ওযূর মাসায়েল
ওযূর মাসায়েল
ওযূর তরতীবঃ
(ওযূ আরম্ভকালে প্রথমে মনকে আল্লাহর দিকে রুজু করিবে। চিন্তা করিয়া স্থির করিবে যে, কেন ওযূ করিতেছ যেমন হয়ত নামায পড়িবার জন্য ওযূ করিবে, তখন চিন্তা করিবে, নামায পড়া হইল আল্লাহর দরবারে হাযির হওয়া। আল্লাহর দরবার পাক, সে দরবারে বিনা ওযূতে যাওয়া যায় না। তাই আমি নামায পড়িবার জন্য অর্থাৎ, আল্লাহ্ পাকের দরবারে হাযির হইবার নিমিত্ত ওযূ করিতেছি। এইরূপ যদি কোরআন শরীফ পড়িবার জন্য ওযূ কর, তখন একাগ্র মনে চিন্তা করিবে যে, আমি আল্লাহর পাক কালাম কোরআন শরীফ পড়িবার জন্য ওযূ করিতেছি।)
১। মাসআলাঃ কেবলার দিকে মুখ করিয়া অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় বসিবে━যেন ওযূর পানির ছিঁটা নিজের উপর আসিতে না পারে। ━মুনিয়া
২। মাসআলাঃ বিসমিল্লাহ বলিয়া ওযূ শুরু করিবে। ━ফাতাওয়ায় হিন্দিয়া
৩। মাসআলাঃ সর্বপ্রথমে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুইবে। ━ফাতাওয়ায় হিন্দিয়া
৪, ৫, ৬। মাসআলাঃ তারপর তিনবার কুলি করিবে এবং মিসওয়াক করিবে, যদি মিসওয়াক না থাকে, তবে মোটা কাপড় বা হাতের আঙ্গুল বা অন্য কিছু দ্বারা দাঁতগুলিকে বেশ পরিস্কার করিবে। যদি রোযা না হয়, তবে গরগরা করিয়া ভালরূপে সমস্ত মুখগহ্বরে পানি পৌঁছাইবে। রোযা অবস্থায় গরগরা করিবে না। কেননা, হয়ত কিছু পানি হলকূমের মধ্যে চলিয়া যাইতে পারে। ━আলমগীরী
৭। মাসআলাঃ তারপর তিনবার নাকে পানি দিবে। বাম হাত দিয়া নাক ছাফ করিবে। রোযা অবস্থায় নাকের ভিতরে নরম অংশের উপর পানি পৌঁছাইবে না১। ━মুঃ, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া
৮। মাসআলাঃ তারপর তিনবার মাথার চুলের গোড়া হইতে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হইতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখ ভাল করিয়া উভয় হাত দিয়া ডলিয়া মলিয়া ধুইবে━যেন সব জায়গায় পানি পৌঁছে। উভয় ভ্রুর নীচেও খেয়াল করিয়া পানি পৌঁছাইবে যেন কোন স্থান শুকনা না থাকে। ━মারাকিউল ফালাহ
৯। মাসআলাঃ অতঃপর ডান হাতের কুনুইসহ ভাল করিয়া তিন বার ধুইবে। তারপর বাম হাতও ঐরূপ কনুইসহ ধুইবে। এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করাইয়া খেলাল করিবে। হাতের আংটি, চুড়ি ইত্যাদি নাড়িয়া নাড়িয়া ভালমতে পানি পৌঁছাইবে যেন একটি পশমও শুষ্ক না থাকে। ━কবীরী
১০। মাসআলাঃ তারপর সমস্ত মাথা একবার মছহে করিবে। শাহাদাত আঙ্গুল দিয়া কানের ভিতর দিক এবং বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়া বাহিরের দিক মছহে করিবে এবং হাতের আঙ্গুলের পিঠের দিক দিয়া ঘাড় মছহে করিবে, কিন্তু গলা মছহে করিবে না। কেননা গলা মছহে করা ভাল নহে; বরং নিষেধ আছে। কান মছহে করিবার জন্য নতুন পানি লইবার প্রয়োজন নাই, মাথা মছহে করার জন্য ভিজান হাত দ্বারাই মছহে করিবে। ━কবীরী, মুনিয়া
১১। মাসআলাঃ তারপর তিনবার টাখনা (ছোট গিরা) সহ উভয় পা ধুইবে। প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা ভাল করিয়া ডলিয়া মলিয়া ধুইবে। পায়ের তলা এবং গোড়ালির দিকে খুব খেয়াল রাখিবে, যেন কোন অংশ শুকনা থাকিয়া না যায়। বাম হাতের কনিষ্ঠা অঙ্গুলী নীচের দিক হইতে প্রবেশ করাইয়া পায়ের অঙ্গুলীগুলি খেলাল করিবে। ডান পায়ের কনিষ্ঠা অঙ্গুলী হইতে শুরু করিয়া বাম পায়ের কনিষ্ঠা অঙ্গুলীতে গিয়া শেষ করিবে। এই হইল ওযূ করিবার নিয়ম।
১২। মাসআলাঃ কিন্তু এই সমস্ত কাজের মধ্যে কতিপয় কাজ এমন আছে, যাহা ছুটিয়া গেলে বা তাহার কিছু বাকী থাকিলে ওযূ আদৌ হয় না; পূর্বে যেমন বে-ওযূ ছিল এখনও সেই রকম বে-ওযূই রহিল। এই রকম কাজগুলিকে ফরয বলে। আর কতিপয় কাজ এমন আছে, যাহা ছুটিয়া গেলে ওযূ হইয়া যায় বটে, কিন্তু করিলে সওয়াব মিলে, তাহা করার জন্য তাকীদও আছে। এমন কি, যদি কেহ অধিকাংশ সময়ে ছাড়িয়া দেয়, তবে সে গোনাহগার হয়। এই সব কাজকে সুন্নত বলে। আর যে-সব কাজ করিলে সওয়াব মিলে, অন্যথায় গোনাহ হয় না এবং তৎপ্রতি শরীঅতের কোনও তাকীদ নাই, এইরূপ কাজগুলিকে মোস্তাহাব বলে। ━কবীরী, রদ্দুল মোহতার
১৩। মাসআলাঃ ওযূর ফরযঃ ওযূর ফরয শুধু চারিটি কাজ━ ১। সমস্ত মুখমণ্ডল একবার ধোয়া ২। কনুইসহ এক একবার উভয় হাত ধোয়া ৩। মাথার চারি ভাগের এক ভাগ একবার মছহে করা ৪। টাখনাসহ উভয় পা একবার ধোয়া। ইহার মধ্যে যদি একটি কাজও ছুটিয়া যায় বা চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনা থাকে, তবে ওযূ হইবে না। ━মাজমাউল আনহার
১৪। মাআলাঃ ওযূর সুন্নতঃ ওযূর সুন্নত দশটি━ ১। বিসমিল্লাহ বলিয়া আরম্ভ করা। ২। কব্জীসহ দুই হাত তিন তিনবার ধোয়া ৩। কুলি করা ৪। নাকে পানি দেওয়া ৫। মেসওয়াক করা ৬। সমস্ত মাথা একবার মছহে করা ৭। প্রত্যেক অঙ্গকে তিন তিনবার করিয়া ধোয়া ৮। কান মছহে করা ৯-১০। হাত ও পায়ের আঙ্গুল খেলাল করা। এই সুন্নত এবং ফরযগুলি ব্যতীত অন্য যে কাজগুলি আছে তাহা মোস্তাহাব। ━মারাকিউল ফালাহ
১৫। মাসআলাঃ যে চারিটি অঙ্গ ধোয়া ফরয সেইগুলি ধোয়া হইয়া গেলে ওযূ হইয়া যাইবে। ইচ্ছা করিয়া ধুইয়া থাকুক বা অনিচ্ছায় ধুইয়া থাকুক, নিয়ত করিয়া থাকুক বা না করিয়া থাকুক। যেমন, গোছলের সময় ওযূ না করিয়া সমস্ত শরীরে পানি ঢালিয়া দিল বা পুকুরের মধ্যে পড়িয়া গেল বা বৃষ্টিতে ভিজিল, ইহাতে যদি এই চারিটি অঙ্গ পূর্ণরূপে ধোয়া হইয়া যায়, তবে ওযূ হইয়া যাইবে, কিন্তু নিয়ত না থাকার দরুন ওযূর সওয়াব পাইবে না। ━মুনইয়াহ
১৬। মাসআলাঃ উপরে লিখিত তরতীব অনুযায়ী ওযূ করাই সুন্নতঃ। কিন্তু যদি কেহ উহার ব্যতিক্রম করে, যেমন, প্রথমে পা ধুইল, তারপর মাথা মছহে করিল তারপর হাত বা অন্য কোন অঙ্গ আগে পরে ধুইল, তবুও ওযূ শুদ্ধ হইবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হইবে। ইহাতে গোনাহ হওয়ার আশঙ্কা আছে; অর্থাৎ, যদি এই রকম উল্টা ওযূ করার অভ্যাস করে, তবে গোনাহ হইবে। ━ফাতাওয়ায় হিন্দিয়া
১৭। মাসআলাঃ এইরূপ যদি বাম পা বা বাম হাত আগে ধোয়, তবুও ওযূ হইয়া যাইবে, কিন্তু মোস্তাহাবের খেলাফ হইবে। ━মারাকী
১৮। মাসআলাঃ এক অঙ্গ ধুইয়া অন্য অঙ্গ ধুইতে এত দেরী করিবে না যে, প্রথম অঙ্গ শুকাইয়া যায়। এরূপ দেরী করিলে অবশ্য ওযূ হইয়া যাইবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হইবে। ━আলমগীরী
১৯। মাসআলাঃ প্রত্যেক অঙ্গ ধুইবার সময় হাত দিয়া ঘষিয়া মাজিয়া ধোয়াও সুন্নত, যেন কোন জায়গা শুকনা না থাকে (শীতকালে মলিয়া ধোয়ার বেশী আবশ্যক; কেননা, তখন শুকনা থাকিয়া যাইবার বেশী আশঙ্কা।) ━মারাকী
২০। মাসআলাঃ নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে ওযূ করিয়া নামাযের আয়োজন করা এবং নামাযের জন্য প্রস্তুত হওয়া ভাল এবং মোস্তাহাব। ━মারাকী
২১। মাসআলাঃ একান্ত ওযর না হইলে নিজের হাতেই ওযূ করিবে, অন্যের দ্বারা পানি ঢালাইবে না। ওযূর সময় অনাবশ্যক দুনইয়াবী কথা বলিবে না; বরং প্রত্যেক অঙ্গ ধুইবার সময় বিসমিল্লাহ এবং কলেমা পড়িবে। পানি যতই বেশী থাকুক না কেন, এমন কি নদীতে ওযূ করিলেও জরুরতের বেশী পানি খরচ করিবে না; অবশ্য এত কমও খরচ করিবে না যে, অঙ্গগুলি ভালমত ধুইতে কষ্ট হয়। কোন অঙ্গ তিনবারের বেশীও ধুইবে না। মুখ ধুইবার সময় পানি বেশী জোরে মুখে মারিবে না, ফুঁক মারিয়া পানি উড়াইবে না, মুখ এবং চোখ অতি জোরের সহিত বন্ধ করিবে না। কেননা, এইসব কাজ মাকরূহ এবং নিষেধ। যদি মুখ এবং চোখ এরকম জোরে বন্ধ করিয়া রাখা হয় যাহাতে চোখের পলক বা ঠোঁটের কিছু অংশ ধোয়া হইল না, বা চোখের কোণায় পানি পৌঁছাইল না, তবে ওযূই হইবে না। ━কবীরী
২২। মাসআলাঃ আংটি, চুড়ি, বালা যদি এরকম ঢিলা হয় যে, সহজেই উহার নীচে পানি পৌঁছিতে পারে, তবুও সেগুলি নাড়াইয়া ভালরূপে খেয়াল করিয়া উহার নীচে পানি পৌঁছান মোস্তাহাব। আর যদি ঢিলা না হয় এবং পানি না পৌঁছিবার আশঙ্কা থাকে, তবে সেগুলিকে ভালরূপে নাড়িয়া চাড়িয়া নীচে পানি পৌঁছান ওয়াজিব। নাকের নথ চুঙ্গিরও এই হুকুম যে, যদি ছিদ্র ঢিলা হয়, তবে নাড়িয়া পানি পৌঁছান মোস্তাহাব; আর যদি ছিদ্র আটা হয়, তবে মুখ ধুইবার সময় নথ, বালি ভালরূপে ঘুরাইয়া পানি পৌঁছান ওয়াজিব। ━কবীরী
২৩। মাসআলাঃ নখের ভিতরে আটা জমিয়া (অথবা কোন স্থানে চুন ইত্যাদি) শুকাইয়া থাকিলে ওযূর সময় যদি তাহার নীচে পানি না যায়, তবে ওযূ হইবে না, যখন মনে আসে এবং আটা দেখে, তখন আটা (ও চুন ইত্যাদি) ছাড়াইয়া তথায় পানি ঢালিয়া দিবে (সম্পূর্ণ ওযূ দোহরাইবে না)। পানি ঢালার পূর্বে নামায পড়িয়া থাকিলে সেই নামায দোহরাইয়া পড়িতে হইবে। ━গুনইয়া পৃঃ ৪৬
২৪। মাসআলাঃ কপালে ও মাথায় আফশান (এবং নখে নখ-পালিশ) ব্যবহার করিলে তাহার আটা উঠাইয়া ধুইতে হইবে, নতুবা ওযূ বা গোসল কিছুই হইবে না।
২৫। মাসআলাঃ ওযূ শেষে একবার সুরা-ক্বদর এবং এই দোআ পড়িবে━
(আরবি)
অর্থ━ আয় আল্লাহ্! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর, পবিত্র লোকদের অন্তর্ভূক্ত কর, তোমার নেক বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত কর এবং ঐ সকল লোকের অন্তর্ভূক্ত কর, রোজ হাশরে যাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা চিন্তিতও হইবে না। ━কবীরী
২৬। মাসআলাঃ ওযূ করার পর দুই রাকাআত তাহিয়্যাতুল ওযূ নামায পড়া ভাল। হাদীস শরীফে ইহার অনেক ফযীলত বর্ণিত আছে। ━কবীরী
২৭। মাসআলাঃ এক ওয়াক্তের নামাযের জন্য ওযূ করিয়াছে, সে ওযূ এখনও টুটে নাই, ইতিমধ্যে অন্য নামাযের ওয়াক্ত হইল, এখন সেই ওযূ দিয়াই এই নামায পড়িতে পারে। কিন্তু নতুন ওযূ করিলে সওয়াব অনেক বেশী পাইবে।
২৮। মাসআলাঃ একবার ওযূ করিয়াছে এখনও সেই ওযূ টুটে নাই, অন্য এবাদতও সেই ওযূর দ্বারা করে নাই, এখন পুনঃ ওযূ করা মাকরূহ এবং নিষেধ। সুতরাং গোসলের সময় ওযূ করিয়া থাকিলে সেই ওযূর দ্বারাই নামায পড়িবে; সে ওযূ না টুটা পর্যন্ত পুনঃ ওযূ করিবে না। যদি দুই রাকাআত নামাও ঐ ওযূর দ্বারা পড়িয়া থাকে, তবে আবার ওযূ করিলে কোন কষতি নাই; বরং ওযূ করিলে বেশী সওয়াব পাইবে। ━মারাকী
২৯। মাসআলাঃ হাত পা কাটিয়া গিয়াছে এবং সেখানে ঔষধ লাইয়াছে ঔষধ ছাড়াইয়া ওযূ করিলে ক্ষতি হয়। এখন যদি সেই ঔষধ ছাড়াইয়া শুধু উপর দিয়া পানি ঢালিয়া লয়, তবও ওযূ হইয়া যাইবে। ━ছগীরী
৩০। মাসআলাঃ ওযূ করিবার সময় হয়ত পায়ের গোড়ালী বা অন্য কোন জায়গায় পানি পৌঁছে নাই, ওযূ করিবার পর নযর পড়িয়াছে; এখন সেই জায়গা শুধু হাতে ডলিয়া দিলে ওযূ হইবে না, পানি ঢালিয়া দিতে হইবে।
৩১। মাসআলাঃ শরীরে ফোঁড়া বা অন্য কোন রোগ এই রকম আছে যে, পানি লাগিলে ক্ষতি হয়, তবে যেখানে পানি লাগিলে ক্ষতি হয়, সেখানে পানি না লাগাইয়া শুধু ভিজা হাত দিয়া মুছিয়া লইতে পারে (এইরূপ মুছিয়া লওয়াকে মছহে বলে)। আর যদি শুধু মুছিয়া লইলেও ক্ষতি হয়, তবে সে জায়গাটুকু একেবারে ছাড়িয়াও দিতে পারে। ━মারাকী
৩২। মাসআলাঃ যখমের পট্টি খুলিয়া যখমের উপরও মছহে করিলে যদি ক্ষতি হয়, বা পট্টি খুলিতে খুব কষ্ট হয়, তবে পট্টির উপরও মছহে করা চলে। এমন অবস্থা না হইলে পট্টির উপর মছহে করা দুরুস্ত হইবে না। (যদিও ধোয়া না হয়।) ━শরহে বেকায়া-১
৩৩। মাসআলাঃ সম্পূর্ণ পট্টির নীচে যদি যখম না থাকে, তবে যদি পট্টি খুলিয়া যখমের জায়গা ছাড়িয়া অন্য জায়গা ধুইতে পারে, তবে ধুইতে হইবে। আর যদি পট্টি খুলিতে না পারা যায়, তবে যখমের জায়গায় এবং যে জায়গায় যখম নাই সে জায়গাও মছহে করিয়া লইবে। ━কবীরী
৩৪। মাসআলাঃ হাড় ভাঙ্গিয়া গেলে বাঁশের চটা দিয়া যে তেকাঠিয়া বাঁধে তাহার হুকুমও পট্টিরই মত যতদিন তেকাঠি খুলিতে না পারে, তেকাঠির উপরই মছহে করিয়া লইবে এবং সিঙ্গার উপর পট্টিরও এই হুকুম, যদি যখমের উপর মচহে করিতে না পারে, তবে পট্টি খুলিয়া কাপড়ের ব্যাণ্ডিজের উপর মছহে করিবে। আর যদি খুলিবার ও বাঁধিবার লোক না পাওয়া যায়, তবে পট্টির উপরই মছহে করিবে। ━কবীরী
৩৫। মাসআলাঃ মছহে করিতে হইলে সমস্ত পট্টির উপর মছহে করা ভাল, কিন্তু অর্ধেকের বেশীর ভাগ মছহে করিলেও ওযূ হইয়া যাইবে। আর যদি সমান অর্ধেক বা কম অর্ধেক করে, তবে ওযূ আদৌ হইবে না। ━গুনইয়া
৩৬। মাসআলাঃ হঠাৎ পট্টি পড়িয়া গেল, এখনও যখম ভাল হয় নাই, তবে পট্টিই বাঁধিয়া লইবে, আর পূর্বের মছহে বাকী থাকিবে। আবার মছহে করিতে হইবে না। যদি যখম ভাল হইয়া থাকে আর পট্টি বাঁধার দরকার না থাকে, তবে মছহে টুটিয়া যাইবে, নতুন ওযূ না করিয়া শুধু ঐ স্থানটুকু ধুইয়াও নামায পড়িতে পারে। ━ফাতাওয়ায় হিন্দিয়া
১-১১ নং (বেহেশতী গওহর হইতে)
১। মাসআলাঃ পুরুষগণ ওযূর সময় তিনবার মুখমণ্ডল ধোয়ার পর দাড়ি খেলাল করিবে। অর্থাৎ, ভিজা হাতের আঙ্গুল দাড়ির মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দাড়ি ভিজাইবে। তিনবারের বেশী খেলাল করিবে না। ━দোররে মুখতার
২। মাসআলাঃ ওযূর সময় দাড়ি এবং কানের মধ্যবর্তী স্থানটুকু ধোয়া ফরয, সেখানে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক। ━শহরে তানবীরুল আবছার
৩। মাসআলাঃ ওযূর মধ্যে থুতনী ধৌত করা ফরয, যদিও তাহার উপর দাড়ি না থাকুক বা দাড়ি থাকুক। ━শহরে তানবীরুল আবছার
৪। মাসআলাঃ মুখ বন্ধ করিলে ঠোঁটের যে অংশ স্বাভাবিকভাবে বাহিরে দেখা যায়, তাহাও ওযূর মধ্যে ধোয়া ফরয। ━শামী
৫। মাসআলাঃ দাড়ি, মোচ বা ভ্রূ ঘন হওয়ার দরুন ভিতরকার চামড়া দেখা না গেলে, উহার নীচের চামড়া ধোয়া ফরয নহে; বরং ঐ দাড়িকেই চামড়ার পরিবর্তে ধরিতে হইবে এবং দাড়ির উপর দিয়া পানি বহাইয়া দিলেই ফরয আদায় হইয়া যাইবে।
৬। মাসআলাঃ দাড়ি, মোচ ও ভ্রূ যদি এত হালকা হয় যে, নীচের চামড়া দেখা যায়, তবে মুখমণ্ডলের সীমার মধ্যে দাড়ি ধোয়াই ফরয উহার বাহিরের দাড়ি ধোয়া ফরয নহে।
৭। মাসআলাঃ যদি কাহারও মলদ্বারের ভিতরের অংশ দ্বার হইতে বাহির হইয়া আসে (ইহা এক প্রকার রোগ বিশেষ), তবে ওযূ টুটিয়া যাইবে। ━শামী। চাই সে অংশ পুনরায় নিজে নিজেই ভিতরে প্রবেশ করুক কিংবা হা বা কাপড়ের সাহায্যে ভিতরে প্রবেশ করান হউক।
৮। মাসআলাঃ যদি বিনা উত্তেজনায় (যেমন ভারী কোন বোঝা উঠালে বা উপর হইতে নীচে পড়িয়া গেলে তাহাতে) মনি বাহির হয় এমতাবস্থায় গোসল ফরয হইবে না বটে, কিন্তু ওযূ টুটিয়া যাইবে। ━কাযীখান
৯। মাসআলাঃ (বেহুশ বা পাগল হইলে ওযূ টুটিয়া যাইবে, কিন্তু) যদি মস্তিষ্ক সামান্য পরিমাণে বিকৃত হয় এবং তাহাতে বেহুশ বা পাগল না হয়, তবে ওযূ টুটিবে না।
১০। মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে তন্দ্রা অবস্থায় উচ্চ হাসিলে ওযূ যাইবে না।
১১। মাসআলাঃ জানাযার নামায ও তেলাওয়াতের সজদার সময় উচ্চ হাস্য করিলে বালেগ ব্যক্তিরও ওযূ নষ্ট হইবে না, না-বালেগ ব্যক্তিরও না। ━মুনিয়া
No comments: