Breaking News
recent

সিজদা করিবার নিয়ম

সিজদা করিবার নিয়ম:
সিজদা করিবার নিয়ম এই যে, মাটিতে প্রথমে দুই হাটু রাখিবে তারপর দুই হাতের পাতা মাটিতে রাখিয়া তাহার মাঝখানে মাথা রাখিয়া নাক এবং কপাল উভয়ই মাটিতে ভালমত লাগাইয়া রাখিবে। সেজদার সময় দুই হাতের অঙ্গুলিগুলি মিলিত অবস্থায় ক্কেবলা-দিক করিয়া রাখিবে ও দুই পায়ের অঙ্গুলিও ক্কেবলার দিকে রোখ করিয়া মাটিতে লাগাইয়া রখিবে। (কিন্তু পুরুষ উভয় পা মিলাইয়া পায়ের অঙ্গুলিগুলিকে ক্কেবলা রোখ করিয়া মাটিতে রাখিবে এবং পায়ের পাতা খাড়া রাখিবে। কিন্তু স্ত্রীলোক পায়ের পাতা খাড়া রাখিবে না উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির রাখিবে। কিন্তু স্ত্রীলোক পায়ের পাতা খাড়া রখিবে না উভয় পায়ের ডান দিকে বাহির করিয়া দিয়া মাটিতে শোয়াইয়া রাখিবে এবং যথাসম্ভব পশ্চিম দিকে মুখ করিয়া রাখিবে। পুরুষ সিজদা করিতে দুই পা মিলিত রাখিয়া অন্যান্য সব অঙ্গলিকে পৃথক র্পথক রাখিবে। মাথা হাটু হইতে যথেষ্ট দূরে রাখিবে, হাতের কলাই মাটিতে লাগাইবে না। পায়ের নলা ঈরু হইতে পৃথক রাখিবে। পক্ষান্তরে স্ত্রীলোকগণ সর্বাঙ্গ মিলিত অবস্থায় সিজদা করিবে; মাথা হাটুর নিকটবর্তী রাখিবে এবং পায়ের নলার সঙ্গে ও হাতের বাজু শরীরের পার্শ্বের সঙ্গে মিলিত রাখিবে। সিজদায় অন্তত তিন পাচ বিংবা সর্বোপরি সাতবার ……………….. (ছোবহানা রাব্বিয়াল আলা, অর্থাৎ আমার সর্বোপরি প্রভু আল্লাহ তিনি পবিত্র) বলিবে। ঠিক হইয়া বসিবার পর দ্বিতীয়বার আল্লাহু আকবার বলিয়া পূর্বের মত সিজদা করিবে। দ্বিতীয় সিজদায় উপরোক্তরূপে অন্তত: তিনবার (কিংবা ৫ বার কিংবা ৭ বার) ছোবাহানা রাব্বিয়ালা আলা
টিকা-
১।পুরুষ ও স্ত্রীলোকের নামাযের পার্থক্য (১২১ পৃষ্ঠা) দ্রষ্টব্য।
বলিবে এইরূপে সিজদা শেষ করিয়া আল্লাহু আকবর বলিয়া মাথা উঠাইয়া সোজা হইয়া দাড়াইবার সময় বসিবে না বা হাতের দ্বারা টেক লাগাইবে না।
(দ্বিতীয় সিজদাহ এ মাথা উঠাইয়া সোজা দাড়াইয়া) যখন দ্বিতীয় রাকাআত শুরু করিবে তখন আবার বিসমিল্লাহ পড়িবে। তারপর আলহামদু পড়িবে। তারপর অন্য কোন একটি সূরা পড়িবে। তারপর প্রথম রাকাআতের মত রূকূ সিজদা করিয়া দ্বিতীয় রাকাআত পূর্ন করিবে। যখন দ্বিতীয় রাকাআতের দ্বিতীয় সিজদা হইতে মাথা উঠাইবে, তখন (পুরুষগণ বাম পায়ের পাতা বিছাইয়া তাহার উপর চোতড় রাখিয়া নসিবে এবং ডান পায়ের পাতার অঙ্গুলিগুলি ক্কেবলার দিকে মুখ করিয়া খাড়া রাখিবে। স্ত্রীলোকগণ পায়ের পাতা ডান পায়ের পাতার অঙ্গুলিগুলি ক্কেবলার দিকে মুখ করিয়া খাড়া রাখিবে। স্ত্রীলোকগন পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া দিয়া চেতড় মাটিতে লাগাইয়া বসিবে। এইরূপে বসিয়া হাতের দুই পাতা ঊরু দেশের উপর হাটু পর্যন্ত অঙ্গুলিগুলি মিলিতাবস্থায় বিছাইয়া রাখিবে। এইরূপে বসিয়া খুব মনোযোগের সহিত আত্তাহিয়্যতু পড়িবে।
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াচ্ছালাওয়াতু ওয়াত্তয়্যেবাতু আসসালামু আলাইকা আইয়্যেহান্নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়ারাকতুহু আসসালামু আলাইনা ওয়াআলা ইবাদিল্লাহিচ্ছালিহীন। আশহাদু আললা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
অর্থ- সমস্ত তাযীম সমস্ত ভক্তি, নামায, সমস্ত পবিত্র এবাদত বন্দেগী আল্লাহর জন্য আল্লাহর ঊদ্দেশ্যে। হে নবী আপনাকে সালাম এবং আপনার উপর আল্লাহর অসীম রহমত ও বরকত। আমাদের জন্য এবং আল্লাহর অন্যান্য সমস্ত নেক বন্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ হইতে শান্তি অবতীর্ণ হউক। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই এবং ইহাও সাক্ষ্য দিতছি যে, মোহাম্মদ (দ:) আল্লাহর বন্দা এবং তাহার (সত্য) রাসূল।
আত্তাহিয়্যাতু পড়িবার সময় যখন শাহাদত কলেমায় পৌছিবে, তখন লা, বলিবার সঙ্গে সঙ্গে ডান হাতের শুহাদাত অঙ্গুলিকে উপরের দিকে উঠাইবে এবং বৃদ্ধা ও মধ্যমার দ্বারা গোল হালকা বানাইয়া রাখিবে এবং কনিষ্ঠা ও অনামিকাকে আকদ করিয়া (অর্থাৎ গুটাইয়া) রাখিবে; যখন ইল্লাাহু বলিবে তখন শাহাদাত অঙ্গুলিকে কিছু নোয়াইয়া নামাযের শেষ পর্যন্ত রাখিয়া দিবে। বৃদ্ধা ও মধ্যমার হালকা এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠার আকদও নামাযের শেষ পর্যন্ত তেমনই থাকিবে।
যদি তিন বা চারি রাকাআতী নামায হয়, তবে আবদুহু ওয়ারাসূলুহু পর্যন্ত পড়িয়া আর বসিবে না, তৎক্ষনাৎ আল্লাহু আকবর বলিয়া উঠিয়া দাড়াইবে এবং পূর্বোক্তা নিয়মানুসারে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআত পুরা করিবে, (কিন্তু নফল, সুন্নত বা ওয়াজিদ নামায হইলে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআতে সূরা-ফাতেহার সঙ্গে অণ্য সূরা মিলাইবে,) আর ফরয নামায হইলে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআতে সূরা মিলাইবে না। এইরূপে তৃতয়ি ও চতুর্থ রাকাআত শেষ করিয়া পুন: বসিবে এবং আবার আত্তাহিয়্যুতু পড়িয়া।পরে এই দুরূদ পড়িবে:
আল্লাহুমা ছল্লে আলা, মোহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মোহাম্মদিন কামা ছারাইতা আলা ইবরাহীমা ওআলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। আল্লাহুমা বারিক আলা মোহাম্মাদিও ও আলা আলি মোহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওআলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদম্মাজীদ।
অর্থ- হে আল্লাহ‌‌ হযরতমোহাম্মদ (দ:) এবং মোহাম্মদ (দ:) এর আওলাদগনের উপর তোমার খাছ রহমত নাযিল কর, যেমন ইবরাহীম (আ:) এবং ইবরাহীম (আ:) এর আওলাদগণেল উপর তোমার খাছ রহমত নাযিল করিয়াছ নিশ্চই তুমি প্রশংসার যোগ্য এবং সর্বোচ্চ সন্মানের অধিকারী। হে আল্লাহ মোহাম্মদ (দ:) এবং মোহাম্মদ (দ:) এর আওলাদগনের উপর তোমার খাছ বরকত চিরবর্ধনশীল নেয়ামত নাযিল কর, যেমন ইব্রাহীম (আ:) এবং ইবরাহীম (আ:) এর আওলাদের উপর তোমার খাছ বরকত নাযিল করিয়াছ; নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসার যোগ্য এবং সর্ব্বোচ্চ সন্মানের অধিকারী।
এই দরূদ পড়িয়া তারপর নিম্নের দো আ পড়িবে:
………………………………………………………………..
১।রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাছানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাছানাতাও ওয়া ক্কিনা আযাবান্নার।
অর্থ- হে আমাদের প্রতিপালক খোদা। আমাদের দুনিয়ার এবং আখেরাতে উভয় জাহানে ভাল অবস্থায় রাখ এবং দোযখের শাস্তি হইতে আমাদের নিস্তার দাও।
……………………………………………………………
২।হে আল্লাহ আমার গোনাহ মাফ করিয়া দাও আমার মা-বাপের গোনাহ মাফ করিয়া দাও এবং অন্যান্য যত জীবিত বা মৃত মোমিন মোছলিম ভাই-ভগ্নী আছে সকলের গোনাহ মাফ করিয়া দাও।
অথবা অন্য কোন দো আ পড়িবে যথা-
………………………………………………………
৩।অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে কবরের আযাব হইতে বাচাইয়া নিও, কানা দজ্জালের কঠোর পরীক্ষায় তরাইয়া দিও, গোনাহর কাজ হইতে আমাকে দূরে রাকিও ঋণের দায় হইতে আমাকে বাচাইয়া লইও।
……………………………………………………………………………..
৪।হে আল্লাহ আমি অনেক গোনাহ করিয়াছি এবং তুমি ব্যতীত গোনাহ মাফকারী অন্য কেহই নাই। অতএব নিজ দয়াগুণে আমার সব গোনাহ মাফ করিয়া দাও এবং আমার উপর তোমার রহমত নাযিল কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল এবং দয়াশীল।
…………………………………………………………….
৫। আল্লাহ আমার ছেট বড় আউয়াল, আখের যাহের, বাতেন, সব গোনাহ মাফ করিয়া দাও। হে আল্লাহ আমি আগে যে সব গোনাহ করিয়াছি প্রকাশ্যভাবে যে সব গোনাহ করিয়াছি, গুপ্তভাবে যে সব গোনাহ করিয়াছি এবং যে সব গোনাহ হয়ত আমার জানা নাই কিন্তু তুমি জান, সে সব গোনাহ আমাকে মাফ করিয়া দাও। আমার আগেও তুমি পরেও তুমি তুমিই মা বুদ এক তুমি ব্যতীত আমার আর কোন মা’বুদ নাই।
এইরুপে দো’আ মাছুরা পড়িয়া প্রথম ডান দিকে তারপর বাম দিকে সালাম ফিরাইবে। সালাম ফিরাইবার সময় মুখে আসলামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ এবং দেলে দেলে ফেরেশতাদের সালাম করিবার নিয়্যত করিবে। (পুরুষগণ যথন জমাআতে নামায পড়িবে তখন সঙ্গের মুছল্লীদের সালাম করিবার নিয়্যত করিবে।)
এই পর্যন্ত নামায পড়িবার নিয়ম বর্ননা করা হইল। কিন্তু ইহার মধ্যে কতগুলি কাজ ফরয কতগুলো ওয়াজিব এবং কতগুলি সুন্নত ও মোস্তাহাব আছে। কোন একটি ফরয যদি কেহ তরক করে- জানিয়াই করুক বা ভুলিয়াই করুক, তাহার নামায আদৌ হইবে না, নামায পুনরায় পড়িতে হইবে। যদি কেহ স্বেচ্ছায় একটি ওয়াজিব তরক নামায আদৌ হইবে না, নামায পুনরায় পড়িতে হইবে। যদি কেহ স্বেচ্ছায় একটি ওয়াজিব তরক করে তবে সে অতি বড় গোনাহগার হইবে এবং নামায দোহরাইয়া পড়িতে হইবে। ভুলে একটি ওয়াজিব তরক করিলে ছহো-সিজদা করিতে হইবে। সুন্নত বা মোস্তাহাব তরক করিলে নামায হইয়া যায়, কিন্তু ছওয়াব কম হয়।

No comments:

Powered by Blogger.