সৎ মায়ের আদর যত্ন
সৎ মায়ের আদর যত্ন।
দেশের জনগণের আরাম-আয়েশের জন্য সরকার সুদপ্রথার প্রচলন করেছে। প্রকাশ্য দৃষ্টিতে মনে হয় যে সরকার দেশের জনগণকে অত্যাধিক ভালো বাসছে। বিনা পরিশ্রমে তাদের কে সুদ নীতিতে, কখনো প্রাইজবন্ড, কখনো লাভ, কখনো বোনাস, কখনো ইন্টারেস্ট নাম দিয়ে বিভিন্ন রকমের আর্থিক সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে। কিন্তু বিনাশ্রমে এসব সুবিধা পেয়ে দেশের জনগণ যে অলস, অকর্মন্য এবং অক্ষম হয়ে দিন দিন ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সেদিকে কেউ দৃষ্টি দেয় না। সরকারের মনোভাব হল একটি স্ত্রীর লোকের মত যে তার সতীনের ছেকেটিকে বেশী ভালোবাসত।
স্ত্রীর লোকটির দুটি ছেলে ছিল। একটি নিজের ছেলে আর অপরটি সতীনের ছেলে। সে সতীনের ছেলেটিকে সব সময় কোলে করে রাখতো।
কোন অবস্থায়ই ছেলেটিকে কোলে থেকে নামাতো না। এমনকি- কাঁধে নিয়েই সংসারের কাজ কর্ম সব সমাধান করতো। পাশের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সতীনের ছেলেটিকে কোলে নিয়ে আর নিজের ছেলেটিকে হাত ধরে হাটিয়ে নিয়ে যেতো। গ্রামের মেয়েরা সকলে প্রশংশায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলো। সবাই বলতে লাগলো, মেয়েটির মনে একটুও হিংসা নেই।
সতীনের ছেলেকে কোলে – কাঁধে রেখে আর নিজের ছেলেকে হাটিয়ে নেয়।
সতীনের ছেলেকে এতো আদর যত্ন করতে আর কাউকে দেখা যায় না।
এরূপ সতী-সাধ্বী নারী আর হয় না।
একদিন গ্রামের একটি মেয়েলোক এসে গোপনে সহানুভূতি স্বরূপ বললো, ‘বুবু! নিজের ছেলেকে অযত্ন – অবহেলা করে সতীনের ছেলে এত আদর-যত্ন করা ঠিক নয়। তাতে নিজেরই ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশী।
মেয়েলোকটি বললো, ‘না বুবু, এটা আমার নিজের ছেলের প্রতি অবহেলা নয়। নিজের ছেলেকে হাটিয়ে নিয়ে যাই যেন তার পা শক্ত হয় এবং স্বাবলম্বী হয়ে সমাজে শক্ত হয়ে দাড়াতে পারে।
আর সতীনের ছেলেকে কোলে নেই যেন সে কোন দিন হাটতে না পারে। কোলে থাকতে থাকতে থাকতে অচল এবং পুঙ্গ হয়ে যাবে সে কোন দিন সমাজে মুখ তুলে দাড়াতে পারবেন।
এটা সতীনের ছেলের প্রতি আদর যত্ন নয়। কিন্তু মানুষ না বুঝে আমার প্রশংসা করছে তা আমি কী করতে পারি?
ঠিক একই ভাবে জাতি সুদ খেয়ে বিমুখ হোক, অলস এবং অকর্মণ্য হোক, পঙ্গু হয়ে ধ্বংস প্রাপ্ত হোক। কিন্তু দেশের শাসক অবুজ লোকদের প্রশংসা পেয়ে ধন্য, গর্বিত এবং আমন্ত্রিত হয়।
No comments: