিয়ে আনার জন্য যুবাইর ও মিকদাদকে পাঠান। তাঁরা খুবাইবের লাশ শূল থেকে নামিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে যখন রওয়ানা দেন তখন কুরাইশরা টের পেয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। (হায়াতুস সাহাবা)
হযরত মিকদাদের পেটটি ছিল খুবই মোটা। এ কারণে বার্ধক্যে তিনি ভীষণ কষ্ট পেতে থাকেন। এ কষ্ট লাঘব করার উদ্দেশ্যে তাঁর এক রোমান দাস তার পেটে অস্ত্রোপচার করে; কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় তিনি মদীনা থেকে তিন মাইল দূরে ‘জুরুফ’ নামক স্থানে হিজরী ৩৩ সনে ইহলোক ত্যাগ করেন। আমীরুল মুমিনীন হযরতব উসমান (রা) তাঁর জানাযার নামায পড়ান। লাশ মদীনার বাকী গোরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭০ বছর।
হযরত মিকদাদের মধ্যে সর্বোত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটেছিল। বদর যুদ্ধের সময় তিনি যে নিষ্ঠা ও সততাপূর্ণ আবেগ প্রকাশ করেন তাতে সমগ্র সাহাবা সমাজ তাঁকে ঈর্ষা করতে থাকে। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) বলতেনঃ ‘আফসূস! আমি যদি তখন বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণের উপযুক্ত হতাম এবং মিকদাদের কথাগুলি আমার মুখ থেকে বের হতো’। হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন, ‘বদর যুদ্ধে আমি মিকদাদের সাথে ছিলাম। এ যুদ্ধে তাঁর সাথে থাকার বিষয়টি আমার কাছে এত প্রিয় যে, তার তুলনায় দুনিয়ার সব কিছু একেবারেই মূল্যহীন’। ইসলামের সূচনালগ্নের চরম দারিদ্র ও অভাব তাঁকে অনেকখানি সহনশীল ও বাস্তববাদী করে তুলেছিল। তিনি বলেন, “হিজরাত করে আমি যখন মদীনায় আসলাম, আমার থাকা-খাওয়ার কোন ঠিক-ঠিকানা ছিল না। ক্ষুধায় আমার মরণ-দশা হয়েছিল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সা) আমার দু’জন সংগীসহ আমাকে তাঁর আশ্রয়দাতা কুলসুম ইবন হিদামের বাড়ীতে স্থান দেন। তখন রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট মাত্র চারটি ছাগী। আমরা এতগুলি মানুষ এই ছাগীগুলির দুধপান করেই জীবন ধারণ করতাম। একদিন রাতে রাসূলুল্লাহ (সা) বাইরে কোথাও বেরিয়ে গেলেন। ফিরতে দেরী হল। আমি মনে করলাম, হয়তো কোন আনসারী তাঁকে দাওয়াত দিয়েছেন, তিনি খেয়েই ফিরবেন। এই ধারণা আমার মনে উদয় হতেই আমি উঠে পড়লাম এবং রাসূলুল্লাহর (সা) জন্য রাখা দুধটুকু এক চুমুকে পান করে ফেললাম। কিন্তু পরক্ষণেই চেতনা হলো, আমার ধারণা যদি ভুল হয় তাহলে তো ভীষণ লজ্জায় পড়তে হবে। আমার এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রাসূল (সা) ফিরে আসলেন এবং সোজা দুধ যেখানে থাকে সেদিকে এগিয়ে গেলেন। দেখলেন, পেয়ালা শুন্য। আমি আমার ভুলের জন্য লজ্জা ও অনুশোচনায় জর্জরিত হতে লাগলাম। বিশেষ করে তিনি যখন কিছু বলার জন্য হাত উঠালেন তখন আমার ভয়ের কোন সীমা থাকলো না। আমার ধারণা হল, রাসূলুল্লাহর (সা) বদ দুআয় এখনই আমার ইহ-পরকাল সব বরবাদ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁকে আমি বলতে শুনলাম, ‘আল্লাহুম্মা আতয়িমহু মান আতয়ামানী ওয়া আসকি মান সাকানী’- হে আল্লাহ, যে আমাকে আহার করালো তাকে তুমি আহার করাও, যে আমাকে পান করালো তাঁকে তুমি পান করাও। এই দুআ শুনে আমার মধ্যে সাহস সঞ্চার হলো। আমি উঠে ছাগীগুলির কাছে গেলাম, কোন ছাগীর ওলানে কিছু দুধ পাওয়া যায় কিনা এই আশায়। কিন্তু আল্লাহর সীমাহীন কুদরতে যে ছাগীর উলানেই হাত দিই না কেন প্রত্যেকটি দুধে পরিপূর্ণ পেলাম। প্রচুর পরিমাণে দুধ দুইয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) সামনে পেশ করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা সবাই পান করেছ কি? আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি প্রথমে পান করুন, তারপর সমস্ত ঘটনা খুলে বলছি। রাসূল (সা) পেট ভরে পান করলেন। আমার পূর্বের ভুল ও অনুশোচনার কথা মনে হওয়ায় হঠাৎ হেসে উঠলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আবুল আসওয়াদ, হাসছো কেন?’ আমি সব কথা খুলে বললাম। সব কিছু শুনে তিনি বললেন, “এ ছিল আল্লাহর রহমত। তুমি তোমার সাথী দু’জনকে ঘুম থেকে জাগালে না কেন, তারাও অনুগৃহীত হতো?”
হযরত মিকদাদ ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। তাঁর বুচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায় বহু ক্ষেত্রে ও ঘটনায়। তাঁর এক সাথী বর্ণনা করেছেন, একদিন আমরা মিকদাদের কাছে বসে ছিলাম। এমন সময় একজন তাবেয়ী তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, রাসূলুল্লাহর (সা) দর্শন লাভে ধন্য আপনার চোখ দু’টি কতই না সৌভাগ্যের অধিকারী। আল্লাহর কসম, আপনি যা কিছু দেখেছেন, তা দেখার এবং যেসব দৃশ্য ও ঘটনায় আপনি উপস্থিত হয়েছেন তাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমি খুবই লালায়িত। একথা শুনে মিকদাদ লোকটির উপর খুবই ক্ষেপে গেলেন। লোকেরা বললো, তা এত উত্তেজিত হওয়ার কি আছে? তিনি বললেন, বর্তমানকে ছেড়ে অতীতকে কামনা করা বৃথা কাজ। কারণ, একথা তার জানা নেই, তখন সে থাকলে তার ভূমিকা কী হতো। আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহর (সা) সমসাময়িক বহুলোক ঈমান না আনার কারণে তাদের ঠিকানা হয়েছে জাহান্নাম। সে কি জানে সে কোন দল্ভুক্ত হতো? এমন বিপদ থেকে আল্লাহ যে তাকে রক্ষা করেছেন এবং তিনি তাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) প্রতি ঈমানদার বানিয়েছেন এজন্য কি সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে না?
রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন তাঁকে একটি দলের আমীর নিযুক্ত করেন। তিনি ফিরে আসলে রাসূল (সা) জিজ্ঞেস করেন, ‘ইমারাত বা নেতৃত্ব কেমন লাগলো?’ জবাবে তিনি বড় একটি সত্য কথা বলে ফেলেন। বলেন, ‘নিজেকে আমার সবার ওপরে এবং অন্যদের আমার নীচে মনে হয়েছে। যিনি সত্যসহ আপনাকে পাঠিয়েছেন,তাঁর শপথ, আজকের পর আর কক্ষণো আমি দু’ব্যক্তির ওপর আমীর হবো না’। তিনি নিজের দুর্বলতা ঢাকার বা সত্য গোপন করার চেষ্টা করেননি। তিনি সব সময় রাসূলুল্লাহর এ হাদীসটি আওড়াতেনঃ ‘ফিতনা থেকে যে ব্যক্তি পরিত্রাণ পেয়েছে, সে প্রকৃত সৌভাগ্যবান।’
রাসূলুল্লাহকে (সা) তিনি নিজের প্রাণের চেয়ে ভেশী ভালোবাসতেন। তাঁর মধ্যে ছিল আল্লাহর রাসূলের (সা) হিফাজত বা নিরাপত্তার চরম দায়িত্বানুভূতি। মদীনায় কোন প্রকার হৈ চৈ দেখা গেলেই রাসূলুল্লাহর (সা) বাসগৃহের দরজায় তাঁকে সশস্ত্র ও অশ্বরোহী অবস্থায় দেখা যেত। ইসলামের বিধি-বিধান যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। ইসলামের প্রকাশ্য দুশমনদের বিরুদ্ধে যেমন ছিলেন সজাগ, তেমনি ছিলেন নিজের বন্ধুদের ইসলাম সম্পর্কে সামান্য উদাসীনতা ও ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে দারুণ সচেতন। একবার তিনি একটি ক্ষুদ্র বাহিনীর সাথে অভিযানে বের হলেন। শত্রু বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। বাহিনীর আমীর নির্দেশ দিলেন, বাহিনীর কোন সহস্যই আজ তাঁর সোয়ারী- পশু চড়ানোর জন্য ছাড়বে না। কিন্তু একজন মুজাহিদ বিষয়টি অবহিত ছিলেন না। তিনি আমীরের আদেশের বিপরীত কাজ করেন। এ জন্য তিনি আমীরের নিকট থেকে তাঁর প্রাপ্য শাস্তি থেকেও অধিক শাস্তি লাভ করেন। মুজাহিদটি কাঁদছিল, এমন সময় মিকদাদ তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করে বিষয়টি অবগত হলেন। অতঃপর তাঁর ডান হাতটি ধরে তাঁকে আমীরের কাছে টেনে নিয়ে গেলেন এবং আমীরের সাথে তর্ক করে তাঁর ভুল স্বীকার করতে বাধ্য করেন। আমীরকে তিনি বলেন, লোকটিকে কিসাস গ্রহণের সুযোগ দিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত করুন। মিকদাদের কথা আমীর মাথা পেতে নিলেন। অবশ্য লোকটি আমীরকে ক্ষমা করে দেন। এভাবে তিনি দ্বীনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় সর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতেন। তিনি প্রায় সব সময় বলতেন, ‘আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তোমাকে ভালোবাসতে এবং আমাকে এ খবরও দিয়েছেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন।’ এভাবে তিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা লাভে ধন্য হয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীকে সাতজন বিশ্বস্ত সাথী ও উযীর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে দেওয়া হয়েছে চৌদ্দ জন। তারা হলেনঃ হামযা, জাফর, আবু বকর, উমার, আলী, হাসান, হুসাইন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, সালমান, আম্মার, হুজাইফা, আবু জাফর, মিকদাদ ও বিলাল।
তোষামোদ বা প্রসংশা তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না। একবার হযরত উসমানের (রা) দরবারে কিছু লোক মিকদাদের সামনেই তাঁর প্রশংসা শুরু করে দিল। তিনি এতে রুষ্ট হলেন যে, তাদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারলেন। হযরত উসমান (রা) বলে উঠলেন, মিকদাদ, এ কী হচ্ছে? বললেন, রাসূলুল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা প্রশংসাকারীর মুখে মাটি ছুঁড়ে মার।’
ব্যবসা ছিল তাঁর আসল পেশা। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে খাইবার অঞ্চলে কিছু ভূমি দান করেন। পরবর্তীকালে মিকদাদের ওয়ারিসদের নিকট থেকে এক লাখ দিরহামের বিনিময়ে হযরত মুয়াবিয়া (রা) তা খরীদ করে নেন।
হযরত মিকদাদের স্ত্রী দুবায়া বর্ণনা করেন, একবার মিকদাদ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য বাকী’র একটি নির্জন স্থানে যান। তিনি কর্ম সমাধা করছেন, এমন সময় দেখতে পেলেন একটি ইঁদুর তার গর্ত থেকে একটি দিনার বের করে আনছে। এভাবে ইঁদুরটি মোট সতেরটি দীনার বের করে আনে। তিনি সেগুলি কুড়িয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট নিয়ে এসে ঘটনা খুলে বলেন। তিন গর্তে হাত দুকিয়েছেন কিনা রাসূল (সা) তা জানতে চান। তিনি যখন বললেন, না, তিনি হাত ঢুকাননি, তখন রাসূল (সা) বললেন, আল্লাহ তোমার এ সম্পদে বরকত দিন। তোমার এ সম্পদের উপর কোন যাকাত নেই। (হায়াতুস সাহাবা-৩/৬৪৫)
হযরত মিকদাদ (রা) রাসূলুল্লাহর (সা) থেকে বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আলী, আনাস, উদাইদুল্লাহ ইবন আদী, হাম্মাম ইবনুল হারস, আবদুর রহমান ইবন আবী লাইলা প্রমুখ সাহাবী তাঁর নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন তাঁকে একটি দলের আমীর নিযুক্ত করেন। তিনি ফিরে আসলে রাসূল (সা) জিজ্ঞেস করেন, ‘ইমারাত বা নেতৃত্ব কেমন লাগলো?’ জবাবে তিনি বড় একটি সত্য কথা বলে ফেলেন। বলেন, ‘নিজেকে আমার সবার ওপরে এবং অন্যদের আমার নীচে মনে হয়েছে। যিনি সত্যসহ আপনাকে পাঠিয়েছেন,তাঁর শপথ, আজকের পর আর কক্ষণো আমি দু’ব্যক্তির ওপর আমীর হবো না’। তিনি নিজের দুর্বলতা ঢাকার বা সত্য গোপন করার চেষ্টা করেননি। তিনি সব সময় রাসূলুল্লাহর এ হাদীসটি আওড়াতেনঃ ‘ফিতনা থেকে যে ব্যক্তি পরিত্রাণ পেয়েছে, সে প্রকৃত সৌভাগ্যবান।’
রাসূলুল্লাহকে (সা) তিনি নিজের প্রাণের চেয়ে ভেশী ভালোবাসতেন। তাঁর মধ্যে ছিল আল্লাহর রাসূলের (সা) হিফাজত বা নিরাপত্তার চরম দায়িত্বানুভূতি। মদীনায় কোন প্রকার হৈ চৈ দেখা গেলেই রাসূলুল্লাহর (সা) বাসগৃহের দরজায় তাঁকে সশস্ত্র ও অশ্বরোহী অবস্থায় দেখা যেত। ইসলামের বিধি-বিধান যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। ইসলামের প্রকাশ্য দুশমনদের বিরুদ্ধে যেমন ছিলেন সজাগ, তেমনি ছিলেন নিজের বন্ধুদের ইসলাম সম্পর্কে সামান্য উদাসীনতা ও ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে দারুণ সচেতন। একবার তিনি একটি ক্ষুদ্র বাহিনীর সাথে অভিযানে বের হলেন। শত্রু বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। বাহিনীর আমীর নির্দেশ দিলেন, বাহিনীর কোন সহস্যই আজ তাঁর সোয়ারী- পশু চড়ানোর জন্য ছাড়বে না। কিন্তু একজন মুজাহিদ বিষয়টি অবহিত ছিলেন না। তিনি আমীরের আদেশের বিপরীত কাজ করেন। এ জন্য তিনি আমীরের নিকট থেকে তাঁর প্রাপ্য শাস্তি থেকেও অধিক শাস্তি লাভ করেন। মুজাহিদটি কাঁদছিল, এমন সময় মিকদাদ তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করে বিষয়টি অবগত হলেন। অতঃপর তাঁর ডান হাতটি ধরে তাঁকে আমীরের কাছে টেনে নিয়ে গেলেন এবং আমীরের সাথে তর্ক করে তাঁর ভুল স্বীকার করতে বাধ্য করেন। আমীরকে তিনি বলেন, লোকটিকে কিসাস গ্রহণের সুযোগ দিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত করুন। মিকদাদের কথা আমীর মাথা পেতে নিলেন। অবশ্য লোকটি আমীরকে ক্ষমা করে দেন। এভাবে তিনি দ্বীনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় সর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতেন। তিনি প্রায় সব সময় বলতেন, ‘আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তোমাকে ভালোবাসতে এবং আমাকে এ খবরও দিয়েছেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন।’ এভাবে তিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা লাভে ধন্য হয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীকে সাতজন বিশ্বস্ত সাথী ও উযীর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে দেওয়া হয়েছে চৌদ্দ জন। তারা হলেনঃ হামযা, জাফর, আবু বকর, উমার, আলী, হাসান, হুসাইন, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, সালমান, আম্মার, হুজাইফা, আবু জাফর, মিকদাদ ও বিলাল।
তোষামোদ বা প্রসংশা তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না। একবার হযরত উসমানের (রা) দরবারে কিছু লোক মিকদাদের সামনেই তাঁর প্রশংসা শুরু করে দিল। তিনি এতে রুষ্ট হলেন যে, তাদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারলেন। হযরত উসমান (রা) বলে উঠলেন, মিকদাদ, এ কী হচ্ছে? বললেন, রাসূলুল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা প্রশংসাকারীর মুখে মাটি ছুঁড়ে মার।’
ব্যবসা ছিল তাঁর আসল পেশা। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে খাইবার অঞ্চলে কিছু ভূমি দান করেন। পরবর্তীকালে মিকদাদের ওয়ারিসদের নিকট থেকে এক লাখ দিরহামের বিনিময়ে হযরত মুয়াবিয়া (রা) তা খরীদ করে নেন।
হযরত মিকদাদের স্ত্রী দুবায়া বর্ণনা করেন, একবার মিকদাদ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য বাকী’র একটি নির্জন স্থানে যান। তিনি কর্ম সমাধা করছেন, এমন সময় দেখতে পেলেন একটি ইঁদুর তার গর্ত থেকে একটি দিনার বের করে আনছে। এভাবে ইঁদুরটি মোট সতেরটি দীনার বের করে আনে। তিনি সেগুলি কুড়িয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট নিয়ে এসে ঘটনা খুলে বলেন। তিন গর্তে হাত দুকিয়েছেন কিনা রাসূল (সা) তা জানতে চান। তিনি যখন বললেন, না, তিনি হাত ঢুকাননি, তখন রাসূল (সা) বললেন, আল্লাহ তোমার এ সম্পদে বরকত দিন। তোমার এ সম্পদের উপর কোন যাকাত নেই। (হায়াতুস সাহাবা-৩/৬৪৫)
হযরত মিকদাদ (রা) রাসূলুল্লাহর (সা) থেকে বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আলী, আনাস, উদাইদুল্লাহ ইবন আদী, হাম্মাম ইবনুল হারস, আবদুর রহমান ইবন আবী লাইলা প্রমুখ সাহাবী তাঁর নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
No comments: