জমা’আতের কথা (গওহার)
জমা’আতের কথা (গওহার)
জমা’আতের কথা (গওহার)
হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায জমা’আতে পড়া-সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা ওয়াজিবের সমপর্যায়ভুক্ত।
১।মাসআলাঃ একজন ইমাম হইয়া এবং অন্যান্য লোক তাঁহার মুক্তাদী হইয়া (অনুসরণ করিয়া) নামায পড়াকে জমা’আতে নামায বলে। লোক অভাবে ইমাম ছাড়া একজন মুক্তাদী হইলেও জমা’আত হইয়া যাইবে।
২।মাসআলাঃ জমা’আত হওয়ার জন্য ফরয নামায হওয়া যরূরী নহে; বরং নফলও যদি দুইজনের একে অপরের অনুসরণ করিয়া পড়ে, তবে জমা’আত হইয়া যাইবে, ইমাম মুক্তাদী উভয়ে নফল পড়ুক বা মুক্তাদী নফল পড়ুক। অবশ্য নফল নামায জমা’আতে পড়ার অভ্যস্ত হওয়া বা তিনজন মুক্তাদীর বেশী হওয়া মকরূহ।
জমা’আতের ফযীলত ও তাকীদ
জমা’আতের তাকীদ ও ফযীলত সম্বন্ধে বহু সংখ্যক হাদীস আছে। এখানে আমরা মাত্র দুই একটি আয়াত এবং কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করিতেছি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জীবনে কখনও জমা’আত তরক করেন নাই। এমন কি রুগ্ন অবস্থায় যখন নিজে হাঁটিয়া মসজিদে যাইতে অক্ষম হন, তখনও দুইজন লোকের কাঁধে ভর দিয়া মসজিদে গিয়াছেন, তবুও জমা’আত ছাড়েন নাই। জমা’আত তরককারীদের উপর হুযূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভীষণ ক্রোধ হইত। তিনি জমা’আত তরককারীদের অতি কঠোর শাস্তি দিতে চাহিতেন। নিঃসন্দেহে শরীঅতে মুহাম্মাদীতে জমা’আতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে এবং দেওয়াও সঙ্গত ছিল। নামাযের ন্যায় এবাদতের শান বা মর্যাদা ইহাই চায় যে, যে সব জিনিস দ্বারা উহার পূর্ণতা লাভ হয় তৎপ্রতিও এরূপ উন্নত ধরণের তাকীদ হওয়া উচিত। আমি এখানে মুফাসসিরীন ফেকাহাগণ যে আয়াত দ্বারা জমা’আতে নামায পড়া প্রমাণ করিয়াছেন, উহা লিখিয়া কতিপয় হাদীস বর্ণনা করিতেছি।
আয়াতঃ [আরবি] কোরআনের বহু টীকাকার এই আয়াতের অর্থ এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেনঃ “নামায আদায়কারীদের সহিত মিলিয়া নামায আদায় কর।” কেহ কেহ আয়াতের তফসীর করিয়াছেন, ‘মস্তক অবনতকারীদের সহিত মিলিয়া মস্তক অবনত কর’ কাজেই জমা’আত ফরয না হইয়া ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত হইয়াছে।
১।হাদীসঃ ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন, একাকী নামায পড়ার চেয়ে জমা’আতে নামায পড়িলে সাতাইশ গুণ অধিক ছওয়াব পাওয়া যায়। ¾বোখারী, মোসলিম।
২।হাদীসঃ রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ একাকী নামায পড়া অপেক্ষা দুইজন মিলিয়া নামতায পড়া অনেক ভাল। দুইজনের চেয়ে তিনজন মিলিয়া নামায পড়া আরও বেশী ভাল। এইরূপে যতই অধিক সংখ্যক লোক একত্র হইয়া জমা’আত করিয়া নামায পড়িবে, আল্লাহ তা’আলার নিকট তত অধিক পছন্দনীয় হইবে। ¾আবু দাউদ
৩।হাদীসঃ আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন, বনী সালমার লোকগণ তাঁহাদের পুরাতন বাড়ী (মসজিদে নববী হইতে দূরে ছিল বলিয়া উহা) পরিত্যাগ করিয়া মসজিদে নববীর নিকটে বাড়ি তৈয়ার করিতে মনস্থ করিয়াছিলেন। রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সংবাদ জানিতে পারিয়া তাঁহাদিগকে বলিলেন, “আপনারা যে আপনাদের দূরবর্তী বাড়ি হইতে অধিক সংখ্যক কদম ফেলিয়া (অধিক কষ্ট করিয়া) মসজিদে আসেন ইহার প্রত্যেক কদমে যে ছওয়াব পাওয়া যায় তাহা কি আপনারা জানেন না? (অতঃপর তাঁহারা তাঁহাদের পুরাতন বাড়ী পরিত্যাগ করিলেন না।) এই হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত হইল যে, মসজিদে যতদূর হইতে (যত কষ্ট করিয়া) আসিবে, ততই অধিক ছওয়াব হইবে। (অবশ্য নিজের মহল্লার মসজিদ থাকিলে সেই মসজিদের হক বেশী। কাজেই যদিও সেখানে জমা’আত না হয়, তবুও সেখানেই আযান এক্বামত বলিয়া নামায পড়িবে। ¾শামী
৪।হাদীসঃ (দশজন মিলিয়া একত্রিত হইয়া কোন কাজ করিতে গেলে অবশ্যই কেহ আগে এবং কেহ কিছু পরে আসে। বিশেষতঃ ঘড়ি, ঘণ্টা না থাকিলে এইরূপ হওয়াই স্বাভাবিক। অতএব, যে কেহ আগে আসে তাহার বিরক্ত হওয়া উচিত নহে, ধৈর্য ধারণ করিয়া অন্যান্য সঙ্গী ভাইদের জন্য কিছু অপেক্ষা করা উচিত। নেক কাজে যে যত আগে আসিবে যদিও কাজ শুরু না হয়, তবুও সে অধিক ছওয়াবের অধিকারী হইবে। ধনী মুছল্লীর জন্য হয়ত সকলেই কিছু অপেক্ষা করে, কিন্তু নিয়মিত মুছল্লী হইলে গরীব হইলেও ক্বচিৎ কোন সময় দেরী হইয়া গেলে তাহার জন্য কিছু অপেক্ষা করা এবং তাহাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত। এই সব ছুরতে কেহ আগে আসিয়া বসিয়া থাকিলে সময়টা অপব্যয় হয় না, ইহা শিক্ষা দিবার জন্যই) রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেনঃ ‘নামাযের অপেক্ষায় যতটুকু সময় ব্যয় হয়, তাহাও নামাযের হিসাবের মধ্যে গণ্য হয়।’
৫।হাদীসঃ একদা এশার জমা’আতে হুযূর (দঃ) এর আসিতে কিছু দেরী হইয়াছিল। যে সব ছাহাবী জমা’আতের জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন, তাঁহাদিগকে লক্ষ্য করিয়া রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইলেনঃ ‘অন্যান্য লোক তো নামায পড়িয়া ঘুমাইতেছে, কিন্তু আপনারা যে জমা’আতের অপেক্ষায় বসিয়া রহিয়াছেন, (আপনাদের সময়টা বেকার যায় নাই,) যতটুকু সময় এই নামাযের অপেক্ষায় আপনাদের ব্যয় হইয়াছে তাহা সবই নামাযের মধ্যে হিসাব হইয়াছে। (অর্থাৎ, এই সময়ে নামায পড়িলে যতখানি ছওয়াব পাওয়া যাইত নামাযের অপেক্ষায় বসিয়া থাকাতেও সেই ছওয়াবই পাইবে।)
৬।হাদীসঃ রসূলুল্লাহ (দঃ) ফরমাইয়াছেনঃ যাহারা অন্ধকার রাত্রে জমা’আতে নামায পড়িবার জন্য মসজিদে আসিবে, তাহাগিদকে সুসংবাদ দেওয়া হইতেছে যে, (কিয়ামতের দিন তাহাদিগকে) পূর্ণ আলো প্রদান করা হইবে।’ ¾তিরমিযী
৭।হাদীসঃ রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ যে ব্যক্তি এশার নামায জমা’আতে পড়িবে তাহাকে অর্ধ রাত্রের এবাদতের ছওয়াব দেওয়া হইবে এবং যে এশা ও ফজর দুই ওয়াক্তের নামায জমা’আতে পড়িবে, তাহাকে সম্পূর্ণ রাত্রের এবাদতের ছওয়াব দেওয়া হইবে। ¾তিরমিযী
৮।হাদীসঃ একদিন রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাহারা জমা’আতে হাযির হয় না তাহাদিগকে (তিরস্কারার্থে) বলিয়াছেনঃ ‘আমার ইচ্ছা হয় যে কতকগুলি কাঠ জমা করার হুকুম দেই, তারপর আযান দেওয়ার হুকুম দেই এবং অন্য একজনকে ইমাম বানাইয়া নামায পড়াইবার হুকুম দিয়া দেখি, যাহারা জমা’আতে হাযির হয় নাই, তাহাদের বাড়ি ঘর জ্বালাইয়া দেই।’
৯।হাদীসঃ অন্য এক দিন ফরমাইয়াছেনঃ যদি ছোট শিশু ও স্ত্রী লোকদের খেয়াল না হইত, তবে আমি এশার নামাযে মশগুল হইয়া যাইতাম এবং খাদেমদের হুকুম দিতাম যে, যাহারা জমা’আতে না আসে, যেন তাহাদের মাল-আসবাব এবং তাহাদিগকেসহ তাহাদের ঘর-বাড়ী জ্বালাইয়া দেয়।’ ¾মুসলিম
১০।হাদীসঃ রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ ‘যে কোন বস্তিতে বা ময়দানে তিনজন মুসলমান থাকিবে, সেখানে যদি তাহারা জমা’আত করিয়া নামায না পড়ে, তবে তাহাদের উপর শয়তানের আমল (অধিকার) জন্মাইয়া দেওয়া হইবে। অতএব, হে আবূদর্দদা! তুমি জমা’আত ছাড়িও না। দেখ, নেকড়ে বাঘ বকরীর দলের মধ্যে হইতে সেই বকরীটাকেই ধরে, যে নিজের দল হইতে পৃথক থাকে; তদ্রূপ শয়তানও সেই মুসলমানের উপর আক্রমণ করে এবং প্রভাব বিস্তার করে, যে ব্যক্তি মুসলমানদের দল ও জমা’আত হইতে পৃথক থাকে।’
১১।হাদীসঃ রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনিয়া জমা’আতে নামায পড়িবার জন্য না আসিয়া বিনা ওযরে একা একা নামায পড়িবে তাহার নামায (আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়) কবূর হইবে না। (অবশ্য একা একা পড়িলেও ফরয আদায় হইয়া যাইবে এবং আইনের শাস্তি হইতে রেহাই পাইবে বটে।) ছাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ‘হুযূর, ওযর কি? বলিলেনঃ ‘(শত্রু বা বাঘের আক্রমণের) ভয় বা রোগ।’
১২।হাদীসঃ মেহযন রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এক দিন আমি রসূলুল্লাহ (দঃ) এর সঙ্গে ছিলাম, এমন সময় আযান হইল এবং রসূলুল্লাহ (দঃ) নামায পড়িতে লাগিলেন। আমি পৃথক গিয়া বসিয়া রহিলাম। নামায সমাপনান্তে হযরত (দঃ) আমাকে (তিরস্কার করিয়া) বলিতে লাগিলেনঃ ‘হে মেহযন! তুমি জমা’আতে নামায পড়িলে না কেন? তুমি কি মুসলমান নও?’ আমি আরয করিলাম, ‘হুযূর, আমি ত মুসলমান বটে; কিন্তু আমি একা একা বাড়িতে নামায পড়িলাম, (তাই জমা’আতে শরীক হই নাই।’) রসূলুল্লাহ (দঃ) ফরমাইলেনঃ ‘(এরূপ করা উচিত হয় নাই) যদি কখনও বাড়িতে (কোন কারণবশতঃ) নামায পড় এবং তারপর মসজিদে আসিয়া দেখ যে, জমা’আত হইতেছে, তবে পুনরায় জমা’আতে শরীক হইয়া নামায পড়িবে (তবুও জমা’আত ছাড়িবে না!)’ এই হাদীসে জমা’আতের কত তাকীদ দেখা যায়! জমা’আতে শরীক না হওয়ায় রসূলুল্লাহ (দঃ) স্বীয় প্রিয় ছাহাবীকে মুসলমান হইতে খারিজ বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। এই কয়েকটি হাদীস নমুনা স্বরূপ উদ্ধৃত করা হইল। এখন রসূলুল্লাহ (দঃ) এর প্রিয় ছাহাবীগণের কয়েকটি বাণী উদ্ধৃত করিতেছি। যদ্দ্বারা বুঝা যাইবে যে, ছাহাবিগণ জমা’আতের কতদূর যত্ন লইতেন। কেনই বা লইবেন না? তাঁহারাই ত প্রকৃত প্রস্তাবে রসূলুল্লাহ (দঃ) এর ছাঁচে গড়া মানুষ এবং রসূলুল্লাহ (দঃ) এর সুন্নতের তাবেদারীর জন্য জীবন উৎসর্গ করিয়া দিয়াছেন।
১।আছারঃ (ছাহাবী বা তাবেয়ীর বাণীকে আছার বলে।) আছওয়াদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমরা একদিন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার দরবারে উপস্থিত ছিলাম। কথায় কথায় নামাযের পাবন্দী, তাকীদ এবং ফযীলত সম্বন্ধে আলোনা হইতে লাগিল। প্রমাণ স্বরূপ হযরত আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (দঃ) এর অন্তিমকালের পীড়ার ঘটনা বর্ণনা করিলেন যে, একদিন নামাযের ওয়াক্ত হইলে আযান দেওয়া হইল। তখন রসূলুল্লাহ (দঃ) আমাদের বলিলেনঃ (আমি ত যাইতে অক্ষম) সংবাদ দাও, আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) নামায পড়াইয়া দেউক।’ আমরা আরয করিলামঃ হুযূর! আবুবকর (রাঃ) অতি নরম-দেল মানুষ, আপনার স্থানে দাঁড়াইলে (কাঁদিয়া) অস্থির ও অক্ষম হইয়া যাইবেন, নামায পড়াইতে আসিবেন না। কতকক্ষণ পর (রোগের কারণে বেহুঁশের মত হইয়া গিয়াছিলেন, হুঁশ আসিলে) তিনি আবার ঐরূপ বলিলেনঃ আমরাও পূর্বের ন্যায়-আরয করিলাম। তখন হযরত (দঃ) বলিতে লাগিলেনঃ তোমরা তো আমার সঙ্গে ঐরূপ (চাতুরীর) কথা বলিতেছ; যেরূপ ইউসুফ আলাইহিসসালামের সঙ্গে মিশরীয় রমণীরা বলিয়াছিল। বলিয়া দাও, আবুবকর নামায পড়াক। যাহা হউক, অতঃপর আবুবকর ছিদ্দিক (রাঃ) (সংবাদ দেওয়ার পর) নামায পড়াইবার জন্য অগ্রসর হইলেন। ইত্যবসরে রসূলুল্লাহ (দঃ) কিছু ভাল বোধ করিতে লাগিলেন। তখন তিনি দুইজন লোকের কাঁধের উপর ভর দিয়া জমা’আতের জন্য মসজিদে চলিলেন। আমার চক্ষে এখনও সেই দৃশ্য যেন ভাসিতেছে যে, রসূল (সাঃ) এর কদম মোবারক মাটিতে হেঁচড়াইয়া হেঁচড়াইয়া যাইতেছিল। শরীর এত দুর্বল ছিল যে, পা উঠাবার শক্তিও ছিল না। (তবুও জমা’আত তরক করা পছন্দ করেন নাই।) ওদিকে আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) নামায শুরু করিয়াছিলেন, হযরতকে দেখিয়া তিনি পিছে সরিয়া যাইতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু হযরত নিষেধ করিলেন এবং তাঁহার দ্বারাই নামায পড়াইলেন। ¾বোখারী
২।আছারঃ হযরত ওমর ফারুক রাযিয়াল্লাহু আনহু এক দিন ফজরের নামাযে সোলায়মান-ইবনে আবি হাছমাকে না পাইয়া তাঁহার বাড়ি পর্যন্ত (তদন্তের জন্য) গিয়াছিলেন। তাঁহার মায়ের নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন-সোলায়মানকে তো নামাযে দেখি নাই। তিনি বলিলেনঃ সোলায়মান আজ সারা রাত নামায পড়িয়াছিল, তাই ঐ সময় তাহার ঘুম আসিয়াছিল। এই উত্তর শ্রবণে হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেনঃ ‘সমস্ত রাত জাগিয়া এবাদত করা অপেক্ষা ফজরের নামায জমা’আতে পড়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।’ ¾মোয়াত্তায়ে মালেক
৩।হাদীসঃ হযরত আব্দুল্রাহ ইবনে-মসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু (তাঁহার সময়কার অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে) বলেন, আমি যথাযথ পরীক্ষার পর জানিতে পারিয়াছি যে, জমা’আত তরক অন্য কেহই করে না শুধু সেই মোনাফেক ব্যতীত যাহারা মোনাফেকী প্রকাশ্য হইয়া গিয়াছে এবং পীড়িত লোক ব্যতীত; কিন্তু পীড়িত লোকেরাও তো দুই দুইজন লোকের কাঁধের উপর ভর দিয়া জমা’আতে হাযির হইত। নিশ্চয় জানিও, রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হেদায়ত এবং সত্যের রাস্তাসমূহ বাতাইয়া গিয়াছেন। যতগুলি হেদায়তের রাস্তা তিনি বাতাইয়া গিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে প্রধান একটি এই যে, আযান ও জমা’আতের স্থান মসজিদ, তথায় গিয়া সমস্ত মুসলমানদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়িতে হইবে। অন্য এক রেওয়ায়তে আছে, কাল কিয়ামতের দিন যে আল্লাহর সামনে মুসলমানরূপে হাযির হইতে বাসনা রাখে তাহারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পাবন্দীর সহিত মসজিদে জমা’আতের সঙ্গে পড়া উচিত। নিশ্চয় জানিও, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের নবীর দ্বারা তোমাদিগকে হেদায়তের সমস্ত রাস্তা উত্তমরূপে শিক্ষা দিয়াছেন। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও সেই সমস্ত হেদায়তের রাস্তাসমূহের মধ্যে একটি প্রধান রাস্তা। অতএব, যদি তোমরা মোনাফেকদের মত ঘরে বসিয়া নামায পড়, তবে নবীর তরীকা ছুটিয়া যাইবে এবং যদি নবীর তরীকা ছাড়িয়া দাও, তবে নিশ্চয়ই তোমরা পথভ্রষ্ট (এবং ধ্বংস) হইয়া যাইবে। যে ব্যক্তি ভালরূপে ওযূ করিয়া মসজিদে যাইবে তাহার প্রতি কদমে একটি নেকী মিলিবে, একটি মর্তবা বাড়িবে এবং একটি ছগীরা গোনাহ মাফ হইবে। আমরা উত্তমরূপে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি, যাহারা মোনাফেক শুধু তাহারাই জমা’আতে যায় না। আমাদের লোকদের (ছাহাবাদের) অবস্থা তো এইরূপ ছিল যে, রুগ্ন ব্যক্তিকেও দুইজন লোকে কাঁধে করিয়া আনিয়া জমা’আতে দাঁড় করাইয়া দিত।
৪।আছারঃ একবার একজন লোক আযানের পর নামায না পড়িয়াই মসজিদ হইতে বাহির হইয়া গেল। ইহা দেখিয়া হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলিলেন, এই ব্যক্তি আবুল কাসেমের (দঃ) নাফরমানী করিল এবং তাঁহার পবিত্র আদেশ অমান্য করিল। (দেখুন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) জমা’আত তরককারীদের কি বলিলেন। এখনও কি কোন মুসলমানের জমা’আত তরক করার সাহস হইতে পারে? কোন ঈমানদার কি হুযূরের নাফরমানী করিতে পারে?) ¾মুসলিম
৫।আছারঃ হযরত উম্মে দরদা (রাঃ) বলেন, এক দিন আবুদ্দরাদা (রাঃ) অত্যন্ত ক্রোধান্বিত অবস্থায় আমার নিকট আসিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনার ক্রোধের কারণ কি? তিনি জবাবে বলিলেন, খোদার কসম! রসূলুল্লাহর উম্মতের মধ্যে জমা’আতে নামায পড়া ব্যতীত আর কিছুই দেখিতেছি না; কিন্তু লোকেরা উহাও ছাড়িয়া দিতেছে।
৬।আছারঃ বহু সংখ্যক ছাহাবী হইতে রেওয়ায়ত আছে, আযান শুনিয়া যে ব্যক্তি জমা’আতে উপস্থিত না হইবে, তাহার নামায হইবে না! অর্থাৎ, বিনা ওযরে জমা’আত তরক করা জায়েয নহে।
৭।আছারঃ মোজাহেদ (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, এক ব্যক্তি সারাদিন রোযা রাখে এবং সারারাত্রি নামায পড়ে, কিন্তু জুমু’আ এবং জমা’আতে হাযির হয় না। তাহার সম্বন্ধে আপনি কি বলেন? তিনি উত্তর করিলেন, সে দোযখে যাইবে। ¾তিরমিযী
৮।আছারঃ প্রাচীনকালে দস্তর ছিল-যদি কাহারও জমা’আত ছুটিয়া যাইত, সে এত পেরেশান হইত যে, লোকেরা সাত দিন পর্যন্ত তাহার জন্য সমবেদনা ও আক্ষেপ করিত। ¾এহইয়াউলউলুম
No comments: