কুছুফ ও খুছুফের নামায(গওহর)
কুছুফ ও খুছুফের নামায(গওহর)
কুছুফ ও খুছুফের নামায(গওহর)
(কুছুফ বলে সূর্যগ্রহণকে এবং খুছুফ বলে চন্দ্রগ্রহণকে। সূর্যগ্রহণের সময় যে নামায পড়া হয়, তাহাকে ‘ছালাতুল কুছুফ’ এবং চন্দ্রগ্রহণের সময় যে নামায পড়া হয় তাহাকে ‘ছালাতুল খুছুফ’ বলে।)
১।মাসআলাঃ সূর্যগ্রহণের সময় দুই রাকা’আত নামায পড়া সুন্নত। (শুধু ‘আল্লাহর ওয়াস্তে দুই রাকাআত কুছুফের নামায পড়িতেছি’ বলিয়া নিয়ত করিবে।)
২।মাসআলাঃ সূর্যগ্রহণের সময় জমা’আতের সঙ্গে পড়িতে হয়। ইমামতের হকদার তৎকালীন মুসলমান বাদশাহ বা তাঁহার নিযুক্ত ব্যক্তি। এক রেওয়ায়ত অনুসারে প্রত্যেক মসজিদের ইমাম নিজ নিজ মসজিদের জমা’আত করিয়া সূর্যগ্রহণের নামায পড়াইবেন। (যদি ইমাম না পাওয়া যায়, তবে প্রত্যেকে একা একা পড়িবে এবং স্ত্রীলোক নিজ গৃহে পৃথক পৃথক পড়িবে।)
৩।মাসআলাঃ কুছুফের নামাযের জন্য আযান বা এক্বামত নাই, পাড়ার লোকগণকে জমা করিবার জন্য [আরবি] (‘নামাযে চল’ ‘নামাযে চল’) বলিয়া একজন লোক উচ্চঃস্বরে ঘোষণা করিবে।
৪।মাসআলাঃ ছালাতুল কুছুফের মধ্যে সূরা বাক্বারার ন্যায় অনেক লম্বা কেরাআত পড়া এবং রুকূ সজদা অনেক দীর্ঘ করিয়া করা সুন্নত। কেরাআত চুপে চুপে পড়িতে হইবে।
৫।মাসআলাঃ নামায শেষে ইমাম ক্বেবল রোখ হইয়া বসিয়া বা লোকদের দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইয়া যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্যের গ্রহণ সম্পূর্ণ না ছুটে, ততক্ষণ পর্যন্ত হাত উঠাইয়া দো’আ করিতে থাকিবে (এবং নিজেদের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিতে থাকিবে,) মুক্তাদিগণ ‘আমীন’ বলিতে থাকিবে। ফলকথা, গ্রহণ না ছুটা পর্যন্ত (দুনিয়ার কাজকর্ম বন্ধ রাখিয়া) নামায, দো’আ ইত্যাদি এবাদত-বন্দেগী এবং আল্লাহর দরবারে কাঁদাকাটায় লিপ্ত থাকা উচিত। অবশ্য যদি গ্রহণ ছুটিবার পূর্বে সূর্য অস্ত যাইতে থাকে বা কোন ফরয নামাযের ওয়াক্ত হয়, তবে দো’আ ছাড়িয়া নামায পড়িয়া লইবে।
৬।মাসআলাঃ চন্দ্রগ্রহণের সময়ও (অন্ততঃ) দুই রাকা’আত নামায পড়া সুন্নত। কিন্তু চন্দ্রগ্রহণের নামাযের জন্য জমা’আত করা বা মসজিদে যাওয়া সুন্নত নহে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়িতে পৃথক পৃথকভাবে নামায পড়িবে।
৭।মাসআলাঃ এইরূপ যখনই কোন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে, কোন বিপদ বা বালা মুছীবত আসে, তখন নামায পড়া সুন্নত। যেমন, ঝড়ের সময়, ভূমিকম্পের সময়, বজ্রপাতের সময়, যখন অনেক বেশী তারা ছুটে, শিলা বা বরফ পড়ে, অতিরিক্ত বৃষ্টি হইতে থাকে, দেশে কলেরা, বসন্ত বা গ্লেগ ইত্যাদি মহামারী আসে বা শত্রু ঘিরিয়া নয়। কিন্তু এই সব নামাযের জন্য জমা’আত নাই, প্রত্যেকেই নিজে নিজে পৃথকভাবে নামায পড়িবে, (উভয় জাহানের বিপদ উদ্ধারের জন্য দো’আ করিবে এবং কৃত গোনাহর জন্য মাফ চাহিবে।) হাদীস শরীফে আছে, যখনই কোন বিপদ বা মুছীবত আসিত রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনই নামাযে মশগুল হইয়া যাইতেন (এবং আল্লাহর দিকে রুজু হইয়া দো’আ করিতেন।)
৮।মাসআলাঃ এখানে যত প্রকার নামাযের কথা বর্ণিত হইল তাহা ছাড়াও নফল নামায যত বেশী পড়িবে ততই বেশী ছওয়াব পাইবে এবং মর্তবা বাড়িবে। বিশেষতঃ যে যে সময় এবাদত করার জন্য রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহ প্রদান করিয়াছেন। যেমন, রমযানর্ শরীপের শেষ দশ রাত্রের বে-জোড় রাত্রসমূহে, শা’বানের (চৌদ্দই দিন গত) পনরই রাত্র ইত্যাদি। এই সব ফযীলতের সময় নফল নামায পড়িলে অনেক বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়। এই সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ হক্কানী আলেমের নিকট জানিয়া লইবেন।
No comments: