Breaking News
recent

সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড, অধ্যায়ঃ শব্দচয়ন ও শব্দপ্রয়োগে শিষ্টাচার




পরিচ্ছেদঃ ১. সময় ও কালকে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ


৫৬৬৭.    আবূ তাহির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ বলেনঃ আদম সন্তান সময় ও কালকে গাল-মন্দ করে, অথচ আমিই সময়, আমার হাতেই রাত ও দিন (-এর বিবর্তন সাধিত হয়)।
৫৬৬৮.    ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ বলেন, আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়, সে সময়কে গালি দেয়, অথচ আমিই সময়, রাত ও দিন আমিই বিবর্তিত করে থাকি।
৫৬৬৯.    আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহীয়ান-গরীয়ান আল্লাহ বলেনঃ আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়, সে বলে, হায় সময়ের ফের-দুর্ভাগ্য! (আমার সময় মন্দ)! তোমাদের কেউ যেন 'হায় সময়ের ফের' না বলে। কেননা আমিই তো সময়; আর রাত ও দিন আমিই পরিবর্তিত করে থাকি; যখন আমি ইচ্ছা করি, তখন তাদের দু'টিকে সংকুচিত করে দেই।
৫৬৭০.    কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ‘হায়! সময়ের ভোগ’ না বলে। কেননা আল্লাহ, তিনি সময় (নিয়ন্ত্রক)।
৫৬৭১.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সময়কে গালমন্দ করো না। কেননা আল্লাহ, তিনই সময়।

পরিচ্ছেদঃ ২. العنب (আঙ্গুর) কে الكرم নামকরণ মাকরূহ


৫৬৭২.    হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সময়কে গালি দিবে না। কেননা আল্লাহ, তিনই সময়। আর তোমাদের কেউ আঙ্গুরকে (الْعِنَب এর পরিবর্তে) الْكَرْم) (মর্যাদাবান) বলবে না। কেননা الكرم (বদান্যতা ও মর্যাদাশীল) হল মুসলমান ব্যক্তি।
৫৬৭৩.    আমর আন-নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা (আঙ্গুরকে) ‘আল-কারম’ বল না কেননা 'কারম' হল ‘মুমিনের কাল্‌ব।
৫৬৭৪.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আঙ্গুরকে الْكَرْمَ নাম দিও না। কেননা ‘আল-কারম’ হল মুসলিম ব্যক্তি।
৫৬৭৫.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (আংগুরকে) অবশ্যই ‘আল-কারাম’ বলবে না। কেননা ‘আল-কারাম’ হল মুমিনের কাল্‌ব।
৫৬৭৬.    ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হল সে সব হাদীস যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। এ কথা বলে তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করে। সে সবের একটি হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের কেউ আংগুরকে (العنب না বলে) কখনো الكَرم বলবে না। 'আল কারম' তো মুসলিম ব্যক্তি।
৫৬৭৭.    আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... আলকামা ইবনু ওয়ায়ল (রহঃ) তার পিতা সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা (আংগুরকে)- আল-কারম, বল না, বরং الْحَبَلَة (আল-হাবলাহ) বল। 

অপর সনদে যুহায়র (রহঃ) ... সিমাক (রহঃ) থেকে তিনি বলেন যে, আলকামা ইবনু ওয়াইল (রহঃ) কে তাঁর পিতা সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, তোমরা (আংগুরকে) আল-কারম- বল না। তবে বল আল-হাবালাহ (الْحَبَلَة) ও আলইনাব (الْعِنَب)।

পরিচ্ছেদঃ ৩. 'আবদ' 'আমাত' (দাস-দাসী) এবং 'মাওলা', 'সায়্যিদ' (মনিব ও নেতা) শব্দসমূহ ব্যবহারের বিধান


৫৬৭৮.    ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ عَبْدِي (আমার বান্দা, দাস) أَمَتِي (আমার বাঁদী, দাসী) বলবে না। কেননা তোমাদের প্রত্যেক পুরুষই আল্লাহর বান্দা (দাস) এবং তোমাদের প্রত্যেক মহিলাই আল্লাহর বাঁদী (দাসী)। বরং বলবে, غُلاَمِي - جَارِيَتِي - فَتَاىَ - فَتَاتِي (অর্থাৎ আমার বালক-কিশোর, আমার বালিকা-কিশোরী, আমার সেবক, আমার সেবিকা)।
৫৬৭৯.    যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ অবশ্যই 'আমার দাস' বলবে না। কেননা তোমাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর দাস ও বান্দা। তবে সে বলবে ‘আমার সেবক’। আর আবদ তার মনিবকে আমার ‘রব্ব’ বলবে না বরং বলবে আমার সায়্যিদ (মনিব ও নেতা)।
৫৬৮০.    আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তাদের দু'জনের রিওয়ায়াতে রয়েছে গোলাম তার সায়্যিদ ও মনিবকে ‘আমার মাওলা’ বলবে না এবং (প্রথম সনদের) রাবী আবূ মুআবিয়া (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে আরো অধিক বিষয়ে উল্লেখ করেছেন যে, 'কেননা তোমাদের মাওলা' হলেন আল্লাহ।
৫৬৮১.    মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হল সে সব হাদীস, যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি হাদীস উল্লেখ করেছেন। সে সবের একখানি হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (মনিব সমন্ধে এভাবে) বলবে না যে, তোমার 'রব্ব'কে পান করাও, তোমার 'রব্ব'কে খাবার দাও, তোমার 'রব্ব'কে উযু করাও। তিনি আরও বলেন, তোমাদের কেউ (নিজেও) বলবে না, আমার রব্ব বরং বলবে আমার সায়্যিদ সরদার বা নেতা, আমার মাওলা-মনিব। আর তোমাদের কেউ বলবে না, আমার বান্দা আমার বাঁদী, বরং বলবে, কিশোর, কিশরী, বালক, বালিকা (আমার সেবক আমার সেবিকা)।

পরিচ্ছেদঃ ৪. কোন মানুষের নিজের (দুরবস্থা প্রকাশে) خَبُثَتْ نَفْسِي আমার মন খবীছ (পিশাচ অধম হয়ে গিয়েছে) বলা মাকরূহ


৫৬৮২.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব মূহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ নিজেকে (দুরবস্থা প্রকাশে) বলবে না, আমার মন খবীস (পিশাচ ইতর নিকৃষ্ট) হয়ে গিয়েছে, বরং বলবে (لَقِسَتْ) আমার মন সংকুচিত ও বিমর্ষ হয়ে গিয়েছে। এ ভাষ্য আবূ কুরায়ব (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের। আর আবূ বকর (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা বর্ণনা করেছেন তাতে لَكِنْ শব্দটির উল্লেখ নেই।
৫৬৮৩.    আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ মুআবিয়া (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে ঐ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৬৮৪.    আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ... আবূ উমামা ইবনু সাহব ইবনু হুনায়ফ (রহঃ) তাঁর পিতা [সাহল (রাঃ)] সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ আমার আত্না খবীস হয়ে গিয়েছে, বলবে না, 'আমার মন সংকুচিত ও বিমর্ষ হয়ে গিয়েছে' বলবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫. মেশক (কস্তূরী) ব্যবহার এবং তা শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি হওয়ার এবং ফুল ও সুগন্ধি প্রত্যাখ্যান মাকরূহ হওয়ার বিবরণ


৫৬৮৫.    আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী ইসরাঈলের বেটে আকৃতির একটি স্ত্রীলোক দু'জন দীর্ঘাঙ্গী স্ত্রীলোকের সাথে হেঁটৈ চলছিল। সে (উচু হওয়ার জন্য) এবং লোকদের চোখে ধরা না পড়ার উদ্দেশ্যে কাঠের দুটি পা বানিয়ে নিল এবং সোনা দিয়ে মুখ বন্ধ একটি বড় সড় আংটি বানিয়ে পরে তার ভিতরে মেশক ভরে দিল। আর তা (মেশক) হল সুগন্ধিকুলের সেরা সুগন্ধি। পরে সে ঐ দুই স্ত্রীলোকের মাঝে থেকে চলতে লাগলো এবং লোকেরা তাকে চিনতে পারল না। তখন সে তার হাত দিয়ে এভাবে ঝাড়া দিল। (এ কথা বলে) রাবী শু'বা (রহঃ) তাঁর হাত ঝাড়া দিলেন (এবং স্ত্রীলোকটির হাত ঝাড়ার ভঙ্গী নকল করলেন)।
৫৬৮৬.    আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাঈলের এক মহিলার কথা উল্লেখ করলেন, যে তার আংটি মেশক দিয়ে ভরে রেখেছিল ...... (এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন), আর মেশক হল সুগন্ধিকুলের সেরা সুগন্ধি।
৫৬৮৭.    আবূ বাকর ইবনু শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কারো কাছে কোন কুল পেশ করা হলে সে যেন তা প্রত্যাখ্যান না করে। কেননা তা বোঝায় হালকা এবং ঘ্রানে উত্তম।
৫৬৮৮.    হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী, আবূ তাহির ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) অভ্যস্ত ছিলেন যে, যখন তিনি সুগন্ধি জ্বালাতেন, তখন (খাঁটি) উদ 'আগর', তার সাথে অন্য কোন সুগন্ধি না মিশিয়ে জালাতেন, আবার (কখনো) আগরের সাথে কর্পূর ঢেলে দিতেন। এরপর বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ভাবে সুগন্ধি জ্বালিয়ে ব্যবহার করতেন।

No comments:

Powered by Blogger.