Breaking News
recent

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৫ম খন্ড, অধ্যায়ঃ দুধপান






পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই


৩৪৩৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে আমরাহ (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, একদিন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অবস্থান করছিলেন। তিনি তখন কোন কে ব্যক্তির আওয়াজ শুনতে পেলেন, যে হাফসা (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তখন বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ লোক আপনার ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি জানি, অমুক হাফসার রাযাঈ চাচা। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি তার (আয়িশার) রাযাঈ চাচা জীবিত থাকতেন তা হলে তিনি আমার নিকট প্রবেশ করতে পারতেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই দুগ্ধ সম্পর্ক সেই সব লোকদের হারাম করে দেয়, যাদের জন্মগত সম্পর্ক হারাম করে।

৩৪৩৮.    আবূ কুরায়ব ও আবূ মা'মার ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম হুযালী (রহঃ) ... হিশাম ইবন উরওয়া আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর থেকে, তিনি আমরা থেকে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "দুগ্ধ সম্পর্ক সে লোকদের হারাম করে দেয়, যাদের জন্মগত সম্পর্ক হারাম করে।"

৩৪৩৯.    ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... ইবন জুরায়জ বলেন, আমার কাছে আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বকর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। উপরোক্ত হিশাম ইবনু উরওয়ার বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।

৩৪৪০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াইয়া (রহঃ) ... উরওয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ কায়সের ভাই আফলাহ একবার তাঁর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি ছিলেন তাঁর রাযাঈ চাচা। এ ছিল পর্দার হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পরবর্তী ঘটনা। তিনি বলেন, আমি তাঁকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। তারপর যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন আমি যা করেছি সে সম্পর্কে আমি তাঁকে অবহিত করলাম। তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন তাকে (রাযাঈ চাচাকে) আমার নিকট আসার অনুমতি দেই।

৩৪৪১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমার দুধ চাচা আফলাহ ইবনু আবূল কুআয়স আমার কাছে এলেন। তারপর রাবী পূর্ববর্তী হাদীসের ন্যায় হাদীস বর্ণনা করেন। তবে রাবী তাঁর বর্ণনায় অতিরিক্ত বলেছেন, আমি বললাম, আমাকে এক মহিলা দুধ পান করিয়েছেন, কোন পুরুষ তো করান নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার দু' হাত বা ডান হাত ধুলিমলিন হোক।

৩৪৪২.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... উরওয়া (রহঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আবূল কুআয়সের ভাই আফলাহ এসে তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। এ ছিল পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরবর্তী ঘটনা। আবূল ক'আয়স ছিলেন আয়িশা (রাঃ) এর রাযাঈ পিতা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ আল্লাহর কসম! আমি আফলাহকে আমার কাছে আসার অনুমতি দিব না যে পর্যন্ত না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে থেকে অনুমতি না নেই। কেননা, আবূল কু'আয়স সে তো আমাকে দুধ পান করান নি, বরং আমাকে দুগ্ধপান করিয়েছে তার স্ত্রী। 

আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবূ কু'আয়সের ভাই আফলাহ আমার নিকট প্রবেশের অনুমতি চেয়েছেন, কিন্তু আমি আপনার অনুমতি না নিয়ে তাঁকে আমার কাছে আসতে দিতে অস্বীকার করলাম। রাবী বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাকে অনুমতি দাও। উরওয়া বলেন, এ কারণেই আয়িশা (রাঃ) বলতেন, "তোমরা দুধপানের সম্পর্কে দ্বারা ঐ লোকদের হারাম গণ্য করবে যাদের তোমরা বংশগত সম্পর্কের দ্বারা হারাম গণ্য কর।"

৩৪৪৩.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণিত আছে যে, আবূল কু'আয়সের ভাই আফলাহ আয়িশা (রাঃ) এর কাছে আসার অনুমতি চাইলেন। উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ, এতে আরো বর্ণিত আছে যে, সে তো তোমার চাচা। তোমার হাত ধূলিমলিন হোক। আর আবূল কু'আয়স ছিলেন আয়িশা (রাঃ) কে যে মহিলা স্তন্যদান করেছিলেন তার স্বামী।

৩৪৪৪.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমার দুধচাচা আমার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আসলেন এবং আমার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন, কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে পরামর্শ না করা পর্যন্ত আমি অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তখন আমি তাকে বললাম, আমার দুধচাচা আমার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছিলেন, কিন্তু, আমি অনুমতি দিতে অস্বীকার করি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তোমার চাচা তোমার নিকট প্রবেশ করতে পারে। আমি বললাম, আমাকে তো দুধপান করিয়েছে নারী, কোন পুরুষ তো আমাকে দুধপান করায় নি। তিনি বললেনঃ অবশ্যই সে তোমার চাচা। অতএব সে তোমার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারে।

৩৪৪৫.    আবূর রাবী যাহরানী (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) এই সনদে আবূ কু'আয়সের ভাই আয়েশা (রাঃ) এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন-এর পর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৩৪৪৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। অবশ্য তিনি বলেছেন, আয়িশা (রাঃ) এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চেয়েছিলেন আবূল কু'আয়স।

৩৪৪৭.    হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... ইবন জুরায়জ আতা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমার কাছে উরওয়া ইবনুয যুবায়র (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেন, একদা আমার দুধচাচা আবূল জা’দ আমার নিকট প্রবেশ কলার জন্য অনুমতি চাইলেন। আমি তাকে ফিরিয়ে দিলাম। রাবী ইবনু জুরায়জ বলেন, আমাকে হিশাম বলেছেন, ঐ ব্যক্তি তো আবূ কু'আয়স। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন তখন আয়িশা (রাঃ) তাঁকে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বললেন, কেন তুমি তাকে অনুমতি প্রদান করলে না? ধুলায় ধুসরিত হোক তোমার ডান হাত অথবা তিনি বলেছেন, ধুসরিত হোক তোমার হাত।

৩৪৪৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, আফলাহ নামক তাঁর দুধচাচা তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে নিষেধ করে দেন। তারপর তিনি এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবহিত করলেন। তিনি তাঁকে বললেন, তুমি তার থেকে পর্দা করবে না। কেননা দুধ পানের সস্পর্ক দ্বারা ঐসব লোক হারাম হয়ে যায় যারা রক্ত সম্পর্ক দ্বারা হারাম হয়।

৩৪৪৯.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আম্বারী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আফলাহ ইবনু কুয়ায়স আমার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাইলেন। আমি তাকে অনুমতি প্রদানে অস্বীকার করলাম। তারপর তিনি লোক পাঠিয়ে আমাকে জানালেন যে, আমি তোমার চাচা। আমার ভাইয়ের স্ত্রী তোমাকে দুধ পান করিয়েছেন। এরপর ও আমি তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করি। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং আমি তাঁর কাছে এ বিষয় উল্লেখ করি। তিনি বললেন, সে তোমার নিকট আসতে পারে। কেননা, সে তোমার চাচা।

৩৪৫০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনুল আ’লা (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কী ব্যাপার আপনি কুরায়শী মহিলাদের প্রতি আগ্রহী আর আমাদের প্রতি অমনোযোগী? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে নাকি? আমি বললাম, হাঁ, হামযার কন্যা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে আমার জন্য হালাল নয়। কেননা, সে আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা।

৩৪৫১.    উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু নুমায়র, মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) ... সবাই আ'মাশ (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৩৪৫২.    হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হামযার কন্যার বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হল। তিনি বললেন, সে আমার জন্য হালাল নয়। কেননা সে আমার রাযাঈ ভাইয়ের কন্যা। আর দুধপান দ্বারা ঐ সব লোক হারাম হয়ে যায় যারা রক্ত সম্পর্কের দ্বারা হারাম হয়।

৩৪৫৩.    যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া, শু'বা (রহঃ) সুত্রে এবং আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, সাঈদ ইবনু আবূ আরুবা সুত্রে কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত হাম্মাদের সনদে হাদীস বর্ণনা করেন। তবে শু'বার হাদীসে রাযাঈ ভাইয়ের কন্যা পর্যন্ত এবং সাঈদের হাদীসে এ-ও আছে যে, দুধ সম্পর্কে তারা হারাম হয়ে যায় যারা রক্ত সম্পর্কে হারাম হয়।

৩৪৫৪.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি হামযার কন্যার সাথে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন থেকে দুরে কেন অথবা বলা হল আপনি কি হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিবের কন্যাকে বিবাহের প্রস্তাব দেবেন না? তিনি বললেন হামযা হল আমার রাযাঈ ভাই।

৩৪৫৫.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... উম্মু হাবীবা বিনত আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আসলেন। আমি তাকে বললাম, আপনার কি আমার বোন বিনত আবূ সুফিয়ানের প্রতি আপনার আগ্রহ আছে? তিনি বললেন, আমি কি করব? আমি বললাম, আপনি তাকে বিবাহ করবেন। তিনি বললেন, তুমি কি তা পছন্দ কর? আমি বললাম, আমি তো আপনার একক স্ত্রী নই। (আপনার সান্নিধ্য) কল্যাণ লাভে আমার সঙ্গে কেউ শরীক থাকলে তা আমার বোন থাকুক, সেটাই আমি বেশী পছন্দ করি। তিনি বললেন, সে আমার জন্য হালাল নয়। 

আমি বললাম, আমি এ মর্মে অবহিত হয়েছি যে, আপনি আবূ সালামার কন্যা দুরাহকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বললেন, উম্মু সালামার কন্যা? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন যদি সে আমার কোলে রাবীবা তথা প্রতিপালিত নাও হতো তাহলেও সে আমার জন্য হালাল তে না। সে হল আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। আমাকে এবং তার পিতা আবূ সালামাকে সুওয়ায়বা দুধপান করিয়েছেন। অতএব তোমরা আমার সাথে তোমাদের কন্যা ও ভগ্নিদের বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবে না।

৩৪৫৬.    সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত।

৩৪৫৭.    মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী উম্মু হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার বোন আযযাহকে বিবাহ করুন। তিনি বললেন, তুমি কি তা পছন্দ কর? তিনি বললেন, হাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো আপনার একক স্ত্রী নই। আর কল্যাণে কেউ আমার শরীক হলে, তা সে আমার বোন হোক এটাই আমি বেশী পছন্দ করি। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে তো বিবাহ করা আমার জন্য হালাল নয়। 

তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে যে, আপনি আবূ সালামার কন্যা দুররাহকে বিবাহ করার ইচ্ছা রাখেন। তিনি বললেন, আবূ সালামার কন্যাকে? উম্মু হাবিবা বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে আমার অভিভাবকত্বে প্রতিপালিত নাও হতো তবু সে একারণে আমার জন্য হানাল হতো না যে, সে আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। আমাকে ও তার পিতা আবূ সালামাকে সুওয়ায়বা দুধপান করিয়েছেন। তাই তোমরা আমার কাছে তোমাদের কন্যা ও ভগ্নিদের বিবাহের প্রস্তাব পেশ করো না।

৩৪৫৮.    আবদুল মালিক ইবনু শু'আয়ব ইবনু লায়স এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) সুত্রে ইবনু আবূ হাবীবের সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) ব্যতীত তারা কেউ নিজে হাদীসে আযযার নাম উল্লেখ করেন নি।

৩৪৫৯.    যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুয়ায়দ ও যুহায়রের বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু'এক চুমুক হারাম করে না।

৩৪৬০.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আমরুন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উম্মুল ফাযল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুইন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল। সে বলল, ইয়া নাবীইয়্যাল্লাহ! আমার এক স্ত্রী ছিল। তার উপর আর একটি বিবাহ করলাম। এমতাবস্থায় প্রথমা স্ত্রী বলছে যে, সে আমার নবাগতা স্ত্রীকে এক চুমুক বা দু'চুমুক দুধ পান করিয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক চুমুক বা দু'চুমুক হারাম করে না। আমর (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু নাওফলের বর্ণনায় অনুরূপ আছে।

৩৪৬১.    আবূ গাসসান মিসমাঈ, ইবনু মাসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... উম্মুল ফাযল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বনী আমির ইবনু সা'সা'আর এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া নাবীইয়্যাল্লাহ! একবার মাত্র দুধপানে কি হারাম সাব্যস্ত করে? তিনি বললেন না।

৩৪৬২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... উম্মুল ফাযল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার দু'বার দুধপান অথবা এক চুমুক, দু'চুমুক হারাম সাব্যস্ত করে না।

৩৪৬৩.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আবূ আরুবা (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত। ইসহাক ইবনু বিশরের রিওয়ায়াতে বলেন, দু'বার দুধপান অথবা দু'চুমূক। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) বলেন, দু'বার দুধপান অথবা দু'চুমুক।

৩৪৬৪.    ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... উম্মুল ফাযল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক চুমুক কিংবা দু'বার চুমুকে হারাম করে না।

৩৪৬৫.    আহমাদ ইবনু সাঈদ দারিমী (রহঃ) ... উম্মুল ফাযল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, এক চুমুক দুধপান কি হারাম করে? তিনি বললেন, না।

৩৪৬৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআনে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলঃ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ‘দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ তারপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা। (পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়) তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত।

৩৪৬৭.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কা'নাবী (রহঃ) ... আমরাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি দুধপানের ঐ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করলেন যাদ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়। আমরাহ বললেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন, আল কুরআনে নাযিল হয় عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ "নির্ধারিত দশবার দুধপানে" তারপর নাযিল হয خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ "নির্ধারিত পাঁচবার দুধপানে।"

৩৪৬৮.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আমরাহ সুত্রে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে অনুরূপ বলতে শুনেছেন।

৩৪৬৯.    আমরুন নাকিদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুহায়লের কন্যা সাহলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হায়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার সাথে সালিমের দেখা সাক্ষাৎ করার কারণে আমি আবূ হুযায়ফার মুখমণ্ডলে অসন্তুষ্টির আলামত দেখতে পাচ্ছি অথচ সালিম হল তার হালীফ (পোষ্য পূত্র)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাকে দুধপান করিয়ে দাও। তিনি বললেন, আমি কেমন করে তাকে দুধপান করাব, অথচ সে একজন বয়স্ক পূরুষ। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিলেন এবং বললেন, আমি জানি যে, সে একজন বয়স্ক পুরুষ। আম্‌র (রাবী) তাঁর হাদীসে অতিরিক্ত বলেছেন, সালিম বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর ইবনু আবূ উমরের বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন।

৩৪৭০.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ হুযায়ফার দাস সালিম (রহঃ) আবূ হুযায়ফা ও তাঁর পরিবারের সাথে একই ঘরে বসবাস করত। একদা সুহায়লের কন্যা (হুযায়ফার স্ত্রী) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিকট এসে বলল, সালিম বয়স্ক পুরুষের স্তরে পৌছে গেছে, সে বুঝে লোকে যা বুঝতে পারে অথচ সে আমাদের নিকট প্রবেশ করে থাকে। আমি ধারণা করি এই কারণে আবূ হুযায়ফার মনে অভিযোগের ভাব সৃষ্টি হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি তাকে দুধপান করিয়ে দাও, তুমি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে এবং আবূ হুযায়ফার মনের অভিযোগ দুরীভূত হবে। তারপর তিনি তার (আবূ হুযায়ফার) নিকট ফিরে এসে বললেন, আমি তাকে (সালিমকে) দুধপান করিয়েছি। তাতে আবূ হুযায়ফার মনের অসন্তোষ দুর হয়ে যায়।

৩৪৭১.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সুহায়ল ইবনু আমরের কন্যা সাহলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালিম (আবূ হুযাফার মুক্তদাস) আমাদের সাথে একই ঘরে থাকে; অথচ সে বয়স্ক ও জ্ঞান সম্পন্ন পূরুষের স্তরে পৌঁছে গেছে। তিনি বললেন, তুমি তাকে দুধপান করিয়ে দাও, তাতে তুমি তার প্রতি হারাম হয়ে যাবে। রাবী (ইবনু আবূ মুলায়কা) বলেন, অতঃপর আমি এক বছর বা প্রায় এক বছর কাল ভয়ে উক্ত হাদীস বর্ণনা করি নি। তারপর কাসিমের সাথে সাক্ষাত করে বললাম, আপনি আমার নিকট এতদিন এমনি এক হাদীস বর্ণনা করেছেন যা আমি অদ্যাবধি কারোর নিকট বর্ণনা করি নি। তিনি বললেন, তা কোন হাদীস? তখন আমি তাকে ঐ হাদীস খানার বিষয় অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি তা আমা হতে এ সূত্রে বর্ণনা কর যে, আয়িশা (রাঃ) আমাকে সে সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

৩৪৭২.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... উম্মু সালমা (রাঃ) আয়িশা কে বললেন, তোমার নিকট বালিগ হওয়ার নিকটর্তী ছেলে প্রবেশ করে থাকে, কিন্তু আমার নিকট ঐ ধরনের ছেলের প্রবেশ করাকে পছন্দ করি না। রাবী বলেন, আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমার জন্য কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে সুন্দর আদর্শ বিদ্যমান নেই? তিনি আরো বললেন, একদা আবূ হুযায়ফার স্ত্রী আরয করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালিম আমার নিকট প্রবেশ করে থাকে, অথচ সে একজন বয়স্ক পুরুষ এবং এ জন্য আবূ হুযায়ফার অন্তরে কিছুটা অসন্তোষভাব বিদ্যমান। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাকে তোমার দুধ পান করিয়ে দাও যাতে সে তোমার নিকট প্রবেশ করতে পারে।

৩৪৭৩.    আবূ তাহির ও হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ... রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী উম্মু সালামা (রাঃ) একদিন আয়িশা (রাঃ) কে বললেন, আল্লাহর কসম আমি পছন্দ করি না যে, যে ছেলে দুধপানের বয়স পার হয়ে গেছে, সে আমাকে দেখুক। তিনি বললেন, কেন? একদা সুহায়লের কন্যা সাহলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমার নিকট সালিমের প্রবেশ করার কারণে আমি আবূ হুযায়ফার মুখমণ্ডলে অসন্তোষের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে তোমার দুধপান করিয়ে দাও। সাহলা বললেন, সে (সালিম) তো দাড়িবিশিষ্ট। তিনি বললেন, তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দাও, তাতে আবূ হুযায়ফার মুখমন্ডলের মলিনতা দূর হয়ে যাবে। সাহলার বর্ণনা, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, তারপরে আমি আবূ হুযায়ফার চেহারায় মলিনতা আর দেখতে পাই নি।

৩৪৭৪.    আবদুল মালিক ইবনু শু'আয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ... উম্মু সালামা (রাঃ) বলতেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল সহধর্মিনী দুধপান সম্পর্কের দ্বারা কাউকে তাদের নিকট প্রবেশ করতে নিষেধ করেন এবং তারা আয়িশা (রাঃ) কে বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা এটাকে (প্রাপ্ত বয়সে দুধপান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হওয়াকে) একটি বিশেষ অনুমতি মনে করি যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল সালিমের জন্য দিয়েছিলেন। অতএব এ ধরনের দুধপানের মাধ্যমে কেউ আমাদের নিকট প্রবেশ করতে পারবে না এবং আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করতে পারবে না।

৩৪৭৫.    হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন তখন আমার নিকট একজন পুরুষ উপবিষ্ট ছিলেন। তাতে তার মন অতি ভারাক্রান্ত হয় এবং আমি তার চেহারায় ক্রোধের আলামত দেখতে পেলাম। তিনি বলেন, আমি তখন বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ ব্যক্তি আমার দুধভাই। তিনি বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কারা তোমাদের দুধ ভাই, তা তোমরা ভাল করে দেখে নিও। কেননা রাযআত সাব্যস্ত হয় যখন দুধপানের দ্বারা সন্তানের ক্ষুধা নিবারণের বয়স থাকি।

৩৪৭৬.    মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না, ইবনু বাশশার, উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... সকলেই আশ'আস ইবনু শা'সা আবূল আহওয়াস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণনা করেন। তবে তাঁরা বলেন, "ক্ষুধার কারণ"

পরিচ্ছেদঃ ১. ইসতিবরার পর যুদ্ধ বন্দিনীর সাথে সঙ্গম করা জায়েয এবং তার স্বামী বর্তমান থাকলে সে বিবাহ বাতিল


৩৪৭৭.    উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু মায়সারা কাওয়ারীরী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাসের দিকে একটি বাহিনী পাঠান। তারা শক্রদলের মুখোমুখী হয় এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয়। এদের মধ্য থেকে দাসীদের সাথে সহবাস করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবী যেন নাজায়িয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে। আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ "এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ" অর্থাৎ তারা তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ইদ্দত পূর্ন করে নিবে। 

[গর্ভবতী হলে প্রসব, অন্যথায় এক ঋতু অতিবাহিত হওয়াকেই ইসতিবরার বলে।]

৩৪৭৮.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন যুদ্ধের সময় একটি ছেটি সেনাদল পাঠান- পরবর্তী অংশ ইয়াযীদ ইবনু যুরাঈ এর হাদীসের মর্মানুসারে তবে এতে রয়েছে "তাদের (সধবাদের) মধ্য থেকে যারা তোমাদের অধিকারভুক্ত তারা তোমাদের জন্য হালাল। এই বর্ণনায় যখন তারা তাদের ইদ্দত পূর্ণ করে নিবে" অংশটুকুর উল্লেখ নেই।

৩৪৭৯.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত।

৩৪৮০.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আওতাসের যুদ্ধে কিছু কয়েদী সাহাবাদের হস্তগত হয়, যাদের স্বামী ছিল। তারা (তাদের সাথে সঙ্গম) ভয় পেলেন। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়ঃ “এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ।”

৩৪৮১.    ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণিত।

পরিচ্ছেদঃ ২. সন্তান বিছানার অধিপতির এবং সন্দেহ পরিহার


৩৪৮২.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস এবং আবদ ইবনু জাম'আ উভয়ে একটি সন্তানের ব্যাপারে ঝগড়া করেন। সা’দ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ আমার ভাই উতবা ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, এর সন্তান। তিনি আমাকে ওসিয়্যত করেছেন যে, এ সন্তান তারই পুত্র। আপনি তার সা’দৃশ্যের প্রতি লক্ষ্য রুকন। আর আবদ ইবনু জাম'আ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ আমার ভাই। আমার পিতার ঔরসে তার দাসীর গর্ভে জন্ম হয়েছে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তানটির গঠনাকৃতির দিকে লক্ষ্য করলেন। দেখতে পেলেন উতবার সাথে স্পষ্ট সা’দৃশ্য রয়েছে। তখন তিনি বললেন, হে আবদ (ইবনু জামআ)! সন্তান তো বিছানার অধিপতির আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর (এর শাস্তি)। হে সাওদা বিনত জামআ! তুমি এর থেকে পর্দা করবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারপর সে কখনো সাওদা (রাঃ) কে দেখে নি। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ "হে আবদ" শব্দটি উল্লেখ করে নি।

৩৪৮৩.    সাঈদ ইবনু মানসূর ও আবু বকর ইবন আবু শায়বা, আমর আন-নাকিদ ও আবদ ইবন হুমায়দ (রহঃ) ... সুফয়ান ইবনু উয়ায়না এবং মা'মার সুত্রে যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে উভয়ে তাদের হাদীসে শুধু "সন্তান তো বিছানা অধিপতির" কথাটুকু বর্ণনা করেছেন। "ব্যাভিচারীর জন্য পাথর" অংশের উল্লেখ করেন নি।

৩৪৮৪.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিছানা যার সন্তান তার আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর (এর শাস্তি)।

৩৪৮৫.    সাঈদ ইবনু মানসূর, যুহায়র ইবনু হারব, আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৩. কায়িফ কর্তৃক পিতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক নিরূপণ


৩৪৮৬.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনি আনন্দে আমার নিকট প্রবেশ করলেন যে, তাঁর চেহারার রেখাগুলো চমকাচ্ছিল। তিনি বললেন, হে আয়িশা! তুমি কি জান না যে, সবেমাত্র মুজায্‌যিয যায়িদ ইবনু হারিসা এবং উসামা ইবনু যায়িদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে গেল যে, এদের উভয়ের পাগুলো পরস্পরের অঙ্গ। 

[কায়িফঃ লক্ষন ও সাদৃশ্য দেখে পিতৃ পরিচয় নির্ণয়ককে কায়িফ বলে]

৩৪৮৭.    আমরুন নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন, খুব প্রফুল্ল চিত্তে। তিনি বললেনঃ হে আয়িশা তুমি কি জান না যে, এ মুজায্‌যিয মুদলিজী আমার কাছে প্রবেশ করে উসামা এবং যায়িদকে দেখতে পেল। তারা একটি চাদর দ্বারা তাদের মাথা ঢেকে রেখেছিল এবং তাদের পা অনাবৃত। তখন সে বলল, এ পাগুলো পরস্পর পরস্পর থেকে আগত।

৩৪৮৮.    মানসূর ইবনু আবূ মুযাহিম (রহঃ) ... আযিশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক কায়িফ এল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উপস্থিত। উসামা ইবনু যায়িদ এবং যায়িদ ইবনুু হারিসা তখন শায়িত ছিলেন। কায়িক তাদের দেখে বললেন, এদের উভয়ের পাগুলো পরস্পর পরস্পর থেকে আগত। এ মন্তব্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হলেন, তাকে তা চমৎকৃত করল এবং আয়িশা (রাঃ) কে তা অবহিত করলো।

৩৪৮৯.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ইবন ওয়াহব থেকে ও তিনি ইউনুস থেকে, আবদ ইবনু হুমায়দ আবদুর রাযযাক থেকে তিনি মা'মার ও ইবন জুরায়জ থেকে আর তারা সকলেই যুহরী (রহঃ) সুত্রে তাদের সনদে হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণনা করেন। তবে ইউনুস বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত আছে, মুযাযযিয ছিলেন একজন কায়িক।

পরিচ্ছেদঃ ৪. পূর্বে অবিবাহিতা ও বিবাহিতা স্ত্রী বাসর ঘর উদযাপনের পর স্বামীর সাথে থাকার ব্যাপারে কি পরিমাণ সময় লাভের অধিকারিণী হবে


৩৪৯০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উম্মু সালামাকে বিবাহ করেন, তখন তিনি তার কাছে তিন দিন অবস্থান করেন এবং তিনি বললেন, তোমার ব্যাপারে তোমার গৃহকর্তার কাছে কোন প্রকার অবজ্ঞা নেই। তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমার কাছে সাত দিন থাকব। যদি আমি তোমার কাছে সাতদিন থাকি তবে আমার অন্যান্য স্ত্রীদের সঙ্গেও সাতদিন করে থাকব।

৩৪৯১.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ বকর ইবন আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উম্মু সালামা (রাঃ) কে বিয়ে করলেন এবং তিনি (উম্মু সালামা) (বাসর রাত যাপনের পরে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থাকা অবস্থায় যখন সকাল হল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার প্রতি তোমার স্বামীর কোন অনাদর অনাগ্রহ নেই। তুমি চাইলে তোমার কাছে সাত দিন (একাধারে) অবস্থান করব এবং তুমি চাইলে তিনদিন করব, কিন্তু এরপর (পালা করে) পরিক্রমা করব। উম্মু সালামা (রাঃ) বললেন, তিন দিন (অবস্থান) করুন।

৩৪৯২.    আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কানাবী (রহঃ) ... আবূ বকর ইবনু আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উম্মু সালামা (রাঃ) কে বিয়ে করলেন এবং তাঁর সঙ্গে বাসর যাপনের পর বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন উম্মু সালামা (রাঃ) তাঁর কাপড় টেনে ধরলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি চাইলে তোমার এখানে (অবস্থানের মেয়াদ) বাড়িয়ে দিব এবং তোমার নামে তা হিসাবে ধরব। (নিয়ম হল নব বিবাহিতা) কুমারীর জন্য সাত দিন ও বিধবার জন্য তিন দিন (প্রাথমিক অধিকার)।

৩৪৯৩.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবদর রহমান ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।

৩৪৯৪.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ বকর ইবনু আবদুর রহমান ইবনুল হারিস ইবনু হিশাম (রহঃ) সুত্রে উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিয়ে করলেন এবং তিনি কতিপয় বিষয় উল্লেখ করেছেন যার মাঝে এ কথাটিও রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি যদি চাও তবে আমি তোমাকে সাতদিন সময় দিব এবং আমার অন্য স্ত্রীদেরও সাতদিন করে সময় দিব। তোমাকে সাতদিন সময় দিলে আমার অন্য স্ত্রীদেরও সাতদিন করে সময় দিতে হবে।

৩৪৯৫.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিধবা (স্ত্রী ঘরে থাকা অবস্থায়) কুমারীকে বিয়ে করলে তার কাছে (প্রথমবারে লাগাতর) সাতদিন অবস্থান করবে এবং কুমারী স্ত্রী থাকা অবস্থায় বিধবাকে বিয়ে করলে তার কাছে তিনদিন অবস্থান করবে। (মধ্যবর্তী রাবী) খালিদ (রহঃ) বলেন, যদি আমি বলি যে, তিনি (ঊর্ধ্বতন রাবী আনাস) হাদীসটির সনদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত উন্নীত (মারফু') করেছেন তবে আমি তা সত্যই বলে জানব। তবে কিনা তিনি বলেছিলেন, সুন্নাতসম্মত পন্থা এটাই।

৩৪৯৬.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুন্নাত পদ্ধতি হল (নব বিবাহিতা) কুমারীর নিকট সাতদিন অবস্থান করা। খালিদ (রহঃ) বলেন, আমি চাইলে বলতে পারি যে, তিনি (আনাস (রাঃ)) হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত উন্নীত করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫. রাত যাপনে স্ত্রীদের মাঝে পালাবণ্টন এবং প্রত্যেকের কাছে একরাত পরের দিবাভাগ সহ অবস্থান করা সুন্নাত


৩৪৯৭.    আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (শেষ পর্যায়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নয়জন সহধর্মিনী ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে পালাবণ্টন কালে নয় দিনের আগে (পালার) প্রথমা স্ত্রীর কাছে পুনরায় পৌঁছতেন না। প্রতি রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ঘরে অবস্থান করতেন সেখানে তারা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নীগণ) সমবেত হতেন। একরাতে তিনি যখন আয়িশা (রাঃ) এর ঘরে ছিলেন তখন যয়নাব (রাঃ) সেখানে আগমন করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে নিজের হাত প্রসারিত করলেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ও তো যয়নাব! ফলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত গুটিয়ে নিলেন। 

তখন তারা দু'জন (আয়িশা ও যয়নাব) কথা কটিাকাটি করতে লাগলেন। এমনকি তাদের গোসসার আওয়াজ চড়ে গেল, ওদিকে সালাতের ইকামত (এর সময় উপস্থিত) হন। ঐ অবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) সেখান দিয়ে (সালাতে) যাচ্ছিলেন। তিনি ঐ দুজনের আওয়াজ শুনতে পেয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি বের হয়ে আসুন এবং ওদের মুখে ধুলা-মাটি ছুঁড়ে (দিয়ে মুখ বন্ধ করে) দিন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, এখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাত আদায় করবেন, তার পরে তো আবূ বকর (রাঃ) এসে আমাকে বকাবকি ও গালমন্দ করবেন, পরে (তাই হল)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালাত সমাধা করলে আবূ বকর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) এর নিকটে এসে তাকে কড়াকড়া কথা বললেন এবং বললেন, তুমি এমন কর?

পরিচ্ছেদঃ ৬. সতীনকে নিজের পালা হেবা করা বৈধ


৩৪৯৮.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাওদা বিনত যাম'আ (রাঃ) এর চেয়ে অধিক পছন্দনীয়া কোন নারীকে আমি দেখি নি যার 'খোলসে' আমি আমার অবস্থান পছন্দ করব- এমন এক নারী যার মাঝে ছিল (ব্যক্তিত্ব সুলভ) তেজস্বীতা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, বৃদ্ধা হয়ে গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তাঁর প্রাপ্য (পালার) দিনটি আয়িশা (রাঃ) কে হিবা করে দিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার কাছে আমার পালার দিনটি আয়িশার জন্য দিয়ে দিলাম। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দু'দিন পালা বন্টন করতেন, তার নিজের (এক) দিন এবং সাওদা (রাঃ) এর (এক) দিন।

৩৪৯৯.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), আমরুন নাকিদ, মুজাহিদ ইবনু মূসা সকলে হিশাম (রহঃ) সুত্রে পূর্বোক্ত সনদে রিওয়ায়াত করেন যে, সাওদা (রাঃ) যখন বৃদ্ধ হয়ে গেলেন (পূর্বোক্ত যুহায়র সনদের উর্ধতন রাবী) জারীর (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ। তবে (মুজাহিদ সনদের উর্ধতন রাবী) শাকীক (রহঃ) তাঁর হাদীসে অধিক বলেছেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, তিনি (সাওদা (রাঃ)) ছিল প্রথম নারী, যাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পরে বিয়ে করেছিলেন।

৩৫০০.    আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে নারীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (স্ত্রী হওয়ার জন্য) আত্মনিবেদিতা হত, আমি তাদের নির্লজ্জতায় বিস্ময় প্রকাশ করতাম এবং বলতাম, কোন নারী কি (এভাবে নির্লজ্জ হয়ে) আত্মনিবেদন করতে পারে? পরে যখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করলেন- “তুমি তাদের (স্ত্রীগণের মধ্যে) যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট হতে দুরে সরিয়ে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার এবং যাকে তুমি দুরে রেখেছ তাকে (পুনরায়) কামনা করলে তাতে তোমার কোন অপরাধ হবে না।” (আহযাবঃ ৫১)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তখন বললামঃ আল্লাহর কসম! আমি তো দেখছি আপনার প্রতিপালক আপনার মনোবাঞ্ছা পূরণে দ্রুতই সাড়া দিয়ে থাকেন।

৩৫০১.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলতেন, কোন নারী কি কোন পুরুষের কাছে নিজেকে নিবেদিতা করতে লজ্জাবোধ করে না? অবশেষে আল্লাহ নাযিল করলেন, "তুমি তাদের যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট থেকে দুরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার" তখন আমি বললাম, “অবশ্যই আপনার প্রতিপালক আপনার মনোবাঞ্ছা পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।”

৩৫০২.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সারিফ নামক স্থানে ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী মায়মুনা (রাঃ) এর জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী। সুতরাং তোমরা যখন তার কফিন (লাশ) তুলবে তখন তাকে খুব জোরে নাড়া দিবে না এবং কাঁপাবে না; নরম ও আলতোভাবে তাঁকে তুলবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নয়জন স্ত্রী ছিলেন। তাঁদের আটজনের জন্য রাত যাপনের পালা নির্ধারণ করতেন এবং একজনের জন্য করতেন না। (মধ্যবর্তী) রাবী আতা (রহঃ) বলেন, যার জন্য পালা নির্ধারণ করতেন না তিনি হলেন সাফিয়্যা বিনত হুয়াই ইবনু আখতাব (রাঃ)।

৩৫০৩.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... ইবনু জুরায়জ (রহঃ) সুত্রে ঐ সনদে বর্ণিত। এতে তিনি বলেছেন যে, আতা (রহঃ) বলেছেন, ইনি (সাফিয়্যা/মায়মুনা) ছিলেন তাঁদের মাঝে সব শেষে মৃত্যুবরণকারিণী, তিনি মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বীনের মানদণ্ডে বিবাহের জন্য কন্যা পছন্দ করা মুস্তাহাব


৩৫০৪.    যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে (সাধারণত) মেয়েদের বিয়ে করা হয়- কন্যার ধন সম্পদের কারণে, তার বংশীয় আভিজাত্যের কারণে, তার রূপের কারণে এবং তার দ্বীনদারীর কারণে। তুমি ধার্মিকাকে পেয়ে ভাগ্যবান হও! তোমার দু'হাত ধুলিমাখা হোক।

৩৫০৫.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) ... আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়কালে আমি একটি মহিলা কে বিয়ে করলাম। পরে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি বললেন, হে জাবির! তুমি বিয়ে করেছে? আমি বললাম, জি হাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললাম, বিধবা। তিনি বললেন, তবে কুমারী নয় কেন? তুমি তার সঙ্গে সোহাগ স্ফূর্তি করতে (সে ও তোমার সঙ্গে হাস্য লাস্য করত)। আমি বললাম, ইযা রাসুলাল্লাহ! আমার কয়েকটি (অবিবাহিত) বোন রয়েছে তাই আমার আশংকা হল যে, বধু (কুমারী হলে সে) আমার ও বোনদের মাঝে অনুপ্রবেশ করবে (অন্তরায় হবে)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে তো তা-ই ঠিক। মহিলাকে বিয়ে করা হয় তার দ্বীনদারীর কারণে, তার সম্পদের কারণে ও তার রূপ লাবণ্যের কারণে, তোমার কর্তব্য ধার্মিকাকে গ্রহণ করা, তোমার দু'হাত ধূলিমলিন হোক।

পরিচ্ছেদঃ ৮. কুমারী বিবাহ করা মুস্তাহাব


৩৫০৬.    উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জনৈকা মহিলাকে বিয়ে করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিধবাকে? আমি বললাম, এক বিধবাকে। তিনি বললেন, তবে কুমারী ও তাদের আমোদ ফুর্তি হতে তুমি কোথায় (কুমারীর সঙ্গসুধা তুমি ত্যাগ করলে কেন)? 

(মধ্যবর্তী) রাবী শু’বা (রহঃ) বলেন, পরে আমি আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) এর নিকট এ হাদীস উল্লেখ করলে তিনি বললেন, আমিও তো জাবির (রাঃ) এর নিকট তা শুনেছি। তিনি তো বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ তবে কোন কিশোরী (তরুনী) কে কেন নয়- যে তোমার সঙ্গে হাস্য-লাস্য করত তুমিও তার সঙ্গে আমোদ স্ফুর্তি করতে?

৩৫০৭.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূর রাবী যাহরানী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ (রাঃ) মৃত্যু (শাহাদাত) বরণ করলেন এবং নয়টি (কিংবা তিনি বলেছেন, সাতটি) কন্যা রেখে গেলেন। পরে আমি (জাবির) এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে জাবির! তুমি বিয়ে করেছ? জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ হাঁ। তিনি বললেন, তা কুমারী কিংবা বিধবা? জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ বরং বিধবা ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, তবে তা কোন তরূনী (কুমারী) কেন নয় যে, (ইয়াহইয়া রিওযায়াতে) তুমি তাঁর সঙ্গে আনন্দ-স্ফূর্তি করতে সেও তোমার সঙ্গে আনন্দ-স্ফূর্তি করত কিংবা তিনি বলেছিলেন, তুমি তার সঙ্গে হাস্য-রস করতে সেও তোমার সঙ্গে হাস্য-রস করত। 

জাবির (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, (আমার পিতা) আবদুল্লাহ নয়টি (কিংবা সাতটি) মেয়ে রেখে মৃত্যু বরণ করেছেন এবং আমি তাদের মাঝে তাদের মত একজনকে নিয়ে আসা অপছন্দ করলাম। তাই আমি এমন একটি মহিলাকে নিয়ে আসা পছন্দ করলাম যে তাদের দেখাশুনা করবে এবং তাদের শুধরে দিবে ও গড়ে তুলবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন। তিনি আমাকে (এ ধরনের) কোন উত্তম কথা বললেন। আবূর রাবী (রহঃ) এর রিওয়ায়াতে রয়েছে, “তুমি তার সঙ্গে আনন্দ-স্ফূর্তি করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে আমোদ-স্ফূর্তি করত, সেও তোমার সঙ্গে হাস্যরস করত।

৩৫০৮.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি কি বিবাহ করেছ হে জাবির? তিনি হাদীসটির পূর্ণ বর্ণনা দিয়েছেন- যার শেষে রয়েছেঃ এমন একটি মহিলাকে যে তাদের তত্ত্বাবধান করবে এবং তাদের মাথা আঁচড়ে দিবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তুমি সঠিক করেছ” ... এর পরের অংশ তিনি (কুতায়বা) উল্লেখ করেন নি।

৩৫০৯.    ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন ফিরে প্রত্যাগমণ করতে লাগলাম তখন আমি আমার একটি ধীরগামী উটে করে দ্রুত চলার চেষ্টা করলাম। আমার পিছন থেকে একজন আরোহী আমার সঙ্গে মিলিত হল এবং সে তার হাতের একটি ছোট্ট বর্শা দিয়ে আমার উটকে খোঁচা দিল। ফলে আমার উটটি তোমার দেখা উটপালের শ্রেষ্ঠ উটের ন্যায় দ্রুতগতিতে চলতে লাগল। আমি তখন পিছনের দিকে তাকালাম- দেখি যে, আমি রয়েছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে। তিনি বললেন, হে জাবির! তোমার এ ব্যস্ততা কেন? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি ঘরে নতূন স্ত্রী রেখে এসেছি। তিনি বললেন, তুমি কি কোন কুমারীকে বিয়ে করেছ না কোন বিধবাকে? 

জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ বিধবাকে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন তরুনী (কুমারী) কে কেন বিয়ে করলে না যার সঙ্গে তুমি ক্রীড়া-কৌতুক করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুক করত। জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা যখন মদিনার সন্নিকটে উপনীত হয়ে সেখানে প্রবেশ করতে উদ্যত হলাম তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটু অবকাশ দাও, রাত পর্যন্ত অর্থাৎ ইশার সময় আমরা প্রবেশ করব- যাতে এলোকেশিণী তার কেশ বিন্যাস করে নিতে পারে এবং স্বামী প্রবাসিণী ক্ষৌরকর্ম করে নিতে পারে। জাবির (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, তুমি যখন পৌঁছে যাবে তখন সন্তান অন্বেশায় বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিবে।

৩৫১০.    মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একটি গাযওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমার উটটি আমাকে নিয়ে ধীরে ধীরে চলল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমার কাছে এসে আমাকে বললেন, হে জাবির! আমি বললাম, জ্বী! তিনি বললেন, তোমার ব্যাপার কি? আমি বললাম, আমার উট আমাকে নিয়ে ধীরে চলছে এবং পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। ফলে আমি পিছনে পড়ে গিয়েছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেমে পড়ে তার (বাঁকামাথা) লাঠি দিয়ে উটকে গুতো দিলেন। এরপর বললেন, অরোহণ কর, আমি তখন আরোহী করলাম। আমি (উটটিকে তার অতি দ্রুত গামীতার কারণে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অতিক্রম করে যেতে দেখে ঠেকাতে লাগলাম। 

তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললামঃ বিধবা। তিনি বললেন, তবে কোন কুমারীকে কেন বিয়ে করলে না, যার সঙ্গে তুমি ক্রীড়া-কৌতুক করতে, সেও তোমার সঙ্গে রীড়া-কৌতুক করত? 

আমি বললাম, আমার বেশ ক'টি বোন (অবিবাহিতা) রয়েছে। তাই আমি এমন নাবীকে বিয়ে করা পছন্দ করলাম যে তাদের গুছিয়ে রাখবে, তাদের মাথা আঁচড়ে দিবে এবং তাদের দেখাশোনা করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তো (মদিনায়) উপনীত হতে যাচ্ছ। যখন পৌছে যাবে তখন (সন্তান অনেষায়) স বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিবে। 

পরে তিনি বললেন, তোমার উটটি বেচবে কি? আমি বললাম, জী হাঁ। তিনি তখন আমার নিকট হতে এক উকিয়ার (চল্লিশ দিরহাম সমমূল্যের) বিনিময়ে কিনে নিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসময়ে মদিনায় পৌঁছলেন। আমিও সকালে আগমণ করে মসজিদে (নববীতে) পৌছলাম এবং তাঁকে মসজিদের দরজায় পেয়ে গেলাম। তিনি বলেন, আমি যখন এলাম তুমি কি তখন এসেছ? আমি বললাম, জ্বী হাঁ। তিনি বললেন, তবে তোমার উটটি রেখে দাও এবং (মসজিদে) প্রবেশ করে দু'রাকআত সালাত আদায় করে নাও। 

জাবির বলেন, আমি প্রবেশ করে সালাত আদায় করলাম। পরে ফিরে এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক উকিয়া ওযন করে দেওয়ার জন্য বিলাল (রাঃ) কে হুকুম করলেন। বিলাল (রাঃ) তখন আমাকে ওযন করে দিলেন এবং ওযনে পাল্লা ঝুকিয়ে দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, তখন আমি চলে যেতে লাগলাম। আমি কিছু দূর গেলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জাবিরকে আমার কাছে ডেকে আন। তখন আমাকে ডাকা হল। আমি (মনে মনে) বললাম, এখন উটটি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন অথচ আমার কছে ওর চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় আর কিছু ছিল না। তিনি বললেন, "তোমার উট তুমি নিয়ে যাও আর তোমার মূল্য তোমারই রইল।"

৩৫১১.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ) ... আবু নাযরা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমি ছিলাম আমার একটি (পানিবাহী) উটের পিঠে। ওটি ছিল কাফিলার পশ্চাদ্বর্তীদের মাঝে। জাবির (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পিটুনী দিলেন কিংবা (বর্ণনা দ্বিধা) তিনি বলেছেন যে, তাকে খোচা দিলেন- আমার (আবূ নাযর) ধারণা, তিনি (জাবির) বলেছেন যে, কোন কিছু দিয়ে যা তার সঙ্গে ছিল। 

জাবির (রাঃ) বলেন, এরপরে সে (উট) কাফিলার লোকদের আগে আগে চলে যেতে লাগল এবং আমাকে (আমার ধরে রাখা লাগামসহ) টেনে নিয়ে যেতে লাগল। এমনকি আমি তাকে ঠেকিয়ে রাখছিলাম। জাবির (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এত এত-র বিনিময় এটি তুমি আমার কাছে বেচবে কি? এবং আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ এটি আপনার জন্য ইয়া নাবীইয়্যাল্লাহ! তিনি বললেন, এত এত-তে সেটি তুমি আমার কাছে বেচরে কি? এবং আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, এটি আপনার ইয়া নাবীইয়্যাল্লাহ! 

জাবির (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আরও বললেন, তোমার পিতার (মৃত্যুর) পরে তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, জি হাঁ। তিনি বললেন, বিধবাকে না কুমারীকে? জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, বিধবাকে। তিনি বললেন, তবে তুমি কোন কুমারীকে বিয়ে করলে না কেন- যে তোমার সাথে আমোদ করত আর তুমিও তার সাথে আমোদ করতে। আর সে তোমার সাথে ক্রীড়া করত এবং তুমিও তার সাথে ক্রীড়া করতে। 

আবূ নাযরা (রহঃ) বলেন, এ কথাটি (অর্থাৎ আল্লাহ তোমার মাগফিরাত করুন) ছিল একটি বাক্যারূপ যা মুসলামনগণ তাদের কথাবার্তায় (কথার মাত্রা ও বাচনভঙ্গীরূপে) উচ্চারণ করতেন। তারা বলতেন এরূপ ও এমন কর ...... আল্লাহ তোমার মাগফিরাত করুন।

পরিচ্ছেদঃ ৯. মহিলাদের সম্পর্কে ওসিয়ত


৩৫১২.    মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র আল-হামদানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া উপভোগের উপকরণ (ভোগ্যপণ্য) এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ পুণ্যবতী নারী।

৩৫১৩.    হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারী পাজরের হাড়ের ন্যায় (বাঁকা)। যখন তুমি তাকে সোজা করতে যাবে তখন তা ভেঙ্গে ফেলবে আর তার মাঝে বক্রতা রেখে দিয়েই তা দিয়ে তুমি উপকার হাসিল করবে। 

যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... (যুহরীর ভ্রাতুষ্পুত্র তার চাচা যুহরীর সুত্রে) (উপরোক্ত সনদের ন্যায়) ইবনু শিহাব (রহঃ) সুত্রে অবিকল অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।

৩৫১৪.    আমরুন নাকিদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের একটি হাড় দিয়ে। সে কখনো তোমার জন্য কোন নিয়মতান্ত্রিকতায় স্থির থাকবে না। সুতরাং তুমি যদি তাকে দিয়ে উপকৃত হতে চাও তবে তার বক্রতা অবশিষ্ট রেখেই তাকে দিয়ে উপকৃত হতে হবে। আর তাকে সোজা করতে গেলে তুমি তাকে ভেঙ্গে ফেলবে- আর তাকে ভেঙ্গে ফেলা অর্থ হল তাকে তালাক দেওয়া।

৩৫১৫.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যখন কোন বিষয় প্রত্যক্ষ করবে তখন যেন উত্তম কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকবে। আর নারীদের প্রতি কল্যাণের (ও সদাচরণের) উপদেশ অঙ্গীকার গ্রহণ কর। কেননা পাঁজরের একটি হাড় দিয়ে নারী সৃজিত হয়েছে এবং পাজরের সবচেয়ে বেশি বাঁকা হল তার উপরের অংশ। তুমি তাকে সোজা করতে গেলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর তাকে (যথাবস্থায়) রাখলে তা সদা বাকা থেকে যাবে। নারীদের প্রতি কল্যাণের উপদেশ গ্রহণ কর।

৩৫১৬.    ইবরাহীম ইবনু মূসা রাজী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুমিন পুরুষ কোন মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষন করবে না; (কেননা) তার কোন চরিত্র অভ্যাসকে অপছন্দ করলে তার অন্য কোন (চরিত্র-অভ্যাস) টি সে পছন্দ করবে। ... কিংবা (এ ধরনের) অন্য কিছু বলেছেন।

৩৫১৭.    মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৩৫১৮.    হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যদি হাওয়া (আলাইহিস সালাম) না হতেন তবে যুগ যূগান্তরে কোন নারী তার স্বামীর বিশ্বাস ভঙ্গ করত না।

৩৫১৯.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাদ ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমাদের কাছে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস। তিনি অনেক হাদীস উল্লেখ করেছেন। তার মাঝে অন্যতম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ বনূ ইসরাঈলী না হলে খাদ্য নষ্ট হত না এবং গোশত বিকৃত দুর্গন্ধযুক্ত হত না এবং হাওয়া (আলাইহিস সালাম) না হলে যুগ যুগান্তরে কোন নারী তার স্বামীর বিশ্বাস ভঙ্গ করত না।

No comments:

Powered by Blogger.