Breaking News
recent

হায়েযের আহকাম

হায়েযের আহকাম
১। মাসআলাঃ হায়েযের মুদ্দতের মধ্যে ফরয, নফল কোন রকম নামায পড়া দুরুস্ত নহে এবং রোযা রাখাও দুরুস্ত নহে। শুধু এতটুকু পার্থক্য যে, হায়েযের মুদ্দতের মধ্যে যত ওয়াক্ত নামায আসে সব মাফ হইয়া যায়, তাহার আর ক্বাযাও করিতে হয় না। কিন্তু যে কয়টি রোযা ছুটিয়া যায়, পরে তাহার ক্বাযা করিতে হয়।
২। মাসআলাঃ তবে ওয়াক্তের ফরয নামাযের মধ্যেই যদি হায়েয আসিয়া পড়ে, ঐ নামায মাফ হইয়া যাইবে। পাক হওয়ার পর ক্বাযা করিতে হইবে না। অবশ্য যদি নফল বা সুন্নত নামাযের মধ্যে হায়েয আসে, তবে সে নামাযের পুনরায় ক্বাযা পড়িতে হইবে। এইরূপে রোযার মধ্যে যদি হায়েয আসে, এমন কি যদি মাত্র সামান্য বেলা থাকিতেও হায়েয আসে, তবুও সে রোযার ক্বাযা করিতে হইবে। এইরূপ অবস্থা হইলে নফল রোযারও ক্বাযা করিতে হইবে।
৩। মাসআলাঃ ওয়াক্তের নামায এখনও পড়ে নাই, কিন্তু নামায পড়িবার মত ওয়াক্ত এখনও আছে, এমন সময় যদি হায়েয দেখা যায়, তবে ঐ ওয়াক্তের নামায মাফ হইয়া যাইবে।
৪। মাসআলাঃ হায়েযের মুদ্দতের মধ্যে স্ত্রীসঙ্গম জায়েয নহে; কিন্তু এক সঙ্গে খাওয়া, বসা, পাক করা, এক বিছানায় শয়ন (চুম্বন ও আলিঙ্গন) জায়েয আছে। (হায়েয অবস্থায় স্ত্রীসঙ্গম করিলে যে পাপ হয়, তাহা হইবে আত্মরক্ষা করিবার মত সংযম যদি স্বামীর না থাকে, তবে তাহার চুম্বন ও আলিঙ্গন করাও উচিত নহে।)
৫। মাসআলাঃ একজন মেয়েলোকের পাঁচ দিন বা নয় দিন হায়েয থাকার নিয়ম ছিল। নিয়ম মত ঋতুস্রাব হইয়া রক্ত বন্ধ হইয়া গিয়াছে। রক্ত বন্ধ হওয়া মাত্রই তাহার উপর গোছল করা ফরয হইবে। গোছল করার পূর্বে সহবাস জায়েয হইবে না। অবশ্য যদি কোন কারণবশতঃ গোছল করিতে না পারে এবং এত পরিমাণ সময় অতিবাহিত হইয়া যায়, তাহাতে এক ওয়াক্ত নামাযের ক্বাযা তাহার যিম্মায় ফরয হইয়া পড়ে, তখন সহবাস জায়েয হইবে, ইহার পূর্বে নহে।
৬। মাসআলাঃ যে মেয়েলোকের পাঁচ দিন হায়েয আসার নিয়ম আছে, তাহার যদি এক মাসে চারি দিন রক্ত দেখা দিয়া বন্ধ হইয়া যায়, তবে রক্ত বন্ধ হওয়া মাত্র গোছল করিয়া নামায পড়া ওয়াজিব। কিন্তু পাঁচ দিন পুরা না হওয়া পর্যন্ত সহবাস করা জায়েয হইবে না। কেননা, হয়ত আবার রক্ত দেখা দিতে পারে।
৭। মাসআলাঃ যদি দশ দিন পুরা ঋতুস্রাব হইয়া হায়েয বন্ধ হয়, তবে গোছলের পূর্বেও সহবাস করা জায়েয হইবে।
৮। মাসআলাঃ যদি এক দিন বা দুই দিন রক্ত দেখা দিয়া বন্ধ হইয়া যায়, তবে গোছল করা ফরয নহে, ওযূ করিয়া নামায পড়িবে, কিন্তু সহবাস করা জায়েয হইবে না। তারপর যদি পনর দিন পাক থাকার আগে আবার রক্ত দেখা দেয়, তবে বুঝা যাইবে যে, উহা হায়েযের রক্ত ছিল। অতএব, হায়েযের কয়দিন বাদ দিয়া এখন গোছল করিয়া নামায পড়িবে। আর যদি পুরা পনর দিন পাক থাকিয়া থাকে, তবে বুঝা যাইবে যে, উহা এস্তেহাযার রক্ত ছিল। অতএব, এক দিন বা দুই দিন রক্ত দেখার কারণে যে কয় ওয়াক্ত নামায পড়ে নাই, তাহার ক্বাযা পড়িতে হইবে।
৯। মাসআলাঃ কোন মেয়েলোক তিন দিন হায়েয আসার নিয়ম ছিল। এক মাসে তাহার এইরূপ অবস্থা হইলো যে, তিন দিন পুরা হইয়া যাওয়া সত্ত্বেও রক্ত বন্ধ হইল না। এইরূপ অবস্থা হইলে তাহার তখন গোছলও করিতে হইবে না, নামাযও পড়িতে পারিবে না। যদি পুরা দশ দিনের মাথায়, অথবা তার চেয়ে কমে রক্ত বন্ধ হয়, তবে এইসব কয় দিনের নামায মাফ থাকিবে, ক্বাযা পড়িতে হইবে না। মনে করিতে হইবে যে, নিয়মের পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে। অতএব, এই কয় দিনই হায়েযের মধ্যে গণ্য হইবে। আর যদি দশ দিনের পরও রক্ত জারী থাকে, তবে এখন বুঝা যাইবে যে, হায়েয মাত্র তিন দিন ছিল, বাকী সব এস্তেহাযা ছিল। অতএব দশ দিন শেষ হওয়ার পর গোছল করিবে এবং রক্ত জারী থাকা সত্ত্বেও নামায পড়িবে এবং গত সাত দিনের নামায ক্বাযা পড়িতে হইবে।
১০। মাসআলাঃ যদি দশ দিনের কম হায়েয হয় এবং এমন সময় রক্ত বন্ধ হয় যে, নামাযের ওয়াক্ত প্রায় শেষ হইয়া গিয়াছে, যদি তৎক্ষণাৎ খুব তাড়াতাড়ি গোছল করে, তবে এতটুকু সময় পাইতে পারে যে, নিয়্য করিয়া শুধু ‘আল্লাহু আকবর’ বলিয়া তাহরীমী বাঁধিয়া দাঁড়াইতে পারে, এর চেয়ে বেশী সময় নাই, তবে ঐ ওয়াক্তের নামায তাহার উপর ওয়াজিব এবং ক্বাযা পড়িতে হইবে। আর যদি এতটুকু সময়ও না পায় যে, গোছল করিয়া তাহরীমী বাঁধিতে পারে, তবে ঐ ওয়াক্তের নামায মাফ হইয়া যাইবে, ক্বাযা পড়িতে হইবে না।
১১। মাসআলাঃ আর যদি পূর্ণ দশ দিনে হায়েযের রক্ত বন্ধ হয় এবং এমন সময় রক্ত বন্ধ হয় যে, গোছল করার সময় নাই, মাত্র একবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলার সময় আছে, তবুও ঐ ওয়াক্তের ক্বাযা পড়িতে হইবে।
১২। মাসআলাঃ রমযান শরীফে দিনের বেলায় যদি হায়েযের রক্ত বন্ধ হয়, তৎক্ষণাৎ গোছল করিবে এবং নামাযের ওয়াক্ত হইলে নামায পড়িবে এবং যদিও এই দিনের রোযা তাহার হইবে না কিন্তু অবশিষ্ট দিনে তাহার জন্য কিছুই খাওয়া-পেওয়া দুরুস্ত হইবে না, অন্যান্য রোযাদারের মত তাহারও এফতারের সময় পর্যন্ত না খাইয়া থাকা ওয়াজিব হইবে। পরে কিন্তু এই দিনেরও ক্বাযা রোযা রাখিতে হইবে।
১৩। মাসআলাঃ যদি পূর্ন দশ দিন হায়েয আসার পর রাত্রে পাক হয়, তবে যদি এতটুকু রাত বাকী থাকে যে, তাহাতে একবার ‘আল্লাহু আকবরও’ বলিতে পারে না, তবুও সকালে রোযা ওয়াজিব হইবে। আর যদি দশ দিনের কম হায়েয আসে এবং এতটুকু রাত্র বাকী থাকে যে, তৎক্ষণাৎ গোছল করিতে পারে কিন্তু গোছলের পর একবারও ‘আল্লাহু আকবর’ বলিতে পারে না, তবুও সকাল হইতে রোযা ওয়াজিব হইবে। এমতাবস্থায় গোছল না করিলেও রোযার নিয়্যত করিবে। রোযা ছাড়িবে না, সকালে গোছল করিবে। আর যদি রাত্র ইহা হইতে কম থাকে যে, গোছলও করিতে পারে না, তবে সকালে রোযা রাখা জায়েয নহে। কিন্তু দিনে কোনকিছু পানাহার করাও দুরুস্ত নাই বরং দিনে রোযাদারের মত থাকিবে পরে উহা ক্বাযা রাখিবে।
১৪। মাসআলাঃ ছিদ্রের বাহিরে যতক্ষণ পর্যন্ত রক্ত না আসিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হায়েয ধরা যাইবে না। অতএব, যদি কোন মেয়েলোক ছিদ্রের ভিতর রুই, তুলার গদ্দি রাখিয়া রক্তকে ছিদ্রের মধ্যেই বন্ধ করিয়া রাখিয়া থাকে, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত রক্ত বাহিরে না আসিবে বা গদ্দি টানিয়া বাহির না করিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হায়েয ধরা হইবে না। যখন রক্তের চিহ্ন বাহিরের চামড়া পর্যন্ত আসিবে বা তুলা টানিয়া বাহির করিবে, তখন হইতে হায়েয হিসাব হইবে।
১৫। মাসআলাঃ কোন মেয়েলোক এশার নামায পড়িয়া পাক অবস্থায় ছিদ্রের ভিতর রুই, তুলার গদ্দি রাখিয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। সকালে ঘুম হইতে উঠিয়া যদি তুলার মধ্যে রক্তের চিহ্ন দেখে, তবে যে সময় রক্তের চিহ্ন দেখিবে, সেই সময় হইতেই হায়েয ধরা হইবেঘুমের সময় হইতে নহে।

No comments:

Powered by Blogger.