সহিহ্ মুসলিম শরীফ ৬ষ্ট খন্ড, অধ্যায়ঃ রাষ্টখমতা ও প্রোশাসন-৩য়
পরিচ্ছেদঃ ৩১. জান্নাতে মুজাহিদদের জন্যে আল্লাহ্ যে মর্যাদার স্তর রেখেছেন
৪৭২৬. সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ সাঈদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব (প্রতিপালক) রূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নাবীরূপে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট, তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হয়ে গেল। আবূ সাঈদ (রাঃ) তাতে চমকিত হয়ে গেলেন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার জন্যে কথাটি আবার বলুন। তিনি তাই করলেন, তারপর বললেনঃ আর একটি (আমল এমন রয়েছে) যদ্বারা বান্দা এমন একশটি মর্যাদার স্তর লাভ করবে যার দুটো স্তরের মধ্যে ব্যবধানন হবে আসমান ও যমীনের ব্যবধানের তুল্য। তখন তিনি বললেনঃ সেটি কি ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ।
পরিচ্ছেদঃ ৩২. ঋণ ছাড়া শহীদদের সকল গুনাহ মাফ
৪৭২৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (একদা) তাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং তাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, আল্লাহর রাহে জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, আপনি কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর রাহে নিহত হই তা হলে আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্য্যশীল, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শক্রর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি বললে হে! তখন সে ব্যক্তি (আবার) বললোঃ আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাহে নিহত হই তা হলে আমার সকল গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ তুমি যদি ধৈর্যধারণকারী, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শক্রর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও, অবশ্য ঋণের কথা আলাদা। কেননা, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে একথা বলেছেন।
৪৭২৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাহে নিহত হই ...... লাইসের হাদীসের অনুরূপ।
৪৭২৯. সাঈদ ইবনু মানসুর ও মুহাম্মাদ ইবনু আজলান (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো, তিনি তখন মিম্বরের উপর (উপবিষ্ট) ছিলেন। সে ব্যক্তি বললোঃ আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আমার তরবারী দ্বারা নিহত হই ...... বাকী অংশ মাকবুরীর হাদীসের অনুরূপ।
৪৭৩০. যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ মিসরী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গুনাহই মাফ করে দেওয়া হবে।
৪৭৩১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ঋণ ছাড়া সব কিছু মাফ করিয়ে দেয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩৩. শহীদদের রূহ জান্নাতে আর তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত হন
৪৭৩২. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাঃ) কে এ আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যাতে আল্লাহ বলেনঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনো তোমরা মৃত মনে করোনা বরং তাঁরা জীবিত তাঁদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তারা জীবিকা প্রাপ্ত। (৩-১৬৯।)
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি এ আয়াত সম্পর্কে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) জিজ্ঞাসা করেছিলাম তখন তিনি বললেনঃ তাদের রুহসমুহ সবুজ পাখীর পেটে (রক্ষিত থাকে) যা আরশের সাথে ঝুলন্ত দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করে। অবশেষে সেই দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে।
একবার তাদের পালনকর্তা তাদের দিকে তাকালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাদের কি কোন আকাংখা আছে? জবাবে তারা বললোঃ আমাদের আর কি আকাংখা থাকতে পারে আমরা তো যথেচ্ছভাবে জান্নাতে বিচরণ করছি। আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে এরূপ তিন তিনবার করলেন।
যখন তারা দেখলো, কিছু প্রার্থনা না করে থেকে রেহাই পাচ্ছে না তখন তারা বললোঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আকাংখা হয় যদি আমাদের রুহগুলোকে আমাদের দেহসমূহে ফিরিয়ে দিতেন আর পুনরায় আমরা তোমারই পথে নিহত (শহীদ) হতে পারতাম। যখন (আল্লাহ্) দেখলেন, তাদের আর কোন প্রয়োজনই অবশিষ্ট নাই, তখন তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলো (আর প্রশ্ন করা হলো না।)
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. জিহাদ ও রিবাত (শত্রুর মুকাবিলায় বিনিদ্রতা প্রহরী) এর ফযীলত
৪৭৩৩. মানসুর ইবনু আবূ মুজাহীম (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, সর্বোত্তম লোক কে? তিনি বললেনঃ সে ব্যক্তি যে তার জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাহে জিহাদ করে। সে ব্যক্তি বললো, তারপর কে? তিনি বললেনঃ যে মুমিন কোন পাহাড়ী উপত্যাকায় নির্জনে অবস্থান করে তার প্রতিপালকের ইবাদত করে এবং তার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে বাঁচায় (কারো ক্ষতি করে না)।
৪৭৩৪. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেনঃ ঐ ব্যক্তি যে তার জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাহে জিহাদ করে। সে ব্যক্তি বললো, তারপর কে? তিনি বললেনঃ তারপর হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন নিভৃত উপত্যকায় তার প্রতিপালকের ইবাদতে নিবিষ্ট থাকে এবং লোকজনকে তার নিজ অনিষ্ট থেকে বাঁচায়।
৪৭৩৫. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান দারেমী (রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উপত্যকায় অবস্থানকারী লোক, তারপর 'ঐ ব্যক্তি' তিনি বলেননি।
৪৭৩৬. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম জীবন হল সে ব্যক্তির জীবন যে আল্লাহর রাহে জিহাদের জন্যে ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকে। শক্রর উপস্থিতি ও শত্রুর দিকে ধাবমান হওয়ার আওয়ায শুনামাত্র ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার হয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে যথাস্থানে সে (শক্র) নিধন শাহাদতের সন্ধান করে। অথবা ঐ লোক যে ক্ষুদে ছাগপাল নিয়ে কোন পাহাড় চুড়ায় বা (নির্জন) উপত্যকায় বসবাস করে আর (যথারীতি) সালাত কায়েম করে, যাকাত দান করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে নিমগ্ন থাকে মৃত্যু পর্যন্ত। লোকটি মঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে।
৪৭৩৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি (কুতায়বা) বলেছেন, বা'জা ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাদর এবং তিনি বলেছেনঃ فِي شِعْبَةٍ مِنْ هَذِهِ الشِّعَابِ ইয়াহইয়ার বর্ণনা থেকে ভিন্ন রকম বর্ণনা।
৪৭৩৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারর ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। এতে রয়েছেঃ فِي شِعْبٍ مِنَ الشِّعَابِ
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. হত্যাকারী ও নিহত দু'ব্যক্তি (এক সাথে) জান্নাতে প্রবেশ
৪৭৩৯. মুহাম্মাদ ইবনু আবু উমার মাক্কী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা ঐ দু'ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসেন যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করে অথচ উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, তা কেমন করে হবে ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ এক ব্যক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদ করে শহীদ হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ তা'আলা হত্যাকারীর প্রতি সদয় দৃষ্টি প্রদান করেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে এবং সেও আল্লাহর রাহে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করে।
৪৭৪০. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারর ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৪৭৪১. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... হাম্মাদ ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেসব হাদীস আমাদের কাছে বর্ণনা করেন সেগুলোর মধ্যে এটিও ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআ’লা এমন দু'ব্যক্তির জন্য হাসবেন যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে অথচ তাদের উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, তা কেমন করে হবে ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ এক জন নিহত (শহীদ) হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারপর আল্লাহ অপরজনের প্রতিও সদয় হবেন এবং তাকেও ইসলামের হেদায়েত দান করবেন। তারপর সেও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে এবং শহীদ হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৬. যে ব্যক্তি কোন কাফিরকে হত্যা করেছে, তারপর সে নিজে সঠিক পথে চলছে
৪৭৪২. ইয়াহইয়া ইবনু আবূ আইউব, কুতায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাফির এবং তার হত্যাকারী (মু'মিন) কখনও জাহান্নামে একত্রিত হবে না।
৪৭৪৩. আবদুল্লাহ ইবনু আওন হিলালী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন দু'ব্যাক্তি জাহান্নামে একত্রিত হবে না যে একের উপস্থিতি অন্যকে বিব্রত করে। তখন প্রশ্ন করা হলোঃ তারা কারা ইয়া রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেনঃ সে মুমিন ব্যক্তি যে কোন কাফেরকে হত্যা করেছে তারপর নিজে সঠিক পথে চলেছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৭. আল্লাহর রাহে দানের ফযীলত ও তা ক্রমবর্ধিত হওয়া
৪৭৪৪. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযাল (রহঃ) ... আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) এক ব্যক্তি লাগামযুক্ত একটি উটনী নিয়ে এসে বললো, এটা আল্লাহর রাহে (দান করলাম)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তুমি সাতশ উটনী লাভ করবে যার প্রত্যেকটি লাগামসহ হবে।
৪৭৪৫. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. আল্লাহর রাহের মুজাহিদগণকে বাহন ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করা এবং তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারবর্গকে উত্তমরূপে দেখা-শুনা করার ফযীলত
৪৭৪৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, আমার বাহন হালাক হয়ে গেছে, আপনি আমাকে একটি বাহন প্রদান করুন। তিনি বললেনঃ আমার কাছে তো তা নেই। সে সময় এক ব্যক্তি বললো, আমি এমন এক ব্যক্তির সন্ধান তাকে দিলাম যে তাকে বাহন দিতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন উত্তম বিষয়ে পথ প্রদর্শন করে, তার জন্য আমলকারীর সমান সাওয়াব রয়েছে।
৪৭৪৭. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, বিশর ইবনু খালিদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ননা করেন।
৪৭৪৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ বাকর ইবনু নাফি (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আসলাম গোত্রের জনৈক যুবক বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাই, অথচ আমার কাছে যুদ্ধোপকরণ নেই। তখন তিনি বললেনঃ অমুকের কাছে যাও, সে যুদ্ধের জন্য আসবাব পত্র প্রস্তুত করেছিল, কিন্তু পরে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন সে ব্যক্তি তার কাছে গেল এবং বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে সালাম বলেছেন এবং বলেছেন, আপনি যেন সে সব যুদ্ধ সামগ্রী আমাকে দিয়ে দেন যা আপনি নিজের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তখন সে ব্যক্তি (তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে) বললো, হে অমূক! আমি যে যুদ্ধোপকরণ প্রস্তুত করেছিলাম তা একে দিয়ে দাও এবং তার মধ্য থেকে কিছুই রেখে দিওনা। আল্লাহর কসম! তার সামান্যতম অংশও তুমি রেখে দিলে আল্লাহ তাতে তোমাকে বরকত দান করবেন না।
৪৭৪৯. সাঈদ ইবনু মানসুর ও আবূ তাহির (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে আল্লাহর রাস্থায় কোন গাজীকে যুদ্ধোপকরণের ব্যবস্থা করে দিল, সেও জিহাদ করলো, যে ব্যক্তি কোন গাজীর অনুপস্থিতে তার পরিবারবর্গের দেখাশোনা করলো, সেও জিহাদই করলো।
৪৭৫০. আবূ রাবী যাহরানী (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনেঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদকারী কোন গাজীকে যুদ্ধোপকরণের ব্যবস্থা করে দিল সেও জিহাদই করলো, আর যে ব্যক্তি কোন গাজীর অনুপস্থিতিতেই তার পরিবারবর্গের দেখাশোনা করলো, সেও জিহাদই করলো।
৪৭৫১. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযায়েল বংশের অন্তর্ভুক্ত বনূ লিহইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। তখন তিনি বলেনঃ প্রতি দু'ব্যক্তির একজন যেন বাহিনীতে যোগদান করে কিন্তু সাওয়াব তারা দু'জনেই লাভ করবে।
৪৭৫২. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। (বাকী হাদীস) পূর্বানুরূপ।
৪৭৫৩. ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৭৫৪. সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিহইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন। তখন তিনি বললেনঃ প্রতি দু'ব্যক্তির মধ্যে একজন অবশ্যই (যুদ্ধে) বেরিয়ে যাওয়া উচিত। তারপর তিনি বাড়ীতে অবস্থানকারীদেরকে বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার যে কেউ যুদ্ধে গমনকারীর পরিবার পরিজন ও তার সহায়-সম্পদের দেখাশুনা করবে সেও যুদ্ধে গমনকারীর অর্ধেক সাওয়াব লাভ করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩৯. মুজাহিদদের পরিবারের মর্যাদা এবং তাদের ব্যাপারে খিয়ানতকারীদের গুনাহ
৪৭৫৫. <আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুজাহিদদের (পরিবারের) নারীদের মর্যাদা (জিহাদ গমন করে) পবিত্রতা বাড়ীতে অবস্থানকারীদের জন্যে তাদের মায়েদের মর্যাদাতুল্য। বাড়ীতে অবস্থানকারী যে ব্যাক্তই কোন মুজাহিদের পক্ষে তার পরিবারবর্গের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকে এবং তাতে সে কোনরুপ খেয়ানত (বা বিশ্বাসভঙ্গ) করে, কিয়ামতের দিন সেই মুজাহিদকে তার সম্মুখে দাঁড় করানো হরে এবং সে (মুজাহিদ) তার (খেয়ানতকারীর নেক) আমল থেকে যে পরিমাণ ইচ্ছে নিয়ে যাবে। তোমাদের ধারণা কি? (অর্থাৎ সে কি আর কম নেবে? সমুদয় সাওয়াবই সে কেড়ে নিয়ে যাবে।)
৪৭৫৬. মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি (অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ বাকী অংশ সাওরী (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।
৪৭৫৭. সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আলকামা ইবনু মারসাদ (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস রেওয়ায়াত করেন তিনি আরও রেওয়ায়াত করেন যে, (মুজাহিদকে বলা হবে) তুমি তার নেক আমল থেকে যে পরিমাণ ইচ্ছা কর নিয়ে যাও। এ কথাটি বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ তোমাদের কি ধারণা? (মুজাহিদ কি তখন তার কোন সাওয়াব আর বাকী রাখবে?)।
পরিচ্ছেদঃ ৪০. ওযরগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য জিহাদের ফরয রহিত
৪৭৫৮. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বারা (রাঃ) কে কুরআন শরীফের আয়াতঃ “মু'মিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা সমান নয়।” সম্পর্কে বলতে শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়িদ (রাঃ) কে তা লিখে রাখার জন্য একটি হাড় নিয়ে আসতে আদেশ করলেন। তখন ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) তাঁর (অন্ধত্বের) ওযর সম্পর্কে অনুযোগ করলেন। এ প্রসঙ্গে নাযিল হলোঃ
মুমিনদের মধ্যে যারা সমস্যাগ্রস্ত নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা সমান নয়।
শুবা (রহঃ) বলেন, আমার কাছে সা’দ ইবনু ইবরাহীম বর্ণনা করেছেন জনৈক ব্যক্তি সুত্রে তিনি যায়িদ (রাঃ) থেকে এ আয়াত সম্পর্কে “যারা বসে থাকে তারা সমান নয়।” বাকী হাদীস বারা (রাঃ) এর হাদীসের অনুরূপ। ইবনু বাশশার তাঁর বর্ণনায় বলেছেন, সা’দ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে তিনি যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে।
৪৭৫৯. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ আয়াত নাযিল হলো, তখন ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ) সে ব্যাপারে তার (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) সঙ্গে আলাপ করলেন। তখন নাযীল হলোঃ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ অর্থাৎ যাদের কোন ওযর নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৪১. শহীদদের জন্য জান্নাত অবধারিত হওয়ার প্রমান
৪৭৬০. সাঈদ ইবনু আমর আশ'আসী ও সুয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, এক ব্যাক্তি (এসে) বললো, আমি যদি নিহত হই তবে কোথায় থাকবো ইয়া রাসুলাল্লাহ! জবাবে তিনি বললেনঃ জান্নাতে। লোকটি তখন তার হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো এবং অবশেষে শহীদ হলো। সুওয়ায়দ (রহঃ) এর বর্ণনায় আছেঃ উহুদ যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললো।
৪৭৬১. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনূ নাবীতের এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলো। তিনি বলেন ...... অন্য রিওয়ায়াতে আহমাদ ইবনু জানাব মিসসীসী (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারদের অন্তর্ভুক্ত একটি কবীলা বনু নাবীতের এক ব্যক্তি আসলো এবং বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আপনি তাঁর বান্দা ও রাসুল। তারপর সে অগ্রসর হলো এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো। এমন কি শেষ পর্যন্ত সে শহীদ হলো। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ লোকটি কম কাজ করেও অনেক সাওয়াব পেয়ে গেল।
৪৭৬২. আবূ বাকর ইবনু নাযর ইবনু আবূ নাযর, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুসায়সা (রাঃ) কে আবূ সুফিয়ানের বাণিজ্যিক কাফিলার গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্যে প্রেরণ করেন। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। তখন আমি ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া ঘরে আর কেউই ছিলোনা। রাবী বলেন, আমি স্মরণ করতে পারছিনা, তিনি (আনাস) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন সহধর্মিনীর (না থাকার) কথাও বলছেন কিনা। এরপর সে তার সঙ্গে কথা বলল। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং লেকাজনকে লক্ষ্য করে তিনি বললেনঃ আমার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় কাজ আছে। যার সাওয়ারী মউজুদ আছে সে যেন আমাদের সঙ্গে সাওয়ার হতে পারে।
তখন কিছুলোক মদিনার উঁচু অনুকুল থেকে তাদের সাওয়ারী নিয়ে আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি বললেনঃ না, কেবল যাদের সাওয়ারী প্রস্তুত আছে তারাই যাবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণ রওয়ানা করলেন এবং মুশরিকদের পূর্বেই বদরে গিয়ে উপনীত হলেন। এর পরপরই মুশরিকরা এসে পৌছাল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন কোন ব্যাপারে আমার অগ্রবর্তী না হয়, যতক্ষন না আমি তার সামনে থাকি।
এরপর মুশরিকরা নিকটবর্তী হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। রাবী বলেন, উমায়র ইবনু হুমাম আনসারী (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! জান্নাতের প্রশস্ততা কি আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার ন্যায়? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। উমায়র বলে উঠলেন, বাহ, বাহ, (কি চমৎকার)! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বাহ, বাহ বলতে তোমাকে কিসে উদ্বৃদ্ধ করলো হে?
তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিছু না! তবে আল্লাহর কসম! আমি তার অধিবাসী হওয়ার আশায়ই এরূপ বলছি। তখন তিনি বললেনঃ তুমি নিশ্চয়ই তার অধিবাসী (হবে)। রাবী বলেন, তারপর তিনি তাঁর তীরদান থেকে কয়েকটি খেজুর বের করলেন এবং তা খেতে লাগলেন। তারপর বললেন, আমি যদি এ খেজুরগুলো খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে যাই তবে তাও হবে এক দীর্ঘ জীবন। রাবী বলেনঃ, তারপর তাঁর কাছে রক্ষিত খেজুরগুলো তিনি ফেলে দিলেন তারপর যুদ্ধে নেমে পড়লেন, এমন কি শেষ পর্যন্ত শহীদ হলেন।
৪৭৬৩. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস (রহঃ) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, আর তিনি ছিলেন তখন শক্রর মুখোমুখি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই জান্নাত রয়েছে তরবারীর ছায়ায়। তখন আলুথালু বেশের এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো এবং বললো, হে আবূ মূসা! আপনি কি নিজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে ব্যক্তি তার সাথীদের কাছে ফিরে গেলো। তারপর বললো, আমি তোমাদেরকে (বিদায়ী) সালাম জানাচ্ছি। এরপর সে তার তরবারীর কোষ ভেঙ্গে ফেলে তা দুরে নিক্ষেপ করলো। তারপর নিজ তরবারীসহ শক্রদের কাছে গিয়ে উপনীত হলো। এবং তা দিয়ে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেল।
৪৭৬৪. মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কতিপয় লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক দিন যারা আমাদেরকে কুরআন এবং সুন্নাহ শিক্ষ দিবেন। তখন তিনি আনসারদের সত্তর ব্যক্তিকে তাদের সাথে প্রেরন করলেন। তাদের কুররা (ক্বারী সমাজ) বলা হতো। এদের মধ্যে আমার মামা হারামও ছিলেন। তারা কুরআন তিলওযাত করতেন এবং রাত্রে এর অর্থ অনুধাবন ও শিক্ষায় অতিবাহিত করতেন আর দিনের বেলায় (জলাশয়ে গিয়ে) পানি এন মসজিদে রাখতেন এবং কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রী করে (বিক্রয়লব্ধ অর্থে) সুফফাবাসী এবং নিঃস্ব ফকীরদের জন্যে খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করতেন। এদেরকেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন। ওরা রাস্তায়ই তাদের উপর আক্রমণ করলো এবং তারা গন্তব্যস্থলে পৌঁছবার পূর্বে তাদেরকে হত্যা করলো।
তখন তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের নাবীর কাছে সংবাদ পৌছিয়ে দিন যে আমরা আপনার সন্নিধানে পৌছে গিয়েছি এবং আপনার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছি আর আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন। তিনি রাবী বলেন, এক ব্যক্তি আনাস (রাঃ) এর মামা হারাম (রাঃ) এর পিছন দিক দিয়ে এসে বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করে জান বের করে নিল। হারাম (রহঃ) বলে উঠলেন, কাবার মালিকের কসম! আমি সাফল্যমন্ডিত হয়েছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমাদের ভাইগণ নিহত হয়েছেন। আর তারা বলেছেনঃ, হে আল্লাহ আমাদের নাবীকে সংবাদ পৌছিয়ে দিন যে, আমরা তোমার সন্নিধানে পৌছে গিয়েছি এ অবস্থায় যে, আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট আর আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট।
৪৭৬৫. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরে যে চাচার নামানুসারে আমার নামকরণ করা হয়েছে তিনি [আনাস ইবন নাযর (রাঃ)] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। রাবী বলেন, এটা ছিল তার জন্যে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি (প্রায়ই) বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যে যুদ্ধটি করেছিলেন, তাতে আমি শরীক হতে পারলাম না। এরপর যদি আল্লাহ তা’আলা আমাকে তাঁর কোন যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দান করেন তা হলে আমি কি করি তা আল্লাহ দেখবেন। রাবী বলেন, এর বেশী কিছু বলতে তিনি ভয় পেলেন।
তারপর উহুদের যুদ্ধের দিন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) যখন সামনের দিক থেকে আগমন করলেন তখন আনাস (রাঃ) তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ, হে আবূ আমর! কোথায় (যাচ্ছ)? আহা, আমি উহুদ প্রান্ত থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ পাচ্ছি। রাবী বলেন, তারপর তিনি তাদের (কাফিদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীণ হলেন এমন কি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেলেন। তার শবদেহে আশিটিরও অধিক তরবারী, বর্শা ও তীরের আঘাত পাওয়া যায়।
রাবী আনাস (রাঃ) বলেন, তার বোন এবং আমার ফুফু রাবীআ বিনত নযর (রাঃ) বলেন, (শহীদের ক্ষত-বিক্ষত দেহের) কেবল তার আঙ্গুলের জোড়া দেখেই তাকে আমি সনাক্ত করেছি। (অন্য কোন পরিচয়ই অবশিষ্ট ছিল না।) তখন আয়াত নাযিল হলোঃ এরা হচ্ছে সে সব ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার সত্যায়ন করে দেখিয়েছে। তাদের কেউ তার (অঙ্গীকারকারী) ইতিমধ্যেই পূরণ করে ফেলেছে আর কেউ তার প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা মোটেই পরিবর্তিত হয়নি। রাবী বলেন, সাহাবীগণ মনে করতেন যে এ আয়াতখানা তার এবং তার সঙ্গী-সাথীদের ব্যাপারেই নাযিল হয়েছিল।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. যে আল্লাহর কালিমা সমুন্নত করার উদ্দেশ্যেই যুদ্ধ করে সেই আল্লাহর রাহে (-র যোদ্ধা)
৪৭৬৬. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, জনৈক বেদুঈন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ এক ব্যক্তি গনীমত লাভের জন্য যুদ্ধ করে, অন্য এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে স্মরণীয় হওয়ার জন্যে আর এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে (বীরত্ব) নিজের উচ্চমর্যাদা প্রদর্শনের জন্যে। এগুলোর মধ্যে কোনটি আল্লাহর রাহে বলে গণ্য হবে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমা সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে সে ব্যক্তই আল্লাহর রাহে (যুদ্ধ করে)।
৪৭৬৭. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করা হলো, যে ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি গোত্রের সার্থ যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে। এগুলোর মধ্যে কোনটি আল্লাহর রাহে যূদ্ধ (বলে গণ্য হবে?) তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি এ উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বানী সমুন্নত হবে, (কেবল) সেই আল্লাহর রাহে (বলে গণ্য হবে।)
৪৭৬৮. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম এবং আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের মধ্যেকার এক ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে ...... তারপর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৭৬৯. ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহর রাহে যুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করলো তখন সে ব্যক্তি বললো, এক ব্যক্তি ক্রোধের বশে যুদ্ধ করে এবং গোত্রের টানে যুদ্ধ করে। তখন তিনি তার দিকে মাথা তুলে তাকালেন। তার এ মাথা তোলা শুধু এজন্যেই ছিল যে সে লোকটি দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি এ জন্যে যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বানী সমুন্নত হবে, কেবল সেই আল্লাহর রাহে (যুদ্ধ করে)।
পরিচ্ছেদঃ ৪৩. লোক দেখানো এবং খ্যাতির উদ্দেশ্যে যে যুদ্ধ করে সে জাহান্নামের যোগ্য হয়
৪৭৭০. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) ... সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিলো, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল (রহঃ) বললেন, হে শায়খ! আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একখানা হাদীস আমাদেরকে শুনান। তিনি বললেন, হ্যাঁ (শুনাবো)।
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ হয়েছিল। তাঁকে হাযির করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামত রাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে তাঁর সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ এর বিনিময়ে কি আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি আপনার (সন্তুষ্টির) জন্য যুদ্ধ করেছি এমন কি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি বরং এ জন্যেই যুদ্ধ করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে বলে তুমি বীর। তা তো বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেওয়া হবে। সে মতে তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে-যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন অধ্যায়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তার প্রদত্ত নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে) তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ এত (বড় নিয়ামত পেয়ে বিনিময়ে) তুমি কি করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনারই (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যায়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্যে যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে-যাতে লোকে বলে সে একজন ক্বারী। তা বলা হয়েছে। তারপর আদেশ দেওয়া হবে এবং তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে যাকে আল্লাহ তা’আলা স্বচ্ছলতা এবং সর্ববিধ সম্পদ দান করেছেন। তাকে হাযির করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নিয়ামত সমূহের কথা তাঁকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (স্বীকারোক্তি করবে।) তখন তিনি (আল্লাহ তায়ালা) বলবেনঃ এর বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছো? জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই যাতে সস্পদ ব্যয় আপনি পছন্দ করেন অথচ আমি সে খাতে আপনার (সন্তুষ্টির) জন্যে করিনি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি বরং এ জন্যে তা করেছিলে-যাতে লোকে তোমাকে “দানাবীর” বলে অবিহিত করে। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেওয়া হবে, সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
৪৭৭১. আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ... সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর বর্ননায় “তাফাররাকা” এর স্থলে “তাফাররাজা” এবং “নাতিলু আহলিশ শাম” এর স্থলে “নাতিল আশ শামী” বলে উল্লেখ করেছেন। অবশিষ্ট হাদীস খালিদ ইবনু হারিস (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. যুদ্ধ করে যারা গনীমত লাভ করেছেন আর যারা গনীমত লাভ করেন নি তাদের সাওয়াবের পরিমাণ সম্পর্কে
৪৭৭২. আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে যোদ্ধা বাহিনী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করলো এবং তাতে গনামত লাভ করলো তারা এ দুনিয়াতেই আখিরাতের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিময় আগ্রিম পেয়ে গেল। তাদের জন্য কেবল এক-তৃতীয়াংশ বিনিময় অবশিষ্ট রইলো। আর যে বাহিনী কোন গনীমত লাভ করলো না, তাদের বিনিময় পুর্ণ করে দেয়া হবে (পাওনা রয়ে গেল)।
৪৭৭৩. মুহাম্মদ ইবনু সাহল তামীমী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই বাহিনী মাত্রই যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করলো এবং গনীমত লাভ করলো, তারপর নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করলো তাঁরা আখিরাতের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিময়ই নগদ পেয়ে গেল। আর যারা খালি হাতে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করলো, তাদের পুরো বিনিময়ই পাওনা রয়ে গেল।
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. নিয়্যাত অনুসারে আমলের সাওয়াব, জিহাদ প্রভৃত আমলও এর অন্তর্ভুক্ত
৪৭৭৪. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেকটি আমল (ফলাফল) নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল এবং কোন ব্যক্তি কেবল তাই লাভ করবে, যা সে নিয়্যাত করেছে। যার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলর উদ্দেশ্যে, তার হিযরত আল্লাহর ও রাসূলের উদ্দেশ্য (হিজরত বলে গণ্য হবে), আর যার হিজরত পার্থিব কোন লাভ বা কোন মহিলার পাণি গ্রহণের উদ্দেশ্যে হবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যের হিজরত বলেই গণ্য হবে।
৪৭৭৫. মুহাম্মদ ইবনু রুমহ, আবূ রাবী আতাকী, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, মুহাম্মদ ইবনু আলা হামদানী ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ... সুফিয়ান (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে মিম্বরে উপবিষ্ট অবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরাতে বলতে শুনেছি ......।
পরিচ্ছেদঃ ৪৬. আল্লাহর রাহে শাহাদাত প্রার্থনা করা মুস্তাহাব
৪৭৭৬. শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা করে আল্লাহ তাকে তা (অর্থাৎ তার সাওয়াব) দিয়ে থাকেন, যদিও সে (প্রত্যক্ষ) শাহাদাত লাভের সুযোগ না পায়।
৪৭৭৭. আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তাকে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন, যদিও বা সে আপন শয্যায় মৃত্যুবরণ করে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৭. আল্লাহর রাহে জিহাদ না করে, এমন কি মনের মধ্যে জিহাদের বাসনাও পোষণ না করে যে মারা যায় তার পরিনাম অশুভ
৪৭৭৮. মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু সাহম আন্তাকী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো, অথচ কোনদিন জিহাদ করলো না বা জিহাদের কথা তার মনে কোন দিন উদিতও হলো না, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যু বরণ করলো। আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহঃ) বলেন, আমাদের মত হলো হুকুম একান্তই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের জন্য প্রযোজ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪৮. অসুখ বিসুখ বা ওজরের জন্যে যে জিহাদে যেতে পারল না, তার সাওয়াব
৪৭৭৯. উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা কোন এক যুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ মদিনার এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা তোমাদের প্রতিটি পথ চলার এবং প্রান্তর অতিক্রমকালে তোমাদেরই সঙ্গে রয়েছে। (সাওয়াব লাভের বেলায়)। রোগ ব্যাধি তাদেরকে আটকে রেখেছে।
৪৭৮০. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আ'মাশ (রহঃ) থেকে এ হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন। তবে ওয়াকী (রহঃ) এর বর্ননায় আছে “তাঁরা সাওয়াবে তোমাদে সঙ্গে শরীক রয়েছে।”
পরিচ্ছেদঃ ৪৯. সাগরের বুকে জিহাদের (নৌযুদ্ধের) ফযীলত
৪৭৮১. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) এর ঘরে যেতেন। তিনি তাকে আপ্যায়িত করতেন। (পরবর্তী সময়ে) উম্মু হারাম (রাঃ) ছিলেন, উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) এর স্ত্রী। একদা তিনি তাঁর ঘরে গেলেন এবং তিনি তাকে (চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী) আপ্যায়িত করলেন। তারপর তিনি তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) মাথার উকুন দেখতে লাগলেন এবং এ অবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি যখন জাগলেন তখন তিনি হাসছিলেন।
উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি তখন বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার হাসার কারণ কি? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের এমন কিছু লোককে আমার সম্মুখে পেশ করা হলো, যারা আল্লাহর রাহের যোদ্ধারূপে সাগরের বুকে আরোহণ করবে। তারা যেন সিংহাসনে আসীন রাজা-বাদশাহ। অথবা বলেছেন, রাজা-বাদশাহর মত সিংহাসনে আসীন হবেন। রাবী সন্দেহপোষণ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বাক্যটি বলেছেন।
উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাকেও তাদের সঙ্গে শামিল করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্যে দোয় করলেন। এরপর তিনি মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। আবার জেগে হাসতে লাগলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের কিছু সংখ্যক লোককে আমার সম্মুখে পেশ করা হয়, আল্লাহর রাহের যোদ্ধারূপে সাগরের বুকে আরোহণ করবে। তারা যেন সিংহাসনে আসীন রাজা-বাদশাহ। অথবা বলেছেন, রাজা-বাদশাহর মত সিংহাসনে আসীন হবেন।
তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আমাকেও তাদের সঙ্গে শামিল করেন। তিনি বললেনঃ তুমি হবে তাদের প্রথম দলের একজন।
পরবর্তী সময়ে উম্মু হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) মু'আবিয়া (রাঃ) এর আমলে সমূদ্রপৃষ্ঠে (সাইপ্রাসের যুদ্ধ উপলক্ষে) আরোহণ করেন এবং সমুদ্র থেকে নির্গমনকালে সাওয়ারা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
৪৭৮২. খালফ ইবনু হিশাম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর খালা উম্মু হারাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে এলেন এবং আমাদের এখানেই মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করলেন। তারপর তিনি যখন জাগলেন তখন হাসছিলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার হাসবার কারণ কি? আপনার প্রতি আমার পিতামাতা কুরবান হোক। তিনি বললেনঃ আমাকে (স্বপ্নে) দেখানো হলো যে, আমার উম্মাতের মধ্যকার একদল লোক (দেখলাম) সমুদ্রপৃষ্ঠে আরোহণ করবে রাজা-বাদশাহদের সিংহাসনে আরোহণের মতো। তখন আমি আরয করলাম, আপনি আমার জন্য দোয়া করুন যেন তিনি আমাকে তাদের সঙ্গে শামিল রাখেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের মধ্যে শামিল থাকবে।
তারপর তিনি শুয়ে পড়েন এবং পূনরায় জাগ্রত হয়ে আবারও হাসতে থাকেন। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম তিনি পুর্বের ন্যায় জবাব দিলেন। অতঃপর আমি বললাম, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের সঙ্গে শামিল রাখেন। তিনি বললেনঃ তুমি হবে তাদের প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত।
রাবী বলেন, তারপর পরবর্তীকালে উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) তাকে বিয়ে করেন। তিনি সমুদ্রযুদ্ধে যাত্রা করেন এবং তাকেও সঙ্গে নিয়ে যান। যখন তিনি ফিরে আসছিলেন তখন একটী খচ্চর তাঁর কাছে আনা হলো। তিনি তাতে আরোহণ করলেন তখন খচ্চরটি তাঁকে নীচে ফেলে দেয়। তাতে তার ঘাড় ভেঙ্গে যায়। (এবং এভাবে তিনি শহীদ হন)।
৪৭৮৩. মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) এর খালা উম্মু হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন এবং মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করলেন তারপর মুচকি হাসতে হাসতে জাগলেন। তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার হাসবার কারণ কি? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোককে আমার সন্মুখে পেশ করা হলো যারা ঐ সবুজ সাগরের পিঠে আরোহণ করবে ......। তারপর হাম্মাদ ইবনু যাযদের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৪৭৮৪. ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস (রাঃ) এর খালা বিনত মিলহানের কাছে এলেন। এবং তাঁর কাছে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। তারপর ইসহাক ইবনু আবূ তালহা ও মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫০. আল্লাহর রাহে প্রহরায় থাকার ফযীলত
৪৭৮৫. আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু বাহরাম দারেমী (রহঃ) ... সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাহে একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে। এবং তার (শহীদসুলভ) রিযক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিতনাসমূহ থেকে নিরাপদে থাকবে।
৪৭৮৬. আবূত তাহির (রহঃ) ... সালমান আল খায়র (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আয়্যুব ইবন মুসা (রহঃ) থেকে লায়সের হাদীসের অনুরূপ হার্দীস বর্ণনা করেছেন।।
পরিচ্ছেদঃ ৫১. শহীদদের বর্ণনা
৪৭৮৭. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একব্যক্তি পথ চলাকালে একটি কাঁটাযুক্ত গাছের ডাল রাস্তায় পেয়ে তা সরিয়ে দিল, তখন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিদানে তাকে মার্জনা করে দিলেন। তিনি আরও বললেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকারঃ
১. প্লেগগ্রস্থ
২. উদরাময়গ্রস্থ
৩. ডুবন্ত (ডুবে মৃত)
৪. কোন কিছু চাপা পড়ে মৃতব্যক্তি এবং
৫। আল্লাহর রাহে (প্রাণদানকারী) শহীদ।
৪৭৮৮. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত হয় সেই তো শহীদ।” তিনি বললেনঃ তবে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে। তখন তারা বললেন, তা হলে তারা কারা ইয়া রাসুলাল্লাহ!
তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ রাহে নিহত হয় সে শহীদ। ষে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায় সে শহীদ যে ব্যক্তি উদরাময়ে মারা যায় সেও শহীদ। ইবনু মিকসাম (রহঃ) বলেন, আমি তোমার পিতার উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন, এবং পানিতে ডুবে মারা যায় এমন ব্যক্তিও শহীদ।
৪৭৮৯. আবদুল হামিদ ইবনু বয়ান ওয়াসেতী (রহঃ) ... সুহায়ল (রহঃ) এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সুহায়ল (রহঃ) বলেন, উবায়দুল্লাহ ইবনু মিকসাম (রহঃ) বলেন, আমি তোমার ভাইয়ের উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি তাতে বাড়তি এতটুকুও বলেছেন, যে ব্যক্তি পানিতে ডুবে মরলো সেও শহীদ।
৪৭৯০. মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) এ সনদের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতটুকু বর্ধিত বলেছেন, যে ব্যক্তি ডুবে মরলো, সেও শহীদ।
৪৭৯১. হামিদ ইবনু উমার আল বাকরাভী (রহঃ) ... হাফসা বিনত সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আবূ আমরা কিসে মারা গেলেন? আমি বললাম, প্লেগগ্রস্থ হয়ে। তিনি (হাফসা) বলেন, তখন তিনি (আনাস) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্লেগ হচ্ছে প্রত্যেকটি মুসলিম ব্যক্তির জন্যে শাহাদত স্বরূপ।
৪৭৯২. ওয়ালীদ ইবনু শুজা (রহঃ) ... আসিম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫২. তীরন্দাযীর ফযীলত এবং এতে উৎসাহ প্রদান এবং তা শিক্ষা করে ভুলে যাওয়ার নিন্দা
৪৭৯৩. হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বারের উপর আসীন অবস্থায় আমি বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালার বানীঃ “এবং তোমরা তাদের মোকাবেলায় শক্তি সঞ্চয় করে রাখো।” জেনে রাখো, শক্তি হচ্ছে তীরন্দাযী, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে তীরন্দাযী, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে তীরন্দাযী।
৪৭৯৪. হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, অচিরেই অনেক ভূ-খন্ড তোমাদের পদানত হবে। আর শক্রদের মোকাবেলায় আল্লাহই তোমাদের জন্যে যথেষ্ট হবেন। তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন তীর দ্বারা খেলার (তীরন্দাযীর) অভ্যাস ত্যাগ না করে।
৪৭৯৫. দাঊদ ইবনু রাশায়দ (রহঃ) ... উকবা ইবনু আমের (রাঃ) এর বরাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৭৯৬. মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ... ফুকায়ম লাখমী (রহঃ) একদা উকবা ইবনু আমের (রাঃ) কে বললেন, দুই লক্ষ্যস্থলের মধ্যে বারবার আনাগোনা করা এই বৃদ্ধ বয়সে নিশ্চয়ই আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে থাকবে। তিনি বললেন, আমি যদি একটি কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে না শুনতাম, তবে এ কষ্টটুকু করতাম না। রাবী হারিছ বলেন, আমি ইবনু শামাসাহ (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সে কথাটি কি? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তীর পরিচালনা শিখলো তারপর তার অভ্যাস ছেড়ে দিল সে আমাদের (উম্মতের দলভুক্ত) নয়। অথবা তিনি বলেছেন, সে পাপ করলো।
পরিচ্ছেদঃ ৫৩. নবী (ﷺ) এর বানীঃ আমার উম্মতের একদল লোক হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে তাদের বিরোধীরা তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারবে না
৪৭৯৭. সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূর রাবী আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। এমন কি এভাবে আল্লাহর আদেশ অর্থাৎ কিয়ামত এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটই থাকবে। কুতায়বা বর্ণিত হাদীসে "আর তারা তেমনি থাকবে" অংশটুকু নেই।
৪৭৯৮. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মাতের একদল লোক সর্বদাই মানব জাতির উপর বিজয়ী থাকবে। এমন কি এভাবে তাদের কাছে আল্লাহর আদেশ এসে পড়বে, তাদের বিজয়ী থাকাবস্থায়।
৪৭৯৯. মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি...। মারওয়ানের হাদীসের সম্পূর্ণ অনুরূপ।
৪৮০০. মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এ দ্বীন (ইসলাম) সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানদের একটি দল এর পক্ষে লড়তে থাকবে কিয়ামত সংগঠিত হওয়া পর্যন্ত।
৪৮০১. হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি, আমার উাম্মাতের একটি জামায়াত সর্বদাই সত্যের স্বপক্ষে লড়তে থাকবে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বিজয়ী (প্রভাবশালী) রূপে।
৪৮০২. মানসুর ইবনু আবূ মুযাহিম (রহঃ) ... উমায়র ইবনু হানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া (রাঃ) কে মিম্বরের উপর (আসীন অবস্থায়) বলতে শুনেছি "আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মাতের একটি জামায়াত আল্লাহর আদেশের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের সঙ্গ (সহায়তা) ত্যাগ করবে বা বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোনই অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না। এভাবে আল্লাহর আদেশ তথা কিয়ামত এসে পড়বে আর তারা তখনও লোকের উপর বিজয়ী থাকবে।"
৪৮০৩. ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... ইয়াযিদ ইবনু আসাম্ম বলেন, আমি মু'আবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) কে এমন একটি হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যা ছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরাতে অন্য কোন হাদীস মিম্বরের উপর থেকে বলতে তাঁকে আমি শুনিনি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের বুৎপত্তি (বুঝ) দিয়ে থাকেন এবং মুসলমানদের একটি দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়াই করবে। যারা তাদের প্রতি বিরূপ ভাব পোষণ করবে তাদের বিরুদ্ধে থাকবে তারা তাদের উপর বিজয়ী থাকবে। কিয়ামত অবধি এভাবে চলতে থাকবে।
৪৮০৪. আহমাদ ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু ওয়াহ্ব (রহঃ) ... আবদুর রাহমান ইবনু শামাসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মাসলামা ইবনু মুখাল্লাদ (রাঃ) এর কাছে বসা ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, কিয়ামত কেবল তখনই কায়েম হবে যখন নিকৃষ্টতম লোকরা থাকবে, ওরা জাহেলিয়াত সম্প্রদায়ের লোকদের চাইতেও নিকৃষ্টতর হবে। তারা আল্লাহর কাছে যে বস্তুর জন্যই দোয়া করবে তিনি তা প্রত্যাখান করবেন। তারা যখন এ আলোচনায় ছিলেন এমন সময় উকবা ইবনু আমির (রাঃ) সেখানে এলেন। তখন মাসলামা (রাঃ) বললেন, হে উকবা, শুনুন, আবদুল্লাহ কি বলেছেন? তখন উকবা (রাঃ) বললেন, তিনি তা অধিক জানেন।
তবে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মাতের একটি দল আল্লাহর বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়ে যাবে। তারা তাদের শক্রদের মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রতাপশালী হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। এভাবে চলতে চলতে তাদের নিকট কিয়ামত এসে যাবে আর তাঁরা এর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ।
তারপর আল্লাহ একটি বায়ু প্রবাহ প্রেরণ করবেন, সে বায়ু প্রবাহটি হবে কস্তূরীর সুঘ্রাণের ন্যায়। এবং তার পরশ হবে রেশমের পরশের মত। সে বায়ু এমন একটি লোককেও অবশিষ্ট রাখবে না যার অন্তরে একটি দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে। তাদের সকলকে তা কবজ করে নেবে। তারপর কেবল নিকৃষ্টতম লোকগুলই বাকী থাকবে এবং তাদের উপরই কিয়ামত কায়েম হবে।
৪৮০৫. ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পশ্চিম দেশীয়রা (আরববাসীরা) বরাবর হকের উপর বিজয়ী থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৫৪. ভ্রমণকালে বাহনের সুবিধাদির প্রতি খেয়াল রাখা এবং রাস্তার উপর রাত্রি যাপন নিষিদ্ধ হওয়া
৪৮০৬. যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা উর্বর ভূমি দিয়ে চলাচল কর তখন উটকে ভূমি থেকে তার অংশ আদায় করতে দিও। আর যখন দূর্ভিক্ষগ্রস্ততার মধ্যে ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর তখন তাড়াতাড়ি পথ অতিক্রম করবে এবং যখন কোথাও রাত্রি যাপনের জন্যে অবতরণ করবে তখন রাস্তা থেকে (নিরাপদ) দূরত্বে থাকবে। কেননা তা হচ্ছে জন্তুদের রাতে চলার পথ এবং ছোট ছোট অনিষ্টকর প্রানীদের রাত্রিকালীন আশ্রয়স্থল।
৪৮০৭. কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন উর্বর ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর তখন উটকে ভূমি থেকে তার পাওনা দাও। আর যখন দুর্ভিক্ষগ্রস্ত বা অনুর্বর ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর তখন তাড়া-তাড়ি তাদের মগজ (চলার শক্তি) বাকী থাকতে তা অতিক্রম করে যাও। আর যখন রাত্রি যাপনের জন্যে কোথাও অবতরণ কর তখন পথ থেকে সরে থাকবে। কেননা তা হচ্ছে জীবজন্তু ও সাপ বিচ্ছু ইত্যাদির রাত্রি বেলার আশ্রয়স্থল।
পরিচ্ছেদঃ ৫৫. সফর ক্লেশের অংশ বিশেষ। প্রয়োজন সেরে মুসাফিরের তাড়াতাড়ি পরিজনদের কাছে ফিরে আসা মুস্তাহাব
৪৮০৮. আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব, ইসমাঈল ইবনু আবূ উয়ায়স, আবূ মুসআব যুহরী, মানসুর ইবনু আবূ মুযাহিম, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সফর ক্লেশের অংশ, তা তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তার নিদ্রা ও পানাহারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। সুতরাং তোমাদের কাজ সমাপ্ত হয়ে গেলেই সে যেন তাড়াতাড়ি করে তার পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যায়। রাবী ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) বলেন, আমি (রাবী) মালিককে বললাম, সুমাই (রহঃ) কি আপনাকে আবু সালিহ সুত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীসখানা সফর ক্লেশের অংশ ... বর্ণনা করেছেন? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ।
পরিচ্ছেদঃ ৫৬. সফর থেকে রাতে অতর্কিত ঘরে ফিরা মাকরূহ
৪৮০৯. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো (গভীর) রাতে (সফর থেকে ঘরে) পরিবারবর্গের নিকট আসতেন না; বরং সকালে বা সন্ধ্যায় তাঁদের কাছে আসতেন।
৪৮১০. যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, তবে এতে لاَ يَطْرُقُ এর স্থলে لاَ يَدْخُلُ বর্ননা করেছেন।
৪৮১১. ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা এক অভিযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তারপর আমরা যখন মদিনায় আসলাম এবং ঘরে ফিরতে উদ্যত হলাম তখন তিনি বললেনঃ একটু অপেক্ষা কর, আমরা রাতে বা সন্ধ্যায় বাড়ীতে প্রবেশ করবো এতে যাদের সহধর্মিনাদের চুল অবিন্যস্ত তারা নিজেদের চুল বিন্যস্ত করে নিবে এবং যাদের স্বামী প্রবাসে ছিল তারা গুপ্তাঙ্গের লৌমরাশি পরিস্কার করে নিবে।
৪৮১২. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি রাতের বেলা সফর থেকে ফিরে তখন সে যেন রাতের আগন্তুকের মতো অতর্কিতে পরিবারবর্গের কাছে গিয়ে উপস্থিত না হয়, যাতে (দীর্ঘকাল) অনুপস্থিত সামীর স্ত্রী তার গুপ্তাঙ্গের লোম পরিস্কার করার এবং এলোকেশিনী তার কেশ বিন্যাস করার সুযোগ পায়।
৪৮১৩. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... সাইয়ার (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
strong>৪৮১৪. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি সফরের পর বাড়ী ফিরে তখন রাতের অপ্রত্যাশিত আগুন্তকের মতো পরিবারের কাছে উপস্থিত হতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
৪৮১৫. ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ... শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।
৪৮১৬. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি রাতের বেলা অতর্কিতে ঘরে ফিরে তার স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করতে কিংবা দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
৪৮১৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... সুফিয়ান (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণিত। আবদুর রাহমান (রহঃ) বলেন, সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, “তাদের প্রতি সন্দেহ পোষণ ও দোষক্রটি অনুসন্ধান প্রসংগটি” হাদীসে আছে কি না তা আমার জানা নেই।
৪৮১৮. মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অতর্কিতে রাত্রিতে ঘরে ফিরা মাকরূহ হওয়া সংক্রান্ত কথা রিওয়াত করেছেন। তবে তিনি "তাদের প্রতি সন্দেহ পোষন ও দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান" বাক্যটি উল্লেখ করেননি।
No comments: