Breaking News
recent

তাওবার পরিচয়



তাওবার পরিচয়

তাওবা (توبة) শব্দের তা (تا) বর্ণে যবর ওয়া (واو) বর্ণে সুকুন যোগে গঠিত হয়। আভিধানিক অর্থ পাপ থেকে ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা, প্রত্যাগমন করা ইত্যাদি। বিশেষ পদে অর্থ অনুতাপ, অনুশোচনা। ড. মুহাম্মদ ড. হামিদ সাদিক বলেন:
التوبة: مصدر تاب ، الرجوع عن الذنب الندم على فعل الذنب ، وعقد العزم على عدم العودة إليه والتوجه إلى الله طلبا للمغفرة.
(‘তাবা (تاب) ক্রিয়া হতে তাওবা (توبة) হলো মাসদার। অর্থ পাপ থেকে ফিরে আসা। কৃতপাপের অনুশোচনা করা। পুনরায় না করার দৃঢ়সংকল্প করা।’ শব্দটি মহান সৃষ্টিকর্তার সত্তা ও তাঁর সৃষ্টিকুল বান্দাগণ উভয়ের সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার জন্য এ মর্মে যে, তিনি স্বীয় মাগফিরাত (মার্জনা) ও রাহমাত (করুণা) সহকারে বান্দাহদের প্রতি করুণা দৃষ্টি প্রদান করেন অর্থাৎ তিনি বান্দাদের তাওবা কবুল করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ ١٠٤ ﴾ [التوبة: ١٠٤]
‘তিনি স্বীয় বান্দাদের তাওবা কবুল করেন।’[1] এতে এ অর্থের প্রকাশ ঘটায় মূলত আল্লাহ তা‘আলার সাথে এই ক্রিয়াটির সম্বন্ধ স্থাপন তাঁর ক্ষমা-মাগফিরাত ও দয়া-রাহমাতের বহিঃপ্রকাশ। তবে উভয়টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য শব্দটি আল্লাহর সাথে সম্বন্ধিত হলে আল-কুরআনে তা على সংযোজক صلة সহকারে ব্যবহৃত হয়। যাতে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সমুন্নত অবস্থান প্রকাশ পায়। যেমন,
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ثُمَّ تَابَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡ﴾ [المائ‍دة: ٧١]
‘অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হলে তাদের তাওবা কবুল করলেন।’[2] কারও কারও মতে তাওবা অর্থ অনুতাপের সাথে পাপ পরিহার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [النور: ٣١]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’[3]
মুফতী মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান বলেন:
التوبة: هو الرجوع إلى الله بحل عقد الإصرار عن القلب ثم القيام بكل حقوق الرب.
‘অন্তর হতে গোনাহ না করার সংকল্পের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। অতঃপর প্রতিপালকের যাবতীয় বিধানকে পালন করা।’[4]
‘আইনুল ইলম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে:
التوبة تنزيه القلب عن الذنب وقيل الرجوع من البعد إلى القرب وفى الحديث: الندم هى التوبة.
‘তাওবার সংজ্ঞা হলো অন্তরালে পাপ মুক্ত করা। কারও কারও মতে দূরত্ব হতে নিকটে প্রত্যাবর্তন করা। কারণ, ‘অনুশোচনাই’ তাওবা।[5]
মুহাম্মাদ আলী আত-থানভী (রহ.) বলেন:
الندم على معصية من حيث هى معصية، مع عزم أن ألا يعود إليها إذا قدر عليها
কোনো পাপকাজে সেটি যে পাপ এ অনুভূতিতে অনুশোচনা করার সাথে সাথে সুযোগ পেলেও আর কখনোও না করার দৃঢ় সংকল্প করা।[6]
মাজমা‘উস সুলুক গ্রন্থে বর্ণিত আছে,
التوبة شرعا هى الرجوع إلى الله تعالى مع دوام الندم وكثرة الاستعفار
শরী‘আতের পরিভাষায় তাওবা হলো স্থায়ী অনুশোচনা ও অধিক ক্ষমা প্রার্থনার সাথে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি প্রত্যাবর্তন করা। কারও কারও মতে তাওবা মূলত অনুশোচনা অর্থাৎ তাওবার বৃহৎ স্তম্ভই হলো অনুশোচনা।[7]

No comments:

Powered by Blogger.