বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, অধ্যায়ঃ হাউয অধ্যায় (৬১২৭-৬১৪১)
হাদিস ৬১২৭
ইয়াহইয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউয-এর কাছে পৌছব। অন্য সনদে আমর ইবনু আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউয-এর কাছে গিয়ে পৌছব। আর (ঐ সময়) তোমাদের কতিপয় লোককে নিঃসন্দেহে আমার সামনে উঠানো হবে। আবার আমার সামনে থেকে তাদেরকে পৃথক করে নেয়া হবে। তখন আমি আরয করব, প্রভু হে! এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, তোমার পরে এরা কি কীর্তি করেছে তাতো তুমি জানো না। আসিম আবূ ওয়াঈল থেকে তার অনুসরণ করেছে। এবং হুসায়ন হুযায়ফা সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদিস ৬১২৮
মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ)সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের সামনে আমার হাউয এর দূরত্ব হবে এতটুকু যতটুকু দূরত্ব জারবা ও আযরুহ নামক স্থানদ্বয়ের মাঝে।
হাদিস ৬১২৯
আমর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আল কাওসার হচ্ছে- কাসীর বা অধিক কল্যাণ, যা আল্লাহ তাঁআলা মুহাম্মাদ -কে দান করেছেন। রাবী আবূ বিশর বলেনঃ আমি সাঈদকে বললাম যে! লোকেরা তো মনে করে সেটি জান্নাতের একটা ঝর্না। তখন সাঈদ বললেনঃ এটা ঐ ঝর্ণা যা জান্নাতের মাঝে রয়েছে। তাতে আছে এমন কল্যাণ যা আল্লাহ তাঁআলা তাঁকে প্রদান করেছেন।
হাদিস ৬১৩০
সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার হাউয (হাউযে কাওসার) এক মাসের দূরত্বের সমান (বড়) হবে। তার পানি দুধের চেয়ে শুভ্র, তার ঘ্রাণ মিশক-এর চেয়ে সুগন্ধযুক্ত এবং তার পানপাত্রগুলি হবে আকাশের তারকার মত অধিক। যে ব্যাক্তি তা থেকে পান করবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না।
হাদিস ৬১৩১
সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার হাউযের পরিমাণ হল ইয়ামানের আয়লা ও সানঁআ নামক স্হানদ্বয়ের দূরত্বের সমান আর তার পানপাত্র সমূহ আকাশের তারকারাজির সংখ্যাতুল্য।
হাদিস ৬১৩২
আবূল ওয়ালীদ ও হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত। তিনি বলেছেনঃ আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, এমন সময় এক ঝর্নার কাছে এলে দেখি যে তার দুটি ধারে ফাপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এটা কি? তিনি বললেনঃ এটা ঐ কাওসার যা আপনার প্রভূ আপনাকে প্রদান করেছেন। তার মাটিতে অথবা ঘ্রাণে ছিল মানের মিশক এর সুগন্ধি। হুদবা (রহঃ) সন্দেহ করেছেন।
হাদিস ৬১৩৩
মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার সামনে আমার উম্মতের কতিপয় লোক হাউযের কাছে আসবে। তাদেরকে আমি চিনে নিব। আমার সামনে থেকে তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা আমার উম্মত। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি জানো না তোমার পরে এরা কি সব নতূন নতূন কীর্তি করেছে।
হাদিস ৬১৩৪
সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে সে হাউযের পানি পান করবো। আর যে পান করবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হবে। বারী আবূ হাযিম বলেনঃ নূমান ইবনু আবূ আইয়্যাশ আমার কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ করার পর বললেনঃ তুমিও কি সাহল থেকে এরুপ শুনেছ? তখন আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেনঃ আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তার কাছ থেকে এতটুকু অধিক শুনেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তখন বলব যে এরা তো আমারই উম্মত। তখন বলা হবে, তুমি তো জানো না তোমার পরে এরা কি সব নতুন নতুন কীর্তি করেছে। রাসুল বলেন তখন আমি বলব, আমার পরে যারা দ্বীনের মাঝে পরিবর্তন এনেছে তারা আল্লাহর রহমত থেকে দুরে থাকুক। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ অর্থাৎ অর্থ তাকে বের করে দিয়েছে। আহমাদ ইবনু শাবীব ইবনু সাঈদ হাবাতী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাত থেকে একদল লোক কিয়াঁমতের দিন আমার সামনে (হাউযে কাওসারে) উপস্থিত হবে। এরপর তাদেরকে হাউয থেকে পৃথক করে দেওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা আমার উম্মাত। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার পরে এরা ধর্মে নতুন সংযোজনের মাধ্যমে কি সব কীর্তি করেছে এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই তোমার জানানেই। নিশ্চয়ই এরা দ্বীন থেকে পিছনের দিকে ফিরে গিয়েছিল। শুআইব (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুল থেকে বর্ণিত। উকায়ল (রহঃ) বলেছেনঃ। যুবায়দী আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
হাদিস ৬১৩৫
আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) সাঈদ ইবনুল মূসা ইয়্যাব (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের থেকে বর্ননা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের থেকে কতিপয় লোক আমার সামনে হাউযে কাওসারে উপস্থিত হবে। তারপর তাদেরকে সেখান থেকে পৃথক করে নেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে রব! এরা আমার উম্মাত। তিনি বলবেন, তোমার পরে এরা (ধর্মে নতুন সংযোজনের মাধ্যমে) কি কীর্তিকলাপ করেছে সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমার জানানেই। নিঃসন্দেহে এরা দ্বীন থেকে পিছনের দিকে ফিরে গিয়েছিল।
হাদিস ৬১৩৬
ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক সময় আমি (হাশরের ময়দানে) দাড়িয়ে থাকব। হঠাৎ দেখতে পাব একটি দল এবং আমি যখন তাদেরকে চিনে ফেলব, একটি লোক বেরিয়ে আসবে। তখন আমার ও তাদের মাঝ থেকে এবং সে বলবে, আপনি আসুন। আমি বলব, কোথায়? সে বলবে, আল্লাহর কসম জাহান্নামের দিকে। আমি বলব, তাদের অবস্হা কি? সে বলবে নিশ্চয় এরা আপনার ইন্তেকালের পর দ্বীন থেকে পশ্চাঁদ দিকে সরে গিয়েছিল। এরপর হঠাৎ আরেকটি দল দেখতে পাব। আমি তাদেরকে চিনে ফেলব। তখন আমার ও তাদের মাঝ থেকে একটি লোক বেরিয়ে আসবে। সে বলবে, আসুন! আমি বলবঃ কোথায়? সে বলবে আল্লাহর কসম, জাহান্নামের দিকে। আমি বলব, তাদের অবস্হা কি? সে বলবে, নিশ্চয়ই এরা আপনার ইন্তেকালের পর দ্বীন থেকে পশ্চাঁদপানে ফিরে গিয়েছিল। আমি মলে করি এরা রাখাল ছাড়া উটের মতো কম পরিমাণে নাজাত পাবে।
হাদিস ৬১৩৭
ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্হান জান্নাতের বাগান সমূহ হতে একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাউজের ওপরে অবস্থিত।
হাদিস ৬১৩৮
আবদান (রহঃ) জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌছব।
হাদিস ৬১৩৯
আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বের হলেন এবং ওহুদ যুদ্ধে শহীদদের প্রতি সালাত (নামায/নামাজ) জানাযার অনুরুপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর তিনি মিম্বরে ফিরে এসে বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য হাউযের ধারে আগে পৌছব। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের (কার্যাবলীর) সাক্ষী হব। আল্লাহর কসম! আমি এ মুহূর্তে আমার হাউয দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমাকে বিশ্ব ভাণ্ডারের কুঞ্জি প্রদান করা হয়েছে। অথবা (বলেছেনঃ) বিশ্বের কুঞ্জি। আল্লাহর কসম! আমার ইন্তেকালের পর তোমরা শিরক করবে এ ভয় আমি করি না। তবে তোমাদের সম্পর্কে আমার ভয় হয় যে, দুনিয়া অর্জনে তোমরা পরস্পরে প্রতিযোগিতা করবে।
হাদিস ৬১৪০
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হারিসা ইবনু ওহাব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে হাউযে কাওসারের আলোচলা করতে শুনেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেনঃ হাউযে কাওসার মদিনা এবং সানআ নামক স্থানের মধ্যকার দুরত্বের মতো। ইবনু আবূ আদী (রহঃ) হারিসা (রাঃ) (কিঞ্চিত) অধিক বর্ননা করেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাউযে কাওসারের দূরত্ব মদিনা ও সানআর দূরত্ব তূল্য- কথাটুকু শুনেছেন। তখন মুসতাওরিদ তাকে বললেনঃ যে, আল আওয়ানী (রহঃ) বলেছেনঃ তা কি তুমি শুননি? তিনি বললেন, না। মুসতাওরিদ বললেনঃ এর পাত্রগুলো তারকারাজির ন্যায় পরিলক্ষিত হবে।
হাদিস ৬১৪১
সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমি হাউযের ধারে থাকব। তোমাদের মাঝ থেকে যারা আমার কাছে আসবে আনি তাদেরকে দেখতে পাব। কিছু লোককে আমার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা আমার লোক, এরা আমার উম্মত। তখন বলা হবে, তুমি কি জানো তোমার পরে এরা কি সব করেছে? আল্লাহর কসম! এরা দ্বীন থেকে সর্বদাই পশ্চাঁদমুখী হয়েছিল। তখন ইবনু আবূ মুলায়কা বললেনঃ হে আল্লাহ, দ্বীন থেকে প্রদর্শন করা থেকে অথরা দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেনঃ অর্থাৎ তোমরা পিছনের দিকে ফিরে যাবে।
No comments: