Breaking News
recent

দরবারী আলেমদের মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা

দরবারী আলেমদের মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা


ইয়াজিদ ভাল করেই জানতো, সরাসরি ইমাম হুসাইনের বিরোধিতায় নামলে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই সে এমন নির্মম হত্যাকান্ড ঘটিয়েও কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। তার অধীনস্থ আলেমদের দিয়ে তার পক্ষে জনমত গঠনের অপচেষ্টা করেছিল।
ক্ষমতালোভী দুষ্চরিত্র ইয়াজিদ বেঁচে নেই। কিন্তু ইয়াজিদের প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র এখনো শীর্ষ মুসলিম দেশগুলো কব্জা করে রেখেছে। স্বৈরাচাররা মুসলমানদের বুকে চেপে বসে আছে। মুসলমানদের বোকা বানাবার জন্যে তাদেরও কিছু গৃহপালিত আলেম ইমাম পীর জাতীয় লোক আছেন। এরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নামে নানাভাবে চেষ্টা করছে কারবালার ইতিহাসকে ম্লান করে এর গুরুত্বকে খাটো করার। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কায়দা করে বলতে চায়, ইমাম হুসাইন ক্ষমতার লোভেই নাকি কুফায় গমন করেছিলেন।
তার এই যাওয়াতে নাকি ইসলামের কোন কল্যাণ ছিল না। এটা নাকি হক আর বাতিলের যুদ্ধ ছিল না। (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহর লানত এইসব দরবারীর উপর। তারা ইয়াজিদের নৃশংসতাকে এবং ফোরাত নদীর পানি সরবরাহ বন্ধকে সহি নয় মর্মে প্রতিপন্ন করতে তৎপর। কেউ কেউ কারবালার এ ঘটনাকে কেচ্ছা কাহিনী বলতেও দ্বিধা করেনি। ইনিয়ে বিনিয়ে তারা দলীল পেশ করে কেবল দরবারী আলেমদের। তারা বুঝাতে চান, কারবালার ঘটনা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এ নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই। ইয়াজিদ হুসাইনের হত্যাকারী নয়।
ইমাম হুসাইন মুসলিম জাতির নির্বাচিত আমীর বা খলীফা ছিলেন না। তাকে হত্যা করা জায়েজ ছিল বলেও তারা কৌশলে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। কোন কোন আলেম তো ইয়াজিদের প্রতি অতিরিক্ত লিখতে গিয়ে তাকে ‘রাহমতুল্লাহ’বলতেও কুন্ঠিত হননি। তবে এইসব দরবারী আলেমরা বড়ই ধূর্ত। তারা প্রথমেই হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর পক্ষে এমনভাবে বন্দনা করেন যে পড়ে মনে হবে তারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর খুবই ভক্ত এবং পক্ষের লোক। প্রথমেই বোঝাতে চেষ্টা করেন ইমাম হুসাইনের মহব্বতে তাদের কলিজা ভরপুর।
কিন্তু ধূর্তামীর আশ্রয়ে 'প্রকৃত ইতিহাস' শেখাবার নামে এবং বড়ই চাতুর্য্যপূর্ণভাবে তারা ইয়াজিদের সাফাই গায়। তারা হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যার জন্য হযরত ইমাম হুসাইনকেই দায়ী করেন। কেউ কেউ শীয়াদের দায়ী করেন। অথচ ঐসময় শীয়া মতবাদের সৃষ্টিই হয়নি। মোট কথা, যে কোনভাবেই যেন ইয়াজিদকে দায়ী করা না হয়। ইমাম হুসাইনের হত্যার দায় কুফাবাসীর উপরও চাপাতে চান। তারা বোঝাতে চান, ইমাম হুসাইন কুফাবাসীর ফাঁদে পড়ে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন। অথচ কুফাবাসীদের প্ররোচনায় হুসাইন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন-এমনটা কোন মুসলমান মনে করতে পারে না। বরং ইমাম হুসাইন ইসলামী খেলাফতের পক্ষে এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন। এটা ঠিক কুফাবাসীরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তারা ইমাম পরিবারের সাথে চরম গাদ্দারী করেছে।
দরবারী আলেমরা চরম ধূর্ততার আশ্রয়ে ইয়াজিদকে ভাল শাসক, ইসলামের খেদমতগার বলেও প্রতিপন্ন করতে চান। তাদের মতে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নাকি সহি নয়। তারা মানুষকে বোঝাতে চান, ইয়াজিদ হুসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দিলেও হুসাইনকে হত্যার নির্দেশ দেয়নি। পাঠক খেয়াল করুন ফাঁকিবাজিটা কোথায়। ইয়াজিদ যখন হুসাইনকে হত্যার ঘটনা শুনলো তখন ইয়াজিদ ব্যথিত হয়েছিল বা হত্যাকারীকে শাস্তি দিয়েছিল এমন কোন দলীল তো পাওয়া যায় না।
দরবারীরা বলে বেড়ান যে, হুসাইনের ছিন্ন মস্তক ইয়াজিদের দরবারে এলে সেখানে নাকি কান্নার রোল পড়ে যায়। কিন্তু হত্যাকারীকে তো ক্ষমতা থেকে সরিয়েও দেয়নি এবং কোন শাস্তিও দেয়নি। গর্ভনর ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ তো তার স্বপদে বহাল তবিয়তেই ছিল। তাহলে কি বোঝা গেলো? দরবারীরা আরো বুঝাতে চান রাজতন্ত্র তেমন খারাপ কিছু নয়। যুগে যুগে এইসব দরবারীরা নানাভাবে মুসলমানদের সত্য ইতিহাস শেখাবার নামে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছে।

কারবালার প্রকৃত ইতিহাসকে তারা শীয়াদের অপপ্রচার শীয়া মতবাদ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ যাতে এসব আমল না করে সে লক্ষ্যে তারা শীয়া শীয়া বলে জিগির তুলেছে। কেননা কারবালার ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা মুমীনের মনে দাগ কাটেই। মানুষ জালিম রাজতন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। আর এই চেতনা ঠেকানোই দরবারী আলেমদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

No comments:

Powered by Blogger.