নাজাছাত হইতে পাক হইবার মাসায়েল
নাজাছাত হইতে পাক হইবার মাসায়েল
বেহেশতী জেওর
দ্বিতীয় খন্ড
নাজাছাত হইতে পাক হইবার মাসায়েল
[নাজাছাত অর্থ নাপাকী, অপবিত্রতা]
১।মাসআলাঃ নাজাছাত দুই প্রকার-গলীজা এবং খফীফা। নাজাছাতে গলীযা অর্থ-খুব বেশী নাপাক, সামান্য লাগিলেই ধৌত করার হুকুম রহিয়াছে। নাজাছাতে খফীফা অর্থ-কিছু কম এবং হালকা নাপাক।
২।মাসআলাঃ রক্ত, মানুষের মল-মূত্র মনী (বীর্য, শুক্র), কুকুর-বিড়ালের পেশাব ও পায়খানা, শুকরের মাংশ, পশম ও হাড় ইত্যাদি; ঘোড়া, গাধা, মহিষ, বকরী ইত্যাদি সকল প্রকার পশুর মল, হাঁস, মুরগী এবং পানকৌড়ির মল, গাধা, খচ্চর, ইত্যাদি হারাম পশুর পেশাব নাজাসাতে গলীযা।
৩।মাসআলাঃ দুগ্ধপোষ্য শিশুর পেশাব পায়খানা্ও নাজাছাতে গলীযা।
৪।মাসআলাঃ হারাম পক্ষীর পায়খানা এবং গরু, মহিষ, বকরী ইত্যাদি হালাল পশুর পেশাব এবং ঘোড়ার পেশাব নাজাছাতে খফীফা।
৫। মাসআলাঃ মুরগী, হাস, পানকৌড়ি ব্যতীত অন্যান্য হালাল পক্ষীর পায়খানা পাক। যথা-কবুতর, চড়ুই, শালিক ইত্যাদি। চামচিকার পেশাব এবং পায়খানা উভয়ই পাক।
৬।মাসআলাঃ পাতলা প্রবাহমান নাজাছাতে গলীযা এক দেরহাম পর্যন্ত শরীরে বা কাপড়ে লাগিলে মাফ আছে। ভুলে বা অন্য কোন ওযরে যদি এক দেরহাম পরিমান নাজাছাত সহ নামায পড়ে, তবে নামায হইয়া যাইবে। কিন্তু সেচ্ছায় এইরুপ নাজাছাত সহ নামাজ পড়া মকরুহ। ভুলে এক দেরহামের বেশী নাজাছাত সহ নামাজ হইবে না, দোহরাইয়া পড়িতে হইবে।
নাজাছাতে গলীযা যদি গাঢ় হয় যেমন, পায়খানা, মুরগী ইত্যাদির লেদ যদি ওজনে সাড়ে চার মাষা বা তদপেক্ষা কম হয়, তবে না ধুইয়া নামাজ জায়েজ হইবে। ইহার বেশী হইলে না ধুইয়া নামাজ দুরস্ত হইবে না।
৭।মাসআলাঃ নাজাছাতে খফীফা যদি শরীরে বা কাপড়ে লাগে, তবে যে অঙ্গে লাগিয়াছে সেই অঙ্গের চারি ভাগের এক ভাগের কম হইলে মাফ আছে, পূর্ণ চারি ভাগের এক ভাগ হইলে বা তাহার চেয়ে বেশী হইলে মাফ নাই। মাফের অর্থ পূর্বে বলা হইয়াছে। কাপড়ের অঙ্গ যথা-আস্তিন, কল্লি, দামন ইত্যাদি। শরীরের অঙ্গ যথা-হাত, পা ইত্যাদি। এই সমস্তের চারি ভাগের এক ভাগ অপেক্ষা কম হইলে তাহা মাফ আছে।কিন্তু পূর্ণ চারি ভাগের এক বা তাহার বেশী হইলে মাফ নাই, না ধুইয়া নামায হইবে না।
৮।মাসআলাঃ নাজাছাত কম হউক বা বেশী হউক পানিতে অল্প পরিমাণ নাজাছাতে গলীজা পড়িলে ঐ পানিও নাজাছাতে গলীযা হইবে এবং নাজাছাতে খফীফা পড়িলে নাজাছাতে খফীফা হইবে।
৯।মাসআলাঃ কাপড়ে নাপাক তৈল লাগিলে যদি ইহার পরিমাণ এক দেরহাম অপেক্ষা কম হয়, তকে উহা মাফ হইবে। কিন্তু যদি দুই একদিন পর বিস্তৃত হইয়া এক দেরহাম পরিমাণ অপেক্ষা বেশী হয়, তবে উহা ধোয়া ওয়াজিব হইবে; না ধুইয়া নামায পড়িলে নামায হইবে না।
১০।মাসআলাঃ মাছের রক্ত নাপাক নহে। ইহা কাপড়ে বা শরীরে লাগিলে ক্ষতি নাই। মশা এবং ছারপোকার রক্ত নাপাক নহে।
১১।মাসআলাঃ চোখে ভাসেনা এমন সূচের আগার মত বিন্দু বিন্দু পেশাবের ছিটা কাপড়ে বা শরীরে লাগার সন্দেহ হইলে তাহাতে কোন দোষ নাই। ইহাতে কাপড় বা শরীর ধোয়া ওয়াজিব নহে।
১২।মাসআলাঃ নাজাছাত দুই প্রকার-গাঢ় এবং তরল।গাঢ় নাজাছাত যেমন পায়খানা, রক্ত) কাপড়ে বা শরীরে লাগিলে তাহা পাক করিবার নিয়ম এই যে, নাজাছাতের স্থান এমনভাবে ধুইবে যেন দাগ না থাকে। যদি মাত্র একবার ধোয়াতেই দাগ চলিয়া যায়, তবুও পাক হইয়া যাইবে, তিনবার ধোয়া ওয়াজিব হইবে না; কিন্তু একেবারে দাগ চলিয়া গেলে আরও দুইবার ধোয়া এবং দুইবারে দাগ চলিয়া গেলে আরো একবার ধোয়া মোস্তাহাব। মোটকথা, একবার বা দুইবারে দাগ চলিয়া যাইবে, তবে তিনবার পূর্ণ করা মোস্তাহাব।
১৩।মাসআলাঃ যদি এমন কোন নাজাছাত লাগিয়া থাকে যে, তিন চারি বার ধোয়া সত্বেও এবং নাজাছাত চলিয়া গিয়া পরিষ্কার হইয়া যাওয়া সত্বেও কিছু দাগ বা কিছু দুর্গন্ধ থাকিয়া যায়, তাহাতে কোন দোষ নাই। সাবান প্রভৃতি লাগাইয়া দাগ বা দুর্গন্ধ দূর করা ওয়াজিব নহে।
১৪।মাসআলাঃ পানির মত তরল নাজাছাত লাগিলে, তাহা পাক করিবার নিয়ম এই যে, অন্তত তিনবার ধুইবে ও প্রত্যেকবার ভাল করিয়া নিংড়াইবে। তৃতীয়বার খুব জোরে নিংড়াইবে। ভালমত না নিংড়াইলে কাপড় পাক হইবে না।
১৫।মাসআলাঃ এমন জিনিসে যদি নাজাছাত লাগে যাহা নিংড়ানো যায়না; (যথা- খাট, মাদুর, পাটি, চাটি, মাটির পাত্র, কলস, বাসন, চিনা মাটির বাসন, পেয়ালা, বোতল, জুতা, ইত্যাদি) তবে তাহা পাক করিবার নিয়ম এইযে, একবার ধুইয়া এমনভাবে রাখিয়া দিবে যেন সমস্ত পানি ঝড়িয়া যায়। পানি ঝরা বন্ধ হইলে আবার ধুইবে। এইরুপে তিনবার ধুইলে ঐ জিনিস পাক হইবে।
১৬।মাসআলাঃ পানির দ্বারা ধুইয়া যেরুপ পাক করা যায়, তদ্রুপ যেসব জিনিস পানির ন্যায় তরল এবং পাক তাহা দ্বারাও ধুইয়া পাক করা যায়। যেমন, গোলাপ জল, আরবে গাওজবান, খেজুরের রস, আখের রস, তালের রস, ছিরকা ইত্যাদি। কিন্তু যেসব জিনিস তৈলাক্ত তাহা দ্বারা ধুইলে পাক হইবে না, নাপাকই থাকিয়া যাইবে; যথা-দুধ, ঘি, তৈল ইত্যাদি।
১৭।মাসআলাঃএই নম্বর মাসআলা পরে পাইবেন।
১৮,১৯।মাসআলাঃজুতা বা চামড়ার মোজায় রক্ত, পায়খানা, গোবর, গাঢ় মনী ইত্যাদী গাঢ় নাজাছাত লাগিলে, তাহা যদি মাটিতে খুব ভালমত ঘষিয়া বা শুকনা হইলে নখ দিয়া খুটিয়া সম্পূর্ণ পরিষ্কার করিয়া ফেলা যায় এবং বিন্দুমাত্র নাজাছাত লাগা না থাকে, তবে তাহাতেই পাক হইয়া যাইবে, না ধুইলেও চলিবে। কিন্তু পেশাবের মত তরল নাজাছাত লাগিলে তাহা ধোয়া ব্যতীত পাক হইবে না
২০।মাসআলাঃকাপড় এবং শরীরে গাঢ় কিংবা তরল নাজাছাত লাগিলে ধোয়া ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে পাক হইতে পারে না।
২১।মাসআলাঃ কাঁচের আয়না, ছুরি, চাকু, সোনারুপার জেওর, কাঁসা, পিতল, তামা, লোহা, গিলটি ইত্যাদি নির্মিত কোন থাল, বাসন, বদনা, কলস ইত্যাদি নাপাক হইলে উহা ভালমত মুছিয়া, ঘষিয়া বা মাটির দ্বারা মাজিয়া ফেলিলেই পাক হইবে; কিন্তু এই জাতীয় নকশীদার জিনিস উপরোক্ত নিয়মে পানি দ্বারা ধৌত করা ব্যতীত পাক হইবে না।
২২।মাসআলাঃজমিনের উপর কোন নাজাছাত পড়িয়া যদি এমনভাবে শুকাইয়া যায় যে, নাজাছাতের কোন চিহ্নও না থাকে, তবে তাহা পাক হইয়া যাইবে, তথায় নামায পড়া দুরস্ত হইবে; কিন্তু ঐ মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয হইবে না, যে ইট পাথর সুরকি বা চুনা দ্বারা জমিনের সাথে জমাইয়া দেওয়া হইয়াছে তাহাও ঐরুপ শুধু শুকাইলে পাক হইয়া যাইবে। উহাতে নামায পড়া দুরস্ত হইবে, (কিন্তু তাহা দ্বারা তায়াম্মুম দুরস্ত হইবে না)
২৩।মাসআলাঃযে ইটকে সুরকি, চুনা, ব্যতীত শুধু বিছাইয়া দেওয়া হইয়াছে তাহাতে নাজাচাত লাগিয়া শুকাইয়া গেলে তাহা পাক হইবে না, পূর্বোক্ত নিয়মে ধুইতে হইবে।
২৪।মাসআলাঃযে ঘাস জমিনের সঙ্গে লাগা আছে তাহাও জমিনেরই মত। শুধু শুকাইলে এবং নাজাছাতের চিহ্ন চলিয়া গেলে পাক হইয়া যাইবে, কিন্তু কাটা ঘাস ধোয়া ব্যতীত পাক হইবে না।
২৫।মাসআলাঃনাপাক ছুরি, চাকু বা হাড়ি-পাতিল জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলিয়া পোড়াইলেও পাক হইয়া যাইবে।
২৬।মাসআলাঃহাতে যদি কোন নাপাক জিনিস লাগে এবং কেহ জিহ্বা দ্বারা তিনবার চাটিয়া লয়, তবে হাত পাক হইয়া যাইবে, কিন্তু এরুপ করা নিষেধ। শিশু মাতৃস্তন হইতে দুগ্ধ পান করিবার সময় বমি করিলে উক্ত স্থান নাপাক হইয়া যাইবে, বিন্তু যদি শিশু বমি করিয়া আবার সেই স্থান তিনবার চাটিয়া চুষিয়া লইয়া থাকে, তবে মায়ের শরীর পাক হইবে, অবশ্য শিশুকে এইরুপ করিতে দেওয়া উচিত নহে।
২৭।মাসআলাঃমাটির কোন নতুন হাড়ি, কলস বা বদনা যদি নাজাছাত চুষিয়া লইয়া থাকে, তবে তাহা শুধু ধুইলে পাক হইবে না। তাহা পাক করিবার নিয়ম এই যে, পানি ভরিয়া রাখিয়া দিবে। যখন নাজাছাতের তাছির পানিতে আসে, তখন ওই পানি ফেলিয়া আবার নূতন পানি ভরিয়া রাথিয়া দিবে। এইরুপ বারবার ভরিয়া রাখিতে থাকিবে। যখন দেখিবে যে, পানির মধ্যে নাজাছাতের (রং বা গন্ধ) কোন তাছিরই দেখা যায়না, তখন পাক হইবে।
২৮।মাসআলাঃনাপাক মাটির দ্বারা যদি হাড়ি, কলস তৈয়ার করা হয় তবে তাহা কাঁচা থাকা পযন্ত নাপাক থাকিবে; আগুন দ্বারা পোড়ান হইলে পাক হইয়া যাইবে।
২৯।মাসআলাঃমধু, চিনি, মিছরির শিরা, তৈল বা ঘৃত ইত্যাদি নাপাক হইলে উহা পাক করিবার এক উপায় যে পরিমাণ তৈল বা শিরা, সেই পরিমাণ পানি উহাতে মিশ্রিত করিয়া উত্তাপে পানিটা উড়াইয়া দিবে, যখন সমস্ত পানি উড়িয়া যাইবে, তখন আবার ঐ পরিমাণ পানি মিশ্রিত করিয়া জাল দিবে। এইরুপ তিনবার করিলে ঐ তৈল বা শিরা পাক হইয়া যাইবে।দ্বিতীয় উপায়-তৈল ঘৃত ইত্যাদির সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশ্রিত করিয়া তাহাতে নাড়াচাড়া দিলে তৈলটা উপরে ভাসিয়া উঠিবে, তারপর আস্তে আস্তে কোন উপায়ে উপর হইতে তৈলটা উঠাইয়া
আবার সমপরিমাণ পানি মিশ্রিত করিয়া আবার ঐরুপে তৈলটা উঠাইয়া লইবে। এইরুপ তিনবার করিলে ঐ তৈল বা ঘৃত পাক হইয়া যাইবে। যদি জমাট ঘৃত হয়, তবে পানি মিশ্রিত করিয়া রৌদ্রে বা আগুনের আঁচের উপর রাখিবে, ঘৃত গলিয়া উপরে ভাসিয়া উঠিলে তারপর উপরোক্তরুপে তিনবার উঠাইয়া লইলে পাক হইবে ।
৩০।মাসআলাঃ নাপাক রংয়ের দ্বারা কাপড় রঙ্গাইলে তাহা পাক করিবার উপায় এই যে, কাপড় খাসা বারবার (অন্ততঃ তিনবার) ধুইতে থাকিবে। যতক্ষন রঙ্গিন পানি বাহির হইতে থাকিবে ততক্ষন ধুইতে থাকিবে। যখন রং শূন্য পানি বাহির হইবে , তখন ঐ কাপড় পাক হইয়া যাইবে-কপেড় হইতে রং যাউক বা না যাউক।
৩১।মাসআলাঃ গরু, মহিষ ইত্যাদির গোবর শুকাইলে তাহা যদিও নাপাক থাকে কিন্তু তাহা পাকের কাজে ব্যবহার করা জায়েয আছে এবং পোড়াইবার সময় যে ধোয়া বাহির হয় তাহা নাপাক নহে। অতএব, হাতে বা কাপড়ে ধুঁয়া লাগিলে তাহা নাপাক হইবে না এবং ওই গোবর পুড়িয়া যে ছাই হয় তাহাও নাপাক নহে। অতএব, ঐ ছাই যদি রুটিতে (কাপড় বা শরীরে) লাগে, তবে তাহাতে কোন দোষ নাই।
৩২।মাসআলাঃ বিছানার এক কোন নাপাক এবং বাকী অংশ পাক হইলে, পাক অংশে নামায পড়া দুরস্ত আছে।
৩৩।মাসআলাঃ যে জমিন (ঘর বা উঠান) গোবর দ্বারা লেপা হইয়াছে, তাহা নাপাক। অতএব, উহার উপর অন্য কোন পাক বিছানা না বিছাইয়া নামায পড়া দুরস্ত নহে।
৩৪। মাসআলাঃ যে জমিন গোবর দ্বারা লেপা হইয়াছে তাহা শুকাইলে , তাহার উপর ভিজা কাপড় বিছাইয়াও নামায পড়া দুরস্ত আছে; যদি এরুপ ভিজা হয় যে, গোবর কাপড়ে লাগিয়া যাইতে পারে, তবে উহাতে নামায পড়া জায়েয হইবে না।
৩৫।মাসআলাঃ পা ধইয়া ভালমতে যদি নাপাক যমীনের উপর দিয়া যায় এবং পায়ের চিহ্ন মাটিতে পড়ে, তবে তাহাতে পা নাপাক হইবে না; কিন্তু যদি পায়ের সাথে এত পরিমাণ পানি লাগা থাকে যে তাহার সঙ্গে ঐ নাপাক মাটি কিছু কিছু লাগিয়া যায়, তবে পা নাপাক হইয়া যাইবে। পা না ধুইয়া নামায পড়া জায়েয হইবে না।
৩৬।মাসআলাঃ নাপাক বিছানায় শুইলে তাহাতে শরীর বা কাপড় নাপাক হইবে না; কিন্তু যদি শরীর হইতে এত পরিমাণ ঘাম বাহির হয় যাহাতে শরীর এবং কাপড় ভিজিয়া বিছানার নাজাছাতের সহিত মিশ্রিত হইয়া যায়, তকে ঐ ঘাম নাপাক হইয়া যাইবে এবং ঐ ঘাম যেই অঙ্গে বা কাপড়ে লাগিবে তাহাও নাপাক হইয়া যাইবে।
৩৭।মাসআলাঃ যদি কেহ নাপাক মেহিন্দি হাতে বা পায়ে লাগায়, তাহা পাক করিবার উপায় এই যে, হাত-পা খুব ভালভাবে (অন্ততঃ তিনবার) ধুইবে ; যখন ধোয়া পানির সাথে রং বাহির না হয়, তখন হাত পা পাক হইয়া যাইবে; হাতে পায়ে শুধু রংয়ের দাগ থাকিলে (কোন ক্ষতি হইবে না) উহা উঠাইয়া ফেলা ওয়াজিব নহে।
৩৮।মাসআলাঃ নাপাক সুরমা চোখের ভিতর লাগাইলে তাহা ধুইয়া পাক করা ওয়াজিব নহে। অবশ্য ভিতর হইতে কিছু অংশ চোখের বাহিরে আসিলে উহা ধোয়া ওয়াজিব হইবে।
৩৯।মাসআলাঃ নাপাক তৈল মাথায় বা শরীরে লাগাইলে উহা তিনবার ধুইলে পাক হইয়া যাইবে। সাবান বা অন্য কিছু দ্বারা তৈল ছাড়ান ওয়াজিব নহে।
৪০।মাসআলাঃ ভাত, আটা, ময়দা ইত্যাদি কোন শুকনা খাদ্য-দ্রব্য যদি কুকুর বা বানরে মুখ দিয়া ঝুটা করিয়া থাকে, তবে তাতে সমস্ত ভাত নাপাক হয় নাই, যে পরিমাণ স্থানে মুখ বা মুখের লোয়াব লাগিয়াছে, উহা নাপাক হইয়াছে। ঐ পরিমাণ খাদ্য-ফেলিয়া দিলে অবশিষ্ঠ খাদ্য পাক থাকিবে এবং উহা খাওয়া দুরস্ত হইবে।
৪১।মাসআলাঃ কুকুরের লোয়াব (লালা) এবং মাংশ নাপাক; অতএব, পানিতে মুথ দিলে বা কাহারও গা চাটিলে সেই পানির পাত্র এবং শরীর সব নাপাক হইয়া যাইবে। কিন্তু জীবিত কুকুরের শরীরের উপরিভাগ শুকনা হউক কিংবা ভিজা হউক, নাপাক নহে। অতএব কুকুরের শরীরে যদি কাহারও কাপড় লাগিয়া যায় , তবে সে কাপড় নাপাক হইবে না। কিন্তু (কুকুর প্রায়ই নাজাছাত খায় এবং নাজাছাতের মধ্যে যায় তাই) যদি কোন নাজাছাত উহার শরীরে লাগিয়া থাকে, তবে উহার শরীর নাপাক হইবে এবং তাহা কাপড়ে লাগিলে কাপড় নাপাক হইবে।
(মাসআলাঃ গোবর দিয়া উঠান লেপিবার সময় বা গোবরে হাত লাগাইয়া হাত তিনবার পরিষ্কার করিয়া ধুইবার পূর্বে যদি কোন মাটির লোটা বা কলসীতে হাত দেয় তবে ঐ লোটা, কলসী এবং তাহার পানি সব নাপাক হইয়া যাইবে। পানি ফেলিয়া দিতে হইবে এবং লোটা, কলসী পাক করিবার যে নিয়ম পূর্বে লেখা হইয়াছে সেই নিয়মে পাক করিতে হইবে।)
৪২।মাসআলাঃ ভিজা কাপড় পরা অবস্থায় বায়ু (মলদ্বার দিয়া) নির্গত হইলে তাহাতে কাপড় নাপাক হইবে না।
৪৩।মাসআলাঃ নাপাক পানিতে ভিজা কাপড়ের সাথে পাক কাপড় জড়াইয়া রাখিলে যদি পাক কাপড়খানা এত পরিমাণ ভিজিয়া যায় যে, (তাহাতে নাজাছাতের কিছু গন্ধ বা রং আসিয়া পড়িয়াছে বা) চিপিলে দুই এক কাতরা পানি বাহির হয় বা হাত ভিজিয়া যায়, তবে ঐ পাক কাপড়ও নাপাক হইয়া যাইবে। শুধু একটু একটু ভিজা ভিজা দেখাইলে তাহাতে কাপড়খানা নাপাক হইবে না। অবশ্য যদি ঐ কাপড়খানা পেশাব ইত্যাদি কোন নাজাছাত দ্বারা ভিজা হয়, তবে পাক কাপড়খানাতে বিন্দুমাত্র দাগ কিংবা ভিজা ভিজা লাগিলেই তাহা নাপাক হইয়া যাইবে।
৪৪।মাসআলাঃ যদি কোন একখানা কাঠের এক পিঠ পাক এবং অপর পিঠ নাপাক হয় এবং তাহা এতটুকু পুরু হয় যে, চিরিয়া দুইখানা তক্তা করা যায় তবে উহার পাক পিঠে নামায পড়া দুরস্ত হইবে। যদি ঐ পরিমাণ পুরু না হয়, তবে পাক পিঠেও নামায পড়া দুরস্ত হইবে না।
৪৫।মাসআলাঃ দুই পাল্লা বিশিষ্ট কাপড়ের এক পাল্লা যদি নাপাক এবং এক পাল্লা যদি পাক হয় এবং উভয় পাল্লা একত্রে সেলাই করা হয়, তবে পাক পাল্লার উপর নামায পড়া জায়েয হইবে না, কিন্তু সেলাই করা না হইলে নাপাক পাল্লা নিচে রাখিয়া পাক পাল্লার উপর নামায পড়া দুরস্ত হইবে।
No comments: