আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা:) এর জীবনী
আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা:) এর জীবনী
নাম আবুল ফজল আব্বাস। পিতা আবদুল মুত্তালিব, মাতা নাতিলা, মতান্তরে নাসিলা বিনতু খাব্বাব। রাসূলুল্লাহর সা. চাচা। তবে দু’জন ছিলেন প্রায় সমবয়সী। ঐতিহাসিকদের ধারণা, সম্ভবতঃ তিনি রাসূলুল্লাহর সা. দুই বা তিন বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ছোট বেলায় একবার তিনি হারিয়ে যান। মা মান্নত মানেন, আব্বাস ফিরে এলে কা’বায় রেশমী গিলাফ চড়াবেন। কিছু দিন পর তিনি সহি-সালামতে ফিরে এলে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে আবদুল মুত্তালিব তাঁর মান্নত পুরা করেন।
জাহিলী যুগে তিনি ছিলেন কুরাইশদের একজন প্রতাপশালী রঈস। পুরুষানুক্রমে খানায়ে কা’বার রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব লাভ করেন।
রাসূলুল্লাহ সা. নবুওয়াত লাভ করলেন। মক্কায় প্রকাশ্যে তিনি তাওহীদের দাওয়াত দিতে লাগলেন। হযরত আব্বাস যদিও দীর্ঘ দিন যাবত প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেননি, তবে তিনি এ দাওয়াতের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এ কারণে মদীনার বাহাত্তর জন্য আনসার হজ্জের মওসুমে মক্কায় গিয়ে মিনার এক গোপন শিবিরে যে দিন রাসূলুল্লাহকে সা. মদীনায় হিজরাতের আহ্বান জানান এবং তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন, সেই গোপন বৈঠকেও হযরত আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। ইতিহাসে এ বাইয়াতকে আকাবার দ্বিতীয় শপথ বলা হয়। এ উপলক্ষে তিনি উপস্থিত মদীনাবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেনঃ ‘খাযরাজ কাওমের লোকেরা! আপনাদের জানা আছে, মুহাম্মাদ সা. স্বীয় গোত্রের মধ্যে সম্মান ও মর্যাদার সাথেই আছেন। শত্রুর মুকাবিলায় সর্বক্ষণ আমরা তাঁকে হিফাজত করেছি। এখন তিনি আপনাদের নিকট যেতে চান। যদি আপনারা জীবন পণ করে তাঁকে সহায়তা করতে পারেন তাহলে খুবই ভালো কথা। অন্যথায় এখনই সাফ সাফ বলে দিন।’ জবাবে মদীনাবাসীগণ পরিপূর্ণ সহায়তায় আশ্বাস দান করেন। এর অল্পকাল পরেই রাসূলুল্লাহ মদীনায় হিজরাত করেন।
মক্কার কুরাইশদের চাপের মুখে বাধ্য হয়ে তিনি কুরাইশ বাহিনীর সংগে বদর যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. অবহিত ছিলেন, এ কারণে তিনি সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘যুদ্ধের সময় আব্বাস বা বনু হাশিমের কেউ সামনে পড়ে গেলে তাদের হত্যা করবে না। কারণ, জোরপূর্বক তাদের রণক্ষেত্রে আনা হয়েছে।’
বদর যুদ্ধে অন্যান্য কুরাইশ মুশরিকদের সাথে আব্বাস, আকীল ও নাওফিল ইবন হারিস মুসলমানদের হাতে বন্দী হন। ঘটনাক্রমে, আব্বাসকে এত শক্তভাবে বাঁধা হয় যে, ব্যথায় তিনি কঁকাতে থাকেন। তাঁর সে কঁকানি রাসূলুল্লাহর সা. রাতের আরামে বিঘ্ন ঘটায়। একথা সাহাবায়ে কিরাম অবগত হলে তাঁরা আব্বাসের বাঁধন ঢিলা করে দেন। আব্বাস কঁকানি বন্ধ করে দিলেন। রাসূল সা. জিজ্ঞেস করলেনঃ কঁকানি শোনা যায় না কেন? বলা হলোঃ বাঁধন ঢিলা করে দেওয়া হয়েছে। তখুনি রাসূল সা. নির্দেশ দিলেন সকল বন্দীর বাঁধন ঢিলা করে দাও।’
বদরের যুদ্ধবন্দীদের কাছে অতিরিক্ত কাপড় ছিল না। রাসূল সা. সকলকে পরিধেয় বস্ত্র দিলেন। হযরত আব্বাস ছিলেন দীর্ঘদেহী। কোন ব্যক্তির জামা তাঁর গায়ে লাগছিল না। আব্বাসের মত দীর্ঘদেহী ছিল মুনাফিক আবদুল্লাহ বিন উবাই। সে একটি জামা আব্বাসকে দান করে। এ কারণে মুনাফিক হওয়া সত্ত্বেও আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের মৃত্যুর পর পুত্রের অনুরোধে রাসূল সা. নিজের একটি জামা তার লাশের গায়ে পরানের জন্য দান করেন। এভাবে তিনি চাচার প্রতি কৃত ইহসান পরিশোধ করেন।
ছোট বেলায় একবার তিনি হারিয়ে যান। মা মান্নত মানেন, আব্বাস ফিরে এলে কা’বায় রেশমী গিলাফ চড়াবেন। কিছু দিন পর তিনি সহি-সালামতে ফিরে এলে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে আবদুল মুত্তালিব তাঁর মান্নত পুরা করেন।
জাহিলী যুগে তিনি ছিলেন কুরাইশদের একজন প্রতাপশালী রঈস। পুরুষানুক্রমে খানায়ে কা’বার রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব লাভ করেন।
রাসূলুল্লাহ সা. নবুওয়াত লাভ করলেন। মক্কায় প্রকাশ্যে তিনি তাওহীদের দাওয়াত দিতে লাগলেন। হযরত আব্বাস যদিও দীর্ঘ দিন যাবত প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেননি, তবে তিনি এ দাওয়াতের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এ কারণে মদীনার বাহাত্তর জন্য আনসার হজ্জের মওসুমে মক্কায় গিয়ে মিনার এক গোপন শিবিরে যে দিন রাসূলুল্লাহকে সা. মদীনায় হিজরাতের আহ্বান জানান এবং তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন, সেই গোপন বৈঠকেও হযরত আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। ইতিহাসে এ বাইয়াতকে আকাবার দ্বিতীয় শপথ বলা হয়। এ উপলক্ষে তিনি উপস্থিত মদীনাবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেনঃ ‘খাযরাজ কাওমের লোকেরা! আপনাদের জানা আছে, মুহাম্মাদ সা. স্বীয় গোত্রের মধ্যে সম্মান ও মর্যাদার সাথেই আছেন। শত্রুর মুকাবিলায় সর্বক্ষণ আমরা তাঁকে হিফাজত করেছি। এখন তিনি আপনাদের নিকট যেতে চান। যদি আপনারা জীবন পণ করে তাঁকে সহায়তা করতে পারেন তাহলে খুবই ভালো কথা। অন্যথায় এখনই সাফ সাফ বলে দিন।’ জবাবে মদীনাবাসীগণ পরিপূর্ণ সহায়তায় আশ্বাস দান করেন। এর অল্পকাল পরেই রাসূলুল্লাহ মদীনায় হিজরাত করেন।
মক্কার কুরাইশদের চাপের মুখে বাধ্য হয়ে তিনি কুরাইশ বাহিনীর সংগে বদর যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. অবহিত ছিলেন, এ কারণে তিনি সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘যুদ্ধের সময় আব্বাস বা বনু হাশিমের কেউ সামনে পড়ে গেলে তাদের হত্যা করবে না। কারণ, জোরপূর্বক তাদের রণক্ষেত্রে আনা হয়েছে।’
বদর যুদ্ধে অন্যান্য কুরাইশ মুশরিকদের সাথে আব্বাস, আকীল ও নাওফিল ইবন হারিস মুসলমানদের হাতে বন্দী হন। ঘটনাক্রমে, আব্বাসকে এত শক্তভাবে বাঁধা হয় যে, ব্যথায় তিনি কঁকাতে থাকেন। তাঁর সে কঁকানি রাসূলুল্লাহর সা. রাতের আরামে বিঘ্ন ঘটায়। একথা সাহাবায়ে কিরাম অবগত হলে তাঁরা আব্বাসের বাঁধন ঢিলা করে দেন। আব্বাস কঁকানি বন্ধ করে দিলেন। রাসূল সা. জিজ্ঞেস করলেনঃ কঁকানি শোনা যায় না কেন? বলা হলোঃ বাঁধন ঢিলা করে দেওয়া হয়েছে। তখুনি রাসূল সা. নির্দেশ দিলেন সকল বন্দীর বাঁধন ঢিলা করে দাও।’
বদরের যুদ্ধবন্দীদের কাছে অতিরিক্ত কাপড় ছিল না। রাসূল সা. সকলকে পরিধেয় বস্ত্র দিলেন। হযরত আব্বাস ছিলেন দীর্ঘদেহী। কোন ব্যক্তির জামা তাঁর গায়ে লাগছিল না। আব্বাসের মত দীর্ঘদেহী ছিল মুনাফিক আবদুল্লাহ বিন উবাই। সে একটি জামা আব্বাসকে দান করে। এ কারণে মুনাফিক হওয়া সত্ত্বেও আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের মৃত্যুর পর পুত্রের অনুরোধে রাসূল সা. নিজের একটি জামা তার লাশের গায়ে পরানের জন্য দান করেন। এভাবে তিনি চাচার প্রতি কৃত ইহসান পরিশোধ করেন।
বদর যুদ্ধের কয়েদীদের মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। আব্বাসের জননী ছিলেন মদীনার আনসার-গোত্র খাযরাজের কন্যা। এ কারণে এ গোত্রের লোকেরা রসূলুল্লাহর সা. নিকট নিবেদন করলো, আব্বাস আমাদের ভাগ্নে। আমরা তাঁর মুক্তিপণ মাফ করে দিচ্ছি। কিন্তু সাম্যের পরিপন্থী হওয়ায় এ প্রস্তাব আল্লাহর রাসূলের নিকট গ্রহণযোগ্য হলো না। পক্ষান্তরে আব্বাস সম্পদশালী ব্যক্তি হওয়ার কারণে রাসূল সা. তাঁর নিকট মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করেন। আব্বাস এত বেশী অর্থ আদায়ে অক্ষমতা প্রকাশ করে বলেনঃ অন্তর থেকে আমি আগেই মুসলমান হয়েছিলাম। মুশরিকরা এ যুদ্ধে অংশ নিতে আমাকে বাধ্য করেছে। রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ অন্তরের অবস্থা আল্লাহ জানেন। আপনার দাবী সত্য হলে আল্লাহ তার বিনিময় দেবেন। তবে বাহ্যিক অবস্থার বিচারে আপনাকে কোন প্রকার সুবিধা দেওয়া যাবে না। আর মুক্তিপণ আদায়ে আপনার অক্ষমতাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, আমি জানি, মক্কায় উম্মুল ফজলের নিকট আপনি মোট অংকের অর্থ রেখে এসেছেন। বিস্ময়ের সাথে আব্বাস বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম, আমি ও উম্মুল ফজল ছাড়া আর কেউ এ অর্থের কথা জানে না। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস আপনি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তিনি নিজের, ভ্রাতুষ্পুত্র আকীল ও নাওফিল ইবন হারিসের পক্ষ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে মুক্তি লাভ করেন।
আব্বাসের একটা দীর্ঘ সময় মক্কায় অবস্থান এবং প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা না দেওয়ার পশ্চাতে একা বিশেষ কারণ ছিল। তিনি সব সময় মক্কা থেকে কাফিরদের গতিবিধি রাসূলুল্লাহকে সা. অবহিত করতেন। তাছাড়া মক্কায় যেসব দুর্বল ঈমানের মুসলমান তখনো অবস্থান করছিল, তিনি ছিলেন তাদের ভরসাস্থল। এ কারণে একবার রাসূরুল্লাহর সা. নিকট হিজরাতের অনুমতি চাইলে তাঁকে এই বলে বিরত রাখেন যে, ‘আপনার মক্কায় অবস্থান করা শ্রেয়। যেভাবে আল্লাহ আমার উপর নবুওয়াত সমাপ্ত করেছেন তেমনি আপনার উপর হিজরাত সমাপ্ত করবেন।’
মক্কা বিজয়ের কিছুদিন পূর্বে হযরত আব্বাস হিজরাতের অনুমতি লাভ করেন। সপরিবারে রাসূলুল্লাহর সা. খিদমতে হাজির হয়ে প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেন এবং স্থায়ীভাবে মদীনায় বসবাস শুরু করেন। তিনি মক্কা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হুনাইন অভিযানে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে একই বাহনে আরোহী ছিলেন। তিনি বলেনঃ এ যুদ্ধে কাফিরদের জয় হলো এবং মুসলিম মুজাহিদরা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়লো, রাসূল সা. বললেন, ‘আব্বাস, তীরন্দাজদের আওয়ায দাও।’ স্বভাবগতভাবেই আমি ছিলাম উচ্চকণ্ঠ। আহ্বান জানালামঃ আইনা আসহাবুল সুমরা’- তীরন্দাজরা কোথায়? আমার এই আওয়াযে মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল। তায়েফ অবরোধ, তাবুক অভিযান এবং বিদায় হজ্জেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন।
বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর রাসূল সা. অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিন দিন অসুস্থতা বাড়তে থাকে। হযরত আলী, হযরত আব্বাস ও বনী হাশিমের অন্য লোকেরা রাসূলুল্লাহর সা. সেবার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ওফাতের দিন হযরত আলী বাড়ীর বাইরে এলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলোঃ রাসূলুল্লাহর সা. অবস্থা কেমন? যেহেতু সে দিন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল, এ কারণে তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর অনুগ্রহে একটু ভালো।’ কিন্তু হযরত আব্বাস ছিলেন অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি আলীর একটি হাত ধরে বললেনঃ ‘তুমি কী মনে করেছো? আল্লাহর কসম, তিন দিন পরেই তোমরা গোলামী করতে শুরু করবে। আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি এ রোগেই অল্প দিনের মধ্যেই রাসুলুল্লাহ সা. ইনতিকাল করবেন। আমি আবদুল মুত্তালিব খান্দানের লোকদের চেহারা দেখেই তাদের মৃত্যু আন্দাজ করতে পারি।’
ঐ দিন রাসূল সা. ইনতিকাল করেন। হযরত আলী ও বনী হাশিমের অন্যান্যদের সহযোগিতায় হযরত আব্বাস কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করেন। যেহেতু তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর সা. সম্মানিত চাচা এবং বনী হাশিমের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, এ কারণে বহিরাগত লোকেরা তাঁর নিকট এসে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করতে থাকে।
হযরত রাসূলে কারীম সা. চাচা আব্বাসকে খুব সম্মান করতেন। তাঁর সামান্য কষ্টতেও তিনি দারুণ দুঃখ পেতেন। একবার কুরাইশদের একটি আচরণ সম্পর্কে হযরত আব্বাস অভিযোগ করলে রাসূল সা. অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বললেনঃ ‘সেই সত্তার শপথ, যর হাতে আমার জীবন! যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের জন্য আপনাদের ভালবাসেনা তার অন্তরে ঈমানের নূর থাকবে না।’
আব্বাসের একটা দীর্ঘ সময় মক্কায় অবস্থান এবং প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা না দেওয়ার পশ্চাতে একা বিশেষ কারণ ছিল। তিনি সব সময় মক্কা থেকে কাফিরদের গতিবিধি রাসূলুল্লাহকে সা. অবহিত করতেন। তাছাড়া মক্কায় যেসব দুর্বল ঈমানের মুসলমান তখনো অবস্থান করছিল, তিনি ছিলেন তাদের ভরসাস্থল। এ কারণে একবার রাসূরুল্লাহর সা. নিকট হিজরাতের অনুমতি চাইলে তাঁকে এই বলে বিরত রাখেন যে, ‘আপনার মক্কায় অবস্থান করা শ্রেয়। যেভাবে আল্লাহ আমার উপর নবুওয়াত সমাপ্ত করেছেন তেমনি আপনার উপর হিজরাত সমাপ্ত করবেন।’
মক্কা বিজয়ের কিছুদিন পূর্বে হযরত আব্বাস হিজরাতের অনুমতি লাভ করেন। সপরিবারে রাসূলুল্লাহর সা. খিদমতে হাজির হয়ে প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেন এবং স্থায়ীভাবে মদীনায় বসবাস শুরু করেন। তিনি মক্কা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হুনাইন অভিযানে রাসূলুল্লাহর সা. সাথে একই বাহনে আরোহী ছিলেন। তিনি বলেনঃ এ যুদ্ধে কাফিরদের জয় হলো এবং মুসলিম মুজাহিদরা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়লো, রাসূল সা. বললেন, ‘আব্বাস, তীরন্দাজদের আওয়ায দাও।’ স্বভাবগতভাবেই আমি ছিলাম উচ্চকণ্ঠ। আহ্বান জানালামঃ আইনা আসহাবুল সুমরা’- তীরন্দাজরা কোথায়? আমার এই আওয়াযে মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল। তায়েফ অবরোধ, তাবুক অভিযান এবং বিদায় হজ্জেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন।
বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর রাসূল সা. অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিন দিন অসুস্থতা বাড়তে থাকে। হযরত আলী, হযরত আব্বাস ও বনী হাশিমের অন্য লোকেরা রাসূলুল্লাহর সা. সেবার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ওফাতের দিন হযরত আলী বাড়ীর বাইরে এলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলোঃ রাসূলুল্লাহর সা. অবস্থা কেমন? যেহেতু সে দিন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল, এ কারণে তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর অনুগ্রহে একটু ভালো।’ কিন্তু হযরত আব্বাস ছিলেন অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি আলীর একটি হাত ধরে বললেনঃ ‘তুমি কী মনে করেছো? আল্লাহর কসম, তিন দিন পরেই তোমরা গোলামী করতে শুরু করবে। আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি এ রোগেই অল্প দিনের মধ্যেই রাসুলুল্লাহ সা. ইনতিকাল করবেন। আমি আবদুল মুত্তালিব খান্দানের লোকদের চেহারা দেখেই তাদের মৃত্যু আন্দাজ করতে পারি।’
ঐ দিন রাসূল সা. ইনতিকাল করেন। হযরত আলী ও বনী হাশিমের অন্যান্যদের সহযোগিতায় হযরত আব্বাস কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করেন। যেহেতু তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর সা. সম্মানিত চাচা এবং বনী হাশিমের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, এ কারণে বহিরাগত লোকেরা তাঁর নিকট এসে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করতে থাকে।
হযরত রাসূলে কারীম সা. চাচা আব্বাসকে খুব সম্মান করতেন। তাঁর সামান্য কষ্টতেও তিনি দারুণ দুঃখ পেতেন। একবার কুরাইশদের একটি আচরণ সম্পর্কে হযরত আব্বাস অভিযোগ করলে রাসূল সা. অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বললেনঃ ‘সেই সত্তার শপথ, যর হাতে আমার জীবন! যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের জন্য আপনাদের ভালবাসেনা তার অন্তরে ঈমানের নূর থাকবে না।’
একবার রাসূল সা. এক বৈঠকে আবু বকর ও উমারের রা. সাথে কথা বলছিলেন। এমন সময় আব্বাস উপস্থিত হলেন। রাসূল সা. তাঁকে নিজের ও আবু বকরের মাঝখানে বসালেন এবং কণ্ঠস্বর একটু নীচু করে কথা বলতে লাগলেন। আব্বাস চলে যাওয়ার পর আবু বকর রা. এমনটি করার কারণ জেজ্ঞেস করলেন। রাসূল সা. বলেনঃ ‘মর্যাদাবান ব্যক্তিই পারে মর্যাদাবান ব্যক্তির মর্যাদা দিতে।’ তিনি আরো বলেনঃ ‘জিবরীল আমাকে বলেছেন, আব্বাস উপস্থিত হলে আমি যেন আমার স্বর নিচু করি, যেমন আমার সামনে তোমাদের স্বর নিচু করার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন।’
হযরত রাসূলে করীমের সা. পর পরবর্তী খুলাফায়ে রাশেদীন হযরত আব্বাসের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছেন। হযরত উমার ও হযরত উসমান রা. ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাঁর সম্মানার্থে ঘোড়া থেকে নেমে পড়তেন এবং বলতেনঃ ‘ইনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহর সা. চাচা।’ হযরত আবু বকর রা. একমাত্র আব্বাসকেই নিজে আসন থেকে সরে গিয়ে স্থান করে দিতেন।
হযরত আব্বাস ৩২ হিজরীর রজব/মুহাররম মাসের ১২ তারিখ ৮৮ (অষ্টাশি) বছর বয়সে ইনতিকাল করেন। তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রা. জানাযার নামায পড়ান এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. কবরে নেমে তাঁকে সমাহিত করেন। মদীনার বাকী গোরস্তানে তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ৩২ বছর এবং জাহিলী যুগে ৫৬ বছর জীবন লাভ করেন।
জাহিলী যুগে হযরত আব্বাস রা. অত্যন্ত সম্পদশালী ছিলেন। এ কারণে বদর যুদ্ধের সময় রাসূল সা. তাঁর নিকট থেকে মুক্তিপণ স্বরূপ বিশ উকিয়া স্বর্ণ গ্রহণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল তাঁর জীবিকার উৎস। সুদের কারবারও করতেন। মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত এ কারবার চালু ছিল। দশম হিজরীর বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে রাসূল সা. বলেনঃ ‘আজ থেকে আরবের সকল প্রকার সুদী কারবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং সর্বপ্রথম আমি আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিবের সুদী কারবার রহিত ঘোষণা করছি।’
সুদের কারবার বন্ধ হওয়ার পর রাসূল সা. গণীমতের এক পঞ্চমাংশ ও ফিদাক বাগিচার আমদানী থেকে তাঁকে সাহায্য করতেন। রাসূলুল্লাহর সা. ওফাতের পর তিনি ও হযরত ফাতিমা প্রথম খলীফার নিকট রাসূলুল্লাহর সা. উত্তরাধিকার দাবী করেন। নবীরা কোন উত্তরাধিকার রেখে যান না- এ সম্পর্কিত রসূলুল্লাহর সা. একটি বাণী হযরত আবু বকরের রা. মুখ থেকে শোনার পর তাঁরা নীরব হয়ে যান।
হযরত আব্বাস ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। অতিথি পরায়ণ ও দয়ালু। হযরত সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস রা. বলেনঃ ‘আব্বাস হলেন আল্লাহর রাসূলের চাচা, কুরাইশদের মধ্যে সর্বাধিক দরাজ হস্ত এবং আত্মীয় স্বজনের প্রতি অধিক মনোযোগী’। তিনি ছিলেন কোমল অন্তর বিশিষ্ট। দুআর জন্য হাত উঠালেই চোখ থেকে অশ্রুর বন্যা বয়ে যেত। এ কারণে তাঁর দুআয় এক বিশেষ আছর পরিলক্ষিত হতো।’
রাসূলুল্লাহ সা. আব্বাস রা. ও তাঁর সন্তানদের জন্য দুআ করেছেন। তিনি তাঁদের সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অপরাধের মাগফিরাত কামনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. থেকে তিনি বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর থেকে বহু সাহাবী ও তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হযরত আব্বাসের মধ্যে কাব্য প্রতিভাও ছিল। হুনাইন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তিনি একটি কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। তার কয়েকটি পংক্তি ‘আল-ইসতিয়াব’ ও ইবন ইসহাকের সীরাত গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে।
হযরত রাসূলে করীমের সা. পর পরবর্তী খুলাফায়ে রাশেদীন হযরত আব্বাসের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছেন। হযরত উমার ও হযরত উসমান রা. ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাঁর সম্মানার্থে ঘোড়া থেকে নেমে পড়তেন এবং বলতেনঃ ‘ইনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহর সা. চাচা।’ হযরত আবু বকর রা. একমাত্র আব্বাসকেই নিজে আসন থেকে সরে গিয়ে স্থান করে দিতেন।
হযরত আব্বাস ৩২ হিজরীর রজব/মুহাররম মাসের ১২ তারিখ ৮৮ (অষ্টাশি) বছর বয়সে ইনতিকাল করেন। তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রা. জানাযার নামায পড়ান এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. কবরে নেমে তাঁকে সমাহিত করেন। মদীনার বাকী গোরস্তানে তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ৩২ বছর এবং জাহিলী যুগে ৫৬ বছর জীবন লাভ করেন।
জাহিলী যুগে হযরত আব্বাস রা. অত্যন্ত সম্পদশালী ছিলেন। এ কারণে বদর যুদ্ধের সময় রাসূল সা. তাঁর নিকট থেকে মুক্তিপণ স্বরূপ বিশ উকিয়া স্বর্ণ গ্রহণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল তাঁর জীবিকার উৎস। সুদের কারবারও করতেন। মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত এ কারবার চালু ছিল। দশম হিজরীর বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে রাসূল সা. বলেনঃ ‘আজ থেকে আরবের সকল প্রকার সুদী কারবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো এবং সর্বপ্রথম আমি আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিবের সুদী কারবার রহিত ঘোষণা করছি।’
সুদের কারবার বন্ধ হওয়ার পর রাসূল সা. গণীমতের এক পঞ্চমাংশ ও ফিদাক বাগিচার আমদানী থেকে তাঁকে সাহায্য করতেন। রাসূলুল্লাহর সা. ওফাতের পর তিনি ও হযরত ফাতিমা প্রথম খলীফার নিকট রাসূলুল্লাহর সা. উত্তরাধিকার দাবী করেন। নবীরা কোন উত্তরাধিকার রেখে যান না- এ সম্পর্কিত রসূলুল্লাহর সা. একটি বাণী হযরত আবু বকরের রা. মুখ থেকে শোনার পর তাঁরা নীরব হয়ে যান।
হযরত আব্বাস ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। অতিথি পরায়ণ ও দয়ালু। হযরত সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস রা. বলেনঃ ‘আব্বাস হলেন আল্লাহর রাসূলের চাচা, কুরাইশদের মধ্যে সর্বাধিক দরাজ হস্ত এবং আত্মীয় স্বজনের প্রতি অধিক মনোযোগী’। তিনি ছিলেন কোমল অন্তর বিশিষ্ট। দুআর জন্য হাত উঠালেই চোখ থেকে অশ্রুর বন্যা বয়ে যেত। এ কারণে তাঁর দুআয় এক বিশেষ আছর পরিলক্ষিত হতো।’
রাসূলুল্লাহ সা. আব্বাস রা. ও তাঁর সন্তানদের জন্য দুআ করেছেন। তিনি তাঁদের সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অপরাধের মাগফিরাত কামনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. থেকে তিনি বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর থেকে বহু সাহাবী ও তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হযরত আব্বাসের মধ্যে কাব্য প্রতিভাও ছিল। হুনাইন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তিনি একটি কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। তার কয়েকটি পংক্তি ‘আল-ইসতিয়াব’ ও ইবন ইসহাকের সীরাত গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে।
No comments: