আযান ও এক্বামত
আযান ও এক্বামত
আযান ও এক্বামত
১।মাসআলাঃ মুসাফির হউক বা মুক্বীম হউক, জমাআত হউক বা একাই হউক, ওয়াক্তী নামাযই হউক বা ক্বাযা নামাযই হউক, সমস্ত ‘ফরযে-আইন’ নামাযের জন্য পুরুষদের একবার আযান দেওয়া সুন্নতে মোয়াক্কাদা (প্রায় ওয়াজিব তুল্য) কিন্তু জুমুআর জন্য দুইবার আযান দেওয়া সুন্নত। -শামী ১ম জিলদ ৩৫৭ পৃষ্ঠা
২।মাসআলাঃ জেহাদ ইত্যাদি ধর্মীয় কোন কাজে লিপ্ত থাকাবশতঃ অথবা গায়েরে এখতিয়ারী কোন কারণবশতঃ যদি সর্ব সাধারণের নামায ক্বাযা হয়, তবে সেই ক্বাযা নামাযের জন্যও উচ্চস্বরেই আযান এক্বামত বলিতে হইবে। কিন্তু যদি নিজের আলস্য বা বেখেয়ালী বশতঃ নামায ক্বাযা হইয়া থাকে, তবে (সেই ক্বাযা নামায চুপে চুপে পড়া উচিত। কাজেই) তাহার জন্য আযান এক্বামত কানে আঙ্গুল না দিয়া চুপে চুপেই বলিতে হইবে, যাহাতে অন্য লোকে না জানিতে পারে। কারণ, দ্বীনের কাজে অলসতা করা বা খেয়াল না রাখা গোনাহর কাজ এবং গোনাহর কাজ বা গোনাহর কখা লোকের নিকট প্রকাশ করা নিষেধ। যদি কয়েক ওয়াক্তের কাযা নামায একসঙ্গে পড়ে, তবে শুধু প্রথম ওয়াক্তের জন্য আযান দেওয়া সুন্নত, বাকী যে কয় ওয়াক্ত ঐ সময় একসঙ্গে পড়িবে তাহার জন্য পৃথক পৃথক আযান দেওয়া সুন্নত নহে-মোস্তাহাব; তবে এক্বামত সব ওয়াক্তের জন্যই পৃথক পৃথক সুন্নত। - নূরুল ঈযাহ
৩।মাসআলাঃ (কতগুলো লোক একত্রে দলবদ্ধ হইয়া সফর করিলে ইহাকে কাফেলা বলে) যদি কাফেলার সমস্ত লোক উপস্থিত থাকে, তবে তাহাদের জন্য আযান মোস্তাহাব, সুন্নতে মোয়াক্কাদা নহে। কিন্তু এক্বামত সব অবস্থাতেই সুন্নত। -দুররে মোখতার
৪।মাসআলাঃ কারণবশতঃ বাড়িতে একা বা জমাতে নামায পড়িলে আযান দেওয়া মোস্তাহাব। যদি মহল্লা বা গ্রামের মসজিদে আযান হইয়া থাকে, তবে তথায় নামায পড়া উচিত। কারণ মহল্লার মসজিদ মহল্লাবাসীদের জন্য যথেষ্ট। যে পল্লীতে বা পাড়ায় মসজিদ আছে, সেখানে মসজিদে আযান একামত ও জমাআতের বন্দোবস্ত করা পাড়াবাসীর সকলের জন্য সুন্নতে মোআক্বাদা (প্রায় ওয়াজিব)তা সত্বেও যদি আযানেয বন্দোবস্ত কেহ না করে, তবে সকলেই গোনাহগার হইবে। মাঠের মধ্যে বা বিলের মধ্যে মহল্লার মসজিদের আযানের আওয়াজ শুনা গেলে মসজিদে আসিয়াই নামাজ পড়া উচিত, কিন্তু মসজিদে না আসিয়া যদি সেইখানে পড়ে, তবে আযান দেওয়া সুন্নত নহে, মোস্তাহাব, যদি আযানের আওয়াজ শুনা না যায়, তবে আযান দিয়াই নামায পড়িতে হইবে; কিন্তু এক্বামত সব অবস্থায়ই সুন্নত।
৫।মাসআলাঃ মহল্রার মসজিদে আযান একামতের সহিত জমা‘আত হইয়া পুনঃ তথা আযান একামত বলিয়া জমাআত করা মাকরুহ। কিন্তু (পথের বা বাজারের মসজিদ হইলে বা) যে মসজিদে ঈমাম, মোয়াযযিন বা মুছল্লী নির্দিষ্ট নাই তথায় মকরুহ নহে; বরং উত্তম। (মহল্লার মসজিদেও যদি বিনা আযানে জমা‘আত হইয়া থাকে, তবে পুনঃ জমা‘আত হইলে আযান সহকারে পড়িবে এবং আযানদাতার জমা‘আত ফওত হইয়া গেলে একা ঘরে আসিয়া আযান ব্যতীত শুধু এক্বামত আস্তে আস্তে অনুচ্চ শব্দে বলিয়া নামায পড়িবে।) -শামী
৬।মাসআলাঃ যে স্থানে জুমুআর শর্তাবলী পাওয়া যায় এবং জুমআর শর্তাবলী পাওয়া যায় এবং জুমুয়ার নামায পড়া হয়, সেখানে কোন ওযরবশতঃ বা বিনা ওযরে জুমুআর আগে বা পরে যদি কেহ যোহরের নামায পড়ে , তবে আযান এক্বামত বলা মকরুহ।-শামী
৭।মাসআলাঃ একাই পড়ুক বা জামাআতে পড়ুক- স্ত্রীলোকের আযান এক্বামত বলা মকরুহ। -দুররে মোখতার
৮।মাসআলাঃ ফরযে-আয়েন ব্যতীত অন্য কোন নামাযের জন্য আযান বা এক্বামত নাই-ফরযে কেফায়াই হউক, যেমন জানাযার নামায, বা ওয়াজিব নামাযই হউক, যেমন, বেতর এবং ঈদের নামায বা নফল হউক, যেমন-কুছুফ, খুছুফ, এশরাক, এস্তেস্কা এবং তাহাজ্জুদ ইত্যাদি নামায। -আলমগীরী
৯।মাসআলাঃ পুরুষ হউক, স্ত্রী হউক, পাক হউক, নাপাক হউক, যে কেহ আযানের আওয়ায শুনিবে তাহার জন্য আযানের জওয়াব দেওয়া মোস্তাহাব, কেহ কেহ ওয়াজিবও বলিয়াছেন। কিন্তু কেহ কেহ মোস্তাহাব কওলকেই প্রাধান্য (তরজীহ) দিয়াছেন। (কেহ কেহ বলিয়াছেন যে, আযানের জওয়াব দুই প্রকার; [১ম] মৌখিক জওয়াব দেওয়া এবং [২য়] ডাকে সাড়া দিয়া মসজিদের জমাআতে হাজির হইয়া কার্যতঃ জবাব দেওয়া। মৌখিক জওয়াব মোস্তাহাব, কিন্তু কার্যতঃ জওয়াব দেওয়া অর্থাৎ, ডাকে সাড়া দিয়া মসজিদে জমাআতে হাজির হওয়া ওয়াজিব।) এখানে মৌখিক জওয়াবের কথাই বলা হইতেছে। মৌখিক জওয়াবের নিয়ম এই যে, মোয়াযযিন যে শব্দটি বলিবে শ্রোতাগণ সেই শব্দটি বলিবে। কিন্তু মোয়াযযিন যখন ‘‘হাইয়্যা আলাছছালাহ’ এবং ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলিবে, তখন শ্রোতাগণ বলিবে,
[আরবী] এবং ফজরের আযানে মোয়াযযিন যখন [আরবী] বলিবে তখন শ্রোতা বলিবে, [আরবী] আযান শেষ হইলে সকলে একবার দুরুদ শরীফ এবং নিম্নের দোয়াটি পড়িবে।
[আরবী]
১০।মাসআলাঃ জুমুয়ার প্রথম আয়ান হওয়া মাত্রই সমস্ত কাজকর্ম পরিত্যাগ করিয়া মসজিদের দিকে ধাবিত হওয়া ওয়াজিব। ঐ সময় বেচাকেনা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদিতে লিপ্ত হওয়া হারাম।
১১।মাসআলাঃ এক্বামতের জওয়াব দেরয়াও মোস্তাহাব, ওয়াজিব নহে। এক্বামতের জওয়াবও আযানের জওয়াবের মত; ক্বদ ক্বমাতিছছালাহ’ শুনিয়া শ্রোতা বলিবে ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’।
১২।মাসআলাঃ আট অবস্থায় আযানের জওয়াব দেওয়া উচিত নহে। ১। নামাযের অবস্থায় ২।খোৎবা শুনার অবস্থায়-তাহা যে কোন খোৎবা হউক। ৩-৪। হায়েয নেফাসের অবস্থায়। ৫। দ্বীনি-এলম বা শরীয়তের মাসআলা-মাসায়েল শিখিবার বা শিক্ষা দিবার সময়। ৬। স্ত্রী সহবাস কালে ৭। পেশাব-পায়খানার সময় ৮। খানা খাইবার সময়। আযান শেষ হইয়া বেশীক্ষণ না হইয়া থাকে, তবে খাওয়ার কাজ সারিয়া তারপর জওয়াব দিবে, কিন্তু বেশীক্ষণ হইয়া গেলে আর জওয়াব দিবেনা।
No comments: