বে-গোছল অবস্থার হুকুম
বে-গোছল অবস্থার হুকুম
বে-গোছল অবস্থার হুকুম
১। মাসআলাঃ যাহার উপর গোছল ফরয হইয়াছে, বে-গোছল অবস্থায় তাহার কোরআন শরীফ স্পর্শ করা, কোরআন শরীফ পাঠ করা, মসজিদে প্রবেশ করা হারাম। অর্থাৎ, জানাবাতের অব্স্থায় এবং হায়েয-নেফাসের অবস্থায় কোরআন শরীফ পাঠ করা, স্পর্শ করা, মসজিদে প্রবেশ করা হারাম; অবশ্য যদি কাহারও মসজিদে পা রাখিবার একান্ত প্রয়োজন হয়, যেমন হয়ত মসজিদের হুজরা হইতে বাহির হইবার পথই মসজিদের ভিতর দিয়া, তাছাড়া অন্য কোন পথ নাই, অথবা কেহ হয়ত অন্য কোথাও জায়গা না পাইয়া ঠেকাবশতঃ মসজিদে নিজের বিছানায় শুইয়াছিল, রাত্রে এহতেলাম হইয়া গিয়াছে, তখন সঙ্গে সঙ্গে তায়াম্মুম করিয়া বাহিরে গিয়া গোছল করিবে। ২। মাসআলাঃ ঈদাগাহ, খানক্বাহ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ইত্যাদিতে বিনা গোছলে প্রবেশ করা অথবা কোন মুসলমানের সহিত মোলাকাত বা মোছাফাহা করা হারাম নহে। ৩। মাসআলাঃ হায়েয এবং নেফাছ অবস্থায় সহবাস করা হারাম এবং স্বামীর জন্যও নিজ স্ত্রীর নাভী হইতে হাঁটু পর্যন্ত দেখা বা স্পর্শ করা হারাম। ৪। মাসআলাঃ হায়েয-নেফাছের অবস্থার স্ত্রীর হাতের পানি পাক; একত্রে খাওয়া বা এক গ্লাসের পানি পান করা বা এক সঙ্গে ভাত খাওয়া বা চুম্বন করা বা কাপড়ের উপর দিয়া আলিঙ্গন করা বা নাভীর উপরের শরীর বা হাঁটুর নীচের শরীর স্পর্শ করা বা কাপড় আঁটিয়া পরিয়া এক বিছানায় শয়ন করা নাজায়েয নহে; বরং নাজায়েয মনে করা গুনাহ। এই অবস্থায় আল্লাহর কালাম পড়া নাজায়েয; কিন্তু কলেমা শরীফ বা দুরূদ শরীফ পড়া, আল্লাহর যিকির করা নাজায়েয নহে। ৫। মাসআলাঃ ঘুম হইতে উঠিয়া যদি পুরুষাঙ্গকে উত্তেজিত অবস্থায় পায় এবং স্বপ্নদোষ না হইয়া থাকে শুধু পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ কিছু মযী পাওয়া যায়, কাপড়ে বা শরীরে কোন দাগ বা ভিজা না পাওয়া যায়, তবে গোছল ফরয হইবে না। আর যদি কাপড়ে বা শরীরে দাগ বা ভিজা পায় তবে গোছল ফরয হইবে। ৬। মাসআলাঃ স্বামী-স্ত্রী উভয়ে এক পরিস্কার বিছানায় শুইয়াছিল। ঘুম হইতে উঠিয়া বিছানায় দাগ দেখিতে পাইল, কিন্তু কাহারুও স্বপ্নদোষের কতা মনে নাই বা কাহার মনী তাহাও ঠিক করিতে পারে না, এমতাবস্থায় উভয়ের গোছল করিতে হইবে। ৭। মাসআলাঃ ফরয গোছল আদায়কালে যদি বেপর্দা না হইয়া কোন উপায় না থাকে তবে পুরুযষ সমাজে পুরুষ এবং স্ত্রী সমাজে স্ত্রী বেপর্দা হইয়া গোছল করিবে। কিন্তু পুরুষ সমাজে স্ত্রী বা স্ত্রী সমাজে পুরুষ উলঙ্গ হইবে না, তখন তায়াম্মুম করিবে।
বে-ওযূ অবস্থার মাসায়েল
১। মাসআলাঃ বিনা ওযূতে কোরআন শরীফ অথবা ছিপারা স্পর্শ করা মকরূহ তাহরীমী। এরূপে কোরআন অথবা ছিপারার কোন পাতা এবং জিলদ স্পর্শ করাও মকরূহ তাহরীমী। পাতার যে যে স্থানে লেখা না থাকে সে সে স্থানে স্পর্শ করাও মাকরূহ তাহরীমী। কিন্তু অন্য কোন কিতাবের কোন পাতায় যদি কোরআনের কোন আয়াত অথবা আয়াতের অংশ লেখা থাকে, তবে কোরআনের আয়াতটুকু স্পর্শ করা জায়েয নহে; সেইটুকু বাদ দিয়া অন্য জায়গা স্পর্শ করা জায়েয আছে। ২। মাসআলাঃ বিনা ওযূতে কোরআনের আয়াত স্পর্শ করা যেমন মাকরূহ তদ্রুপ হাতের দ্বারা লেখাও মাকরূহ। ৩। মাসআলাঃ না-বালেগ ছেলে-মেয়েরা যদিও মোকাল্লাফ নহে, কিন্তু তাহাদিগকেও ওযূ করিয়া ছিপারা কোরআন শরীফ ধরিতে শিক্ষা দেওয়া উচিত এবং ওযূ টুটিয়া গেলে পুনরায় ওযূ করার তালীম দেওয়া উচিত। ৪। মাসআলাঃ হাদীস, তফসীর, ফেকাহ ও তাসাওওফের কিতাব ওযূ করিয়া ধরাই উত্তম। কিন্তু এই সব কিতাবে কোরআনের আয়াত লেখা থাকিলে তাহাও বিনা ওযূতে স্পর্শ করিলে গোনাহ হইবে, তাছাড়া অন্য জায়গা স্পর্শ করিলে গোনাহ হইবে, তাছাড়া অন্য জায়গা স্পর্শ করিলে গোনাহ হইবে না, আদবের খেলাফ হইবে। ৫। মাসআলাঃ ইঞ্জীল, তৌরাত ইত্যাদি মনছূখ আসমানী কিতাবগুলিও বিনা ওযূতে স্পর্শ করা দুরুস্ত নহে। ৬। মাসআলাঃ ওযূ করার পর যদি সন্দেহ হয় যে, কোন একটি অঙ্গ যেন ধোয়া হয় নাই, তবে সন্দেহ দূর করিবার জন্য সেই অঙ্গটি ধুইয়া লইলেই চলিবে। কিন্তু যদি কাহারও প্রায়ই অনর্থক এইরূপ অছঅছা হয়, তবে সে অছঅছার কোন এতেবার করা উচিত নহে। ওযূ ঠিক হইয়াছে মনে করা উচিত। ৭। মাসআলাঃ মসজিদের ভিতর ওযূ-গোছলের পানি অথবা কুলির পানি ফেলা দুরুস্ত নহে। ৮। মাসআলাঃ পেশাব-পায়খানার পর অথবা বায়ু নির্গত হইলে অথবা ঘুম হইতে উঠিয়া তৎক্ষণাৎ ওযূ করিয়া লওয়া ভাল; কিন্তু না করিলে গোনাহগার হইবে না।
No comments: